#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin
৪
আমার দৃষ্টি স্থির।বুকে তীব্র ধড়ফড় করছে।ইয়াসির স্যার এগিয়ে আসছে।মুখে হাসির ছটা।তার হাতে তাজা ফুল।সেই ফুলের সুভাস যেন আমায় ঘিরে ধরেছে।
স্যার এসে থামে একটু দূরেই।আশেপাশে তার নজর নেই।ম্যামের হাজবেন্ড এগিয়ে যায়।জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে।
রাগী স্বরে বলে,”এখন আসার সময় হলো তোর?কখন থেকে ওয়েট করছি।”
স্যার বাচ্চাদের মতো একহাতে কান ধরে বলে,”স্যরি রে!ভীষণ দুঃখীত।
আসতে অনেকটাই দেরি হয়েছে জানি।কী করবো বল!ঘুমই ছাড়েনা আমার।”
ম্যামের হাজবেন্ড আর কিছু না বলে তাকে নিয়ে এগিয়ে আসে।ম্যামের সঙ্গে পরিচয় করায়।আমি একটু দূরেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।
স্যার একটি ছোট্ট প্যাকেট থেকে একটি গোল্ডের বক্স বের করে ম্যামের হাতে দেয়।
সঙ্গে ফুলের তোড়াটি দিতে নিলে ম্যাম বলে ওঠে,”তন্নি ফুলটা ধরোতো।আমি আংটিটি পড়ে নেই।উনি কষ্ট করে এনেছে।”
স্যার পাশেই বাড়িয়ে দেয় তোড়া।নাম শুনে তাকায় আমার দিকে।
এক মূহুর্ত্তের জন্য সে নিজেও যেন স্টপ হয়ে যায়।
কাঁপা হাতে ফুলটা নেই আমি।স্যার তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।আমি এবার মাথা নিচু করে।
ম্যাম বলেন,”ওহ পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি।ও হলো তন্নি।আমার সবচেয়ে কাছের,সবচেয়ে প্রিয়জন।আমি যেখানে জব করি,সেখানকার হেড ও।”
স্যারের দৃষ্টি তখনও আমার নিকট।
হালকা কাশি আমি।স্যারের ধ্যান ভাঙে।
এলোমেলো স্বরে বলে,”হ্যা ভালো!
বুঝতে পেরেছি।”
ম্যাম এগিয়ে এসে খপ করে আমার হাত ধরে বলেন,”শুধু ভালো নয়।বহুত ভালো।তন্নি আমাদের ভীষণ গুণসম্পন্ন মানুষ জানেন?
দেশে-বিদেশে নাম-ডাক।কতো সমাজসেবা মূলক কাজে ওর হাত!”
আমি ম্যামকে চুপ করতে বলি ইশারায়।
এই মানুষটা বড্ড কথা বলে।কথা ধরলে থামার উপায় নেই।শেষ পর্যন্ত না বলে,মনের তৃপ্তি না মিটিয়ে সে থামার পাত্রী নয়।
সামনের উপস্থিত মানুষটা তার কথা হজম করতে পারলো কিনা তা তার দেখার বিষয় নয়।সে তার মতো বলেই যাবে।
ম্যাম এবার রাগান্বিত স্বরে বলে,”মেয়েটার এই এক সমস্যা।
নিজের প্রশংসা করতে দেবেনা কোথাও।বলি আমি কী মিথ্যে কথা বলছি?
তুমি যা পারো তাই ই বলছি।তোমাকে বোঝাতে আর পারলাম না।সারাকাল একঘেয়েমিতেই থেকে গেলে।চার দেওয়ালে বন্দি থাকলে।
জীবনে নাকি ওর কোনো রঙ,রস নেই।
আপনিই বলুন,ওর কী খুব বয়স দেখে মনে হয়?
পয়ত্রিশে মানুষ সব রঙ হারায়?
নিজেকে বুড়ো ভাবে?
সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেয় নিজেকে?”
স্যার কিঞ্চিৎ হেসে বলে,”আপনি নিজেকে তাই ভাবেন বুঝি?”
আমার বিব্রত লাগে।মাথা নিচু করে রই।
স্যার আমার অবস্থা বুঝে প্রসঙ্গ পালটে বলে,”বাদ দিন।শুনুন একটা কথা।
পয়ত্রিশ আহামরি কোনো বয়স নয়।দূর দূর কান্ট্রিতে এই বয়েসে অনেকে বিয়েও করেনা।আর আপনি নিজেকে বুড়ো ভাবছেন?
