#নিকুঞ্জ_কানন
#নুজহাত_আদিবা
[পর্ব ২২]
” মা সকালে ফোন করেছিল। বললো শরীরটা ভালো হলে ঘুরে যেতে। মা নিতে আসতো কিন্তু গুনগুনের পরীক্ষা চলছে। তাই আমি নিষেধ করেছি। আপনি যেতে দেবেন আমায় ও-বাড়ি?”
আহসান তখন কাজে যাবে। সদ্য গোসল সেরে বাইরে এসেছে সে। তরীর কথা শুনে সে মাথা মুছতে মুছতে বললো,
” তোমার কী মতামত তুলতুল?”
তরী ইনিয়েবিনিয়ে বললো,
” আসলে মন-মেজাজ কোনোটাই সেভাবে ভালো নেই। যদি হাওয়া বদল হতো তাহলে খুব ভালো লাগতো। তাই ভাবছিলাম ক’টা দিন থেকে আসবো।”
আহসান তরীর কাছে এগিয়ে এলো। ভেজা চুলগুলো ঝাঁকিয়ে চুলের পানি গুলো তরীর মুখে ফেললো। তরীর গালের সঙ্গে নিজের গালটা মিশিয়ে নিলো। ছোট্ট ছোট্ট চাপা দাঁড়িগুলো তরীর গালে ঘঁষে দিলো। তরী সুরসুরিতে চোখ বন্ধ করে ফেললো। নরমসূরে বললো,
” কী করছেন? ভিজে যাচ্ছি তো!”
আহসান তরীর থুতনিতে চুমু খেয়ে বললো,
” বেশ যাও! তুমি ভিজে যাও, ডুবে যাও, ভেসে যাও। কিন্তু পানিতে না আমার প্রেমে!”
তরী লজ্জায় কোনো উত্তর দিতে পারলো না। কী করে সে লোকটাকে বলে? তরী যে বহুপূর্বেই মন হারিয়ে তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে স্রোতের টানে ডুবতে চলেছে? আহসান আর ক্ষনকাল ও দেরি করলো না। তরীর লাজুক ঠোঁটে টুপ করে চুমু খেয়ে ফেললো! তরী লজ্জায় চোখ বুঁজে ফেললো।
দীর্ঘসময় পরও আহসানের কোনো হেলদোল নেই। তাঁর মতলব টের পেয়ে তরী নিজেকে কোনো রকমে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললো,
” আমি যাচ্ছি তৈরি হয়ে নিচ্ছি। আপনি যাওয়ার সময় আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবেন। আমি কিন্তু কিছুদিন থাকবো।”
আহসান ভ্রু কুঁচকে বললো,
” আমি কী নিয়ে থাকবো তাহলে?”
তরী দুষ্টুমির ছলে বললো,
” কোলবালিশ! ”
বলেই সে জামাকাপড় নিয়ে দ্রুত পালালো। আহসান তরীকে হাত দিয়ে টেনে ধরে নিজের কাছে আনতে চাইলো। তরী তাঁর আগেই চম্পট!
.
তরীকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সময় আহসান তরীর সঙ্গে ভেতরে গেল। মনোয়ারা আহসানকে বারবার করে দুপুরের খাবার খেয়ে যেতে বললেন। আহসান কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেল। যাবার সনয় দরজার সামনে দাঁড়ানো গুনগুনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
” ফোকলা! ”
ব্যস আর গুনগুনের কান্না থামায় কে? সামনের দু’টো দাঁত নেই গুনগুনের। তা নিয়ে গুনগুনের রাগের শেষ নেই। স্কুল থেকে শুরু করে পাঁড়ার বাচ্চারা অবধি তাঁকে ফোকলা ডাকে। দাঁত দুটো একাই পড়ে গেছে। এতে গুনগুনের কী দোষ? গুনগুন মেঝেতে হাত, পা ছুঁড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
” বুবু তোমার বর আমাকে ফোকলা বলেছে! কেন আমাকে ফোকলা বললো? তুমি ওনাকে বকে দাও বুবু! পঁচা লোক! সবসময় শুধু আমার বুবুকে নিয়ে যায়!”
আহসানের পাঞ্জাবীর নিচের অংশ ধরে টানতে টানতে সে ফের বললো,
” আপনি এরকম কেন? আমি তো আপনার বুবুকে নিয়ে যাই না। আপনি কেন আমার বুবুকে নিয়ে যান?”
গুনগুনের প্রশ্ন শুনে মনোয়ারা, তরীসহ আহসানের অবধি মাথায় হাত। এই ভয়ানক প্রশ্নের কী উত্তর দেবে সে?
