১৫ বছর বয়সী মা পর্ব-০৬

0
23

#১৫_বছর_বয়সী_মা (০৬)
#সোফিয়া_সাফা

“আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা, আপনার চেহারা দেখলেও আমার বমি আসে”

অলির কথা শুনে আলভী অলিকে রেলিঙের সাথে চেপে ধরলো,
“আমার ধৈর্য্যর পরীক্ষা নেবেনা বুঝলে, তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি যা ইচ্ছা তাই বলবে আর আমি তোমাকে কিছুই বলবোনা তাহলে তুমি ঠিকই ভেবেছো”

আলভীর কথা শুনে অলি থতমত খেয়ে গেলো। বলে কি এই লোকটা,
“চুপচাপ দাঁড়াও প্লিজ, আমি একটু পর চলে যাবো। তার আগে আমি তোমাকে কিছু কথা বলে যেতে চাই।”

অলি এবার স্থীর হয়ে দাড়ালো, তবে আলভীর দিকে তাকালো না। লোকটার চেহারার দিকে তাকানোর সাহস তার হয়ে উঠছেনা, আলভীকে এই মূহুর্তে খুবই ভয়ংকর দেখতে লাগছে। অলি স্থীর হয়ে দাড়াতেই আলভী কয়েকটা শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করে অলির দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অলির পরনে ব্ল্যাক কালারের লেহেঙ্গা যেটা মূলত বিয়ে উপলক্ষে অলির বাবা কিনে দিয়েছিলেন, কানে ম্যাচিং এয়ারিং আর হাতে চুড়ি ছাড়া আর কোনো অর্নামেন্টস নেই। অলির লম্বা কালো চুলগুলো একসাইডে বেনী করে সামনে এনে রাখা। অলি গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। আলভী বেশ অনেকক্ষণ অলির দিকে তাকিয়ে রইলো,
“আপনার তাকিয়ে থাকা হয়ে গেলে আমাকে যেতে দিন”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে অন্য দিকে তাকিয়ে নিজের চুলে স্লাইড করতে লাগলো, তার ভীষণ খারাপ লাগছে। মেয়েটা তাকে বুঝতে পারছেনা, একদমই বুঝতে পারছেনা যে ২৮ বছর বয়সী আলভী তাসনীম মির্জার জীবন ম’রণ এখন মেয়েটির হাতেই। আলভী কিভাবে বোঝাবে তার মনের অবস্থা? অলি আড়চোখে একবার আলভীর দিকে তাকালো, লোকটার চুলগুলো এলোমেলো ফর্সা চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। লোকটার উচ্চতা ৬ ফুটের নিচে হবেনা। গায়ে ব্ল্যাক কালারের স্যুট পড়া, হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি। আলভী অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আর অলি রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তারা পাশাপাশিই দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আলভী নিজের পকেট থেকে একটা কাগজের টুকরো বের করে অলির হাতে গুজে দিলে অলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আলভীর দিকে তাকায়,
“এটা আমার ফোন নম্বর, রেখে দেও”

আলভী বলার সাথে সাথে অলি কাগজটা ফেলে দিলো। আলভী বিরক্তি নিয়ে কাগজটা কুড়িয়ে নিলো। তারপর অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,
“প্লিজ এটা নিজের কাছে রাখো। যদি কোনোদিনও নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করো বা যদি কখনো আমাকে প্রয়োজনবোধ করো তাহলে আমাকে একবার কল দিও। আমি সব রকম পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থাকবো।”

আলভী অলির হাতে পুনরায় কাগজটা গুজে দিলো। অলি আবারও কাগজটা ফেলে দিতে গেলে আলভী গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“কাগজটা ফেলেই দেখো আমি এক্ষুনি গিয়ে সবাইকে বলে দেবো যে আমি তোমাকে ধ/র্ষ/ণ করেছি। আর আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই”

আলভীর কথা শুনে অলি কাগজটা ফেলতে পারলোনা। আলভী কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,
“আমাকে প্রমিস করো কাগজটা তুমি যত্ন করে নিজের কাছেই রাখবে, কখনোই ফেলে দেবেনা।”

অলি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
“আমি প্রমিস করবো কেনো? আপনি চলে গেলেই আমি এটা ফেলে দেবো”

“তুমি এক্ষুনি প্রমিস করবে আর নইলে আমি সবাইকে গিয়ে বলে দেবো”

অলি চমকে তাকালো, লোকটা তো ভারী ডেঞ্জারাস। ঠিকই তার দূর্বলতা টা বুঝে ফেলেছে।
“আপনি কি ভাবছেন এসব বললে আপনার সম্মান বেড়ে যাবে?”

