#১৫_বছর_বয়সী_মা (১৪)
#সোফিয়া_সাফা
“নতুন বউকে বরণ করে নিতে হয়। আপনি কাউকে বলুন যে এসে আমাকে বরণ করতে, আমি তারপরেই বাড়ির ভেতর ঢুকবো”
আলভী অলির দিকে তাকালো তারপর নিজের মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
“মা তোমার ছেলের বউকে বরণ করে ঘরে তোলো”
কথাটা শোনামাত্র শাহানাজ বেগম রাগে ফেটে পড়লেন চিল্লিয়ে বলে উঠলেন,
“এভি তুই এই থার্ড ক্লাস মেয়েটাকে বিয়ে করে এনেছিস। তাও আবার আমাদেরকে না জানিয়ে? তোর কি মনে হয় যে আমরা এই বিয়ে মেনে নেবো”
আলভী চুপ করে রইলো। কিন্তু অলি বলে ওঠে,
“আম্মা আপনি আমাদের এই বিয়ে না মানলে আবারও আমাদেরকে বিয়ে দিতেই পারেন। আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার ছেলে যেই কয়বার বিয়ে করবে এই থার্ডক্লাস মেয়েটাকেই করতে হবে বুঝলেন”
অলির কথাটা শুনে শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে অলিকে চড় মারার উদ্দেশ্যে হাত ওঠাতেই আলভী অলির সামনে এসে দাঁড়ায়। চড়টা গিয়ে আলভীর বুকের উপর পড়ে। শাহানাজ বেগম রাগী চোখে আলভীর দিকে তাকায়। আলভী শান্তকন্ঠে বলে ওঠে,
“ও বাচ্চা মেয়ে মা। তুমি ওর কথায় কিছু মনে কোরোনা। সব ভুল আমার। আমিই ওকে জোর করে বিয়ে করেছিলাম। তবে আজকে নয় আমি ওকে ৩মাস আগেই বিয়ে করেছিলাম”
কথাটা শুনে সবার সাথে সাথে অলিও আলভীর দিকে চমকে তাকায়। আলভীর জন্য অলি কাউকেই দেখতে পারছেনা। উসমান মির্জা এগিয়ে এসে বলে,
“এসব তুই কি বলছিস? তুই আমাদেরকে না জানিয়ে ওই মেয়েকে কেনো বিয়ে করেছিলি?”
আলভী সরাসরি বলে ওঠে,
“তোমরা যেভাবে আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলে ঠিক সেভাবেই আমিও তোমাদেরকে না জানিয়ে অলিকে বিয়ে করে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম ওর ১৮ বছর হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়টা গোপন রাখবো। তারপর তোমাদেরকে জানিয়ে ওকে তুলে আনবো। কিন্তু তোমরা তো আমার মতামত জানতেই চাওনি। উল্টো ওকে আর ওর মা বাবাকে অপমান করে বের করে দিয়েছিলে। ওকে তোমরা কিচ্ছু বলবেনা কারণ ও আমাকে বিয়ে করতে চায়নি। আমিই ওকে জোর করে নিয়ে এসেছি। আর কারণটাও তোমরা জানো”
কথাটা শোনামাত্র অলি আলভীর পাশে এসে দাড়িয়ে আলভীর দিকে তাকালো। আলভীর চেহারা অনূভুতিশূন্য। আলভী সবার উদ্দেশ্যে বললো,
“অলিকে বরণ করে ঘরে তোলো। তোমরা তো জানোই যে ও প্রেগন্যান্ট। আর একটা কথা শুনে রাখো ওর জন্যই আমি এই বাড়িতে ফিরে এসেছি। আর বাংলাদেশেও ওর জন্যই এসেছি। তোমরা ওকে ফেলে দিতে পারলেও আমি তো আর আমার স্ত্রী সন্তানকে ফেলে দিতে পারবোনা। তোমাদের যদি ওকে মেনে নিতে প্রবলেম হয় তাহলে বলে দেও। আমি ওকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে আবারও চলে যাবো। তার আগে মির্জা বংশের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেই যাবো।”
কথাটা শুনে বাড়ির প্রত্যেকে অবাক চোখে আলভীর দিকে তাকায় ঊর্মিলা এগিয়ে এসে বলে,
“ভাইয়া তুই এভাবে কেনো বলছিস? তুই এই বাড়ির ছেলে। তুই চাইলেও সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবিনা”
“এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই। তাছাড়া আমাকে নিয়েই যেহেতু সবার সমস্যা সেহেতু আমার সাথে সম্পর্ক না রাখাই বেস্ট অপশন”
