১৫ বছর বয়সী মা পর্ব-০৮

0
22

#১৫_বছর_বয়সী_মা (০৮)
#সোফিয়া_সাফা (দ্যা গুড/ব্যাড নিউজ)

“চিন্তা নেই দাদুমনি ভাইয়া বিয়ে করবে তো কি হয়েছে আমি আছিনা? আমি তোমাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যাবো, একসাথে সিনেমা দেখতে যাবো আর সেখানে গিয়ে পপকর্ন খেতে খেতে রোমান্টিক সিনেমা দেখবো। তুমি কষ্ট পেওনা বুঝলে”

ইয়াদের কথা শুনে উপস্থিত সবাইও হেসে ওঠে। আলভীর চাচা ইয়ামিন মির্জা আলভীকে বসতে বললে আলভী চুপচাপ বসে পড়ে। আগে সে ব্যাপারটা বুঝবে তারপর ভেবেচিন্তে সবকিছু সামলে নেবে। সবার চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছে ঊর্মিলা, ইয়াদ আর আলভী বাদে বাকি সবাই সবকিছুর বিষয়ে আগে থেকেই অবগত আছে। ঊর্মিলা জানে যে আলভীর বিয়ে নিয়েই কথা বলা হবে কিন্তু পাত্রীর সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। উসমান মির্জা আর আর ইয়ামিন মির্জা কথা বলছিলো। বাকিরাও নিজেদের মতো কথা বলছে আলভী চুপচাপ ফোন চাপছে। তখনই রূপসা শাড়ি পরিহিত অবস্থায় একটা ট্রে নিয়ে সবার সামনে আসলো। তার পেছনে ২জন কাজের মহিলাও আছে। তাদের হাতে শরবত, চা আর নাস্তা। রূপসা সবকিছু টি টেবিলের উপরে রেখে এক এক করে সবাইকে দিতে লাগলো। একপর্যায়ে আলভীর দিকে একগ্লাস শরবত এগিয়ে দিলো,
“এটা নেও”

রূপসার কন্ঠ শুনে আলভী ভ্রু কুচকে রূপসার দিকে তাকায় তারপর সামনে এগিয়ে দেওয়া শরবতের দিকে তাকায়। আলভী কিছুই বুঝতে পারছেনা, সে রূপসার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে সেটা আবার টেবিলের উপরে রেখে দিলো। বোন হিসেবে রূপসাকে সে বেশ স্নেহ করে সেই হিসেবে বেশি একটা গায়ে মাখলো না। খাওয়া দাওয়া শেষে শাহানাজ বেগম বলে উঠলেন,
“রূপসাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে রুনা। আমরা আমাদের ছেলে এভির জন্য তোমার মেয়েকে চাইছি। তোমার মতামত কি?”

কথাটা শোনামাত্র আলভী অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকায়। তার যেনো এখনো বিশ্বাসই হচ্ছেনা। বারবার মনে হচ্ছে সে ভুল শুনেছে, আলভীর সাথে সাথে ঊর্মিলা আর ইয়াদও ভীষণ অবাক হয়ে গেলো। ইয়াদ তো একবার রূপসার দিকে তাকাচ্ছে আবার বাকিদের দিকে তাকাচ্ছে। তার আগেই কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু তার সন্দেহ যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে সেতো ভাবতেই পারেনি। রুনা খাতুন হাসিমুখে বললো,
“ভাবী এটা তো আমার মেয়ের সৌভাগ্য যে তোমার মতো শাশুড়ী আর এভি বাবার মতো স্বামী পাবে। আমাদের কোনো আপত্তি নেই”

আলভী একবার রূপসার দিকে তাকালো। রূপসা মাথা নিচু করে বসে আছে সেই সাথে লজ্জাও পাচ্ছে যার মানে রূপসা এই বিয়েতে রাজি আছে। উসমান মির্জা বললো,
“শুভ কাজে দেরি করতে নেই। তাহলে দিন তারিখ ঠিক করা যাক। কি বলো সবাই?”

