#তোতাপাখি_আমার
০২.
সেদিন বাড়িতে ফিরে আর কিছুই ভালো লাগল না ঘুঙুরের। ‘কে হন আপনি আমার?’ ওই বাক্যটির পর কল্পের সেই অদ্ভুত হাসি তাকে কোনোভাবেই শান্তি দিচ্ছে না। তারপর থেকে কল্প তাকে আর একটি প্রশ্নও করেনি। শুধু বাইকে উঠে বলেছিল ‘উঠে বস’। এরপর সোজা তাদের বাড়ির পেছনের রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে গেছে। বাড়িতে ঢুকেছিল ঘুঙুর কিছুটা দ্বিধা নিয়ে। কিন্তু ভেতরেই ঢুকতেই তার সমস্ত দ্বিধা কেটে যায়। বাড়িতে সবাই জানে সে বৃষ্টিদের বাড়িতে ছিল। বৃষ্টি নাকি ফোন করে বলে দিয়েছে। মনে মনে এই কাজের জন্য কল্পের ওপর কৃতজ্ঞ হল সে। কারণ সে জানে এটা কল্পই নিশ্চয়ই বৃষ্টিকে দিয়ে বলিয়েছে। তবুও অজানা কারণে মনটা ভার হয়ে রইল তার। রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরল। সকালটা শুরু হল ড্রইংরুমে চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে। কোনো মতে ফ্রেশ হয়ে ওড়না গায়ে জড়িয়ে ড্রইংরুমে উপস্থিত হল ঘুঙুর। দেখল তার বাবা আমির আহমেদ সোফায় বসে চেঁচামেচি করছেন। বোঝাই যাচ্ছে চরম মাত্রায় রেগে আছেন। তার হাতে পোস্টারের মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।
“একটা হাঁটুর বয়সী ছেলের কত্ত বড় সাহস আমার বিপক্ষে দল গড়ছে? বিদেশ থেকে এই শিক্ষা নিয়ে এসেছে? বাপ-চাচাকে হেনস্তা করতে পিছুপা হচ্ছে না। আজ- কালকার পোলাপান ভাতেরে কয় অন্ন।”
ঘুঙুর বাবার রাগের কারণ কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছে। সে আর সামনে আসার সাহস পেল না। আড়ালে দাঁড়িয়েই দেখতে লাগল। নলিনা বেগম স্বামীর এহেন চেঁচামেচিতে ভীষণ বিরক্ত। তারওপর কল্প অন্ত প্রাণ তিনি। বিয়ের পরপর কিছু বছর তার যখন সন্তান হতে বিলম্ব হচ্ছিল তখন এই কল্পই তাকে ক্ষনেকের জন্য হলেও মাতৃত্বের স্বাদ জুগিয়েছে। তারপর থেকে প্রায় বছর পাঁচেক পর নুপুরের জন্ম। নুপুরের থেকে আবার বছর পাঁচেকের ছোট ঘুঙুর। কল্পের বাবা জুবায়ের চৌধুরী ও আমির আহমেদ দুই বাল্যকালের বন্ধু। দুই পরিবারের মধ্যে বন্ডিং খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু হঠাৎ কল্পের এহেন কাজে বেশ চটে গেলেন আমির আহমেদ।
নলিনা চায়ের কাপ টি-টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে অসন্তুষ্ট কন্ঠে স্বামীর উদ্দেশ্যে বললেন,
“ছোট মানুষ একটা ভুল না হয় করেই ফেলেছে। তাতে এত চেঁচামেচির কী আছে? কল্প আমার সোনার ছেলে বুঝিয়ে বললেই সব বুঝে যাবে।”
আমির সাহেব আরও রেগে উঠলেন যেন। বললেন,
“এই তোমাদের আশকারা পেয়ে পেয়েই আজ ওর এমন অধঃপতন হয়েছে। তবে আর নয়। আমি এখনই যাচ্ছি জুবায়েরের কাছে। ছেলেকে কী শিক্ষা দিয়েছে জানতে হবে তো।”
“আহ হা সাতসকাল বেলায় থামুন তো আপনি। দিনের শুরুতেই বন্ধুর বাড়িতে হাঙ্গামা না করলে নয়?”
