নিকুঞ্জ কানন পর্ব-০৮

0
25

‎#নিকুঞ্জ_কানন
‎#নুজহাত_আদিবা
[‎পর্ব ৮]

‎রুমি আজ স্কুলে যায়নি। তাঁর বেজায় জ্বর! হুট করে এত জ্বরের আগমন কোথা থেকে হলো কে জানে। শোভা প্রথমে স্কুলে না যাবার অজুহাত ভেবেছিলেন। পরে মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে দেখলেন তীব্র জ্বর। জ্বরের ঘোরে কী সব বিরবির করছে যেন! রুমির এরূপ দশা দেখে তরীর বড় করুনা হলো তাঁর প্রতি। কলেজে যাওয়ার কথা শুনে সে-ও বেঁকে বসলো। সই-কে এভাবে ফেলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাঁর। শেষে শোভার বকুনি খেয়ে মুখ গোমড়া করে কলেজে গেল সে। আহসান এই সেই বলে তাঁর অভিমান ভাঙ্গাতে চাইলো। তবে, সফল হলো না। তাঁর মন পরে আছে বাড়িতে;রুমির কাছে।গুনগুনের জ্বর এলেও সে রুমির মতোন স্কুলে যেতে চাইতো না। জ্বরে আলুথালু অবস্থায় কী সব যে বিরবির করতো! কিছু মুখেও তুলতে চাইতো না। জোর করে দুধ রুটি খাইয়ে দেওয়া হতো তাঁকে। জ্বর ভালো হয়ে গেলেও মিছে জ্বরের বাহানায় স্কুলে যেতে চাইতো না। মনোয়ারার বকুনিতে গাল ফুলিয়ে স্কুলে যেতো। পেটে পেটে সেকি রাগ তাঁর!

‎ক্লাসে তরীর আজ মন নেই। সকালবেলা রুমির জ্বরে নির্জীব মুখটাকে দেখে বারবার গুনগুনের কথা মনে পরছে কেন? গুনগুন কী ভালো আছে? নাতাশা, সুহা, ও কুহু এসে ক্লাসের মাঝে তরীর সঙ্গে কত গল্প জুড়ে দিলো। তরীর মাথায় সে-সব ঢুকছে না। কোথায় আছে গুনগুন? গুনগুনের কী মনে পড়ে বোনকে? নাকি খামখেয়ালীপনায় ভুলে গেছে তরীকে?

‎ক্লাস শেষে বাইকে করে আহসান নিতে এলো তাঁকে। তরী চুপচাপ বাইকে গিয়ে বসলো। আজ মন ভালো নেই তাঁর। কেন নেই সেটা সে জানে না। তরীর মৌনতায় আহসান বারবার লুকিং গ্লাসে তরীকে পর্যবেক্ষন করলো। স্বভাবতই খুব বেশি কথা তরী বলে না। তবে, এতটা গুটিশুটি মেরে চুপ করে বসে থাকার মতোন মেয়ে তো সে নয়। কী হলো আজ তাঁর?

‎বাড়ি ফিরেই তরী রুমির ঘরে হানা দিলো। গিয়ে দেখলো রুমি বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে; চোখ মুখ কুঁচকে। মাজদাক ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে বসে আছেন। ছোট ছোট নলা তুলে রুমিকে খাইয়ে দিচ্ছেন। অজান্তেই তরীর চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো। দরজার সামনে থেকেই ঘুরে চলে এলো সে। বাবা মেয়ের একান্ত মুহূর্তে বাগরা দেওয়াটা সংযতপূর্ণ হবে না। আহসানের ঘরে গিয়ে বসলো সে। আহসান ঘরে নেই। হয়তো দুপুরের খাবার খাচ্ছে। তরীর শরীরে শক্তি নেই। কেমন একটা বিতৃষ্ণা ভর করেছে শরীরে। রুমির মতো একটা জীবন কী তাঁর হতে পারতো না? এই যে বাবাকে হুটহাট বাবা বলে জড়িয়ে ধরতে পারে। জ্বর হলে বাবার হাতে খাবার খেতে পারে। এই সুখটুকু কী তাঁর হতে পারতো না? একি! জীবন তাঁর? চারিপাশে বাবার সমবয়সী এত এত লোক। কিন্তু, বাবা বলে ডাকার মতো কেউ নেই। এটা কী কম কিছু?

