আমিই সেই তন্নি পর্ব-০৩

0
21

#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin


রান্নাঘরে এক হাতে রান্না করছি।আর অন‍্য কাজ করছি।সংসারেতে সংসারি সাঁজ বলতে পারেন।
ফাঁকে ফাঁকে গিয়ে আবার ইয়াসির স‍্যারের সঙ্গে দু-একটা কথা বলে আসছি।
অথিতি সে।একা বসিয়ে রাখলে কেমন দেখায়!
ছেলেটাকে আসতে বললাম।ঘন্টাপর আসার কথা থাকলেও আসার নাম গন্ধ নেই।ছেলেটা একদমই কথার মর্ম বোঝেনা।
বাধ‍্য হয়ে আমাকেই সব একা হাতে করতে হচ্ছে।এতো বড়ো ছেলে হয়েও মায়ের কোনো কাজে সাহায্য করেনা।পড়েছি মহা ঝামেলায়।
পারুল ভাবিকে রান্নার কাজে সাহায্য করছি।দুজন মিলে তাড়াতাড়ি করছি।
স‍্যারকে জোর করে এটুকু সময় আটকে রেখেছি।
রান্না শেষে টেবিলে খাবার সার্ভ করি।
স‍্যারকে ফ্রেশ হতে দিয়ে আমি নিজেও ঘরে ছুটলাম ফ্রেশ হতে।
ঘামার্ত শরীরে খাওয়া উচিৎ নয়।
মেয়ে আমার ঘরে ঘুমিয়ে আছে।ওকে ডাকলাম খেতে।মেয়েটা উঠলো না।বাধ‍্য হয়ে আমি একাই নিচে এলাম।
স‍্যারকে খেতে দিয়ে পাশে দাড়িয়ে রইলাম।
স‍্যার ভ্রু কুচকে বললেন,”দাড়িয়ে আছেন কেন?
বসে পড়ুন ম‍্যাম।কখন খাবেন আপনি?
অসুস্থ শরীর নিয়ে না খেয়ে থাকা উচিৎ নয়।সবাইকে ডেকে খেতে বসুন।
একসঙ্গে খাওয়ার মজাই আলাদা।”

সবার সঙ্গে খাওয়ার ভাগ‍্য আমার খুব কমই হয়েছে।
বসলাম খেতে।পারুল ভাবি আর ভাইকেও ডেকে বসিয়ে দিলাম।এরাই আমার পরিবার।ছেলে-মেয়ে তো এলো না।
খেতে লাগলাম।
স‍্যারকে দেখছি তেমন কিছুই নিচ্ছেনা।হয়ত লজ্জা পাচ্ছে।
আমি জোর করে উঠিয়ে দিলাম খাবার।চিংড়ি মাছ করেছি আজ।বেশ কখান মাছ উঠিয়ে দিলাম।
বললাম,”এটা খেয়ে দেখুন স‍্যার।আমার প্রিয় আইটেম।খুব যত্ন করে রান্না করেছি আপনার জন্য।”

স‍্যার একবার আমার দিকে তাকায়।এরপর খাবারে মনোযোগ দেয়।
ভীষণ প্রশংসা করেন রান্নার।তার কাছে খুবই ভালো লেগেছে খাবার।
রান্না করছি বহু বছর হলো।প্রশংসা করেনি কেউ।সকলের ভাষ‍্যমতে রান্নার প্রশংসা করলে অহংকার বাড়ে।স্বাধ বাড়েনা।
বাচ্চারা যদিও ছোট বেলা ভীষণ প্রশংসা করতো মায়ের হাতের রান্নার।এখন আর করেনা।ওরা এখন আমার হাতের রান্না খুব কমই খায়।
হয়ত ভুলেই গেছে মায়ের হাতের রান্নার স্বাধ।
খুব ইচ্ছে করে ছেলে-মেয়ে দুটোকে কাছে টেনে নিজ হাতে খাইয়ে দেই।সঙ্গে নিয়ে রান্না করি।তিনজনে আমোদ করে খাই।
স্বপ্ন আমার স্বপ্নই থাকে!

