আমিই সেই তন্নি পর্ব-০৯

0
23

#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin

পর্ব ৯ এর একাংশ
রাত তিনটা বেজে বিশ মিনিট।রান্নাঘরের টুংটাং আওয়াজ তুলে রান্না করছি আমি।
মনের আনন্দে গুণগুণ করে গান ও গাইছি।
আজ আমার আলিফের জন্মদিন।তাই ওর পছন্দের রান্না করছি সব।
সকালে ছেলেকে সারপ্রাইজ দিতে যাবো ওর হোস্টেল।আটটা বাজার আগেই পৌঁছাতে হবে আমায়।ছেলে যেন ঘুম থেকে উঠেই আজ মায়ের হাতের রান্না খেতে পারে।
আমাদের কাছে জন্মদিন মানে রাতভর ওসব পার্টি-ফার্টি নয়।নিজ হাতে রেধে বেড়ে সন্তানকে খাওয়াতে পারাই আনন্দ।

শব্দে ভাবির ঘুম ভাঙলো।গলা উচিয়ে বলল,”রান্নাঘরে কে?”

“আমি ভাবি।চো*র ভেবে আবার মা*রতে তেড়ে এসোনা।”

সেকেন্ড পাঁচেক পর ভাবি ঢুলুঢুলু পায়ে কিচেনে এলো।হাই তুলে বলল,”এতো রাতে কী করো কিচেনে?”

“রান্না করছি।”

“আমায় ডাকতে পারতে।তা চা না কফি?কোনটা করছো?”

বললাম,”দুই রকমের মাংস দিয়ে দুই পদের বিরিয়ানি।ডিমের কোরমা।পায়েস।ফিরনি।”

ভাবি চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে তাকালো আমার নিকট।
“এই রাতে এতো ভারী খাবার কেন?কে খাবে এসব?”

“তোমার মনে নেই ভাবি?আজ আমার আলিফের জন্মদিন।তাই ওর জন্যই রান্না করছি।

ভাবি ভাবলেশহীন ভাব নিয়ে বলল,”তা আলিফ আসবে নাকি আজ?”

“নাহ।আমিই নিয়ে যাবো রেধে।ওকে সারপ্রাইজ দেব।”

“আলিফই আসলে ভালো হতো না?
না মানে তোমায় নিয়ে ভীষণ চিন্তা হয় আমার।না জানি ছেলেটা আবার কী বলে বসে।আর তুমি দুঃখ পেয়ে যাও।”

একটু হেসে বললাম,”ওতোসব ধরতে নেই ভাবি।মনেও রাখতে নেই।বাচ্চারা ভুল করতেই পারে।ওরা ছোট ওরাই তো ভুল করবে।
বড়ো হিসেবে আমাদের ক্ষমা করে দিতে হবে।
তাহলে আমাদের দেখে ওরাও ক্ষমা করা শিখবে।”

“তবুও ওতো লায় দিতে নেই।মাথায় চড়ে বসে।
যাকগে সেসব।কী করে দিতে হবে বলো।”

“কিচ্ছু করতে হবেনা তোমায়।ঘুমে তো কথাও বলতে পারছোনা।তুমি গিয়ে ঘুমাও।আমি সামলে নিতে পারবো সবটা।সময় আছে হাতে।”

“ঠিক আছে।তবে প্রয়োজন পড়লে ডাক দিও।”

ভাবি চলে গেল।আমি রান্নায় মন দিলাম।
আজান হলো।ভোরের আলো ফুটলো।বিরতিহীন কাজ করে সব শেষ করলাম আমি।
প‍্যাকেট করে নিলাম খাবার।
ঘামার্ত শরীর নিয়ে ঘরে গেলাম।থামলে চলবেনা।খাবার নিয়ে পৌঁছাতে হবে দ্রুত।
গোসল করে তৈরি হলাম।
খাবার সহ একটা বড়ো দেখে কেক নিয়েছি সঙ্গে।
গাড়িতে বসে আলিফকে কল দিলাম।
ঘুম বিজরিত কন্ঠে ‘হ‍্যালো’ বলল সে।
জন্মদিনের উইশ করে আমি আসছি সেটা জানালাম।
আলিফ ও সম্মতি দিয়েছে।
মনের সুখে যেতে লাগলাম।পথে একবার ভেবেছিলাম অবশ্য অর্নিকে নিয়ে যাওয়ার কথা।
পরক্ষণে মনে হলো ও যাবেনা।শুধু শুধু বলে লাভ নেই।

একাই গেলাম।
আলিফের হোস্টেলে পৌঁছে রুমে নক করলাম।
একটা ছেলে দরজা খুলে দিল।
সালাম দিল।
উত্তর নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলাম।
আলিফের বিছানা খালি।ভাবলাম বাথরুমে গেছে হয়ত।
খাবার রেখে বসে রইলাম।রুমের সবাইকে দেখছি আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে।সেসবে পাত্তা দিলাম না।অপেক্ষা করতে লাগলাম।
পাঁচ মিনিট যায়,দশ মিনিট যায় তবুও আলিফ আসেনা।
বাধ‍্য হয়ে ওর নাম নিয়ে জোরে ডাক দিলাম আমি।
এক ছেলে বলে উঠলো,”আলিফ তো নেই আন্টি।আপনি আসার মিনিট পাঁচেক আগেই ও বের হয়ে গেছে ওর বন্ধুদের সঙ্গে।
আজ ওদের একটা রেস্টুরেন্টে ট্রিট দেওয়ার কথা আলিফের পক্ষ থেকে।
আপনি ফোন করার পরই তো আলিফ উঠে তৈরি হয়ে চলে গেল।”

বললাম,”সেটা কী করে হয়!
আমি তো ওকে বলেই এসেছি। ও কীভাবে পারে এই কাজ করতে?
দাঁড়াও একটা কল করে দেখি।”

ওর নাম্বারে কল দিলাম।দু বারের বেলা রিসিভ করলো সে।প্রচন্ড গানের শব্দ পাচ্ছি।
কোথায় আছে জিজ্ঞেস করলাম।
আলিফ শুনতে পায়না।হ‍্যালো হ‍্যালো করেই যাচ্ছে।
প্রচন্ড বিরক্ত হলাম আমি।
আলিফ কিছু না বলেই কল রেখে দিল।
আবারো ফোন দিলাম কবার।ধরলোনা।

উদাস মুখে বিছানায় বসে রইলাম।ছেলের বয়সি এতোগুলো ছেলের মাঝে নিজেকে প্রচন্ড ছোট মনে হচ্ছে আমার।
দোষ তো আমারই।পারুল ভাবি আসার সময়ও নিষেধ করেছিল।
আমি শুনিনি।অধীক ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে ছুটে এসেছি।এবার বুঝছি।
ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদি।এতোটা অবহেলার আমি?