★
রুমি আজ কলেজ থেকে একা একা বাড়ি ফিরছে। মাজদাক আর আহসান মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে রুমি একা একা কলেজে যাবে। বাড়ি থেকে রুমির কলেজ অনেকটাই কাছে। তরীর মতো ওতোটা দূরে নয়। তাই রুমি এখন একাই কলেজে যাতায়াত করে। রুমি স্বভাবে একটু ভীরু। মাজদাক বলেছেন রুমিকে এখনই একা একা বের হতে দিলে একটু একটু করে সে বাইরে চলাফেরা করা শিখবে। দিনকয়েকই ধরেই তাই একাই যাতায়াত করে সে। আজ অদ্ভুত এক জিনিস ঘটলো। কলেজ থেকে ফেরার পথে রোজ রুমির অগোচরে রঙ্গন তাঁকে দেখে। তাঁর পিছুও নেয়! আগে না বুঝলেও আজ বিষয়টা গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারলো রুমি। রঙ্গন আজ বেখেয়ালে রুমির কাছে বাজে ভাবে ধরা পরে গেল। রুমি প্রথমে প্রচন্ড চমকিত হলেও পরে রঙ্গনকে দেখে বললো,
” একি রঙ্গন ভাই আপনি এখানে?”
রঙ্গন সবকিছু আড়াল করে মিথ্যে অভিনয় করে বললো,
” রুমি তুমি এখানে? এখানে কী করছো?”
রুমি কলেজ ব্যাগটা কাঁধের ওপাশে নিয়ে বললো,
” কলেজ ড্রেস পড়ে আছি দেখছেন না রঙ্গন ভাই?”
রঙ্গন চোখমুখ কালো করে বললো,
” আমাকে এত ভাই ভাই বলে মাথা খাবে না রুমি।”
রুমি কিছু না বুঝতে পেরে বললো,
” তো কী ডাকবো তালোই? আপনি তো আমার ভাই-ই! ভাইয়ের বন্ধু তো ভাইয়েরই মতো।”
রঙ্গন মনে মনে বিরবির করে বললো,
” ভাইয়ের মতো আর ভাইয়ের মধ্যে তফাত আছেরে বউ! তোর অল্প মগজের মাথায় এই কথা ঢুকবে নারে! শুনতে চাই জামাই খোদায় শোনায় ভাই! কপালের মধ্যে আমার জুতার বারি!”
রঙ্গনকে বিরবির করতে দেখে রুমি আর দাঁড়ালো না। দুপুর হয়ে যাচ্ছে তাই সে বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো। রঙ্গনই তাঁকে চলে যেতে দেখে দৌড়ে এসে বললো,
” কোথায় যাচ্ছো রুমি?”
রুমি দ্রুত পা চালাতে চালাতে বললো,
” বাড়িতে! আর কোথায় যাবো রঙ্গন ভাইয়া?”
রঙ্গন কপাল ঠোঁট কুঁচকে বললো,
” দরকার হইলে কলিজার মধ্যে উইঠা একটা ফাল মা’রো রুমি! তাও কানের কাছে আইসা ভাই ভাই কইরা চিল্লাইয়ো না। আমার মন নষ্ট! আমি তোমারে মোটেও ভাইয়ের চোখে দেখি না।”
কথাটা বলে রঙ্গন আর এক মিনিটও দাঁড়ালো না। রুমির ঠিক উল্টো পথে হাঁটা ধরলো। রুমি আক্কেলগুড়ুম হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হলো কী এটা? পাগলা এত রেগে গেল কেন?
রঙ্গন তেড়েফুঁড়ে বাড়িতে ঢুকেই উঠোনের চাপ কলে মাথা দিয়ে বসে রইলো। হঠাৎ রঙ্গনের এই অবস্থা দেখে নাহার বেগম ছুটে এসে বললেন,
” কী হইসে বাপ?”
রঙ্গন ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বললো,
” কী আর হইবো কিছু হয় নাই! আমার কপালটাই হইসে একেবারে মার্কামা’রা! ভাল্লাগে না আর কিছু। জীবনডারে একেবারে তামা কইরা জ্বা’লায়া দিলো!”
নাহার বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন,
“কী হইসে? কেউ কিছু কইসে বাপ?”
রঙ্গন দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বললো,
” আপনার থাকতে আর কেউরে লাগে? আমার হাড়মাস কালি করার উপরে আপনে মাস্টার্স ডিগ্রি নিসেন। জিন্দেগীটা পুরা পাগলাগারদ বানাইয়া রাখসেন। সম্পর্ক এক নিমিষে বদলাইয়া যাইতাসে। যাঁর মুখ থেকে বাবুর বাপ শোনার কথা সে এখন ভাই ডাকে। সব হইসে আপনার লাইগা। সময়ের কাছ সময়ে করেন না। বিয়াশাদীর বয়সে বউয়ের বদলে বোন কোলে নিয়া ঘুরতাসি! আমার চান্দি জ্বলতাসে মাথায় পানি দেন আম্মা!”