সবাই সম্মতি জানালো। তখনই হঠাৎ করে আলভী বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো,
“এভি কোথায় যাচ্ছিস? এখানে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে তুই এভাবে উঠে গেলি কেনো?”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার এখানে থাকা না থাকা তো সমান মা। আমাকে কেনো ডেকে আনলে সেটাই তো বুঝতে পারছিনা”

নূরনাহার বলে উঠলো,
“কি বলছো বাবা? তোমার বিয়ে নিয়েই তো কথা হচ্ছে। তুমি না থাকলে কিভাবে হবে?”

“যেভাবে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেভাবেই হবে।”

কথাটা বলেই আলভী হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো। একেকজনের মনে একেক ভাবনা চলছে তখনই দাদুমনি বলে ওঠে,
“দাদুভাই হয়তো লজ্জা পেয়েছে, তোমরা একটা ভালো দিন দেখে যত তারাতাড়ি সম্ভব বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করো।”

দাদুমনির কথায় সম্মতি জানিয়ে বাকিরা দিন তারিখ ঠিক করতে লাগলো। শাহানাজ বেগম খানিকক্ষণ চুপ থেকে মনে মনেই বলে উঠলেন,
“যতো তারাতাড়ি সম্ভব বিয়েটা সম্পন্ন করতে হবে”

এদিকে আলভী রুমে এসে রাগে গজগজ করছে স্বভাবতই রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা সেটা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো। তার রুম সাউন্ড-প্রুফ হওয়ায় সেই আওয়াজ রুমের দেয়াল ভেদ করে বাইরে গেলোনা। আলভী খাটের উপরে থাকা বালিশও ছুড়ে ফেলে দিলো। তারপর ফোনটা ছুড়ে ফেলতে যাবে তার আগেই একটা কল আসে। আলভী নিজের চুল টেনে ধরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়, দেখে তার এসিস্ট্যান্ট লাবিব কল দিয়েছে। লাবিবের নম্বর দেখে আলভীর একটা কথা মনে পড়লো। কথাটা মনে পড়তেই সে কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো,
“হ্যালো স্যার”

আলভী বিছানার উপর বসলো,
“হুম বলো, কি বলবে?”

“স্যার ইন্ডিয়া থেকে সেই প্যাশেন্টটা আবারও কল দিয়েছে। তার নাকি আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগবেই, সে বলেছে আপনি যেতে না পারলে সে নিজেই বাংলাদেশে আসবে। আমি তাকে কি বলবো স্যার?”

আলভী একমূহুর্ত না ভেবেই বলে ওঠে,
“তাকে বলে দেও যে আমি আগামী কালকেই ইন্ডিয়াতে গিয়ে তার সাথে দেখে করবো”

কথাটা শুনে লাবিব একটু অবাক হলো। কারণ এর আগে আলভী দেশের বাইরে যাবেনা বলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে দিয়েছিলো।
“ওকে স্যার আমি তাকে বলে দিচ্ছি”

আলভী কল কেটে দিলো। তারপর কয়েকটা বড়বড় শ্বাস নিয়ে অনলাইনে কালকের জন্য ফ্লাইটের টিকেট বুক করে নিলো। সে যতো তারাতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে চাইছে।ড্রইংরুমে থাকা সবার মতামত নিয়ে ১২ দিন পরেই একটা ভালো দিন দেখে আলভী আর রূপসার বিয়ে ঠিক করা হলো। ঊর্মিলা খুশি হবে নাকি বেজার হবে সেটাই বুঝতে পারছেনা, তার ভাইয়ের মুখ দেখে মনে হলোনা যে সে খুশি হয়েছে। আরেকদিকে রূপসার মাঝে তার ভাবী হওয়ার মতো যোগ্যতা আছে। মেয়েটা ভীষণ ভালো পায় তাকে, সেই সাথে আলভীকেও হয়তো অনেক ভালোবাসে। কিন্তু তবু্ও ভাইয়ার কথা মনে করে ঊর্মিলা খুশি হতে পারছেনা।
সকাল ৯ টার দিকে শাহানাজ বেগম ছেলেকে ঘুম থেকে জাগাতে এসে দেখে রুমের অবস্থা খারাপ, চারদিকে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে সেসবের মাঝে শাহানাজ বেগম বেশি অবাক হলেন আলভীকে ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেডি হতে দেখে।
“তুই কোথাও যাচ্ছিস?”