সবাই চুপ করে রইলো আলভী একটা শ্বাস ফেলে অলির উদ্দেশ্যে বললো,
“আমি ওনাদের সমস্যা বাড়াতে চাইনা। চলো এই বাড়ি থেকে”
আলভী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নেয় কিন্তু অলি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, আলভী পেছনে ঘুরে অলির দিকে তাকাতেই শাহানাজ বেগম নিজের চোখ মুছে বলে ওঠে,
“নূরনাহার এভির বউকে বরণ করে ঘরে তোলো”
কথাটা বলেই শাহানাজ বেগম নিজের রুমে চলে যায়। নূরনাহার অনুমতি পাওয়া মাত্রই কিচেনে গিয়ে সবকিছু রেডি করে এনে অলিকে বরণ করতে শুরে করে। এতোক্ষণ যাবত রূপসা সবকিছু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো এবার আর সহ্য করতে না পেরে সে নিজের রুমে চলে যায়। রুনা খাতুন একবার অলির দিকে তাকিয়ে নিজের মেয়ের পিছুপিছু চলে যায়। নূরনাহার বরণ শেষে অলিকে বাড়িতে ঢুকতে বললো। অলি শাড়িটা একটু উঁচু করে বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে এসেই নূরনাহারকে সালাম করলো৷ নূরনাহার হাসিমুখে অলির মাথায় হাত রাখলো। অলিকে তার পছন্দ হয়েছে। দেখতে শুনতে অলি কারো থেকেই কম নয়।
“আমি হলাম তোমার কাকি শাশুড়ী”
নূরনাহারের কথার উত্তরে অলি মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। উসমান আর ইয়ামিন মির্জা একসাইডে দাড়িয়ে আছে। ঊর্মিলা এগিয়ে এসে অলিকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
“উনি তোমার শ্বশুর আর উনি তোমার চাচা শ্বশুর”
অলি মুখে হাসি টেনে তাদেরকেও সালাম করলো। তারা দুজন মুখে কিছু না বলেই নিজেদের রুমে চলে গেলো। ইয়াদ এগিয়ে এসে বললো,
“আমার সাথে পরিচিত হও ভাবী। আমি হচ্ছি তোমার একমাত্র দেবর আমার নাম ইয়াদ তুমি চাইলে আমাকে নাম ধরেই ডাকতে পারো।”
অলি জিভ কেটে বললো,
“না না ভাইয়া আমি অতো বেয়াদব নই যে আপনার নাম ধরে ডাকবো। আমি আপনাকে ভাইয়া বলেই ডাকবো”
আলভী এগিয়ে এসে বললো,
“ঊর্মি ওকে নিয়ে গিয়ে দাদুমনির সাথে পরিচয় করিয়ে আন”
“তুমিও চলো ভাইয়া। তুমি জানোনা এই কয়দিন তুমি বাড়িতে না থাকায় দাদুমনি কতো চিন্তা করেছে। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করেনি।”
আলভী ব্যাগগুলো একটা সার্ভেন্টকে দিয়ে অলিকে নিয়ে ঊর্মিলার সাথে দাদুমনির রুমে যায়। দাদুমনি তাকে দেখে খুশিতে কেদেই ফেলে।
“দাদুভাই তুমি কেনো এভাবে চলে গিয়েছিলে বলোতো। এতো অভিমান কেউ করে?”
আলভী দাদুমনির সামনে বসে বললো,
“আমার অভিমান শেষ দাদুমনি। আ’ম তোমার জন্য একজন ফ্রেন্ড এনেছি দেখে বলোতো পছন্দ হয় কিনা।”
দাদুমনি ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকাতেই ঊর্মিলা অলিকে নিয়ে রুমে ঢোকে। অলি দাদুমনির সামনে এসে দাঁড়ায়। দাদুমনি একবার অলির দিকে তাকিয়ে আবার আলভীর দিকে তাকায়,
“দাদুমনি তোমার গুণধর নাতি একদম বউ নিয়েই এসেছে”
ঊর্মিলার কথা শুনে দাদুমনি একবার ভালো করে অলির দিকে তাকালো। অলি তো মাথা নিচু করেই রেখেছে। দাদুমনি বসা থেকে উঠে অলির সামনে এসে দাঁড়ায় অলিকে উপর নিচ পরখ করে বলে ওঠে,
“এরকম জীবন্ত পুতুল কোথা থেকে আনলে দাদুভাই? এটা আনতেই কি দেশের বাইরে গিয়েছিলে?”