নাহার বেগম উঠোন থেকে কচি চুোো জ্বালানোর লাকড়ি হাতে উঠিয়ে রঙ্গনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
” খাওয়াইতাসি তোরে পানি ভালো কইরা। আয় পানি খাইয়া যা।”
এটুকু বলেই লাকড়ি হাতে রঙ্গনের পিছু ছুটলেন। রঙ্গন মা’রের ভয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিলো। নাহার বেগম পুকুরে পাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললেন,
” উইঠা আয় গোলামের পোলা! আমি যদি পুকুরে নামি তো তোরে ডুবায়া ছাড়ুম! এখনই উপরে আয়!”
রঙ্গন গলা অবধি পানিতে বসে থেকে বললো,
” আমার বাপের নাম আবুল কাসেম ব্যাপারী। আপনি গোলামের পোলা ডাকেন কেন? নিজের জামাইর কথা ভুইলা খাইয়া ফালাইসেন? ও আব্বা আম্মা আপনারে ভুইলা গেসে! গোলাম না কার সাথে জানি আপনারে গুলায়া ফালাইসে!”
নাহার বেগমের মেজাজ আরো ভরকে গেল। মাটিতে অনবরত লাকড়ি দিয়ে আঘাত করতে করতে বললেন,
” তুই আজকে খালি ঘরে আয়! তোর কইলজা কাইট্টা গ্রামের ঘরে ঘরে বিলামু!”
রঙ্গন সে-সব কানেও তুললো না। মা’রের ভয়ে পুকুরে বসে রইলো টানা তিন ঘন্টা। আস্তে আস্তে যখন দেখলো শরীর কেমন গরম হয়ে আসছে। শীত শীত লাগছে তখন কোনোরকম সাঁতার কেটে পুকুর পাড়ে এলো। ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকতেই নাহার বেগম পিঠে দু’ঘা দিয়ে বললেন,
” এতক্ষন কই ছিলি? কখন থেইকা ভাত বাইরা বইসা আছি। আমার মানুষ মনে হয় না তোর?”
রঙ্গন কাপড় ছেড়ে বিছানায় শুয়ে বললো,
” পরে খামু। প্লেটে উঠায়া রাখেন।”
রঙ্গন গরমের মধ্যেও কাঁথা মুড়ি দিয়ে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে। তিরতির করে ঠোঁটটা কেমন কাঁপছে। নাহার বেগম ঘরে এসে রঙ্গনকে অসময়ে ঘুমোতে দেখে আতংকিত হয়ে উঠলেন। ভীত হয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। রঙ্গন জ্বরের ঘোরে বিরবির করে কী সব যেন বলছে। নাহার বেগম রঙ্গনের মাথায় জলপট্টি দিলেন। কপালে চুমু খেয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
” সব সময় পাগলামি করোস কেন বাপ? কত বুঝাই তাও গো ধইরা বইসা থাকোস। মা’রে বুঝোস না বাপ? তোর বাপ যাওয়ার পর থেইকা তোরে আকরাইয়া ধইরা কোনো রকমে বাইচা আছি। তুইও আমারে বুঝোস না!”
রঙ্গন জ্বরের ঘোরে কিছুই বুঝলো না। বিরবির করে বারবার সে ‘রুমি’ ‘রুমি’ বলে কী সব আকুতি মিনতি করছে।
★
গুনগুন তরীর সঙ্গে পুতুল পুতুল খেলার ছলে তরীকে বললো,
” বুবু বাবুটা তোমার কাছে কী আমার নামে আর কিছু বলেছে?”
তরীর বুকে যেন একটা ধাক্কা লাগলো। গলা দিয়ে কোনো স্বরই বের হলো না। মনোয়ারা চোখ রাঙ্গিয়ে গুনগুনের দিকে তাকাতেই গুনগুন থেমে গেল। তরী চোখের জল আড়াল করতে পাশের ঘরে চলে এলো। বিছানার বালিশে মুখ গুঁজে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মনোয়ারা দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তরীর কষ্টে তাঁর মনে পুড়ে যাচ্ছে। মনোয়ারা তরীর মাথার কাছে এসে বসলেন। তরীকে আদর করতে করতে বললেন,
” আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নাও মা। সৃষ্টিকর্তার উপরে কী আর কথা চলে? আল্লাহ তোমার কোল আবার ভরিয়ে দেবেন। দুঃখ পেও না মা।”
তরী হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,
” আল্লাহ বাবুর জায়গায় আমার প্রাণটা নিয়ে নিতো! তাও তো হতো!”
