আমিই সেই তন্নি পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
22

#আমিই_সেই_তন্নি
#Nadia_Afrin

শেষ পর্ব
গাড়ি গিয়ে থামে টিনের একচালা এক ছিমছাম বাড়ির সামনে।
জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাড়িটা এক নজর দেখে নেই
মা-বাবা আলিফ,অর্নিকে সঙ্গে নিয়ে নেমে আমাদের একটু পরে নামতে বলে ভেতরে চলে যান।

তারা যাওয়া মাত্র স‍্যার পাশ ফেরেন। আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বলেন,”নতুন পরিবেশ।নার্ভাস হবেননা।গ্রাম হলেও মানুষের মন মানসিকতা ভালো।
অস্বস্তিতে পড়েন এমন প্রশ্ন করবেনা।
আমি আছি সঙ্গে।ভরসা রাখুন।”

দুজনেই বাইরে এলাম।
স‍্যার হাঁটছে আগে আগে।পিছে আমি।মনের মাঝে অজানা আশঙ্কা।

গেইটে গিয়ে দাঁড়ালাম দুজনা।স‍্যারের মা ও দুই চাচি মিষ্টি ও শরবত নিয়ে এলো।
আমাদের খাইয়ে দিল।এরপর গেইট ছেড়ে দাঁড়িয়ে কোথায় যেন চলে গেল।
বাড়িটার দিকে তাকালাম।বেশ পরিপাটি,সুন্দর।
আমার পছন্দ হলো।মুখে হাসি ফুটলো।

পেছন থেকে স‍্যার বলল,”টিনের ঘর আমাদের।আপনার অসুবিধা হতে পারে।”

তাকে থামিয়ে দিয়ে সামনের দিকে একপা এগোলাম আমি।বললাম,”ওয়াও!কী সুন্দর ঘর!”

“আপনার পছন্দ হয়েছে?”

“খুব বেশিই পছন্দ হয়েছে।বরাবরই শখ ছিল এমন একটা টিনের ঘর দেব আমি।কিন্তু জায়গা স্বল্পতার জন্য পারিনি।”

স‍্যার স্বস্তি পায়।আমি পেছন ঘুরে বললাম,”কেন পছন্দ করি জানেন?”

“কেন?”

“কারণ টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ আমার ভীষণ প্রিয়।ছোটবেলায় রাতে বৃষ্টি হলে ঘুমোনো বাদ দিয়ে বৃষ্টির শব্দ শুনতাম।
ইস!ছোট বেলার মতো যদি আজও শুনতে পেতাম!”

স‍্যার সামান্য হেসে বলেন,”আপনার পছন্দও ঠিক আমার মায়েরই মতন।তারও টিনের ঘর পছন্দ।
আমাদের আরেকটি পাকা বাড়ি আছে কিন্তু। সৌখিনতা ও সুবিধার সব ব‍্যবস্থা আছে সেখানে।চাকরি পাওয়ার আগে আমরা সেখানেই থাকতাম।আমি জব পেয়ে চলে গেলে মা-বাবাও থাকেনি আর বাড়িটিতে।গ্রামে চলে এসেছে।
শেষ সময় তারা সবার সঙ্গে কাঁটাতে চায়।এখানে পুরো বংশ আমাদের।বাড়িটাও অনেক পুরোনো।
বলেছিলাম ভেঙে ইট-সিমেন্টে গেঁথে দেই।তারা রাজি হয়নি।টিনের এই ঘরটাতেই নাকি তারা শান্তি পায়।”

স‍্যারের ছোট বোন ও ভাইয়েরা এসে ঘিরে ধরে আমাদের।ঘর সাজিয়েছে ওরা।টাকা চায়।
স‍্যারের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক চলল কিছুক্ষণ।শেষে তিনি টাকা দিলেন দেখলাম।আমি মাথা নত করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে।
এবার সবাই এসে আমায় ধরে টাকার জন্য।স‍্যার বলেন,”আবার উনার থেকে নিচ্ছিস কেন?আমিতো দিলাম।”

“বিয়ে না হতেই বউয়ের প্রতি এতো টান ভাইয়া?আজ তোমার কোনো কথা নেই।ভাবিকেও দিতে হবে টাকা।আমরা শুনেছি,ভাবি বড়ো বড়ো জায়গায় কাজ করে।নামডাক আছে বেশ।
সুতরাং টাকা আমাদের দিতেই হবে।”

মুচকি হেসে বললাম,”ঠিক আছে।কতো টাকা চাই তোমাদের?”

