১৫ বছর বয়সী মা পর্ব-৫২+৫৩+৫৪

0
24

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৫২)
#সোফিয়া_সাফা
{রহস্যের শেষপ্রান্তে}

“প্রি- নেটাল প্যাটারনিটি টেস্ট করতে এতোদিন লাগে? তুমি কি বুঝতে পারছোনা বাচ্চাটার বাবাকে কনফার্ম করাটা কতবেশি আর্জেন্ট? আমি তোমাকে সবকিছু রাশ মুডে করতে বলেছিলাম। তবুও কেনো এতো টাইম লাগছে?”

আলভী থামলো তারপর আবারও বলতে লাগলো,
“আমি তোমাকে যথেষ্ট টাইম দিয়েছি। কালকের মধ্যে সব রেডি রাখবে নইলে আগের এসিস্ট্যান্ট লাবিবের মতো তোমাকে বাদ দিতে বাধ্য হবো।”

কথাটা শুনে অলি দুপা পিছিয়ে গেলো। ঘুরে এসে ধপ করে বিছানার উপর বসে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো সিলিংয়ের দিকে। কিছুক্ষণ সেভাবে বসে থেকে উঠে গিয়ে বেডসাইড থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিলো তারপর ইউটিউবে সার্চ করলো,
—প্রি- নেটাল প্যাটারনিটি টেস্ট মানে কি?

সার্চের রেজাল্ট দেখে সে অবাক হলোনা। যা ধারণা করেছিলো সেটাই, অলির মনে হতে লাগলো তার হৃৎপিন্ডটা কেউ চেপে ধরে টেনে বের করে আনতে চাইছে। সে ছটফট করতে লাগলো কিন্তু রুম সাউন্ডপ্রুফ হওয়াতে তার গোঙানির শব্দ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটি টের পেলোনা। সে হয়তো তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। অলি টেবিলের উপর রাখা পানিটুকু খেয়ে ধীরপায়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। চোখ মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে মনে মনে আওড়ালো,
“সে একজন ডাক্তার। হতে পারে অন্য কারো বিষয় নিয়ে কথা বলছে। হ্যাঁ সেটাই হবে, আমি একটু বেশি বেশিই ভাবছি।”

অলি ওড়না দিয়েই হাত মুখ মুছতে মুছতে রুমে ফিরে এলো। আলভী খাটের উপর বসে ফোন চাপছে। অলিকে দেখেই সে উঠে দাড়ালো,
“একা একাই চলে এলে?”

অলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো,

“তোমাকে কতোবার বলেছি একা একা সিড়ি দিয়ে চলাফেরা করবেনা।”

“চিন্তা করবেন না আমি তো ঠিক আছি।”

“হুম কিন্তু এই অবস্থায় আর কখনো একা একা সিড়ি পার হবেনা বুঝলে?”

অলি মাথা নেড়ে খাটের দিকে এগিয়ে যেতে নেয় কিন্তু কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,
“আপনি আলোকে নিয়ে অনেক চিন্তা করেন তাইনা?”

অলির এহেন প্রশ্নে আলভী কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। অলি মৃদু হেসে বলল,
“চিন্তা করেন সেই জন্যই তো আমার এতো খেয়াল রাখেন। শত হলেও আলো তো আপনারই অংশ।”

অলির কথাটা শুনে আলভীর চোখজোড়া বড়বড় হয়ে গেলো। এর আগে অলি কক্ষনো এভাবে বলেনি তাকে।
“তুমি হঠাৎ এভাবে বলছো কেনো?”

“কিভাবে বললাম? জানেন আমি অনেক বেশি এক্সাইটেড ওর মুখ দেখার জন্য। ওর নরম ছোট্ট তুলতুলে হাতটা ধরার জন্য। আপনিও অনেক এক্সাইটেড তাইনা? বাচ্চারা তো দু বছর থেকেই আধো আধো কথা বলতে শুরু করে। আচ্ছা যখন আলো আপনাকে বাবা বলে ডাকবে তখন আপনার কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবেন? আহ আমার তো ভাবতেই ভালো লাগছে। যেদিন ও আমাকে প্রথম মা বলে ডাকবে আমি হয়তো খুশিতে পাগলই হয়ে যাবো।”

আলভী স্তব্ধ হয়ে অলির দিকে তাকিয়ে আছে। সে কখনো এসব নিয়ে ভাবেনি। সত্যিই কি বেবিটা তাকে বাবা বলে ডাকবে? ভাবনাটা মাথায় আসতেই আলভী হকচকিয়ে গেলো। এ কেমন অদ্ভুত ভাবনা? বেবিটা তার হলে বাবা বলে না ডেকে কি আলভী তাসনীম মির্জা বলে ডাকবে? কথাটা মনে হতেই তার গলা শুকিয়ে এলো, অলি যদি একবার জানতে পারে সে বেবিটাকে নিয়ে এসব ভাবে তাহলে নিশ্চিত তাকে বাবা ডাক শোনার আগেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে। আলভীর চেহারা দেখে অলির সন্দেহ আরও নিগূঢ় হলো। মূলত আলভীর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যই সে এসব বলেছে, অলি এগিয়ে এসে আলভীর বাহু জড়িয়ে ধরলো,
“আচ্ছা আপনি আপনার ছেলেকে পেয়ে আমাকে কম কম ভালোবাসবেন নাতো?”

