তোতাপাখি আমার পর্ব-১০

0
24

#তোতাপাখি_আমার

১০. (ক)
বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন খাদিজা। ছেলেটা সেই দুপুরে না খেয়ে বেরিয়ে গেল, এখন ফিরেও কিছু না খেয়েই দরজা আটকে শুয়ে পরল। তিনি এত করে ডাকলেন বলল, ‘খাবে না।’ মায়ের মন মানতে চায় না। ছেলেমেয়েকে না খায়িয়ে নিজে কি করে খাবার মুখে তুলবে? অগত্যা নিজেও না খেয়ে শুতে চলে গেলেন। ভেবে নিলেন সকাল হলে কল্পের সঙ্গে একান্তে কথা বলবেন। ছেলেটার মধ্যে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়।

বদ্ধ দরজার ওপাশে কল্প ঘুমালো বেঘোরে। ক্ষণপূর্বে কি কি ঘটিয়ে এসেছে সে-সবের লেশমাত্র তার মধ্যে নেই। বরং অবসন্ন, দূর্বল শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই রাজ্যের শান্তি। অপরদিকে নিদ্রাহীন কাটল ঘুঙুরের রজনী। এমন হীন আচরণ কিশোরী মনে ঠিক কতটা প্রভাব বিস্তার করল কল্প তা জানতেও পারল না। অথচ, রোজের মতোই রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটল। নতুন দিনের আগমন ঘটল। সারা রাত কেটেকুটে চোখ ফুলিয়ে ভোরের দিকে চোখ লেগে এসেছিল ঘুঙুরের। সেটুকুও নষ্ট হল মায়ের ডাকে।

“ঘুঙুর….. উঠবি তো? আটটা বেজে গেছে। স্কুল যাবি না আজ। জলদি ওঠ।”

ঘুঙুর নড়চড়ে উঠল। মন সায় দিচ্ছে না স্কুলে যেতে। বাহানা করে বলল,
“শরীর খারাপ লাগছে। আজ যাব না।”

নলিনা শুনলেন না। মেয়ের গা থেকে কাঁথা সরিয়ে দিয়ে বললেন,
“যেতেই হবে। বড্ড ফাঁকিবাজ হচ্ছিস। ক’দিন বাদে পরীক্ষা। এভাবে চলতে থাকলে লাড্ডু পাবি, লাড্ডু। যা জলদি তৈরি হয়ে নে। আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে।”

পিরিয়ডের থার্ড ডে। শারীরিক কন্ডিশন বেশ ভালো হলেও গতরাতের ঘটনায় মনের জোর একদমই শূন্যে। কিন্তু এটা মা’কে বোঝাবে কি করে সে। অগত্যা বাধ্য হয়েই স্কুলের জন্য তৈরি হতে চলে গেল।

শিশির ভেজা আঁকাবাঁকা পথে নিটোল পায়ে হেঁটে যায় ষোড়শী কিশোরী। নতুন স্পর্শ, নতুন অনুভূতির ছোঁয়ায় এলোমেলো কিশোরীর আদল জুড়ে উদাসীনতা। একা পথে হেঁটে চলেছে অথচ ডানে, বামে খেয়ালহীন। স্কুলের পথ আরও কিছু বাকি। পথিমধ্যে তার পথ রোধ করে কল্প বাইক থামায়। ঘুঙুর হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে তাকে দেখে। সংকোচ, সংশয়, ভয়, লজ্জা, অভিমান মিলেমিশে একাকার তার আননখানি আপনমনে নত হয়ে এলো কল্পের উপস্থিতিতে। কল্প আগাগোড়া কিশোরীকে পরোখ করে ছোট্ট করে বলল,

“উঠে বোস।”

ঘুঙুর কৌতুহলে চেয়ে। হাবভাব এমন কল্পের কথার সারমর্ম বোধগম্য হয়নি। বিষয়টা বুঝে কল্প বিরক্তির রেশ ধরে বলল,

“বাইকে উঠে আসতে বলেছি।”

