#১৫_বছর_বয়সী_মা (০৯)
#সোফিয়া_সাফা
“রিপোর্ট বলছে আপনি প্রেগন্যান্ট, আপনি মা হতে চলেছেন”
কথাটা শোনামাত্র অলির পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো যেনো। পুরো দুনিয়ায় কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো। অলি শব্দ করেই কেদে উঠলো,
“ডক্টর এসব আপনি কি বলছেন? আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে”
ডক্টর অলির দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেললো। অলির চেহারা দেখে তার মায়া হচ্ছে। কি মিষ্টি দেখতে মেয়েটা,
“অলি আপনি বলতে চাইছেন প্রেগন্যান্ট হওয়ার মতো তেমন কিছু আপনার সাথে হয়নি? আপনি তাহলে সিওর হওয়ার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করতেই পারেন”
অলির চিবুক বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সে কিভাবে তার বাবা মায়ের সামনে যাবে?
“ডক্টর প্লিজ আমার বাবা মাকে এসব বলবেন না, আমি বাচ্চাটা ফেলে দিতে চাই”
“সেটা সম্ভব নয় অলি, আপনি এডাল্ট নন। এবোরশন করা বেআইনী। তার উপর আপনি আনম্যারিড। আমার মনে হয় বিষয়টা আপনার বাবা মাকে জানানো উচিৎ, তারপর ওনারাও যদি এবোরশন করাতেই চায় তাহলে একটা উপায় আছে। যদি বাচ্চাটার বাবার বিরুদ্ধে রে/প কেইস করেন তাহলে কোর্ট থেকে এবোরশন করার পার্মিশন দিয়ে দেবে”
এতো এতো জটিল কথা অলি সহ্য করতে পারলোনা। প্রচন্ড মানসিক চাপ আর অসুস্থতাজনিত কারণে সে আবারও জ্ঞান হারালো। একজন নার্স এগিয়ে এসে অলিকে নিচে পড়ে যাওয়া থেকে বাচালো,
ডক্টর আরেকজন নার্সকে বললো,
“ওনার বাবা মাকে ডেকে আনুন”
আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন চিন্তিত মনে বাইরেই বসে ছিলো। তখনই নার্স তাদেরকে ডাক দিলো। তারা ডক্টরের কাছে যেতেই ডক্টর একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“ব্যাপারটা অনেক বেশিই সেন্সিটিভ, তবুও আপনাদের জানার অধিকার আছে”
আসমা বানু মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো। তার এবার কান্না পাচ্ছে। লিয়াকত হোসাইন স্বাভাবিক স্বরেই জিজ্ঞেস করলেন,
“বলুন কি হয়েছে আমার মেয়ের?”
“উনি প্রেগন্যান্ট”
কথাটা শোনামাত্র আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন ভীষণ অবাক হয়ে গেলেন সেই সাথে তাদের অনেক লজ্জাও করছে,
“আপনি সিওর ডক্টর, মানে আপনার ভুল হচ্ছেনা তো?”
ডক্টর নার্সের উদ্দেশ্যে বললো,
“ওনার আল্ট্রাসাউন্ড করার ব্যবস্থা করুন আমিও নিশ্চিত হতে চাইছি”
অলিকে অচেতন অবস্থাতেই বেডে শোয়ানো হলো। লিয়াকত হোসাইন বাইরে এসে দাড়ালেন। তার মধ্যে একই সাথে রাগ, চিন্তা, লজ্জা সবগুলো অনূভুতি কাজ করছে। আসমা বানুর চেহারা থমথম করছে। তেমন কিছু হলে মেয়েকে কে’টে টু’করো টু’করো করে ভাসিয়ে দেবে বলেই ভেবে রেখেছে। আল্ট্রাসাউন্ড করার সময়েই ডক্টর নিশ্চিন্ত হয় যে অলি প্রেগন্যান্ট,
“বেবির হার্টবিট ও এসে পরেছে। She is 10 weeks and 2 days pregnant মিসেস হোসাইন”
কথাটা শোনামাত্র আসমা বানু নিজেকে সামলে নিলো। হসপিটালে বসে সে সিনক্রিয়েট করবেনা। যা করার বাড়িতে গিয়েই করবে। অলির চোখে মুখে পানি ছিটানোর কিছুক্ষণ পর অলির জ্ঞান ফেরে। অলি শুধু কেদেই যাচ্ছে, আসমা বানু সমস্ত রিপোর্ট আর অলিকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। লিয়াকত হোসাইন কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে আসমা বানুর গম্ভীর মুখ দেখে কিছু বলার সাহস পায়না। অবশ্য সে বুঝেই গেছে যে ডক্টর ভুল বলেনি। বাড়িতে আসার পর অলি ভাবে তার মা বুঝি তাকে মা’রধর করবে কিন্তু না আসমা বানু স্বাভাবিক স্বরেই জিজ্ঞেস করলো,
“বাচ্চাটার বাপ কে?”
