তোতাপাখি আমার পর্ব-০৬

0
21

#তোতাপাখি_আমার

০৬.
“আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি! এত বড় ঘটনা তুমি বেমালুম চেপে গেলে কীভাবে? কল্প জানে অথচ আমি জানি না!”

স্বামীর অতিরিক্ত সন্তান শাসনে বিরক্ত হয়ে গেলেন নলিনা। তিনি মেয়েকে ঘরের দিকে ঠেলে দিতে দিতে বললেন,

“এই তুই ঘরে যা তো। আর আপনার সমস্যাটা কি আগে পরিষ্কার করুন। মেয়ের সামান্য হাত কেটেছে তাই নাকি সেই ঘটনা আপনার আগে কল্প জেনেছে তাই?”

আমির সাহেব প্রলম্বিত শ্বাস টানলেন,
“তুমি বরাবরই সোজা কথা উল্টো দিকে নিয়ে যাও। এটা কি তোমাদের নারী জাতির জন্মগত স্বভাব? নাকি শুধু তুমিই এমন?”

নলিনা বেশ ক্ষেপে উঠলেন,
“মানে কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? আমি উল্টোমুখী? সত্যি কথা বললে গায়ে লাগে তাই না? সে আপনি আমাকে যা ই বলুন আমি বরাবরই সত্যই বলবো। এতটুকু একটা ছেলের পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে থাকেন। লজ্জা করে না?”

আমির সাহেব চোখ বড় বড় করে চাইলেন,
“অতটুকু ছেলে? অমন দামড়া ছেলেকে তোমার এতটুকু মনে হয়? আমার বয়েই গেছে ওই অসভ্যের পেছনে পড়ে থাকতে। দিন দিন তোমার ভাবনার এত অবনতি হচ্ছে যে আমি ভাবতেই পারি না।”

ঘুঙুর তো মায়ের আশকারায় পার পেয়ে কেটে পরেছে। কিন্তু বাবা-মায়ের এমন খোঁচাখুঁচিতে চরম বিরক্ত হয়ে পরল অন্তর্মুখী স্বভাবের নুপুর। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে আওয়াজ একটু উঁচুতে তুলে বলেই ফেলল,

“আহ, তোমার থামবে একটু? সামান্য বিষয় নিয়ে এত জল ঘোলা করার মানে কি। অসহ্য।”

মেয়ের ধমকে বাবা-মা চুপ হয়ে গেল। যেন তাদের মা তাদের শাসন করছে। নুপুর অন্তর্মুখী, চুপচাপ হলেও সে খুবই বিচক্ষণ। গুনে গুনে দু কথা বের হয় তার মুখ থেকে। তবে যেটা বলে যৌক্তিক। আমির, নলিনা বরাবরই মেয়ের কথাকে প্রাধান্য দেন। মেয়ে একটু নারাজ হলে তারা মরিয়া হয়ে ওঠেন তাকে খুশি করতে। তবে এমনটা ঘুঙুরের ক্ষেত্রে হয় না। ছোট ও চঞ্চল বলে তাকে রাখা হয় ঝারির ওপর, শাসনে, শাসনে।

পরদিন স্কুল মিস দিল ঘুঙুর। গত রাত থেকে মান্থলি সার্কেল শুরু হয়েছে তার। পেট ব্যথায় রাতে দু-চোখের পাতা এক করতে পারেনি। সকালে উঠেছে লেট করে। নলিনা মেয়ের জন্য হট ওয়াটার, লাল চা, হালকা নাস্তা সঙ্গে পেইন কিলার নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। ঘুঙুর পেটের ওপর বালিশ চেপে শুয়ে ছিল। মায়ের হাতে এতসব দেখে সঙ্গে সঙ্গে নাক-মুখ কুঁচকে ফেলল সে। বলল,

“মা….। আমি এখন কিচ্ছু খাবো না, প্লিজ। এগুলো নিয়ে যাও।”

নলিনা কড়া কন্ঠে বললেন,
“উহুম,,, খেতেই হবে। খেয়ে ঔষধ খাবে। কোনো বাহানা চলবে না।”