মনোয়ারা তরীকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
” কখনো নিজের মৃত্যু কামনা করতে হয় না। যা হয় ভালোর জন্যই হয়। ভাগ্যকে মেনে নাও গো মা।”
তরী কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলো। রাতে মনোয়ারা তরীকে ঘুম থেকে তুলে তরী আর গুনগুনকে খাইয়ে দিলেন। তরী ঘুমু ঘুমু চোখে খাবারগুলো শেষ করলো। খেয়ে-দেয়েই আবার ঘুমোতে গেল। বিচ্ছিরি আয়রনের ঔষধগুলো খেয়ে সারাদিন কেমন ঘুম ঘুম পায় শুধু। তরী চেয়েছিল ঔষধগুলো খাওয়া বন্ধ করে দেবে। আহসানের বকুনিতে তা আর সম্ভব হয়নি।
গুনগুনও তরী দুজনেই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। বাড়ির ফটক দরজা ভেতর থেকে তালা দেওয়ার সময়ই দরজায় করাঘাত পরলো। মনোয়ারা দরজা খুলে দাঁড়াতেই দেখলো আহসান দাঁড়িয়ে। মনোয়ারাকে দেখেই সালাম দিয়ে বললো,
” মা তরী আছে?”
মনোয়ারা আহসানকে বসতে বলেই তরীকে ডাকতে গেলেন। তরী তখন সবেমাত্র চোখটা বুজেছে। মনোয়ারার ডাকে কোনো রকমে চোখ খুলে বিরক্তি নিয়ে সে বললো,
” কী হয়েছে? খেয়েই তো শুয়ে এলাম। আবার ডাকছো কেন?”
মনোয়ারা ফিসফিস করে বললেন,
” আস্তে কথা বল।আহসান এসেছে; পাশের ঘরে বসে আছে।”
আহসানের কথা শুনতেই তরীর ঘুম লাটে উঠলো। আহসান এসেছে? এত রাতে? কেন এসেছে? কোনো বিপদ হয়নি তো? তরী শোয়া থেকে উঠে বসলো। দ্রুত শরীরের কাপড় ঠিক করে পাশের ঘরে গেল। সত্যি সত্যিই আহসান এসেছে! তরী হাই তুলতে তুলতে বললো,
” আপনি? এত রাতে কোথা থেকে এলেন? কী হয়েছে? সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?”
আহসান তরীকে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলো। কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,
” বউকে দেখতে এলাম। যতই হোক আমার একটা মাত্র বউ বলে কথা।”
তরী আহসানের বুকে হেলে পড়ে বললো,
” কেন? আরো দুটো বিয়ে করার শখ আছে নাকি?”
আহসান মৃদু হেসে বললো,
” তুমি অনুমতি দিলে ভেবে দেখতে পারি। একটা বউকে খাওয়াতে পড়াতে পারলে; আরো দুটোকেও পারবো। আমার কোনো সমস্যা নেই।”
তরীর বড্ড রাগ হলো। আহসানের বুকে একখানা কামড় বসিয়ে দিয়ে সে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
” করে দেখুন একবার! চুল টেনে দেবো; কামড়ে র’ক্ত বার করে দেবো। ঝাঁটা দিয়ে মে’রে বিদায় করে দেবো। আপনাকেও সঙ্গে আপনার আরো দুই বউকেও!”
আহসান তরীকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
” তাই? এসো তোমাকেও একটু কামড়ে দিচ্ছি। ”
বলেই তরীর তুলতুলে গালে কামড়ে দিলো। তরী ভোঁতা মুখে বললো,
” খেয়েছেন রাতে? নাকি ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দেবো?”
আহসান নতমুখে বললো,
” খেয়ে এসেছি। কিন্তু, তুমি খাইয়ে দিলে আবারও খাবো।”
তরী আহসানকে ছেড়ে তাঁর জন্য ভাত আনতে গেল। রান্নাঘরের সামনে যেতেই মনোয়ারা এসে তরীকে বললেন,
” কী হয়েছে তরী? জামাই এত রাতে এলো? সবকিছু ঠিকঠাক আছে? কোনো বিপদ হয়নি তো?”
তরী সত্যটা চেপে গিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
” এদিকে একটা কাজ ছিল তো। রাত হয়ে গেছে তাই আর এতরাতে বাড়ি ফেরেননি। সোজা এখানেই চলে এসেছেন।”
মনোয়ারা সবটা বুঝেও না বোঝার ভান করে চলে গেলেন। যে ছেলে মধ্যরাতে তরীকে এখান থেকে নিয়ে চলে যায়। সে করবে রাত-বারোটার পরোয়া? বউ পাগল ছেলে!