অন্য সময় হলে হয়তো ঘুঙুর কল্পের এক ধমকেই হুড়মুড় করে উঠে বসতো কিন্তু আজ বিষয়টা ভিন্ন। গতরাতের ঘটনার পর খুবই সতর্ক সে। একই ভুল দ্বিতীয়বার করা যায় না। তাই সাহস সঞ্চয় করে বলল,

“আমার স্কুলের দেরি হচ্ছে। আপনি পথ ছাড়ুন।”

কল্প দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিল ক্রোধের৷ মাত্রা। অধৈর্য্যে সে শেষবারের মতো মাথা ঠান্ডা রেখে নরম কন্ঠে বলল,

“লাস্ট ওয়ার্নিং, উঠে আয়।”

ঘুঙুরও আজ নাছোড়বান্দা। কিছুতেই উঠবে না।
“বললাম যে পথ ছাড়ুন। স্কুলের দেরি হয়।”

এতটুকু শোনার সাথেই ঝড়ের বেগে বাইক থেকে নেমে এলো কল্প। কঠোর ভাবে খামচে ধরল ঘুঙুরের কোমল বাহু। দাঁত খিচিয়ে বলল,

“কাকে ভাব দেখাস তুই? মে’রে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেব, কেউ জানতেও পারবে না।”

পরপর সেভাবেই ওকে টেনে বাইকের কাছে নিয়ে গেল। ওর হাত ছেড়ে আঙুল উঁচিয়ে বলল,
“চুপচাপ উঠে বোস। আমাকে রাগতে বাধ্য করিস না।”

কল্প বাইক স্টার্ট দিয়ে ঘুঙুরের দিকে তাকাতেই ঘুঙুর সুরসুর করে পেছনে উঠে বসল। আর যাই হোক তার দ্বারা এই লোকের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। এখন কপালে যা আছে তাই হবে নিশ্চয়ই।

গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে। অতটা পথ এর আগে কখনও আসা হয়নি ঘুঙুরের। বাইক যতটা এগোচ্ছে ঘুঙুরের সাহসের মাত্রা ততই ক্ষীণ হচ্ছে। অবশেষে বাইক এসে থামল একটা খালি বাড়ির সামনে। খালি বুঝলো কারণ কল্প নিজেই পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলছে। ঘুঙুরের মনে হচ্ছে সে কোনো বাড়ির দরজায় নয় বরং য’মের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। অজানা ভ’য়ে কন্ঠও রোধ হয়ে আছে তার। ফলস্বরূপ গলা দিয়ে কোনো আওয়াজই বের হচ্ছে না। শুধু তাকিয়ে দেখছে কল্পের কার্যক্রম। দরজা খুলে ঘুঙুরের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ওকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজার খিল এঁটে দিল কল্প। এতক্ষণে ঘুঙুরের হুঁশ ফিরল। সে অস্থির হয়ে বলল,

“এভাবে কেন তুলে এনেছেন আমায়? দরজা কেন আটকেছেন? আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন৷ বাড়ি যাব আমি।”

কল্প এক ধ্যানে চেয়ে আছে ছোট্ট ভীতু মেয়েটার কম্পমান অস্তিত্বের পানে। এই ছোট্ট দেহে এমন কি আছে যা তাকে প্রবল আকর্ষণে বেঁধে রেখেছে। সে জোর কদমে এগিয়ে গেল একেবারে ঘুঙুরের সন্নিকটে। ঘুঙুর ভ’য়ে পিছিয়ে যেতে নিলে তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হল না। সর্বশক্তি দিয়ে ওকে একটানে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিল কল্প। গত রাতের থেকেও অনেক কঠিন, দৃঢ় এ বন্ধন। ঘুঙুর নড়েচড়ে উঠতেই কল্পের আর্তনাদ ভেসে উঠল,

“বিশ্বাস কর আর পারছি না। আটাশ বছর তো ধৈর্য্য ধরলাম, আর কত? কবে বড় হবি তুই? কবে আমার হবি? নওয়াব কল্প চৌধুরী তোর বিরহে ধুঁকে ধুঁকে ম’রে গেলে তারপর হুঁশ ফিরবে তোর? তার আগে বাচ্চা হয়েই থাকবি?”