ওরা ভেবে বলল,”ভাই যেহেতু পাঁচহাজার দিয়েছে,তো আপনি আমাদের কমই দিন।তিনহাজার টাকা দিন।”

তখনই অর্নি মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলল,”কম কেন নেবে?আমার মায়ের থেকে আরো ডাবল নাও।আমার মায়ের অনেক টাকা।”

বললাম,”পাজি মেয়ে!ওদের শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে!”

“হ‍্যা।আজ আমি ওদের দলে। তাড়াতাড়ি টাকা দাও আম্মু।”

দিলাম টাকা।
ওরা টাকা নিয়ে চলে যায়।সঙ্গে আমার মেয়েও।
সবার সঙ্গে আনন্দ করছে আমার মেয়ে।আজ ও ভীষণ খুশি।বহু বছর পর মেয়ের মুখে এমন প্রাণখোলা হাসি দেখতে পেলাম।

মা আমাদের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিলেন।
এরপর আমাদেরকে আমাদের ঘরে নিয়ে গেলেন।
দুজনের হাত এক করে দিয়ে বললেন,”সারা জীবন একে-ওপরের সঙ্গে থেকো তোমরা।ভালো থেকো।সুখে থেকো।”

তিনি চলে যেতেই তটিনী এলো ঘরে।
আমায় নিয়ে একটু আড়ালে এসে হাতে একটা বাক্স ধরিয়ে দিয়ে বলল,”যেটা আনতে বলেছিলেন আছে এখানে।
আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা আপা।
নতুন জীবন সুখের হোক।
আসছি আমি।”

তটিনী চলে যায়।
স‍্যার উঠে দরজা বন্ধ করে।আমি সেখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে।পা দিয়ে শানের মেঝে খুটছি।
অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।
স‍্যার এগিয়ে এলেন।আমায় পেছন ঘুরে দাঁড় করালেন।সেখানে বিশাল এক আয়না দাঁড় করানো।
পকেট থেকে একটা চেইন বের করলেন।সুন্দর একটা লকেট সঙ্গে।চারপাশে ডিজাইন করে দুজনের নামের প্রথম অক্ষর লেখা।
নিজ হাতে পড়িয়ে দিলেন তা।
বলল,”এটা আমাদের ভালোবাসার প্রথম স্মৃতি।
যা আপনায় প্রতি মূহুর্তে আমার কথা স্বরণ করে দেবে।”

চেইন পড়ানো শেষ করে আমার কপালে চুমু খেলেন তিনি।
মৃদু কেঁপে উঠি আমি।
সরে এসে বিছানায় বসি।ছোট্ট বাক্সটি বের করি।তাতে একটি সুন্দর আংটি রয়েছে।এটি আমি স‍্যারের জন্য নিয়েছি।
কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছিনা।পরিস্থিতি বুঝে স‍্যারই এগিয়ে এলেন।আমার সামনে বসে হাত এগিয়ে দিলেন।কাঁপা হাতে তাকে আংটি পড়িয়ে দিলাম।
স‍্যার বললেন,”চুমু দেবেন না হাতে?এটা রুলস।জানেন না?”

