#১৫_বছর_বয়সী_মা (১১)
#সোফিয়া_সাফা
বিকাল ৫টা নাগাদ আলভী অলিদের বাড়ির সামনে এসে পৌছালো। একতলা বাড়িটার সামনের মূল ফটকের ওপাশে অনেক গুলো গোলাপ ফুলের গাছ লাগানো। ফুল দেখলেই আলভীর হাত পা চুলকাতে শুরু করে কারণ গোলাপ ফুলে তার এলার্জী আছে। ভাবা যায় সে ফুলকে অপছন্দ করে কিন্তু ফুলপ্রিয় অলিকে ভালোবাসে। আলভী পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ ঢেকে নিলো। দিহান চোখ বড়বড় করে আলভীর দিকে তাকায়,
“এই তুই কি বিয়ে করতে এসেছিস নাকি? এভাবে জামাইয়ের মতো রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকছিস কেনো? এখনকার দিনে তো জামাইরাও এভাবে মুখ ঢাকেনা।”
“গাধা ভুলে গেলি রোজ ফ্লাওয়ারে আমার এলার্জি আছে।”
“ওহ হ্যাঁ ভুলে গেছি, আমার নিজের টাই তো মনে থাকেনা। তোর টা ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। যাই হোক তুই একাই যা আমি বরং এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি”
“নো তুইও যাবি আমার সাথে”
“ভাই গেলে মা’রধরও করতে পারে, তোর মা যেভাবে অপমান করেছে। তুই একাই যা প্লিজ। শুধু শুধু আমাকে মা’র খাইয়ে কি লাভ হবে?”
আলভী দিহানের হাত টেনে ধরে মেইন ফটক পেরিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো তারপর ডোরবেল প্রেস করতে গিয়েই দেখলো যে ডোর বাইরে থেকে লক করা।
“কিরে দরজা দেখি বাইরে থেকে লক করা।”
দিহানের কথাশুনে আলভী এদিকে সেদিক তাকালো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলোনা। আলভী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলে আশেপাশে বেশ কয়েকটি বাড়ি আছে আলভী সেদিকে এগিয়ে যেতে নিলে দিহান বলে,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“দেখি কাউকে জিজ্ঞেস করে, এভাবে কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?”
আলভী এগিয়ে গিয়ে একটা বাড়ির সামনে গিয়ে কলিংবেল প্রেস করলো দিহান তখনই বলে ওঠে,
“আমার তো মনে হয় ওনারা তোর ১৪গোষ্ঠীর নামে মা’মলা করতে গেছে। যা করেছিস তুই, তারউপর আন্টি কালকে যেই ব্যবহার করলো ওরকম ব্যবহার তো কেউ কাজের লোকেদের সাথেও করেনা।”
আলভী কিছু বলার আগেই সামনের বাড়ি থেকে একজন মহিলা বেরিয়ে এলো। আলভী আর দিহানকে ভালোভাবে পরখ করে বললো,
“কারা আপনারা, কাকে চান?”
আলভী গলা পরিষ্কার করে একবার আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
“ওই বাড়িটাতেই তো অলিরা থাকে তাইনা?”
“হ্যাঁ কিন্তু আপনারা কারা?”
দিহান কিছু বলতে চাইলে আলভী বলে ওঠে,
“ওনারা আমাদের আত্মীয় হয়। আপনারা বলতে পারবেন ওনারা কোথায় গেছে?”
মহিলাটা মুখ বাকিয়ে বলে,
“আত্মীয় হলে ফোন দিয়েই জিজ্ঞেস করুন যে কোথায় গেছে। তাছাড়া ২দিন ধরে দেখছি শুধু ছোটাছুটিই করে যাচ্ছে। কিচ্ছু তো একটা ঘাপলা আছে। আপনারা কিছু জানেন?”
আলভী গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“কোনো ব্যাপার যদি থেকেও থাকে সেসব জেনে আপনাদের কি কাজ?”
বলেই আলভী বাড়ির সামনে থেকে ফিরে আসে দিহানও তার পেছন পেছন চলে আসে। মহিলাটা পুনরায় মুখ বাকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আলভী আর দিহান অলিদের বাড়ির সামনে আসতেই দেখে আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন হেটে হেটে এদিকেই আসছে। আলভী একটা শ্বাস নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল আন্টি”
বাড়ির মেইন ফটকের সামনে আসতেই আলভীকে দেখে আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন ভীষণ অবাক হলেন। লিয়াকত হোসাইন বললেন,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম আপনি এখানে কি করছেন আলভী তাসনীম মির্জা আপনার তো নিজেদের বাড়িতে থাকা উচিৎ”
আলভী মাথা নিচু করে বললো,
“আংকেল মায়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি, উনি যা করেছেন ঠিক করেননি”
আসমা বানু চোখের জল মুছে বললো,
“তার হয়ে নাহয় ক্ষমা চেয়ে নিলে কিন্তু আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করে দিলে কেনো?”
“আন্টি যা হয়েছে সব অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়েছে। আমি ওরকম ছেলে নই। আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেননা। দয়া করে ক্ষমা করে দিন।”
“অসম্ভব তুমি কোন মুখে ক্ষমা চাইছো? তুমি কি পারবে ওর জীবনটা আগের মতো করে দিতে, তুমি কি পারবে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে এনে দিতে? যদি পারো তাহলেই ক্ষমা পাবে নয়তো শুধু শুধু ক্ষমা চেওনা”
আসমা বানু কথা শুনে আলভী চমকে তাকালো,
“অলি কোথায় আছে এখন?”