ঘুঙুর আঁতকে উঠল,
“কি বলছেন কি আপনি? মাথার ঠিক আছে? কাল থেকে এসব কি পাগলামি শুরু করেছেন? আপনাকে চিনতেই পারছি না আমি। চেনাজানার বাইরের একেবারে।”

কল্প জবাবে বলল,
“ঠিকই বলেছিস। আমাকে আমিই চিনতে পারছি না। এতটা অধৈর্য্য কবে থেকে হলাম আমি? তোর মতো একটা বাচ্চা মেয়ে আমায় হারিয়ে দিল। কল্প চৌধুরী নিজেকে হারিয়ে ফেলল তোর মাঝে, তোর অস্তিত্বে।”

ঘুঙুর অসহায় কণ্ঠে বলল,
“আপনি আজও নেশা করে আছেন?”

কল্প যেন থমকালো। জবাবে বলল,
“হুমম খুব ভয়ংকর নেশা হয়েছে আমার। সেই বছর তিন আগে থেকে। এই নেশা কবে কাটবে বল তো? তোর নেশা। মাদকের চেয়েও মাদকীয়।”

ঘুঙুরের শুনতে মন্দ লাগছে না। প্রিয় পুরুষের দেওয়া যেকোনো আখ্যান নারী মনে খুব দ্রুতই ছাপ ফেলে। হোক তা ভালো কিংবা মন্দ। ঘুঙুরও তার ব্যতিক্রম। অপ্রত্যাশিত হলেও কল্পের মুখে এমন প্রেমময় বানী তাকে ভেতর থেকে সতেজ করে তুলছে। দুলছে সমগ্র মন-প্রাণ।

চলবে,

®নামিহা নিশি

#তোতাপাখি_আমার

১০(খ).
বিছানায় ঠেস দিয়ে বসে আছে ঘুঙুর। তার কোলের ওপর কল্পের মাথা। ঘুঙুরের কোমর জড়িয়ে আরামসে একটা ঘুম দিচ্ছে সে। এইতো আধঘন্টা হয়ে গেল এভাবে বসে আছে ঘুঙুর। মনে পরছে ক্ষণকাল পূর্বে বলা কল্পের সেই সুমধুর বানীগুলো, “ভালোবাসি তোতাপাখি। খুব বেশি ভালোবাসি। আমার হয়ে যা না। কথা দিচ্ছি আগলে রাখবো। খুব যতনে, খুব আদরে।” ভালবাসা জানানোর দায়টুকুই বোধহয় তার ছিল। নিজের সমস্ত অনুভূতিটুকু নিংড়ে দিয়ে ঘুঙুরকে কিছু বলার সুযোগই দিল না। অকস্মাৎ ওকে বিছানায় ধাক্কা মে’রে ফেলে দিয়ে ওর কোলের ওপর শুয়ে পরল। ঘুঙুরের ডান হাত নিজের মাথায় তুলে দিয়ে বলল,”চুল টেনে দে। আমি এখন ঘুমবো। বহুরাত শান্তিতে ঘুম হয়নি।” ব্যস, তার পরপরই কল্প ঘুমিয়ে গেল গভীর ঘুমে। ঘুঙুর বসে লজ্জায় লাল-নীল হচ্ছে আর স্মৃতি হাতড়ে বিমোহিত হচ্ছে। গতকাল রাতে কল্পের প্রতি যে বিতৃষ্ণা জন্মেছিল সেখানে এখন পূর্বের ন্যায় অনুভূতির ঢেউ। কারণ সে বুঝে গেছে কল্প তাকে ভালবাসে বিধায় নেশাগ্রস্ত অবস্থাতেও শুধু তাকেই খুঁজেছে, তার কাছেই এসেছে। কিন্তু নুপুরকে নিয়ে মনে কিছুটা সংশয় রয়েই যায়। নুপুর কি ঘুঙুরের মতো করে বুঝবে কল্পকে? নাকি বোনের ভালবাসার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে?

