নিকুঞ্জ কানন পর্ব-২০+২১

0
27

‎#নিকুঞ্জ_কানন
‎#নুজহাত_আদিবা
[পর্ব ২০]

সকালে আজ পুকুরে জাল ফেলা হয়েছে। ইয়া বড় বড় সাইজের মাছ উঠেছে। রুই মাছ, বোয়াল মাছসহ আরো ছোট ছোট সাইজের কী কী মাছ যেন। ওগুলোর নাম অবশ্য তরী জানে না। তরী আর রুমি পুকুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সবুজ জালে ধরা মাছগুলো খুব লাফালাফি করছে। দুপুরে এখান থেকে কিছু মাছ রান্না করা হবে। মধুবিবি অবশ্য তরীকে বলেছেন,

” এই তুমি কিন্তু পুকুরে বোয়াল মাছ উঠলে সেটা খাইবা না। বাচ্চার মাথা বোয়াল মাছের ভসকাইন্না হইবো।”

তরী তা শুনে মাথা দুলিয়ে সায় দিয়েছিল। সহসাই ইয়া বড় একটা রুই মাছ ধরা পরলো জালে। মাজদাক জাল টেনে ধরে আহসানকে দেখাতে লাগলেন। তরীও পুকুরের আরো কয়েক সিঁড়ি নেমে মাছটা দেখলো। কিন্তু তখনই ঘটলো অঘটন! ভেজা সিঁড়িতে পা পিছলে নিচে পরে গেল। রুমি তরীকে কোনো রকম টেনে তুললো। মধুবিবি চিৎকার করে দৌড়ে এসে বললেন,

” হায় হায়! কী সর্বনাশ! তুমি এই পুকুরের সামনে আসছো কেন? ব্যাথা পাইসো? পেটে ব্যাথা করতাসে?”

তরী কিছু বলার আগেই আহসান ছুটে এলো। তরীকে ধরে বললো,

” একটু সাবধানে চলবে না? পেটে লাগেনি তো?”

তরী পেট ধরে বললো,

” আমি ঠিক আছি।”

মধুবিবি তরীকে আর পুকুরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দিলেন। তরীকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। শোভাও তরীর পড়ে যাওয়ার কথা শুনে তরীকে খুব বকাঝকা করলো।

মাছ ঘরে তোলার পরপরই কা’টাকুটির সময়; কোথা থেকে যেন রঙ্গন এলো। হাতে তাঁর বড়সড় একটা বাটি। রুমিকে সামনে পেয়ে বাটিটা রুমির হাতে তুলে দিয়ে বললো,

” আমার আম্মা পায়েস রান্না করেছে। আহসানের জন্য পাঠিয়েছে। আহসান বাড়িতে নেই?”

রুমি বাটিটা হাতে নিয়ে বিরবির করে বললো,

” মাছ ঘরে তুলতে না তুলতেই মেছো ভূত হাজির! খান্নাস জ্বীন কোথাকার!”

কিন্তু রঙ্গনের সামনে সরাসরি সেসব বলা যায়? শুধু ছোট্ট করে প্রশ্নের জবাব দিয়ে বললো,

” আছে। দাঁড়ান ডেকে দিচ্ছি। ”

আহসান পায়েস দেখে খুশি হলো। নাহার বেগমের হাতের পায়েস তাঁর খুব পছন্দ। ওই বেলায় আর রঙ্গনকে যেতে দিলো না। পুকুরের মাছের সালুন দিয়ে ভাত খেয়ে দুই বন্ধু বেরিয়ে গেল। বাইকে করে রঙ্গনকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আহসানও কাজে চলে গেল। মধুবিবি তরীকে খেতে ডাকতে এসে ফের বললেন,

” রুই মাছ আর পোনা মাছটা খাইবা তুমি। বোয়াল মাছের বাটিতে হাত দিবা না। বাচ্চা হওয়ার পর মন ভইরা বোয়াল মাছ খাইয়ো।”

তরী বিছানা থেকে উঠতেই পারলো না। একেবারে মিনমিনে স্বরে বললো,

” বুবু আমি পরে খাবো।”

মধুবিবি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন,

” এইসব কথাবার্তা এখন বাদ দেও। পেটেরটার কথা ভাইবা হইলেও সময় মতো খাওন লাগবো। খাবার খাইয়া ঔষধ খাইয়া একেবারে শুইয়ো।”

তরী পেটে হাত দিয়ে হঠাৎ গোঙ্গানি দিয়ে উঠলো। পেটটা কেমন চাপ দিয়ে আছে। মনে হচ্ছে নাঁড়িভুড়ি ছিড়েখুঁড়ে যাবে। মধুবিবি তরীর গোঙ্গানির আওয়াজ পেয়ে তরীর মাথার কাছে এসে দাঁড়ালেন। ভয়ার্ত গলায় বললেন,

” কী হইসে তোমার? শরীর খারাপ লাগতেসে? ”

তরী পেট চেপে ধরে চিৎকার করে বললো,

” পেটে অনেক ব্যাথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে সবকিছু বের হয়ে আসবে। আহ! আল্লাহ বাঁচাও!”