খাওয়া শেষে স‍্যার ফিরতে চাইলেন।
হাসি মুখে তাকে বিদায় দিলাম।যাওয়ার সময় স‍্যারের মুখখানা কেমন যেন লাল লাল দেখালো।ভেবেছি ঝাল লেগেছে হয়ত।

তাকে বিদায় দিয়ে ঘরে এলাম।মেয়েটা ঘুমন্ত অবস্থায়।কী নিষ্পাপ একটা চেহারা।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
ডাকলাম ধীর স্বরে।
ঘুম থেকে উঠলো সে।
বললাম,”খেয়ে নেবে চলো।বেলা হয়েছে অনেক।”

অর্নি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,”আজ সময় নেই।খেতে নিলে দেরি হয়ে যাবে।”

“একটু খেয়ে যাও মা।তোমার পছন্দের রান্না করেছি আমি।”

“নাহ আম্মু।সময় নেই আমার।
এমনিতেই এখানে এসে অনেকটা সময় নষ্ট হলো।
শুধু শুধু এলাম!”

অসুস্থ মাকে দেখতে আসা সময় নষ্টের?
একবার প্রশ্নটা করতে চাইলাম।পরক্ষণে ভাবলাম,থাক।
ছোট মানুষ কিনা কী মনে করে।
আসলে কী জানেন,ছোটদের প্রশ্রয় মূলত আমরা বড়োরাই দেই।ছোট বলে ছাড় দেই অনেক কিছুই।এতে বাচ্চারা আরো ভুল করে।
তাই আমাদের উচিৎ বাচ্চাদের পর্যাপ্ত শাসন করা।শাসন না করতে পারলে কাছে ডেকে বোঝানো।

মেয়েটা চলে গেল।
একা আমি একাই রয়ে গেলাম।
ছেলে ফিরলো রাতে।এসেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”স‍্যারকে কী খাইয়েছিলে আম্মু?স‍্যার তো অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।”

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।এই তো দুপুরেই মানুষটা সুস্থ ছিল।হঠাৎ কী হলো?
বললাম,”কী খাওয়াবো?বাড়ির খাবারই খাইয়েছি।কী হয়েছে উনার?”

“স‍্যারের এ‍্যালার্জির সমস্যা আছে।আজ হঠাৎ করে এ‍্যালার্জি বেড়ে গিয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।পড়ে হাসপাতাল নিতে হয়েছে তাকে।ভর্তি করা হয়েছে।”

“কোন হাসপাতাল? চলো দেখতে যাবো এক্ষুনি।
না জানি কী অবস্থায় আছে মানুষটা!”

মা-ছেলে মিলে তৈরি হয়ে রওনা হলাম।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখি স‍্যার রুগ্নসুগ্ন অবস্থা বেডে শুয়ে আছে।মুখখানা কেমন মলিন ভাব।

আমাদের দেখে একটু হাসলেন তিনি।বললেন,”আলিফ তুমি আবার মাকে আনতে গেলে কেন?শুধু শুধু কষ্ট করে এলো তিনি।”

বললাম,”কী হয়েছে আপনার স‍্যার?কেমন আছেন এখন?”

স‍্যার শুকনো হেসে বলেন,”তেমন কিছু না।
ছোট থেকেই চিংড়ি মাছে এ‍্যালার্জি আমার।আজ একটু বেশি পরিমাণে খেয়েছিলাম তাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যেত।
আলিফদের কোচিং ক্লাসে ছিলাম আমি।হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছি।ওরা ভয় পেয়ে হসপিটাল এনেছে আমায়।
চিন্তা করবেন না ম‍্যাম।আমি ঠিক আছি।”

আমার জন্য মানুষটা কতো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।আসলে আমার বাড়ির কারো এই সমস্যা নেই।তাই জানা ছিল না।
বড্ড অপরাধ বোধ কাজ করছে।

মাথা নত করে ক্ষীণ স্বরে বললাম,”আমি ভীষণভাবে দুঃখীত স‍্যার।আমার জন্যই এমনটা হলো।আমি জোর না করলে আপনি খেতেন না।”