দাদুমনির কথা শুনে আলভী একটা শ্বাস ফেললো। অলির তো ভীষণ লজ্জা লাগছে। ঊর্মিলা হাসতে হাসতে বলে ওঠে,
“ভাইয়া শুধু বউই আনেনি বুড়ি। সেই সাথে বউর পেটে করে বাচ্চাও নিয়ে এসেছে”
কথাটা শুনে দাদুমনি আরও অবাক হয়ে গেলো। সেদিন যেদিন অলিরা এই বাড়িতে এসেছিলো সেদিন দাদুমনি অলিকে দেখেনি তবে সবকিছুই শুনেছিলো সে। কারণ শাহানাজ বেগম অনেক জোরে জোরেই বলেছিলো। অলির এবার ভীষণ লজ্জা লাগছে। দাদুমনি মুখে কিছু না বলে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলো। তারপর একটা বক্স বের করে অলির সামনে গিয়ে দাড়ালো। বক্সটা খুলে দুটো স্বর্নের চুড়ি অলির হাতে পরিয়ে দিলো। অলির ছোটো ছোটো হাতে চুরি গুলো অনেক বড় বড় লাগছে। ঊর্মিলা হাসতে হাসতেই বললো,
“আমাদের পিচ্ছি ভাবীটাহ”
অলি সাথে সাথেই দাদুমনিকে সালাম করলো। সে লজ্জার ঠেলায় সালাম করতেই ভুলে গেছিলো।
“ঊর্মি ওকে আমার বামপাশের রুমটা দেখিয়ে দে”
ঊর্মিলা ভ্রু কুচকে আলভীর দিকে তাকায়,
“কেনো ভাইয়া? ভাবী ওই রুমে থাকবে কেনো?”
আলভী বলে ওঠে,
“তুই তো জানিসই আমি রুম শেয়ার করতে লাইক করিনা সেই জন্যই বলেছি৷”
আলভীর কথা শুনে দাদুমনি বললো,
“এটা কেমন কথা দাদুভাই? স্ত্রী হচ্ছে ঘরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু। তোমার দাদাভাই তো আমাকে ছাড়া এক রাতও থাকতে পারতোনা। আমি কোথাও গেলে সে কি কান্নাকাটি। তারপর বাধ্য হয়েই ফিরে আসতাম। আর তুমি তার নাতি হয়ে বউকে অন্যরুমে রাখবে?”
আলভী রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,
“তার কপাল আর আমার কপাল এক নয় দাদুমনি”
আলভী চলে যেতেই দাদুমনি বলে ওঠে,
“দাদুভাই এভাবে বললো কেনো?”
“হুহ ভাব দেখিয়ে বউকে অন্যরুমে রাখতে বলে এখন কপালের দোষ দিচ্ছে তোমার লাটসাহেব নাতি”
অলি চুপচাপ ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভালো লাগছেনা। মায়ের কথা ভীষণ মনে পড়ছে।
“যা ওকে রুমে দিয়ে আয়। এই অবস্থায় মেয়েটা অনেক জার্নি করে এসেছে বাকি কথা পরে বলা যাবে। নাতবউ ভালো না লাগলে আমার রুমে এসো বুঝলে আমরা জমিয়ে আড্ডা দেবো”
অলি মাথা নাড়িয়ে ঊর্মিলার পিছু পিছু চলে গেলো। অলিকে আলভীর রুমের পাশের রুমটা দেখিয়ে দিয়ে ঊর্মিলা চলে গেলো। অলি পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো। রুমটা অনেক বড় আর প্রয়োজনীয় অনেক আসবাবপত্রও আছে। অলি কাপড় চেঞ্জ করার জন্য নিজের ব্যাগ খুজলো কিন্তু পেলোনা।
“আমার ব্যাগ কোথায় গেলো?”
অলি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আলভীর রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো আলভী রুমে নেই। সে দেখলো খাটের সামনেই তার ব্যাগ পড়ে আছে। অলি ধীরপায়ে রুমে ঢুকে ব্যাগটা ধরা মাত্রই আলভী ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। আলভী সবেমাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। অলিকে দেখে আলভী কোনো রিয়েক্ট করলোনা কিন্তু আলভীকে শার্টলেস দেখে অলি নিজের চোখজোড়া ঢেকে নিলো। আলভী একটা শ্বাস ফেলে গায়ে একটা শ্বার্ট জড়িয়ে নিলো,
“এখানে এসেছো কেনো? কিছু লাগবে?”
অলি আঙ্গুলের ফাক দিয়ে আলভীকে শার্ট পড়তে দেখে হাত সরিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আলভীর দিকে তাকালো।
“আমি ব্যাগ নিতে এখানে এসেছিলাম”
“তো নিয়ে যাও”
অলি ঘুরে চলে আসতে নিলে কিছু একটা ভেবে থেমে যায়। আলভীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“মায়ের সাথে একটু কথা বলতাম”
আলভী ভ্রু কুচকে বলে,
“তো! বারণ করেছে কে? এমন ভাব করছো যেনো আমার অনুমতি ছাড়া কিছুই করবেনা”
অলি মিনমিনিয়ে বলে,
“আসলে আমার কাছে ফোন নেই সেই জন্যই আরকি”
আলভী বুঝতে পেরে বলে,
“যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। তারপর কথা বলিয়ে দেবো”
অলি চলে আসতে নিলে আলভী পেছন থেকে বলে ওঠে,
“শোনো শাওয়ার নিলে গরম পানি ইউজ কোরো। এখন রাত ৯টা বাজে ঠান্ডা লেগে যাবে”
অলি আবারও আলভীর দিকে তাকায়,
“গরম পানি করতে হলে তো রান্নাঘরে যেতে হবে। রান্নাঘর টা কোন দিকে?”
