#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin
৭
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে তার আপন গতিতে।
সময় প্রবাহমান।এটি কারো জন্যই থেমে থেকেনা।সময়কে হাতের মুঠোয় নেওয়ার ক্ষমতা কারোই নেই।
এই একটা বিষয়ে আমরা সবাই বন্দি।
পিটপিটিয়ে চোখ মেললাম আমি।শরীরটা বড্ড ভার লাগছে।মাথাটা ঘুরছে।
একটু রয়েসয়ে পাশে তাকালাম।ইয়াসির স্যার উদাস মুখে আমার দিকে তাকিয়ে।
আমাকে তাকাতে দেখেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
বিচলিত কন্ঠে বলেন,”আপনি ঠিক আছেন তো ম্যাম? একটু সুস্থ অনুভব হচ্ছে?
প্রবলেম হলে বলুন হাসপাতালে নিয়ে যাই এক্ষুনি।
জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে আপনার।”
ধীর স্বরে বললাম,”ঠিক আছি।যদিও দূর্বল লাগছে খুবই।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
পাশ থেকে পারুল ভাবি বলেন,”লাগবেই তো।লাগারই কথা।অসমের টানা বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ হয়ে দূর্বল তো লাগবেই।
কে বলেছিল এমন মেঘলা দিনে মেয়ে নিয়ে পার্কে যেতে?
মেয়েটাতো দিব্বি চলে গেছে এতিমখানায়।ফেলে গেছে তোমায়।
বারবার তোমায় নিষেধ করেছি হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে।নিজের আবেগ কমাতে পারোনা?
এসব আবেগের কোনো দাম নেই তোমার বাচ্চাদের কাছে।সবই ওদের কাছে বিরক্তকর।
এতোকথা শোনো, অপমান হও,তবুও তোমার আবেগ কেঁটে বিবেক আসেনা।
কী আর করার তোমার!দোষ দিয়েও লাভ নেই।মা তো তুমি।সন্তানের সুখের ক্ষেত্রে মায়েদের আবার নিজের আত্মসম্মানের পরোয়া কম।
এর জন্যই বর্তমানের ছেলে-পুলে গুলো সাহস পেয়ে কথায় কথায় মাকে অপমান করে।”
ভাবি থামে।স্যার ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে আমাদের নিকট।
উনার সামনে বিব্রত বোধ করি আমি।মাথা নিচু করে চুপ থাকি।
স্যার হয়তো বুঝতে পারে বিষয়টি।
উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,”বাচ্চা যেমনই হোক,দায়ভারটা আসে মায়েরই ওপর।প্রতিটি মায়ের উচিৎ সন্তান সঠিক পথ দেখানো।সন্তান যদি সে পথে পরিচালিত না হতে চায়,প্রয়োজনে শাসন করতে হবে।
লোকে কর্ম দেখে,কর্মের পেছনের কঠোর পরিশ্রমকে দেখেনা।”
ভাবি আবারো রাগ দেখিয়ে বলে,”এই ছেলে-মেয়ে তেমন নয় স্যার।এ হলো ভদ্র সমাজের শিক্ষিত স্বার্থপর।যারা নিজের স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা।”
আমি ক্লান্ত গলায় বলি,”আহ থামো ভাবি!
বলছো কী এসব!
উনি কী ভাববে?”
“ভুল কী বলেছি আমি?এখানে ভুল ভাবারই বা কী আছে।যা হয়েছে উনি তা নিজ চোখেই দেখেছেন।
স্যার মানুষটা ভালো।তোমায় বহুবার সাহায্য করেছে।আজ উনি না থাকলে তোমার বড়ো ধরনের কিছু হয়ে যেতো তন্নি।
তুমি হার্ট এ্যাটাক করতে নিয়েছিলে।
উনি সঠিক সময় তোমায় সামলেছেন।
বাড়ি এনেছেন কোলে করে।ডাক্তার ডেকেছেন।ডাক্তার চেকআপ করে ঔষধ সহ আরো কী কী যেন দিয়েছে।
বৃষ্টি ছাড়েনি তাই হাসপাতালে নিতে পারিনি।ডাক্তার বলেছেন অবস্থা কিছুটা ভালো আছে।বৃষ্টি থামলে যেন চেকআপে নিয়ে যাই।
উনি না থাকলে আমি একা কম শিক্ষিত একটা মেয়ে মানুষ কিছুতেই এতোকিছু করতে পারতাম না।ঘাবড়ে গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করতাম।
বাচ্চা দুটোকে ফোন দিলাম।একজনও ধরেনি।
মায়ের প্রয়োজনের সময় এদের পাওয়া যায়না।নিজের প্রয়োজনে ঠিকই আসে।
আজ অর্নি সব সিমা পার করে ফেলেছে তন্নি।
এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে।এভাবে আর কতোদিন অবহেলিত হবে?