রাগে দুঃখে বসে রইলাম একই ভাবে।
প্রায় আধঘন্টা পার হলো।ছেলে আসার নাম নেই তবুও।কতো খাবার রান্না করে এনেছি আমি।সব হয়ত নষ্ট হবে।

কিছুক্ষণ পর ঐ ছেলেটিই আবার বলল,”আন্টি আপনি কী চলে‍ যাবেন?আলিফের ফিরতে সম্ভবত আরো দেরি হবে।”

যা বুঝলাম,আমি থাকায় ছেলেগুলার হয়ত অসুবিধা হচ্ছে।
তাই উঠে দাঁড়ালাম।বললাম,”খাবারগুলো তোমরা খেয়ে নিও।আমার ছেলের মতোই তোমরা।”

বেড়িয়ে আসতে নিলাম।
ছেলেটা পেছন ডেকে বলে,”কিন্তু আন্টি কেকটা?”

যার জন্মদিন সেই তো নেই।কাঁটবে কে কেক?
আলিফ ফিরতে ফিরতে হয়ত রাত হবে।কেকটা নষ্ট হয়ে যাবে।এমনিতেই কাল কিনেছি।

বাধ‍্য হয়েই কেকটা নিয়েই বাইরে এলাম।
রাস্তাতে দাঁড়াতেই ছোট দুটো বাচ্চাকে দেখলাম একটা ছোট্ট কেক নিয়ে যাচ্ছে হইহই করতে করতে।আজ নাকি ওর জন্মদিন।ছোট্ট একটা কেক কাঁটতে পারবে ভেবে বেজায় খুশি বাচ্চাটা।গরিবেরা অল্পতেই খুশি থাকতে পারে।যাদের অনেক পেয়ে অভ‍্যাস,তাদের দুনিয়ার সব এনে ঢেলে দিলেও খুশি হবেনা।চাহিদা মিটবেনা।কদর করবেনা।

বাচ্চাটাকে কাছে ডাকলাম আমি।কেকটা হাতে দিলাম।বড়ো কেক।দুজন মিলে ধরেছে।
বললাম,”আজ তো তোমার জন্মদিন।কেকটা তাই তোমায় দিলাম।”

ছেলেটা ফ‍্যালফ‍্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।এরপর খুশিতে লাফিয়ে উঠলো একপ্রকার।
আমার গালে একটা চুমুও খেলো আনন্দে।
কেক নিয়ে নাচতে নাচতে চলে গেল ওরা।
মনে প্রশান্তি পেলাম আমি।যাক,কেউ তো খুশি হলো আমার পরিশ্রমে।

বাড়ি ফিরে গেলাম।
আমার শুকনো মুখ দেখেই ভাবি প্রশ্ন করলো,”এতো তাড়াতাড়ি জন্মদিন পালন হয়ে গেল?”

জবাব দিলাম না কোনো।
সোফায় বসে দীর্ঘশ্বাস নিলাম।ভাবি এসে আমার পাশে বসলো।
বলল,”ছেলে পাত্তা দেয়নি নিশ্চয়?
আগেই বলেছিলাম যেও না।এসব বাচ্চার জন্য আগ বাড়িয়ে কিছু করাই ভুল।
রাত জেগে খাটনি করে রান্না করলে।ফল কী পেলে?
অপমান ছাড়া কিচ্ছু পাওনা ওদের থেকে।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।

আমি এবারেও জবাব দিলাম কোনো।উঠে ঘরের দিকে যেতে লাগলাম।
ভাবি পেছন থেকে বলল,”খেয়ে যাও তন্নি।সকাল থেকে না খেয়ে তুমি।”

“তুমি খেয়ে নাও।”

উক্ত কথাটি বলে ঘরে গেলাম আমি।দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসলাম।ধ‍্যান ধরে থাকলাম কিছুক্ষণ।
কাঁদলাম না।এসবে আমি অভ‍্যস্ত হয়ে গেছি।শুধু খারাপ লাগে মনে।কান্না পায়না আর।মনটা হয়ত পাথর হয়ে যাচ্ছে দুঃখ সয়ে সয়ে।

বাকি বেলা আর ঘর ছেড়ে বেরোই নি।ভাবি ডেকেছে বহুবার।উত্তর দেইনি।
স‍্যারের মেসেজ আসে।আমায় বের হতে বলছেন তিনি।গাড়ি নিয়ে আমার বাড়ির সামনেই নাকি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখি সত্যিই দাঁড়িয়ে আছে।
দ্রুতই উঠে পড়ি।ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে যাই।ভাবিকে কোথাও দেখলাম না।
বাইরে বের হতেই দেখি ভাবি স‍্যারের সঙ্গে কথা বলছে।
আমি এগিয়ে যেতেই চুপ করলো তিনি।
বলল,”বাহিরে যাবে শুনলাম।ঠিক আছে সাবধানে যেও।”

এই বলে ভেতরে গেলেন তিনি।আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
স‍্যারকে একটু অন‍্যরকম লাগলো।মুখটা থমথমে।কোনো কথা বলছেনা।
একবার ভাবলাম প্রশ্ন করি।পরক্ষণে কী যেন ভেবে চুপ করে রইলাম।
কোর্টে গিয়ে পৌঁছালাম আমরা।ম‍্যাম ও তার হাজবেন্ড আগে থেকেই আমাদের অপেক্ষা করছিল।
আমরা যেতেই এগিয়ে এলো তারা।কুশল বিনিময় করে ভেতরে গেলাম।
সকল কাগজপত্র রেডি করা হলো।একে একে সবাই দেখলাম কাগজপত্র।
সাইন করে টাকার ঝামেলা মেটানো হলো।পুরোটা সময় স‍্যারকে দেখেছি চুপচাপ।আমার সঙ্গে একটা কথা অব্দি বলেননি তিনি।
আমি শুধু তার মুখপানে চেয়ে থেকে হয়েছেটা কী বোঝার চেষ্টা করেছি।

কোর্টের সকল কাজ শেষ করে বাইরে এলাম।
ম‍্যাম বললেন,”তাহলে আজ আমরা আসি।আমাদের একটু কাজ আছে।আর লেট করতে পারবোনা।
আবার অন‍্যদিন দেখা হবে।”