আলভী একটা শ্বাস ফেলে অলির দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“দেখি সরো”
অলি সরে দাড়াতেই আলভী অলির রুমে আসে অলিও তার পিছু পিছু আসে। আলভী ওয়াশরুমে গিয়ে অলিকে ডাক দেয়,
“এদিকে এসো। আমি গিজার ইউজ করা দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছি”
অলি গিয়ে আলভীর সামনে দাঁড়ায়। তারপর আলভী অলিকে গিজার ইউজ করা শিখিয়ে দেয়,
“এখন পারবে তো? দেখো এদিকে ঘোরালে বেশি গরম পানি বের হবে তাই এটাকে এর বেশি ঘোরাবেনা।”
অলি হা করে গিজারের দিকেই তাকিয়ে আছে। আলভী বলে,
“তুমি পারবে?”
অলি মাথা নাড়ায়,
“হুম পারবো আপনি যান”
আলভী ওয়াশরুমের দরজা পর্যন্ত এসে আবারও অলির কাছে গিয়ে বলে,
“দেখি আমাকে অন করে দেখাও”
অলি কপাল কুচকে বলে,
“আমি পারবো তো আপনি যান”
“হু তো দেখাও।”
অলি অন করে দেখালো,
“এখন যান”
আলভী চলে আসতে নিলে অলিও তার পিছু পিছু আসে ওয়াশরুমের দরজা লক করার জন্য কিন্তু তখনই শাড়িতে পা লেগে অলি পড়ে যেতে নেয় ঠিক সেই সময়েই বাচার জন্য সে আলভীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আলভী সেখানেই থমকে যায়। অলি নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আলভী অলির দিকে তাকিয়ে অলির পায়ের দিকে ইশারা করে বলে,
“তুমি এক্ষুনি পড়ে যেতে নিয়েছিলে?”
অলি বলে ওঠে,
“হ্যাঁ আসলে শাড়িটা লুজ হয়ে গেছে সেই জন্যই পায়ের সাথে আটকে পড়ে যেতে নিয়েছিলাম”
আলভী কয়েকটা ঢোক গিলে বললো,
“ইউ আর প্রেগন্যান্ট অলি। ক্যান্ট ইউ ওয়াক কেয়ারফুলি?”
“আমি তো সাবধানেই,,,
অলি কথা শেষ করার আগেই আলভী তার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। অলি পিছিয়ে যেতে লাগলো,
“ক কি করছেন? সা,,,সামনে এগোচ্ছেন কেনো?”
আলভী তাও অলির দিকে এগিয়ে গেলো। অলি বাচার জন্য দেয়ালের সাথে চিপকে দাড়ালো। আলভী অলিকে স্পর্শ না করেই অলির শাড়ির আঁচল টেনে ধরে,
“স,,,সরে যান প্লিজ।”
আলভী মুখে কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে নিলো তারপর একটানে অলির শাড়ি অনেকটা খুলে ফেললো। অলি এবার ঠোঁট চেপে ফুপিয়ে কেদে উঠলো,
“ছেড়ে দিন আমাকে প্লিজ।”
অলির কান্না শুনে আলভী ২ পা পিছিয়ে গেলো অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“এসব শাড়ি টাড়ি কেনো পড়েছো? দেখো তোমাকে স্পর্শ করতে চাইনা কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করছো তোমাকে স্পর্শ করতে”
অলি কান্না করেই যাচ্ছে। আলভী উপায়ন্তর না পেয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলো। অলি কান্না করতে করতেই ওয়াশরুমের দরজা লক করে দিলো।
আলভী নিজের রুমে এসে বসলো। তার ভীষন রাগ উঠছে। তবে রাগটা কি নিজের উপরে উঠছে নাকি অলির উপরে উঠছে বুঝতে পারছেনা।
চলবে,,,
শব্দসংখ্যা- ১৭০০+
#১৫_বছর_বয়সী_মা (১৫)
#সোফিয়া_সাফা
অলি শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। তার পরণে হলুদ রঙের টপস আর সাদা হলুদের কম্বিনেশনের স্কার্ট। সাথে সাদা রঙের ওড়না। অলি ওড়নাটা মাথায় পেচিয়ে খাটের উপর বসে বসে কান্না করছে। মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে সেই সাথে আলভীর করা ব্যাবহারে সে অনেক কষ্ট পেয়েছে। সে কয়েক মূহুর্তের জন্য আলভীকে ভালোমানুষ ভেবেছিলো।
“রে/পিস্ট কখনো ভালোমানুষ হতে পারেনা। আমার তাকে ভালোমানুষ ভাবাটাই ভুল হয়েছিলো”
অলি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখন সময় ৯:৩৯ মিনিট। অলির ভাবনার মাঝেই ঊর্মিলা দরজায় নক করে।
“ভাবী আসবো?”