রাগে গজগজ করতে করতে চায়ের কাপে দু চুমুক দিয়ে বাকিটা ওভাবেই ফেলে রেখে উঠে যেতে যেতে আমির সাহেব পুনরায় বললেন,
“কীসের বন্ধু? শত্রু, শত্রু, ওরা বাপ-বেটা আমার চরম শত্রু। নয়তো কী আর এই কাজ করে।”
তাকে আর আটকানো গেল না। বড় বড় কদম ফেলে সেই পোস্টার হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। বাবা চলে যেতেই নুপুর বেড়িয়ে এলো নিজ ঘর থেকে। অন্তর্মুখী চরিত্রের হওয়ায় এসব বিবাদ থেকে বরাবরই দূরের মানুষ সে। তাই তো ইচ্ছে করেই এতক্ষণ এ ঘরে আসেনি। তাকে আবার ক্লাসে যেতে হবে এমনিতেই লেট হয়ে যাচ্ছে। ডাইনিংয়ে বসতে বসতে সে বলল,
“ও মা খেতে দাও।”
নলিনা এগিয়ে গেলেন মেয়েকে খাবার গুছিয়ে দিতে। স্বামীর ওপর তিঁতিবিরক্ত তিনি। বোনের পিছু পিছু ঘুঙুরও বেড়লো আড়াল থেকে। কিন্তু তার খেতে ইচ্ছে করল না। মন বলছে বাবা ঠিক এখন জুবায়ের চাচার বাড়িতে চলে গেছেন। এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র তিনি নন। তবে কী আর পনের বছর ধরে চেয়ারম্যানি করতে পারতো?
–
“জুবায়ের। এই জুবায়ের। আরে এই জুবায়েরের বাচ্চা কই তুই। বের হ বাড়ি থেকে। আমার ঘরে আগুন লাগিয়ে তোরা দুই বাপ-বেটা সুখের ঘুম ঘুমাস। শা-লা উঠ বলছি। বাইরে আয় তাড়াতাড়ি।”
চেঁচামেচি শুনে খাদিজা বেগম ছুটে এলেন রান্নাঘর থেকে। আমির সাহেবকে এই রূপে দেখে তিনি তো হতবাক। এতগুলো বছরে কখনও লোকটাকে এতটা উগ্রপন্থী মনে হয়নি। আজ তবে কী হল হঠাৎ?
“ভাইজান আপনি এত সকাল সকাল? কোনো সমস্যা হয়েছে কী? আসুন ভেতরে এসে বসুন। কল্পের বাবাকে ডেকে দিচ্ছি আমি।”
“বউমা তুমি সরে যাও। আমি আজকে বসতে-টসতে আসিনি। এসেছি ওই আহাম্মকের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে। এখনই ডেকে আনো ওকে। আর এখানেই।”
ঘুমঘুম চোখে চশমাটা ঠিক করতে করতে বাইরে বেরিয়ে এলেন জুবায়ের চৌধুরী। আমির সাহেবকে দেখে তিনিও একটু অবাক হলেন। তবু বন্ধুর সঙ্গে ঠাট্টা সরূপ বললেন,
“কী লো চেয়ারম্যান, সক্কাল সক্কাল মাথায় ভ্যাড়া চড়ল নাকি?”
আমির সাহেব চেঁতে উঠলেন,
“মশকরা হচ্ছে? আমার চেয়ার নিয়ে টানাটানি শুরু করে এখন আবার আমাকে চেয়ারম্যান ডেকে মশকরা নিচ্ছিস। বাবাহ্ বাহ্ বাহ্। বাহবা না দিয়ে আর পারলাম না।”
জুবায়ের সাহেব বুঝতে পারছেন না কিছুই। বললেন,
“মানে? তোর চেয়ার নিয়ে টানাটানি করতে হবে কেন আমায়? আমার বাড়ি চেয়ারের কী অভাব পরেছে?”