স‍্যার আলিফের দিকে ক্বড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”এজন‍্যই তোমায় বলেছিলাম মাকে এসব না জানাতে।উনি অসুস্থ মানুষ শুধু শুধু নিজেকে দোষী ভাবছে।চিন্তা করছে।”

আলিফ আমতা আমতা করে।বাইরে থেকে ওর বয়সী একটা ছেলে এসে ডাকে।এটা আলিফের বন্ধু।
ডাক্তার নাকি ওদের ডাকছে।দুজনে বাইরে যায়।
আমি চেয়ার টেনে স‍্যারের সামনে বসি।মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

“আপনার চিংড়ি মাছে এ‍্যালার্জি এটা আগে কেন বলেননি?খেতে যখন দিয়েছিলাম নিষেধ কেন করেননি?”

তিনি আমার দিকে দীর্ঘ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”কারণ আপনি রান্নাটা খুব যত্ন করে করেছিলেন।ওটা শুধু আগুনের তাপে করা রান্না নয়।ওখানে আপনার সুক্ষ মনোযোগ আছে।যত্ন,ভালোবাসা আছে।
আমি যখন তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছি আপনার চোখ-মুখে একপ্রকার খুশির ঝলক দেখেছি।
সেই খুশির কাছে সামান্য এই অসুস্থতা কিছুই না।
একটা ঔষধ খেলে আমার অসুখ সেরেই যাবে।কিন্তু খাবারটা না খেলে আপনার চোখ-মুখ উপচে পড়া খুশিটা আমি মিস করে যেতাম যে!
তাই তো অনেক সময় অপর পক্ষের মানুষটির মন রাখতে হলেও একটু বেখেয়ালি হতে হয়।
কিছু কিছু মূহুর্ত বারবার ফিরে পাওয়া যায়না ম‍্যাম।”

আমি একটু হাসলাম।
স‍্যার মানুষটা সত‍্যিই অমায়িক।নিজের চেয়েও অন‍্যের মন রাখে ভালো।

“তবুও আপনার এমনটা করা উচিৎ হয়নি।”

“ঠিক আছে।আমি ভুল স্বীকার করছি ম‍্যাম।আমি দুঃখীত ম‍্যাম আপনায় চিন্তায় ফেলার জন্য।”

এরই মাঝে হন্তদন্ত হয়ে আলিফ ও তার বন্ধুরা ভেতরে এসে বলে,”আজকের রাতটা আপনার এখানেই থাকতে হবে স‍্যার।ডক্টর শরীরের কন্ডিশন দেখে থাকতে বলেছে।”

স‍্যার চরম বিরোধ করে।সে কিছুতেই থাকবেনা।
আমি বললাম,”জেদ কেন করছেন স‍্যার?
ডাক্তার আপনার শরীরের পরিস্থিতি বুঝেই থাকতে বলেছে।একটা রাত থেকেই যান না।”

“আপনি বুঝছেন না।
আমি থাকলে আমার সঙ্গেও কাউকে থাকতে হবে।আমার মা অসুস্থ।তারা থাকেও বহু দূরে।আমার কোনো ভাই-বোনও নেই।
এখন মা-বাবাকে এটা জানালে তারা অযথাই চিন্তা করে আরো অসুস্থ হবে। তড়িঘড়ি আসতে চাইবে।আমি নিজেই আপাতত থাকছি এক কলিগের বাড়ি।মা-বাবা এলে ঝামেলা বাড়বে।
এছাড়াও আমি তেমন গুরুতর অসুস্থ ও নই।
যেই কলিগের বাড়ি থাকছি তার ওয়াইফের তিনদিন আগেই অপারেশন হয়েছে।তাই সেও আসতে পারবেনা।এই শহরে আমার চেনাজানা আর কেউ নেই ও।
এবার বুঝুন আমার অবস্থা।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

আমি দু-দন্ড ভেবে বলি,”আপনি কিছু না মনে করলে আজকের রাতটা আমি আর আলিফ এখানে থাকতে পারি।
আমার অসুস্থতায় আপনি সাহায্য করেছেন।নিজের কাজ বাদ দিয়ে আমার পাশে থেকেছেন।এবার আমার দায়িত্ব পালনের পালা।
আপনার মতোই আমিও আপনার পাশে থাকতে চাই।”