অলি নিজের চোখজোড়া মুছে নিলো,
“হুম ভেতরে এসো আপু”
ঊর্মিলা অলির সামনে বসে বললো,
“ভাবী ডিনার করতে চলো”
অলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে,
“আমি যাবোনা আপু আর তুমি আমাকে ভাবী বলে ডেকোনা। এই ডাকটা আমার সাথে যায়না। আমার ভালো লাগেনা প্লিজ তুমি আমাকে অলি বলেই ডেকো।”
“কিন্তু ভাবী”
অলি কান্নাভরা চোখে ঊর্মিলার দিকে তাকায়। অলির চোখে পানি দেখে ঊর্মিলা শ্বাস ফেলে বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে অলি বলেই ডাকবো। কিন্তু তুমি কাদছো কেনো?”
অলি হাটুতে মুখ গুজলো। ঊর্মিলা আন্দাজেই জিজ্ঞেস করে,
“তোমার কি বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে?”
অলি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। মেয়ে হওয়ার সুবাদে ঊর্মিলা অলির পরিস্থিতি বুঝতে পারছে। অলির মাথার কাপড় সরে গেছে ঊর্মিলা অলির মাথায় হাত রেখে দেখে অলির চুল ভেজা। মেয়েটা চুলগুলোও ভালো করে মোছেনি। ঊর্মিলা একটা তোয়ালে এনে অলির মাথা মুছে দিতে লাগলো অলি এতে করে আরও বেশি কেদে উঠলো। ঊর্মিলা ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
“তোমার কি শরীর ভালো লাগছেনা? দাঁড়াও আমি ভাইয়াকে ডেকে আনছি”
ঊর্মিলা চলে আসতে নিলে অলি তার ওড়না টেনে ধরে। নাক টেনে বলে,
“আপু তোমার কাছে ফোন আছে? আমাকে একটু দেবে? আমি মায়ের সাথে কথা বলবো। আমার খুব মনে পড়ছে মায়ের কথা”
ঊর্মিলা এসে অলির সামনে বসলো তারপর নিজের ফোনটা অলির দিকে এগিয়ে দিলো।
“নম্বর মনে আছে?”
অলি হ্যাঁবোধক মাথা নাড়ায় তারপর ঊর্মিলার ফোনে মায়ের ফোন নম্বর ডায়াল করলো। আসমা বানু আর লিয়াকত হোসাইন ডিনার করে সবেমাত্রই শুয়েছে। মেয়েকে ছাড়া ঘরটা ভীষণ খালি খালি লাগছে প্রতিদিন এই সময়ে সে অলিকে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। আচ্ছা আজকে কে তার মেয়েটাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে? মেয়েটা ছেলেমানুষী করে চলে তো গেলো কিন্তু থাকতে পারবে তো?
“তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আলভীকে দেখে যতটুকু বুঝলাম অলিকে ও আটকে রাখবেনা। অলির ভালো না লাগলে ও অলিকে আসতে দেবে। আর আমি তো কালকে যাবোই অলিকে দেখতে।”
লিয়াকত হোসাইনের কথা শুনে আসমা বানু চোখ মুছলো। তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে অলি বলে ওঠে,
“মা”
মা শব্দটা শুনেই আসমা বানুর কলিজা জুড়িয়ে গেলো মেয়েটা আজকেই গিয়েছে কিন্তু তার কাছে মনে হচ্ছে অনেকদিন হয়ে গেছে।
“আমার ছোট্ট পরীটা কেমন আছে? ওখানে গিয়ে মাকে ভুলে গেছে তাইনা?”
অলি চোখদুটো মুছে হাসার চেষ্টা করলো। তার মাকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে সে তাদের জন্য কান্না করছে।
“আমি তোমাকে ভুলে যাইনি মা। আর নাতো কোনোদিনও ভুলে যেতে পারবো। তোমরা কেমন আছো মা, খাওয়া দাওয়া করেছো তো?”
“আমরা ভালোই আছি রে আর কিছুক্ষণ আগেই খাওয়া দাওয়া করে সবেমাত্র শুয়েছি। তুই খেয়েছিস?”
“না মা তবে এক্ষুনি খেতে যাবো। তুমি আমার জন্য কান্না কোরোনা মা আমি এখানে ভালোই আছি।”
“শাহানাজ বেগমের যেই ব্যবহার দেখেছিলাম তারপরেও কি চিন্তা না করে থাকতে পারবো, তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে তাইনা?”
“না মা আমার সাথে আজকে কেউই খারাপ ব্যবহার করতে পারেনি। উনি সবাইকে সামলে নিয়েছেন”
কথাটা শুনে আসমা বানু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, তারা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলো।
“ধন্যবাদ আপু”
“এতে ধন্যবাদ বলতে হবেনা বুঝলে?”