আসমা বানু কাদতে লাগলো লিয়াকত হোসাইন আসমা বানুকে সামলে বললেন,
“ও হসপিটাল থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তারপর কোথায় গেছে আমরা জানিনা। এতোক্ষণ অব্ধি আমরা ওকে খুজেছি কিন্তু পাইনি”
আলভী একটা ঢোক গিললো৷ তার গলা ইতোমধ্যেই শুকিয়ে যাচ্ছে,
“এক সেকেন্ড, আন্টি আপনারা আজকেও ওকে হসপিটালে কেনো নিয়ে গিয়েছিলেন?”
আসমা বানু চিৎকার করে বললেন,
“কেনো নিয়ে গিয়েছিলাম জানোনা? ওকে এবো’রশন করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম”
কথাটা শোনামাত্র আলভী ২পা পিছিয়ে গেলো, কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নেই তাকে যে করেই হোক অলিকে খুঁজে বের করতে হবে। ১-২ ঘন্টার মধ্যেই রাত হয়ে যাবে, আলভী তারাতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বসে দিহানও তার পাশে গিয়ে বসে। আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন তাদের দিকে এগিয়ে যায়,
“আপনারা দয়া করে আমার মেয়েকে খুজতে সাহায্য করুন। আমরা আর কিচ্ছু চাইনা।”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“আমরা ওকে খুজতেই যাচ্ছি আংকেল। আপনারা আসতে চাইলে আসতে পারেন দিহান ওনাদেরকে গাড়িতে বসতে হেল্প কর।”
দিহান বেরিয়ে এসে তাদেরকে ব্যাকসিটে বসতে হেল্প করলো। আলভী নিজের চুলগুলো একহাতে খামছে ধরলো,
“আংকেল হসপিটাল কোনদিকে? আর আপনারা কোথায় কোথায় খুজেছেন সেগুলো বলুন আমরা বাকি জায়গা গুলোতে খুঁজে দেখে আবারও সব জায়গা রিচেক করবো”
আলভী গাড়ি স্টার্ট দিলো তারপর তাদের ২জনের দিকনির্দেশনা ফলো করেই অলিকে খুজতে শুরু করলো,
রাত ৮ টা, অলি হাটতে হাটতে একটা দোকানের সামনে এসে বসলো। সে পথ হারিয়ে ফেলেছে, সকাল থেকে তার পেটে কিচ্ছুটি পরেনি। অন্ধকার অলি ভীষণ ভয় পায়, সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কিছুটা দূরে একটা বাজার আছে, অলির পা চলছে না। অলি খেয়াল করেনি কিন্তু দোকানের ভেতর কতোগুলো বাজে ছেলেরা বসে ক্যারাম খেলছে আর সিগারেট খাচ্ছে। এই রাতেরবেলা একা একটা মেয়েকে দোকানের সামনে বসে থাকতে দেখে তারা অলির দিকে এগিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজন অলির কাধে হাত রাখতেই অলি ছিটকে দূরে সরে যায়। পেছনে ফিরে দেখে ৩ জন ছেলে লালসা ভরা চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে হাতে জ্বলন্ত সিগারেট,
“মামনি তুমি এখানে বসে আছো কেনো? চলোনা দোকানে গিয়ে বসবে। তোমার জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থাও করে দেবো আমরা।”
কথাগুলো শুনে অলি একটা ঢোক গিলে পেছতে লাগলো। তাদের মধ্যের একজন ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালানোর উদ্দেশ্যে ফোন বের করতেই অলি বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা থাবা দিয়ে নিয়ে দৌড় দিতে লাগলো তখনই একজন ছেলে অলির ওড়না টেনে ধরে বাধ্য হয়ে অলি ওড়না ফেলেই দৌড়াতে লাগলো।
“আরে আমার ফোন। আমার ফোন দিয়ে যা বলছি। ওই ওকে ধর”
অলি দৌড়াচ্ছে ছেলেরাও তার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে। বাজারের সামনে আসতেই হঠাৎ করে অলির পা মচকে যায়। অলি ব্যাথা উপেক্ষা করে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে, অলি অনেক চেষ্টার পরে একটা দোকানের পেছনে লুকাতে সক্ষম হয়। অলি ফোনটা চোখের সামনে ধরে দেখলো এটা একটা বাটন ফোন। যাক ভালোই হয়েছে অলি কাপাকাপা হাতে বাবার নম্বরে ডায়াল করতে গিয়েও থেমে গেলো। সে ম’রে গেলেও তাদের কাছে ফিরে যাবেনা। অলির হঠাৎ করেই আলভীর ফোন নম্বরের কথা মনে এলো। রাতে সে ২০ বারেরও বেশি আলভীর নম্বরে কল দিয়েছিলো যার ফলে আলভীর ফোন নম্বর তার মুখস্থ হয়ে গেছে, অলি একটা ঢোক গিলে আলভীর নম্বরে ডায়াল করলো। সে আশাই করেনি যে আলভীর নম্বরে কল ঢুকবে, ৩ বার রিং হতেই আলভী কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো। তারা এখনো অলিকে খুজছিলো। আলভী তো ঠিক করেই নিয়েছে অলিকে তারা খুজে বের করবেই। এর মাঝে তারা পুলিশেও মিসিং কমপ্লেইন করে এসেছে। যার মানে পুলিশের লোকেরাও তাকে খুজছে,
“হ্যালো”
আলভীর গম্ভীর কন্ঠ শুনে অলির কান্না এসে পড়লো। লোকটা খুব খারাপ। সে বলেছিলো অলির প্রয়োজনে অলির পাশে থাকবে কিন্তু সে নেই। উল্টো তার জন্যই অলিকে এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর না পেয়ে আলভী ফোনটা সামনে এনে নম্বরটা ভালো করে দেখলো তারপর পুনরায় কানের কাছে নিয়ে বললো,
“হ্যালো কে বলছেন? কথা বলুন নয়তো রেখে দেবো। এমনি অনেক ঝামেলায় আছি ফাইজলামি করার সময় নেই”
অলি এবার রেগেমেগে বলেই ওঠে,
“তুই তো ঝামেলাতেই থাকবি। রে/পিস্ট কোথাকার, আবার কাকে রে/প করেছিস? কোথায় লুকিয়ে আছিস তুই? সাহস থাকলে সামনে আয়। কাওয়ার্ড মেরুদণ্ডহীন প্রানী কোথাকার একটা ভুলভাল নম্বর দিয়েছে। আমি যদি ম’রে যাইনা তোর উপর আল্লাহর গজব পরবে”
কথাগুলো বলতে বলতেই অলির ফোনের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলো এদিকে আলভী অলির কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে সে আবারও সেই নম্বরে কল দিলো। অলি কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো,
“কল দিতে হবেনা। তুই মেয়েবাজী কর গিয়ে যা। আমার সাথে যা যা করেছিস তার শাস্তি আল্লাহ তোকে দেবে, জা’নোয়ার কোথাকার”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে শান্ত কন্ঠে বললো,
“তোমার সব কথা আমি পরে শুনবো এখন বলো তুমি কোথায় আছো?”