স‍্যার মাথা ঝাকালেন।
ম‍্যাম আমায় আলতো জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলেন।
আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম।
উনারা যাওয়ার পর আমি স‍্যারের দিকে ঘুরলাম।
কিছু বলতে উদ্ব‍্যত হলাম।
স‍্যার আগেই বললেন,”গাড়িতে গিয়ে বসুন।”

কথাটি বলেই গাড়িতে গিয়ে বসে তিনি।
কেন যেন মনে হলো উনি কোনো কারণে আমার ওপর রেগে আছে ভীষণ।
জানিনা কী করেছি আমি।কিন্তু জানতে হবে।তাই গিয়ে বসলাম চুপচাপ।
গাড়ি স্টার্ট দিলেন তিনি।কোথায় যাচ্ছি জানিনা। জিজ্ঞেস করতেও কেমন যেন লাগছে।ধৈর্য‍্য ধরে রইলাম।
মিনিট বিশেক পর থামলো তিনি।
গাড়ি থেকে নামলাম দুজনা।পাশে তাকিয়ে দেখি সুন্দর একটা ধাবা।
খুবই সাধারণ,বাশের বেড়া ও রঙিন বেড়ায় তৈরি সেটি।নানা রঙ বেরঙে সাজানো।বাইরে থেকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।ধাবার আশপাশে ফুলগাছ লাগানো।ফুল ফুটে আছে গাছে।মিষ্টি সুগন্ধ।শহর থেকে কিছুটা বাইরে এটি।পরিবেশ সুন্দর।
মনটা মূহুর্ত্তেই ভালো হয়ে গেল আমার।
স‍্যার ভেতরে প্রবেশ করলেন।আমায় তাকে অনুসরণ করতে বললেন।
পিছে পিছে গেলাম আমি।
একটা ছোট্ট ঝুপড়ি মতো জায়গায় গিয়ে বসলেন তিনি।
সেখানে একটি মাত্র টেবিল।অন‍্য সব টেবিল থেকে আলাদা।
যা বুঝলাম,এটা স্পেশাল।তবে খোলামেলা ভীষণ।ভেতর থেকেই বাহিরের মানুষ দেখা যাচ্ছে।নীল আকাশ দেখা যাচ্ছে।বাতাস এসে গায়ে লাগছে।
তার সামনের চেয়ারটায় গিয়ে বসলাম আমি।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,”আপনি এমন কেন তন্নি?কথা কেন শোনেন না?”

অবাক চোখে বললাম,”কী করেছি আমি?”

স‍্যার মাথা নত করলেন।হয়ত রাগ সামলাচ্ছেন।
দু-দন্ড পর তিনি স্বাভাবিক গলায় বললেন,”আপনি অসুস্থ একটা মানুষ।সেদিন হার্ট এ‍্যাটাক করতে নিয়েছিলেন।
আজ আপনার ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল দেখান নি।
ডক্টর বলেছে ঠিক মতো খাবার খেতে।ঔষধ গুলো ঠিক মতো খেতে।নিজের যত্ন নিতে।
আপনি তা না করে না খেয়ে থাকেন।
সবে অসুখ থেকে উঠলেন,রেস্ট না নিয়ে রাত জেগে রান্না করেন।
ছেলের জন্মদিনের সেলিব্রেশন প্রতিবারই তো নিজের হাতে করেন।এবারটা নাহয় কিনে আনতেন খাবার।
আপনার অসুস্থ শরীর নিয়ে এসব করা কী ঠিক?
জন্মদিন পালন নিয়ে আমার কোনো মাথা ব‍্যাথা নেই।আপনার ছেলেকে ভালোবেসে আপনি রান্না করতেই পারেন।
কিন্তু রাত জেগে করার কী দরকার ছিল?
এমন না আপনার ছেলে বিদেশ যাবে যে টাইম পাবেন না আর।আগে নিজের শরীরের খেয়াল রাখতে হবে।
কষ্ট করে রান্না করে নিয়ে গেছেন।ছেলে খায়নি।এই শোকে আপনিও সারাদিন না খেয়ে।আগের দিন না ঘুমিয়ে কী হাল করেছেন নিজের?
একবারো নিজেকে দেখেছেন?
এমন পাগলামোর মানে কী?আপনি কী ছোট?কিছু বোঝেন না?
নিজের যত্ন নিজে কেন নেন না আপনি?
অন‍্য সব দিকে তো আপনার ঠিকই খেয়াল থাকে।শুধু নিজের বেলাতেই বেখেয়ালি।”

স‍্যার একনাগারে কথা গুলো বলে থামলো।
উনার মুখে অসন্তোষ ভাব।
যা বুঝলাম,এসব নিশ্চয় এনাকে ভাবি বলেছে আসার আগে।নাহলে উনার জানার কথা নয়।
এই ভাবিকে নিয়ে আমি আর পারিনা।
হয়েছে যতো জ্বালা!

আমি আমতা আমতা করে বললাম,”ঐ আর কী আজ একটু অনিয়ম হয়েছে।”

“আপনি প্রায়শই এমন করেন।পারুল ভাবি বলেছে আমায়।
নিজের প্রতি একটুও মনোযোগি নন আপনি।আপনার নিজের শত্রু আপনি নিজেই।
নিজের ক্ষতি নিজেই করছেন।”

আমি চুপ রইলাম মাথা নত করে।
স‍্যার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু নরম হলেন।কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,”ওকে স‍্যরি।উত্তেজিত হওয়া উচিৎ হয়নি।
আপনি মানুষটা খারাপ থাকলে বা অসুস্থ থাকলে কেন যেন ভালো লাগেনা আমার।
এর কারণটা অবশ‍্য অজানা।
কিন্তু লাগে খারাপ।
আপনি আমায় কথা দিন এমন অনিয়ম আর করবেন না।জীবনে এখনো বহু কিছু বাদ আছে ম‍্যাম।এর আগেই আপনার হারিয়ে গেলে চলবে না।”

কিছুপল চুপ থেকে বললাম,”ঠিক আছে।কথা দিলাম।অন‍্যের যত্ন অনেকই করলাম।মূল‍্য পেলাম না তেমন।
এবার আমি নিজের যত্ন নেব।নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করবো।”

স‍্যারের মুখে হাসির রেখা।
বেশ কিছু খাবার অর্ডার করলেন তিনি।
খাবার এলো।আমার তো চোখ ছানাবড়া।
বললাম,”এতো খাবার কে খাবে স‍্যার?”