চলবে…
#নিকুঞ্জ_কানন
#নুজহাত_আদিবা
[পর্ব ২৩]
আহসানের আজকে থেকে স্কুলের জয়েনিং। তরীর সেটা নিয়ে খুশির অন্ত নেই। বাড়িতে সবাই খুব খুশি। বাবু চলে যাওয়ার পর সবার মন বিষন্নতায় ছেয়ে গিয়েছিল। এখন সবাই একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। আজ ভোরে আহসান যখন গোসল করে ঘরে এলো; সহসাই আহসানের দু’বাহু পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তরী। আহসান ভেজা শরীরের সঙ্গে অকস্মাৎ লেপ্টে যাওয়াতে তরী বেশ খানিকটা ভিজেও গেল। তাতেও তাঁর কোনো হেলদোল নেই। আহসানই তরীর হাত চেপে ধরে বললো,
” সকাল সকাল ম্যাডামের এত আদর ভালোবাসা? মতলব কী হ্যাঁ? চরিত্র হনন করতে চাও নাকি?”
তরী ওসব কিছুই শুনলো না। আহসানের ঘাড়ে চুমু খেয়ে তাঁকে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। আহসান কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পিছু ফিরলো। তরীকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সহসাই কোলে তুলে নিলো। বিছানায় তরীকে রেখে ঠোঁটের ভাঁজে চুমু খেয়ে বললো,
” ম্যাডামের মুড আজকে খুব ভালো দেখছি? নতুন চাকরি প্রথম দিনই ছুটি নিলে;চাকরি টিকবে বলে মনে হচ্ছে না।”
আহসানের দুষ্টু ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তরী লাজে লাল হয়ে “যাহ” বলে তাঁর বুকে মুখ গুঁজলো। আহসান কয়েক মিনিট সেভাবেই রইলো। তারপর করুন হয়ে বললো,
” রেডি হতে হবে ম্যাডাম। আপনার এসব ব্যাপার-স্যাপার রাতে এসে দেখবো। তখন পালাই পালাই করলেও আমি ছাড়ছি না!”
বলেই তরীর দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। তরীর লজ্জায় গুটিয়ে পরলো। আহসান আলমারি থেকে কাপড় বের করতে ব্যস্ত। তরী আহসানের অগোচরে একটা প্যাকেট বের করলো। আহসানের সামনে গিয়ে সেটা তুলে ধরে বললো,
” আপনার জীবনের এই বিশেষ দিনে আমার তরফ থেকে একটা ছোট্ট উপহার। যদিও আমি এখনও আয় করি না। যদি কখনো করি তাহলে আরো দামীটা দেবো। বলতে খুব লজ্জা হচ্ছে কিন্তু আপনার টাকা দিয়েই আপনার জন্য উপহার কিনেছি।”
আহসান কেমন যেন স্তম্ভিত হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে বললো,
” তুমি আমার জন্য কিছু কিনেছো তরী? সত্যি?”
তরী চোখ নামিয়ে বললো,
” হ্যাঁ। একটা শার্ট আছে ভেতরে। আমি শার্টের মাপ-টাপ বুঝি না। তাই রুমিকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি পছন্দ করেছি রুমি মাপ বলে দিয়েছে। কেমন হয়েছে একটু খুলে দেখুন না?”
আহসান শার্টের প্যাকেটটা খুলে দেখলো ভেতরে আকাশী রঙের ফুল হাতার একটা চমৎকার শার্ট! তরীর পছন্দ এত সুন্দর? এত যত্ন নিয়ে কী করে পছন্দ করে কিনলো সে? আহসান শার্ট হাতে বললো,
” টাকা কোথায় পেলে তরী?”
তরী আঁচল ঘোরাতে ঘোরাতে বললো,
” আমাকে একটা ব্যাংক কিনে দিয়েছিলেন। মনে আছে আপনার? ওটা ভেঙ্গে ফেলেছি! বিশেষ দিনে একটা বিশেষ উপহার না দিলে হয়?”
আহসান তরীর আরো কিছুটা কাছে এলো।কপালে গভীর চুম্বন এঁকে দিয়ে বললো,
”কোনো বিশেষ উপহারের প্রয়োজন নেই তরী। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার আমার তুলতুলে বউ।”
তরী লজ্জায় আরেক দফা লাল হলো!আহসান সেদিন আর আলমারি থেকে কিছু বের করে পরলো না। তরীর দেওয়া শার্টটাই পড়ে স্কুলে গেল। চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ে ঠিক যেন সাহেবদের মতো। যাবার সময় বাড়ির বড়দের সালাম দিয়ে যেতে ভুললো না। এখন থেকে আহসানকে কী বলে ডাকবে তরী? আহসান মাস্টার? তাহলে তরী কী? মাস্টারের বউ মাস্টারনি? হতে পারে! হিহি!
★
আহসানের স্কুল ছুটি হবার কথা একটার দিকে। সবকিছু গুছিয়ে সে আসলো আনুমানিক দেড়টার দিকে। প্রথম দিন বিধায় আসতে একটু দেরিই হলো। আহসান স্কুল থেকে ফিরতেই তরী তাঁকে ঘিরে ধরলো। খুব উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কেমন গেল শিক্ষক জীবনের প্রথম দিন আহসান মাস্টার?”