অথচ আমি আপনার চেয়ে সিনিয়র এখনো বিয়েই করিনি।
আর প্রতিটি মানুষেরই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রঙ,রস থাকে।আপনি নিজেই আপনার জীবনের সকল রঙকে বিসর্জন দিচ্ছেন।যা অন্যায়।
মৃত্যুর আগে নিজেই নিজের জীবনকে মৃতপ্রায় করে তোলা অন্যায়।
সৃষ্টিকর্তা আমাদের বহু যত্ন করে বানিয়েছেন।সুন্দর একটা জীবন দিয়েছে।
আপনি পারেন না সেই জীবনকে একেবারে বেরঙিন করে নিজেকে মৃতপ্রায় করতে।”
ফট করে তাকাই স্যারের নিকট।
আসলেই তো!
এভাবে কখনো ভেবে দেখিনি আমি।
নিজেকে এতোটাও বন্দিদষায় রাখা উচিৎ নয়।আমিও মানুষ। মনুষ্য স্বত্ত্বা বজায় রাখতে হবে।
কিঞ্চিৎ হাসলাম।
ম্যামকে উদ্দেশ্য করে বললাম,”এই সুন্দর মূহুর্তকে স্বরনীয় করে রাখতে কিছু ছবি ওঠা যাক?”
আমার কথা শুনে ম্যাম তো বেজায় খুশি।ততক্ষণাও ক্যামেরাম্যান ডেকে ছবি ওঠাতে বলে।
স্যারকেউ জোর করে দাঁড় করানো হয়।
পাশাপাশি আমরা দুজনে।একের পর এক ক্লিক করে ছবি।
ম্যাম ছবি দেখতে চায়।ক্যামেরাম্যান দেখালে ম্যাম তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলে,”তন্নি আর ইয়াসির স্যারকে দেখো।দুজনকে কী সুন্দর লাগছেনা একসঙ্গে।
মনে হচ্ছে সদ্য বিবাহিত কোনো দম্পতি।”
আমি লজ্জা পেয়ে যাই ম্যামের কথা শুনে।এই মানুষটার কথার কোনো বিবেক-বিবেচনা নেই।যেখানে-সেখানে যা-তা বলে ফেলে।
স্যারও শুনেছে।তিনি কাশতে কাশতে দূরে সরে গেলেন।
আমিও সোফায় গিয়ে বসলাম।যতো এখানে থাকবো,ম্যাম একটার পর একটা বলতেই থাকবে।
ফটোগ্রাফি শেষে সকলকে টেবিলে বসিয়ে ডিনার করতে বলা হলো।
আমি একটু পরেই বসতে চাইলাম।একে-একে সকলেই খেয়ে বিদায় নিতে লাগে।ঘন্টা খানিকের মধ্যে পুরো বাড়ি প্রায় ফাঁকা।
বাকি রয়েছি ম্যাম,তার স্বামী,স্যার আর আমি।
এবার আমরা গিয়ে বসেছি টেবিলে।
স্যার আমার পাশের চেয়ারে বসেছে।খাওয়া শুরু হলো।ম্যামের কথাও শুরু হলো সঙ্গে।
এটা-ওটা নিয়ে তিনি কথা বলছেন।আমি শুধু হা-হু উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ খাবার গলায় আটকে আসে আমার।কাশতে লাগি।স্যার দ্রুত পানি এনে মুখের সামনে ধরে।
পানি পান করে দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি।
ম্যামের বর ম্যামকে বকা দিতে লাগে।খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে জন্য।
আমি বলি,”ম্যামের দোষ নেই।আমিই একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম।
আমার জন্য শুধু শুধু ম্যামকে বকবেন না প্লিজ।”
সবাই আবারো খাওয়ায় মনোনিবেশ করে।খাওয়া শেষে এবার বিদায় নেওয়ার পালা।
ইয়াসির স্যার গাড়ি আনেননি।রাত অনেকটা হয়ে এসেছে।গাড়ি পাবে কিনা সন্দেহ।
তিনি কোনো একটা ব্যবস্থা করে নেবে বলে চলে যেতে লাগলেন।
আমি বললাম,”কিছু মনে না করলে স্যার আপনি আমার সঙ্গে আসতে পারেন।আমার ড্রাইভার আপনায় ড্রপ করে দেবে।
এতো রাতে গাড়ি না পেলে আপনি ঝামেলায় পড়ে যাবেন।”
ম্যামের হাজবেন্ডও তাই করতে বলে।
শেষে স্যার রাজি হয়।
ওদের থেকে বিদায় নিয়ে দুজনে গাড়িতে গিয়ে বসি।
পাশাপাশি সিটে দুজনা।পিনপিনে নিরবতা।শুধু গাড়ির শাইশাই শব্দ শোনা যাচ্ছে।
ল্যাম্পপোষ্টের হালকা আলো বাইরে।শুনশান রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের গাড়ি।কেমন একটা গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছে।দম বন্ধ লাগছে।
গাড়ির জানালা খুলে তাতে হেলান দেই আমি। দমকা হাওয়া এসে মুখ বরাবর লাগে আমার।চোখ বন্ধ করে নেই।সামনের একেক গুচ্ছ ছোট চুল মুখে এসে আচড়ে পড়ে।
ধীর হাতে তা সরিয়ে কানের পিঠে গুজে নেই।পাশ থেকে স্যার বলে,”বুড়ো হলেও আপনি কিন্তু ভীষণ মায়াবতী ম্যাম।”
আমি সামান্য হেসে বলি,”বুড়ো চেহারাতে আবার মায়া থাকে নাকি?
