১৫ বছর বয়সী মা পর্ব-২+৩

0
24

#১৫_বছর_বয়সী_মা (০২)
#সোফিয়া_সাফা

“মা তোমার মেয়েকে নিয়ে যাওতো নইলে আমি কিন্তু ওর মাথার সব চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো। আমার সাথে মশকরা করা”

ঊর্মিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহানাজ বেগম ঊর্মিলাকে থামিয়ে দেয়,
“একদম চুপ যা এখান থেকে”

শাহানাজ বেগমের ধমক খেয়ে ঊর্মিলা হাসতে হাসতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, শাহানাজ বেগম দরজা পর্যন্ত এসে ফের আলভীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“চেহারার এই অবস্থা নিয়ে নিচে আসিস না। আমি তো আর ঊর্মিলার মতো করে বাকি সবাইকে ধমক দিয়ে চুপ করাতে পারবোনা। ভালো করে মুখ ধুয়ে তারপর রুম থেকে বের হোস”

শাহানাজ বেগম রুম থেকে বের হতেই আলভী দ্রুতপায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলো তারপর সময় নষ্ট না করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়াতেই তার চোখজোড়া কপালে উঠে গেলো। তার ডান গালে মেহেন্দির রঙ লেগে আছে, উজ্জ্বল ফর্সা চেহারায় লাল রঙ একদম ফুটে রয়েছে, আলভী একহাতে নিজের গাল স্পর্শ করে নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলো,
“আমার ডান গালে মেহেন্দি লাগলো কিভাবে? তার মানে যেই মেয়েটা রাতে এই রুমে ছিলো তার হাতে মেহেন্দি ছিলো? আমি কি করেছি মেয়েটার সাথে?”

ভাবতেই আলভীর গলা শুকিয়ে এলো,
“আমি কি করে একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কিছু করতে পারি? ওয়েট রিফাত গেলো কোথায়? আমার মনে আছে ওর দেওয়া ড্রিংকস টা খাওয়ার পরেই আমার মাথা ঘোরাচ্ছিলো, তারপর থেকেই আমার আর কিচ্ছু মনে পরছেনা। ওহ গড, ও আমার বন্ধু হয়ে আমার সাথে এরকম টা করতে পারলো?”

আলভী ঘুরে এসে প্রথমে বেডশিট তুলে নিলো, তারপর লাগেজ থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
,
আসমা বানু ঘুম থেকে উঠে পাশে অলিকে না দেখতে পেয়ে পুরো রুমে চোখ বুলালেন কিন্তু অলি রুমে নেই, অন্যপাশে ফিরে নিজের স্বামীকে খুজলেন কিন্তু তাকেও পেলেন না। আসমা বানু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে গেলেন, আজকে সে এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে? আসমা বানু দ্রুত বিছানা ত্যাগ করলেন।

অলির শরীর ভালো নেই, সারা শরীর ব্যথায় জর্জরিত, অলি ড্রইংরুমের এককোনায় থাকা চেয়ারের উপর বসে ছিলো তখনই তার খালাতো বোন ইশা ঊর্মিলাকে নিয়ে অলির দিকে এগিয়ে গেলো, ইশা হচ্ছে তিশার বোন আর ঊর্মিলা হচ্ছে ইশা আর তিশার ফুপাতো বোন। যার মানে আলভী তার মামাতো বোন তিশার বিয়ে উপলক্ষে মামার বাড়িতে এসেছে। ইশা অলির গোমড়া ফ্যাকাশে মুখটা দেখে একটু বিচলিত হলো, অলি মেয়েটা সব সময়ই হাসিখুশি থাকে একস্থানে এভাবে চুপচাপ বসে থাকার মতো মেয়েই না। ইশার চাহনি দেখে অলি নিজের গায়ে প্যাচানো ওড়নাটা আরেকটু জড়িয়ে নিলো,
“কিরে অলি তুই এভাবে চুপচাপ বসে আছিস কেনো? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?”