স‍্যার কিছু বলার আগেই আলিফ ও ওর এক বন্ধু বলে,”জ্বী স‍্যার।আমরাও আজ থাকবো।
আপনি আমাদের সন্তানের মতো ভালোবাসেন।আমাদেরও উচিৎ আপনার বিপদে পাশে থাকা।
একটা রাতই তো।ঠিক ম‍্যানেজ হয়ে যাবে।আপনি আর না করবেন না স‍্যার।
রিস্ক নেওয়া ঠিক হবেনা।আপনার শরীরের রেড সার্কেল গুলো এখনো আছে।
এগুলো সারার পর বাড়ি যাবেন।কাল কলেজও ছুটি।তো সমস্যা হবেনা আশা করি।”

তিনজনা মিলে স‍্যারকে বুঝিয়ে রাজি করালাম।

আর বাড়ি ফিরলাম না।পারুল ভাবিকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম।
স‍্যারের জন্য হালকা খাবার আনিয়ে নিলাম রাতের জন্য।ছেলেরা বাইরে থেকে খেয়ে এলো।
ছোট্ট একটি ঘরে স‍্যার শুয়ে আছে বেডে।আমরা বসে রইলাম কিছুক্ষণ।
আলিফ ও তার বন্ধু বারান্দায় গিয়ে বসলো।
আমি ভেতরে একা।চেয়ারে বসে আছি।
স‍্যার শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফ‍্যানের দিকে।

বললাম,”খাবার খাবেন স‍্যার?ঔষধ খেতে হবে যে!”

স‍্যার মাথা ঝাকিয়ে নিষেধ করে।
বলেন,”খেতে ভালো লাগছেনা।আপনি খেয়ে নিন।আপনিও তো খাননি।”

“তাহ কী করে হয় স‍্যার!আপনি অসুস্থ,আপনাকে ছেড়ে আমি খেয়ে নেব?
ওতোটা বিবেকহীন ও আমি নই।
আমারও খিদে নেই।”

“আমি আপনায় ভীষণ চাপে ফেলে দিলাম হয়ত।আমার জন্য বসে বসে রাত জাগতে হচ্ছে আপনার।”

“আমার অভ‍্যাস আছে।রাত জেগেই কাজ করি আমি।চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দেখছেন না?”

স‍্যার চুপ গেলেন।সঙ্গে আমিও।
উঠে হাঁটাহাঁটি করলাম।কোমর ধরে আসছে।
এভাবেই প্রায় ঘন্টাখানিক কেঁটে গেল।
নার্স এসে ঔষধ দিয়ে গেল।খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিতে বলল।
ছেলে দুটোকে ডাকলাম।ওরা নেই।বাইরে গেছে।
ফোন ও করলাম।রিসিভ করেনা।
এদিকে আমার একার পক্ষে স‍্যারকে খাওয়ানো সম্ভব হবেনা।নার্স ও চলে গেছে।ডাকতে গিয়ে খুঁজেও পেলাম না।অন‍্য কেবিনে চলে গেছে।রাতের ব‍্যাপার কিনা!
তেমন কেউ নেই হাসপাতালে।

আমার অবস্থা বুঝে স‍্যার বললেন,”এতো ব‍্যতিব‍্যস্ত হওয়ার কিছু নেই ম‍্যাম।ততোটা অসুস্থও আমি নই,যে একা হাতে খেতে পারবোনা।”

উনি একাই উঠতে নিল।খানিকটা উঠে হঠাৎ হাত ফসকে বেড থেকে পড়ে যেতে নিল।
আমি দৌড়ে গিয়ে ধরলাম তাকে।মূহূর্তের মাঝে চোখাচোখি হয়ে গেল কিছু প্রহরের।
লজ্জায় নাকের গোড়ায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আমার।

স‍্যারকে বালিশ টেনে আধশোয়া করে বসিয়ে সরে এলাম।
কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছে।নিজেকে সামলে নিলাম কোনো মতে।
এরপর তার খাবার গুলো এগিয়ে দিয়ে বললাম,”খেয়ে নিন স‍্যার।”