আলভী বিরবির করে আওড়ালো,
“আমার ছেলে?”

“কি হলো বলুন,”

আলভী মেকি হেসে বলতে লাগলো, “না বউজান আমি তখন আরও বেশি ভালোবাসবো তোমায়। ওকে ভালোবাসার জন্য তো তুমি আছোই তাইনা? কিন্তু তোমাকে ভালোবাসার জন্য আমি ছাড়া আর কে আছে?”

অলির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। আলভী সবসময় বাচ্চাটাকে ইগনোর করে যেন বাচ্চাটাকে নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। আলভী অলিকে ছাড়িয়ে সামনে আনলো তারপর তার মুখটা হাতের আঁজলায় নিয়ে ঠোঁটে চুমু খেতে চাইলো কিন্তু অলি দুপা পিছিয়ে গেলো। আলভী অবাক চোখে অলির দিকে তাকিয়ে রইলো। সেদিনের পর থেকে অলি কখনোই তাকে বাধা দেয়নি তাহলে হঠাৎ কি হলো?
“হানিবি কি হলো?”

অলি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বেডের উপর বসলো,
“আসলে আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা।”

কথাটা শুনে আলভী ব্যতিব্যস্ত হয়ে অলির সামনে এসে বসলো,
“কি হয়েছে হানিবি? তোমার কোথাও ব্যাথা হচ্ছে?”

অলি নিশ্চুপ, আলভী আরও চিন্তায় পড়ে গেলো। সে অলিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নরম কন্ঠে বলল,
“হানিবি, বলো কি হয়েছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো। প্লিজ কষ্ট চেপে রেখোনা। তোমার কিছু হয়ে গেলে কিন্তু আমিও ম*রে যাবো। এটা সবসময় মনে রেখো।”

অলির চোখের কোণে পানি জমেছে। সে আলভীর হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রেখে বললো,
“আমার এখানে কষ্ট হচ্ছে, আপনি না হার্টের ডাক্তার আমার হার্ট টাকে পরিবর্তন করে দেবেন?”

আলভী হতবিহ্বল হয়ে অলির মুখের দিকে তাকালো। অলি ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে ফলস্বরূপ নাকের পাটা টাও লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
“কি হয়েছে? তোমার মন খারাপ?”

অলি আলভীর চোখে চোখ রাখে আলভীর চোখজোড়া অনুভূতিশূন্য। সে আলভীর হাত ছেড়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
“আমার হার্ট অনেক দূর্বল। একটুতেই ভেঙ্গে যেতে চায়। এতো দূর্বল হার্ট নিয়ে এতো এতো কঠিন পরিস্থিতি সামলানো আমার পক্ষে দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। আপনি কোনোভাবে আমার হার্ট রিপ্লেস করে দিন না।”

আলভী বুঝতে পারলো কোনো একটা অজানা কারণে অলির মন মেজাজ ভালো নেই, তাই সে আলতো হাতে অলিকে নিজের বুকের সাথে আঁকড়ে ধরলো।
“হার্ট রিপ্লেস করতে হবে কেনো? তোমার তো এমনিতেই দুটো হার্ট, এই যে এখন যেই হৃৎযন্ত্রের ধুকপুকানি শুনতে পাচ্ছো সেটাও যে তোমার। সকল কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আছি তো আমি। তুমি শুধু আমার বুকের সাথে মিশে থাকো।”