আমি লজ্জায় ঘাড় নত করলাম।
তিনি বললেন,”বেশ!দিতে হবেনা আপনাকে।”

পকেট থেকে তিনিও একটা আংটি বাহির করে।আমার হাতে পড়িয়ে দেয়।দিয়ে চুমু দেয় হাতে।আমি কুকড়ে উঠি।একটা গোলাপ আনেন তিনি।কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলেন,”এই হলো আপনার তিন নম্বর গিফট।তিন কবুলে আপনাকে আপন করেছি।এবার তিনটা গিফট দিয়ে নতুন জীবন স্বরণীয় করে রাখলাম।”

আমি হাসলাম।
তিনি আমার চোখের দিকে চেয়ে রইলেন।হাত দুটো তার বুকের বা পাশে রেখে বললেন,”আপনি আমার বুকের এই স্থানে বসবাস করছেন তন্নি।
আপনাকে আমি বড্ড ভালোবাসি।”

“আজ সেই দিন।আপনাকে নিজের মনের কথা বলার সময় আজ।
আর অপেক্ষা করাবোনা আপনায়।
আপনি নামক মানুষটাকে আমি মন দিয়েছি।
আপনায় ভালোবেসে আমি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি।আপনি আমার ভীষণ প্রিয় একজন স‍‍্যার।”

দুজনেই হাসলাম।
আজ আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই।আছে শুধু এক ভালোবাসার বন্ধর।আমরা একে-ওপরকে ভালোবাসি।নিজেদের ধোয়াসার অতীত ভুলে এক হতে চাই আমরা।
দুটি দুঃখ এক হয়ে আজ সুখের রাজপ্রাসাদ গড়বে।

স‍্যার এগিয়ে এলেন।আলতো হাতে আমার বাহু স্পর্শ করলেন।তার হাত কাপছে তরতর করে।খুশিতে এই কাপুনি।
আমায় বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলেন তিনি।
দুজনেই চুপ আমরা।একে-অপরকে গভীর ভাবে উপলব্দি করতে চাইছি।
হঠাৎ ঝুমঝুম শব্দ হলো তীব্র ভাবে।
ছ‍্যাৎ করে উঠে দুজনা তাকালাম।
বৃষ্টি হচ্ছে।প্রচুর বৃষ্টি।টিনের চালে আমার প্রিয় শব্দটি ভেসে আসছে।
স‍্যার বললেন,” বিধাতা আপনার ইচ্ছে পূরণ করেছে তন্নি।বৃষ্টি দিয়ে আপনার নতুন জীবনে স্বাগত জানিয়েছে।”

আমি প্রচন্ড খুশি হলাম।
চোখ বুজে অনুভব করলাম শব্দটি।হঠাৎ স‍্যার আমায় কোলে নিলেন।
ঘরের পেছনের দরজা খুলে বাহির হলেন।
আমি প্রচন্ড অবাক।
পেছনে সুন্দর একটা প্রাচীরঘেরা বাগান।
ভেজা মাটির ওপর নামিয়ে দিলেন।

“আজ এই রাত,এই বৃষ্টি,এই মূহুর্ত শুধুই আপনার ও আমার।”

হাটু গেড়ে বসলেন তিনি।
আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,”আপনি কী হবেন আমার জীবনের সঙ্গী?
শুধু বিবাহের বন্ধনে নয়,মনের বন্ধনে চাই আপনাকে।”

তার হাত ধরে ওঠালাম।
জড়িয়ে ধরে বলি,”আমি আপনার সুখ-দুঃখ,আনন্দ-কষ্টের সবটার সঙ্গী হলাম।”

তিনি আমায় আগলে নেয় গভীর বন্ধনে।
মনের আনন্দে বৃষ্টির প্রতিটি পরশ গায়ে মাখি।
এক হয় দুটি মনের দুটি অস্তিত্ব।ভালোবেসে একে-অপরে পূর্ণতা বয়ে আনি।দুজন-দুজনাতে মিশে একাকার হয়ে যায়।
সাক্ষী রয় একটি নিস্তব্ধ রাত।

পরদিন ঘুম ভেঙে নিজেকে স‍্যারের বুকের মাঝে আবিষ্কার করি।এলোমেলো আমিকে গুছিয়ে উঠে দাঁড়াই।তিনি এখনো ঘুমন্ত।তার মুখপানে তাকিয়ে লজ্জামিশ্রিত হাসি আমি।
এই আমি এক নতুন আমি।নতুন রুপে সাজবো।
ফ্রেশ হয়ে ভেজা চুল মুছছিলাম।
স‍্যার এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন আমায়।
ঘাড়ে নাক ঘসতে ঘসতে বলেন,”এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেছেন?
আমায় কেন ডাকেন নি?”