ঘুঙুর আরেকটু মোড়ামুড়ি করল। এই সময়টা প্রতিটা মেয়ের জন্যই ভীষণ পীড়া দ্বায়ক। ঠেলেঠুলে নলিনা মেয়েকে কেবল গরম চা, এক পিস বিস্কুটই খাওয়াতে পারলেন। ঘুঙুর খাবে না তো খাবেই না। বলছে জোর করলে বমি হবে। এটা সত্যি, একটু বেশিই পরিপাটি ভাব থাকার দরুন এই সময়টায় সে খুবই আনইজি ফিল করে। সবসময় নিজেকে অপরিচ্ছন্ন মনে করে হীনমন্যতার ভোগে। খাবারে অনিহা জাগে। নলিনা মেয়ের শারীরিক অবস্থা বুঝতে পেরে আর খেতে জোরাজুরি করলেন না। পেইন কিলারটা খায়িয়ে, হট ওয়াটার দিয়ে পেটে স্যাক দিয়ে ঘুঙুরকে বিছানায় শুয়িয়ে চলে গেলেন। একাকী ঘুঙুর ঘুমানোর চেষ্টা চালাতে লাগল কিন্তু ফলাফল শূন্য। প্রথম তিনদিন ঘুম এভাবেই পালিয়ে যায় তার চক্ষু ফেলে।

দুপুরের পরপরই কুহু এলো ঘুঙুরদের বাড়িতে। নলিনার সাথে দেখা করে সরাসরি ঘুঙুরের ঘরে পৌঁছে গেল সে। ঘুঙুর সবে গোসল নিয়ে বেডে বসেছে। এই সময় সে একটু দেরিতে গোসল নেয়। কুহু এটা দেখে অবাকের রেশ ধরে বলল,
“আরে তুই এখন গোসল নিলি কেন আপু? আজ স্কুলও যাসনি। কি হয়েছে তোর?”

কুহুকে সরাসরি কিছুই বলতে পারল না ঘুঙুর। কুহু বয়সে ছোট হওয়ায় কেমন একটা সংকোচ কাজ করল। শুধু বলল,
“এমনিতেই শরীর ভালো লাগছে না।”

কুহু বেশি ঘাটল না। তার মনে অন্য রকম উৎফুল্লতা। সে ঘুঙুরের পাশে বসে বলল,
“এখন ঠিক আছিস তো? তাহলে চল আমাদের বাড়িতে। মা তোর জন্য অপেক্ষা করছেন।”

ঘুঙুর সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,
“না, না আমি এখন যেতে পারবো না। চাচিকে বলে দিস আমি পরে যাবো। শরীর ভালো না।”

কুহু শুনলো না। সে টানাটানি শুরু করে দিল।
“একদমই শুনবো না। আমি বলেছে তোকে টেনেহিঁচড়ে হলেও নিয়ে যেতে। বাড়িতে মেহমান এসেছে। মা কতসব রান্না করেছে। তোকে ফেলে কিছুতেই সে কিছু মুখে তুলছে না। তুই যাবি কি-না বল?”

ঘুঙুর জানে চাচি সত্যিই না খেয়ে থাকবে। এমনটা বরাবরই হয়। ভালো-মন্দ রান্না হলে চাচি ওকে ফেলে খায় না। ছোট থেকেই চাচির ভীষণ আদরের সে। অগত্যা বাধ্য হয়ে এই শরীর নিয়ে কুহুর সঙ্গে বেড়তে হল তাকে। নলিনা যাওয়ার সময় বলে দিলেন দ্রুত ফিরতে এবং সাবধানে থাকতে। চলতি পথে ঘুঙুরের মনে কিছু ভাবনা জাগল। সে কুহুকে প্রশ্ন করল,

“মেহমান কারা এসেছে?”

কুহু বলল,
“মামা,মামি, নানু ভাই, বড় খালামনি, রাহাত ভাই, জেনিফা আপা আর জাহিন।”

ঘুঙুরের কেমন একটা অস্বস্তি শুরু হয়ে গেল। মুখটা মলিন লাগছে তার৷ কুহু সেটা দেখে বলল,
“কিছু হয়েছে? তোমাকে চিন্তিত লাগছে। কিছু ভাবছ?”

