নিকুঞ্জ কানন পর্ব-০৬

0
25

‎#নিকুঞ্জ_কানন
‎#নুজহাত_আদিবা
‎[পর্ব ৬]

‎তরীর কথামতো আজ তাই হলো। আহসান কলেজ থেকে তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ওই মেয়েগুলোর সঙ্গে কথা বলেনি। তরী মুখে প্রকাশ না করলেও মনে মনে খুব খুশি হলো। তরীকে কলেজে আনা নেওয়া করে আহসান। রুমির স্কুল বাড়ির খুব কাছেই হওয়ায় সে একাই আসতে পারে। কারো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় না।

‎তরী কলেজ থেকে বাড়ি ফিরতেই মধুবিবি তরীকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠালেন। তরী জামাকাপড় ছেড়ে পা টিপে টিপে মধুবিবির ঘরে গেল। মধুবিবি বসে বসে তখন পান চিবুচ্ছেন। আজ কয়েকদিন যাবত তরীকে তিনি লক্ষ্য করছেন। নতুন নতুন বিয়ে হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবে যে-ই বৈশিষ্ট্য গুলো প্রকাশ পায়। তরীর মধ্যে সেরকম কিছু এখনও দেখেননি তিনি। তরীকে বেজায় সন্দেহ হচ্ছে তাঁর। তরীকে ঘরে ঢুকতে দেখে পানদানিতে পানের পিক ফেললেন। তরীর দিকে সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

‎” আজকে আমি যা জিজ্ঞেস করুম। সত্যি কইরা বলবা; যদি কিছু লুকাও তো তোমার খবর আছে।”

‎তরী ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো। মধুবিবি তরীকে বসতে বললেন। তরী কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় বসতেই তিনি বললেন,

‎” তোমার আর আহসানের মধ্যে কিছু হইসে? সত্যি কইরা বলো!”

‎তরী কথার মানে ধরতে পারলো না। সরল মনে বললো,

‎” না ওনার সঙ্গে তো আমার কোনো ঝগড়া হয়নি….”

‎মধুবিবি তরীকে ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বললেন,

‎” ঢং দেখলে বাঁচি না! আমি ঝগড়ার কথা কই নাই। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে-ই সম্পর্ক হয়। সেই সম্পর্কের কথা বলসি। তোমাদের মাঝে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হইসে?”

‎তরী ঠায় বসে রইলো। মধুবিবির প্রশ্নের জবাব তাঁর কাছে নেই। তাঁদের মধ্যে এখনও ওসব হয়নি। তরীর কাছে কাঙ্ক্ষিত জবাব না পেয়ে মধুবিবি হুংকার দিয়ে বললেন,

‎” তোমারে কী জিজ্ঞেস করতাসি! জবাব দাও না ক্যান?”

‎তরী ভীতসন্ত্রস্ত নিরীহের ভঙ্গিতে মাথা দুই পাশে দুলিয়ে না বোঝালো। মধুবিবি যা বোঝার বুঝে গেলেন। তরীকে এই বিষয়ে কিছু বলে লাভ নেই। যা বলার আহসানকেই বলতে হবে।

‎সন্ধ্যার পর আহসান বাড়ি ফিরতেই; মধুবিবি আহসানকে ডেকে পাঠালেন নিজ ঘরে। আহসান মধুবিবির ঘরে গিয়ে তাঁকে সালাম জানিয়ে বললো,

‎” কেমন আছো বুবু? তোমার শরীরটা ভালো তো?”

‎মধুবিবি সালামের জবাব নিলেন। ক্ষুদ্ধ গলায় বললেন,

‎” আমার শরীল ভালোই আছে। তোমার সমস্যা কী সেইটা বলো।”

‎আহসান অবাক হয়ে বললো,

‎” কেন? কী হয়েছে বুবু?”

‎মধুবিবি প্রতিত্তরে বললেন,

‎” কী হইসে সেইটা বুঝতে পারতাসো না? নাকি বুঝার চেষ্টা করতাসো না।”

‎আহসান মৃদুস্বরে বললো,

‎” তরী কী কিছু করেছে? কী হয়েছে বুবু?”

‎মধুবিবি মুখে পানের খিলি পুরে বললেন,

‎” বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হইবো সেইটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে কোনো ভুল আমি দেখি না। তোমাদের বিয়ার কয়েকদিনই তো দিন পার হইয়া গেল। তোমাদের মধ্যে নাকি এখনও কিছু হয় নাই। তোমার বউ নাইলে বয়সে ছোট। সে বেটি মানুষ লজ্জায় বলতে পারে না। তুমি তো ব্যাটা! তুমি এখনও তাঁর কাছে যাও নাই ক্যান? এত লজ্জা শরম ধুইয়া কী পানি খাইবা?”