অলি ফোনটা ঊর্মিলার হাতে দেওয়া মাত্রই তার ফোনে দিহানের কল আসে। ঊর্মিলা কলটা কেটে দেয়। কিন্তু দিহান ননস্টপ কল দিয়েই যাচ্ছে। তখনই রুমে আলভী আসে। আলভীকে দেখে ঊর্মিলা উঠে দাঁড়ায়। দিহান কল দিয়েই যাচ্ছে ঊর্মিলা না পেরে ফোন সাইলেন্ট করে রাখে।
“ঊর্মি নিজের রুমে যা”
ঊর্মিলা ভ্রু কুচকে আলভীর দিকে তাকায়,
“আমি তো অলিকে ডিনার করার জন্য নিয়ে যেতে এসেছি”
ঊর্মিলার কথা শুনে আলভী রাগী চোখে ঊর্মিলার দিকে তাকায়,
“ও তোর ভাবী হয় নাম ধরে ডাকছিস কেনো বেয়াদব”
“আমি বলেছি সেই জন্যই ডাকছে।”
অলির কথাশুনে আলভী অলির দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে শান্তকন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“তুমিই বা কেনো বলেছো?”
অলি রেগেমেগে বলে ওঠে,
“বেশ করেছি বলেছি। ভাবী ডাক আমার সাথে যায়না। তবে আপনার যদি ডাকটা বেশিই ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি বরং আমাকে ওটা বলেই ডাকুন”
অলির কথাটা শুনে আলভী তাজ্জব বনে গেলো। মাথা ঘুরতে লাগলো। ঊর্মিলা তো শব্দ করেই হেসে ওঠে। এদিকে অলি নিজেও লজ্জা পেয়ে যায়। সে উল্টো পাল্টা বলে ফেলেছে। ঊর্মিলার হাসি থামছেই না। আলভী চোখ কটমট করে ঊর্মিলার দিকে তাকায়,
“তুই যাবি এখান থেকে?”
ঊর্মিলা চলে যেতে নিলে অলি তাকে আটকায়,
“আপু আমিও তোমার সাথেই যাবো”
আলভী বলে,
“অলি তোমার সাথে আমার কথা আছে। ঊর্মি তুই যা।
আলভীর গম্ভীর কণ্ঠ শুনে ঊর্মিলা বুঝতে পারে যে আলভী এখন খুবই সিরিয়াস। সে কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অলি বিছানার একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে। আলভী একটা শ্বাস ফেলে একটা চেয়ার টেনে অলির সামনেই বসে। অলি ভীত চোখে আলভীর দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ আগে আলভীর করা ব্যবহারে সে অনেক ভয় পেয়েছে।
“দেখো অলি আমার খারাপ কোনো ইনটেনশন ছিলোনা। আমি জাস্ট শাড়িটা খুলে ফেলতে চেয়েছিলাম”
আলভীর কথা শুনে অলি কেদে ওঠে। আলভী একটা ঢোক গিলে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
“আর কখনো শাড়ি পড়বেনা বুঝলে?”
অলি কান্নাভরা চোখে আলভীর দিকে তাকায়,
“এবার ডিনার করতে চলো। অনেক রাত হয়ে গেছে”
আলভী চলে আসতে নিলে অলি বলে ওঠে,
“আপনি আমাকে অতোগুলো টাকা দিয়ে নিজেকে মহান প্রমাণ করতে চেয়েছেন নাকি?”
অলির কথাশুনে আলভী ভ্রু কুচকে অলির দিকে তাকায়,
“আপনি আপনার টাকা নিয়ে যান।”
“আমি কিছু দিয়ে দিলে আর ফেরত নেইনা। আর টাকার এমাউন্টটা তো তুমিই বলেছিলে। তাহলে এখন নিতে অস্বীকার করছো কেনো? টাকার পরিমাণ কম মনে হচ্ছে নাকি?”
অলি বসা থেকে উঠে এসে আলভীর সামনে দাঁড়ায়। চোখ মুছে বলে,
“আপনি আমাকে কি মনে করেন? আমি একটা লোভী মেয়ে আর টাকার জন্যই আপনাকে বিয়ে করেছি?”
আলভী ঘাড় কাত করে অলিকে পা হতে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বলে।
“আমি কেনো যে কেউ মনে করবে যে তুমি একটা লোভী মেয়ে। কারণ তুমিই নিজেকে লোভী বলে প্রেজেন্ট করে এসেছো। আমাকে দিয়ে আজগুবি শর্তে সাইন করিয়ে নিয়েছো। তুমি আমার সম্পত্তি চাও তাইনা? তার জন্য কি তুমি আমাকে মে’রে ফেলবে?”