অলি জিভ দিয়ে নিজের ক্ষতবিক্ষত ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে বললো,
“এমনি আপু, ভালো লাগছেনা কিছু সেই জন্যই বসে আছি”

ঊর্মিলা অলির ঠোঁটের ক্ষতগুলো লক্ষ্য করে বললো,
“অলি তোমার ঠোঁটে কি হয়েছে?”

ঊর্মিলার কথা শুনে ইশা অলির ঠোঁটের দিকে তাকাতেই অলি নিজের ঠোঁট আড়াল করে ফেলে, ইশা চিন্তিত কন্ঠে বলে,
“কি হয়েছে দেখি”

অলি এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে,
“আমি ওয়াশরুমে থাকা কলের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম তাই কেটে গেছে, তুমি চিন্তা কোরোনা আপু”

ইশা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে তার চাচাতো বোন সামিরা তাকে ডাক দেয়,
“তোরা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস? তোদেরকে তিশার গায়ে হলুদের গহনা বানানোর জন্য ফুল আনতে পাঠিয়েছিলাম”

ইশা মিনমিনিয়ে বলল,
“স্যরি আপু আমরা যাচ্ছি”

ইশা চট করেই অলির হাত ধরল,
“চল অলি তুইও আয়”

অলি না বলতে চাইলেও পারলোনা তাদের সাথে বাগানে চলে গেলো।
,
পুরো ১ ঘন্টা ধরে শাওয়ার নেওয়ার পর আলভী ওয়াশরুম থেকে বের হলো, হাতে থাকা কাপড়গুলো নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে মেলে দিলো, তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা ভালো করে পরখ করে দেখলো মেহেন্দির দাগগুলো এখন সামান্যই অবশিষ্ট আছে, আলভী হতাশ হলো সে ১ ঘন্টা যাবত এটা তোলারই চেষ্টা করে গেছে। নিজের চেহারার অবস্থা দেখে আলভীর খুবই খারাপ লাগছে, নিজের ঠোঁটদুটো পর্যন্ত সঠিক কন্ডিশনে নেই।
“আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা, এতোটা অসহায় জীবনেও লাগেনি, আমি কি করবো? আমি যে আমার হানি’বি কে ভালোবাসি। আমি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে যেখানে কল্পনাও করতে পারছিনা সেখানে আমি কি করে একটা মেয়ের সাথে int!mate হলাম? এই জীবনে যদি হানি’বিকে না পাই তাহলে এই জীবনটাই রাখবোনা, তার আগে ওই রিফাতকে কু’চি কু’চি করে কে’টে কু’ত্তাদের খাওয়াবো”

আলভী নিজের পরণের গ্রে রঙের শার্টটার বাটন গুলো লক করে শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফ্লোড করলো ফোনটা পকেটে নিয়ে রিফাতকে খোজার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ড্রইংরুমে আসতেই শাহানাজ বেগম ছেলের দিকে এগিয়ে গেলেন,
“এভি ব্রেকফাস্ট করে নে বাবা”

আলভী মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“রিফাত কোথায় মা?”

“ও তোকে বলে যায়নি?”

আলভী ভ্রু কুচকে তাকালো,
“কি বলে যাবে?”

শাহানাজ বেগম ডাইনিং রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন,
“ও তো রাত দেড়টা নাগাতই শহরে ফিরে গেছে, বললো ওর নাকি কি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেছে, সেই জন্যই তো ছেলেটা ওভাবে তড়িঘড়ি করে চলে গেলো”

মায়ের কথা শুনে আলভী প্রচন্ড পরিমানে রেগে গেলো, সে রেগেমেগে সামনে তাকাতেই অলি, ইশা আর ঊর্মিলাকে দেখতে পেলো। মূহুর্তেই তার দৃষ্টি আটকে গেলো গাঢ় সবুজ রঙের টপস স্কার্ট পরিহিতা মেয়ে অলির দিকে, অলির কানে একটা ডেইজি ফুল গোজা, অলি আলভীকে দেখেনি সেতো ইশার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত, কিন্তু যখনই অলি আর আলভীর দৃষ্টি মিলিত হলো তখনই অলির হাত থেকে ফুলের ঝুড়িটা নিচে পড়ে গেলো। অলি না চাইতেও কাপতে শুরু করলো, ইশা বলে উঠলো
“এটা তুই কি করলি অলি, ফুলগুলো ফেলে দিলি?”