“বড্ড মায়া হলো ঘুমন্ত আপনিকে ডাকতে।এবার উঠেই যখন গেছেন,তো ফ্রেশ হয়ে নিন।”

তিনি আমায় তার নিজের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।টেনেটুনে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে আমি তৈরি হয়ে নিলাম।
এমন সময় কেউ এসে ডাকে আমায়।
দরজা খুলতেই খাবার নিয়ে প্রবেশ করে দুটি মেয়ে।
সঙ্গে আলিফ অর্নিকে পাঠিয়ে দেয়।চারজনের খাবার একসঙ্গে দেওয়া আছে।বাচ্চাদের পাশে বসিয়ে খাইয়ে দেই নিজ হাতে।আলিফ দু-তিনবার খেয়ে চলে যায় নিচে।ওর নাকি কোন বন্ধু আসবে আজ।তাকেই আনতে যায় ও।
অর্নিকে খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দেই।মেয়ের মন খারাপ। তাড়াহুড়োয় নতুন ড্রেস আনেনি।আজ পড়বে কী?
মুখ ভার করে বিছানায় বসে।
মুচকি হেসে নিজের ব‍্যাগ থেকে ওর জন্য দুটো জামা বের করে দিলাম।
খুশিতে ওর চোখ ঝলমল করে ওঠে।
আমায় জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বলে,”ইউ আর দ‍্যা বেষ্ট আম্মু।”

জামা নিয়ে সে দৌড়ে চলে যায়।স‍্যার বেড়িয়ে আসে মাথা মুছতে মুছতে।
“খাওয়া শেষ আপনাদের?বাচ্চাদের খাওয়া এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল?ঠিক মতো খাইয়েছেন তো ওদের?”

বললাম,”আপনার চিন্তা করতে হবেনা।ওরা খেয়েই বেড়িয়েছে।আপনি আর আমি বাদ আছি।বসে পড়ুন।আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে।”

স‍্যার বসেন।নিজে না খেয়ে আমায় খাইয়ে দেয় বারবার।কখনো আধখাওয়া খাবার খায়।
খুনসুটিতে খাওয়ার পর্ব শেষ হয়।
স‍্যারের দুজন বোন আমায় সাজিয়ে দেয় সুন্দর করে।স্টেজ করা হয়েছে ছোট-খাটো করে।দুজনা গিয়ে সেখানে বসি। অতিথিরা আসতে শুরু করেছে।শহর থেকে আমার লোকেরাও চলে আসে।এসেই শুরু ছবি তোলা,নাচ-গান,আনন্দ।
আমি দেখছি আর হাসছি।আমার অর্নিতো নাচ শিখেছে আগে থেকেই।কাল রাতে নাকি নাচ প্র‍্যাকটিস করেছে।আজ তা পরিবেশন করছে।সবাই ভীষণ বাহবা দিচ্ছে।আমার খুশি লাগছে খুব।গণিত ম‍্যাম সঙ্গে করে ফটোগ্রাফার এনেছে।
তবে আমাদের ছবি তুলছে কম,নিজে উঠছে বেশি।
ছেলে গান বাজাচ্ছে বন্ধুকে নিয়ে।
সব মিলিয়ে সুন্দর একটা আনন্দময় পরিবেশ।আমার সন্তান,আমার পরিচিত জনেরা,প্রিয় মানুষেরা সকলে একত্রে আনন্দ করছে।
পাশেই আমার ভালোবাসার মানুষটি।এরচেয়ে খুশির আর কী হতে পারে!