অলি চুপচাপ বসে রইলো তখনই আসমা বানু চিৎকার দিয়ে উঠলো,
“বলছিস না কেনো? কার পাপ পেটে ধরেছিস?”
আসমা বানুর চিৎকার শুনে অলি কেপে ওঠে, আসমা বানু উঠে এসে অলির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আরও মা’রতে যাবে তার আগেই লিয়াকত হোসাইন এসে তাকে আটকায়,
“তুই কি ভেবেছিস চুপচাপ থেকে লা*র সাথে পালিয়ে যাবি? জীবনেও না তার আগেই আমি তোকে কে’টে টু’করো টু’করো করে নদীতে ভাসিয়ে দেবো।”
অলি কাদতে লাগলো। কাদতে কাদতেই সে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। লিয়াকত হোসাইন মেয়ের জন্য চিন্তিত হয়ে পরলেন। আসমা বানু নিজের সেন্সেই নেই সেই জন্যই এভাবে বলে ফেলেছে কিন্তু অলি তো ভীষণ অভিমানী মেয়েটা যদি উল্টো পাল্টা কিছু করে বসে। তখন কি হবে? লিয়াকত হোসাইন অলির দরজার সামনে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলো,
“অলি বেরিয়ে আয় তোর মায়ের মাথা ঠিক নেই আমরা একসাথে বসে সমস্যার সমাধান করবো। তুই বেরিয়ে আয় আম্মু”
আসমা বানু কাদতে লাগলো। সেও এসে অলিকে ডাকতে লাগলো,
“অলি বেরিয়ে আয়। তোকে মা’রবো কা’টবো যা করার আমি করবো, আমি তোর মা বলছি তুই বেরিয়ে আয়”
অলি কাদতে কাদতেই সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়নার একপ্রান্ত বাধছে। সে ওড়নার আরেক প্রান্ত নিজের গলায় প্যাচাতেই তার মা বলে ওঠে,
“অলি তুই ম’রে যাবি কেনো বল? তোর যদি কোনো বয়ফ্রেন্ড থেকেও থাকে তাহলে তাকে আসতে বল। আমরা তার সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দেবো।”
লিয়াকত হোসাইন কাদতে কাদতেই বলে,
“আসমা তুমি চুপ করো, আমি জানি আমার মেয়ের তেমন কিছুই নেই। হয়তো এমন কিছু আছে যেটা মেয়েটা আমাদেরকে বলতে চেয়েও পারেনি, হয়তো কেউ আমাদের মেয়ের সাথে ফোর্সফুলি কিছু করেছে”
কথাটা শুনে আসমা বানু এক মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। এই সহজ ভাবনাটা তার মাথায় আগে আসেনি কেনো? সে কেনো অলিকে নিয়ে আজেবাজে চিন্তা করেছে? আসমা বানু এবার নিজের চোখদুটো মুছে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“অলি তুই যদি ম’রে যাস তার তো কিছুই যাবে আসবেনা। তোর সাথে সাথে আমরাও ম’রে যাবো। কিন্তু যেই শয়তান তোর এতোবড় সর্বনাশ করলো সে দিব্যি বেচে থাকবে। মৃত্যু তো তার প্রাপ্য। তুই তো নিষ্পাপ মা তুই কেনো ম’রে যাবি? তুই বেরিয়ে আয় পারলে সেই লোকটাকে মা’রবি নিজেকে নয়”
অলি শেষ মূহুর্তে এসে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললো, তার মা ঠিকই বলেছে। সে কেনো ম’রে যাবে সেতো কোনো ভুল করেনি। যার জন্য আজকে তাকে এইরকম পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে সে তার জীবন নরক করে তুলবে। একবার নয় বারবার তাকে মৃ’ত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করাবে। আর তার বাবা মা তো তাকে ভুল বোঝেনি সেইক্ষেত্রে তার নিজেকে শেষ করে দেওয়া ছাড়াও আরো রাস্তা আছে। অলি নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দিলো। অলিকে দেখে আসমা বানু তাকে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠলো। লিয়াকত হোসাইন নিজের চোখজোড়া মুছে জিজ্ঞেস করলেন,
“ছেলেটা কে অলি?”