সবই আপনার মনের ভুল।”
“একটা সময় আসবে,এই ভুলটাকেই জীবনের চরম সত্য বলে গ্রহণ করবে কেউ।
আপনি নামক এই মানুষটার মাঝেই খুঁজে পাবে পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য।”
“তা কখনো সম্ভব নয় স্যার।”
“সৃষ্টির এই জগতে অসম্ভব বলে কোনো বস্তু নেই।”
আমি চুপ যাই।মাথা নিচু করে রই।
স্যার সিটে হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,”জীবনকে একদমই বেরঙিন করে রাখবেননা ম্যাম।
প্রকৃতিই যেখানে রঙিন,সেখানে মানুষ হয়ে আপনি কেন বেরঙিন?”
স্যারের কথার জবাব দিতে পারিনা আমি।
উত্তরটা নেই ও কাছে।
আমার বাড়ি চলে আসে।
গাড়ি থেকে নামি আমি।সামনে হাঁটি।কী যেন মনে করে একবার পেছনে তাকাই।আমার তাকানো দেখে স্যারের মুখে উচ্ছাসের হাসি।জানিনা এ হাসির কারণ।
প্রশ্নও করিনা।
নিচু হয়ে জানালা দিয়ে বলি,”দেখেশুনে যাবেন।বাড়ি গিয়ে রেস্ট নেবেন।
ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে।
আমি আসি।”
উঠে দাঁড়াতে নেব এমন সময় তিনি বলেন,”ভেবেছিলেন বিদায় বার্তা না দিয়েই আপনি চলে যাবেন।
এইযে কিছু একটা বললেন।এখান থেকেই আবার নতুন কিছুর সুত্রপাত হলো।
ভাগ্যে কী আছে জানিনা।তবে দেখা আমাদের হবেই।”
স্যার সোজা হয়ে বসে।গাড়ি চলতে শুরু করে।আমি দাঁড়িয়ে থাকি কিছু সময়।
এরপর বাড়িতে প্রবেশ করি।
ছেলেকে দেখলাম ডাইনিং এ বসে আছে।পাশেই পারুল ভাবি দাঁড়িয়ে কাচুমাচু হয়ে।
ভ্রু কুচকাই।এতো রাতে ওরা জাগ্রত কেন?কিছু হলো নাকি?
কাধের ব্যাগটা রেখে এগিয়ে আসি।আমায় দেখা মাত্র পারুল ভাবি মুখটা শুকনো করে।চোখ দুটো গোল গোল করে তাকিয়ে থাকে।
আলিফ উঠে দাঁড়ায়।
আমার দিকে তাকায়।রাগে মুখ-চোখ লাল হয়ে আছে ছেলের।হয়েছেটা কী?
আমি কিছু বলার আগেই আলিফ ঝাঁঝালো স্বরে বলে,”কটা বাজে আম্মু?”
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলি,”বারোটা তেইশ।কেন?”
“মাঝরাত পর্যন্ত পার্টি করে এলে তুমি?
কোনো কমনসেন্স আছে তোমার আম্মু?
গিয়েছো সেই সন্ধ্যায়।ফিরলে বারোটায়।একা একটা মহিলা মানুষ এতো রাত পর্যন্ত বাইরে থাকে?
আশেপাশের মানুষ শুনলে কী ভাববে?এমনিতেই লোকে আমাদের খুব ভালো চোখে দেখেনা।কটু কথা শোনায়।
তোমার এই বেখেয়ালি চলাফেরার জন্য এবার লোক-সমাজে বের হওয়া দায় হবে দেখছি।
আমার বন্ধুরা এসব শুনলে কী বলবে?
বলবে তোর মা মাঝরাত অব্দি সেজেগুজে পার্টি করে বেড়ায়।মান-সম্মান থাকবে আমার?
কতোবার কল করেছি তোমায়?
একটাবারো রিসিভ করোনি কল।হুশ জ্ঞান আছে তোমার?