তোমার নিজের কী কোনো জীবন নেই?
কোনো মূল্য নেই?”
জানিনা কী হলো আমার।ডুকরে কেঁদে উঠি।
স্যার এগিয়ে আসেন। তড়িঘড়ি আমার মাথায় হাত রেখে বলেন,”শান্ত হন প্লিজ।
কাঁদবেন না।আপনি অসুস্থ।আপনার পরিবারে কী সমস্যা তা জানিনা।তবে আন্দাজ করেছি কিছুটা।
আন্দাজের সিমা থেকেই আপনাকে দুটো পরামর্শ দেই।
নিজের সম্মান নিজেকেই ধরে রাখতে হয়।নিজের দূর্বলতা কখনো কাউকে প্রকাশ করতে নেই।হোক সে সন্তান,মা-বাবা অথবা স্বামী।
দূর্বলতা যখন প্রকাশ করবেন,সেই স্থানেই বারবার আঘাত পাবেন।
নিজের আত্মশক্তিকে বজায় রাখবেন সবসময়।
নিজের খুশির জন্য নিজে সবকিছু করবেন।
আপনার খুশি-আনন্দ আপনি না তৈরি করে নিলে কেউ দিতে পারবেনা।”
আমার কান্না থামেনা তবুও।মনের মাঝে প্রচুর অশান্তি লাগে।
স্যার পারুল ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি একটু উনার জন্য খাবার এনে দিন ম্যাম।
খাবার খাইয়ে উনাকে ঔষধ খাওয়াতে হবে।”
“আনছি।তবে আপনি স্যার আমায় ওসব ম্যাম ট্যাম বলবেন না দয়া করে।
আপনি আমায় নাম ধরে বলতে পারেন।অন্যথায় তন্নির মতো ভাবি বলতে পারেন।”
স্যার কিঞ্চিৎ হেসে বলেন,”ঠিক আছে ভাবি।”
সে খাবার আনতে যায়।
স্যার আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে।
“জানেন তন্নি আপনি অবচেতন হওয়ার আগে বারবার ভুলভাল বলছিলেন।
আপনার নাকি কেউ নেই,কেউ আপনায় ভালোবাসেনা।এসবই বলছিলেন।”
আমি জবাব দেইনা কোনো।
ভাবি খাবার এনে স্যারের হাতে দিয়ে চলে যায় নিচে।
স্যার আমার সামনে খাবার রাখে।
ধীরে ধীরে কোনো মতে উঠে বসি আমি।হেলান দেই খাটের সঙ্গে।খাওয়ার চেষ্টা করি।হাত আমার রীতিমতো তরতর করে কাঁপছে।
ঠিক মতো খেতে অব্দি পারছিনা।
পরিস্থিতি বুঝে স্যার নিজেই সাহায্যে এগিয়ে আসেন।খাবারের থালা নিজ হাতে নেন।খাবার ধরে আমার মুখের সামনে। ইতস্তত বোধ হয় আমার।
“আমার অসুস্থতায় আপনি আমার সেবা করেছেন।এবার আমার পালা।
আর খাবার নিয়ে ওতো ইতস্তত হতে নেই ম্যাম।আপনি অসুস্থ।খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।খেয়ে নিন অনুগ্রহ করে।”
খেলাম এরপর।উনার হাতেই খেয়েছি।স্যার নিজ হাতে আমায় ঔষধ ও খাওয়ালেন।
আজকের খাবারের স্বাধ অন্যরকম লেগেছে আমার কাছে।বেশ অন্যরকম।তবে সুস্বাদু ছিল।ভাবি হয়ত নতুনভাবে রান্না করেছে।নাহলে জ্বর এসে আমার মুখের স্বাদ পালটেছে।
খাওয়া শেষে এলো ভাবি।এসেই বলল,”ওহ খাওয়া শেষ?