‎আহসান মিনিটখানেক নীরবতা পালন করলো। এরকম একটা বিষয়ে বাড়ির মুরব্বি গোছের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ইতস্তত বোধ কাজ করছে তাঁর। তবুও অস্বস্তি বোধ কাটিয়ে আহসান বললো,

‎” আমাদের মধ্যে বয়সের পার্থক্যটা অনেক বুবু। দশ বছর কিন্তু কম কিছু নয়। আমি চাই আগে আমাদের মনের মিল হোক। তারপর নাহয় শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে ভাববো। আর এমনিতেও তরী আমারই বউ। আজ হোক বা কাল সে তো আমারই। সময় তো আর চলে যাচ্ছে না। একটু সময় তো দেওয়া উচিত। নাহলে আমরা একে অপরকে কীভাবে বুঝবো?”

‎মধুবিবি নির্দ্বিধায় বললেন,

‎” তোমার দাদার সঙ্গে এত বছরের সংসার ছিল। তাঁর সঙ্গেই আমার কখনো মনের মিল হয় নাই। তুমি এই দুইদিনের সংসারে মনের মিল খুঁজতে আসছো? এত কিছু বুঝতে গেলে সময় চইলা যাইবো। তখন আর বাচ্চা কাচ্চার আব্বা হওয়া লাগবো না তোমার। ওই মনের মিল নিয়াই তুমি বইসা থাইকো!”

‎আহসান কোনো জবাব দিলো না। এখন জবাব দিলে সেটা হয়ে যাবে বেয়াদবি। মুরুব্বি মানুষের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়াতে চায় না সে। যা আছে তা তাঁর মনেই থাকুক। মধুবিবি ফের রুষ্ট গলায় বললেন,

‎” ব্যাটা মানুষের যে-ই কাজের জন্য বউ দরকার; সেই কাজের জন্য যদি তোমার বউ না-ই লাগে। তাহলে তো আর দরকার নাই। আজকে থেকে তরী আমার সঙ্গে রাইতে ঘুমাইবো। রুমিও আছে আমার সঙ্গে তরীর আর একা লাগবো না। দুই সই মিলা গল্প করতে করতে রাইত পার হইয়া যাইবো। তুমি কোলবালিশ জড়ায়া ধইরা শুইয়া পইড়ো।”

‎আহসান দীর্ঘশ্বাস ফেললো! এই বাড়িতে তাঁর শান্তি নেই। এখন নিজের বউটাকে নিয়েও বাইরের মানুষ টানাটানি শুরু করেছে?

‎মধুবিবি নিজের কথায় অটল রইলেন। রাতে ঠিকই আহসানের ঘর থেকে তরীকে টেনে নিয়ে এলেন। তরী শুকনো মুখে বালিশ নিয়ে মধুবিবির ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। আহসান অপ্রসন্ন হয়ে বসে রইলো। তাঁর অবস্থা আজ অত্যন্ত বেগতিক! শোভা মধুবিবির আচরনে অপ্রস্তুত বোধ করলেন।
‎মধুবিবির ঘরে গিয়ে তাঁকে বললেন,

‎” মা ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? ওদের ব্যাক্তিগত জীবন ওদের বুঝতে দিন। এভাবে দুজনকে আলাদা করে ফেলাটা কী ঠিক হচ্ছে? ”

‎মধুবিবি শোভার কথা কানে তুললেন না। রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

‎” বেশি পড়াশোনা কইরা তোমার ছেলের মাথায় শয়তানের ক্যারা ঢুকসে। ওর ক্যারা কেমনে মাথা থেকে বাইর করতে হয়। সেইটা আমি ভালো কইরাই জানি। টান পরলে ঠিকই বেইকা বসবো। কয়টাদিন যাইতে দাও তারপর আমার কথা মিলায়া নিও।”

‎শোভা আর কথা বাড়ালেন না। মধুবিবি যা ভাবেন তা করেই ছাড়েন। তাঁকে তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে হটাতে গেলে হিতে বিপরীত ঘটে। শোভা বিছানা করে দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
‎★
‎রুমিকে নিজের বামপাশে এবং তরীকে ডানপাশে রেখে মাঝে মধুবিবি শুয়েছেন। রুমির ভোরে স্কুল আছে;রুমি ঘুমে কাঁদা তখন। মধুবিবিও খুব সম্ভবত ঘুমিয়ে গেছেন। তরীর মোটেও ঘুম আসছে না। অশান্তিতে সে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। হঠাৎ কী হলো? কাল যে সে আহসানের পিঠে মুখ গুঁজে শুয়েছিল। আহসান কী সেটা পছন্দ করেনি? সেকারণেই কী আজ তাঁকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিলো? এই কয়দিন তো সব ঠিকঠাকই ছিল। হঠাৎ করে কেন মধুবিবি তাঁকে এই ঘরে ঘুমাতে বললো? আহসান কী রাগ করেছে তাঁর সঙ্গে? মনে মনে কী সে তরীর ওপরে বিরক্ত? তরী বারবার দরজার দিকে তাকাতে লাগলো। আহসান একটা বার এদিকে এলেই তো পারে! এত কীসের অভিমান তাঁর?