এমন সময় হঠাৎ গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো কেউ।উৎসুক সকলে তাকায় সেদিকে।
ধীর পায়ে ভেতরে আসে আকাশ।আলিফ গান বন্ধ করে।থেমে যায় সকল আনন্দ।
আমার দৃষ্টি স্থির।বুকে ধড়ফড় করছে।ঘামছি আমি।স‍্যার আমার হাতে হাত রাখেন।
উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবীর হাতা গোটান।
চারপাশে ফিসফিস শুরু হয়েছে।আকাশের এমন উপস্থিতি কারোই কাম‍্য ছিল না।
সে আমার অব্দি পৌঁছানোর আগেই সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আলিফ ও অর্নি।
তার পেছনে আশিক।
আলিফ অর্নি ধীর স্বরে বলে,”এখানে কোন সাহসে এসেছো তুমি?ভেবো না এখনো আমরা তোমার পক্ষে।তোমার কথা শুনে মাকে কষ্ট দেবো এটা ভুলেও ভেবোনা।সেই দিন শেষ।আমরা মানুষ চিনতে শিখে গেছি।তোমার মতো দুশ্চরিত্র মানুষের সঙ্গ নিয়ে নিজেদের আর ছোট করবোনা।
তুমি আমার বাবা,পরিচয় দিতে ঘৃণা হয় আমাদের।”

আশিক বলে,”ভাই বলে তোমায় ছাড় দেব না কিন্তু।সুতরাং আমার বোনের সুখেতে কোনো ঝামেলা করোনা।
আমি সৎ পথে এসেছি।তুমিও ভালো হয়ে যাও।
চলে যাও এখান থেকে।”

অদ্ভুত বিষয়!
ওরা এতোগুলো কথা বলল।আকাশ একটা ‘টু’ শব্দ ও করলোনা।
স‍্যার এগিয়ে গেলেন।কিছু বলার আগেই আকাশ স‍্যারের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,”আমাকে একটা বার তন্নির সঙ্গে কথা বলতে দেবেন স‍্যার?
কথা দিচ্ছি কোনো অশান্তি আমি করবোনা।শুধু কিছু কথা বলবো।বলেই চলে যাবো।একটু দয়া করুন স‍্যার।”

স‍্যার একটু ভেবে সরে দাঁড়ায়।আকাশ এগিয়ে আসে আমার দিকে।আমি মাথা নিচু করে বসে।মনে মানহানির ভয়।
স‍্যার আমার পাশে দাঁড়ায়।
আকাশ আমার নিকট একটি গিফট এগিয়ে দিয়ে বলে,”এতে একটা ফুল আছে তন্নি।ফুলের মতোই পবিত্র,কোমল ছিলে তুমি।তাই তোমাকে ফুলটাই দিলাম উপহার হিসেবে।
ভাবছো হয়ত আমি আজ এতো শান্ত কেন।ঝামেলা কেন করছিনা।
আসলে অশান্তি,ঝামেলা, অনৈতিক কাজ করে করে আমি আজ বড্ড ক্লান্ত।এসব করে কী পেলাম?
না তোমাকে,না ছেলে-মেয়েকে।
দিনশেষে সত‍্যের জয় হলো।তোমার জয় হলো।
তাই আর নয় রেশারেশি।এবার আমি চুপ হতে চাই।নোংরা এই মুখটা দিয়ে আর আবর্জনা ছড়াতে চাইনা।
তোমায় ঠকালাম,সব কেড়ে নিলাম,তুমি আমায় ত‍্যাগ করলে,লড়াই করলে তবুও তোমার মর্ম বুঝিনি আমি।
আজ উপলব্দি করছি তুমি কী ছিলে আমার জীবনে।অতীত মনে পড়ছে।সেই তুমি-আমি,আমার সম্মান,আমার আধিপত্য,সুখ- সাচ্ছন্দ‍্য সবই মনে পড়ছে।
সব হারিয়েছি।সব শেষ। এ জীবনে হয়ত আর ফিরে পাবোনা কিছুই।বাকিটা সময় অন‍্যের দাসত্ব করে অথবা ভিক্ষা করে খেতে হবে হয়ত।
তুমি নামক মেয়েটার মনের আনাচে-কানাচেও আমি আর নেই।তুমি এখন সম্পূর্ণটাই স‍্যারের।
ভালোই হয়েছে।একজন সত্যিকার ভালোবাসার মানুষ পেয়েছো।আমি বুক ভরা দুঃখ নিয়েই খুশি হয়েছি।
তোমার আর তোমার স্বামীর মাঝে কাঁটা হতে এই আকাশ কিন্তু আর কখনো আসবেনা।
সন্তান তোমার।কষ্ট করে তুমি তাদের মানুষ করেছো।আমার অধিকার নেই তাদের নিজের দাবি করার।
সব তোমায় দিয়ে গেলাম তন্নি।
আমায় তুমি তোমার ভালোটুকু থেকে একটু দিও।যাতে আমিও একটু ভালো হতে পারি।
তোমার দাম্পত্য জীবন সুখের হোক।
আজ তুমি দেখিয়ে দিলে তন্নি সব পারে।সুখি হতে পারে।
তুমি তন্নি কখনো হার মানার মেয়ে নও।
আমি আসি।বিদায় নিল তোমার জীবনের অভিশাপ।”