অলি সত্যিই আলভীর বুকের সাথে মিশে রইলো। আর কোনো কথা বললোনা।

রাত দুটো।

চারদিকে নিস্তব্ধতা, ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দ ব্যাতিত অন্য কোনো গুঞ্জন নেই। জানালার আধখোলা পর্দার ফাঁক গলে ভেতরে ঢুকেছে পূর্ণিমার আলো, রূপালি আভা ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো রুমে। বিছানার হলুদ রঙের চাদরে সেই আলো যেন মৃদু ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আলভী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে অলিকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে, আলভীর তপ্ত নিশ্বাস অলির ঘাড়ের ভাজে আছড়ে পড়ছে। অন্যদিন হলে অলিও হয়তো ঘুমে নিমজ্জিত থাকতো। কিন্তু আজকে তার চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছেনা। কিছু একটা বুকের ভেতর খচখচ করছে।
যতক্ষণ না সে সব রহস্যের খোলাসা করতে পারবে ততক্ষণ তার চোখে আর ঘুম নামবে না। সে এসেছিলো আলভীকে ইয়াদের ব্যাপারে জানাতে। ইয়াদকে তার সন্দেহ হচ্ছে। যদিও আলভীর মতে এখন তারা বিপদমুক্ত, একে তো রিফাত বেচে নেই আরেক হলো রূপসার বিষ দাঁত আলভী উপড়ে ফেলেছে। তাই আলভী হয়তো রিল্যাক্স মুডে আছে। কিন্তু অলির কেনো এমন মনে হচ্ছে যে খুব শীঘ্রই খারাপ কিছু হতে চলেছে? সে এইট্টি পার্সেন্ট সিওর যে সেদিন রিফাতের পার্টনার লোকটা ইয়াদই ছিলো। ইয়াদ আলভীর কাজিন না হলে সে একদম হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর হয়ে যেতো।
অলি ভেবেছিলো ইয়াদের বিষয়ে আলভীকে জানিয়ে তারা দুজন মিলে এই রহস্য উন্মোচন করবে। কিন্তু…অলির তো এখন আলভীকে নিয়েও ভয় হচ্ছে। লোকটার মনে ঠিক কি চলছে সে বুঝে উঠতে পারছেনা। অলি আলভীকে বিশ্বাস করলেও আলভী যে আলোকে প্রোটেক্ট করবে সেই বিষয়ে ভরসা করতে পারছেনা। মূলত আলভীর কেয়ারলেস বিহেভিয়ারের জন্যই অলি ভয়ে আছে। অলি নিজের পেটের উপর হাত রেখে মনে মনেই বলল,
“তোর মা থাকতে কেউ তোকে ছুতেও পারবেনা। আমি তোকে রক্ষা করবো আলো।”

আলভী নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। অলি বুঝতে পারলো আলভী সহজে উঠবেনা। অলি আলভীর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসলো তারপর খাট থেকে নেমে আলভীর পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে আলভীর ফোনটা হাতে নিলো। সে কখনোই আলভীর ফোন ধরেনা। আলভী অনেক সময়েই অলির ফোন ধরে কিন্তু অলি আলভীর ফোনের পাসওয়ার্ডটাও জানেনা। অলি আবারও নিজের স্থানে এসে ধীরেসুস্থে আলতো করে আলভীর হাতের আঙুলটা নিয়ে গেল ফোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরে।
“টিক্” শব্দে স্ক্রিন জ্বলে উঠতেই অলির বুকের ভেতর কাঁপন বয়ে গেল। তার ভালো লাগছেনা এভাবে আলভীর পারমিশন ছাড়া তার ফোনে হাত দিতে কিন্তু তাকে আগে আলভীকে নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে হবে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে যায় তাহলে ধ্বংস নিশ্চিত। অলি ধ্বংস হতে ভয় পায়না কিন্তু আলোকে সে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবে। অন্তত সে বেচে থাকতে আলোকে অশুভ কিছু স্পর্শ করতে পারবেনা।
অলি ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। সেখানে থাকা চেয়ারে বসে সে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলো। হাত অস্বাভাবিকভাবে কাপছে মনে হচ্ছে সে চোর ধরতে নয় নিজেই চুরি করতে এসেছে। হোয়াটসঅ্যাপের সবার উপরে রয়েছে রাজিবের নম্বর। অলি জানে রাজিব হচ্ছে আলভীর নতুন ফিজিশিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্ট। লাবিবকে আলভী পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিলো অলির ছবি তার কাছে সেন্ড করে ঝামেলা সৃষ্টি করার জন্য। এটা অবশ্য আলভীই অলিকে বলেছে। অলি স্ক্রোল করে একেবারে প্রথম থেকে মেসেজ গুলো পড়তে শুরু করলো।
—USA এর ল্যাবে স্যাম্পল পাঠিয়ে দেয়া ডান স্যার।

—সবকিছু রাশ মুডে করবে পেশেন্টের অল্রেডি ৩৭ সপ্তাহ চলছে তার ডেলিভারির আগেই যেন রিপোর্ট পেয়ে যাই।

—স্যার কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করবো?

—হুম?