‎তরী বালিশে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। সেই ক্রন্দন রুমির প্রতি হিংসায় নয়। বাবার শুন্যতা ও তাঁর প্রতি তীব্র অভিমান মিশ্রিত ছিল তাতে। একবার কড়া রোদে স্কুলে গোল্লাছুট খেলে; বাড়িতে ফিরে কড়কড়ে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার ফলে তীব্র জ্বর এসেছিল তরীর। ঠান্ডায় গলা বসে গিয়েছিল। খাওয়ার রুচি শুন্যের কোঠায় গিয়ে পৌঁছেছিল। মনোয়ারা যখন খাবার নিয়ে তরীর পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত। হায়দার তখন অতি যত্নের সহিত মেয়ের মুখে খাবারের গ্রাস তুলে দিতেন। তরী তখন বেজায় বিরক্ত হতো। খাবার মুখে নিয়ে দীর্ঘসময় বসে থাকতো। বড্ড তিতকুটে লাগতো যে!

‎আহসান খাবার টেবিল থেকে উঠে তরীকে এদিক সেদিক খুঁজলো। কোথাও পেলো না! মেয়েটা তবে গেল কোথায়? তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকলো সে। ঘরে ঢুকতেই রীতিমতো চমকিত হলো সে! বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে তরী বালিশে মুখ গুঁজে রেখেছে। আহসান সদর্পনে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একি মেয়েটা কাঁদছে কেন? মায়াভরা দৃষ্টিতে একগুচ্ছ কৌতুহল নিয়ে আহসান স্ত্রীর মাথায় হাত রাখলো। তরী বিষ্মিত হয়ে উঠে বসলো। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখটা মুছে ফেললো। আহসান ভ্রু কুঁচকে বললো,

‎” তুমি কাঁদছো কেন তুলতুল?”

‎দীর্ঘদিন পর নিজের পুরনো নাম কারো মুখে শুনতে পেয়ে তরী থমকে গেল। কিছু মুহূর্তের জন্য তাঁর মনোযোগ সম্পূর্ণভাবে ঘুরে গেল। ঘোরমিশ্রিত সূরে সে বললো,

‎” কী বললেন? আরেকবার বলুন না!”

‎আহসান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,

‎” তোমার কী হয়েছে তুলতুল? শরীর খারাপ করেছে? রুমির মতো তোমার ও জ্বর এলো নাকি?”

‎এটুকু বলেই তরীর কপালে হাত রাখলো সে। কই নাতো! জ্বর তো আসেনি। তরী নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে রাখতে চাইলো। বুকের বেদনাকে বাইরে আসার সুযোগটুকু দেওয়ার ও প্রয়োজন বোধ করলো না। কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেল। আহসান তরীর দিকে কিছুটা এগিয়ে গেল। তরীর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো,

‎” কী হয়েছে তুলতুল?”

‎তরী নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। ছোট্ট হাঁসের ছানার মতো আহসানের বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেললো। সেকি বাঁধভাঙ্গা কান্নার সূর! আহসানের বলিষ্ঠ বুকেও যেন কাঁপন ধরলো। তরীকে অভয় দেওয়ার জন্য পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আহসান বললো,

‎” তুলতুল? এই মেয়ে কী হয়েছে তোমার? আমাকে না বললে কিন্তু তোমার সঙ্গে আড়ি নেবো। এভাবে কতক্ষন আমায় আর দুশ্চিন্তায় ফেলে রাখবে?”

‎তরী হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,

‎” রুমির জীবনটা কত সুন্দর তাই না? এই যে যখন তখন বাবাকে কাছে পায়। অসুস্থ হলে বাবার আদর পায়। এমনটা আমার সঙ্গে হয় না কেন? বাবা চলে যাওয়ার পর, আমি আল্লাহকে বলেছি আমি যেন আর অসুস্থ না হই। কারণ, আমাকে মুখে তুলে দেওয়ার মতো বাবা থাকবে না। জানেন, আমার জ্বর এলে বাবা আমাকে খাইয়ে দিতো। জোর করে দুধের গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিতো। আমি রুমিকে হিংসা করছি না। তবে, আমার খুব লোভ হচ্ছে! আমি কী রুমি হতে পারতাম না?”