“আমার তো সম্মানের প্রয়োজন নেই, সম্মানের প্রয়োজন তোমার আছে। আমার শুধু তোমাকেই প্রয়োজন। তুমি প্রমিস করবে কিনা বলো?”

অলি আলভীর কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করলো কিন্তু বুঝতে পারলোনা। কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করলো,
“আমাকে আপনার কেনো প্রয়োজন?”

আলভী বলতে গিয়েও বলতে পারলোনা, এসব বলেও কোনো লাভ নেই কারণ অলি তাকে ঘৃনা করে।
“জাস্ট প্রমিস করো”

অলি কপাল কুচকে আলভীর দিকে তাকিয়ে রইলো। আলভী প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
“ইউ হ্যাভ অনলি ৫ সেকেন্ডস, প্রমিস করো”

অলি উপায়ন্তর না পেয়ে প্রমিস করেই ফেললো,
“আচ্ছা প্রমিস করলাম কাগজটা আমি রেখে দেবো, এখন যেতে দিন আমাকে”

আলভী রাস্তা থেকে সরে দাড়াতেই অলি দরজা পর্যন্ত গিয়ে পুনরায় আলভীর দিকে তাকালো, আলভী একদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে, অলি দৃষ্টি ফিরিয়ে পা ফেলে নিচে নেমে গেলো। পেছনে রেখে গেলো আলভীকে, আলভী রেলিঙের পিঠ ঠেকিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে অলির নূপুরটা বের করলো। যদিও সে এটা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এনেছিলো। কিন্তু সে দিতে পারলোনা, এটা দিয়ে দিলে তার কাছে কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা। আলভী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিচে নেমে এলো তারপর নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিলো। আলভীর বাবা উসমান মির্জা আজকে সকালেই এসেছেন, ঊর্মিলা সারাটি ক্ষণ বাবার সাথে সাথেই থেকেছে আর মায়ের নামে নালিশ করেছে। দিহান সবার অগোচরে ঊর্মিলাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করে গেলেও কাজের কাজ কিচ্ছুটি হচ্ছেনা। বিকালের দিকেই মির্জা পরিবারের সবাই নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, আলভী অবশ্য আসার সময় অলিকে একবার দেখে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু মেয়েটা তার সামনেও পরেনি।
,
এদিকে আসমা বানু বোনের অবস্থা খারাপ দেখে আরও দুদিন থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অলির অবশ্য এখন আর থাকতে অসুবিধা নেই আলভী নামের শয়’তান ছেলেটা চলে গেছে।
অন্যদিকে উসমান মির্জা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা যে তারা আজকেই কেনো চলে এলো। তারা তো পূর্বে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে তিশার বৌভাত এটেন্ট করেই তারা বাড়িতে ফিরবে। আলভী কার ড্রাইভ করছে পাশের সিটে দিহান আর পেছনের সিটে ঊর্মিলা, উসমান মির্জা আর শাহানাজ বেগম বসেছেন,
“আমি বুঝতে পারছিনা যে হঠাৎ তুমি চলে এলে কেনো?”

উসমান মির্জার কথার প্রেক্ষিতে শাহানাজ বেগম কিছু মূহুর্ত চুপ থেকে বলে উঠলেন,
“সবকিছুর কারণ খুজতে নেই, আমি গতকালকেই চলে আসতাম শুধুমাত্র বিয়েটা সামনে রেখে আসতে পারিনি।”