“তোকে বলবো কেনো? কি করবি তুই আমার ব্যাপারে জেনে? তোর আগে পিছে তো মেয়ের অভাব নেই, বড়লোকের ছেলে তুই। আমি শুধু জানতে চাই সেসব মেয়েদেরকে রেখে কেনো আমার সাথেই এমন করলি? শুনে রাখ আমি ম’রার আগে তোর নামে মামলা করে যাবো। আমার মৃ’ত্যুর জন্য তুই আর তোর মা দায়ী। দরকার হলে আমার লা’শের পোস্ট মর্টেম করে প্রমাণিত হবে যে তুই-ই আমাকে রে/প করেছিলি। এটা তোরই জারজ সন্তান”
অলির কথা শুনে আলভীর চোখদুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সেই সাথে হৃদস্পন্দনও যেনো থমকে গেলো। আলভী একটা ঢোক গিলে বলে উঠলো,
“অলি প্লিজ বলো তুমি এখন কোথায় আছো?”
অলির নাম শুনে আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন আলভীর দিকে তাকায়,
“অলি কল দিয়েছে? ও কোথায় আছে দেওনা আমি ওর সাথে কথা বলি”
আলভী কথা না বাড়িয়ে আসমা বানুর দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো। এই মেয়ে তাকে কিছুতেই লোকেশন বলবেনা। আলভীর চোখ মুখ ইতোমধ্যেই থমথম করছে, অলি তাকে কতোটা ঘৃনা করে সেটা সে ইতোমধ্যেই উপলব্ধি করে ফেলেছে। অলি তো ফোনের ওপর পাশ থেকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে,
“আমি তোর নামে মামলা করতে যাচ্ছি বুঝলি। আমি সেখানে গিয়ে যা যা করতে হবে সব করবো। তোকে আর তোর মাকে আমি দেখে নেবো। তোর মা আমাকে চরিত্রহীনা বলেছিলো তাইনা আমিও দেখিয়ে দেবো যে একজন চরিত্রহীনা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে”
আসমা বানু এসব শুনে বলে ওঠে,
“অলি এসব কি ভাষা ব্যবহার করছিস? পা’গল হয়ে গেছিস? এখন কি এসব বলার সময়? তুই ফোন কই পেলি, কোথায় আছিস তুই? তারাতাড়ি বল”
মায়ের কন্ঠ শুনে অলি চুপ হয়ে গেলো সেই সাথে মনে পরলো সে এখন মহাবিপদে আছে। অলি সাথে সাথেই মায়ের কাছে নিজের লোকেশন বলে দিলো। সে সাইনবোর্ডে এখানের নাম ঠিকানা দেখেছিলো সেসবই বলে দিলো। তার কথার মাঝেই ছেলেগুলো তার সামনে এসে দাঁড়ায়,
“এখন তুমি কোথায় যাবে মামনি?”
অলি ফোনটা তাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আপনারা ফোনটা নিয়ে নিন, আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ”
ফোনের ওপর পাশ থেকে এসব কথা শুনে আসমা বানু আলভীর দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আমার মেয়েটা বিপদে আছে। তোমরা দয়া করে ওকে উদ্ধার করো।”
আলভী ফোনটা নিয়ে একহাতে কানের কাছে ধরে আরেক হাতে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আসমা বানু লোকেশন বলতেই দিহান গুগল ম্যাপ দেখে বুঝতে পারে তারা বর্তমানে সেই রাস্তাতেই আছে,
“এভি আন্টি যেই লোকেশন বলেছে সেটা তো আমরা এখন যেখানে আছি সেই জায়গারই নাম”
কথাটা শোনামাত্র আলভী গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায় ফোনের ওপর পাশ থেকে শুনতে পায়,
“ফোনটা ফেরত দিচ্ছো ভালো কথা কিন্তু তোমার ওড়নাটা ফেরত নিবেনা বেবি?”
বলেই ছেলেটা অলির দিকে ওড়না এগিয়ে দেয় অলি ওড়নাটা নিতে গেলেই ছেলেটা অলির হাত ধরে ফেলে। অলি আরেকহাত বুকের উপরে রেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে,
“ছেড়ে দিন আমাকে। আপনাদের পায়ে পড়ি”
ছেলেগুলোর হাসি আর অলির কান্নার শব্দ শোনামাত্রই আলভীর মাথা গরম হয়ে যায়। সে অলিকে পা’গলের মতো খুজতে শুরু করে। আসমা বানু, লিয়াকত হোসাইন আর দিহানও আলাদা হয়ে অলিকে খুজছে। অন্য একটা ছেলে অলির হাত থেকে ফোনটা নেওয়া মাত্রই কল কেটে যায়। বাকি দুজন ছেলে অলির দুহাত টেনে ধরে অলিকে টেনে হিচড়ে দোকানের পেছনের সাইডে নিয়ে যেতে লাগলো তখনই অলি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। অলি চিৎকার শুনে আলভীর পা জোড়া থেমে গেলো সে সেই শব্দ অনুসরণ করেই অলির কাছে পৌছাতে সক্ষম হয়। আলভীকে দেখে ছেলে ৩জন অলিকে ছেড়ে দিয়ে আলভীর সামনে এসে দাঁড়ায়। এই পাশটায় অন্ধকার থাকাতে আলভীর চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না।
“তুই কেরে? আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছিস কেনো?”