‎আহসান মনোযোগ দিয়ে তরীর কথা শুনলো। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

‎” আদরের লোভে তোমার রুমি হবার প্রয়োজন নেই। তুমি তুলতুল এটাই তোমার পরিচয়। একটা বিবাহিত মেয়ের জীবনে তাঁর দায়িত্ব নেয় তিন পুরুষ। প্রথমে বাবা তারপর স্বামী এরপর তাঁর পুত্র। আমি জানি না আমার সন্তান তোমার ঠিক কতটুকু খেয়াল রাখবে। তবে, আমি হলফ করে বলতে পারি। আমার যতদিন হায়াত থাকবে আমি তোমায় কখনো উপেক্ষা করবো না। তোমার কষ্ট আমাকে ব্যাথিত করে। সহ্য করতে পারি না। কষ্ট হয়! একজন স্ত্রী হিসেবে এটুকুই কী তোমার জন্য যথেষ্ট পাওনা নয় তরী? ”

‎তরী মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না। মাথা নিচু করে বসে রইলো। আহসান বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। টেবিলে সাজিয়ে রাখা খাবারের পাত্র থেকে খাবার বাড়লো প্লেটে। প্লেট হাতে তরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। খাবার মেখে আনাড়ি হাতে তরীর মুখের সামনে তুলে ধরলো। রুমিকে মাঝেমধ্যে জোরপূর্বক খাইয়ে দিতো সে। রুমির পর তরীই হয়তো প্রথম কেউ। যাঁর জন্য এত যত্ন নিয়ে সে ভাত মেখেছে। আহসানকে এরূপ বেশে দেখে তরী ভেজা চোখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখলো। তরীকে অবাক করে দিয়ে আহসান তরীর মুখে খাবার তুলে দিলো। তরী হতবিহ্বল, চমকিত, বিষ্মিত! আর কী কী পদবিতে ব্যাখা করে যায় এই পরিস্থিতিকে? বাবার পর তরীর জীবনে মূখ্য ভূমিকা পালন কে করছে? আহসান? বাবার পর প্রথমবার কোনো পুরুষ তরীকে খাইয়ে দিলো। বিষয়টা কী স্বাভাবিক? অস্বাভাবিক হলে হোক! এরূপ আদুরে যত্ন পেতে তরীর মন্দ লাগছে না।

তরীকে খাইয়ে দিয়ে আহসান রুমির কাছে গেল। জ্বরের ঘোরে চোখ দুটো বোজা। ঠোঁট কেমন তিরতির করে কাঁপছে। আহসান আলগোছে রুমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। রুমির বালিশের তলায় মুঠো ভর্তি লজেন্স রেখে এলো। জ্বর এলে তেঁতো মুখে রুমি লজেন্স খেতে খুব ভালোবাসে। এতে তাঁর বমি বমি ভাবটা কেটে যায়। ছেলেবেলার অভ্যাস যে!
‎★
‎সন্ধ্যায় বইখাতা নিয়ে তরী আহসানের ঘরে হামলা চালালো। আহসান পড়ার ঘরে গিয়ে পড়ার কথা বললে তরী এড়িয়ে গেল। বিছানার ওপরেই বই খাতা এলোমেলো করে পড়তে বসলো। তরীর একরোখামি-পনা দেখে আহসান মুখে ” রা” অবধি কাটলো না। বিছানার ওপরেই তরীকে একটা অংক করতে দিয়ে নিজেও বই নিয়ে বসলো। তরী তখন মনের সুখে শরীর এলিয়ে দিয়ে উবু হয়ে অংক কষতে ব্যস্ত। রুমির জ্বর কিছুটা ছেড়েছে। কিন্তু, দূর্বলতা এখনও কাটেনি বিধায় আহসান পড়ার জন্য জোরাজোরি করেনি। আহসান বই পড়ার ফাঁকে আনমনে একবার তরীর দিকে তাকালো। নবযৌবন যেন তাঁর উপচে উপচে পরছে! পড়ার প্রতি তীব্র মনোযোগী থাকায় অন্যমনস্ক হয়ে শাড়ির আঁচল কখন যে বক্ষঃস্থল হতে সরে গেছে কে জানে! মেয়েলী শরীরের খাঁজ স্বচ্ছ ভাবে ধরা দিচ্ছে আহসানের দৃষ্টিতে। আহসান দৃষ্টি সংযত করবার প্রচেষ্টা চালালো। কিন্তু, চেষ্টা ব্যর্থ হলো। ঝুঁকে বসবার কারণে তরীর ব্লাউজের উরুর অংশটা বিপদসীমার নিচে নেমে গেছে। তা দেখে আহসান ঢোক গিললো। বই পড়ার দিকে মনোযোগ বহাল রাখতে চাইলো। বেহায়া অক্ষি যুগল মস্তিষ্কের কথা শুনতে নারাজ। আহসান দ্বিধাদ্বন্দে খেই হারিয়ে ফেললো। মস্তিষ্ক বলছে দৃষ্টি সংযত করে নিজের কাজে মন দিতে। অপরদিকে মন বলছে ” তোমারই তো বিবাহিতা স্ত্রী সে। এত সংযম কীসের? ” আহসানের শ্বাস ঘন হয়ে এলো। নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেল সে। মন নাকি মস্তিষ্ক? কাকে বেছে নেওয়া উচিত তাঁর? ওই মেয়েলী দেহের প্রত্যেকটা অঙ্গে স্পর্শ করার বৈধতা আছে তাঁর। তবে, এত অহেতুক অস্বস্তি কীসের? আড়চোখে তরীকে আবার পর্যবেক্ষন করলো সে। আবেদনময়ী দৈহিক কায়া তাঁকে পোড়াচ্ছে! জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে! আহসানের শ্বাস নেওয়ার গতি বেড়ে গেল। বই রেখে সে ঘনঘন নিঃশ্বাস গ্রহনে মনোযোগী হলো। বারবার চোখ ফেরাতে চেয়েও পারছে না। ওই সুনিঁপুণ দেহে না ছুঁতে পারলে তাঁর জীবন বৃথা! তরীর সান্নিধ্য পাওয়াটা আজ খুব করে দরকার। শেষমেশ বিবেক আহসানকে একটা প্রশ্ন করেই বসলো। ❝শরীর ছোঁয়ার আগে স্ত্রীর মন ছোঁয়া দরকার। তুমি কী তা পেরেছো?❞ আহসান সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। ওই প্রশ্নই তাঁকে কুপোকাত করে ফেললো। যন্ত্রণাময় পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাবার জন্য আহসান বললো,