“তিশা আপুর ফুপাতো ভাই আলভী তাসনীম মির্জা”
নামটা শুনে লিয়াকত হোসাইন আর আসমা বানু দুজনেই চমকে যায়। লিয়াকত হোসাইন বললো,
“সেদিন তো আমাদের শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে শাহানাজ বেগম অনেক কথা শুনিয়েছিলেন। সেই জন্যই বলে চোরের মায়ের বড় গলা”
আসমা বানু অলিকে ছেড়ে দাড়ালেন তারপর কিছুক্ষণ পর বলে উঠলেন,
“আমাদের এখন তাদের বাড়িতে যাওয়া উচিৎ”
লিয়াকত হোসাইন বললো,
“কি বলছো আমরা তাদের বাড়িতে কেনো যাবো? আমাদের তো পুলিশের কাছে যাওয়া উচিৎ। আমার মেয়ের সাথে এসব করে কি পার পেয়ে যাবে নাকি?”
আসমা বানু একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“ভুলে যেওনা ওনারা অনেক বিত্তবান সেই সাথে ছেলেদের ক্ষেত্রে এসব মা’মলা করলে তাদের মান সম্মানের কিছুই হয়না। অন্যদিকে এসব কথা ছড়াছড়ি হয়ে গেলে এই সমাজে আমাদের থাকাটাই মুশকিল হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে যে আমরা বেচে থাকতেই পারবোনা।”
কথাটা তেতো লাগলেও লিয়াকত হোসাইন জানে কথাটা সত্য,
“আচ্ছা কিন্তু এটা বলো যে সেখানে গিয়ে কি করবো?”
“আমরা অলির সাথে তাদের ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো”
কথাটা শুনে অলি ভীষণ চমকে যায়,
“মা এসব তুমি কি বলছো উনি একজন রে/পিস্ট, যে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে তাকেই আমি কেনো বিয়ে করবো?”
“তাহলে তুই কি করতে চাস বল”
“মা আমি ওনার নামে কেইস করতে চাই, ওনাকে জেলের ভাত খাওয়াতে চাই।”
“বাচ্চাটা কি করবি?”
অলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্বাভাবিক স্বরেই বলে ওঠে,
“কি করবো আবার এবোরশন করে ফেলবো”
কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তার পর অলির কথামতোই লিয়াকত হোসাইন আর আসমা বানু অলিকে নিয়ে পুলিশের কাছে আসে। পুলিশ সবকিছু শুনে বলে,
“দেখুন এভাবে তো আর কারো বিরুদ্ধে হুট করেই রে’প কেইস করা যায়না, তাছাড়া ঘটনার ২ মাস হয়ে গেছে। আপনারা এতোদিন বসে ছিলেন কেনো?”
আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন কিছুটা আনকম্ফোর্টেবল ফিল করছে। আশেপাশের পুলিশ গার্ডসরা তাদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। অলি স্বাভাবিক স্বরেই বলে,
“আমি ভয়ে তখন কাউকেই কিছু বলতে পারিনি, তাছাড়া ওনার মা আমাকে থ্রেট দিয়েছিল”
পুলিশ হাল্কা কেশে বললো,
“দেখুন এসব বিষয়ে মামলা করতে হলে আগে মেডিক্যাল ক্লিয়ারেন্স লাগবে”
অলি ভ্রু কুচকে পুলিশের দিয়ে তাকায় সে ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। আসমা বানু হঠাৎ উঠে দাড়ালেন অলির হাত ধরে বাইরে এনে বললেন,
“এসব করে কোনো লাভ হবেনা। সবকিছু করার পরেও পুলিশ তাদের কিছুই করতে পারবেনা।”
“তুমি এসব কেনো বলছো মা? যদি আমি ন্যায় বিচারই না পাই তাহলে পুলিশ আছে কি করতে?”