কথাটা শুনে অলি হতভম্ব হয়ে গেলো। আলভী বসা থেকে উঠে দাড়ালো। অলি শান্তকন্ঠে বলে ওঠে,
“আপনি আমাকে নিয়ে এসব ভাবলে আবার আমাকে বিয়ে করলেন কেনো? আমি জানি আপনি শুধু জেলের ভয়েতেই আমাকে বিয়ে করেননি”
হঠাৎ করেই আলভী অলির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো অলি পেছতে পেছতে খাটের উপর বসে পরলো,
“আমি তোমাকে বিয়ে করেতে চেয়েছিলাম কারণ আমি তোমাকে ভুলবশত রে/প করেছি। আমি জানি একটা মেয়ের কাছে তার ইজ্জত কতোটা মূল্যবান। আর আমি তো সারাজীবন বিয়ে না করেই থাকবোনা তাইনা? তাই তোমাকেই বিয়েটা করে নিলাম। আর কোনো প্রশ্ন?”
অলি ভয়ে ভয়ে বলে,
“আপনি আমাকে অতোগুলো টাকা কেনো দিলেন?”
আলভী অলির মুখের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অলির পেটের দিকে তাকায় আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলে,
“টাকাগুলো দিয়েছি আমার সন্তানকে ১০ মাস ওখানে থাকতে দেওয়ার রেন্ট হিসেবে।”
কথাটা শুনে অলির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। সে ভাবতেও পারেনি যে আলভী এই জন্য তাকে টাকাগুলো দিয়েছে। আলভী কিছুক্ষণ ভেবে বলে ওঠে,
“বাড়ির কেউ যেনো জানতে না পারে যে আমি তোমাকে আজকে বিয়ে করেছি বুঝলে”
অলি চোখ মুছে আলভীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়,
“আমি চাইনা বেবিটাকে কেউ অবৈধ সন্তান বলুক। আর আমি নিশ্চিত যে তুমিও সেটা চাইবেনা। সেই জন্যই বিয়ের তারিখ ৩মাস পিছিয়ে দিয়েছি। আশা করি বুঝতে পেরেছো”
অলি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো,
“খেতে চলো”
অলি চুপচাপ বসে আছে,
“নিজের পায়ে হেটে খেতে চলো নয়তো তুলে নিয়ে যাবো। তোমার ওসব শর্ত টর্তের পরোয়া এই আলভী তাসনীম মির্জা করেনা”
“তার মানে আপনি কি শর্ত ভেঙ্গে ফেলবেন নাকি?”
আলভী অলির দিকে ঝুকে ফিসফিসিয়ে বলে,
“দরকার হলে ভাঙ্গবো। যদিও এখনই ভাঙ্গতে চাইছিনা, তবে তোমার কাহিনি দেখে মনে হচ্ছেনা যে শর্তগুলো বেশিদিন রক্ষা করতে পারবো। হয়তো তুমিও চাওনা যে তোমার ওসব ফালতু শর্তগুলো বেচে থাকুক। এম আই রাইট? এক থেকে পাঁচ অব্ধি গুনবো তার ভেতর উঠে না দাড়ালে তুলে নিয়ে যাবো।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই অলি উঠে দাড়ালো। লোকটা আসলেই ডেঞ্জারাস এর সাথে আর বেশি জোর খাটানো যাবেনা।
“গুড গার্ল। এভাবেই আমার সবগুলো কথা র্যাপিডলি শুনবে। এককথা দুবার বলতে পছন্দ করিনা আমি এটা মাথায় ঢুকিয়ে নেও।”
আলভী রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তার পিছুপিছু অলিও চলে গেলো। ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই কথা বলছিলো। বাকি সবাই কথা বললেও রূপসা চুপচাপ বসে খাবার খাচ্ছে। তার মন ভালো নেই। আলভীর পাশে অলি নামের মেয়েটাকে সে মেনে নিতে পারছেনা। যদিও এখনো শাহানাজ বেগম তাকে আশা রাখতে বলেছে। রূপসা তো মাকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতেই চেয়েছিলো কিন্তু শাহানাজ বেগম তাদেরকে যেতে দেয়নি।
“আমি বলিকি বিয়েটা যখন হয়েই গেছে আমাদের উচিৎ বড় করে একটা রিসেপশনের এরেঞ্জমেন্ট করা।”
ইয়াদের কথা শুনে শাহানাজ বেগম গম্ভীর চোখে তার দিকে তাকায়। ইয়ামিন মির্জা বলে ওঠে,
“ইয়াদ ঠিকই বলেছে। রিসেপশন রাখাটা ভালো আইডিয়া হতেই পারে।”
শাহানাজ বেগম বলল,
“কোনো প্রয়োজন নেই”
উসমান মির্জা একটা শ্বাস ফেলে বলে,
“এটা নিয়ে আমরা বিতর্কিত হতে পারি। এমনকি বিষয়টা আমাদের বিজন্যাসেও প্রভাব ফেলতে পারে। ইয়াদের কথাতে যুক্তি আছে। বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে। ব্যাপারটা আড়াল করে রাখার মতো নয়। সেই হিসেবে যত তারাতাড়ি সম্ভব রিসেপশনের এরেঞ্জমেন্ট করতে হবে”
শাহানাজ বেগম আর কিছুই বললোনা। বিজন্যাসের ব্যাপার আসলে সে যেকোনো বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করতেই পারে। বাকিরাও চুপচাপ খাবার খাচ্ছে তখনই আলভী আসে অলি তার পেছনেই আছে। আলভী একটা চেয়ার টেনে অলিকে বসিয়ে দিয়ে অলিকে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো। সবাই আড়চোখে একবার দেখলো কিন্তু কেউ কিছুই বললোনা। অলি হাত উচিয়ে বললো,
“হয়েছে, আর দিয়েন না। আমি খেতে পারবোনা”
আলভী অলির পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“আচ্ছা আর দিচ্ছিনা। ফিনিশ ইট কুইক”
অলি চুপচাপ মাথা নিচু করে খেতে লাগলো। তার মনে হচ্ছে সে স্কুলের স্যার ম্যাডামদের সামনে বসে খাবার খাচ্ছে। ভীষণই নার্ভাস লাগছে সেই সাথে মাছ মাংসের গন্ধে তার ভীষণ বমি পাচ্ছে। অলির মুখের ভঙ্গি দেখে আলভী ব্যাপারটা বুঝতে পারলো,
“তোমার কি এসব খেতে প্রবলেম হচ্ছে?”