আমির সাহেব হাতের পোস্টারটা ছুড়ে মারলেন জুবায়ের সাহেবের মুখে। জুবায়ের সাহেব ক্যাচ করে ফেলল সেটি। কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে একপল আমির সাহেবের রাগান্বিত মুখাবয়বের দিকে তাকিয়ে পোস্টারটিতে মনোযোগ দিলেন। অতঃপর চরম মাত্রায় শকট হলেন তিনিও। স্ত্রী খাদিজাও পাশ থেকে দেখে নিলেন বিষয়টি। পোস্টারটি হাতের মধ্যে ডুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিলেন জুবায়ের সাহেব। বন্ধুর উদ্দেশ্যে নম্র কন্ঠে বললেন,
“দেখ আমির আমি এসবের কিছুই জানি না। কল্পটা কী যে করে না। কীসের ভুত চেপেছে মাথায় কে জানে। আমি কথা বলছি ওর সঙ্গে।”
আমির সাহেব মানলেন না। হাত উঁচিয়ে বললেন,
“থাক আর নাটক করতে হবে না। ইজ্জত যা যাবার তা ইতোমধ্যে হারিয়ে বসে আছি আমি। গ্রামের মানুষ কী ভাবছে? হাঁটুর বয়সী ছেলের সঙ্গে আমির আহমেদ টক্কর দিতে নেমেছে? ছি ছি ছিহ! বাপ-বেটা মিলে আমার সর্বনাশ করতে নেমেছিস। তবে কী ভাবছিস তোর ওই হাঁটুর বয়সী ছেলেকে আমি ভ’য় পাচ্ছি? শুনে রাখ ভয় আমি পাচ্ছি না। তোর ছেলেকে বলে দিস দেখা হবে ময়দানে। গত পনের বছরে আমার চেয়ার কেউ কেড়ে নিতে পারেনি। ওপর ওয়ালা চান তো অবশিষ্ট বছর গুলোতেও পারবে না। যতই পায়তারা করিস জয় আমারই হবে। সুনিশ্চিত।”
“তাই বুঝি? আর যদি হেরে যান তো?”
সুস্থীর, গম্ভীর, ভারিক্কি তবে শীতল কন্ঠে তটস্থ হয় উপস্থিত সকলে। কল্প বেরিয়ে এসেছে সদর দরজা দিয়ে। পরনে লুঙ্গি ও গেঞ্জি। ঘুম থেকে উঠে এসেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এসেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে আমির সাহেবের পানে। আমির সাহেবের রাগ ওকে দেখে সপ্তম চূড়ায় আরহণ করেছে যেন। বুঝলেন এই ছেলে তাকে কৌশলে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। তবু নিজেকে দমন করে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
“প্রশ্নই আসে না।”
“ধরুন যদি হেরে যান। তবে?”
আমার সাহেব জোরালো কন্ঠে বললেন,
“তবে যা বলবে তাই মেনে নেবো।”
কল্প আয়েশি ভঙ্গিতে দরজার আঙিনায় বসে পরল। আড়মোড়া ভেঙে বলল,
“মনে থাকে যেন। সবার সামনে কথা দিচ্ছেন। হেরে গেলে আপনার ঘরের একটা জিনিস আমার হবে। অবশ্যই আমি যেটা চাইবো সেটা। পাক্কা?”