আলভী ব্যাগের শেষ চেইনটা লাগিয়ে মায়ের দিকে তাকালো,
“হ্যাঁ মা আমি ৩-৪ দিনের জন্য ইন্ডিয়াতে যাচ্ছি। সেখানে একজন হার্টের প্যাশেন্ট আছে।”

“কই আমাকে তো আগে এই ব্যাপারে বলিসনি”

“আরে মা ৩-৪ দিনের ব্যাপার। তাছাড়া গতকালকেই প্লেনের টিকিট বুক করেছি। এটা প্রি প্ল্যান করা ছিলোনা। সেই জন্যই বলার সুযোগ পাইনি”

শাহানাজ বেগম কি বলবেন ভেবে পেলেন না। তবে আলভীর চেহারা দেখে তাকে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে, শাহানাজ বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে।
“১১ দিন পর তোর বিয়ে এভি। এই মূহুর্তে বাড়ি থেকে বের না হওয়াটাই ভালো। সেই জন্য আমি চাইনা তুই এই সময়ে দেশের বাইরে যাস। ডাক্তারের অভাব নেই, সেই প্যাশেন্টকে বল অন্য কাউকে দেখাতে”

আলভী স্বাভাবিক স্বরেই বললো,
“কাম অন মা, ডাক্তারের অভাব নেই সেটা সবাই-ই জানে। কিন্তু এটা আমার জন্য একটা ভালো সুযোগ হতে পারে। লোকটার অবস্থা বেশ ক্রিটিকাল, একবার ভেবে দেখো আমার ট্রিটমেন্টে যদি সে সুস্থ হয়ে যায় তাহলে সেটা আমার জন্য কতো ভালো হবে”

শাহানাজ বেগম তীক্ষ্ণ চোখে ছেলের দিকে তাকায় তবে আলভীর চেহারা অনূভুতিশূন্য। শাহানাজ বেগম বুঝতে পারছেনা যে ছেলের মনে ঠিক কি চলছে, তবে ভালো কাজে যাওয়ার সময় ছেলেকে আটকানো ঠিক হবেনা। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে,
“তুই কবে ফিরবি?”

“বললাম তো মা ৩-৪ দিনের ব্যাপার। তারপরেই ফিরে আসবো।”

“প্রমিস কর যে তুই ৩-৪ দিন পরেই ফিরে আসবি”

আলভী একটা শ্বাস ফেলে মনে মনেই বললো,
“আমি আর দেশেই ফিরবোনা। তাই আমি তোমাকে প্রমিস করতে পারবোনা মা”

আলভী মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“তুমি আমাকে সন্দেহ করছো মা? কিন্তু কেনো? আমি কি সন্দেহ করার মতো কিছু করেছি?”

“আমি সন্দেহ করছিনা এভি”

“তাহলে প্রমিস করতে কেনো বলছো? আমি একজায়গায় যাচ্ছি মা। নিঃশ্বাসের কোনো বিশ্বাস নেই, মৃ’ত্যু ঠিক কতোটা কাছে সেটা আমাদের অজানা। মূহুর্তের মধ্যেই অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। এতো এতো অনিশ্চয়তার মাঝে আমাকে তুমি প্রমিস করে যেতে বলছো যে আমি ৩-৪ দিন পর ফিরে আসবো। এটা কি ঠিক হচ্ছে?”

ছেলের কথাগুলো শুনে শাহানাজ বেগমের কলিজা কেপে উঠলো। সে ছেলের হাত জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
“তুই যাসনা বাবা”

“আরে মা বাচ্চামো করছো কেনো? দেখো যদি ভাগ্যে মৃ’ত্যু লেখা থাকে তাহলে সিন্দুকে বন্দি করে রাখলেও মৃ’ত্যু নিশ্চিত। মৃ’ত্যু এমন একটা জিনিস যেটা কেউ কোনোভাবেই এড়াতে পারবেনা।”

শাহানাজ বেগম ছেলের হাত শক্ত করে ধরে রাখলো। আলভী একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“এগারোটা বাজে আমার ফ্লাইট মা। তুমি এরকম করলে আমি কিভাবে যাবো বলো, তুমি কি চাও যে আমি এতো ভালো একটা সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলি?”