“কে আবার?
আমি আর আপনি।এগুলো সব আমার পছন্দের।এখানকার খাবারে একটা আলাদাই স্বাধ আছে।খেলে বুঝতে পারবেন।
এই খাবারগুলোর সঙ্গে মিশে আছে প্রকৃতির ছোঁয়া।নামিদামি ফাইভস্টার হোটেলের দম বন্ধ পরিবেশে খাওয়ার চেয়ে এখানে বসে প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে খাওয়া অনেক ভালো।
খাবারে খুব বেশি ঝাল লাগলে ঐ নীল আকাশের দিকে তাকাবেন।দেখবেন অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করবে।
খোলা হাওয়ায় মন মেতে উঠবে।”

আমি শুনলাম তার প্রতিটি কথা।
ক্ষিদে যেন বেড়ে গেল আমার।তাড়া দিয়ে বললাম,”খাওয়া শুরু করুন দ্রুত।
আমি ভীষণ আগ্রহী।”

স‍্যার সামান্য হেসে আমার প্লেটে প্রতিটি আইটেম তুলে দিলেন।
আমি খেতে আরম্ভ করলাম সঙ্গে সঙ্গে।
প্রতিটি খাবার এতো সুস্বাদু যে বলে বোঝানো যাবেনা।আমি ঘাপসে-গুপসে খাচ্ছি।স‍্যার টেবিলে এক হাতে হেলান দিয়ে আমার খাওয়া দেখছেন আর মুচকি হাসছেন।
হঠাৎ দমকা হাওয়া আসে।আমার খোপা করা চুল গুলো খুলে পিঠে এলিয়ে পড়ে।
ছোট চুল এসে চোখে-মুখে আচড়ে পড়ে।খাওয়ার মাঝে বিরক্তি করায় কপাল কুচকাই।স‍্যার স্বযত্নে মুখের সামনে আচড়ে পড়া চুলগুলো নিয়ে কানের পিঠে গুজে দেয়।
কিছু সময়ের জন্য থেমে যাই আমি।বুকে তীব্র ধড়ফড় অনুভব করি।স‍্যার মুচকি হাসি দিয়ে বলেন,”খান ম‍্যাম।খাওয়াতে বিরক্ত হলে রাগ হয়ে যায় সবারই।”

সৌজন্য মূলক একটু হাসলাম।আবারো খাওয়ায় মনোনিবেশ করলাম।
স‍্যার খাচ্ছেন না দেখে প্রশ্ন করলাম,”আপনি খাবেন না?”

“জ্বী খাবো।তবে আপনার খাওয়াটা আগে হয়ে যাক।আপনার এমন তৃপ্তিকর খাওয়া দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছে।
জীবনে আর কী চাই বলুন!
তৃপ্তি নিয়ে পেট ভরে খাবো,এটাই তো জীবনের আসল মানে।”

ভাবতে থাকি,মানুষটার কথায় আলাদা মাধুর্য আছে।যা মানুষের মন ভালো করে দেয়।

অন‍্যমনস্ক হয়ে যাওয়ায় আমি বিশম খাই।কাশতে থাকি।স‍্যার সঙ্গে সঙ্গে একগ্লাস পানি ধরে মুখের সামনে।পানি টুকু খেয়ে প্রশান্তি পাই।

“আচ্ছা ম‍্যাম আমরা কী ভালো বন্ধু হতে পারি?একবার প্রতারিত হওয়ার পর আর কখনো কোনো বন্ধুত্বে হাত বাড়াই নি।মনে ভয় থেকেছে।
আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে আপনার বন্ধু হতে।
মনের ভয় দূর হচ্ছে ধীরে ধীরে।”

“এক স্বার্থপরের কাছে প্রতারিত হয়ে জীবনের রুপ-রস সব হারিয়ে ফেলেছিলাম।
মানুষের সঙ্গে মিশতেও ভয় পেতাম।
আপনার সুন্দর চিন্তাধারায় আমি আবারো নিজেকে চিনতে শিখছি।নিজের মূল্য দিতে শিখছি।তাই বন্ধু হিসেবে আপনাকে সাদরে গ্রহণ করতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
আপনি শুধু একজন ভালো মানুষই নন,একজন পরোপকারী সঙ্গীও।
যার সংস্পর্শে মৃত ফুল ও তাজা হয়ে ওঠে।হারানো রঙ ফিরে পায়।জীবনের মানে খুঁজে পায়।”

স‍্যার প্রচন্ড উল্লাস নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
চিৎকার করে বললেন,”এ‍্যাটেনশন প্লিজ।
উপস্থিত সকলকে আমার পক্ষ থেকে সম্মান ও ভালোবাসা।
এই ধাবাটি আমার ভীষণ প্রিয়।খাবারগুলো পছন্দনীয়।
বিশেষ করে এখানকার ছানার তৈরি পায়েস।আপনারা খেয়েছেন কিনা জানিনা।তবে এটির স্বাধ অনন‍্য।
আজ আমার একটি বিশেষ দিন।
আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ আমাকে তার বন্ধু বলে গ্রহণ করেছে।
সেই খুশিতে আজ আমি আপনাদের সবাইকে মিষ্টিমুখ স্বরুপ ছানার পায়েস খাওয়াতে চাই।
আপনারা আমার বন্ধুত্বের সূচনার সাক্ষী হয়ে রইলেন।
যিনি আমার বন্ধু,মানুষ হিসেবে তিনি অমায়িক।সবার থেকে আলাদা।একটু স্পেশাল।তার মতো বন্ধু পেয়ে আমার জীবন ধন‍্য।
তাই আপনারা প্লিজ আমার এই ছোট্ট গিফ্টটা গ্রহণ করবেন আশা করছি।”

সকলে হাত তালি দিল।আমার দিকে সম্মানের দৃষ্টিতে তাকালো।অভিনন্দন জানালো।
নিজেকে বড্ড স্পেশাল মনে হলো আজ।
আপন মানুষগুলোর অবহেলায় নিজের অস্তিত্ব খোয়ে বসে ছিলাম আমি।
আজ সেই আমিকে নতুন করে চিনলাম যেন।
স‍্যারের প্রতি আমার সম্মান বেড়ে গেল দ্বিগুণ।আমার হারানো সম্মান উনি ফিরিয়ে দিয়েছে।

এরপর খেলেন স‍্যার।
খেতে খেতে বললেন,”আজ খাবারের স্বাধ বেড়ে দ্বিগুণ।কারণ আমার সামনে উপস্থিত আমার সবচেয়ে প্রিয় একটি মানুষ।”