ভালো হয়েছে।
তোমার ভাই ঔষধ এনেছে।সেগুলো বুঝে নিয়ে তাকে বাথরুমে পাঠালাম বৃষ্টিতে ভেজা কাপড় ছাড়তে।তোয়ালে-পোশাক খুঁজে দিয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল আমার।”
স্যার এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনি তাহলে এবার রেস্ট নিন।অনেকক্ষণ এসেছি।এবার আমি আসি তাহলে।ফোনে খোঁজ নেব আপনার।
ভাবির নাম্বারও নিয়ে রেখেছি।
ফোন দিয়ে আপনার বিষয়ে অবশ্যই শুনবো আমি।
নিজের যত্ন নেবেন।ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করবেন।আর হ্যা,হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না প্লিজ।যা করবেন ভেবে চিনতে করবেন।”
পাশ থেকে ভাবি বলে ওঠে,”তা কী করে হয় স্যার?কীভাবে যাবেন আপনি?
বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে।বাজ পড়ছে সঙ্গে।রাস্তায় যদি কোনো বিপদ হয়?
এছাড়াও শুনলাম কোন রাস্তায় নাকি গাছ ভেঙে পড়েছে।
এই ঝড়-জলের রাতে যেতে হবেনা আপনায়।রাত অনেক হয়েছে স্যার।আজকের রাতটা এখানেই থেকে যান।আপনি আমাদের বড্ড উপকার করেছেন।এখন এই অবস্থায় আপনায় একা পাঠানো ঠিক হবেনা।”
স্যার থাকবেনা কিছুতেই।যেতে চাইছে বারবার।ভাবিকে বোঝাচ্ছে সে।ভাবিও বলে যাচ্ছে একাধারে।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,”যদি কিছু মনে না করেন আজকের রাতটা থেকেই যান স্যার। রিস্ক নেওয়া উচিৎ হবেনা।
কথা দিচ্ছি আপনার কোনো সমস্যা হবেনা এখানে।”
তিনি একগাল হেসে বলেন,”সমস্যা আবার কী হবে!
সমস্যার ভয় আমি পাইনা।জীবনের মারপ্যাঁচে মানুষ চিনতে শিখেছি আমি।জানি কোথায় বিপদ হতে পারে,বা কোথায় সুরক্ষা নিশ্চিত।
ঠিক আছে।আপনারা যেহেতু এতো করে বলছেন, থেকেই যাচ্ছি।”
“তাহলে তো খুব ভালো হবে স্যার।তন্নির মনটা বড্ড খারাপ।আপনি থাকলে ওর ভালো লাগতে পারে।
অন্তত সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মানুষ তো হবে।
মন ভালো হলে শরীর সুস্থ হয় দ্রুত।
আপনারা বরং গল্প করুন।আমি একটু চা ও মুখরোচক কিছু বানিয়ে আনি।এরপর সবাই মিলে গল্প করে কাঁটিয়ে দেব বাকিরাত।
তন্নির মন ভালো করাই আমাদের উদ্দেশ্য আজ।”
পারুল ভাবি চলে যায়।
ঘর জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে।স্যার হালকা কেশে বলেন,”আপনার বিষয়ে জানার ইচ্ছে আমার শুরু থেকেই ছিল।প্রবল আগ্রহ ছিল।প্রকাশ করিনি,কী ভাববেন ভেবে।
আজ যখন আপনার এই অবস্থা দেখতে পেলাম,তাই আর নিজের কৌতূহলকে দমিয়ে রাখতে পারিনি।
আপনাকে নিয়ে এসে ভাবিকে প্রশ্ন করেছিলাম।তিনি সবটাই বলেন আমায়। আপনার অতীত বিষয়ে জানতে পেরেছি।কীভাবে আপনি প্রতারিত হয়েছিলেন, আপনার নিষ্ঠুর পরিহাস শুনে আমি নিজেই যেন হারিয়ে গেছিলাম অন্য জগতে।
কিছু সময়ের জন্য যেন মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেছিলো আমার।
একসময় আমি ভাবতাম,আমিই হয়ত শুধু চরমভাবে প্রতারিত হয়েছি।আমারই শুধু এমন দুঃখ আছে।আপনার অতীত শুনে ধারণা বদলে গেছে আমার।
আপনার দুঃখের কাছে আমার দুঃখ কিছুই না।
তবুও আমি একজন ভালো মা-বাবা পেয়েছি।যারা সর্বমূহূর্তে,সর্বক্ষেত্রে আমার পাশে থাকে।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।
সামান্য হেসে বললাম,”মানব জীবন বড়োই বিচিত্র স্যার।কারো দুঃখের পাল্লাই কম নয়।যার যা দুঃখ,তার কাছে তা পাহাড় সমান।”
“সেটা ঠিকই।তবে কী জানেন,ভুল মানুষের জন্য থমকে থেকে লাভ নেই।
জীবন ভেলার যাত্রী হয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে এগিয়ে চলতে হয়।
আপনি যদিও অনেকটা এগিয়ে গেছেন।তবুও বলছি,আরো এগিয়ে যান।জীবনকে নতুন করে সাজান।অতীত আকড়ে ধরে থাকতে নেই ম্যাম।”
“আপনি তো আছেন ঠিকই।আপনিও তো অতীত ধরে আছেন।একবার প্রতারিত হয়ে জীবন আপনার থমকে গেছে স্যার।আমার সব ভুলে নতুন করে শুরু করা সহজ ছিল না।দুই সন্তানের জননি আমি।সবকিছু এতো সহজ নয় আমার জন্য।কিন্তু আপনার তো শুধুই প্রেম ছিল।তাহলে এতো বিরহ কী শুধু এই একটি বিষয়েই?