আলভী উত্তর না দিয়েই ৩ জনকে মা’রতে শুরু করলো। অলি কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। সে নিজের কান্না কিছুতেই থামাতে পারছেনা।
“তুই আমাদেরকে মা’রছিস কেনো? তুই চাইলে ওকে আমরা তোর সাথে শেয়ার করতে পারি। তাও মা’রিস না”
কথাটা শুনে আলভী সেই ছেলেটার কলার চেপে ধরে বলে,
“আমার জিনিস আমার সাথেই শেয়ার করার কথা বলছিস। তোদের সাহস হলো কি করে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার? তোদের এমন অবস্থা করবো যে নিজের জিনিসেও আর হাত দিতে পারবিনা”
বলেই আলভী এক এক করে ৩ জনেরই হাতের সবগুলো আঙ্গুল ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো করে দিলো। এদিক থেকে চিৎকার চেচামেচি শুনে দিহান, আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন সহ আশেপাশের বেশ কয়েকজন লোক এগিয়ে এলো। আলভীর হাত থেকে ছাড়া পেতেই ৩জনই জান হাতে নিয়ে পালিয়ে গেলো। আশেপাশের মানুষগুলো ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করতেই অলি বলে ওঠে,
“আমি যখন চিৎকার করেছিলাম তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? এখন এসেছেনে কেনো? বেশ করেছে ওদেরকে মে’রেছে ওদেরকে একদম মে’রে ফেলাই উচিৎ ছিলো। যারা মেয়েদেরকে রে/প করতে চায় তাদের জন্য একটাই শা’স্তি সেটা হলো মৃ’ত্যু, তবে সহজ মৃ’ত্যু নয় ভয়ংকর মৃ’ত্যু।”
আলভী বুঝতে পারলো শেষের কথাটা অলি তাকেই বলেছে। অলির কথা শুনে আশেপাশের মানুষগুলো যার যার কাজে চলে গেলো। অলি খুড়িয়ে খুড়িয়ে আলভীর সামনে এসে দাঁড়ায়, এতোদিন পর অলিকে দেখে আলভীর অশান্ত মন শান্ত হয়েছে কিন্তু অলিকে এই অবস্থায় দেখে তার খুবই কষ্ট হচ্ছে।
“তোমার পায়ে কি হয়েছে?”
“তাতে আপনার কি?”
“প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করতে হয়না সেটা জানোনা?”
“ওহ আচ্ছা, তাহলে উত্তর হচ্ছে আপনার এসব ভালো মানুষী দেখানো বন্ধ করুন”
আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন অলির দিকে এগিয়ে এলো। আসমা বানু তো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেদেই যাচ্ছে,
“তুই কেনো এভাবে চলে এসেছিস অলি? আমাদের কথা কেনো একবারও ভাবলিনা”
“স্যরি মা তবে আমার এছাড়া উপায় ছিলোনা। আমি আমার বাবুকে মে’রে ফেলতে পারবোনা।”
অলির কথা শুনে আলভী আর দিহান অলির দিকে তাকায় আলভী বলে ওঠে,
“তুমি ঠিক কি করতে চাইছো?”
অলি সোজাসাপ্টা বলে ওঠে,
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই”
কথাটা শুনে আলভী অলির দিকে অবাক চোখে তাকায়,
“তুমি ভেবেচিন্তে বলছো?”
“আমি আমার বাবুর কথা ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আপনি যদি আমাকে বিয়ে করতে না চান তাহলে আমি আপনার নামে মা’মলা করবো। আপনাকে জেলের ঘানি টানাবো। আসলে কি বলুন তো ওটাই আপনার যোগ্য জায়গা। তবুও আমার বাবুর কথা ভেবে আপনার মতো লোককে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।”
“আমাকে জেলে পাঠিয়ে তুমি তোমার বাবুকে একা বড় করতে পারবে তো?”