মধুবিবি তরীর পেটে হাত দিয়ে দেখলেন। পেট চাপ ধরে কেমন শক্ত হয়ে আছে। মধুবিবি চিৎকার করে বললেন,

” আহসানের মা তাড়াতাড়ি এদিকে আসো!”

মধুবিবির গলা শুনে শোভা তাড়াতাড়ি তরীদের ঘরে এলেন। তরীর অবস্থা দেখে বললেন,

” কী হয়েছে আম্মা ওর?”

মধুবিবি তরীর মাথা বুলিয়ে দিতে দিতে আতংকিত কণ্ঠে বললেন,

” পেটে ব্যাথা। পেটও কেমন চাপ দিয়া শক্ত হইয়া আছে। পুকুর পাড়ে পইরা গেসিলো। পেটে টান লাগসে মনে হয়। আল্লাহর নাম নেও আহসানের মা। বাচ্চাটার যেন কিছু না হয়। আল্লাহ আল্লাহ করো।”

শোভা কিছু না বুঝতে পেরে তরীকে বললেন,

” একটু উঠে দাঁড়াও তো মা। সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াও।”

তরী বিছানা থেকে উঠতেই শোভা আঁতকে উঠলেন। বিছানার চাদরটা র’ক্তে ভিজে গেছে। তরীর দু’পায়ের মধ্যখান হতে চিকন র’ক্তের স্রোত বেয়ে চলেছে। পরনে শাড়িটার পেছনের অংশ পুরো র’ক্তে ভিজে জবজব করছে। তরী র’ক্ত দেখে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। মধুবিবি তরীর হাত-পায়ে তেল মালিশ করতে লাগলেন। শোভা মাথায় পানি ঢালতে লাগলেন। তীব্র পেট কামড়ানোর অনুভূতি নিয়ে তরী চোখ খুললো। শরীরে তাঁর একরত্তি জোর নেই। আচমকা তরীর খিচুনি উঠলো। পেট চেপে ধরে মিহি গলায় সে বললো,

” আমি ম’রে গেলাম! আল্লাহ! পেটে খুব ব্যাথা হচ্ছে।”

শোভা দৌড়ে গিয়ে আহসানকে কল দিলো। আহসান তখন মাল নামাচ্ছিল। একহাতে ফোনটা রিসিভ করতেই শোভা বললো,

” বাবা জলদি বাড়ি আয়! তরী যেন কেমন করছে। অনেক র’ক্ত বের হচ্ছে। তুই তাড়াতাড়ি আয়!”

আহসান সবকিছু ফেলে বাইক নিয়ে এক টানে বাড়ি ফিরলো। হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে দেখলো তরী অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। শারীরিক দূর্বলতায় জ্ঞান হারিয়েছে আবারও। মেঝেতে, বিছানায় তরল র’ক্তের ছড়াছড়ি। আহসানের মাথাটা কেমন যেন খালি হয়ে গেল। কোনো রকমে তরীকে কোলে তুলে রিক্সা ডেকে হসপিটালে নিয়ে ছুটলো তাঁকে। আহসানের সঙ্গে গেল শোভা। মধুবিবিও যেতে চেয়েছিলেন। রুমি বাড়িতে একা বলে রুমিকে ফেলে যেতে পারলেন না। রুমি ভয়ে আতংকে মিইয়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতি চোখের সামনে আগে কখনো দেখেনি সে। তরীকে কোলে তোলা অবস্থায়ই আহসানের হাত র’ক্তে ভিজে গেল। র’ক্তপাত এখনও বন্ধ হয়নি। কী হলো হঠাৎ?