ঘুঙুর হাসার চেষ্টা করে বলল,
“না না কিছু ভাবছি না। তাহলে তো অনেক মেহমান এসেছে। তোর তো বেশ মজায় কাটছে দিন।”

কুহুর মন ঘুরে গেল। সে আবার উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“তা তো বটেই। জাহিনের সঙ্গে আমার বেশ জমে। তাছাড়া রাহাত ভাই, জেনিফা আপুও খুব মজার। জানিস এবারে সবাই দুদিন পর চলে গেলেও জেনিফা আপু কয়েকদিন থাকবে। উফ্ আমার তো ভাবতেই ভালো লাগছে আপুর সঙ্গে কতগুলো দিন একসঙ্গে থাকবো।”

কুহুর আনন্দ দেখে ঘুঙুরের অন্য সময় খুশি লাগলেও এই মুহুর্তে সেটা হল না। জেনিফা মেয়েটা ঘুঙুরকে কেমন একটা বাঁকা চোখে দেখে। ঘুঙুর সেটা আন্দাজ করতে পারে। যদিও সরাসরি কখনও কিছু বলেনি তবুও কেমন একটা ইগনোর করে চলে। ঘুঙুরের খুব অস্বস্তি হয় তখন। এর বাইরেও আরেকটা কারণ আছে যদিও। যার কারণে জেনিফাকে ঘুঙুরের অপছন্দ। আনমনেই ঘুঙুর আরেকটি চমকপ্রদ প্রশ্ন করে বসল কুহুকে যেটা তার করার কথা নয়।

“তোর ভাই কোথায়? বাড়িতেই?”

কুহুও বলে ফেলল, “হ্যাঁ বাড়িতেই। নানু ভাই সকালে এসে থেকেই ভাইয়াকে আটকে রেখেছে। আজ এক পা ও বাইরে বের হতে দেয়নি।”

কুহু হেসেই চলেছে। পরপর কিছু একটা ভেবে সে থেমে গেল। ঘুঙুরের দিকে জহুরি দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“তুই হঠাৎ ভাইয়ার খোঁজ নিচ্ছিস যে? কেসটা কি?”

ঘুঙুর থতমত খেয়ে গেল,
“কেস আবার কি হবে? এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম। বাড়িতে মেহমান তার বাসায় থাকাটা উচিত। তারও নিশ্চয়ই তোর মতো ভীষণ খুশিতে দিন কাটছে?”

কুহু স্বাভাবিক ভাবে বলল,
“হয়তো কাটছে। তবে বাইরে না যেতে পারার কষ্টে বেচারার মেজাজ সপ্তমে চড়ে যাবে এটা শিওর। কখন কার ওপর চড়াও হয়ে বসে কে জানে। দাদু ভাইকে তো আর কিছু বলতে পারবে না। আমি ভাই দূরত্ব বজায় রেখে চলছি ওর থেকে নয়তো আমাকেই ঝারবে অকারণ।”

ঘুঙুর মুখ ভেঙচি কাটল। মনে মনে ভাবল, “বাইরে যাওয়ার কি দরকার আসল জিনিস যখন ঘরে উঠে বসে আছে!”

কুহুকে পেয়ে জুবায়ের চৌধুরী ভীষণ খুশি হলেন। তিনিও খুব আদর করেন ঘুঙুরকে। আলগোছে আমির সাহেবের হালহকিকত জেনে নিলেন ওর থেকে। বন্ধু তার ওপর রেগে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বলে তো বন্ধুর খোঁজ নেবেন না এমন নয়। ঘুঙুর জানিয়ে দিয়েছে বাবা ভালো আছে। পরপরই খাদিজা বেগম তাকে ছোঁ মে’রে টেনে নিয়ে গেলেন ডাইনিংয়ে। লিভিংরুমে মেহমানদের সঙ্গে টুকটাক আলাপ করে এসেছে ঘুঙুর। এই দুই পরিবারের মধ্যেকার বন্ডিং সম্পর্কে আত্নীয় স্বজন সবাই অবগত। তাই তো ঘুঙুরকেও খুব ভালো করেই চেনে সবাই। খাদিজা বেগম দুটো প্লেট নিয়ে বসলেন। একটা ঘুঙুরের জন্য, আরেকটা তার। বাকি সবার খাওয়া শেষ। ঘুঙুর খাবে না বলে মোচড়ামুচড়ি করছে। খাদিজা ধমকে উঠলেন সঙ্গে সঙ্গে। খেতেই হবে বলে গো ধরলেন। ঘুঙুর বুঝিয়ে বলল,