কিন্তু উনি নাছড় বান্দা আমায় ছাড়া খাবেন না কিছুতেই।খাবারে ফিফটি ফিফটি ভাগ করে দিল।
একান্ত বাধ‍্য হয়েই খেলাম।
এরপর ঔষধ দিলাম হাতে।খেয়ে নিলেন তিনি।বিছানায় শুয়ে পড়লেন।
আমি আগের ন‍্যায় বসলাম।
স‍্যার ধীরে ধীরে ঘুমে তলিয়ে যেতে লাগলেন।ঔষধের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ ও ছিল হয়ত।
চোখ বন্ধ করে ঘুমের ঘোরে বলতে লাগলেন,”জানেন তন্নি, ছোট্ট এই জীবনে বহু দুঃখ সয়েছি।জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলাম একজনকে।তাকেও অন‍্য পুরুষের সঙ্গে দেখেছি।
জীবন আমায় চরম ভাবে ঠকিয়ে গেছে প্রতিনিয়ত।
অজস্র দুঃখ,বেদনা চেপে রেখেছি মনে।”

তার বলা প্রতিটি কথাই শুনলাম মনোযোগ দিয়ে।তিনি ঘুমিয়ে গেলেন।
আমি উঠে জানালার ধারে এসে দাড়ালাম।
‘সত‍্যিই মানুষের জীবন কতো বিচিত্র।
কেউ যেন সুখে নেই।প্রতিটি মানুষের একটা না একটা কালো অতীত থাকে।যা তাকে ভেতর থেকে শেষ করে দেয়।
স‍্যারের মতো ভালো, সৎচরিত্রের মানুষকেও যে কেউ এতো বাজে ভাবে ঠকাতে পারে ধারণাতে ছিল না।

আমার ছেলেটা আর আসেনি বাকিরাত।ফোন দিয়েছি ধরেনি।
প্রচন্ড রাগ হয়েছে।ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে চর বসাই গালে। এ কেমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ছেলে?
শিক্ষক অসুস্থ,রাতে থাকবে বলল।
অথচ ওরা উধাও!
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
অন‍্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।

এপাশ-ওপাশ পাইচারি করে করে পা ধরে এসেছে।আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা।চেয়ার টেনে বসি আবারো।স‍্যার গভীর ঘুমে।
বসে থেকে থেকে কখন যে স‍্যারের বেডে মাথা দিয়ে বসেছি খেয়াল নেই।

ভোর যখন সাতটা স‍্যারের ঘুম ভেঙেছে আমার আগেই।
আমি বেডে মাথা দিয়ে ঘুমোচ্ছি।
স‍্যার আমায় ডাকেন নি।দীর্ঘ দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলেন শুধু।
তখনই আলিফ আর ওর বন্ধু আসে।
আমায় ডাকে।চোখ কোচলে উঠি আমি।
আলিফ বলে,”ঘুমিয়ে পড়েছিলে আম্মু?”

আমি উত্তর না দিয়ে প্রচন্ড বকা দেই ছেলেকে।
ও বলে,”আমরা হাসপাতালের নিচ তলায় একটা ফাঁকা কেবিনে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আম্মু।ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই টের পাইনি।সকালে উঠে তোমার কল দেখে ছুটে এলাম।
স‍‍্যরি আম্মু।মাফ করে দাও প্লিজ।”

রাগ কমছেনা আমার।হিসফিস করছি।
স‍্যার বলেন,”শান্ত হন ম‍্যাম।ওরা বাচ্চা মানুষ।
রাত জাগতে পারে নাকি এতো!”