ইমারজেন্সি গাইনি চিকিৎসকের কাছে তরীকে নিয়ে যাওয়া হলো। তরীর তখনও জ্ঞান ফেরেনি। মহিলা চিকিৎসক তরীর সবকিছু চেক-আপ করে আহসানকে বললেন,

” আপনার স্ত্রীর বেবিটা মিসক্যারেজ হয়েছে। পেটে আঘাত পাওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে ধারনা করছি। পেটের সবকিছু এখনও ক্লিয়ার হয়নি। অপারেশন যদিও লাগবে না। কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি। সেগুলো তিনদিন খাওয়ালেই এরমধ্যে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে বেরিয়ে যাবে।”

আহসান টলমলে চোখে সবটা শুনলো। শোভাও নিরুত্তর। যে-ই সন্তানকে ছোঁয়ার জন্য সকলে মুখিয়ে ছিল। সে পৃথিবীতে আসার আগেই সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল? আহসান আর স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারলো না। এতসব মানসিক বিপর্যয় সহ্য করবার মতো ক্ষমতা তাঁর নেই। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে সে ঢলে পরলো হঠাৎ। পুরুষ মানুষের এত নরম হলে চলে কী?

তরীর জ্ঞান ফিরলো সন্ধ্যার দিকে। অতিরিক্ত র’ক্ত ক্ষরন হওয়ায় এক ব্যাগ র’ক্ত দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। আহসানের জ্ঞান হারানোর পরপরই মাজদাক হসপিটালে এসেছেন। র’ক্তের ডোনার তিনিই জোগাড় করেছেন। আহসান কেবিনের সামনে বারবার পায়চারী করছে। তরীর জ্ঞান ফিরছে না কেন এখনও? তখনই শোভা এসে আহসানকে বললেন,

” তরীর জ্ঞান ফিরেছে। ”

আহসান যেন বুকে প্রাণ ফিরে পেল। তরীর গালে এলোপাতাড়ি চুমু খেয়ে বললো,

” শরীর কেমন লাগছে তুবার আম্মু? ভালো লাগছে একটু? পানি খাবে?”

মনের ভুলে সন্তানের নাম নিতেই আহসানের বুক খামচে ধরলো। সন্তানটা যে পৃথিবীতে নেই! এই কথা কীভাবে মুখ ফুটে তরীকে বলবে সে? দূর্বলতায় তরীর মুখ দিয়ে বুলি ফুটছে না। নিম্ন সূরে শুধু কোনো রকমে সে বললো,

” বাবুটা ঠিক আছে বাবুর বাবা?”

আহসান সেই প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না। তরী মাথা ঠেলে বসার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। কোমরের হাড়গুলো যেন গুঁড়ো হয়ে আসছে। পেটেও কেমন চিনচিনে ব্যাথা। তবে, আগের থেকে একটু কম।

তরীর র’ক্তের ব্যাগ শেষ হলো রাত সাড়ে আটটায়। এই কতগুলো ঘন্টায় তরীর সহস্রবার বাবুটার কথা জিজ্ঞেস করেছে। আহসান কিংবা শোভা চোখের পানি আড়াল করে সবটা এড়িয়ে গেছে। তরীকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেই;আহসান তরীকে ধরে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। মধুবিবি দরজার সামনে থেকেই বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,

” বাচ্চাটা ঠিক আছে? সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?”

শোভা মাথা নিচু করে ভেজা চোখে তাকাতেই মধুবিবি সবটা বুঝে গেলেন। অতি শোকে ভুলভাল বকতে লাগলেন। তরীর সামনে গিয়ে চিৎকার করে বললেন,

” শান্তি হইসে তোমার এবার? বাচ্চাটারে খাইয়া শান্তি হইসে? বারবার কইরা বলসি এই কয়টা মাস লাফালাফি, ফালাফালি কইরো না। শুনলা না! এখন যা মন চায় করো! বাচ্চাটারে তো খাইয়াই ছাড়লা!”