আকাশ ধীরে ধীরে পিছিয়ে যায়।
আমার চোখে পানি।জানিনা খুশিতে নাকি দুঃখে কাঁদছি।
আজ বহু বছর পর এই আকাশের প্রতি আমার করুণা হচ্ছে।মায়া নয়,দয়া হচ্ছে।

ও চলে যায়।আলিফ অর্নি এগিয়ে আসে।আমার হাতটা স‍্যারের হাতে দিয়ে বলে,”অতীত ভুলে যাও আম্মু।আমাদের নিয়ে ভালো থাকো।আমরা তোমার ভবিষ্যৎ।স‍্যার তোমার সবকিছু।”

মুচকি হাসলাম।বললাম,”গান কেন বন্ধ?নাচ কেন থেমে?”

আমার কথায় আবারো সবাই হইহই করে ওঠে।নাচ,গান শুরু হয়।
স‍্যার আটকে থাকা শ্বাস ত‍্যাগ করে বলেন,”বাঁচালেন তন্নি।আমি ভেবেছিলাম আপনায় হারিয়ে ফেললাম।”

বললাম,”ওতো সহজে আপনার মুক্তি নেই স‍্যার।এই তন্নি যখন ঘাড়ে একবার চেপেছে তো আর নামছেনা।”

স‍্যার হাসলেন।আমার পাশে বসলেন।

আমার বিয়ে উপলক্ষ্যে সবাই খুবই আনন্দ করেছে।সঙ্গে আমরাও।
একসঙ্গে খেয়েছি আমরা।গ্রাম ঘুরে দেখেছি।আনন্দ করেছি।
আমার ছেলে-মেয়েকে স‍্যার নিজের সন্তানের মতো দেখেন।আমার চেয়েও সে ই বেশি খোঁজখবর রাখেন।
আমি পেয়েছি আমার সেই সুখের জীবন।যা আমি চেয়েছি এতোকাল।
ভীষণ ভাগ‍্যবতী আমি স‍্যারকে পেয়ে।
একসময়কার অবহেলিত,নির্যাতিত তন্নি যে কারো মাথার তাজ হবে ভাবিনি।এতোটা সম্মান স‍্যার ও তার বাড়ির লোকেরা আমায় দিয়েছে,তা অবিশ্বাস্য।
এভাবেই চলুক আমার জীবন।সুখে,আনন্দে,খুশিতে।

____

সাত বছর পরের কথা,,,,,,

শিশিরভেজা এক কনকনে শিতের সকালে গায়ে মোটা চাদর মুড়ি দিয়ে আমি।
চারপাশে কুয়াশায় আবৃত।শিতে মুখ খোলার জো নেই।
তবে আমার ভালো লাগছে এই শিতের মাঝে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ সকাল অনুভব করতে।

কুয়াশার ভেতর দিয়ে আমার নিকট এগিয়ে আসে কেউ।কোলে তার একটি মেয়ে।
আমি একটু হাসি।স‍্যার এসে থামে আমার সামনে।
কোলে থাকা মেয়েটি ‘আম্মু’ বলে চেচিয়ে আমার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে।