“কথা দিলাম। হেরে গেলে আমার ঘরের জিনিস তোমার হবে। পাক্কা।”
“ওকে তবে দেখা হচ্ছে ময়দানে। তৈরি থাকুন আপনার মহামূল্যবান জিনিসটি খোয়া দিতে।”
পরপর বসা থেকে উঠে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“মা ফ্রেশ হয়ে এসেছি সেই কখন। খিদে পেয়ে গেছে। নাস্তা দাও। খেয়ে বেড়তে হবে এমনিতেই এখন আমার কত্ত কাজ। চাচা আপনিও নাস্তা করে তবেই যাবেন। সকাল সকাল নাস্তা করার ফুরসত হয়তো এখন অব্ধি পাননি।”
আমির সাহেব রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। খাদিজা দৌড়ে দিয়ে তাকে থামালেন।
“ভাইজান নাস্তাটা করে যান। এত মাথা গরম করবেন না। ছেলেটা আমার অবুঝ৷ জয় আপনারই হবে দেখবেন। শুধু শুধু উত্তেজিত হবেন না।”
“আরেকদিন এসে নাস্তা করবো বউমা। তুমি বাড়ির ভেতরে যাও। আজ আসি।”
আমির সাহেব চলে গেলেন। খাদিজা বেগম রেগে স্বামীর পানে তাকালেন। ঝাঁঝিয়ে বললেন,
“নিজেরা নিজেরা এসব কী শুরু করলেন আপনারা?”
জুবায়ের সাহেব বললেন,
“আমি কী জানি? তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করো।”
তন্মধ্যে ভেতর থেকে কল্পের গমগমে স্বর ভেসে এলো,
“কই গেলে মা। আজ কী না খায়িয়ে মা’রবে নাকি?”
খাদিজা বেগম এমনিতেই রেগে আছেন। ছেলের কথায় তেড়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
“তোকে আজন্মের মতো খাওয়াচ্ছি, দাঁড়া হারামজাদা।”
এতকিছু ঘটে গেল অথচ কুহু এখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দিন-দুনিয়ার এতসব ঘটনা তার ঘুমে বিন্দুমাত্র আঁচ লাগাতে পারেনি। ভীষণ ঘুম কাতুরে মেয়ে সে। তেমনই বাপ-ভাইয়ের আহ্লাদীও বটে।
–
সকালের নাস্তায় প্রতিদিনের মতো আজ আর রমরমা ভাব নেই। গুমোট বেঁধে আছে পরিবেশটা। অনলি কুল মুডে আছে কল্প। সে নিয়ম করে এটা ওটা নিয়ে নিয়ে খাচ্ছে। অন্য দিনের থেকে আজ বরং চেয়ে চেয়ে খাচ্ছে। মা এটা দাও, মা ওটা দাও বলে বলে খাদিজা বেগমের মাথাটাও একইসঙ্গে খাচ্ছে। এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে খাদিজা বেগম ফোঁস করে উঠলেন,
“খেতে বসেছিস নাকি আমাকে জ্বালাতে, হতচ্ছাড়া?”
কল্প দাঁত কেলিয়ে বলল,
“ঠিক ধরেছ। অমন হাঁড়ির মতো মুখ করে বসে থাকলে আমার সেটা একদমই সহ্য হয় না। ইচ্ছে করে তাকে জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে জলন্ত জ্বালানি করে ফেলি।”
খাদিজা বেগম রাগে ফুঁসছেন। পাল্টা কিছু বলার প্রস্তুতি নিতেই সদর দরজা দিয়ে কেউ পড়িমরি করে ঢুকল। সবার দৃষ্টি তখন সেদিকে। ঘুঙুর দরজায় দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। তাকে দেখে কুহু কল্পের নিকটে এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“আর মা’কে জ্বালাতে হবে না। এবার নিজে জ্বলবার জন্য প্রস্তুত হও।”
কল্প কুহুর মাথায় আলতো করে গাট্টা মে’রে বলল,
“চুপ কর পাকনি। বড় ভাইয়ের সঙ্গে মশকরা!”