তরী এসব শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এসব কী শুনলো সে? তুবা আর নেই? তুবা চলে গেছে? তরী খোঁড়াতে খোঁড়াতে ভেতরে গিয়ে দরজায় দোর দিলো। চিৎকার করে মেঝেতে গড়াগড়ি করে কাঁদতে লাগলো। একটা সময় গিয়ে লক্ষ্য করলো শারীরিক দূর্বলতায় কাঁদার মতো শক্তিও তাঁর শরীরে নেই। আহসান ততক্ষণে দরজায় ধাক্কা দেওয়া শুরু করেছে। তরী কোনো রকমে উঠে বসলো। বিছানার পাশ থেকে টুলটা নিয়ে তাতে উঠে দাঁড়ালো। আলমারি থেকে একটা ওরনা নিয়ে ফ্যানটা বন্ধ করে তাতে বাঁধলো। এতকিছু সইবার মতো শক্তি তাঁর নেই। এরচেয়ে ম’রে যাওয়া ঢেরবেশি ভালো। টুলটায় দাঁড়িয়ে গলায় ফাঁ’স দেওয়ার ঠিক অন্তিম মুহূর্তে দরজা ভেঙে আহসান ঘরে ঢুকলো। ভেতরের দৃশ্যপট দেখে কিছু বুঝতে আর বাকি নেই তাঁর। শোভা আর আহসান দৌড়ে গিয়ে তরীকে সেখান থেকে নামালো। নিচে নেমে দাঁড়াতেই তরী আবার জ্ঞান হারালো! আহসান কোনো রকমে বিছানাটা ঠিক করে তরীকে সেখানে শোয়ালো। বড্ড হাসফাস লাগছে। বুকের ভেতরটায় কেমন খাঁ খাঁ করছে।
পেট অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাথায় তরীর জ্ঞান ফিরলো। শরীরে একরত্তি শক্তি অবশিষ্ট নেই। মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। তলপেটে চিনচিনে ব্যাথায় তরী আবারও পাশ ফিরে শোয়ার চেষ্টা করলো। আহসান প্লেটে তরীর জন্য ভাত নিয়ে ঘরে ঢুকলো। তরীর মুখে খাবার পুরে দিতে চাইলে; তরী মুখ সরিয়ে নিয়ে বললো,

” আমি খাবো না। নিয়ে যান এগুলো।”

আহসান তরীর বারন শুনলো না। জোর করে তরীর মুখে খাবার দিতে চাইলে তরী চিৎকার করে বললো,

” বললাম তো খাবো না! আপনারা কেন আমার কথা কেউ শুনছেন না? বাবুটাও আমার কথা শুনলো না। কত আদর করে আগলে রেখেছিলাম। অভিমান করে চলে গেল। সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যায়। সবাই চলে যায়! আমি কী করেছি আহসান? বাবা চলে গেল আমাকে ছেড়েও। বাবুও আম্মুকে বুঝলো না।আমাকে কেউ কেন ভালোবাসে না? সবাই কেন দূরে সরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়?”

আহসান কোনো জবাব দিলো না। হাত দিয়ে ভেজা চোখটা মুছে নিলো। তরী আহসানের বুকে মাথা রাখলো। স্বামী, স্ত্রী উভয়ের চোখে পানি। তরীর চোখের পানিতে আহসানের যে বুক ভেসে যাচ্ছে। তা কী জানে তরী? তরী কাঁদতে কাঁদতে বললো,

” বাবুটা যখন এলো। আমি খুব কেঁদেছিলাম। কেন কেঁদেছিলাম তা জানি না। ভয় হতো বাবুর কথা শুনে যদি আমার আদরের ভাগ কমে যায়? মনে মনে খুব রাগ হয়েছিল বাবুর ওপরে। বাবুটা পরে এলেও তো পারতো? কিন্তু, পরে রাগটা যে কোথায় গায়েব হয়ে গেল! সারাদিন আমি মনে মনে বাবুর সঙ্গে গল্প করতাম। বাবুকে গান গেয়ে ঘুম পারাতাম। বাবু বোধহয় আমার সঙ্গে রাগ করেই চলে গেছে। বাবু কেন চলে গেল? আমি তো ওকে খুব ভালোবাসতাম! বাবু কেন মাকে বুঝলো না? কেন অভিমান করলো?”

আহসান কোনো জবাব দিতে পারলো না। আহসানের চোখের পানিতে বালিশটা কেমন ভিজে যাচ্ছে। আহসান বিরবির করে শুধু বললো,

” বাবা আর আম্মু তোমাকে অনেক ভালোবাসে তুবা। তুমি কেন মিছে রাগ করে চলে বাবা?”

চলবে…..

‎#নিকুঞ্জ_কানন
‎#নুজহাত_আদিবা
[পর্ব ২১]

” দিলশান!”

নিজের নাম কোনো ভরাট পুরুষালি কণ্ঠে শুনতে পেয়ে দিলশান পিছু ফিরে তাকালো। কী অনাকাঙ্খিত এক সাক্ষাৎ! যাকে দিলশান এই স্থানে কখনো ভাবেইনি;সে আজ দিলশানের দুয়ারে কড়া নাড়ছে? দিলশান ধ্যান-জ্ঞান বাদ দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। দিলশানের সামনে উপস্থিত ব্যাক্তিটি আর কেউ নয়। তাঁর নাম সৌম্য শিকদার। যাকে দিলশান মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে এসেছে। দিলশান জড় বস্তুর মতো অসাড় হয়ে দাঁড়িয়েই রইলো। সৌম্যই এগিয়ে এসে বললো,

” কেমন আছো স্বপ্ন নগরীর দিলশান হায়াত?”