একটু লজ্জা পেলাম আমি।মাথা নুয়ে ফেললাম।

#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin

৯ এর দ্বিতীয়াংশ
চলন্ত গাড়িতে পাশাপাশি বসে আছি আমি ও স‍্যার।স‍্যার মনের সুখে গাড়ি চালাচ্ছেন।
আমি গাড়ির খোলা জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাহিরের পরিবেশ উপভোগ করছি।
আজ আকাশটা বড্ড মেঘলা। ঝিরিঝিরি বাতাস বইসে।
আমার ভীষণ শান্তি লাগছে আজ।সেই আগের তন্নিকে ফিরে পাচ্ছি।
বেরঙিন পৃথিবীটা রঙিন লাগছে আজ।সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে।
ঘুম পাচ্ছে।
তৃপ্তি নিয়ে খাওয়ার পর যে ভাতঘুম পায় সেটা পাচ্ছে আজ বহু বছর পর।

সিটে হেলান দিলাম।
বললাম,”জানেন স‍্যার আমি মানুষটা জীবনে কঠোর খাটুনি খেটেছি অন‍‍্যের জন্য।কখনো সংসারের জন্য,কখনো স্বামীর জন্য।আবার কখনো বা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে।
নিজের কথা ভাবিনি।ভাবার সময় ও পাইনি।আমি বোকার জন্য কেউ ভাবেও নি।শুধু প্রয়োজনে ব‍্যবহার করে গেছে।
ইদানিং নিজের জন্য বড্ড আফসোস হয়।করুণা হয়।
এই আমি টাকে আমি কতো কষ্ট দিয়েছি।শরীরটাকে অবহেলা করেছি।মনটাকে পিষে মেরেছি।
আপনি ঠিকই বলেন স‍্যার,আমার শত্রু আমি নিজেই।”

স‍্যার অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালেন আমার নিকট।
কিছুপল তাকিয়েই রইলেন।কিছু বললেন না।
এরপর আগের ন‍্যায় ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলেন।

আমি হাসলাম উনার কান্ডে।
বেচারা আমার দুঃখের বাণী শুনে বুলি হারিয়েছে।চোখে পানি জমেছে।অথচ আমি কতো শক্ত।
আমার এক একটা দীর্ঘশ্বাস এই দুঃখ গুলো বয়ে নিয়ে যায় অতলে,গভীরে।
আমার দুঃখে কাঁদে সকলে।কিন্তু আমি কাঁদিনা।
পারভীন আপার বলা কথা গুলো মনে পড়ে তীব্র ভাবে।সত‍্যিই জীবনের একটা পর্যায়ে এসে চরমভাবে আফসোস হয় আমার।

ভাবনার মাঝখানে বাড়ি পৌঁছালাম।
গাড়ি থেকে নামলাম।মাথা ঝুকিয়ে জানালা দিয়ে বললাম,”আমার শোকে শোকাহত হয়ে আবার মনোযোগ হারাবেন না।
সাবধানে বাড়ি যাবেন।
আমার কথাগুলো মনে আনবেন না।ভুলে যান।মুছে ফেলুন।
আমি মানুষটা একটু পাগলাটে।”

স‍্যার এবারেও কোনো জবাব দিল না।গাড়ি নিয়ে চলে গেল তিনি।
আমি তপ্ত শ্বাস ফেলে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলাম।
সদর দরজা হাট করে খোলা।সাধারণত এ সময় দরজা খোলা থাকেনা।
কেউ এলো নাকি?

মনের মাঝে অজানা চিন্তা নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলাম।
সর্বপ্রথম পারুল ভাবিকে নজরে এলো।
সোফার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
আমায় দেখে সরে দাঁড়ালো।
সোফায় দুজন বসা।একজন আমার ছেলে।অন‍্যজন পেছন ঘুরে বসা।মুখ দেখা যাচ্ছেনা।

আলিফ আমায় দেখে উঠে দাঁড়ালো।
‘আম্মু’ বলে ডেকে উঠলো।
অপর লোকটা পেছন ঘুরলো।
আমার চোখটা প্রায় ছানাবড়া।হাত থেকে পার্স পড়ে গেছে।
এটাতো আকাশ!
ও আমার বাড়ি কী করছে?

আকাশ খুড়িয়ে খুড়িয়ে এগিয়ে এলো আমার নিকট।
আলিফ রাগান্বিত স্বরে বলল,”কল কেন ধরছিলেনা আম্মু?
কোনো কান্ডজ্ঞান আছে তোমার?
বয়স হয়েছে,তবুও হুশ হয়না।মানুষ দরকারেই কল করে।মজা করতে নয়।কটা কল দিয়েছি।একটাও ধরোনি।করলেটা কী এতোক্ষণ?”

আলিফের কথায় দেখলাম আকাশ হাসছে মুচকি মুচকি।অর্থাৎ ভালো লাগলো তার।
আমি সহ‍্য করলাম না এবার।
আকাশ বর্তমানে আমার কেউ নয়।
বাইরের মানুষের সামনে এমন অপমান মানবোনা কিছুতেই।
এগিয়ে এসে বললাম,”থাপড়ে গালের চামড়া তুলে নেব।বেয়াদব ছেলে কোথাকার!
বেশি বেড়েছিস তাই না?
কিছু বলিনা দেখে খুব সাহস হয়েছে?
তোর কাজ থাকে আমার থাকতে পারেনা?তুই কোথাও গেলে বলে যাস আমায়?
কোন সাহসে আমার সঙ্গে উচু গলায় কথা বলিস?
আবার কৈফিয়ত চাচ্ছিস!
তোর স্পর্ধা দেখে অবাক হচ্ছি আমি।
আমার ফোন বাড়িতে চার্জে।চোখে দেখিসনি?”

আমার কাছ থেকে এমন ব‍্যবহার আশা করেনি আলিফ।মাথা নত করলো সে।
আকাশও অবাক চোখে তাকিয়ে।
সে বলল,”ওর কোনো দোষ নেই তন্নি।থাক বাদ দাও।আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি তন্নি।”

রাগে গা জ্বলে উঠলো আমার।
চিৎকার করে বললাম,”একে কে ঢুকতে দিয়েছে আমার বাড়ি?কার এতো সাহস?
আমার অনুমতি না নিয়ে কে করেছে এ কাজ?”