কল্পের ঘুম ভাঙল প্রায় ঘন্টা খানেক পর। ততক্ষণে ঘুঙুরের পা অবশ হয়ে কোমায় চলে যাওয়ার মতো অবস্থা। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে বলে একটুও নড়েনি এতক্ষণ। কল্প উঠেই ফ্রেশ হতে চলে গেল রুমের মধ্যের এটাচ বাথরুমে। ঘুঙুর বিছানা থেকে নেমে একটু হাঁটাহাটি করে পা সোজা করে নিচ্ছে। তন্মধ্যে বেরিয়ে এলো কল্প। টাওয়ালে মুখ মুছতে মুছতে বলল,

“এইটুকু সময়েই হাঁপিয়ে উঠেছিস, বিয়ের পর কি করবি? তখন তো সারারাত এভাবেই বসিয়ে রাখবো।”

ঘুঙুর লজ্জায় মাথা নত করে ফেলল। কল্প টাওয়ালটা বিছানায় ছুড়ে মে’রে ঘুঙুরের খুব কাছে এগিয়ে এলো। ওর চিবুক তুলে ধরতেই চোখাচোখি হল দু’জনের। কল্প ঘুঙুরের কপালের ওপরের এলোচুলগুলো ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে বলল,

“লজ্জা, কষ্ট, ভয়, সংশয় সবকিছুকেই জয় করতে শিখ তোতাপাখি কারণ নওয়াব কল্প চৌধুরী সবকিছুর মিশ্র অনুভূতি। তার মধ্যে এককভাবে কিছু খুঁজতে যাস না।”

জবাবের আশায় বসে রইল না কল্প। ওকে ছেড়ে দিয়ে কাউকে একটা কল করে বলল, “আমাদের জন্য খাবার দিয়ে যান।”

ঘুঙুর অবাক হয়। একটা এক কামরার ঘর। কোথাও কিচেনও দেখা যায়নি অথচ খাবারের ব্যবস্থা করতে বলছে কাকে? কৌতুহল দমিয়ে না রেখে সে প্রশ্ন করেই ফেলল,

“এটা কার বাসা? খাবারের ব্যবস্থা কে করবে? আর কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না।”

কল্প মুচকি হেসে বলল,
“এটা তোর হবু বরের পারসোনাল বাসা। মাঝেমধ্যে রিফ্রেশমেন্টের জন্য সে এটা ইউজ করে। তাছাড়া কোনো গুপ্ত উদ্দেশ্য থাকলেও এই বাসা ভীষণ কাজের। যেমন আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ মিটিংটা…..।”

শেষোক্ত কথাটুকু বলতে গিয়ে কল্প তাদের দু’জনের দিকে ইশারা করল। এতেও যেন ঘুঙুরের লজ্জার শেষ নেই। সে মিয়িয়ে গেল এভাবেও।

খাবার দিয়ে গেল একজন পুরুষ লোক এসে। কল্প জানাল এই লোকই এই বাসা সুন্দর, পরিপাটি ভাবে গুছিয়ে রাখে এবং কল্প এলে সবরকম ব্যবস্থা করে। বক্সে করে বিরিয়ানি দিয়ে গেল লোকটি। কল্প সুন্দর ভাবে খাবারটা একটি প্লেটে তুললো। অতঃপর এগিয়ে ধরল ঘুঙুরের সামনে। ঘুঙুর কৌতুহলী দৃষ্টি নিতে তাকাতেই সে বলল,

“খায়িয়ে দে।”

ঘুঙুর বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল এমন আবদারে। এটা কিছুতেই যেন সম্ভব নয়। এ অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভব সম্ভব হল কল্পের এক ঝাড়িতে।

“শুরু করবি নাকি দেবো কষে একটা?”