দিলশান তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,

” ভালো! তুমি? আর তুমি এখানে কেন? আমার স্কুল চিনলে কীভাবে? ”

সৌম্য নির্দ্বিধায় বললো,

” মনের সংযোগ। যাঁর প্রতি টান থাকে তাঁর খবর ঠিকই কান অবধি চলেই আসে। এতদিন প্রয়োজন বোধ করিনি তাই কখনো তোমার কাছে আসিনি। এখন প্রয়োজন বোধ করছি তাই এসেছি।”

দিলশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

” তবে, নিজের প্রয়োজনেই কাছে টানছো?”

সৌম্য জবাবে বললো,

” তা বলতে পারো।নিজের লাভ নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। তোমার সঙ্গে আমার স্বার্থ জড়িয়ে আছে দিলশান। নিজের স্বার্থের জোরেই কাছে টানছি।”

দিলশান ঠোঁট কামড়ে উত্তর দিলো,

” আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই সৌম্য। আর স্বার্থ? তোমার কী এমন স্বার্থ আমার সঙ্গে জড়িত আছে সৌম্য?”

সৌম্য দিলশানের কিছুটা কাছে এগিয়ে এলো। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। আশেপাশে বাচ্চাদের কলরবের আওয়াজ ও শোনা যাচ্ছে না। চারিপাশে কেমন সুনসান নীরবতা। এর মধ্যেই সৌম্য বললো,

” তোমাকে আমি ভালোবাসি। যাকে আমি ভালোবাসি তাঁর সঙ্গে আমি সুখী থাকবো। এটাই আমার স্বার্থ। এই স্বার্থের আর্বতনে তাই তোমাকেই খুঁজে পেতে চাইছি।”

দিলশানের চোখ ভিজে আসছে। সৌম্য তাঁর এত কাছের কবে হয়ে উঠলো? কিন্তু, সৌম্যের জীবনটা নষ্ট করার অধিকার তাঁর নেই। সৌম্য তাঁর কাছ থেকে প্রাপ্য সুখটুকু কখনোই যে পাবে না। দিলশান শুধু চোখের অশ্রুটুকু আড়াল করতে করতে বললো,

” সৌম্য আমরা একটু কোথাও বসি? নিরিবিলি জায়গা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। আমার কিছু কথা ছিল তোমার সঙ্গে? ”

সৌম্য যেন আকাশের চাঁদ পেল হাতে। কিছু বলার আগে দিলশানই নিজে একটা রিকশা দাঁড় করিয়ে উঠে পরলো সেটাতে।

সময়টা তখন দুপুর দু’টো। অনেকটা নীরবই বলা চলে চারপাশটা। দিলশান কফিতে চুমুক দিলো। ছোট্ট একটা ক্যাফেটেরিয়াতে বসেছে তাঁরা। গ্রাম্য এলাকা বিধায় মানুষের আনাগোনা এবং ফ্যাসিলিটি দুটোই খুব কম। সৌম্য গভীর মনোযোগ দিয়ে দিলশানকে পর্যবেক্ষন করছে। দিলশান ছোট্ট ঢোক গিলে বললো,

” নতুন করে তোমাকে আর কোনো সাফাই দিতে চাইবো না। আমার একটা মিসক্যারেজ ছিল। সাড়ে পাঁচ মাসের ছিল বেবিটা। মিসক্যারেজ হওয়ার পর থেকে অনিয়মিত পিরিয়ডসহ, চকলেট সিস্টে ভুগছি। তুমি শিক্ষিত মানুষ তাই এসব লুকোনোর কিছু নেই। ভবিষ্যতে আমার মা হতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম। ডক্টর বলেছেন বাচ্চার আশা ছেড়ে দিতে। আমিও জীবনে বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছি। তাই, সেসব নিয়ে এখন ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। তুমি একটা অবিবাহিত ছেলে সৌম্য। তোমার ফ্যামিলির তোমার কাছ থেকে কিছু এক্সপেক্টটেশন আছে। তোমার একজন সন্তানের বাবা হওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে।আমি কখনো তোমাকে সন্তানসুখ দিতে পারবো না। তুমি কেন মিছে আশায় এখনও বুক পেতে রয়েছো? ভুলে গিয়ে একটু নতুন করে শুরু করো। সমাজের ব্যাপারেও কিছু ভাবো? সমাজ কী বলবে?”