শাহানাজ বেগম আলভীর হাত ছেড়ে দাড়ালো। তারপর ছেলের কাধে হাত বুলিয়ে দিলো, আলভী লক্ষ্য করলো শাহানাজ বেগমের চোখের কোনে পানি জমেছে। আলভী বুঝতে পারলো মায়েরা বোধহয় এমনি হয়। তবে আলভীও এবার বেশ অভিমান করেছে মায়ের উপর, সারাজীবন মা যা বলেছে আলভী কখনো সেটা অমান্য করেনি। আর আজকে এতোবড় একটা ডিসিশন সে তাকে না জানিয়েই নিয়ে নিয়েছে। আলভী মনে মনে খুব আহত হয়েছে, সে জানে দেশে থাকলে যেকোনো উপায়ে শাহানাজ বেগম তার বিয়ে দিয়েই শান্ত হবে। সেইজন্যই আলভী এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের বাইরে গিয়ে সে একদম সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে।
“মা খুব ক্ষুধা লেগেছে, দেরি হয়ে গেলে ব্রেকফাস্ট করার সময়টাও পাবোনা। তুমি যাও গিয়ে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করতে বলো আমি নিচে আসছি।”

শাহানাজ বেগম নিজেকে সামলে নিচে আসলো তারপর একজন সার্ভেন্টকে ডেকে আলভীর রুম পরিষ্কার করতে পাঠালো আরেকজনকে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করতে বললো। শাহানাজ বেগম আলভীর রুমের অবস্থা দেখে মনে মনে বেশ চিন্তিত। যদিও আলভী মাঝে মাঝেই ঘরের জিনিসপত্র সব এলোমেলো করে রাখে। উনিশ থেকে বিশ হলেই সামনে যা পায় সেটাই ছুড়ে মা’রে এসব তার ব্যাড হ্যাবিড।
“ধুর কিসব ভাবছি আমি, আলভীর মন মেজাজ অনেক কারণেই খারাপ হতে পারে। আমার ছেলে সেরকম নয় যে আমার সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করবে।”

নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে শাহানাজ বেগম আলভীর জন্য খাবার বেড়ে দিলো। আলভী একদম রেডি হয়েই নিচে নামলো তারপর ব্রেকফাস্ট করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
,
৫দিন কেটে গেছে আলভী সেই যে গিয়েছে তারপর থেকে আর কারো সাথে কোনোপ্রকার যোগাযোগ রাখেনি। আদৌ সুস্থ আছে কিনা সেটাও সবার অজানা, ছেলের চিন্তায় চিন্তায় শাহানাজ বেগম অসুস্থপ্রায়। রূপসার চেহারার দিকেও তাকানো যায়না, মেয়েটার কতো স্বপ্ন ছিলো আলভীর বউ হবে কিন্তু সেই স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে। শাহানাজ বেগম ড্রইংরুমে বসে ছিলো তখনই নূরনাহার এসে বলে,
“দেখলে ভাবী, তখনই বলেছিলাম আগে বিয়ের বিষয়টা নিয়ে এভির সাথে কথা বলো। শুনলেনা আমার কথা ছেলেটা সেটা নিয়েই অভিমান করে এরকম নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো।”

নূরনাহারের কথায় শাহানাজ বেগম প্রতিক্রিয়া করলোনা। সে যে কেনো এরকমটা করেছে সেটা শুধু সে নিজেই জানে। তবে সে নিজের ছেলেকেই বুঝতে পারেনি, সে বুঝতে পারেনি যে আলভী ঠিক কি চায়। অবশ্য সে বোঝার চেষ্টাও করেনি। সে হয়তো একটু বেশিই তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে, তার ভাবনার মাঝেই কেউ একজন ডোরবেল বাজায়, একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিতেই একজন লোক শাহানাজ বেগমের খোঁজ করতে লাগলো। শাহানাজ বেগম এগিয়ে যেতেই লোকটা তার দিকে একটা চিঠি এগিয়ে দেয়,
“আপনার নামে চিঠি এসেছে”