হঠাৎ আলভীর কথা শুনে অলি কেপে উঠলো। মাথা নাড়িয়ে না বললো। তারপর জোরপূর্বক এক লোকমা ভাত মুখে নিয়ে চিবোতে লাগলো। তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। আলভী গভীর ভাবে অলিকে পর্যবেক্ষণ করছিলো। অলি খাবারটা কোনো রকমে গিলে আবারও মুখে দিতে যাবে তার আগেই আলভী বলে ওঠে,
“জোর করে খেতে হবেনা। তোমার কি অন্য কিছু খেতে ইচ্ছা করছে?”
অলি মাথা নিচু রেখেই নাবোধক মাথা নাড়ায়। আলভী এবার ভীষণ বিরক্ত হলো। এই মেয়েকে নিয়ে সে কি করবে বুঝতে পারছেনা। আলভী একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। আলভী অলির কানের কাছে ঝুকে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তুমি কি চাইছো যে আমি সবার সামনে তোমার উপর চিল্লাচিল্লি করি?”
অলি তড়িৎ গতিতে আলভীর দিকে তাকিয়ে নাবোধক মাথা নাড়ায়,
“যদি না চাও তাহলে বলো কি খেতে পারবে”
অলি কিছুক্ষণ ভেবে বলে ওঠে,
“আমি আলুভর্তা আর টমেটো ভর্তা দিয়ে খেতে পারবো বলে মনে হচ্ছে”
কথাটা শুনে আলভী সোজা হয়ে দাঁড়ায় তারপর সোজা কিচেনে গিয়ে একজন সার্ভেন্টকে আলুভর্তা আর টমেটো ভর্তা বানিয়ে দিতে বলে। অলি ভীষণ নার্ভাস ফিল করছে তার ডানপাশে ঊর্মিলা বসেছে। অলি জানেনা যে তার কি হয়েছে কিন্তু তার নিজেকে আসামী বলেই মনে হচ্ছে। আলভী তাকে যেই সমস্ত কথা বলেছে এরপর কারো দিকে তাকাতেই সে সংকোচ বোধ করছে। আলভী ঘুরে এসে অলির উদ্দেশ্যে বললো,
“বেসিন ওইদিকে, যাও হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে যাও। তোমার খাবার সেখানেই দিয়ে আসবে”
কথাটা শুনে অলি হাফ ছেড়ে বাচলো। হাত না ধুয়েই কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুতপায়ে নিজের রুমে চলে গেলো। অলি সিড়ি পাড় করার পুরোটা সময় আলভী চিন্তিত চোখে অলির দিকে তাকিয়ে রইলো,
“এই মেয়েটা না জানি কোনদিন সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আমার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দেয়”
অলি চলে যেতেই আলভী একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অলির রেখে যাওয়া চেয়ারে বসে পড়লো। তারপর বেশিকিছু না ভেবেই অলির রেখে যাওয়া এঁটো খাবার নির্দ্বিধায় খেতে লাগলো। আলভীর কর্মকাণ্ডে উপস্থিত সবাই একসাথে আলভীর দিকে তাকালো। আলভী খাবার খাওয়া থামিয়ে দিয়ে বললো,
“আই সি। তোমরা এমনভাবে তাকিয়ে ছিলে বলেই মেয়েটা খেতে পারছিলো না। এই চেয়ারে কোনো বিশেষ ব্যাপার আছে নাকি? যে তোমরা এমনভাবে তাকিয়ে আছো?”
চলবে,,,