আর কিছু বললাম না।
বাইরে এলাম।
একাই সব ফর্মালিটি পূরণ করে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললাম।
ডাক্তার প্রেসকিপশন ধরিয়ে দিয়ে রিলিজ করে দিলেন।
ভেতরে এসে বললাম,”ডাক্তার রিলিজ দিয়ে দিয়েছে।এবার বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিলেই হবে।সঙ্গে সময় মতো ঔষধ গুলো খেতে হবে।”

আলিফ বলে,”তুমি বাড়ি চলে যাও আম্মু।সারারাত জেগেছো।বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে নাও।স‍্যারকে আমরা বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।”

স‍্যার ও একই কথা বললেন।
তাই আমিও সব গুছিয়ে নিয়ে স‍্যার ও ছেলেদের গাড়িতে উঠিয়ে দিলাম।
এরপর নিজেও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

বাড়ি ফিরতেই পারুল ভাবির হাজারটা প্রশ্ন।
উত্তর দিলাম না তেমন।মাথাটা ঝিমঝিম করছে আমার।
সোজা গোসল করে শুয়ে পড়লাম।
চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো।ঘুমিয়ে গেলাম।
অনেকটা সময় ঘুমিয়েছি।ঘুম ভেঙেছে ফোন কলের আওয়াজে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেলা ছটা বেজে গেছে।ভর সন্ধ‍্যা।
ফোন হাতে নিলাম।গণিত ম‍্যাম ফোন করেছে।
মনেই নেই,আজ তার বিবাহ বার্ষিকী।যেতে বলেছিল।
ফোনটা আর ধরলাম না।ধরলেই বকবেন তিনি।
বিছানা ছেড়ে নামলাম দ্রুত।
বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
তৈরি হয়ে নিলাম কোনোমতে।
আলিফকে ঘরে গিয়ে বললাম আমার সঙ্গে যাবে কিনা।
সে নিষেধ করে দিল।বড়োদের অনুষ্ঠানে যাবেনা।
এতিমখানায় ফোন করে মেয়েকেও সুধালাম।সেও যাবেনা।
বাধ‍্য হয়ে একাই যেতে হলো আমার।
গাড়ি নিয়ে বের হলাম।
রাস্তাতেই একটা গিফ্ট কিনে পৌঁছালাম।
গিয়ে দেখি বিরাট আয়োজন।
ম‍্যাম বলেছিলেন ঘরোয়া ভাবে একটা অনুষ্ঠান করবে।এসে দেখছি এলাহি আয়োজন।পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই এসেছে।
প্রত‍্যেকে ভিন্ন রকম সাঁজ পোশাকে।সুন্দর পোশাক,গহনায় জুড়ি মেলা ভাব।
এদিকে আমি ভীষণ সাদামাটা।ধূসর রঙের একটা পাড় যুক্ত শাড়ি পড়া,পায়ে একটা হিল।
চুলে খোপা বেধে চোখে চশমা।
ম‍্যাম আমায় দেখে এগিয়ে এলো।
প্রথমেই বকা দিয়ে বলল,”এতো দেরি কেন হলো তন্নি?কখন থেকে অপেক্ষা করছি!
ফোন করলাম ধরলেনা।”

“দুঃখীত ম‍্যাম।ঘুমিয়ে ছিলাম আমি।খেয়াল ছিল না।দেরি করে হলেও এসেছি কিন্তু।
বাদ দিন সেসব।আপনাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে ম‍্যাম।”

ম‍্যাম আমার পা থেকে মাথা অব্দি একবার তাকিয়ে বলে,”সে না হয় ঠিক আছে।তুমি এমন সাজে কেন?একটু রঙিন কিছু পড়ে আসতে পারোনি?
এখানের সবাইকে দেখো,কী সুন্দর রঙিন পোশাকে।সুন্দর সাঁজে।
তোমায় বেমানান লাগছে তন্নি।”

আমি কিঞ্চিৎ হেসে বলি,”বিবাহ বার্ষিকী আপনার ম‍্যাম।আমি সেঁজে কী করবো?
আর শরীরের পোশাক রঙিন হলেই কী মন রঙিন হয় ম‍্যাম?
মনটা আমার বড্ড বেরঙিন।তাই যতোই রঙ ঢঙ করি মানাবেনা।
এছাড়াও বয়স হয়েছে আমার ম‍্যাম।এখন ওসব পড়লে হয় নাকি!”