শাহানাজ বেগম চিঠিটা নিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো। চিঠির উপর আলভীর নাম লেখা যার মানে আলভীই তাকে চিঠিটা পাঠিয়েছে, শাহানাজ বেগম দ্রুতহাতে চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলো।
~মা আশাকরি ভালো আছো। আমি কেমন আছি সেটা জানানোর জন্যই চিঠিটা লেখা। আমি খুব ভালো আছি, আমি জানিনা তুমি হঠাৎ করে কেনো আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে আর বিশ্বাস করো আমি জানতেও চাইনা। আমি কিচ্ছু জানতে চাইনা, সেই জন্যই যোগাযোগ বন্ধ রেখেছি। আমি জানি যোগাযোগ রাখলে তুমি ব্ল্যাকমেইল করে হলেও আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করতে। কিন্তু মা বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়৷ তাছাড়া রূপসাকে আমি সবসময় বোন মনে করেছি, সবশেষে এতোটুকুই বলবো যে আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। আমি খুব ভালোই থাকবো, নিজেদের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।

চিঠিটা পড়ার পর শাহানাজ বেগমের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। ছেলে যে এভাবে তার কথার অবাধ্য হবে সেটা সে কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি। এভি ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত কক্ষনো তার কথার অবাধ্য হয়নি,
“ভাবী তুমি চিন্তা কোরোনা তো। এভির মন ভালো হলে দেখবে ও ঠিকই বাড়িতে ফিরে আসবে।”

নূরনাহারের কথা শুনে শাহানাজ বেগম কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে যায়। রুনা খাতুন কিছুক্ষণ আগেই ড্রইংরুমে এসে বসেছিলো। আলভী যে এরকম কিছু করবে সেটা সবারই কল্পনাতীত ছিলো। রূপসা, ঊর্মিলা আর ইয়াদ এখন ভার্সিটিতে আছে। ঊর্মিলা এবার অনার্স ১ম বর্ষে পরীক্ষা দেবে। রূপসা আর ইয়াদ দুজনেই ৩য় বর্ষে পরীক্ষা দেবে।
,
অন্যদিকে অলি ক্লাস করছিলো তখনই তার ভীষণ শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকের সময় অলি হঠাৎ করে বসে থাকা অবস্থাতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অলির বান্ধবী শায়লা গিয়ে স্যার ম্যাডামকে ঘটনাটা জানালে অলিকে তারা স্কুলের ডক্টরের কাছে নিয়ে যায়। তারপর অলির বাবা মাকে কল করেও ঘটনাটা জানিয়ে দেয়। অলির বাবা মা স্কুলের ডক্টরের সামনে বসে আছে। অলির জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু শরীর প্রচন্ড পরিমানে খারাপ লাগছে,
“আপনারা ওকে একজন গাইনী ডক্টরের কাছে নিয়ে যান। সেখানে ওর কিছু টেস্ট করা প্রয়োজন, অবস্থা যেহেতু বেশিই খারাপ সেহেতু অপেক্ষা করাটা ঠিক হবেনা।”

ডক্টরের কথামতো আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন অলিকে একজন ভালো gynecologist ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো। সবার প্রথমেই তার ইউরিন টেস্ট আর ব্লাড টেস্ট করানো হলো। সেগুলোর রিপোর্ট দেখে ডক্টরের চেহারা গম্ভীর হয়ে গেলো। সে লিয়াকত হোসাইনের উদ্দেশ্যে বললো,
“আপনি ওনার বাবা হন?”