আহসান শার্ট খুলতে খুলতে তাঁর পেশীবহুল শরীরখানা তরীর নিকট উন্মুক্ত করে বললো,
” ভালোই। তবে, প্রথমদিন তো এই নতুন জীবনে। অন্যরকম একটা পরিচয়;অপরিচিত একটা জায়গা। একটু নার্ভাস ছিলাম। বাচ্চা সামলানো আসলেই বেশ ধৈর্যের কাজ। একদিনেই কেমন হাঁপিয়ে উঠেছি। যদিও বাচ্চা সামলানো আমার পুরনো অভ্যাস। ছোট বাচ্চা বউটাকে তো আমিই বড় করলাম। যদিও এখনও অনেক কিছু বোঝে না মেয়েটা। কিছু হলেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদে!”
তরী মুখ ভার করে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
” কে বাচ্চা আমি বাচ্চা? রাতে কাছে এসে দেখবেন একদম কামড়ে দেবো! এসেছে আমাকে বাচ্চা বলতে!”
তরী ফোঁস ফোঁস করতে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো। আহসান পেছন থেকে তরীর হাত ধরে টান দিতেই তরী তাঁর বুকে হুমড়ি খেয়ে পরলো! আহসান তরীর ঘাড়ে নাল ঘষতে ঘষতে বললো,
” আলমারির তাকে একটা শাড়ি আছে। তোমার শার্টটার সঙ্গে মিল করে আকাশি রঙেরই কিনেছি। সন্ধ্যায় ওটা পড়ে তৈরি থাকবে একটা বিশেষ জায়গায় যাবো। কোথায় যাবো সেটা বরং তোলা রইলো। গেলেই দেখতে পাবে।”
তরী আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পেলো না। আহসান দুপুরে খেয়ে ব্যবসার কাজের জন্য বের হয়ে গেল। চাকরি করলেও ব্যবসা সে ছাড়বে না। সকালে চাকরি আর বিকেলে বাবার সঙ্গে ব্যবসা। এটাই আপাতত তাঁর জীবন।
.
তরী সন্ধ্যায় আলমারি থেকে আহসানের রেখে যাওয়া শাড়িটা পড়ে তৈরি হলো। বিয়ের পরদিন আহসান তাঁকে যে-ই চুড়িগুলো এনে দিয়েছিল। দু’হাতে সেগুলোও পরলো। সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে বসে রইলো। আহসান সময় মতোই তরীকে নিতে এলো। আসার সময় হাতে করে বেলীফুলের গাজরা নিয়ে এলো। তরী সেটা মাথায় পরলো। কী সুন্দর ঘ্রান বের হচ্ছে বেলি ফুলের। কী মিষ্টি ঘ্রান! খুব ফুরফুরে মেজাজে তরী আহসানের সঙ্গে বাইকে বসলো। শক্ত করে চেপে ধরে আহসানের বুকে এক হাত। কাঁধে অপর হাত রাখলো।
আহসান একটা বাড়ির নিচে এসে বাইকটা থামালো। তরীকে সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়িটার দোতলায় উঠলো। তরী সবকিছু ঘুরেফিরে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে; আসলে ঠিক কোথায় এসেছে সে। অবাক করে দিয়ে বাড়ির দরজা খুললো অর্ক। তরীকে নিয়ে আহসান ভেতরে ঢুকতেই তরী দেখলো ভেতরে সৌম্য আর রঙ্গনও আছে। অবাক করা বিষয় সৌম্যর সঙ্গে ভেতরে একটা মেয়ে বসা। দুজনেই সোফায় বসে আছে বউ আর বরের বেশে। পাশে বিয়ের পড়ানোর জন্য কাজী সাহেব বসা। তরী বিস্মিত হয়ে আহসানকে বললো,
” সৌম্য ভাইয়ার বিয়ে আজ?”
আহসান মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। তরী ফিসফিস করে বললো,
” মেয়েটা কে? আপনি তো আমাকে আগে কিছু বলেননি?”