অলি মুখে কিছু না বলে ইশার পেছনে লুকাতে লাগলো। অলির এহেন কর্মকান্ডে ইশা, ঊর্মিলা আর আলভী ৩ জনই অবাক হয়ে গেলো, ইশা অলির হাত টেনে ধরে অলিকে সামনে এনে বললো,
“অলি ভয় পাচ্ছিস কেনো, কালকেই না এভি ভাইয়ার সাথে আপু পরিচয় করিয়ে দিলো?”

ঊর্মিলা হাসতে হাসতেই বললো,
“আমি সিওর যে অলি তারপরেও ভাইয়াকে দেখেই ভয় পাচ্ছে”

ঊর্মিলার কথা শুনে আলভী চমকে তাকালো,
“আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে দেখে ভয় পাবে আশ্চর্য”

ঊর্মিলা হাসির গতি বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ভাইয়া তুই মুখটাকে এরকম করে রাখিস যে যে কেউই তোকে দেখে ভয় পেয়ে যাবে, একটু হাসতেও তো পারিস নাকি? শুধু শুধু মেয়েটাকে ভয় দেখাচ্ছিস কেনো?”

আলভী এবার অলির দিকে এগিয়ে গেলো, ইশার উদ্দেশ্যে বলল,
“দেখি সর তো”

ইশা সরতে চাইলে অলি ইশার পরণের ওড়না টেনে ধরে, অলির রিয়েকশন দেখে আলভী এবার পুরোপুরি ভাবে সিওর হলো যে অলি তাকে দেখেই ভয় পাচ্ছে, ভয়ে মেয়েটার চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে সেই সাথে চোখদুটোতেও অশ্রুকণা জমেছে, আলভী অসহায় চোখে অলির দিকে তাকালো। আলভী অলিকে ভালোবাসে, অলির চোখে থাকা তার প্রতি এই ভয়টা আলভী মেনে নিতে পারছেনা।
“অলি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো,,,”

আলভী পুরো কথা শেষ করার আগেই অলি তাকে পাশ কাটিয়ে সিড়িবেয়ে উপরে উঠতে লাগলো, আলভী অলির দিকে তাকাতেই দেখলো অলি নিজের পরণের স্কার্ট হাল্কা উঁচু করে সিড়িবেয়ে উপরে উঠছে তখনই আলভীর নজর অলির পায়ের উপর পড়লো, সে দেখলো অলির বাম পা ফাকা শুধু ডান পায়েই নূপুর আছে। আলভীর মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে এলো,
“শিট, আলভী তাসনীম মির্জা আই থিংক ইউ ফা’কড আপ”

এভাবে অলিকে চলে যেতে দেখে ইশাও অলির পিছু পিছু চলে যায়, অগত্যা ঊর্মিলাকে নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলো তুলতে হয়, আলভীর ভাবনার মাঝেই তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। আলভী ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেজ টা দেখামাত্রই তার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,
ম্যাসেজ- কিরে বন্ধু রাত কেমন কাটলো? আহহা ধন্যবাদ দিতে হবেনা। তো বল এখনো মেয়েটার প্রতি তোর ফিলিংস কাজ করছে তো? শোন ওর মতো থার্ড ক্লাস মেয়েরা একবার বেড পর্যন্তই ঠিক আছে, কিন্তু তুই তো সেটা মানতেই চাইছিলি না। কি বলেছিলি তুই – যে অলির দিকে কেউ তাকালে তুই নাকি তার চোখ তু’লে নিবি হাত বাড়ালে হাত কে’টে ফেলবি। তো এখন নিজের চোখ তো’ল আর হাত কা’ট। মেয়েদের দিকে না তাকিয়ে এতোদিন নিজেকে বেশ মহান মনে করেছিস, এখন নিজেই বুঝবি যে ওর মতো মেয়েরা আসলেই একবার ইউজ করার জিনিস।