‎” আজ আর পড়তে হবে না তরী। বইখাতা গুটিয়ে ফেলো।”

‎তরী খাতায় মার্জিন করতে করতে বললো,

‎” একটা কঠিন অংক বাকি আছে। ওটা একটু দেখিয়ে দিন না। তাহলেই আজকের ঝামেলা শেষ।”

‎আহসান তরীর বইখাতা ছুঁয়েও দেখলো না। তরী এখন তাঁর সামনে থাকা মানেই বিপদ। তরীকে আগে এখান থেকে বিদায় করতে হবে। আহসান কপটতার স্বরে বললো,

‎” আমি পরে দেখিয়ে দেবো। আজ আর নয়; তুমি বইখাতা গুছিয়ে তাড়াতাড়ি বুবুর ঘরে যাও।”

‎তরী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াবার সময়ে উদর থেকে আঁচলটা বেশ খানিকটা সরে গেল।মেদ বিহীন কোমল উদর দেখে আহসানের গলা শুকিয়ে কাঠ হওয়ার জোগাড়! বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে আদেশের সূরে তরীকে বললো,

‎” তোমাকে না বলেছি তাড়াতাড়ি বই গুছিয়ে চলে যেতে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী দেখছো? বুবুর ঘরে গিয়ে ইংরেজি পড়াটা করে ফেলো। জলদি যাও!”

‎আহসানকে লম্বা আর দ্রুত শ্বাস নিতে দেখে তরী হকচকিয়ে উঠলো। ভয়ার্ত গলায় বললো,

‎” কী হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ করছে? প্রেসার বেড়ে গেছে? বাবার প্রেসার বেড়ে গেলে বাবারও এরকম শ্বাসকষ্ট হতো। বেশি কষ্ট হচ্ছে আপনার? বুবুর ঔষধের বাক্সে প্রেসারের ঔষধ আছে। এনে দেবো আপনাকে?”

‎আহসান হতাশ হয়ে তরীর পানে চাইলো। কীভাবে বোঝাবে তরীকে সে? এটা কোনো শরীরের অসুখ নয়। এটা হলো মনের অসুখ! খুব বিচ্ছিরি রকমের মনের অসুখ। ছুঁয়ে দেওয়ার অসুখ।বাজে অসুখ ;ছ্যাহ!

চলবে…