“আমি তো আপনাকে বিয়েই করতে চাইছি কিন্তু আপনি যদি চালাকি করেন। তাহলে আপনাকে জেলে পাঠাতে আমি বাধ্য হবো তারপর আমি আমার বাবুকে একাই বড় করতে পারবো। বাবা মাও যদি আমার বাবুকে মেনে নিতে না পারে তাহলে আমি তাদের সাথেও থাকবোনা।”
লিয়াকত হোসাইন বলে ওঠে,
“তুই যা চাইবি তাই হবে, শুধু এরকম কিছু কক্ষনো করিসনা”
অলি আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ইউ হ্যাভ অনলি ফাইভ সেকেন্ডস, তার ভেতরে ভেবে বলুন যে আমাকে বিয়ে করবেন কি না।”
আলভী ভ্রু কুচকে অলির দিকে তাকায় তার টেকনিক মেয়েটা তার উপরেই এপ্লাই করছে।
“তিন, দুই এন্ড”
“আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি”
“ভালো ডিসিশন নিয়েছেন। নইলে আমি আপনার বিরুদ্ধে মা’মলা করতাম। তাতে আমাকে যা করতে হতো আমি সেটাই করতাম”
আলভী এক হাত প্যান্টের পকেটে দিয়ে বললো,
“আমাকে এতো এতো ভয় দেখিওনা আমার হার্ট অনেক দূর্বল বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে”
চলবে,,,
#১৫_বছর_বয়সী_মা (১১)
#সোফিয়া_সাফা
বিকাল ৫টা নাগাদ আলভী অলিদের বাড়ির সামনে এসে পৌছালো। একতলা বাড়িটার সামনের মূল ফটকের ওপাশে অনেক গুলো গোলাপ ফুলের গাছ লাগানো। ফুল দেখলেই আলভীর হাত পা চুলকাতে শুরু করে কারণ গোলাপ ফুলে তার এলার্জী আছে। ভাবা যায় সে ফুলকে অপছন্দ করে কিন্তু ফুলপ্রিয় অলিকে ভালোবাসে। আলভী পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ ঢেকে নিলো। দিহান চোখ বড়বড় করে আলভীর দিকে তাকায়,
“এই তুই কি বিয়ে করতে এসেছিস নাকি? এভাবে জামাইয়ের মতো রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকছিস কেনো? এখনকার দিনে তো জামাইরাও এভাবে মুখ ঢাকেনা।”
“গাধা ভুলে গেলি রোজ ফ্লাওয়ারে আমার এলার্জি আছে।”
“ওহ হ্যাঁ ভুলে গেছি, আমার নিজের টাই তো মনে থাকেনা। তোর টা ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। যাই হোক তুই একাই যা আমি বরং এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি”
“নো তুইও যাবি আমার সাথে”
“ভাই গেলে মা’রধরও করতে পারে, তোর মা যেভাবে অপমান করেছে। তুই একাই যা প্লিজ। শুধু শুধু আমাকে মা’র খাইয়ে কি লাভ হবে?”
আলভী দিহানের হাত টেনে ধরে মেইন ফটক পেরিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো তারপর ডোরবেল প্রেস করতে গিয়েই দেখলো যে ডোর বাইরে থেকে লক করা।
“কিরে দরজা দেখি বাইরে থেকে লক করা।”
দিহানের কথাশুনে আলভী এদিকে সেদিক তাকালো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলোনা। আলভী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলে আশেপাশে বেশ কয়েকটি বাড়ি আছে আলভী সেদিকে এগিয়ে যেতে নিলে দিহান বলে,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“দেখি কাউকে জিজ্ঞেস করে, এভাবে কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?”
আলভী এগিয়ে গিয়ে একটা বাড়ির সামনে গিয়ে কলিংবেল প্রেস করলো দিহান তখনই বলে ওঠে,
“আমার তো মনে হয় ওনারা তোর ১৪গোষ্ঠীর নামে মা’মলা করতে গেছে। যা করেছিস তুই, তারউপর আন্টি কালকে যেই ব্যবহার করলো ওরকম ব্যবহার তো কেউ কাজের লোকেদের সাথেও করেনা।”
আলভী কিছু বলার আগেই সামনের বাড়ি থেকে একজন মহিলা বেরিয়ে এলো। আলভী আর দিহানকে ভালোভাবে পরখ করে বললো,
“কারা আপনারা, কাকে চান?”
আলভী গলা পরিষ্কার করে একবার আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
“ওই বাড়িটাতেই তো অলিরা থাকে তাইনা?”
“হ্যাঁ কিন্তু আপনারা কারা?”
দিহান কিছু বলতে চাইলে আলভী বলে ওঠে,
“ওনারা আমাদের আত্মীয় হয়। আপনারা বলতে পারবেন ওনারা কোথায় গেছে?”
মহিলাটা মুখ বাকিয়ে বলে,
“আত্মীয় হলে ফোন দিয়েই জিজ্ঞেস করুন যে কোথায় গেছে। তাছাড়া ২দিন ধরে দেখছি শুধু ছোটাছুটিই করে যাচ্ছে। কিচ্ছু তো একটা ঘাপলা আছে। আপনারা কিছু জানেন?”
আলভী গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“কোনো ব্যাপার যদি থেকেও থাকে সেসব জেনে আপনাদের কি কাজ?”
বলেই আলভী বাড়ির সামনে থেকে ফিরে আসে দিহানও তার পেছন পেছন চলে আসে। মহিলাটা পুনরায় মুখ বাকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আলভী আর দিহান অলিদের বাড়ির সামনে আসতেই দেখে আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন হেটে হেটে এদিকেই আসছে। আলভী একটা শ্বাস নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল আন্টি”
বাড়ির মেইন ফটকের সামনে আসতেই আলভীকে দেখে আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন ভীষণ অবাক হলেন। লিয়াকত হোসাইন বললেন,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম আপনি এখানে কি করছেন আলভী তাসনীম মির্জা আপনার তো নিজেদের বাড়িতে থাকা উচিৎ”
আলভী মাথা নিচু করে বললো,
“আংকেল মায়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি, উনি যা করেছেন ঠিক করেননি”
আসমা বানু চোখের জল মুছে বললো,
“তার হয়ে নাহয় ক্ষমা চেয়ে নিলে কিন্তু আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করে দিলে কেনো?”
“আন্টি যা হয়েছে সব অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়েছে। আমি ওরকম ছেলে নই। আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেননা। দয়া করে ক্ষমা করে দিন।”
“অসম্ভব তুমি কোন মুখে ক্ষমা চাইছো? তুমি কি পারবে ওর জীবনটা আগের মতো করে দিতে, তুমি কি পারবে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে এনে দিতে? যদি পারো তাহলেই ক্ষমা পাবে নয়তো শুধু শুধু ক্ষমা চেওনা”
আসমা বানু কথা শুনে আলভী চমকে তাকালো,
“অলি কোথায় আছে এখন?”