ম্যাসেজ টা পড়েই আলভী সেই নম্বরে কল দিলো, কিন্তু নম্বরটা বন্ধ। আলভী রেগেমেগে ফোনটাই ছুড়ে মা’রলো, অলির বাবা লিয়াকত হোসাইন কাজের লোকের সাথে বাজারের ব্যাগগুলো রান্নাঘরে দিয়ে আসার উদ্দেশ্যে ড্রইংরুম পেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলেন তখনই আলভীর ছুড়ে মা’রা ফোনটা দূর্ঘটনা বশত ছিটকে গিয়ে লিয়াকত হোসাইনের মাথা বরাবর লাগলো,
“আহহ,”

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ১২০০+

#১৫_বছর_বয়সী_মা (০৩)
#সোফিয়া_সাফা

“আহহ,”

আলভী তো ভীষণ ঘাবড়ে গেলো। সে এতোটাই ঘাবড়ে গেছে যে নিজের জায়গা থেকে নড়তেই পারলোনা তার আগেই লিয়াকত হোসাইনের চিৎকার শুনে আশেপাশে থাকা সবাই ছুটে এলো, আসমা বানু রান্নাঘরে বসে বোনের সাথে মিলে সবাইকে ব্রেকফাস্ট এগিয়ে দিচ্ছিলেন স্বামীর চিৎকারে সেও ছুটে এলেন,
“কি হয়েছে তোমার?”

লিয়াকত হোসাইন মাথায় হাত দিয়ে নিচেই বসে পড়েছেন, উপস্থিত সবাই আলভীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, আলভী বেচারা ঘাবড়ে গিয়ে পুরোই ঘেমে গেছে। তিশার মা আমেনা খাতুন আলভীকে জিজ্ঞেস করলেন,
“আলভী বাবা, ভাইয়া ব্যাথা পেলেন কিভাবে?”

শাহানাজ বেগম একপ্রকার তেড়ে এসেই বললেন,
“ভাবী আপনি আমার ছেলেকে কেনো জিজ্ঞেস করছেন? এভি কি করে জানবে যে ওনার কি হয়েছে?”

“আপা আমি তো শুধু আলভী বাবা এখানে ছিলো সেই জন্যই ওকে জিজ্ঞেস করেছি”

ঊর্মিলা ফুলের ঝুড়িটা হাতে তুলে নিয়ে এগিয়ে এসে বললো,
“আমি বলছি, আসলে ভাইয়া সবসময়ের মতোই নিজের রাগ ফোনের উপর ঝাড়ার উদ্দেশ্যে ফোনটা ছুড়ে মা’রতেই সেটা আংকেলের মাথায় গিয়ে লেগেছে”

শাহানাজ বেগম ছুটে গিয়ে ঊর্মিলার কান টেনে ধরলেন,
“এই বেয়াদব মেয়ে, তোকে কথা বলতে কে বলেছে? কি না কি দেখেছে আসছে নিজের ভাইয়ার বিরুদ্ধেই উল্টো পাল্টা বলতে”

আলভী একটা হতাশার শ্বাস ফেলে নিজের এলোমেলো চুলগুলোতে স্লাইড করতে করতেই মাথা নিচু করে বলে উঠলো,
“আসলে ঊর্মিলা সত্যিই বলেছে আমি আসলে উনাকে দেখিনি, আমি সত্যিই দুঃখিত দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন”

ছেলেকে এভাবে ক্ষমা চাইতে দেখে শাহানাজ বেগম সহ বাকিরাও অবাক চোখে তাকায়, আলভী যে এভাবে ক্ষমা চাইতে পারে সেটা কারোরই জানা ছিলোনা। আলভী হচ্ছে বড়লোক বাবা মায়ের অতিরিক্ত আদরে বিগড়ে যাওয়া একমাত্র ছেলে সন্তান, যেই ছেলেটা নিজের ভুল কোনোদিন স্বীকারই করেনা সেই ছেলেটা আজকে সবার সামনে এভাবে ক্ষমা চাইলো, শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে ছেলের কপালে হাত রেখে তাপমাত্রা চেক করতে লাগলেন। আলভী বিরক্তিস্বরে বললো,
“মা আমি ঠিক আছি, সবার সামনে এরকম কোরোনা”