‎আহসান বিছানায় শুয়ে এক প্রকার ছটফট করছে। তাঁর ঘুম আসছে না। বিছানাটা কেমন খালি খালি লাগছে। কাল রাতটা তাঁর জন্য বিষ্ময়কর একটা রাত ছিল। তরী যে হুট করে তাঁকে ওভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবে এটা সে কল্পনাও করেনি। আহসান রাগে গজগজ করতে করতে কোলবালিশ চেপে ধরলো। কোলবালিশও আজ তাঁর সঙ্গে দুশমনি করছে। তরীর তুলতুলে নরম শরীরের কাছে এই কোলবালিশ কিছুই না। তরীর চুলের সেই তীব্র সুগন্ধ কী কোলবালিশের ফিতে-তে পাওয়া যায়? চোখ ভর্তি ঘুম তবুও ঘুম আসছে না তাঁর। আহসান বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো। তরী কী এখন ঘুমিয়ে গেছে? দরজা ডিঙ্গিয়ে তরীর কাছে যাবে একবার? নাহ! এভাবে তরীর কাছে মাঝরাতে যাওয়াটা কোনো ভদ্রলোকের কারবারের মধ্যে পড়ে না। তবে? তরীকে না দেখলে ঘুমও যেন আসছে না!

‎আহসান নিজের ঘরের দরজা খুলে বের হলো। পা টিপে টিপে উঠোনে গেল। উঠোন বরাবর মধুবিবির জানালায় উঁকি দিলো। দেখলো তরী ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। আহসান কয়েকবার মৃদুস্বরে শিষ বাজালো। শিষের আওয়াজ পেতেই তরী ভয়ে ভয়ে জানালার দিকে তাকালো। বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে গিয়েও কান পাতলো। আওয়াজটা দরজার কাছ থেকে আসছে না। তাহলে কী জানালা? তরী ভয়ে ভয়ে জানালার দিকে পা বাড়ালো। এত রাতে জানালার সামনে কে-ইবা আসবে? তবে, কী তেনারা এসেছেন? মনের ভুল ভেবে তরী এড়িয়ে যেতে চাইলো। আহসান শিষ বাজানো ছাড়লো না। নিজের কাজে অবিরত রইলো। তরী ভয়ে জমে গেল। কৌতুহলকে মাটি চাপা দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরতে চাইলো। কিন্তু তা আর হলো কোথায়? তরীর কৌতুহলী স্বভাব তাঁকে শান্তি দিলো না। অগত্যা তরী ভয়ে ভয়ে জানালার সামনে গিয়ে উঁকি দিলো। বাইরে হাত বাড়িয়ে কারো অস্তিত্ব আছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করলো।
‎ তরীর উপস্থিতি টের পেতেই আহসান তাঁর হাত চেপে ধরলো। আহসান কিছু বলার পূর্বেইকারো হাতের ছোঁয়া পেতেই; তরী ভয়ে উত্তেজনায় চিৎকার করে বসলো! এটা কোনো ভুত নয়! এটা সয়ং সম্পূর্ন একজন মানুষের হাত ভাবতেই তরী ”চোর” “চোর” বলে চিৎকার করতে লাগলো। তরীর চিৎকারে মধুবিবিসহ রুমিরও ঘুম ভেঙ্গে গেল। মধুবিবি দ্রুত উঠে বসলেন। আহসান তখনও বোকার মতো ঠায় দাঁড়িয়ে! এক ছুটে চলে যাবার বদলে সে তখনও তরীর হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।
‎তরী ফের “চোর” বলে চিৎকার করতেই মধুবিবি তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নামলেন। পানের ডাবুর থেকে সুপারি কাটার জাঁতিটা দিয়ে চোরবেশী আহসানের হাতে তীব্র আঘাত করলেন। আহসানের হাতের তালুর অপর পিঠের অংশ হতে গলগল করে র’ক্ত বের হতে লাগলো। পরিস্থিতির বিপর্যয় টের পেয়ে আহসান তরীর হাত ছেড়ে এক দৌড়ে নিজের ঘরে এসে ঢুকলো। পুরনো কাপড় বের করে ক্ষতস্থানে শক্ত করে বাঁধলো। ততক্ষনে অবশ্য যা হুলস্থুল হবার তা হয়ে গেছে। মধুবিবির চিৎকারে শোভা আর মাজদাক দ্রুত মধুবিবির ঘরে এলেন। সবকিছু শুনে মাজদাক লাঠি নিয়ে আহসানের দরজায় নক করলেন। আহসান দরজা খুলতেই বললেন,

‎” আহসান বাবা দ্রুত বের হ! বাড়িতে চোর এসে তোর বুবুর ঘরের দিকে হাত বাড়িয়েছে।”

‎মাজদাক আহসানের হাতে লাঠি গুঁজে দিয়ে তাঁকে নিয়ে বের হলেন। আহসান মনে মনে ক্ষুদ্ধ হলেও তা মুখে প্রকাশ করলো না। এমন ভাব করলো যেন সে কিছুই জানে না। তরীর ওপরে ভীষন রাগ হচ্ছে তাঁর। কেমন মেয়ে সে? যে কিনা নিজের স্বামীর হাতের ছোঁয়া চেনে না?