“চাচি এখন খেতে পারবো না আমি। পেটে ব্যথা করে। তুমি খাও আমি বসে আছি। তুমি খেতে চাইবে না বলেই এসেছি শুধু।”

খাদিজা বললেন,
“বেশ তবে আমি খায়িয়ে দেই। আমার সঙ্গে সঙ্গে খা, বেশি খেতে হবে না তাহলে।”

ঘুঙুর আর না করতে পারল না। খাদিজা ভাত মেখে নিজেও খাচ্ছে ওকেও গালে তুলে দিচ্ছে। ভালোই চলছিল সব হঠাৎই সেখানে উপস্থিত হল জেনি। সে এসেছে পানি খেতে। তখন লিভিংরুমে না থাকায় ঘুঙুর এসেছে এতক্ষণ দেখেনি সে। এসেই এমন আহ্লাদী দৃশ্য দেখে কেমন করে জানি তাকাল সে। ব্যঙ্গাত্নক কন্ঠে বলল,

“তাহলে এই কারণেই আমাদের সঙ্গে খেতে বসলে না তুমি খালামনি, তাই না? তা এতবড় মেয়েকে খায়িয়ে দিতে হয় নাকি?”

ঘুঙুর কিছু বলল না। চুপচাপ বসে রইল। খাদিজা মুখ খুললেন,
“ও খাবে না বলছে। আমিই জোর করে খাওয়াচ্ছি। ওকে ফেলে কোনো কিছু আমার গলা দিয়ে নামতেই চায় না।”

জেনির পানি খাওয়া হয়ে গেছে। গ্লাসটা তুলনামূলক শব্দ করে টেবিলে রাখল সে। ঘুঙুরের দিকে গরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল, “যত্তসব ন্যাকামো।” পরপর চলে গেল সে। খাদিজা কিছু না শুনলেও ঘুঙুরের কানে স্পষ্টই পৌঁছে গেছে কথাটুকু। খারাপ লাগার মাত্রাটা সর্বাঙ্গ ছাড়িয়ে মনেও পৌঁছে গেল তার। বাকি আর এক লোকমা খাবারও গলা দিয়ে নামতে চাইল না তার। খাদিজা জোর করে আরেকটু দিতেই গড়গড় করে বমি করে দিল সে। ভাগ্যিস সময় মতো কিচেনের সাইডে বেসিনে পৌঁছতে পেরেছিল। খাদিজা নিজের খাওয়া ফেলে ছুটে গেলেন। ঘুঙুরকে চোখে মুখে পানি দিয়ে চেয়ারে এনে বসালেন। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

“কি হয়েছে তোর? এমন তো কখনও হয় না। শরীর খারাপ নাকি?”

ঘুঙুর দ্বিধাদ্বন্দের মাঝে মিনমিনিয়ে বলল,
“পিরিয়ড চলছে। ফার্স্ট ডে।”

খাদিজা বুঝতে পারলেন। তিনি সবকিছু গুছিয়ে ওকে নিয়ে লিভিংরুমে চলে গেলেন। সেখানে সবার মধ্যে থাকলে ওর ঠিক ভালো লাগবে। লিভিংরুমে ঢুকতেই ঘুঙুরের দৃষ্টি আটকে গেল সরাসরি কল্পের ওপর। সোফায় বসা নানুমনির নানুমনির কোলের ওপর মাথা রেখে আরামসে মেঝেতে বসে ফোন টিপছে সে। নানুমনির হাত তার চুলের ভাঁজে। আহ কি শান্তি।

“এই কুহু তুই একটু সরে বোস। ঘুঙুরকে বসতে দে। ওর শরীরটা ভালো নেই। তাড়াতাড়ি সরে বোস।”

উপস্থিত সকলের দৃষ্টি ঘুঙুরের ওপর পরল। ঘুঙুরের অস্বস্তির মাত্রা লিমিট ছাড়িয়ে। এই চাচি টা তার ভালো করতে গিয়ে সবসময় বিপদে ফেলে। কুহু জলদি সরে গেল। ঘুঙুরকে সেখানে বসিয়ে দিলেন খাদিজা। ঘুঙুর মিনমিন করে বলল,