এর কারণ কী জানতে পারি?”
ইয়াসির স্যার চমৎকার হাসলেন।আমি মুগ্ধ নয়নে তার হাসি পরখ করলাম।
ভীষণ সুন্দর হাসেন তিনি।
“এ প্রসঙ্গে কথা উঠলে বরাবরই এড়িয়ে যেতে পছন্দ করি আমি।
আজ খুব ইচ্ছে করছে আপনাকে কারণটা জানাতে।
আমি কিন্তু বেশ কঠোর চরিত্রের মানুষ।কিছু বিষয়ে ভীষণ কঠোর।তবে মনের দিক থেকে বড্ড নরম ও ভিতু।
সে ছিল আমার কলেজ লাইফের প্রথম প্রেম।প্রথম অনুভূতি।
মেয়েটির নাম ছিল রাহি।ভীষণ চঞ্চল,ছটফটা স্বভাবের ছিল সে।প্রথম সাক্ষাৎকারেই ভালো লেগে যায়।দু-পক্ষের সম্মতিতে এক প্রেম বন্ধনে আবদ্ধ নেই।এভাবেই চলে বছর দুয়েক।
এরপর হঠাৎ শুরু হলো মেয়েটির মাঝে পরিবর্তন।
আমায় এড়িয়ে চলে,কথা কম বলে।রাতে কল দিলেও ব্যস্ত দেখায়।
আমি ততোদিনে ওর প্রতি ভীষণ দূর্বল হয়ে পড়েছি।নাওয়া-খাওয়া বাদে ওর কথাই ভাবতাম।ওর এমন আচরণে আমি পাগলপ্রায় হয়ে যাই।পড়াশোনায় অমনোযোগের ফলে সে বছর বাজে রেজাল্ট হয়।
মা-বাবার একমাত্র ছেলে আমি।বরাবরই আমায় নিয়ে তারা ভীষণ আশাবাদী ছিল।আমার এরুপ পরিবর্তনে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে।কারণ জিজ্ঞেস করে।বোঝায় আমায়।
সবটা খুলে বলি তাদের।মা সিদ্ধান্ত নেয় ঐ মেয়ের সঙ্গেই বিয়ে দেবেন আমায়।হোক সে বয়স কম।দুজনেই লেখাপড়া করে জীবনে কিছু করবে।এতে করে দুজনের ক্যারিয়ার তো বাঁচলো।
পরদিনই প্রস্তাব নিয়ে যায় মা।
রাহির মা-বাবা সব দেখে-শুনে রাজিও হন।
বিয়ে পড়িয়ে রাখার কথা বলেন।সঠিক সময় বা আমার পড়াশোনা শেষ হলে সংসার শুরু করবো।
আমি প্রচন্ড খুশি হই।রাহিও আগের মতোই আমায় সময় দিতে শুরু করে।
বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।নিকট কিছু আত্মীয় ও বন্ধুদের দাওয়াত করা হয়ে যায়।শপিং পর্যন্ত শেষ করেছি আমরা।সব প্রস্তুতি শেষ।বিয়ের আগ রাতে রাহিকে সারপ্রাইজ দিতে অনেক ফুল,চকলেট সহ ওর হোস্টেলে গিয়েছি।দরজা খুলতেই এক ছেলের সঙ্গে ওকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখি।
মাথায় যেন বাজ পড়ে আমায়।
রাগে,দুঃখে চিৎকার করি।রাহি নিজেকে সামলে নিয়ে আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়।