কাল আমার বন্ধুর বার্থডে।আজ সবাই গিফ্ট কিনতে যাওয়ার কথা।টাকার প্রয়োজন ছিল আমার।তুমি কলই ধরছোনা।
তোমার জন্য আমার গিফ্ট কেনা হলোনা।
এতোটা অবিবেচক তুমি,ভাবতে পারিনি।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
চোখ দুটো টলমল করে ওঠে আমার।
তবে চুপ থাকিনা।
স্পষ্ট জবাব দেই,”ভদ্র ভাষায় কথা বলো আলিফ।মা আমি তোমার।
আমি পার্টি নয় একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।পার্টি আর অনুষ্ঠানের মাঝে বহুত তফাৎ আছে।
অনুষ্ঠানে আমরা পরিচিত সকলে একত্রিত হয়ে কিছুটা ভালো সময় কাঁটিয়েছি শুধু।অন্যকিছু নয়।আমি একা একটা মহিলা মানুষ যদি ইনকাম করে তোমাদের মানুষ করতে পারি।তোমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারি,তাহলে কোথাও যেতে কেন পারবোনা?
তোমাদের দায়িত্ব যখন একা পালন করি,কই তখন তো বলোনা একা একটা মেয়ে মানুষ কীভাবে করছি এতো কিছু।
আমার দরকারে আমি যেতেই পারি।এতে এতো ভাবাভাবির কী আছে?
আশেপাশের লোকের ভাবনা আমার জীবনে খাটবেনা।আশেপাশের লোক দু-বেলা খাবার দিয়ে যায়না আমায়।নিজে পরিশ্রম করে সৎ পথেই চলি আমি।
আর রাত হয়েছে তো কী হয়েছে?তোমার হয়না?এইতো সেদিন কোন বন্ধুর জন্মদিনে গিয়ে রাত তিনটেতে বাড়ি ফিরলে।আমি করেছি এতো প্রশ্ন?
আমি তোমায় জানিয়ে গিয়েছি।সঙ্গে যেতেও বলেছি দু ভাই-বোনকে।তুমি কিন্তু সেটাও করোনি।গিয়ে আমায় জানিয়েছো।নিজ দায়িত্ব পালন করেছিলে তুমি?
তাহলে আমার দিকে প্রশ্ন তোলো কীভাবে?
আমার জন্য লোক-সমাজে চলাফেরা দায় তোমার?
যখন সব হারিয়ে পথে পথে ঘুরেছি,কোথায় ছিল এই লোক সমাজ?
সমাজসেবা মূলক কাজ করি আমি।সেই আমার জন্যই নাকি তোমার সমাজে চলতে অসুবিধা হয়।কথাটা খুব অযৌক্তিক না?
আর কী বললে?
কল করেছিলে আমায়?
ফোনটা মনের ভুলে ঘরে রেখে গেছি আমি।দেখোনি?
টাকার প্রয়োজন থাকলে সারাদিন কী করলে?সারাদিন তো আমি বাড়িতেই ছিলাম।তখন কেন নাওনি?
একটা গিফ্ট কেনা লেট হওয়া নিয়ে এতো রাগ তোমার?
গিফ্টটা কালও কিনতে পারো তুমি।
সামান্য একটা গিফ্ট কেনা নিয়ে মাকে রাগ দেখিয়ে এতো কথা শোনাচ্ছো?”
আলিফকে দেখলাম মাথা নত করলো।
মিনমিনে স্বরে বলে,”তোমার জন্য চিন্তা হচ্ছিলো আমার।এজন্য বলেছি।”
আমি উপহাসের স্বরে বললাম,”চিন্তা হলে মাকে আনতে যেতে।এমন না তুমি ম্যামের বাড়ি চেনো না।
মায়ের ফিরতে দেরি হচ্ছে,একা মানুষ সে।
বড়ো ছেলে তুমি।তোমার দায়িত্ব ছিল মা টাকে এগিয়ে আনা।
তা না করে রাগ দেখাচ্ছো।”
আলিফ মাথা নত করে রয়।
আমি গটগট করে হেঁটে ঘরে চলে যাই।
মনটা ভালো নেই।
ঘরে এসে কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকি।পারুল ভাবি আসে একটু পর।
আমার পাশে বসেন।পিঠে হাত রাখেন।
সঙ্গে সঙ্গে ডুকরে কেঁদে উঠি আমি।ভাবিকে জড়িয়ে ধরে বলি,”আমি কী খুব অন্যায় করে ফেলেছি ভাবি?
আমার কী কোনো অধিকার নেই একটু নিজের মতো করে সময় কাঁটানোর?”