এটা হলো আমার ছোট্ট ইতি।
বিয়ের মাস না পেরোতেই আলিফ অর্নির ঘ‍্যানঘ‍্যানি ও মা-বাবার অনুরোধে ওকে নিয়েছিলাম।যদিও স‍্যার এ বিষয়ে কিছু বলেননি।আমার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছিল সবটা।
ইতিকে জন্ম ঠিকই আমি দিয়েছি,তবে ওর সব দায়িত্ব ওর ভাই-বোনের।আলিফ অর্নির ভীষণ আদরের ছোট্ট ইতি।ওদের জন্য ইতিকে একটু বকা দেওয়ারও জো নেই।অর্নি এখন কলেজে পড়ে।যুবতী বয়স তার।বিয়ে আসে নানান জায়গা থেকে।তবে আমার ও স‍্যারের একই কথা।বিয়েই জীবনের সব নয়।ও পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াক।পরিচয় গড়ে তুলুক।অন‍্যের ওপর ভর করে থাকতে যেন না হয়।
বিয়ে জীবনে হবেই।আমি যে ভুল করেছি,মেয়েকে তা করতে দেইনি।বোঝাই সবসময়।অর্নি এখন আমাদের সঙ্গেই থাকে।কলেজ,টিউশন,কোচিং বাদে যতোটা সময় পায়,বোনকে খাইয়ে দেওয়া,সঙ্গে নিয়ে ঘুমোতে যাওয়ায় কাঁটিয়ে দেয়।পিচ্চিটাকে নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই।বোনই সব করে দেয়।
অর্নি হলো ইতির সবচেয়ে কাছের।দু-বোনে মিলে খেতে যায়,ঘুরতে যায়।
আলিফ পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছে।ভালো চাকরির মোটা অংকের বেতন।
ইতির সব দায়িত্ব ওর ভাই ই নিয়েছে।এক পয়সাও খরচ করতে হয়না আমার।
ছেলে আমার বড্ড পাগল।নিজের বিয়ের ঠিক নেই,বোনদের বিয়ের জন্য টাকা জমাচ্ছে।কতো বলছি বিয়ে করেনে।বয়স হয়েছে।আমরা একটু বউমার আদর যত্ন নেই।ছেলে কথা কানেতেই নেয়না।
মেয়েদুটোর মাথা ব‍‍্যাথা বেশি ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে।কদিন দু-বোনে মিলে কোথায় কোথায় যেন পাত্রী দেখতে গেল।
তিনজন যখন এক হয় এরা,বাড়ি আমার মাছের হাট বানিয়ে দেয়।চিৎকার, হইচই করে বেড়ায়।
ইতির গল্পে ওর ভাই সুপারম‍্যান।বোন সিন্ড্রেলা।আর আমি দুষ্টু রাণী।কারণ তিন মাথা এক হয়ে খাওয়া-ঘুম ভুলে শুধু মজাই করে বেড়ায় দেখে আমি এসে বকি।ব‍‍্যাগরা দেই।তাই আমি হয়েছি দুষ্টু রাণী।
ইতির একটা জিনিস বলতে দেরি নেই,ওর ভাই-বোন তা এনে হাজির।পারলে আকাশের তারা এনে দেয়।
লোকে যদি বলে ওরা সৎ ভাই-বোন,ওরা তাতে পাত্তা দেয়না।ইতি ওসব বোঝেনা।ওর কাছে ভাই-বোন দুটোই ওর নিজের।
একটা সময় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিলাম।ভেবেছি ওরা হয়ত স্বার্থপর হবে।কিন্তু ওরা তা হয়নি।মায়ের আদর্শের মান রেখেছে।সম্মান করতে শিখেছে।মানুষকে আপন করতে শিখেছে।
বাচ্চাদের নিয়ে গর্ভ হয় আমার।