আসমা বানু কাদতে লাগলো লিয়াকত হোসাইন আসমা বানুকে সামলে বললেন,
“ও হসপিটাল থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তারপর কোথায় গেছে আমরা জানিনা। এতোক্ষণ অব্ধি আমরা ওকে খুজেছি কিন্তু পাইনি”
আলভী একটা ঢোক গিললো৷ তার গলা ইতোমধ্যেই শুকিয়ে যাচ্ছে,
“এক সেকেন্ড, আন্টি আপনারা আজকেও ওকে হসপিটালে কেনো নিয়ে গিয়েছিলেন?”
আসমা বানু চিৎকার করে বললেন,
“কেনো নিয়ে গিয়েছিলাম জানোনা? ওকে এবো’রশন করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম”
কথাটা শোনামাত্র আলভী ২পা পিছিয়ে গেলো, কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নেই তাকে যে করেই হোক অলিকে খুঁজে বের করতে হবে। ১-২ ঘন্টার মধ্যেই রাত হয়ে যাবে, আলভী তারাতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বসে দিহানও তার পাশে গিয়ে বসে। আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন তাদের দিকে এগিয়ে যায়,
“আপনারা দয়া করে আমার মেয়েকে খুজতে সাহায্য করুন। আমরা আর কিচ্ছু চাইনা।”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“আমরা ওকে খুজতেই যাচ্ছি আংকেল। আপনারা আসতে চাইলে আসতে পারেন দিহান ওনাদেরকে গাড়িতে বসতে হেল্প কর।”
দিহান বেরিয়ে এসে তাদেরকে ব্যাকসিটে বসতে হেল্প করলো। আলভী নিজের চুলগুলো একহাতে খামছে ধরলো,
“আংকেল হসপিটাল কোনদিকে? আর আপনারা কোথায় কোথায় খুজেছেন সেগুলো বলুন আমরা বাকি জায়গা গুলোতে খুঁজে দেখে আবারও সব জায়গা রিচেক করবো”
আলভী গাড়ি স্টার্ট দিলো তারপর তাদের ২জনের দিকনির্দেশনা ফলো করেই অলিকে খুজতে শুরু করলো,
রাত ৮ টা, অলি হাটতে হাটতে একটা দোকানের সামনে এসে বসলো। সে পথ হারিয়ে ফেলেছে, সকাল থেকে তার পেটে কিচ্ছুটি পরেনি। অন্ধকার অলি ভীষণ ভয় পায়, সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কিছুটা দূরে একটা বাজার আছে, অলির পা চলছে না। অলি খেয়াল করেনি কিন্তু দোকানের ভেতর কতোগুলো বাজে ছেলেরা বসে ক্যারাম খেলছে আর সিগারেট খাচ্ছে। এই রাতেরবেলা একা একটা মেয়েকে দোকানের সামনে বসে থাকতে দেখে তারা অলির দিকে এগিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজন অলির কাধে হাত রাখতেই অলি ছিটকে দূরে সরে যায়। পেছনে ফিরে দেখে ৩ জন ছেলে লালসা ভরা চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে হাতে জ্বলন্ত সিগারেট,
“মামনি তুমি এখানে বসে আছো কেনো? চলোনা দোকানে গিয়ে বসবে। তোমার জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থাও করে দেবো আমরা।”
কথাগুলো শুনে অলি একটা ঢোক গিলে পেছতে লাগলো। তাদের মধ্যের একজন ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালানোর উদ্দেশ্যে ফোন বের করতেই অলি বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা থাবা দিয়ে নিয়ে দৌড় দিতে লাগলো তখনই একজন ছেলে অলির ওড়না টেনে ধরে বাধ্য হয়ে অলি ওড়না ফেলেই দৌড়াতে লাগলো।
“আরে আমার ফোন। আমার ফোন দিয়ে যা বলছি। ওই ওকে ধর”
অলি দৌড়াচ্ছে ছেলেরাও তার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে। বাজারের সামনে আসতেই হঠাৎ করে অলির পা মচকে যায়। অলি ব্যাথা উপেক্ষা করে প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে, অলি অনেক চেষ্টার পরে একটা দোকানের পেছনে লুকাতে সক্ষম হয়। অলি ফোনটা চোখের সামনে ধরে দেখলো এটা একটা বাটন ফোন। যাক ভালোই হয়েছে অলি কাপাকাপা হাতে বাবার নম্বরে ডায়াল করতে গিয়েও থেমে গেলো। সে ম’রে গেলেও তাদের কাছে ফিরে যাবেনা। অলির হঠাৎ করেই আলভীর ফোন নম্বরের কথা মনে এলো। রাতে সে ২০ বারেরও বেশি আলভীর নম্বরে কল দিয়েছিলো যার ফলে আলভীর ফোন নম্বর তার মুখস্থ হয়ে গেছে, অলি একটা ঢোক গিলে আলভীর নম্বরে ডায়াল করলো। সে আশাই করেনি যে আলভীর নম্বরে কল ঢুকবে, ৩ বার রিং হতেই আলভী কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো। তারা এখনো অলিকে খুজছিলো। আলভী তো ঠিক করেই নিয়েছে অলিকে তারা খুজে বের করবেই। এর মাঝে তারা পুলিশেও মিসিং কমপ্লেইন করে এসেছে। যার মানে পুলিশের লোকেরাও তাকে খুজছে,
“হ্যালো”
আলভীর গম্ভীর কন্ঠ শুনে অলির কান্না এসে পড়লো। লোকটা খুব খারাপ। সে বলেছিলো অলির প্রয়োজনে অলির পাশে থাকবে কিন্তু সে নেই। উল্টো তার জন্যই অলিকে এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর না পেয়ে আলভী ফোনটা সামনে এনে নম্বরটা ভালো করে দেখলো তারপর পুনরায় কানের কাছে নিয়ে বললো,
“হ্যালো কে বলছেন? কথা বলুন নয়তো রেখে দেবো। এমনি অনেক ঝামেলায় আছি ফাইজলামি করার সময় নেই”
অলি এবার রেগেমেগে বলেই ওঠে,
“তুই তো ঝামেলাতেই থাকবি। রে/পিস্ট কোথাকার, আবার কাকে রে/প করেছিস? কোথায় লুকিয়ে আছিস তুই? সাহস থাকলে সামনে আয়। কাওয়ার্ড মেরুদণ্ডহীন প্রানী কোথাকার একটা ভুলভাল নম্বর দিয়েছে। আমি যদি ম’রে যাইনা তোর উপর আল্লাহর গজব পরবে”
কথাগুলো বলতে বলতেই অলির ফোনের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলো এদিকে আলভী অলির কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে সে আবারও সেই নম্বরে কল দিলো। অলি কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো,
“কল দিতে হবেনা। তুই মেয়েবাজী কর গিয়ে যা। আমার সাথে যা যা করেছিস তার শাস্তি আল্লাহ তোকে দেবে, জা’নোয়ার কোথাকার”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে শান্ত কন্ঠে বললো,
“তোমার সব কথা আমি পরে শুনবো এখন বলো তুমি কোথায় আছো?”