আলভী মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে লিয়াকত হোসাইনের সামনে গিয়ে দাড়ালো, ইতোমধ্যে অলিও সেখানে উপস্থিত হয়েছে, আলভী একবার অলির দিকে তাকাতেই অলির রাগী চেহারা দেখে থমকে গেলো। আলভীকে তাকাতে দেখে অলি ইশার পেছনে লুকিয়ে পরলো, আলভী ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
“ইশা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা ফাস্ট এইড নিয়ে আয়”

ইশা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো, ইশা চলে যেতেই অলি মায়ের গা ঘেঁষে বাবার পাশে গিয়ে দাড়ালো, ইশা ফাস্ট এইড আনলে আলভী সেটা নেওয়ার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতেই অলি ছো মেরে ইশার হাত থেকে বক্সটা নিয়ে নিলো। ইশা আর আলভী অবাক চোখে অলির দিকে তাকায়, বাকিরা কেউ বিষয়টা লক্ষ্য করেনি। অলি নিজের কাপাকাপা হাতে বাবার ক্ষত স্থানে মেডিসিন লাগিয়ে একটা ওয়ান টাইম লাগিয়ে দিলো, অলির চোখদুটো ছলছল করছে, মেয়ের চোখে পানি দেখে লিয়াকত হোসাইন মুখে হাসি টেনে বললেন,
“আম্মু কাদছিস কেনো? বাবা ঠিক আছি তো, সামান্যই কেটেছে। সেরে যাবে”

অলি কয়েকটা বড়বড় শ্বাস নিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে আলভীর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“আপনি ইচ্ছা করেই আমার বাবাকে আঘাত করেছেন তাইনা?”

অলির কথাশুনে উপস্থিত সবাই অলির দিকে তাকালো, আলভীকে দেখলেই অলির ভয় করছে কিন্তু বাবার এই অবস্থা দেখে তার মাথাই ঠিক নেই তাছাড়া এতোগুলো লোকের সামনে আলভী অলিকে কিছুই বলতে পারবেনা সেই ভরসাতেই অলি কথাটা বলেই ফেলেছে, শাহানাজ বেগম তেড়ে এসে বললেন,
“এই মেয়ে, এই তুমি কি বললে হ্যাঁ? আমার ছেলে তোমার বাবাকে ইচ্ছা করে কেনো মা’রতে যাবে? তোমার বাবার সাথে ওর কিসের শত্রুতা? এইটুকু একটা মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে আমার ছেলের উপর দোষ চাপানোর”

অন্য সময় হলে অলি চুপ করে থাকতো কিন্তু বর্তমানে অলি চুপ করে থাকতে পারলোনা,
“আমাদের সাথে কিসের শত্রুতা সেটা আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করুন কারণ উনিই সেই প্রশ্নের উত্তর খুব ভালো করে দিতে পারবে।”

অলি আলভীর দিকে তাকালো অলির চোখজোড়া পানিতে টইটম্বুর,
“আর সত্যি বলতে আমিও জানতে চাই যে আমাদের সাথে ওনার কিসের শত্রুতা”

অলির উচ্চস্বরে বলা কথাগুলো শুনে শাহানাজ বেগম চোখ কটমট করে অলির দিকে তাকাতেই অলি মাথা নিচু করে ফেলে, শাহানাজ বেগম কিছু বলতে গেলে আলভী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“অলি দেখো তোমাদের সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই, আমি বললাম তো ভুল করেই এরকম টা হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছা করে করিনি বিশ্বাস করো, আমাকে ক্ষমা করে দেও”

শাহানাজ বেগম বললেন,
“এভি তুই কেনো বারবার ক্ষমা চাইছিস, ক্ষমা তো এই মেয়ের চাওয়া উচিৎ। কিভাবে বড়দের সামনে চটাং চটাং করে কথা বলছে। অবশ্য বাবা মায়ের শিক্ষা দানে ঘাটতি থাকলে এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক, এদের মতো মেয়েদের কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার আশা করাটা তো বিলাসিতা”