দিকদিশাহীন হয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে থাকি।প্রচন্ড বৃষ্টি ছিল সেদিন।সেই বৃষ্টির দিন আমি সব হারিয়েছিলাম।
বাড়ি ফিরে জ্ঞান হারাই।মা-বাবা হাসপাতালে ভর্তি করেন আমায়।
রাহির মা-বাবা ফোন করে বিয়ে ভেঙে দেন।কারণ জানতে চাইলে জানান,আমার কোনো জব নেই।কোনদিন জব হবে তারও কোনো ঠিক নেই।এমন ছেলের সঙ্গে তারা মেয়ে বিয়ে দেবেন না।
আমি উন্মাদের মতো হয়ে যাই।রাহিকে কল দেই।
সে সোজা জানিয়ে দেয়,সে আমার সঙ্গে টাইম পাস করেছে।বিয়ে তার উদ্দেশ্য নয়।
তাকে বিরক্ত করা যেন ছেড়ে দেই।আমি তার যোগ্য নই।আমার কোনো পজিশন নেই।বেকার একটা ছেলে।আমার সঙ্গে বিয়ে করে তার ভবিষ্যৎ সে নষ্ট করবেনা।
অথচ বেকার হলেও আমার বাবার ছিল অঢেল।তাদের একমাত্র ছেলে আমি।হিসেব মতো সবই আমার।
রাহির মতো দশটা মেয়ের ভরণপোষণ কোনো ব্যাপার ছিল না।
আমার নিজস্ব কিছু নেই এটাই দোষ ছিল।ধৈর্য্য ধরলে আমি নিজেও ভালো পর্যায়ে যেতাম।কিন্তু রাহি সেটা করেনি।
আত্মীয়স্বজন,বন্ধু-বান্ধবের কাছে চরম উপহাসের পাত্র হই আমি।বিয়ের আগের দিন এমন একটা ঘটনা।লোকে আমায় নিয়ে হাসাহাসি করে।
এসব সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে সেই এলাকা ছেড়ে বাইরে চলে যাই।পরিশ্রম করি।পড়াশোনায় কামব্যাক করি।সাফল্য অর্জন করি।একটা কলেজে শিক্ষক পদে যোগ দেই প্রথমে।এরপর শহরের নামকরা ভার্সিটির প্রফেসর পদে নিযুক্ত হই সময়ের সঙ্গে।
আজ আমার সব আছে।অর্থ-বিত্ত,সম্মান,পজিশন সবই আছে।একইসাথে মনে ভয়টাও রয়ে গেছে।
কাউকে বিশ্বাস করতে ভয় পাই আজও।”
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
“মানুষ বলে অতীত পিছে ফেলে এগিয়ে যেতে।কিন্তু জানেন স্যার,অতীত কোনো না কোনোভাবে আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়েই থাকে ওতপ্রোতভাবে।
অতীতের রেখা বর্তমানে দাগ টানে।
আপনি আর আমি একই নৌকার যাত্রী হয়ে গেছি স্যার।অন্যের প্রতারণার দায় নিজেদের কাধে নিয়ে তড়পে তড়পে মরছি।”
“তা বলেছেন ঠিকই।তবে কী জানেন,এখন মনে হয় এটা আমরা ভুল করছি।
জীবনের কাছে অন্যায় করছি।সুখ-শান্তির রুপ-রস থেকে খামাখাই নিজেদের বঞ্চিত করছি। বিশেষ করে আপনি!