বাধ্য হয়েই ঘুঙুর কম্পিত হাতে খাবার তুলে দিল কল্পের মুখে। কল্প খপ করে গিলে নিল সেটা। সঙ্গে ঘুঙুরের আঙুল। অদ্ভুত শিহরণে কেঁপে উঠল ঘুঙুরের সর্বাঙ্গ। সময় নিয়ে পরবর্তী লোকমা কল্পের মুখের সামনে তুলতেই সেটা ঘুরিয়ে ওকেই খায়িয়ে দিল কল্প। ঘুঙুর এবারে লজ্জা পেল বেশ। এভাবেই ঘুঙুরের হরেকরকম অনুভূতির আদল দেখে দেখে খাওয়া শেষ করল কল্প। আজ দিনটা তাদের জন্য ভীষণই আনন্দের ছিল। দেখতে দেখতে যখন ফেরার সময় ঘনিয়ে এলো কল্প তখন ঘুঙুরের একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ঘুঙুর ভড়কে গেল সেই দৃষ্টির তোপে। তোতলানো স্বরে বলল,

“ক ক কি দেখছেন এএএভাবে?”

কল্প সেভাবেই তাকিয়ে দু-হাতের আঁজলে ঘুঙুরের সুশ্রী বদনখানি তুলে নিল। অসহায় কন্ঠে বলল,

“তোর বাবার থেকে কথা আদায় করে নিয়েছি, নির্বাচনে জিতলে আমি যা চাইবো তিনি আমাকে তাই দিবেন। হোক সেটা তার ঘরের জিনিস, তবুও। আমি কি চাইবো ভেবেছি বলতো?”

ঘুঙুর অবুঝের ন্যায় প্রশ্ন করল,
“কি?”

কল্পের গলা বেয়ে সূক্ষ্ণ ঢোক নেমে গেল। এডামস অ্যাপেলটা দৃশ্যমান ভাবে ওঠানামা করতে দেখা গেল। যা দেখে ঘুঙুরের গলাও শুকিয়ে এলো। তন্মধ্যে কল্প জবাবে বলল,

“তোকে। রোজ সিজদায় যেভাবে তোকে চাই আল্লাহর দরবারে সেভাবেই চাইবো।”

ঘুঙুর অবাক দৃষ্টে চেয়ে রইল। কল্প আসলেই তাকে সিজদায় চায়! এতটা স্পেশাল কবে থেকে হল সে? একটা মানুষের এতটা সিজদায় তার অবস্থান। ঘুঙুরের বিস্ময় কাটার পূর্বেই কল্প ফের বলল,

“বল না তোতাপাখি, আমি পারবো তো? জীবনে প্রথম কল্প চৌধুরী ভেতর থেকে নার্ভাস ফিল করছে। বারংবার মনে হচ্ছে কোনো একটা ভুল হবেই।”

এই প্রথম। হ্যাঁ, এই প্রথম ঘুঙুর একটা অবিশ্বাস্য কাজ করে বসল। নিজে থেকেই খুব শক্ত ভাবে কল্পকে জড়িয়ে ধরল। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। কল্পের হারিয়ে যাওয়া মনের জোর পুনর্জীবিতের জন্য ব্যস এতটুকুই দরকার ছিল। ঘুঙুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে নিল তার তোতাপাখিকে। এভাবেই শুরু হয়েছিল তাদের প্রেমের গল্প।

এরপরের দিনগুলি খুব দ্রুতই এগোতে শুরু করল। দিনের বেশিভাগ সময় কল্প ইলেকশনের কাজ নিয়ে পড়ে থাকে। ঘুঙুরের সঙ্গে দেখা হয় শুধুমাত্র স্কুল ছুটির সময়টায়। স্কুল শুরুর সময় কল্প আর যেতে পারে না কজ রাতে ঘুমতে লেট হওয়ার দরুন সকাল সকাল ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। এদিকে জেনি আপদটা এখনও গলায় ঝুলে আছে। এটাও আরেক মুশকিল। দিন যত যায় এর উৎপাত তত বাড়ছে। কল্প চাইছে এটা নিয়ে সরাসরি মায়ের সঙ্গে আলাপ জুড়বে। বাড়িতে সে একটু শান্তি চায়। ঘুঙুরকে যে জায়গায় রাতদিন কল্পনা করে সে জায়গায় অন্য কেউ ঘুরঘুর করলে মেজাজ তো খারাপ হবেই।

চলবে,

®নামিহা নিশি