“তুমি ঠিক করেছো তন্নি।তুমিও মানুষ।তোমারও একটা মন আছে।কিছু মানুষ তা বোঝেনা।মেশিং মনে করে তোমায়।
সারাটাজীবন ছেলে-মেয়ে,ছেলে-মেয়ে করে গেলে।ওদের খুশি,ওদের শখ,ওদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা দেখতে গিয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছো তন্নি।
দিনশেষে সেই ওরাই প্রশ্ন তোলে।
কতো বোঝাই তোমায়,কানে নাও না কথা।মনে করো সন্তান তোমায় সারাজীবন সঙ্গ দেবে,দুঃখ বুঝবে।
আসলে তা নয় তন্নি।দ্রুত গতির এই জীবন সবাই ই একসময় নিজ স্বার্থে ছেড়ে চলে যায়।তোমার স্বার্থে কেউ থাকবেনা।
হয়ত বাচ্চাদের একা হাতে মানুষ করেছো।তারমানেই যে বাচ্চারা তোমায় বুঝবে,ভরসা হবে এমনটা না।সবার কপাল এক না।
আর বর্তমান যা যুগ,তাতে সন্তান নিয়ে আশা-ভরসা না করে নিজের চিন্তা নিজের করা উচিৎ তন্নি।
ওরা বড়ো হবে,ব্যস্ত হবে।তোমার বয়স হবে।তখন প্রয়োজন হবে ব্যাক্তিগত কাউকে।”
আমি হেচকি তুলছি রীতিমতো।ভাবিকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছছি।
ভাবি আরো দু-দন্ড বসলো কাছে।অনেক কিছুই বোঝালো।বোবার ন্যায় চুপ করে রইলাম আমি।
এ নতুন কিছু নয়।আমার জীবন প্রসঙ্গে কেউ ভালো-মন্দ যাই বলুক,চুপ থাকি আমি।শুনে যাই শুধু।
একসময় কোনো উত্তর না পেয়ে চরম বিরক্ত হয়ে ভাবি ঘর ছাড়ে।
আমি বসে রই তবুও।
ফোনের মেসেজ টোনে ধ্যান ভাঙে।
ইয়াসির স্যার মেসেজ দিয়েছেন।বলেছেন ‘সে বাড়ি পৌঁছে গেছে।আমার গাড়িও পাঠিয়ে দিয়েছে।’
ফোনটা রেখে উঠে দাঁড়াই।সত্যিই ছেলেটা অনেকবার কল দিয়েছে।পনেরোবার মিসড কল।ওর হয়ত সত্যিই টাকার ভীষণ প্রয়োজন ছিল।
ছেলেটাকে এতোগুলো কথা শুনিয়ে কী ঠিক করলাম আমি?
বাবা ছাড়া ছেলে আমার।মানুষ করেছি যত্নে।
জানি আমার অন্যায় নেই।তবুও আমি অপরাধি।মায়ের মন কিনা।সন্তানকে মন্দ কিছু বললে সন্তানের চেয়ে মায়েরই বেশি পোড়ে।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
বাথরুমে গেলাম।পোশাক বদলে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়ার থেকে কিছু টাকা বের করলাম।
এরপর ছেলের ঘরে গেলাম।
গিয়ে দেখি বেচারা এখনো বিছানায় বসে আছে।ঘুমোয়নি।মুখটা থমথমে।অভিমানি ছেলে আমার,অভিমান জমেছে মায়ের প্রতি।
দরজায় ক্বড়া নাড়লাম।ছেলে একনজর তাকালো আমার দিকে।এরপর আবার আগের ন্যায় মাথা নিচু করে বসে রইলো।
ঘরে প্রবেশ করলাম আমি।বিছানায় ওর পাশে বসলাম।চুপ রইলাম কিছু পল।
এরপর বললাম,”মায়ের ওপর অভিমান হয়েছে?”
আলিফ জবাব দেয়না কোনো।
আমি ওর হাত ধরে টাকা দিয়ে বললাম,”দুইভাগে টাকা আছে।একটা দিয়ে গিফ্ট কিনে নিও।অন্যটা দিয়ে একটা সুন্দর পোশাক কিনবে।বন্ধুর জন্মদিন কিনা,নতুন পোশাকে যাবে।চকচকে,তাক লাগানো পোশাক।”
ছেলে আমার দিকে অবাক চোখ করে তাকালো।
দু-কাধ জড়িয়ে ধরে আল্লাদি স্বরে বলল,”স্যরি আম্মু।তোমায় অনেক কথা শুনিয়েছি।আসলে আমার রাগ হয়ে গেছিলো।তোমার নিয়ে অনেক চিন্তা হয় আমার।অনেক ভালোবাসি তোমায়।তুমি ছাড়া আমাদের কে আছে বলো!”
মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,”জানি বাবা।আমিও তোমাদের অনেক ভালোবাসি।তোমাদের জন্যই সব।
আমি জানি,আমার ছানা দুটো মনে মনে আমায় অনেক ভালোবাসে।পড়াশোনা,ক্যারিয়ার গড়ার চাপে শুধু সময় দিতে পারেনা।ভালোবাসে ঠিকই।”
আলিফের মুখে হাসি।এটাই আমি চাই।আমার সন্তানেরা প্রাণ খুলে বাঁচুক।কোনো কষ্ট ওদের না ছুতে পারুক।
মা হিসেবে আমি ঢাল হয়ে থাকবো।শত আঘাত আমার লাগুক।সকল দুঃখ চূর্ণবিচূর্ণ করে দিক আমায়,তবুও ওরা ভালো থাক।
আরো কিছুটা সময় বসে রইলাম ছেলের ঘরে।দুজনে গল্প করলাম।
রাত প্রায় দেড়টার দিকে নিজ ঘরে এলাম।
বিছানায় বিলিয়ে দিলাম নিজেকে।ঘুম চেপেছে চোখে।অথচ আজ আমি ঘুমের বড়ি খাইনি।
ঘুমটাকে বড্ড অদ্ভুত লাগলো।
মুচকি হাসলাম।মাথাটায় শান্তি শান্তি লাগছে।আজ আর জোর করে ঘুমোচ্ছিনা আমি।
ঘুমপাখি নিজে এসেছে আমার ঘরে।
প্রশান্তি দিচ্ছে।তলিয়ে যাচ্ছি আমি এক শান্তিসমাবেশে।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
একটা বিশাল সমুদ্র দেখলাম।নীলচে রঙের পানি।চারপাশে সবুজ গাছপালা।
রঙ-বেরঙের প্রজাপ্রতি উড়ছে।লাল,হলুদ গোলাপ ঝুলছে গাছে।
আকাশি রঙের পরিষ্কার আকাশে সাদা মেঘ উড়ছে।ধূসর রঙের বালি গুলো চকচক করছে।
এ যেন এক রঙের মেলা।
আমার পরণে লাল টকটকে একটা সুন্দর শাড়ি।কানের পিঠে লাল রক্তজবা।খোলা চুল।
খালি পা।ধীরে ধীরে হেঁটে সমুদ্রের কাছে গেলাম।নীলাভ পানিতে পা ডোবালাম।
পাশ থেকে হঠাৎ এক পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
স্যার বলছেন,”দেখেছেন তন্নি,প্রকৃতি কতো রঙিন?
আজ আপনিও রঙিন।আপনাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।”
আমি ফট করে স্যারের দিকে তাকালাম।
তার পরণে একই লাল রঙের পাঞ্জাবি।মুখে হাসি।
অমায়িক লাগছে তাকে।
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি স্যারের নিকট।ঝিরঝিরে বাতাস বইছে।
চুলগুলো মুখের ওপর আচড়ে পড়ছে আমার।স্যার ছুতে নেয় আমার এলোমেলো চুলগুলো।
সরে আসি আমি।লজ্জা পাই।দৌড়ে অন্যপ্রান্তে চলে যেতে নেই।পেছন থেকে স্যার বলেন,”আর কতো পালাবেন তন্নি?নিজ অনুভূতির কাছ থেকে মানুষ পালাতে পারেনা।”
সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙে ধড়ফড়িয়ে উঠি আমি।
ঘেমে গেছি। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছি।
এ কী দেখলাম আমি?
স্যারকে স্বপ্নে দেখছি।
ঘোর কাঁটছেনা আমার।স্যারের বলা শেষ কথাটি বারবার কানে বাজছে।
এরই মাঝে কল আসে ফোনে।এতিমখানা থেকে কল করেছে।
রিসিভ করি।জরুরি ভিত্তিতে এতিমখানায় আসতে বলা হয়।
দ্রুতই বিছানা ছাড়ি।ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিচে নামি।পারুল ভাবি আমায় দেখে মুচকি হেসে বলে,”শুভ সকাল তন্নি।ঘুম কেমন হলো?”