“তোকে বলবো কেনো? কি করবি তুই আমার ব্যাপারে জেনে? তোর আগে পিছে তো মেয়ের অভাব নেই, বড়লোকের ছেলে তুই। আমি শুধু জানতে চাই সেসব মেয়েদেরকে রেখে কেনো আমার সাথেই এমন করলি? শুনে রাখ আমি ম’রার আগে তোর নামে মামলা করে যাবো। আমার মৃ’ত্যুর জন্য তুই আর তোর মা দায়ী। দরকার হলে আমার লা’শের পোস্ট মর্টেম করে প্রমাণিত হবে যে তুই-ই আমাকে রে/প করেছিলি। এটা তোরই জারজ সন্তান”
অলির কথা শুনে আলভীর চোখদুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সেই সাথে হৃদস্পন্দনও যেনো থমকে গেলো। আলভী একটা ঢোক গিলে বলে উঠলো,
“অলি প্লিজ বলো তুমি এখন কোথায় আছো?”
অলির নাম শুনে আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন আলভীর দিকে তাকায়,
“অলি কল দিয়েছে? ও কোথায় আছে দেওনা আমি ওর সাথে কথা বলি”
আলভী কথা না বাড়িয়ে আসমা বানুর দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো। এই মেয়ে তাকে কিছুতেই লোকেশন বলবেনা। আলভীর চোখ মুখ ইতোমধ্যেই থমথম করছে, অলি তাকে কতোটা ঘৃনা করে সেটা সে ইতোমধ্যেই উপলব্ধি করে ফেলেছে। অলি তো ফোনের ওপর পাশ থেকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে,
“আমি তোর নামে মামলা করতে যাচ্ছি বুঝলি। আমি সেখানে গিয়ে যা যা করতে হবে সব করবো। তোকে আর তোর মাকে আমি দেখে নেবো। তোর মা আমাকে চরিত্রহীনা বলেছিলো তাইনা আমিও দেখিয়ে দেবো যে একজন চরিত্রহীনা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে”
আসমা বানু এসব শুনে বলে ওঠে,
“অলি এসব কি ভাষা ব্যবহার করছিস? পা’গল হয়ে গেছিস? এখন কি এসব বলার সময়? তুই ফোন কই পেলি, কোথায় আছিস তুই? তারাতাড়ি বল”
মায়ের কন্ঠ শুনে অলি চুপ হয়ে গেলো সেই সাথে মনে পরলো সে এখন মহাবিপদে আছে। অলি সাথে সাথেই মায়ের কাছে নিজের লোকেশন বলে দিলো। সে সাইনবোর্ডে এখানের নাম ঠিকানা দেখেছিলো সেসবই বলে দিলো। তার কথার মাঝেই ছেলেগুলো তার সামনে এসে দাঁড়ায়,
“এখন তুমি কোথায় যাবে মামনি?”
অলি ফোনটা তাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আপনারা ফোনটা নিয়ে নিন, আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ”
ফোনের ওপর পাশ থেকে এসব কথা শুনে আসমা বানু আলভীর দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আমার মেয়েটা বিপদে আছে। তোমরা দয়া করে ওকে উদ্ধার করো।”
আলভী ফোনটা নিয়ে একহাতে কানের কাছে ধরে আরেক হাতে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আসমা বানু লোকেশন বলতেই দিহান গুগল ম্যাপ দেখে বুঝতে পারে তারা বর্তমানে সেই রাস্তাতেই আছে,
“এভি আন্টি যেই লোকেশন বলেছে সেটা তো আমরা এখন যেখানে আছি সেই জায়গারই নাম”
কথাটা শোনামাত্র আলভী গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায় ফোনের ওপর পাশ থেকে শুনতে পায়,
“ফোনটা ফেরত দিচ্ছো ভালো কথা কিন্তু তোমার ওড়নাটা ফেরত নিবেনা বেবি?”
বলেই ছেলেটা অলির দিকে ওড়না এগিয়ে দেয় অলি ওড়নাটা নিতে গেলেই ছেলেটা অলির হাত ধরে ফেলে। অলি আরেকহাত বুকের উপরে রেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে,
“ছেড়ে দিন আমাকে। আপনাদের পায়ে পড়ি”
ছেলেগুলোর হাসি আর অলির কান্নার শব্দ শোনামাত্রই আলভীর মাথা গরম হয়ে যায়। সে অলিকে পা’গলের মতো খুজতে শুরু করে। আসমা বানু, লিয়াকত হোসাইন আর দিহানও আলাদা হয়ে অলিকে খুজছে। অন্য একটা ছেলে অলির হাত থেকে ফোনটা নেওয়া মাত্রই কল কেটে যায়। বাকি দুজন ছেলে অলির দুহাত টেনে ধরে অলিকে টেনে হিচড়ে দোকানের পেছনের সাইডে নিয়ে যেতে লাগলো তখনই অলি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। অলি চিৎকার শুনে আলভীর পা জোড়া থেমে গেলো সে সেই শব্দ অনুসরণ করেই অলির কাছে পৌছাতে সক্ষম হয়। আলভীকে দেখে ছেলে ৩জন অলিকে ছেড়ে দিয়ে আলভীর সামনে এসে দাঁড়ায়। এই পাশটায় অন্ধকার থাকাতে আলভীর চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না।
“তুই কেরে? আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছিস কেনো?”