শাহানাজ বেগমের কথা শুনে অলির বাবা মা খুবই কষ্ট পেলেন, হ্যাঁ তারা তাদের মতো অতো বড়লোক নয়, তারা মধ্যবিত্ত। কিন্তু তাই বলে কি তাদের শিক্ষা নিয়ে কথা বলবে? অলি উত্তরে কিছু বলতে চাইলে আসমা বানু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অলির গালে চড় বসিয়ে দেয়, আকষ্মিক এরকম ঘটনা ঘটে যাওয়াতে উপস্থিত সবাই চমকে তাকালো, অলি গালে হাত দিয়ে কান্নাভরা চোখে মায়ের দিকে তাকায়, এতোক্ষণ ধরে আটকে রাখা চোখের পানি গুলো এবার বাধ ভেঙ্গে অলির গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো, তার মা শেষ কবে তার গায়ে হাত তুলেছিলো সেটা অলির মনে পড়লোনা, আসমা বানু অলির হাত চেপে ধরে বললো,
“অলি, আপার কাছে ক্ষমা চা”

লিয়াকত হোসাইন কিছু বলতে চাইলে আসমা বানু বাধা দিলো,
“আমার মেয়েকে ক্ষমা চাইতে শিখিয়েছি আমি, অলি ক্ষমা চা তোর আন্টির কাছে”

অলি দুহাতে চোখজোড়া মুছে নিলো,
“আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দিন”

বলেই মায়ের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে অলি দৌড়ে উপরে চলে গেলো। আলভীর চোখজোড়া রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে বহুক্ষণ আগেই। রাগে দুঃখে তার ইচ্ছা করছে ভাঙ্গচুর করতে কিন্তু সবার সামনে কিছু বলতেও পারছেনা। এখন সে কিছু বলতে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে।
,
অলি বিছানার সাথে মাথা ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে, কান্না করার কারণে তার ছোট্ট দেহটা ক্ষনে ক্ষনে কেপে উঠছে। লিয়াকত হোসাইন মেয়ের পাশে বসে মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন,
“কাদছিস কেনো আম্মু? বোকা মেয়ে আমার, তোর মা কি তোকে শাসন করতে পারবেনা? এতে এতো কান্নাকাটি করার কি আছে?”

অলি নিজের কান্না থামাতে পারছেনা, সে কিভাবে বোঝাবে সে শুধু মায়ের হাতে চড় খেয়েই কান্না করছেনা। এমন কিছু আছে যেটা সে সবাইকে বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা। আসমা বানু ধীরপায়ে এসে অলির পাশেই মেঝেতে বসে পড়লেন, মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদূরে গলায় বললেন,
“কান্না করছিস কেনো পাগলি? এতোটাও জোরে মা’রিনি আমি, মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছিস এতো নরম মনের হলে চলবেনা। শক্ত হতে শেখ, সবসময় মা বাবা থাকবোনা তোর সাথে।”

মায়ের কথা শুনে অলি কান্নার মাঝেই মাকে জড়িয়ে ধরলো,
“দেখি এদিকে তাকা”

আসমা বানু অলির মুখটা হাতের আজলায় নিয়ে যেই গালে অলিকে মে’রেছিলো সেই গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো,
“আদর করে দিয়েছি, ব্যথা কমে যাবে আর কান্না করেনা”

আসমা বানু অলির চোখের জল মুছে দিলো, তখনই তার নজর অলির ঠোঁটের উপরে পড়ে, অলির গোলাপি ঠোঁটের মাঝে লালচে দাগগুলো দেখে আসমা বানু চমকে গেলেন,
“তোর ঠোঁটে কি হয়েছে? আমি তো তোকে এতোটাও জোরে মা’রিনি”

অলি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো,
“আসলে মা সকালে ফ্রেশ হওয়ার সময় ওয়াশরুমের কলের সাথে ধাক্কা লেগেছিলো, তখনই এরকমটা হয়েছে”