তাই বলি,এসব থেকে বেড়িয়ে এসে নতুন ছন্দে জীবন গড়া উচিৎ।কেউ কারো জন্য থেমে নেই ম্যাম।চারপাশে তাকিয়ে দেখুন,সবাই এগিয়ে গেছে।
অবহেলিত হয়ে সেই আপনিই পড়ে রয়েছেন।
পুরোনো অতীতের বাধন ছিড়ে বেড়িয়ে আসুন।
আপনি চাইলে আপনার জীবন এখনো আলোকিত হতে পারে।নিজে ভালো থাকা মানে অন্যকে ঠকানো নয়।
আপনার সকল দায়িত্বই একপ্রকার পালন করে ফেলেছেন আপনি।এখন নিজেকে নিয়ে ভাবুন।এক সুখের নীড়ে আশ্রয় নিন।জীবনকে বন্দি দষা থেকে মুক্তি দিন।
স্বাধীন চিত্রে এগিয়ে যান।নিজের অনুভূতিদের আর গলা টিপে মা*র*বেন না ম্যাম।এবার তাদের মুক্তি দিন।ঘন আকাশে ডানা মেলে উড়তে দিন।
সুখের পরস ছুয়ে দিক আপনায়।”
অবিভূত হই তার বলা প্রতিটি কথায়।
এই মানুষটির কথাবার্তায় প্রচন্ড মাধুর্য আছে।ভীষণ সাবলম্বি,শালিন ভাষা এনার।
আজ আমার নিজেকে নিয়ে ভীষণ ভাবতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে করছে দূর আকাশে ডানা মেলে উড়তে।প্রজাপতি হয়ে রঙিন পাখা ঝাপটাতে ইচ্ছে করছে।
আমি খুব সামান্যই হাসি।
স্যার ফট করে বলে ওঠেন,”আপনি হাসলে ভীষণ সুন্দর লাগে ম্যাম।”
হাসি থামিয়ে তাকাই উনার দিকে।
উনার গভীর দৃষ্টি।আমার ও একই।চাইলেই চোখ ফেরাতে পারছিনা।কতো জনমের যেন এ দেখা!
পারুল ভাবি আসেন এমন সময়।
আমি দ্রুতই দৃষ্টি সরিয়ে নেই।
ভাবি খাবার এনে রাখে সামনে।চেয়ার টেনে নিজেও বসেন।
স্যারের হাতে এককাপ চা ধরিয়ে দেন।
আমায় নিতে বললে আমি নেইনা।চা খেতে ভালো লাগছেনা।
ভাবি স্যারকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,”স্যার আপনার ছেলে-মেয়ে কজন?বিয়ে টিয়ে হয়েছে ছেলে-মেয়ের?”
স্যার মুচকি হেসে বলেন,”নাহ হয়নি।ছেলে-মেয়ের বাপেরই এখনো বিয়ে হয়নি।”
ভাবি হয়েছে প্রচন্ড অবাক।
অবাক স্বরে বলে,”মানে?”
“মানে আমি এখনো বিয়ে করিনি।”
ভাবির এবার মাথায় হাত।উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,”এখনো বিয়ে করেননি স্যার?কবে করবেন বিয়ে?
আপনাদের পড়াশোনা ওয়ালা মানুষদের এই এক সমস্যা।বড়ো চাকরি না হলে বিয়ে করতে চায় না।
আপনার ভাই আর আমি আঠারো বছরেই বিয়ে করে নিয়েছিলাম।আমাদের বাপু ওতো পড়াশোনার দরকার নেই।বিয়ে করে ঘর-সংসার করছি।ছেলে-মেয়ে গুলো বড়ো হয়ে গেছে।মেয়ে বিয়ে হয়ে নাতি এসেছে কোলে।এখন নাতি-নাতনি মানুষ করি।
আর আপনি কিনা বিয়েই করেনি।তা শুভ কাজ সারবেন কবে?”