“তুই ন্যায় বিচার পেয়ে কি করবি অলি, এতোকিছুর পর তুই কি বাচতে পারবি? পারবিনা এই সমাজের মানুষদের তুই চিনিস না, দেখলিনা আসার সময় পাশের বাড়ির মহিলাটা কিভাবে তাকাচ্ছিলো। আমার মনে হয় তারাও কিছুটা আচ করতে পারছে। আর মেডিক্যাল ক্লিয়ারেন্স করতে গেলে অনেক কিছু করতে হবে তুই সেগুলো সহ্য করতে পারবিনা”
মায়ের মুখ থেকে এসব শুনে অলি অনেক অবাক হলো তার মা তো এমন ছিলোনা। অন্যায় দেখলে সবসময় রুখে দাড়াতো তাহলে আজকে কেনো আপোষ করতে চাইছে? আসমা বানু উপায়ন্তর না পেয়ে সমস্ত জটিল বিষয় গুলো অলিকে খুলে বললো, অলি পরিশেষে বুঝতে পারলো। হয়তো তাকে আলভীকে বিয়ে করতে হবে নয়তো বাচ্চাটা এবোরশন করে ফেলতে হবে। এসব আইনী প্রক্রিয়ায় সে বিচার পাবেনা। উল্টো সমাজের মানুষরা এসব জানতে পারলে তাদেরকে বাচতে দেবেনা। অলি বুঝতে পারছেনা যে সে কি করবে। তারা বাড়িতে ফিরে আসলো। দরজার সামনে আসতেই তাদের এক প্রতিবেশী বললো,
“আপা আপনারা কি পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন?”
কথাটা শুনে আসমা বানু চমকে গেলেন,
“নাতো আপা”
“আরে আপা মিথ্যা কথা বলছেন কেনো? আমার স্বামী বাজার থেকে ফেরার পথে আপনাদেরকে পুলিশ স্টেশনের সামনে দেখেছিলো। বলুন না কি হয়েছে। আমাকে বললে আমি হয়তো আপনাদের হেল্প করতেও পারবো। আমার ভাইয়ের ছেলে পুলিশে চাকরি করে”
কথাটা শুনে অলি কিছু বলতেই যাবে তার আগেই আসমা বানু তাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। অলি টাল সামলাতে না পেরে মেঝেতেই বসে পড়ে। তার শরীর ভালো নেই,
“মা উনি আমাদেরকে হেল্প করবে বলেছে, আমাদের ওনাকে বলা উচিৎ”
আসমা বানু রেগেমেগে বললো,
“তুই অনেক বোকা, উনি কথা বের করতে এসেছিলো আর তুই বোকার মতো সব বলে দিতে যাচ্ছিলি”
অলি চুপচাপ সেখানেই বসে রইলো। লিয়াকত হোসাইন রুমে যেতে নেবে তার আগেই আসমা বানু বলে ওঠে,
“আমি আমেনা আপার থেকে উসমান মির্জার বাড়ির ঠিকানা নিচ্ছি আমরা সেখানেই যাবো।”
অলি কান্নাভরা চোখে মায়ের দিকে তাকায়। সে আলভীকে বিয়ে করতে চায়না। কিন্তু সে এটাও বুঝতে পেরেছে আর বেশিদিন ব্যাপারটা তারা আড়াল করে রাখতে পারবেনা। লিয়াকত হোসাইন বলল,
“তোমার কি মনে হয় ওনারা অলির সাথে তাদের ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হবে?”
আসমা বানু একটা শ্বাস ফেললেন,
“না হলে আর কিছুই করার নেই। অলিকে যেভাবেই হোক এবোরশন করিয়ে ব্যাপারটা শেষ করে ফেলবো। দরকার হলে বাসাও চেঞ্জ করে ফেলবো। কিন্তু কোনোভাবেই বিষয়টা জানাজানি হতে দেওয়া যাবেনা”
অলি আর কোনো কথা বললোনা, এতোকিছুর পর তার আর কিছুই বলার নেই। আসমা বানু তার বোনকে কল দিয়ে ঠিকানা কালেক্ট করলো সেই সাথে এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতেও নিষেধ করে দিলো। যদিও সে আমেনাকে অলি আর আলভীর ব্যাপারে কিছুই জানায় নি, সে শুধু বলেছে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে কথা বলতেই যাবে সেখানে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে তারা মির্জা বাড়ির সামনে এসে নামলো। রাতের আঁধারের মাঝেও মির্জা ভিলা আলোয় ঝলমল করছে এতোবড় বাড়ি দেখে অলি স্বাভাবিকভাবেই অবাক হলো। লিয়াকত হোসাইন দারোয়ানের সামনে গিয়ে দাড়ালো,
“এটাই কি মির্জা ভিলা?”
“জ্বি আপনারা কারা?”