“কী এমন বয়স হয়েছে তোমার?
আমার চেয়ে বেশি নাকি?
আমি লাল বেনারসি পড়তে পারলে তুমি কেন পারবেনা?
চারপাশে তাকিয়ে দেখো,তোমার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের লোক ও আছে।তারা পড়তে পারলে তুমি কেন পারবেনা?
নিজেকে সব কিছু থেকে দূরে রাখা বন্ধ করো তন্নি।
মনটাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে যেতে দাও।
আমার সঙ্গে চলো।আমি আজ তোমায় মন মতো সাঁজিয়ে দেব।”

ম‍্যাম জোর করে আমার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে যায়।কোনো বারণই শোনেনা।

হালকা পিঙ্ক একটি সুন্দর শাড়ি পড়িয়ে দেয়।মুখে হালকা মেকআপ করে দেয়।
ঠোঁটে পিঙ্ক লিপস্টিক দিয়ে চোখে কাজল দিয়ে দেয়।
হালকা গহনা পড়িয়ে চুলে সুন্দর খোপা করে তাজা ফুলের মালা গেঁথে দেয়।
হাত ভর্তি করে চুড়ি পরিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাড় করায় আমায়।
নিজেকে দেখি আমি। অবিভূত হই।নিজেকেই নিজে চিনতে পারছিনা।বহু বছর আগের সেই সুন্দরী তন্নি যেন ফিরে এসেছে।নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হই।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

ম‍্যাম বলেন,”দেখলে তন্নি,রুপ রঙ সবই আছে তোমার।শুধু এই মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখো তা।”

আমায় নিচে নিয়ে আসে ম‍্যাম।
প্রতিটি মানুষ আমায় দেখে অবাক।এসেছিলাম কী হয়ে!আর বেড়োলাম কী হয়ে!
পরিচিত সকলে এগিয়ে এসে প্রশংসা করে ভীষণ।
এভাবেই থাকতে বলে সবসময়।কিন্তু তা কী আর থাকা যায়!
ধুয়ে মুছে সাফ করলেই সেই পুরোনো তন্নি হয়ে যাবো আমি।
রঙ তো থাকা উচিৎ মনে।

অনুষ্ঠান শুরু হলো।
ম‍্যামের হাজবেন্ডকে দেখছি বারবার কাউকে ফোন করছে আর দরজার দিকে উকি দিচ্ছে।হয়ত কারো অপেক্ষায় সে।
আমি ম‍্যামের কাছে গিয়ে দাড়ালাম কথা বলতে।এরই মাঝে ক‍্যামেরা ম‍্যান ছবি তুলতে শুরু করলো।
ম‍্যাম জোর করে আমায় নিয়ে ছবি উঠলো।এসব আমার পছন্দ নয় তেমন।
বহু কষ্টে হাত ছাড়িয়ে ম‍্যামকে তার স্বামীর সঙ্গে ছবি উঠতে বললাম।
এবার কাপল ফটোশ‍্যুট শুরু হলো।
আমি দূরে দাড়িয়ে দেখছি ওদের আনন্দ।স্বামী-স্ত্রী দুজনে কতো পোস নিয়ে ছবি উঠছে।নিজেদের বিবাহিত জীবন কতো খুশি তারা।
এখানে প্রত‍্যেকেই প্রায় জোড়া জোড়া।
আমিই শুধু একা দাড়িয়ে আছি এক কোণে।সকলে নিজেদের প্রিয় মানুষ নিয়ে আনন্দ করছে।আমি তা উপভোগ করছি শুধু।
হঠাৎ দরজার দিকে তাকালাম আমি।
নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়া একজন সুপুরুষ এগিয়ে আসছে দরজা দিয়ে।হাতা গোটানো পাঞ্জাবী দিয়ে লোমশ ফর্সা হাতখান দেখতে মন্দ নয়।
হালকা বাতাসে তার চুল গুলো উড়ছে।হাতে ফুলের তোরা।মুখে লেগে আছে মিষ্টি হাসি।
আমি তাকিয়ে রই এক দৃষ্টিতে।
দৃষ্টি আমার অবাধ‍্য হয়েছে।চোখ সরছেনা তার নিকট থেকে।
এ কী হলো আমার?
এ কী অশুভ সংকেত?
চলবে।