পারুল ভাবি বলল,”ঠিকানা কীভাবে পেয়েছে জানিনা।একটু আগে গেইটে এসে ঝামেলা করছিল।ভেতরে ঢুকতে চাচ্ছিলো।গার্ড আটকে রাখছিল।
তখনই হঠাৎ কোথা থেকে যেন আলিফ এলো।
আলিফই আকাশকে ভেতরে নিয়ে এসেছে।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
অন‍্য কোনো গ্রুপে বা পেইজে আর গল্পটি পাবেন না।সুতরাং সম্পূর্ণ গল্প পড়তে এবং আপডেট পেতে মূল লেখিকাকে ফলো দিয়ে রাখুন।

আরেক দফা চেচিয়ে বললাম,”কার অনুমতিতে আলিফ একাজ করেছে?”

“অনুমতির কী আছে আম্মু?এ বাড়ি তো আমাদেরও তাই না!”

“তোদেরও।কিন্তু ওর তো নয়।”

“দেখো আম্মু একসময় আমিও বাবার বিপক্ষে ছিলাম।তাকে পছন্দ করতাম না।
কিন্তু বাবা বর্তমানে ভালো হয়ে গেছে।ভুল স্বীকার করেছে।
তার পাপের শাস্তি সে পেয়েছে।কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই তার।সে এখন আমাদের সঙ্গে থাকতে চায়।এক হতে চায়।ক্ষমা চেয়েছে।মানুষ মাত্রই ভুল করে আম্মু।বাবাও করেছিল।ফিরেও এসেছে ভুল পথ থেকে।
আমাদের উচিৎ তাকে ক্ষমা করে দেওয়া।
আমরা ছাড়া তার আর কে আছে বলো!
এছাড়াও একাধারে সে কিন্তু তোমার উপকারই করেছে।যে যদি আমাদের না ছাড়তো তুমি এতো সফলতা পেতেনা।
আমাদের তো সব আছে আম্মু।শুধু নেই একটা বাবার পরিচয়।
এ জন্য সমাজের কাছে আমরা দু-ভাইবোন কম কটু কথা শুনিনি।তুমিও শুনেছো।
তাই চলো আম্মু সব ভুলে আবারো এক হই।
তুমি আর বাবা নতুন করে সবটা শুরু করো।”

আমি হাসতে লাগলাম উন্মাদের মতো।হাসতে হাসতে হাত তালি দিলাম।
“বাহ বাহ বাহ!
ছেলে আমার বড়ো হয়েছে।সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে।তা বাবা আলিফ,তোমার সিদ্ধান্ত তুমি তোমার জীবনে অনুসরণ করো।
আমার জীবনে খাটাতে এসোনা।আমি কারো খাই-পড়ি না যে অন‍্যের সিদ্ধান্ত আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।নিজের সিদ্ধান্ত আমি নিজে নিতে জানি।নিজের ভালো নিজে বুঝতে পারি।
তোমার বলতে হবেনা।
আকাশ শাস্তি পেয়েছে এবং পাচ্ছেও তার নিজ কৃতকর্মের জন্য।
আমাকে কুকুর ভেবোনা তোমরা।যে ভালো খাবারের গন্ধে ছুটে যাবো।যেমনটা তোমার বাবা যায়।ওর স্বভাবই পশুর মতো।চুরি করা ওর ধর্ম হয়েছে।চোরকে যতোই ধন-দৌলত দিয়ে ভরিয়ে রাখোনা কেন,অন‍্যের ভালো কিছু দেখলে হাত সে বাড়াবেই।যেমনটা তোমার বাবা।
আর আমার সফলতার ক্রেডিট তুমি তোমার বাবাকে দাও কোন সাহসে?
পরিশ্রম করেছি আমি,চেষ্টা করেছি আমি।তাই সফলতাও পেয়েছি আমি।এখানে ওর কোনো ভূমিকা নেই।
আর যদি সমাজের কথাই বলো,সমাজ তো এটাও বলে মায়ের প্রতি তোমরা কতো উদাসীন।মায়ের মর্যাদা দিতে জানোনা।তাই বলে কী আমি এখন তোমাদের ছুড়ে ফেলে দেব?”

আলিফ মাথা নুয়ে নত করলো আবারো।
আকাশ এগিয়ে এলো।খপ করে আমার হাত দুটো ধরে বলল,”সব ভুলে যাও তন্নি।
আমি ভুল করেছি।শুধরে গেছি।ক্ষমা করে দাও।
আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি।ভালোবাসা না থাকলে কখনো ফিরে আসতাম না।
সাময়িক সময়ের জন্য হয়ত পথভ্রষ্ট হয়েছি।কিন্তু দিন শেষে তোমার মর্ম ঠিকই বুঝেছি।সব ভুল ছিল।তুমিই শুধু ঠিক।
আমি জানি তুমি আমায় আজও ভালোবাসো।
আমিই তোমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা।
তাইতো তুমি আজও একা আছো শুধু আমারই জন্যে।
চলো তন্নি নতুন করে সংসার করি।সুখে থাকি।
ছেলে-মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে হলেও রাজি হয়ে যাও।”

একটানে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,“ছেলে-মেয়ে দুটোর দিকে অনেক তাকিয়েছি।তাকিয়ে তাকিয়ে কানা হয়ে গেলাম।চোখে আর কিচ্ছু দেখছিনা।
তোমার প্রতি আমার আর কোনো ভালোবাসা নেই।শুধু রয়েছে ঘৃণা।
সত‍্যিই তোমার গায়ে মানুষের চামড়া আর নেই।
এক ভুল কতোবার করো তুমি?
কতো বার শোধরালে?
প্রতিবার শোধরানো শেষে আবারো একই কাজ করো।নোংরামো করো।আবার যে করবেনা তার কী নিশ্চয়তা?
তোমার হলো পচনে ধরা স্বভাব।তুমি ভালো হওয়ার নয়।তোমায় নিয়ে যদি সুখের কথা আসে,তাহলে সেই সুখ আমি পায়ে ফেলি।
একটা কথা স্পষ্ট শুনে রাখো,তিন বিয়ে হওয়া,তাড়ানি খাওয়া,চোর দুশ্চরিত্র লোককে আমি কিছুতেই মেনে নেব না আমার জীবনে।”

আকাশ তেড়ে এলো।
চেচিয়ে বলল,”এই মহিলা!বেশি বুঝছো না?
নিজের অতীত ভুলে গেলে?
আগেতো ঠিক মতো ভাতও পেতে না?
খুব অহংকার হয়েছে এখন তাইনা?”