“জ্বী আমিই ওর বাবা”

“আপনি একটু বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন আমি অলির সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাই”

লিয়াকত হোসাইন মাথা নেড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো, অলি এবার কিছুটা ভয় পাচ্ছে এমনি ডক্টর দেখলেই তার রূহ কেপে ওঠে তার উপর আজকে ব্লাড টেস্টের জন্য তাকে ব্লাড দিতে হয়েছে। জীবনে সে অন্ধকার, ইঞ্জেকশন আর ডক্টর দেখলেই ভয় পায়, আজ একদিনে দুটোর সম্মুখীন হতে হয়েছে। আসমা বানুও বেশ ঘাবড়ে গেছে তার মেয়ের কি বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি সেসব ভেবেই সে দিশেহারা,
“ডক্টর আমার মেয়ের কি হয়েছে? বলুন না”

সামনে থাকা মহিলা ডক্টর পুনরায় রিপোর্টগুলো চেক করে একটা শ্বাস ফেলে অলিকে জিজ্ঞেস করলো,
“অলি আপনার লাস্ট পিরিয়ড কবে হয়েছিলো?”

অলি ভাবার চেষ্টা করলো কিন্তু সে ডেট মনে রাখেনা কখনো। তবে প্রায় দু আড়াইমাস আগেই তার লাস্ট পিরিয়ড হয়েছিলো। ব্যাপারটা মাথায় আসতেই তার হাত পা কাপতে শুরু করে ডক্টরের বলার আগেই সে বুঝে যায় তার সাথে কি হতে চলেছে। যদিও সে আর্টসের স্টুডেন্ট তবুও সে এই ব্যাপার সম্পর্কে খানিকটা জানে তবে এরকম কিছু হবে সেটা সে কল্পনাও করেনি। অলিকে চুপ করে থাকতে দেখে ডক্টর জিজ্ঞেস করে,
“অলির কি বিয়ে হয়েছে?”

প্রশ্নটা শুনে আসমা বানু এবার একটু নড়েচড়ে বসলো, সে যেই ভাবনাটা কখনো ভাবেনি সেই ভাবনাটাই তার মাথায় আসছে,
“না ডক্টর অলির বয়স তো দেওয়াই আছে। আপনার কি মনে হয় এতো তারাতাড়ি এখনকার দিনে মেয়েদের বিয়ে হয়?”

“অলি আপনার কি লাস্ট পিরিয়ড ডেট মনে নেই?”

অলি নাবোধক মাথা নাড়ায়, সেই সাথে সে ভীষণ ভয় পেয়ে মায়ের ওড়নার আচল খামছে ধরে। অলির পরনে এখনো স্কুল ড্রেস এরকম কিছু হবে জানলে অলি কখনোই এখানে আসতোনা। ডক্টর আসমা বানুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“অলির সাথে আমি একান্তে কিছু কথা বলতে চাই আপনিও যদি একটু বাইরে গিয়ে বসেন”

আসমা বানু কিছুটা আচ করতে পারছে কিন্তু এখনো সে সেই ভাবনাটা মাথায় আসতে দিচ্ছেনা। সেরকম কিছু কিভাবে হতে পারে? আসমা বানু উঠতে নিলে অলি তার ওড়না টেনে ধরে,
“ভয় পাসনা অলি উনি শুধু কথাই বলবে ইঞ্জেকশন বা ওষুধ খেতে বলবেনা”

অলি মায়ের আঁচল ছেড়ে দিলো, আসমা বানু এখানে না থাকাটাই ভালো হবে সেই হিসেবে অলি সাহস জুগিয়ে তাকে যেতে দেয়। আসমা বানু যেতেই ডক্টর অলির উদ্দেশ্যে বলে,
“অলি আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?”

অলি মাথা উঁচু করে ডক্টরের দিকে তাকায়। ইতোমধ্যেই তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে, চোখদুটো ছলছল করছে। তবুও সে কান্না আটকানোর যথাসম্ভব চেষ্টা করছে। অলি মাথা নাড়িয়ে না বলে,
“সত্যি করে বলুন।”

অলি এবার কেদেই ফেলে,
“না ডক্টর আমি সত্যি বলছি আমার তেমন কেউ নেই, আমার কি হয়েছে বলুন না”

“রিপোর্ট বলছে আপনি প্রেগন্যান্ট, আপনি মা হতে চলেছেন”

কথাটা শোনামাত্র অলির পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো যেনো। পুরো দুনিয়া কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো। অলি শব্দ করেই কেদে উঠলো,

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ২৩০০+