সৌম্য কড়া গলায় বললো,

” সমাজ, ফ্যামিলি এ-সব আমি সামলে নিবো। সমাজের ধার আমি কখনোই ধারিনি। ভবিষ্যতেও ধারবো না। আমার বাবা এবং মা কেউ বেঁচে নেই দিলশান। আমার পরিবার বলতে ছোট্ট একটা ভাই রয়েছে শুধু। পরিবার থাকলেও আমি সবকিছুর উর্ধে গিয়েও তোমাকেই চাইতাম।”

দিলশান সৌম্যের হাতটা ধরে নরম গলায় বললো,

” সৌম্য জীবনটা একটা কঠিন কুরুক্ষেত্র। আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিও না। বিবেক দিয়ে একটু ভাবো। নিজেকে নিয়ে একটু চিন্তা করো। তুমি কেন বুঝতে পারছো না?”

সৌম্য দিলশানের দিকে তাকালো। নির্বিগ্নে জবাব দিলো,

” বুঝতে পারছি দিলশান। আমি যত সবটা বুঝতে পারছি। আমার বিবেক ততটাই আমাকে বারবার চিৎকার করে বলছে তোমাকে নিজের কাছে টেনে নিতে। আবেগের বয়সটা আমার আর নেই দিলশান৷ আমি পূর্ণ মস্তিকেই সবটা ভেবেছি। আগে একবার নিজের অযোগ্যতার ভুলে তোমাকে হারিয়েছি। এবার হারালে নিজেকে আর কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।”

দিলশান চুপচাপ সবটুকু শুনলো। সৌম্যের দিকে তাকিয়ে মিনিটখানেক পর বললো,

” আচ্ছা। তুমি যদি আমার অতীত, আমার বর্তমান সবটা মেনে নিয়ে; আমার পরিবারকে রাজি করাতে পারো। তবেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি।”

সৌম্যের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। দিলশানের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সে বললো,

” যদি তোমার পরিবারের পায়েও ধরতে হয়। আমি তাতেও রাজি! আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করবো। এটা তোমার কাছে আমার ওয়াদা রইলো দিলশান হায়াত।”

তরীর মেডিসিন কোর্সের আজ দ্বিতীয় দিন চলছে। শরীরে প্রচুর জ্বালাপোড়া অনুভব হয় তাঁর। আয়রনের পাওয়ারফুল বেশ কিছু সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সেগুলো খেয়ে সারাদিন তাঁর সেভাবে কোনো জ্ঞান থাকে না। ঘুমের ঘোরে ঘোরেই দিন কেটে রাত হয়ে যায়। তবুও যতটুকু সময় সে জাগ্রত থাকে; চোখের পানির বাঁধ বন্ধ হয় না। মধুবিবি অনুশোচনা ও অর্ন্তদহনে পুড়ে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন। তরীকে সেদিন অমন একটা পরিস্থিতিতে ওসব বলা তাঁর একদমই উচিত হয়নি। কাল রাতে যখন তরী শোভার পায়ে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল; মধুবিবি তখন বিবেকের দশংনে তরীর কাছে ছুটে গিয়েছেন। তরীর মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে বলেছেন,

” মাগো আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়া গেছে। বান্দায় কী আর বান্ধা দিতে পারে? আল্লাহ তোমারে পরীক্ষা করসে। আল্লাহর উপরে ধৈর্য ধরো তাওয়াককুল রাখো মা। আল্লাহ তোমার থেইকা যা নিয়া গেসে তাঁর চেয়ে তোমারে অনেক বেশি দিবো। তোমার এই সন্তানই কেয়ামতের দিন তোমারে জান্নাতে নিয়া যাইবো। জন্ম,মৃত্যুর মালিক হইলো গিয়া আল্লাহ। সে যদি না দিতে চায় তুমি কী জোর কইরা কিছু করতে পারবা? আল্লাহর উপরে ভরসা কইরা মাইনা নেও। আল্লাহ তোমার জন্য এরচেয়েও ভালো কিছু রাখসে।”

মধুবিবির নরম সূরে বলা কথাগুলো শুনে তরী সত্যি সত্যি খুব শান্তি পেয়েছিল। রব কী তরীর পরীক্ষা নিলেন? সত্যি কী এরচেয়ে ভালো কিছু তরীকে ফিরিয়ে দেবেন?