ডাইনিং এ বসতে বসতে বললাম,”বেশ ভালো হয়েছে ভাবি।কাল আর ঔষধ লাগেনি।এমনিতেই ভালো ঘুম হয়েছে।”
ভাবি প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়।
এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে সিড়ি বেয়ে চুল সেট করতে করতে নামে আলিফ।
বাইরে যেতে যেতে বলে,”আমি আসছি আম্মু।কাজ আছে।”
“খাবারটা খেয়ে যাও।মা-ছেলে একসঙ্গে খাই।সারাদিনে তো দুজনে বাইরেই থাকি।সেই কোন রাতে এক হই।
ব্রেকফাস্ট টা অন্তত আমাদের সঙ্গে করে যাও।”
“সময় নেই আম্মু।বাইরে খেয়ে নেব আমি।তুমিও খেয়ে নাও প্লিজ।
বাইরে খাওয়া আর ঘরে খাওয়া একই বিষয় তো।পেট ভরলেই হলো।”
আলিফ বেরিয়ে যায়।
আমি ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলি।
‘বাইরে খাওয়া আর ঘরে খাওয়া কখনো এক নয়।ঘরের খাবারে আদর,যত্ন,ভালোবাসা আছে।বাইরের খাবারে তা নেই।
খাবার খেলে পেট ঠিকই ভরে আমার।তবে মনটা খালিই থেকে যায়।তৃপ্তি পাইনা।
কোনোমতে খেয়ে আমিও বেড়িয়ে পড়ি।
এতিমখানায় পৌঁছে কিছু কাজ করি।ফ্রি হয়ে মেয়েটার খোঁজ করি।
সে নাকি ক্লাসে আছে।আমি বসে থাকি।অপেক্ষা করি।এসেছি যখন,দেখা করেই যাবো।
প্রায় মিনিট বিশেক পর অর্নির ক্লাস শেষ হয়।
ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে আসে সে।
আমি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছি।মেয়ের চেহারায় উদাস ভাব।
আমায় দেখেও মুখের ভাব পরিবর্তন হলোনা ওর।
ধীর পায়ে হেঁটে পাশে এসে বসলো ধপ করে।
মনক্ষুন্ন হলো আমার।ভেবেছিলাম অর্নি এসে জড়িয়ে ধরবে আমায়।ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করবে।
কিন্তু ওর মুখে বিন্দুমাত্রও খুশি দেখলাম না আমি।
কিছু বললাম না আমি।পাশে বসে বললাম,”কী হয়েছে অর্নি?
মন খারাপ তোমার?”
সে বুকে দু-হাত ভাঝ করে চুপ করে রইলো।
আবারো সুধালাম,”বলো আমায়।কোনো কিছুর প্রয়োজন?নাকি কোনো সমস্যা হয়েছে?”
অর্নি একবার আমার দিকে তাকালো।
এরপর আবারো মাথা নত করে বলল,”আমার কিছু সমস্যা হচ্ছে।ভয় করছে আমার।
এমন আগে হয়নি।ভয়ে কাউকে বলিনি আমি।”
ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি আমি।অর্নিকে জোর করে উঠিয়ে সামনে দাঁড় করাই।কী হয়েছে জিজ্ঞেস করি।পা থেকে মাথা অব্দি চোখ বুলাই।
জামার এক কোণে লাল কিছু দেখি।
ভালো করে পরখ করতেই বুঝে যাই বিষয়টি।ওর হাত ধরে একটা ঘরে নিয়ে আসি।
বিছানায় বসিয়ে এক মেয়েকে ডেকে কিছু জিনিস আনতে বলি।
অর্নিকে কাছে নিয়ে বলি,”এটাতে ভয়ের কিছু নেই মা।এটা স্বাভাবিক।সব মেয়েরই হয়।তুমি এখন বড়ো হচ্ছো।শিশু থেকে কিশোরীতে পরিণত হলে।”
অর্নি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার মুখপানে।
ওর হাতে আমি প্যাড,হট ওয়াটার ব্যাগ সহ আরো কিছু জিনিস দিয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে বললাম।
মেয়ের এবার চোখ-মুখে নিশ্চিন্তের ছাপ দেখলাম।আগের মতো আর ভয় পাচ্ছেনা।
বললাম,”চলো কটা দিন বাড়িতে থাকবে।
ক্লাসের সময় হলে আমি তোমায় দিয়ে যাবো।
এসময়টা মায়ের কাছে থাকাটাই ভালো।আমি তোমার যত্ন নেব।”
“যাদের মা নেই তারা কী এসব সমস্যা একা পার করেনা আম্মু?”
মেয়ের কথাটা মনে এসে লাগে আমার।তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলি,”যাদের মা নেই তারাও মোকাবেলা করে।তবে তোমার তো মা আছে।”
“মা আছে তবে বাবাতো নেই মা।মা-বাবা একে-অন্যের পরিপূরক।তুমি থাকলেও বাবা নেই আমার।”
আমি হতাশ হই।শান্ত স্বরে বলি,”নিজ বাবার বিষয়ে সবটাই জানো তুমি অর্নি।
এরপরও বাবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছো?”
“প্রতিটি সম্পর্কেরই প্রয়োজন আছে আম্মু।হয়ত কম,নয়ত বেশি।”
অর্নি এ কথা বলে ঘর ছাড়ে।
কী বলে গেল মেয়ে?
ও কী ওর বাবার কাছে ফিরতে চাচ্ছে?
আমার এতো পরিশ্রমের কী কোনো মূল্য নেই?
মা হিসেবে কী আমি খুব ব্যর্থ?