আহসান প্রত্যুত্তরে বললো,
” সে এক বিরাট লম্বা কাহিনী। বাড়ি গিয়ে সবটা বলবো।”
তরী চুপচাপ দাঁড়িয়ে সবটা দেখতে লাগলো। রঙ্গন, অর্ক আর সৌম্য ব্যাতীত এখানে কাউকেই সে চেনে না। অপরিচিত পরিবেশ মানুষের মাঝে তাই বেশ ইতস্তত বোধ নিয়েই সে দাঁড়িয়ে রইলো। সৌম্য আর দিলশান যখন একে অপরকে কবুল করে নিজেদের মাঝে জড়িয়ে নিচ্ছিলো। তরী তখন নিজের বিয়ের স্মৃতিচারণ করছিল। বিয়ের দিন আহসানকে তাঁর মোটেও সহ্যই হচ্ছিলো না। ফিরে অবধি তাকায়নি একবার তাঁর দিকে। মন খারাপ করে গোমড়ামুখে বসে ছিল। সেই লোকটার সঙ্গেই বিয়ের ঠিক কতগুলো দিন কেটে গেল। কী অদ্ভুত বিষয়! সে কখনো ভাবেইনি আহসানের সঙ্গে তাঁর ভাব হতে পারে। পরিবারের চাপে পড়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিল। সম্পর্কটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতেও পারেনি শুরুতে। কিন্তু আজ কী হলো? আহসান কখন তাঁর মনের গভীরে আবাস্থল গেঁথে বসলো?
দিলশান কাঁপা হাতে সাইন করলো। সৌম্যের ভেতরে সে-সব কিছুই নেই। মনে মনে সে বিজয়ীর হাসি হাসছে। দিলশানের পরিবারকে রাজি করাতে গিয়ে তাঁর আর আহসানের যে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে! আহসান না থাকলে বিয়েটা হয়তো হতোই না। দিলশানকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করা গেলেও তাঁর পরিবারকে রাজি করানো একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। সৌম্যের বাবা মা বেঁচে নেই বিধায় তাঁর কোনো অভিভাবক নেই। থাকার মধ্যে আছে শুধু ছোট একটা ভাই। অভিভাবকহীন ছেলেদের কাছে মেয়ের পরিবাররা সচারাচর মেয়েকে তুলে দিতে দ্বিধাবোধ করেন। আহসানই সবটা কীভাবে যেন সামলে নিলো। শুরুতে ঝামেলা করলেও শেষে আহসানের কথায় দিলশানের পরিবার ঠিকই রাজি হলো। স্বপ্নের দিলশান হায়াত সত্যি সত্যি আজ সৌম্য শিকদারের হলো।
বিয়ের পর্ব শেষ হতেই সৌম্য খেজুর ছিটালো। খাওয়া দাওয়ার ছোট খাটো একটা পর্ব হলো। খেয়ে আহসান দিলশানের হাতে একটা উপহারের বক্স দিয়ে বললো,
” তোমার জীবনের নব প্রারম্ভে আমার এই ছোট্ট উপহার দিলশান। আমার বন্ধুকে সুখী রেখো এবং নিজেও সুখী হও সেই দোয়াই করি।”
দিলশান মুচকি হেসে তরীকে ইঙ্গিত করে বললো,
” তোমার বউ বুঝি? ভারী মিষ্টি দেখতে!”
নিজের প্রশংসা শুনে লাজে তরী মাথা নিচু করে ফেললো। আহসান আর দাঁড়ালো না। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে তাই তরীকে নিয়ে সে বাড়ি ফিরে এলো।
বাড়ি ফিরতেই তরী প্রশ্নের ভান্ডার খুলে বসলো। সৌম্যের বিয়ে কখন ঠিক হলো। কীভাবে হলো আরো কত কী প্রশ্ন তাঁর! আহসান ধীরে ধীরে তাঁকে সব বুঝিয়ে বললো। তরী সবকিছু শুনে “থ”! সৌম্য ভাইয়া আপুকে এত ভালোবাসেন? ভালোবাসা যদি হতেই হয় তাহলে এমনই হওয়া উচিত। তরী চমকিত হয়ে বললো,
” সৌম্য ভাই দিলশান আপুর জন্য এত বছর অপেক্ষা করেছেন? এত ভালোবাসেন আপুকে?”
আহসান পরিস্থিতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বললে,
” সৌম্যকেই বুঝি শুধু প্রেমিক পুরুষ মনে হয়? আমাকে দেখছি তোমার চোখেই পরে না! দিলশান কী সুন্দর করে সৌম্যর দিলে তাকিয়ে ছিল দেখেছিলে? তুমি পাজি মেয়ে বিয়ের দিন ফিরে অবধি তাকাওনি!”
তরী ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
” তখন আপনার সঙ্গে আমার ভাব হয়েছিল বুঝি?”
আহসান সব জেনে বুঝেও তরীকে প্রশ্ন করলো,
” তা এখন ভাব হয়েছে নাকি তুলতুল?”
তরীকে প্রশ্নটা সত্যি সত্যি ভাবালো। হয়েছে কী ভাব আহসানের সঙ্গে তাঁর? হয়েছে হয়েছে! কখন হয়েছে তা তরী সত্যিই জানে না!