আহসান কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরলো রাত নয়টায়। তরীর প্রতি বিশেষ যত্নশীল সে। আহসান বাড়িতে থাকলে বেলার ঔষধ বেলায় নিজেই এগিয়ে দেয় তরীকে। সে বাড়িতে অনুপস্থিত থাকলে শোভাকে সবটা বুঝিয়ে দেয়। তরীর মন ভালো করার খুব চেষ্টা করে সে। আহসান নিজেকে সামলে নিয়েছে অনেকটাই। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্ত সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। এর ওপরে মানুষের কোনো মতামত চলে না। আহসান একটা সাদা ছোট্ট প্যাকেট হাতে ঘরে ঢুকলো। তরী আহসানকে দেখামাত্রই হেলান দিয়ে বসলো। চোখভর্তি ক্লান্তি আর দূর্বলতা নিয়েই বললো,

” আপনার আজ এত দেরি হলো যে?”

আহসান ছোট্ট প্যাকেটটা তরীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

” কাজ শেষ হতে হতে দেরি হয়ে গেছে। তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি তরী। খুলে দেখো পছন্দ হয় কিনা।”

তরী কাঁপা হাতে ব্যাগটা কোনোমতে তুলে ধরে বললো,

” কী আছে এতে?”

আহসান গামছায় মুখ মুছতে মুছতে বললো,

” একটা মোবাইল ফোন। আমার ইচ্ছে ছিল তোমাকে ভালো একটা ভার্সিটি এডমিশন কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে দেবো। কিন্তু, আমাদের এদিকে সেরকম ভালো এডমিশন কোচিং সেন্টার নেই। যেগুলো আছে তাও নিম্নমানের। তাই একটা মোবাইল কিনে এনেছি। তুমি বাড়িতেই বসে বসে অনলাইনে ক্লাস করবে। আমি তোমাকে ভালো দেখে কোর্স কিনে দেবো। তোমার শরীরটাও সেভাবে ভালো নেই। ক্লাস করতে গিয়ে এত দোর ঝাঁপ সহ্য হবে না। মোবাইলটা ব্যবহার করে জানিও কেমন লেগেছে। যদিও খুব বেশি দামী না ফোনটা। আসলে তোমার গরীব বরের সার্মথ্য এর থেকে বেশি নেই।”

তরী ফোনটা খুলেও দেখলো না। মন-শরীর কোনোটাই সায় দিলো না। পরিস্থিতি এমনটা না হলে অবশ্যই ফোনটা দেখে মনে ভীষণ আনন্দ হতো। আহসানকে জড়িয়ে ধরে চুমু-টুমু খেয়েও ফেলতে পারতো। তরী ফোনের ব্যাগটা বিছানার ওপরে রেখে বললো,

” আপনি আমায় ভালোবেসে যা দেবেন তাই আমি খুশিমনে গ্রহন করবো। সবাই নিজের পছন্দের মানুষকে নিজের সর্বোচ্চটাই দেওয়ার চেষ্টা করে।আপনি যাই দেবেন না কেন আমাকে। আমি কখনোই সেটার মূল্য বিবেচনা করতে পারবো না। ভালোবাসা কী কখনো মূল্যে অর্থে পরিমাপ কর যায়?”

আহসান তরীর দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে রইলো। তরী কবে এত বড় হয়ে গেল? কোথায় কবে যেন কে বলেছিল না? মেয়েদের ম্যাচিউরিটি, পরিপক্বতা আসে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে। সে একদম ভুল বলেছিল। মেয়েদের ম্যাচিউরিটি, পরিপক্কতা আসে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে থাকলে। আহসানের ভাবনার মাঝেই তরী মৃদু আর্তনাদ করে উঠে দাঁড়ালো। দু’পায়ের মধ্যখান হতে চিকন র’ক্তের স্রোত বয়ে চলেছে। তা দেখে আহসান আঁতকে উঠে বললো,

” এখনও র’ক্তপাত বন্ধ হয়নি তরী?”

তরী কোনোরকমে বিছানা চেপে ধরে বললো,

” না। মেডিসিন কোর্সের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন র’ক্তের সঙ্গে পেটের সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। মা আমাকে দুপুরে সব বুঝিয়ে বলেছিল।”

আহসান তরী ধরে কোনো রকমে বিছানায় বসালো। তরীর র’ক্ত দেখলে মাথা ঘোরে। তাই সে আহসানকে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। পেটে আস্তে আস্তে চাপ বেড়েই চলেছে। একটা সময় তরী আহসানের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। পেটটা কেমন মুড়িয়ে কামড়ে ধরছে যেন। আহসান বুঝতে পারলো আসলেই এন্টিবায়োটিক কোর্সের প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। তরীর নুইয়ে পড়া অবস্থা দেখে সে তরীর জন্য একটা স্যালাইন গুলে আনলো। তরীকে ধরে কোনো রকমে সেটা খাইয়ে দিলো। লাল রঙের রঞ্জক পদার্থে ভেসে যাচ্ছে তরী। বিছানা এবং মেঝেতে র’ক্তের ছিটেফোঁটা দেখে তরী বারবার চোখ সরিয়ে নিতে চাইলো। আহসান তা লক্ষ্য করে একটা পরিস্কার কাপড় এনে মেঝেটা মুছে দিলো। তরী পেট ধরে উঠে দাঁড়িয়ে আহসানের হাত থেকে কাপড়টা ছিনিয়ে নিয়ে বললো,