ঊর্মিলা চুপচাপ বসে আছে, সেও জানে কোনো না কোনো গন্ডগোল হয়েছে সেই জন্যই তার মায়ের মুড ঠিক নেই। আলভী তো বিনাবাক্যে গাড়ি চালাচ্ছে, তার অলিকে রেখে আসতে মন চাইছিলো না কিন্তু এছাড়া কিছুই করার নেই। অলির কাছাকাছি থাকলে তার প্রতি আলভীর ফিলিংস গুলো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যেগুলো পরবর্তীতে আলভী নিজেই কন্ট্রোল করতে পারবেনা। তার চেয়ে অলিকে অলির মতো থাকতে দেওয়া বেটার অপশন ছিলো, আলভীও এই সুযোগে অলিকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবে।
,
তিশার বৌভাত শেষে অলিও নিজের ফ্যামিলির সাথে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসে। অলি আজকে বাড়িতে একাই আছে, তার মা আসমা বানু একটা পেস্ট্রি শপে কাজ করে আর বাবা লিয়াকত হোসাইন ব্যাংকে কাজ করে। অলিও এই সময়টাতে স্কুলেই থাকে, তবে এখন শীতকালীন ছুটি চলছে আগামীকালকেই এই ছুটি শেষ হয়ে যাবে। তারপর থেকে আবারও অলি স্কুল এটেন্ট করবে আর ভালো করে পড়াশোনা করে সামনের বছরের এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নেবে। সে আস্তে আস্তে সেইরাতের কথা ভুলে যেতে চাইছে কিন্তু পারছেনা। সে পারছেনা সেসব ভুলে যেতে, সে সেদিন রাতেই ঠিক করে নিয়েছিলো যে সে সবাইকে আলভীর ব্যাপারে সত্যিটা বলে দেবে। বলে দেবে যে আলভীকে উপরে উপরে ভালো মানুষের মতো দেখালেও সে একজন রে/পি/স্ট কিন্তু অলি সেসব বলতে পারেনি। এমনকি নিজের মায়ের সাথেও শেয়ার করতে পারেনি। কেনো পারেনি? কারণ আলভীর মা, সেই রাতে আলভীর মা-ই দরজা খুলেছিলো। অলি নিজের রুমে বসে ভাবতে লাগলো যে সেইরাতে কিভাবে শাহানাজ বেগম তাকে উল্টো পাল্টা কথা শুনিয়েছিলো,

অতীত,,,
সেদিন হঠাৎ করেই আড়াইটার দিকে শাহানাজ বেগমের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে পানি খাওয়ার জন্য উঠে দেখলো জগে পানি নেই। তার পাশেই ঊর্মিলা গভীর ঘুমে মগ্ন, শাহানাজ বেগম কিচেনে এসে পানি খেয়ে নিজের রুমে ফিরে আসার সময় ভাবলো আলভীকে একবার দেখে যাবে। ঊর্মিলা বলেছিলো আলভীর শরীর ভালো নেই বলে সে নাকি মেহেন্দি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই রুমে চলে গিয়েছিলো। এসব ভেবেই আলভীর রুমের দরজার সামনে আসতেই সে চমকে যায় কারণ আলভীর রুমের দরজা বাইরে থেকেই লক করা ছিলো। শাহানাজ বেগম কৌতুহল বশত দরজা খুলতেই অলিকে আলভীর রুমে দেখে বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। সে যতদূর জানে তার ছেলে এরকম নয়। তাহলে নিশ্চয়ই এই মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়েটাই তার ছেলেকে ফাসানোর চেষ্টা করছে, এসব ভেবেই শাহানাজ বেগম প্রথমে অলিকে বিশ্রী ভাষায় কতোগুলো গালি দিলেন তারপর অলির হাত ধরে টেনে অলিকে রুম থেকে বের করে সাইডে নিয়ে গিয়ে রাগীস্বরে জিজ্ঞেস করলেন।
“এই মেয়ে তুমি আমার ছেলের সাথে কি করেছো?”