এবার একটু আমার বিষয়ে বলি।
আমি তন্নি আছি বেশ।চিন্তা নেই,ভাবনা নেই।ফুরফুরে মেজাজ।কাজের চাপ কমিয়ে দিয়েছি।বয়স বেড়েছে কিনা!কবে না জানি ঐপাড়ে পৌঁছি।গেলেও সমস্যা নেই।আমার জীবনে কোনো অপূর্ণতা নেই।যা চেয়েছি,তার চেয়ে ডাবল পেয়েছি।
বড়োদুটোর তাও একটা পথে দিতে পরেছি।ছোটটার কোনো গতি হলে বাঁচি।অবশ‍্য চিন্তা নেই আমার।ওর মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো আমরা ছাড়াও ওর ভাই-বোন আছে।
আমার জীবন এতো রঙিন স‍্যারের জন্য।তার অবদান অপরিসিম।তাকে আমি সারাজীবন ভালোবাসতে চাই।পাশে পেতে চাই।সে শুধু একজন ভালো স্বামী নয়।একজন ভালো পিতাও।বিয়ের পর আলিফ-অর্নির সব দায়িত্ব নিজে নিয়েছে।নিজের সন্তানের মতো ওদের আগলে রেখেছে।তাইতো ওরা বাবা বলতে তাকেই মানে।
আমায় স‍্যার ভীষণ ভালোবেসেছেন।সম্মান দিয়েছেন।খেয়াল রেখেছেন।
সব হারিয়ে তাকে পেয়েছি আমি।এক অমূল্য রতন।
এই আমি তন্নি!
যে শেষ থেকে শুরু করে শূন্য থেকে পূর্ণ হয়েছে।আমার মনোবল,সাহস ও শক্তি আমার সকল সুখের মূল।
আমি ভালো আছি আমার জীবন,কাজ ও সংসার নিয়ে।আমার থেকে শিক্ষা নিন।সাহস সঞ্চয় করুন।ও এগিয়ে যান।আপনিও পারবেন। পারতে আপনাকে হবেই।

বিদায় নিচ্ছি আমি তন্নি।
ভালো থাকবেন।

পরিশিষ্ট: সেদিনের পর থেকে আকাশকে আর দেখা যায়নি।জানিনা সে জীবিত নাকি মৃত।যদি জীবিত থাকে,তো ভালো যেন থাকে।এই আমার কামনা

(বইয়ের প্রচার কাঁটছাট করলে তার বিরুদ্ধে স্টেপ নেওয়া হবে।কপি করলেও বইয়ের প্রচার সহ করতে হবে।অন‍্যথায় তার শাস্তি হবে।)

(তন্নির আসল কাহিনী জানতে #বড়োজা বইটি ৩০% ছাড়ে মাত্র ৩০৮ টাকায় কিনতে পারেন।
বইটিতে রয়েছে চরম বাস্তবতা।বর্তমান সামাজিক জীবনের প্রতিচ্ছবি হলো বইটি।
হাজারো রোমান্টিক বইয়ের ভিরে বইটি তাই সংগ্রহে রাখুন খুবই কম মূল্যে।
বইটি পড়ুন,এবং ব‍্যাক্তিজীবনে শিক্ষা নিন।
পরিবার নিয়ে উপভোগ করুন।
অর্ডার করতে নক করুন রোমান্টিক বইবাড়ি বুকশপ BoiBari Book Shop বা পছন্দের যে কোনো বুকশপে।)

(তন্নিকে মিস করলে এমন ধাঁচের আরো দুটি গল্প পড়তে পারেন।
লিংক,,,,https://link.boitoi.com.bd/hmWh

অন‍্যটি,,,https://link.boitoi.com.bd/ndUL

একটু অন‍্যরকম আরো দুটি গল্পের লিংক,,,https://link.boitoi.com.bd/k9mh

ও https://link.boitoi.com.bd/76pk)

সম্পূর্ণ গল্পটি কেমন লাগলো মতামত জানাবেন।
আরো ধামাকাদার নতুন আরো একটি গল্প আসতে চলেছে।যা পাঠকের মন জয় করবে বলে আশাবাদী।
পেজে খুব দ্রুতই নতুন গল্প দেব ভাইয়া ও আপুরা।আপনারা আমার পাশে থাকবেন।দোয়া করবেন।
আপনাদের জন্যও দোয়া ও ভালোবাসা রইলো।
💜💜💜💜💜💜