‎বাড়ির আশেপাশে আধা ঘন্টা ছেলেকে নিয়ে চিরুনী তল্লাশী চালানোর; পরও মাজদাক চোরের টিকি-টুকু অবধি খুঁজে পেল না। ভারাক্রান্ত মনে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো সে। স্বামী পুত্রকে দেখামাত্রই শোভা বললেন,

‎” কী গো আহসানের বাবা, চোরকে পেলে?”

‎মাজদাক হুংকার ছেড়ে বললেন,

‎” আজ অল্পের জন্য ব্যাটা চোর রক্ষা পেয়েছে। কত বড় সাহস! আার বাড়ির বউয়ের হাত চেপে ধরে! আর কোনোদিন বাড়ির ত্রি-সীমানায় আসুক। ওই হাত ভে’ঙ্গে ওর হাতে ধরিয়ে দেবো!”

‎শোভা রুমিকে আর তরীকে শুয়ে পরতে বললেন। মাজদাককেও শান্ত করে ঘরে পাঠালেন। এতসব কিছুর মাঝেও মধুবিবি আড়চোখে আহসানের হাতের ক্ষতটার দিকে লক্ষ্য করলেন। চোরের হাতের ঠিক এই বরাবরই তো সে মে’রেছিলেন। আবার, আহসানের হাতের ক্ষতটা দেখেও তাঁজা ঘা মনে হচ্ছে। রক্তে কাপড় অনেকটাই ভেজা। তবে কী আহসানই? ঘটনা আন্দাজ করতে পেরে মধুবিবি মনে মনে বেজায় হাসলেন! খোদা একি দিন দেখালো তাঁকে?

‎পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর শোভা এবং আহসান দুজনই নিজ নিজ কক্ষে শুঁতে চলে গেল। মধুবিবিও নিজের ঘরে ফিরলেন। তরী ঘুমায়নি তাঁর মনে তখনও খুব ভয়। চোরটা যদি রাতে আবার আসে? মধুবিবি ঘরে এসে তরীকে চেপে ধরে বললেন,

‎” আমার নাহয় নাতী তাই আমি চিনবার পারি নাই। রাইতে চোখেও অনেক কম দেখি। তুমি কেমন ধারার মাইয়া যে নিজের স্বামীর হাত চিনো না?”

‎তরী হতবিহ্বলের ন্যায় বললো,

‎” ওটা উনি ছিলেন?”

‎তরীর চোখে পানি চলে এলো। সে কেন আহসানের হাত চিনতে পারলো না? হাতে দাদীমা অনেক জোরেই বাড়ি মেরেছেন। হালকা রক্তের ঝলকও দেখেছিল তরী। এত বড় ভুল সে কী করে করলো? আহসান তাঁকে আপন ভেবে কাছে এসেছিল। সে কী করে তাঁকে এভাবে আঘাত করে ফিরিয়ে দিলো? তরী মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলো। মধুবিবি আবার বললেন,

‎” বোকা মেয়েলোক! হুদাই আমার নাতীটারে আমার হাতে মাইর খাওয়াইলা! বেচারার কী দোষ? আসছিল বউয়ের সঙ্গে দুইটা কথা কইতে। তুমি না বুইঝা না শুইনা তারে বিপদে ফালাইলা। হাত থেইকা র’ক্ত বাইর হইসে। হাতে ত্যানা প্যাঁচায়া রাখসে।”

‎তরী চাপাস্বরে বললো,

‎” এখন যাবো একটু ওনার কাছে?”

‎মধুবিবি ঝাড়ি মারার স্বরে বললেন,

‎” এখন গিয়া কী করবা? যা অঘটন ঘটানোর তা তো ঘটাইসো। রাইতের তিনটা বাজে এখন তারে ঘুমাইতে দেও। সারাদিন খাটা খাটনি কইরা আসছে।”

‎মধুবিবি বিছানায় শুয়ে পরতেই তরীও শুয়ে পরলো। মনটা খুব খারাপ লাগছে। আজ বড্ড ভুল করে ফেলেছে সে। ইস! মানুষটা কতটা কষ্ট পাচ্ছে এখন!

চলবে….