স্যারকে দেখলাম আড় চোখে একবার আমার দিকে তাকালো।এরপর লাজুক ভঙ্গিতে বলল,”কেউ একজনকে ভালো লেগেছে।সে রাজি হলেই সেরে ফেলবো।শুভ কাজে দেরি করতে নেই।এমনিতেই অনেকটা সময় দেরি করেছি।আর করছিনা।এবার মনের মানুষ নিয়ে একটা ছোট্ট ঘর বাধার পরিকল্পনা আছে।
দোয়া করবেন।”
ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,”দেখলে তন্নি,স্যার কী সুন্দর বুঝদার।
আর তোমায় এতো বুঝিয়েও কোনো কাজ হয়না।ইচ্ছে করছে স্যারের সঙ্গেই ধরে বেধে তোমার বিয়েটা দিয়ে দেই।”
ভাবির বলা দেরি নেই,স্যারের কাশি শুরু হয়েছে।মুখ থেকে চা পড়ে গেছে।
এদিকে আমি তো লজ্জায় শেষ।পারলে মাটির নিচে ঢুকি।
স্যার কাশতে কাশতে ‘আসছি’ বলে বাইরে যায়।
আমি ভাবিকে প্রচন্ড বকা দেই।নাতনি হয়ে গেল,এখনো কোথায় কী বলতে হয় জানেনা।
তিনি আমার পাশে বসে বলেন,”ভালো কথাই বলেছি তন্নি।ভেবে দেখো।এবার বিয়ে না করলে ঘরে আন্দোলন দেব কিন্তু আমি।
তোমার দুঃখ আর চোখে দেখা যায়না।এবার কেউ তোমার ভালো থাকার দায়িত্ব নিক।নিজে তো নিজেকে ভালো রাখতে পারলেনা।তাই অন্য কাউকে সুযোগ দাও।
স্যার মানুষটা প্রচন্ড ভালো।তোমার অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে এসে সে খুবই চিন্তা করছিল।যেন বহু দিনের পরিচিত তোমরা।হাত-পায়ে অব্দি তেল মালিশ করেছে।তোমাকে সুস্থ করাই ছিল উনার উদ্দেশ্য।শরীর তোমার শক্ত হয়ে আসছিল দেখে স্যার প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।ভিজে ভিজে ডাক্তার নিয়ে এসেছে।হাসপাতাল নিতে চেয়েছিল আমি নিষেধ করেছি বৃষ্টি দেখে।
বারবার তোমায় ডাকছিল।জ্ঞান ছিল না তোমার।
উনার চোখে পানি অব্দি দেখেছি আমি তোমার জন্য।কেউ কাউকে নিয়ে না ভাবলে এমনটা হয় কখনো?
আমি বলছি তন্নি,স্যার তোমায় ভালোবাসে।এজন্যই কোনো না কোনোভাবে বারবার তোমাদের দেখা হয়েই যায়।তার বিপদে তুমি সাহায্যকারী হও,তোমার বিপদে সে।
জীবনে সব কিছু কাল্পনিক হয়না তন্নি।কিছু জিনিস সত্য হয়ে জীবনে আসে।
তোমায় নিয়ে উনি যতোটা ভাবে,এতোদিনে এতোটা কাউকে ভাবতে দেখিনি।অসুস্থ শরীরে অধিক তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেতে নেই দেখে উনি নিজ হাতে তোমার জন্য রান্না করেছে কম মসলায়।আমি করতে চেয়েছিলাম।উনি দেয়নি।নিজে করতে চেয়েছে।সত্যি বলতে একভাবে রেধে অভ্যাস আমার।নিয়ম মেনে রাধতেও পারতাম না।তাই স্যার নিজে দায়িত্ব নিয়ে তোমার খাবার বানিয়েছে।সবই কী এমনি এমনি?
অনেক তো পিছিয়ে থাকলে বাচ্চাদের কথা ভেবে।এবার একটু নিজের কথা ভাবো তন্নি।এগিয়ে যাও তুমিও।
বহু চেষ্টা করলে সন্তানদের থেকে একটু কদর পাওয়ার।কিন্তু পেলেনা।তোমার সব ভালোবাসার বিনিময়ে অবহেলা ছাড়া কিচ্ছু পেলেনা।এভাবে নিজেকে আর কষ্ট দিওনা।”
ভাবি উঠে চলে গেল কথাগুলো বলে।
আমি বসে রইলাম স্থির।
বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন মনে হলো। দূর্বল শরীরটা টেনেটুনে উঠিয়ে দাঁড়ালাম।ঔষধ খেয়ে একটু ভালো লাগছে আমার।জ্বরটা একটু কমেছে।
বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।
বিছানার দিকে আসতে যাবো এমন সময় পাপসের সঙ্গে পা বেজে পড়ে যেতে নিলাম।ওমনি স্যার কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে আমার হাতটা ধরলো।
আমি নিজেকে সামলে নিলাম।
বিছানায় গিয়ে বসলাম।ধন্যবাদ জানালাম।
স্যার কী যেন ভেবে বলল,”আচ্ছা ম্যাম,মিস্টার আকাশ এখন কোথায় আছে?কেমন আছে?বিয়ে করেছে?
আপনি তার বিষয়ে কিছু জানেন?”
মুখটা থমথমে করে বললাম,”এখানে অনেক কাহিনী আছে স্যার।এটা কারো জানা নয়।
পরে একদিন বলবো সব।আজ শুধু একটা কথাই শুনে রাখুন,ঐ মানুষটার সঙ্গে আমার পুনরায় দেখা হয়েছিল।বর্তমানে সে ভালোই আছে স্ত্রী নিয়ে।”
চলবে।