” একি আপনি কেন এসব করছেন? একটু অপেক্ষা করুন। ব্লি’ডিং কমলে আমি মেঝেটা মুছে ফেলবো। সারাদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরেছেন। আমি করে নেবো সবটা। আপনি এখন বিশ্রাম নিন।”

আহসান তরীর হাত থেকে কাপড়টা নিয়ে বললো,

” তুমি বিশ্রাম করো তরী। তুমি অসুস্থ আমি অসুস্থ নই। আমার বিশ্রামের কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার জীবনের কঠিন মুহূর্তেই যদি আমি তোমার পাশে দাঁড়াতে না পারি তবে আমি কেমন স্বামী? সম্পর্ক শুধু দায়িত্বের খাতিরে গড়ে ওঠে না তরী। শুধুমাত্র ভাত, কাপড়ের জন্য তোমার বাবা-মা ভরসা করে তোমাকে আমার কাছে দেননি। আমি চাই আমার বুকটা, আমার কাঁধটা, আমার হাত দুটো এবং কী আমার পুরো শরীরটা তোমার একটা ভরসাস্থল হোক তরী। জীবনে যদি কোথাও গিয়ে আঁটকে পড়ো কিংবা দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়; তাহলে একবারের জন্য হলেও আমার নামটা নিও তরী। আমি যতদিন বেঁচে আছি আমি তোমায় কখনোই অবজ্ঞা করবো না। তুমি আমার স্ত্রী, আমার ভালোবাসার জায়গা। তুমি আমার বেটারহাফ। আমার অর্ধেকটা অংশ অর্থাৎ আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি। নিজেকে আমি খুব ভালোবাসি তরী। তুমি তো আমারই বেটারহাফ৷ আমারই একটা খন্ডাংশ। তোমাকে আমি না ভালোবেসে পারি তরী? যাকে ভালোবাসা যায় তাঁকে কখনোই অবহেলা করা যায় না তরী।”

তরীর এবার কিছুটা ভালো লাগছে। র’ক্ত মাখা কাপড়টা সে ছেড়ে এসে বিছানায় বসলো। আহসান ততক্ষণে বেডসিটটা পাল্টে দিয়েছে। তরী কোনো রকমে শরীর এলিয়ে দিয়ে আহসানকে উদ্দেশ্য করে ভারাক্রান্ত মনে বললো,

” আহসান, বাবুর চলে যাওয়ার জন্য কী আপনি আমাকে দায়ী করেন? আমাকেই দায়ী মনে হয় কী আপনার? আমি যদি জানতাম তাহলে পুকুর পাড়ে কোনোদিনই যেতাম না বিশ্বাস করুন!”

আহসান ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললো,

” না। আমি বিশ্বাস করি সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তের ওপরে হস্তক্ষেপ করার অধিকার মানবজাতির নেই। জন্ম, মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। তুমি আমি এসব নিয়ন্ত্রণ করার কে তরী? আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। আমার রিজিকে যা ছিল না; তা আমি পাইনি। মানুষ যখন সত্যকে আপন করে নিতে পারে না। তখনই নানা ছুঁতোয় অন্যের ওপর দোষ চাপায়। আমি তো জানি সত্যটা। অযথা তোমায় দোষের ভাগীদার কেন বানাবো?”

তরী শাড়ি পাল্টে নেওয়ার সময় ঘরের ওদিকটায়ও অনেকটা র’ক্তের ছিটেফোঁটা পড়েছে বলে আহসান; ছোট্ট বালতি হাতে মেঝের ওপাশটা মোছার জন্য পানি নিয়ে এলো। মেঝে মোছার সময় সে লক্ষ্য করলো মেঝেতে র’ক্তসহ এক দলা মাংস। আহসান তরীর অগোচরে দলাসহ মাংস পিন্ডটাকে বুকে আগলে ধরলো। এটা তাঁর সন্তান; তাঁর তুবা! কে জানে আদৌও তুবা কিনা। সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারনের আগেই তো সে চলে গেল।

চলবে….