মিনিটখানেক পরে তরী বিছানায় আহসানের বুকের ওপর হাতটা রেখে অপর হাত গালে রেখে বললো,
” আচ্ছা বিয়ের আগে আপনি আমাকে দেখেছিলেন আগে? মানে ভালো করে লক্ষ্য করেছিলেন? আপনি তো কয়েকবার আমাদের বাড়ি এসেছিলেন বাবার সঙ্গে। কখনোই দেখেননি?”
আহসান বেশ ভেবে বললো,
” সেভাবে ঠিক মনে পরছে না। তবে, একটা ঘটনা খুব মনে পরছে। বাবা একটা কাজে তোমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে ছিলেন। সেদিন আকাশ মেঘলা ছিল। আর তখন আমার বাইকও ছিল না। ফেরার পথে সেকি বৃষ্টি। তোমার মা আমাকে বসতে বললেন। আমি তোমাদের বসার ঘরে বসে বাইরে বৃষ্টি দেখছিলাম। বৃষ্টি থামলেই চলে যাবো এমন ভাবনাই ছিল মাথায়। ওমা হঠাৎ দুম করে আওয়াজ হওয়ায় বাইরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে বৃষ্টির পানিতে আছাড় খেয়ে পড়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে। আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ মুছে ছুটে পালালো!”
তরী মিনমিন করে বললো,
” ওটা গুনগুন ছিল! আমি আছাড় খেয়ে পড়ে ভ্যা ভ্যা করে মোটেও কাঁদিনি!”
আহসান ঠোঁট টিপে হেসে বললো,
” ওমা তাই? তখন আমার বয়স ছিল একুশ বছর। নব্য ভার্সিটির স্টুডেন্ট তাই বয়সটা বেশ ভালোই মনে আছে। হিসেব মতে তোমার বয়স তখন এগারো। আর গুনগুন তখন ছিল কিনা তাও আমার সন্দেহ। থাকলেও বৃষ্টির দিনে দৌড়ঝাঁপ করার মতো বড় ছিল না।”
তরী আহসানের বুকে এলোপাতাড়ি কিল দিতে দিতে বললো,
” সব মিথ্যে! আমি মোটেও বৃষ্টির দিনে আছাড় খেয়ে পড়িনি!”
আহসান হা হা করে অট্টহাসি হাসতে লাগলো। তরী রেগে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আহসান তাঁকে আদরের ছলে কাছে টেনে নিয়ে বললো,
” তুমি আমাকে কখনো দেখোনি তরী?”
তরী এবার স্বাভাবিক হয়ে বসলো। টিপ্পনী কেটে বললো,
” আপনার বোধ হয় বৃষ্টি রাশি! আপনি আরো একদিন আমাদের বাড়িতে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমার বাবার সঙ্গে এসেছিলেন। মা আপনাকে চুল মোছার জন্য বেছেবুছে আমার গামছা খানাই দিয়েছিল। সেটা নিয়ে রাগ করে দুপুরে সেদিন ভাতই খাইনি। আমার গামছা আমি কাউকে ধরতে দিতাম না। একটু হিংসুটে ছিলাম! তবে, শুধু গুনগুনকে দিতাম। আপনি যখন মাথা মুছে নিচ্ছিলেন আমি আর গুনগুন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছিলাম।”
আহসান বাঁকা হেসে বললো,
” সামান্য গামছা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি? এখন যে প্রতিদিন বাসি ঠোঁটে চুমু খেতে হচ্ছে? সে বেলায়? ”
তরী তেঁতে উঠে আহসানের দিকে এগোতেই আহসান তাতে এক ঝটকায় কাছে টেনে নিলো। অভিমান রাগ সব জলে গেল। মাঝরাত অবধি ভাব-ভালোবাসার এক বিশাল পর্ব চললো। শেষে না পারতে মাঝরাতে তরী তাঁকে শরীর থেকে টেনে সরালো। তাও সরলো কোথায়? তরীর দিকে মুখ করে পাশ ফিরে শুয়ে কেমন নেশালো দৃষ্টিতে তরীকে বারবার দেখছিল। আবছা আলোয় সেটা টের পেতেই তরী বললো,
” ঘুমোচ্ছেন না কেন? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
আহসান হাই তুলে বললো,
” তুমি ডানোর ডিব্বা খুলে রাখলে দোষ নেই। আমি একটু তাকালেই দোষ?”
তরী নিজের দিকে তাকাতেই জিহ্বায় কামড় পরলো! শাড়িটা কোথায় ছুঁড়ে ফেলেছে আহসান কে জানে! উন্মুক্ত বক্ষস্থল ঢাকতে কোনো রকমে বালিশের; নিচ থেকে একটা পাতলা কাঁথা বার করলো তরী। গলা অবধি ঢেকে তারপর শুয়ে পরলো। আহসানকে দিয়ে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। সকালে ওসব বাজে বাজে কথা বলে পিষে মা’রবে তরীকে!
চলবে…