খাদিজা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন,
“ওভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? দৌড়ে এসেছিস নিশ্চয়ই? আয় এখানে আয়। আগে পানি খা।”
ঘুঙুর এগিয়ে এলো। জুবায়ের সাহেব নিজের পাশের চেয়ারটা টেনে দিল ওকে বসার জন্য। ঘুঙুর বসে পরল ততক্ষণাৎ। সে আসলেই হাঁপিয়ে। খাদিজা বেগম ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে ধরলেন। মুহুর্তেই সেটা শেষ করে নিল ঘুঙুর। পরপর কিছুটা স্বাভাবিক হল সে। বলল,
“বাবা এসেছিল, চাচি? সেই যে রেগেমেগে নাস্তা না করেই বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে এখনও ফেরার নাম নেই।”
খাদিজা বেগম একটু ইতস্তত করে বললেন,
“এসেছিল তো। আবার চলেও গেছে।”
ঘুঙুর করুণ স্বরে নিজ মনে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“এসেছিল!”
তন্মধ্যে তার দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে কল্প টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। খাওয়া শেষ তার। যেতে যেতে বলল,
“যাই সক্কাল সক্কাল কাজে লেগে পড়ি। কত্ত কাজ আমার, কত্ত বড় দ্বায়িত্ব। চেয়ারম্যান হওয়া কী মুখের কথা? তার ওপর চেয়ারম্যান আমির আহমেদকে পরাজিত করা তো দ্বিগুণ কসরতের কাজ।”
বলতে বলতে সে চলে গেল। পেছন থেকে খাদিজা বেগম চিল্লিয়ে বললেন,
“যা ভাগ।”
জুবায়ের চৌধুরীর চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। ছেলের এই কাজে তিনি সহমত নন। শত হোক তার নিজের বন্ধুর ওপর খবরদারি এটা তিনি মানতে পারছেন না। এতে করে তাদের বন্ধুক্তেও ফাটল ধরতে বসেছে। ছেলেটা যে কেন এমন করছে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না। তার নিজের পোশাকের ব্যবসা কিসে কম ছিল যে বিলেত থেকে ডিগ্রি এনে এখন বাপসম চাচার প্রতিপক্ষ হতে হবে? এদিকে ঘুঙুরও বুঝল কল্প বিষয়টা নিয়ে ঠিক অনেক দূর এগিয়ে গেছে। শেষটুকু কথা যে তাকে শুনিয়ে গেছে এটাও বুঝল বেশ। এইসব দুশ্চিন্তার মাঝে ঘুঙুরের মুখের সামনে খাবার তুলে নিয়ে বসে আছেন খাদিজা বেগম। বাড়ি থেকে না খেয়ে এলেও এখানে আর ছাড় পেল না। খাদিজা বেগম জোরজবরদস্তি ওকে গালে তুলে খাওয়াতে শুরু করলেন তা দেখে কুহু মিছিমিছি গাল ফুলিয়ে বলল,
“সব আদর শুধু তোর জন্য তাই না রে ঘুঙুর আপু? দুই বাড়িতেই সমান রাজত্ব করিস। আর আমরা সব বানের জলে ভেসে আসা খড়কুটো।”
একা কুহুতে হচ্ছিল না শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে কল্প বেড়িয়ে এলো ঘর থেকে। ঘুঙুরকে খোঁচাতে বলল,
“মা যতই গালে তুলে খাওয়াও না কেন দিনশেষে সেই বাপের হয়েই চামচামি করবে। চামচিকার বাচ্চা।”
ঘুঙুর রেগে তাকালো। খাদিজা বেগম ধমকে উঠলেন ওদের দুজনকে,
“কী শুরু করলি তোরা? মেয়েটার পেছনে কেন লাগছিস? শান্তিতে খেতে দে ওকে। জ্বালাস না।”
কুহু মুচকি হেসে চুপ হয়ে গেল। জুবায়ের সাহেবের ঠোঁটের কোণেও হাসি। শুধু হাসলো না কল্প। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আমি জ্বালাচ্ছি ওকে? নাকি ও আমাকে দিন-রাত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলছে?”
চলবে,
®নামিহা নিশি