“আমরা তাদের আত্মীয়”
“অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করা নিষেধ। আপনি নাম বলুন আমি স্যারের কাছে ফোন দিয়ে অনুমতি নিচ্ছি”
লিয়াকত হোসাইন নাম বলতেই দারোয়ান উসমান মির্জাকে কল দিলো। লিয়াকত হোসাইনের নাম শুনে সে চিনতে পেরে অনুমতি দিয়ে দিলো,
“স্যার অনুমতি দিয়েছে আপনারা ভেতরে যান”
তারা ৩ জন ভেতরে ঢুকলো লিয়াকত হোসাইন আর আসমা বানু আগে আগে যাচ্ছে অলি তাদের পিছু পিছু যাচ্ছে। তার পা এগোতেই চাইছেনা মন বলছে খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। কিন্তু এতোকিছুর পর বাবা মায়ের উপর কিছু বলতেও পারবেনা। তারা ভেতরে ঢুকতেই নূরনাহার এগিয়ে এলেন। উসমান মির্জা ড্রইংরুমেই ছিলেন,
“আসসালামু আলাইকুম”
লিয়াকত হোসাইনের সালামের উত্তর দিলো নূরনাহার,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আসুন আপনারা ভেতরে আসুন”
তারা ৩ জন ড্রইংরুমে এসে বসলো। অলি তো মাথা নিচু করে নিজের পরণের স্কার্টের এককোনা খামছে ধরে বসে আছে। উসমান মির্জা হাসিমুখে বললো,
“আপনারা আমাদের বাড়িতে এসেছেন এতে আমি অনেক খুশি হয়েছি, যদিও আমি নিশ্চিত যে আপনারা কোনো না কোনো কারণ বশতই এখানে এসেছেন”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ২জন সার্ভেন্ট এসে নাস্তা দিয়ে গেলো। নূরনাহার গিয়ে রুনা খাতুন আর শাহানাজ বেগমকে ডেকে আনলো। শাহানাজ বেগম তো তাদেরকে দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন,
“আপনারা এখানে কোন মতলবে এসেছেন? আপনাদেরকে ঢুকতে দিয়েছে কে?”
কথাগুলো শুনে আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন বেশ অপমানিত বোধ করলো। অলি জানতো যে এরকম কিছুই হবে সেই জন্যই সে আসতে চাইছিলোনা। উসমান মির্জা ভ্রু কুচকে শাহানাজের দিকে তাকালো,
“তুমি ওনাদের সাথে এভাবে কথা কেনো বলছো? ভুলে যেওনা ওনারা তোমার ভাইয়ের আত্মীয়। উনি তোমার ভাবীর বোন হয়।”
শাহানাজ বেগম নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বসে পড়লো। আর যাই হোক সবার সামনে নিজের ভাইয়ের আত্মীয়দের ছোটো করা ভালো দেখাবেনা। ঊর্মিলা নিজের রুমে বসে দিহানের সাথে ফোনে কথা বলছিলো,
“আচ্ছা দুমাস আগে আমি তোমার মামাতো বোনের বিয়েতে তোমাদের সাথে যেতে পারিনি বলেই কি তুমি রাগ করে সেই দুদিন আমার কল রিসিভ করোনি?”
এতোদিন পর দিহানের মুখ থেকে এই কথাটা শুনে ঊর্মিলা একটু থতমত খেয়ে গেলো,
“আমি আপনার সাথে রাগ করবো কেনো?”
“সেটা আমি কিভাবে বলবো? আমি এভিকে কল দিচ্ছিলাম তুমি সেটাও কেটে দিয়েছিলে, কেনো বলোতো”
“আ,,,আপনি ভ,,,ভাইয়ার ফোনে কল দিয়েছিলেন তো সেটা আ,,,আমি কেটেছিলাম কিভাবে?”
ঊর্মিলা নিজের কথা শুনে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো, সে তোতলাচ্ছে কেনো বুঝতে পারলোনা। দিহান তো হাসতে লাগলো,
“আমি জানতে পেরেছিলাম যে এভির ফোনটা তখন তোমার কাছেই ছিলো। তুমিই কল কেটে দিচ্ছিলে। আমার প্রশ্ন হলো আমি তোমাদের সাথে না যাওয়াতে তুমি রাগ করেছিলে কেনো?”
“শুনুন আমি কোনো রাগ টাগ করিনি। আগের কথা বাদ দিন। আর কথায় কথায় এতো হাসবেননা তো”
দিহান একটা শ্বাস ফেলে চুপ করে রইলো। ঊর্মিলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি সত্যিই জানেন না যে ভাইয়া কোথায় আছে?”
দিহান শান্তকন্ঠে বললো,
“এক কথা প্রতিদিন জিজ্ঞেস করলেই উত্তর চেঞ্জ হয়ে যাবেনা ঊর্মি। এভি যেখানে তোমাদের সাথেই যোগাযোগ রাখেনি সেখানে আমার সাথে রাখবে এটা ভাবাও অনুচিত”
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২০৫০+