অলি কাদতে লাগলো,
“আমি কিচ্ছুটি করিনি আন্টি, আপনার ছেলেই আমার সাথে জোরাজুরি করেছে।”

কথাটা শুনে শাহানাজ বেগম অলিকে থাপ্পড় দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাত উঠিয়েও নিজেকে সংযত করে নেয়। অলির উপর হাত তোলার অধিকার তার নেই, অলি তো চোখমুখ খিচে থাপ্পড় খাওয়ার অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু তেমন কিছু না হওয়ায় সে চোখ মেলে তাকায়। অলি সাহস জুগিয়ে বলে ওঠে,
“আপনার ছেলে একটা জানো’য়ার, আমার সাথে যা কিছু করেছে তার ফল ওনাকে ভোগ করতেই হবে”

ছেলেকে এভাবে বলাতে শাহানাজ বেগম চটে গেলেন,
“যতোবড় মুখ নয় ততোবড় কথা? কি করবে তুমি আমার ছেলের হ্যাঁ? চরিত্রহীনা কোথাকার, এই শোনো তোমার মতো মেয়েদেরকে আমার চেনা আছে যেই বড়লোকের ছেলে দেখেছো ওমনি গলায় ঝুলে যেতে চাইছো তাইনা? দুধের দাতঁ পরার আগেই ছেলেদেরকে ফাদে ফেলা শিখে গেছো দেখছি।”

“ছিহ আন্টি আপনার বিবেকে বাধছেনা নিজে একজন মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে এভাবে বলতে পারলেন?”

“হ্যাঁ পেরেছি, আমি আরও অনেক কিছুই করতে পারি। এই মেয়ে শুনে রাখো, আজকের এই ঘটনা এখানেই শেষ। যদি এটা নিয়ে কোনোপ্রকার বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করেছো তাহলে তার ফল ভালো হবেনা”

“তাই তাহলে তো আপনার ভয় পাওয়ার দরকারই নেই, আমি এক্ষুনি গিয়ে সবাইকে আপনার ছেলের কুকর্মের কথা বলে দেবো। তারপর আপনার ক্ষমতা দিয়ে সবকিছু সামলে নিয়েন”

কথাটা শুনে শাহানাজ বেগম চোখ কটমট করে অলির দিকে তাকালো, মেয়েটা কিসের তৈরি সেটাই সে বুঝতে পারছেনা। তবে এই মেয়েকে যেভাবেই হোক আটকাতেই হবে। নইলে তাদের মান সম্মান ধূলোয় মিশে যাবে,
“তুমি এসব কথা সবাইকে বললে তোমার বাপ মায়ের কি হবে ভেবে দেখেছো? নাকি তোমার বাপ মাও তোমার সাথে এই প্ল্যানে যুক্ত আছে? তারাই কি তোমাকে এসব করা শিখিয়েছে নাকি? অবশ্য তারা প্ল্যানে যুক্ত থাকলে তাদের কিছু হবারও কথা না।”

শাহানাজ বেগনের কথা শুনে অলি ২ পা পিছিয়ে গেলো। শাহানাজ বেগম আবারও বলে উঠলেন,
“শুনে রাখো মেয়ে, তোমার বাবা মা যদি ভেবে থাকে মেয়েকে দিয়ে এই সমস্ত করিয়ে আমার ছেলের গলায় তোমাকে ঝুলিয়ে দিতে পারবে তাহলে তারা ভুল ভেবেছে। আমার ছেলের পেছনে মেয়েদের লাইন লেগে থাকে বুঝলে? তোমার মতো ২টাকার মেয়ের পেছনে সময় নষ্ট করার মতো সময় ওর নেই।”

অলি শব্দ করে কেদে উঠলো,
“দয়া করে আমার বাবা মাকে এসবের ভেতরে আনবেন না, ওনারা এসব শুনলে আমাকে মে’রে ফেলে নিজেরাও ম’রে যাবে”

শাহানাজ বেগম হেসে উঠলেন,
“ভেবেই দেখো এই সমস্ত কথা জানাজানি করে নিজেদের ক’বর খুড়বে নাকি এই নাটক এখানেই শেষ করবে, ডিসিশন তোমার হাতে। যেটাই করোনা কেনো আমার ছেলের কিচ্ছু করতে পারবেনা।”

বলেই শাহানাজ বেগম নিজের রুমে চলে গেলেন। অলি সেখানে বসেই কাদতে লাগলো। মেয়ে হয়ে তার জন্ম নেওয়াটাই যেনো কাল হয়ে দাড়ালো আজকে। ছেলেদের জন্য এসব কোনো ব্যাপারই না, ২ দিন বাদেই সবাই ভুলে যাবে কিন্তু জানাজানি হয়ে গেলে তাকে এর বোঝা আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। সেই সাথে নিজের বাবা মাকে সে মে’রে ফেলতে পারবেনা।