আসমা বানু বিশ্বাস করে নিলেন, অলিকে অবিশ্বাস করার মতো কিছুই নেই।
,
আলভী একদম চুপচাপ নিজের রুমে বসে আছে,
“এটাই হবার ছিলো, যাকে প্রথম দেখায় এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি। তার চোখে আমার জন্য ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই নেই, অবশ্য তাতে ওর কোনো দোষ নেই। ভেবেছিলাম ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আর এক মূহুর্তও অপেক্ষা করা যাবেনা, রিফাত বললো এখন নাকি আমার ফিলিংস শেষ হয়ে যাবে কিন্তু শা’লা আমার ফিলিংস আরো বাড়িয়ে দিয়ে গেলো, ওকে একবার পেলে জিন্দা জ্বা’লিয়ে দেবো।”

আলভীর ভাবনার মাঝেই তার বড় মামার ছেলে সামির রুমে ঢুকলো,
“এভি ভাই এভাবে মেয়েদের মতো রুমে বসে আছো কেনো? ওহহো বুঝেছি তুমি নিজের রুমটাকে প্রোটেক্ট করছো তাইনা?”

আলভী সামিরের দিকে বিরক্তিকর চাহনি নিক্ষেপ করলো, গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“রুম প্রোটেক্ট করতে যাবো কেনো?”

সামির হাসলো,
“প্রোটেক্ট করতে হবেনা? আরে ভাইয়া বাড়িতে একমাত্র তুমিই আলাদা একটা রুম পেয়েছো, বাকিগুলো তো মহিলাদের দখলে। এমনকি আমাদের নিজেদের বাড়িতেই আমাদেরকে আশ্রিতাদের মতো ড্রইংরুমে থাকতে হচ্ছে। ভেবে দেখোতো ৩ তলা বাড়িতে কতোগুলো রুম, সেখানে আমাদের জায়গা হলো ড্রইংরুমে।”

সামিরের কথাগুলো আলভীর ভালো লাগছেনা এমনি তার মন মেজাজ ভালো নেই, তখনই তিশার আরো কয়েকজন ছেলে কাজিন আলভীর রুমে ঢুকলো, তারা সামিরকে ডেকে নিয়ে চলে গেলো। সামির আলভীকে তাদের সাথে যেতে বললে আলভী যেতে রাজি হয়না, বিকাল বেলা আলভী বিছানায় শুয়ে ছিলো তখনই তার ফোনটা বেজে ওঠে, আলভী ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখলো ফোনের স্ক্রিন ফেটে গেছে। অবশ্য তার ফোনের স্ক্রিন বেশিরভাগই এরকম থাকে। উনিশ থেকে বিশ হলেই সে ফোনটা ধরে আছাড় মা’রে। সকালের ঘটনার পর ঊর্মিলাই ফোনটা কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো কিছুক্ষণ আগেই আলভীকে দিয়ে গেছে, আলভী ফোনটা হাতে নিয়ে নম্বর না দেখেই কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো, ওপর পাশ থেকে তার বেস্টফ্রেন্ড দিহান বলে উঠলো,
“কিরে তোর সাথে যেতে পারিনি বলে এভাবে ভুলে যাবি? দ্যাটস নট ফেয়ার দোস্ত, কতোবার কল দিয়েছি কেটে দিচ্ছিলি কেনো এতো রাগ করার কি আছে বলতো আমি নেই তো কি হয়েছে রিফাত তো সাথেই আছে তাইনা?”

আলভী শুয়ে থাকা অবস্থাতেই বললো,
“আমার কোনো বন্ধুর দরকার নেই ফোন রাখ”

বলেই দিহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আলভী নিজেই কল কেটে দিলো, অন্যদিকে দিহান কিছুই বুঝলোনা, সেতো আলভীর মামা বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই বাসে উঠেছে, দিহান ব্যাপারটা বোঝার জন্য রিফাতকে কল দিলো কিন্তু রিফাতের ফোন সকাল থেকেই নট রিচেবল বলছে, দিহান একটা শ্বাস ফেলে বাসের সিটেই মাথা এলিয়ে দিয়ে মনে মনে বললো,
“কি জাদু করেছো ঊর্মিলা আমারে, সারাদিন শুধু তোমাকেই দেখতে ইচ্ছা করে, আ’ম কামিং রাগিনী”

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ১৪০০+