“চাচি আমি বাড়ি যাই না। অনেকক্ষণ থেকেছি তো বলো। আবার পরে আসবো।”

খাদিজা বললেন,
“উহুম তা হবে না। আমি জানি তুই গেলে আর আসবি না। এত লজ্জা না মেয়েটার! বিকেলটা এখানেই থাকবি। পিঠা বানাবো খেয়ে তারপর যাবি।”

ঘুঙুর বলল,
“অনেক লেট হয়ে যাবে। বুঝতেই তো পারছ সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হবে। এতটুকু সময়ে তোমার হবে না জানি।”

এই সময়ে মেয়েটার সন্ধ্যার পর একা বেড়নোটা ঠিক নয়। কুহুও দিয়ে আসতে পারবে না। তাহলে উপায়? খাদিজা ভেবে বললেন,

“এত ভাবতে হবে না তোকে। দেরি হলে কল্প পৌঁছে দিয়ে আসবে। এখন চুপ করে বোস তো।”

ঘুঙুর আর কিছু বলার সুযোগই পেল না। তার আগেই ভেসে এলো রুষ্ট স্বর,

“এত কিসের অসুস্থ? দেখে তো মনে হচ্ছে না।”

খাদিজা ধমকে উঠলেন ছেলেকে।
“সব অসুখ কি দেখে বোঝা যায়? তাহলে তো আর দেশে ডাক্তার লাগত না। মুখ দেখেই অসুখ ধরে ফেলা যেত।”

কল্প ফের বলল,
“তা হয়েছে টা কি সরাসরি বলছ না কেন?”

খাদিজা অতিষ্ঠ ভঙ্গিতে বললেন,
“তোকে সবকিছু জানতে হবে না। চুপ করে বসে থাক।”

খাদিজা কিচেনে চলে গেলেন রান্নার কাজে। কুহুর মামা গেলেন জুবায়ের চৌধুরীর সঙ্গে বাইরে। কুহুর মামি ও খালা দুজনে গেলেন খাদিজার সঙ্গে কাজে হাত লাগাতে। শত হোক বেড়াতে এসে এভাবে একজনের দ্বায় চাপিয়ে বসে বসে খাওয়াটা সমিচিন নয়। থেকে গেল শুধু বাচ্চাগুলো তাদের নানুমনির সঙ্গে। গুলফা বেগম নাতির মাথায় হাত রেখে কত কি যে বোঝাচ্ছেন। কল্পের বিয়ের বয়স হয়েছে এখন তার বিয়ে করা প্রয়োজন ইত্যাদি ইত্যাদি। কল্পের কানে সেই কথা ঢুকছে কিনা কে জানে কিন্তু ঘুঙুর ঠিকই শুনছে সব। আড়চোখে অবলোকন করছে কল্পের হাবভাব। ঘুঙুরের পাশে বসে কুহু ও জাহিন ফোনে গেমস খেলছে। নানুমনির থেকে কিছুটা দূরত্বে বসা ছিল জেনি। তখন থেকে সে কেমন একটা গম্ভীর হয়ে আছে। কোনো কিছু বলছে না। হঠাৎই কল্পকে বিয়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই সে সোফা থেকে নেমে এসে কল্পের পাশে বসে পরল। উল্টো দিকে ঘুরে ঠিক কল্পের মতো করেই গুলফা বেগমের আরেক হাঁটুতে মাথা রেখে বলল,

“আমাকেও একটু আদর করে দাও তো নানুমনি। সব আদর তোমার নাতিকেই দিবে নাকি।”

গুলফা বেগম হাসলেন। সে দুজনকেই দু-হাতে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে গল্পে মশগুল হলেন। কল্প লক্ষ্য করল না বোধহয় জেনি তার খুব কাছ ঘেঁষে বসেছে। একেবারে বাহুতে বাহু মিশিয়ে। পায়ের সঙ্গেও পায়ের সংঘর্ষ হচ্ছে। জেনির অধরে একটা তৃপ্তির হাসি। এতক্ষণ যেটা বিলীন ছিল। কিন্তু এসব ঘটনায় একজনের মনে তীব্র ভাবে ধাক্কা দিচ্ছে যাতনার মেঘ। পেটের মধ্যে মুচড়ে উঠছে, মাথা ঘুরছে। আবার বমি আসবে কি?

চলবে,

®নামিহা নিশি