বর্তমান,,,
দুপুরের দিকে অলির মা লাঞ্চ করতে এলে অলি তার মায়ের সাথে খাবার খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু অলি সেই রাতের পর থেকে ভালোভাবে ঘুমাতেও পারেনা। ঘুমাতে গেলেই তার আজেবাজে স্বপ্ন আসে, অলি একটা শ্বাস ফেলে বই নিয়ে পড়তে বসে।

কেটে যায় দেড় মাস,,,
সুবিশাল আলিশান বাংলোর মতো দেখতে ৩তলা বিশিষ্ট ভবনটি হচ্ছে মির্জা ভিলা। আলভী দোতলার নিজের রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্মোক করছে। আজকে রাত ১০ টার পর তাকে একজনের হার্ট সার্জারী করতে হবে। এটাই তার লাইফের প্রথম হার্ট সার্জারী। এর আগে ছোটোখাটো সার্জারী করা হলেও এটা ওপেন হার্ট সার্জারী, অবশ্য সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় কার্ডিওলজিস্ট আলভী তাসনীম মির্জা। সে তো এখনো দেড়মাস আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাতেই আটকে আছে। না! সে পারছেনা অলি নামের সেই বাচ্চা মেয়েটাকে ভুলতে, সেই চোখ সেই ঠোঁট সেই ঝাঝালো কন্ঠের অধিকারী মেয়েটিকে ভুলতে।
আলভীর ভাবনার মাঝেই কেউ একজন দরজায় নক করে, আলভী বিরক্তি নিয়ে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশটা ফেলে দেয়। রুমে এসে দরজা খুলে দিতেই একজন সুন্দরী নারী নতজানু অবস্থায় তার দিকে একটা কফির মগ এগিয়ে দেয়। আলভী ভ্রু কুচকে মেয়েটির দিকে তাকায় মেয়েটি হচ্ছে আলভীর একমাত্র ফুপুর একমাত্র মেয়ে। মেয়েটির নাম রূপসা, আলভী মেয়েটির দিকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে মুখের উপরেই দরজা লাগিয়ে দিলো। আলভীর এহেন ব্যবহারে মেয়েটির মন খারাপ হয়ে গেলো, তবে এটা নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতিদিনই সে সেজেগুজে আলভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে কিন্তু কোনোদিনও সফল হয়নি। ঊর্মিলা হলরুম পেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো রূপসাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়।
“রূপাপু তুমি এখানে কি করছো?”

রূপসা হঠাৎ ঊর্মিলার কন্ঠ শুনে প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরমূহুর্তেই মুখে হাসি টেনে বলে,
“আমি এভি ভাইয়ার জন্য কফি নিয়ে এসেছিলাম। মামনিই দিয়ে পাঠিয়েছিলো”

ঊর্মিলা ভ্রু কুচকে রূপসার দিকে তাকায়। রূপসার সাজগোছ দেখে সে অবাক হয়না, কারণ এটা নতুন কিছুই নয়। রূপসা তার ভাইকে পছন্দ করে এই ব্যাপারে ঊর্মিলা সিওর। একজন মেয়ে হওয়ার সুবাদে সে রূপসার চালচলন দেখে বহু আগেই ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে। ৬মাস ধরে রূপসা তার মা রুনা খাতুনের সাথে এই বাড়িতেই আছে। মূলত তাদের এখানে থাকার পেছনে কারণ আছে। ঊর্মিলার দাদুমনি ৬ মাস আগে বেশ অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন। তার ইচ্ছাতেই রুনা খাতুন মেয়েকে নিয়ে এখানে এসেছিলেন। তারপর আর দাদুমনি তাদেরকে যেতে দেয়নি। এমনিতে রূপসার বাবা বেশ ক্ষমতাশালী লোক, বছরের বেশিরভাগ সময়টাই সে ব্যবসার কাজে দেশের বাইরেই কাটান।
“তোমার আজকে আসতে এতো দেরি হলো কেনো ঊর্মি?”

ঊর্মিলা হাল্কা হেসে বললো,
“কলেজ শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতেই লেট হয়ে গেছে।”

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ১৯৫০+