আলভী উত্তর না দিয়েই ৩ জনকে মা’রতে শুরু করলো। অলি কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। সে নিজের কান্না কিছুতেই থামাতে পারছেনা।
“তুই আমাদেরকে মা’রছিস কেনো? তুই চাইলে ওকে আমরা তোর সাথে শেয়ার করতে পারি। তাও মা’রিস না”
কথাটা শুনে আলভী সেই ছেলেটার কলার চেপে ধরে বলে,
“আমার জিনিস আমার সাথেই শেয়ার করার কথা বলছিস। তোদের সাহস হলো কি করে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার? তোদের এমন অবস্থা করবো যে নিজের জিনিসেও আর হাত দিতে পারবিনা”
বলেই আলভী এক এক করে ৩ জনেরই হাতের সবগুলো আঙ্গুল ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো করে দিলো। এদিক থেকে চিৎকার চেচামেচি শুনে দিহান, আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন সহ আশেপাশের বেশ কয়েকজন লোক এগিয়ে এলো। আলভীর হাত থেকে ছাড়া পেতেই ৩জনই জান হাতে নিয়ে পালিয়ে গেলো। আশেপাশের মানুষগুলো ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করতেই অলি বলে ওঠে,
“আমি যখন চিৎকার করেছিলাম তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? এখন এসেছেনে কেনো? বেশ করেছে ওদেরকে মে’রেছে ওদেরকে একদম মে’রে ফেলাই উচিৎ ছিলো। যারা মেয়েদেরকে রে/প করতে চায় তাদের জন্য একটাই শা’স্তি সেটা হলো মৃ’ত্যু, তবে সহজ মৃ’ত্যু নয় ভয়ংকর মৃ’ত্যু।”
আলভী বুঝতে পারলো শেষের কথাটা অলি তাকেই বলেছে। অলির কথা শুনে আশেপাশের মানুষগুলো যার যার কাজে চলে গেলো। অলি খুড়িয়ে খুড়িয়ে আলভীর সামনে এসে দাঁড়ায়, এতোদিন পর অলিকে দেখে আলভীর অশান্ত মন শান্ত হয়েছে কিন্তু অলিকে এই অবস্থায় দেখে তার খুবই কষ্ট হচ্ছে।
“তোমার পায়ে কি হয়েছে?”
“তাতে আপনার কি?”
“প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করতে হয়না সেটা জানোনা?”
“ওহ আচ্ছা, তাহলে উত্তর হচ্ছে আপনার এসব ভালো মানুষী দেখানো বন্ধ করুন”
আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন অলির দিকে এগিয়ে এলো। আসমা বানু তো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেদেই যাচ্ছে,
“তুই কেনো এভাবে চলে এসেছিস অলি? আমাদের কথা কেনো একবারও ভাবলিনা”
“স্যরি মা তবে আমার এছাড়া উপায় ছিলোনা। আমি আমার বাবুকে মে’রে ফেলতে পারবোনা।”
অলির কথা শুনে আলভী আর দিহান অলির দিকে তাকায় আলভী বলে ওঠে,
“তুমি ঠিক কি করতে চাইছো?”
অলি সোজাসাপ্টা বলে ওঠে,
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই”
কথাটা শুনে আলভী অলির দিকে অবাক চোখে তাকায়,
“তুমি ভেবেচিন্তে বলছো?”
“আমি আমার বাবুর কথা ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আপনি যদি আমাকে বিয়ে করতে না চান তাহলে আমি আপনার নামে মা’মলা করবো। আপনাকে জেলের ঘানি টানাবো। আসলে কি বলুন তো ওটাই আপনার যোগ্য জায়গা। তবুও আমার বাবুর কথা ভেবে আপনার মতো লোককে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।”
“আমাকে জেলে পাঠিয়ে তুমি তোমার বাবুকে একা বড় করতে পারবে তো?”
“আমি তো আপনাকে বিয়েই করতে চাইছি কিন্তু আপনি যদি চালাকি করেন। তাহলে আপনাকে জেলে পাঠাতে আমি বাধ্য হবো তারপর আমি আমার বাবুকে একাই বড় করতে পারবো। বাবা মাও যদি আমার বাবুকে মেনে নিতে না পারে তাহলে আমি তাদের সাথেও থাকবোনা।”
লিয়াকত হোসাইন বলে ওঠে,
“তুই যা চাইবি তাই হবে, শুধু এরকম কিছু কক্ষনো করিসনা”
অলি আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ইউ হ্যাভ অনলি ফাইভ সেকেন্ডস, তার ভেতরে ভেবে বলুন যে আমাকে বিয়ে করবেন কি না।”
আলভী ভ্রু কুচকে অলির দিকে তাকায় তার টেকনিক মেয়েটা তার উপরেই এপ্লাই করছে।
“তিন, দুই এন্ড”
“আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছি”
“ভালো ডিসিশন নিয়েছেন। নইলে আমি আপনার বিরুদ্ধে মা’মলা করতাম। তাতে আমাকে যা করতে হতো আমি সেটাই করতাম”
আলভী এক হাত প্যান্টের পকেটে দিয়ে বললো,
“আমাকে এতো এতো ভয় দেখিওনা আমার হার্ট অনেক দূর্বল বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে”
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ২২৫০+