আলিফের দিকে তাকালাম আমি।মাকে অপমান হতে দেখেও ও চুপ।
চিৎকার করে বললাম,”এখন কিছু বলছিস না কেন?মায়ের অপমানেও চুপ কেন তুই?”

“এখানে আমি কী বলবো আম্মু!
আমার কী বলার আছে?
তোমার বিষয় তোমরা মেটাও।”

যা বোঝার বুঝে গেলাম আমি।আমার প্রতিবাদ আমার নিজেকেই করতে হবে।
আকাশের গালে স্বজোড়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।
হুংকার দিয়ে বললাম,”অতীত ভুলিনি আমি।তাই তোকে গ্রহণ করছিনা।
আমি একসময় ভাত পেতাম না।নিজ সততার জোরে আজ আমি অন‍্যের মুখে অন্ন তুলে দেই।তুই তোর ছোটলোকির জন্য সব হারিয়েছিস।
আমার সঙ্গে বেশি বুঝতে আসিস না।দেখবি নিজের অস্তিত্বই খুঁজে পাবিনা।”

ভাইকে ও গার্ডকে ডাকলাম।

“এই নর্দমার কিটকে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিন।একে যেন আর কখনো এই বাড়ির আশপাশেও না দেখি।কেউ যদি আলগা দরধ দেখিয়ে একে বাড়িতে আনতে চায় তাহলে তার জন্যও এ বাড়িতে ঢোকা বন্ধ।
বাড়ি আমার।কষ্টের পয়সায় বাড়ি করেছি।সুতরাং কে আসবে না আসবে আমি ঠিক করবো।
আমার বাড়ি এসে আমার সংসারে অশান্তি করবে।আমায় অসম্মান করবে এমন লোকের স্থান হবেনা এঘরে।
তাই কেউ যদি পরবর্তীতে ওকে এখানে আনতে চায়,তাকেও ঢুকতে দেবেনা।
সে যে ই হোক না কেন।”

আমি যে কথাগুলো আলিফকে উদ্দেশ্য করে বলেছি তা ও ভালোই বুঝতে পেরেছে।
দৌড়ে ঘরে চলে গেছে।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

আকাশকে নিয়ে যাওয়া হয়।
যাওয়ার সময় সে বারবার বলে,”তুমি ভুল করলে তন্নি।আমার কাছে নত তোমার হতেই হবে।
আলিফ-অর্নি আমার সন্তান।বাবা যতোই খারাপ হোক,সন্তানদের একদিন না একদিন বাবার প্রতি মায়া জাগবেই।র*ক্ত কথা বলে।
ওরা অবশ্যই আমার কাছে ফিরবে।”

ভাবি আসে আমার কাছে।কাধে হাত রেখে বলে,”সাব্বাস তন্নি।এটাই দেখতে চেয়েছি এতোকাল।তোমার প্রতিবাদে খুশি হয়েছি।আর ছোট হবেনা তুমি।মনে রাখবে,তোমার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।”

ঘরে গেলাম।
আমি বুঝলাম না আকাশের হঠাৎ আগমনের কারণ।
চলছেটা কী ওর মনে?
খারাপ কিছু নিশ্চিত!
ও আমার ছেলে-মেয়েদের মাথা খাচ্ছে।আমার বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে।
বাচ্চারা যথেষ্ট বড়ো হয়েছে।বিবেক-বুদ্ধি হয়েছে।এখনো যদি অন‍্যের কথা শুনে আমার ত‍্যাগকে,ভালোবাসাকে ভুলে যায়,তো থাক!
আমার এখানে কিচ্ছু করার নেই।কম তো দুঃখ সইনি।বাকিটা জীবন নাহয় দুঃখেই কাঁটিয়ে দেব।

বিছানায় মাথা ঠেকালাম।ঘুম পেয়েছে।ঘুমিয়ে গেলাম।
প্রায় সন্ধ‍্যা সাতটা নাগাদ ঘুম ভেঙেছে।
উঠে নিচে এলাম।
এসে অবাকই হলাম বটে।নিচে এলাহি আয়োজন চলছে।
বাড়িঘর সাজানো হয়েছে।বিভিন্ন খাবার-দাবার সহ নানান কিছু।
বুঝলাম না হচ্ছেটা কী!
পারুল ভাবিকে দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
আমায় দেখে এগিয়ে এলো সে।
কুচকানো ভ্রু দেখে বলল,”আজ নাকি তোমার ছেলে বাড়িতে জন্মদিন পালন করবে।
এজন্যই এতো আয়োজন করছে।”

এবার বুঝলাম সবটা।
ছেলে জন্মদিনের আয়োজন করেছে বাড়িতে।অথচ আমি জানিনা।জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি।
মা হিসেবে কোন মূল‍্যটা আমার আছে বলুন তো?

সোফায় গিয়ে বসলাম।দুটো ছেলে এগিয়ে এলো আমার নিকট।
বলল,”আমাদের খাবারের বিলটা দিয়ে দিন ম‍্যাম।আলিফ স‍্যার আপনার থেকে নিতে বলেছে।”

পারুল ভাবি বলল,”আলিফ স‍্যারকে বলুন নিজে এসে মায়ের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়ে আপনাদের দিতে।
খাবার অর্ডার সে করেছে।সুতরাং বিল মেটানোর দায়িত্বও তার।”
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।

ছেলে দুটো চলে গেল।

আলিফ এলো তখনই।
এসেই বলল,”টাকা কেন দাওনি আম্মু?নাকি বাবার মতো আমাকেও তাড়িয়ে দিতে চাইছো?”