আর থাকতে পারছিলাম না এতিমখানায়।বেড়িয়ে এলাম।টলমলে পা আমার।অর্নির কথাগুলো মনে দাগ কেঁটে গেল।
এরই মাঝে ছেলের কল।ওর কলেজ আসতে বলছে এক্ষুনি।সেদিন যে কাজে গিয়েছিলাম হয়নি।আজ যেতে হবে।
নিজের মনকে স্থির করে গাড়িতে বসলাম।কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম।পথে অর্নির চিন্তা করেছি।
কলেজে পৌঁছে এবার আর আগের ভুল করলাম না।সোজা কলেজ ঢুকলাম।আলিফ দৌড়ে এলো আমায় দেখে।
ওদের কমন রুমে নিয়ে বসালো আমায়।
এরপর ছুটলো কোথাও।আমি বসে রইলাম।
কিছু পেপার্স এনে সামনে দিল।সই করে দিলাম।
পেপার্স নিয়ে ছেলে আবারো ছুটলো।
আমি একা বসে রইলাম।
একটু হেঁটে চারপাশে দেখলাম।বিরাট বড়ো প্রাঙ্গন।নামকরা কলেজ।এখানেরই প্রফেসর ইয়াসির স্যার।ভীষণ যোগ্যতা সম্পন্ন গুণী একজন মানুষ তিনি।
আমি তার ধারে কাছেই নেই।
মিনিট পাঁচেক পার হলো।ছেলে আসার নাম নেই তবুও।আমি বাড়ি যাবো নাকি আরো প্রয়োজন আছে বলে যায়নি।
কী করি বুঝতে পারছিনা।
বের হয়ে আলিফকে খুঁজতে লাগলাম।
এক্লাস-ওক্লাস উকি দিলাম।আলিফকে দেখলাম না।প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষক লেকচার দিচ্ছে।তাই ভেতরে ঢুকে কিছু জিজ্ঞেস ও করতে পারছিনা।
বাইরেও কেউ নেই জিজ্ঞেস করার মতো।
বাধ্য হয়ে আবারো আগের জায়গায় গিয়ে বসলাম।আলিফের ওপর প্রচন্ড বিরক্তবোধ হচ্ছে আমার।কিছু একটা বলে যেতে পারতো আমায়।
এভাবে কতোক্ষণ বসে থাকা যায়!
মিনিট দশেক পার হলো আরো।
হঠাৎ কেউ বাইরে থেকে ডেকে উঠলো আমায়।
তাকিয়ে দেখি ইয়াসির স্যার।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
ভেতরে এলেন তিনি।বললেন,”আপনি এখানে কী করছেন ম্যাম?”
আমি বললাম,”আলিফ আসতে বলেছিল স্যার।সেদিন যে কাজে এসেছিলাম তা তো হয়নি।তাই আজ আসতে বলল।
জানিনা কাজটা শেষ হয়েছে কিনা।আলিফ বলে যায়নি কিছু।বসে আছি বেশ কিছুক্ষণ।ওকে খুঁজেও পেলাম না।বাড়িতেও যেতে পারছিনা যদি আবার প্রয়োজন পড়ে আমার।”
“ওহ এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছেনা।এতো কেয়ারলেস ছেলে কখনো হয়!
আপনি বসুন আমি শুনে আসছি।”
স্যার চলে গেলেন।
আমি বসে রইলাম।
মিনিট দুয়েক পর তিনি ফিরেও এলেন।
বললেন,”আপনার কাজ হয়ে গেছে ম্যাম।চাইলে বাড়ি যেতে পারেন।আলিফকেও বকে এসেছি আমি।ওর নাকি ক্লাস ছিল তাই তাড়াহুড়োয় চলে গেছে।”
ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি।
বাইরে যেতে নিলাম।
স্যার পেছন ডেকে বলল,”বাহিরে ক্বড়া রোদ।কোথাও দাঁড়াবেন না আবার।
আমার ক্লাস আছে।মাথা ঘুরে পড়ে গেলে ধরতে পারবোনা এবার।”
আমি সামান্য হাসলাম।
স্যার আবারো বলল,”স্যরি।মজা করলাম ম্যাম।ভালোভাবে বাড়ি যান।”
বেড়িয়ে এলাম আমি।গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
স্যারকে দেখলাম তাকিয়ে আছে ভেতর থেকে।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিল।
সিটে হেলান দিলাম আমি।
জানিনা ভুল না সঠিক,তবে আমার মনে হয় স্যার আমাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছেন।
তবে ভাবনাগুলোর মাঝেও অসৎ বা মন্দ কিছু পাইনা আমি।তার প্রতিটি কাজ ব্যাক্তিত্ত্বসম্পন্ন।
অবশ্য হওয়ারই কথা।
সে তো আর নাইন-টেনে পড়া নাবালক ছেলে নয়।যথেষ্ট ম্যাচিউর তিনি।সঙ্গে একটি কলেজের প্রফেসর।তার আচরণ হবে মনমুগ্ধকর,নজরকারা।হচ্ছেও তাই।
চলবে।