“এতোকাল যেহেতু দেইনি।এখনো দেবনা।
আর তুমি যে এতো আয়োজন করেছো আমায় বলেছো একবারো?
যদি আমার কাছে টাকা না থাকে?
টাকা-পয়সা বিষয়ক কিছু করার আগে পরেরবার থেকে পারমিশন নেবে আগে।পরামর্শ করবে।তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেবে।
তোমার মা বিল গেটস নয়।যে যখন তখন টাকা চাইবে,আর টাকার বৃষ্টি নামিয়ে দেবে।
আর যদি প্রয়োজনও পড়ে টাকার,নিজে এসে নিয়ে যাবে।তুমি এখনো ততোটাও বড়ো হওনি যে মায়ের থেকে টাকা নিতে লজ্জাবোধ করবে।”

কথাগুলো বলে ঘরে গেলাম।টাকা বের করে দিলাম।
আজ ওর জন্মদিন।চাইনা ঝামেলা হোক।

ধীরে ধীরে আলিফের সব বন্ধুরা ও বাকি সকলে আসতে লাগলো।
আমি ঘরে এসে একটু পরিপাটি হলাম।আলিফের কোচিং এর শিক্ষকরা আসছে।গুছিয়ে থাকাটাই শ্রেয়।

নিচে আসতে আসতে দেখি ওরা কেক কাঁটছে।
আমায় ডাকেনি একবারো।
ভাবিকে নিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলাম।ওরা কেক কেঁটে আনন্দ করে খেলো।
এক ছেলে বলে উঠলো আমার কথা।
আলিফের হাসি মুখে আধার নামে যেন।
দায় এড়াতে এক টুকরো কেক নিয়ে এগিয়ে এলো সে।মুখের সামনে ধরলো।খেলাম আমি।খাইয়েও দিলাম।
সকলে মিলে এবার ঘিরে ধরলো আমায়।
বলল,”এবার আলিফকে কী গিফ্ট দেবেন আন্টি?
প্রতিবার তো দামি ঘড়ি,পোশাক ও কতো কিছু এক্সপেনসিভ জিনিস দিতেন।এবার কী দিচ্ছেন?
স‍ারপ্রাইজ কিছু?
প্রাইভেট কার নাকি?”

“আমার ওতো সামর্থ্য নেই বাবা।ওতো ধনী আমি নই।সকালে একবার সারপ্রাইজ দিতে গিয়েছিলাম হোস্টেলে।গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে এসেছি।
তাই এখন আর নতুন করে কিছু প্ল‍্যান করিনি।”

আমার কথা শেষ হতেই সকলে চলে গেল।
আলিফ এগিয়ে এলো অশ্রুসিক্ত নয়নে।বলল,”তুমি এটা করতে পারলে আম্মু?আমি কতোটা আশা নিয়ে ছিলাম জানো?
আমায় একটা গিফ্টও দিলে না।
সবার সামনে এভাবে অপমান করলে?
আমি তোমার এতোই পর হয়ে গেছি?”

“এখানে আপন-পরের কথা তো নয় বাবা।
আর যদি অপমানের কথাই বলো,সেটাতো তুমি আমায় করেছো।
এইযে তোমার খারাপ লাগলো।মায়ের সামনে এসে কাঁদছো।
আমি তোমার হোস্টেলে ছেলের বয়সি ছেলেদের সামনে বসে কেঁদেছি অপমানে।
কতোটা ছোট হয়েছি বুঝতে পারছো?
মাঝে মাঝে একটু নিজে কৃতকর্মের ফল বুঝিয়ে দিতে হয়।আশা করি তুমি বুঝতে পারলে।
আর শোনো,নিজের কাছের মানুষদের অবহেলা করতে নেই।কষ্ট দিতে নেই।
কোনো দিন দেখবে এরা অচিরেই হারিয়ে যাবে।তখন কাঁদলেও কোনো ফায়দা হবেনা।”

কথাগুলো বলে চলে এলাম ঘরে।নিজের মতো বসে রইলাম।ভালো লাগছেনা।
ছাদে গেলাম।
আকাশ ভরা তারার দিকে তাকিয়ে রইলাম।মিনিট পাঁচেক পর হঠাৎ এক পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
দ্রুতই পেছন ঘুরলাম আমি।ইয়াসির স‍্যার দাঁড়িয়ে আছেন।
আমার অবাক হওয়া চোখ দুটো দেখে বললেন,”অবাক হওয়ার কিছু নেই।আলিফ জন্মদিন উপলক্ষ্যে ইনভাইট করেছে আমায়।আসতে একটু লেট হয়েছে।
তা আপনি অনুষ্ঠান রেখে এখানে একা দাঁড়িয়ে কেন?”

আগের ন‍্যায় দৃষ্টি আকাশ পানে রেখে বললাম,”আমি বুড়ো মানুষ বাচ্চাদের অনুষ্ঠানে যেয়ে কী করবো!
ওরা আনন্দ করছে করুক।
সবখানে আমার প্রয়োজন পড়েনা স‍্যার।
সবার জীবনে আমার মূল্যও নেই।”

আমার কথার ধাঁচে স‍্যার হয়ত কিছু আন্দাজ করতে পারলেন।
আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন তিনি।
বললেন,”ঠিকই বলেছেন।আমরা বুড়ো হয়ে গেছি।
চলুন আমরা বুড়ো-বুড়ি মিলে গল্প করে কাঁটিয়ে দেই সময়।”

স‍্যারের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম আমি।

স‍্যার আকাশ পানে তাকিয়ে বললেন,”ঐযে রাতের আকাশকে দেখছেন,আমি আর আপনিও ঐ আকাশের মতোই একা।
তবুও দেখুন না,আকাশটা কী সুন্দর মনের আনন্দে নিজের অনুভূতি প্রকাশ স্বরুপ তারাদের ভাসিয়ে বেড়াচ্ছে নিজ বুকে।
নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করতে শিখুন।প্রকাশ না করলে লোকে বুঝবে কী করে?
সবাই তো আর চোখ দেখে মনের কথা বোঝার ক্ষমতা আয়ত্ত করতে পারেনা এতো দ্রুত।সময় লাগে।”

“আপাতত মনে কোনো অনুভূতি নেই স‍্যার।শুধু একটু সুখে-শান্তিতে বাঁচতে চাই বাকি জীবন।”

“তাহলে আমি আপনায় এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারি।”

“কীভাবে?”

স‍‍্যার তার পেছনে মুড়িয়ে রাখা হাত বাহির করে আকাশে কিছু গোলাপ ফুলের পাপড়ি উড়িয়ে দিল।
আমার শরীর ছুঁয়ে দিল সেটি। হঠাৎ এমন কাজে ভীষণ খুশি হলাম আমি।দু-হাতে ফুলের পাপড়ি ধরার চেষ্টা করলাম।
মুখে হাসি ফুটলো।

স‍্যার দীর্ঘ দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বলল,”ঠিক এভাবেই ছোট ছোট আনন্দ দেওয়ার মাধ্যমে আপনার জীবনের একটি বড়ো জায়গা দখল করে নেব আমি।
আপনার জীবনকে সুখ-শান্তিতে ভরপুর করে নিজেকে ধন‍্য মনে করবো।
খুব শিগ্রই সেসময় আসতে চলেছে।সকল দুঃখের অবসান ঘটিয়ে সুখেরা এসে আলোকিত করবে আপনার জীবন।”

চলবে।