—পেশেন্ট কি আপনার আত্মীয় হয়? না মানে এতো টাকা খরচ করে সবচেয়ে ভালো ল্যাবে পাঠাতে বললেন তার উপর এসব তো আমাদের কাজের মধ্যেও পড়েনা।

—মাইন্ড ইওর বিজনেস আর ভবিষ্যতে কখনো এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করবেনা। শুধু যেটুকু বলবো সেটুকুই করবে।

—ওকে স্যার স্যরি। আর করবোনা।

এরপর আর রাজিবের সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেনি আলভী। শুধু আজকেই এই বিষয়ে আরেকটা ম্যাসেজ দিয়ে বলেছে,
—কালকের মধ্যে রিপোর্ট না পেলে তোমাকে আর কাজে আসতে হবেনা।

অলি আশ্চর্য হয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো। আলভী এসব করেছে সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা। সে ফোনটা রেখে দেয়ার উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়াতেই আলভীর হোয়াটসঅ্যাপে দিহানের ম্যাসেজ আসে। অলি আবারও চেয়ারে বসে পড়লো তার এবার ভীষণ ভয় করছে। সে আর কিছু দেখতে চায়না, সাহসে কুলাচ্ছেনা। তবুও সে কম্পিত হস্তে দিহানের ম্যাসেজ ওপেন করলো।
—কিরে কালকে দেশের বাইরে যেতে হবে বলে আমার ঘুম আসছেনা কিন্তু তুই এতো রাতে অনলাইনে কি করিস হুম?

অলি আগের ম্যাসেজগুলো দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু আলভী হয়তো দিহানের আগের ম্যাসেজ গুলো ডিলেট করে ফেলেছে। অলি জানে এই দিহান আলভীর ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে তাই এর থেকেই পুরো ঘটনাটা বের করতে হবে। অলি এবার বুদ্ধি খাটিয়ে আলভী সেজে দিহানকে ম্যাসেজ পাঠালো,
—এখনো রিপোর্ট হাতে পেলাম না তাই চিন্তা হচ্ছে।

কিছুক্ষণ যেতেই দিহান রিপ্লাই দেয়,
—বাচ্চাটার বাবা তুই-ই হবি। শুধু শুধু চিন্তা করিসনা।

অলি এবার কান্না করে দিলো। তার মানে আলভী এতদিন যাবত বাচ্চাটাকে সন্দেহ করতো? অলি চোখ জোড়া মুছে নিজেকে সামলে নিলো। ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। অলি সময় নিয়ে টাইপ করলো,
—আমার মনে হয়না যে বাচ্চাটার বাবা আমি।

দিহান আর রিপ্লাই দিলোনা। অলি বুঝতে পারলোনা কিছুই। সে উঠে গিয়ে ব্যালকনির রেলিঙে হাত রাখলো। চোখের পানিও যেন এবার অভিমান করলো তার সাথে, বুক ফেটে যাচ্ছে তবে চোখ দিয়ে আর পানি বের হচ্ছেনা। কিছুক্ষণ যেতেই চেয়ারের উপরে রাখা ফোনটায় টুং করে শব্দ হলো। অলি এগিয়ে গিয়ে দেখলো দিহান অনেক বড় একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। হয়তো এটা লিখতেই এতোটা সময় লেগেছে,
—দেখ লাস্ট বারের মতো বলছি এসব নিয়ে ভাবিস না। রিফাত সেদিন ভাবীর সাথে খারাপ কিছু করলে কি ভাবী সেটা তোকে বলতোনা? মানলাম ভাবী হয়তো তোর থেকে লুকিয়েছে কিন্তু ভাবীর সাথে রিফাত কিছু করে থাকলেও সেই জন্য তুই-ই দায়ী। তোর সাথে শত্রুতা করেই রিফাত তেমনটা করেছিলো। আর তুই যে বেবিটাকে দত্তক দিয়ে দিতে চাইছিস। একবার ভেবে দেখেছিস ভবিষ্যতে এই কথাটা ভাবী জানলে সে কতোটা কষ্ট পাবে? ভাবী যখন জানবে তার মৃত বাচ্চা হয়েছে তখন তুই কিন্তু ভাবীকে সামলাতে পারবিনা এভি। প্লিজ এবার এসব বন্ধ কর। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তুই শুধু নিউজটা ধামাচাপা দিতে এসব করছিস কিন্তু এখন বুঝতে পারছি যে তোর মনে এই বিষয়ে আগে থেকেই সন্দেহ ছিলো।

অলি পুরো ম্যাসেজটা পড়লো কিন্তু তার একটুও খারাপ লাগলোনা। অলি হয়তো বুঝতেই পারলোনা যে সে খারাপ লাগা অনুভব করার ক্ষমতা ইতোমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছে। সে নিষ্পলক চোখে ম্যাসেজগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে রিপ্লাই দিলো,
—হ্যাঁ নিউজ টার জন্যই আমি এমনটা করেছি।

অলি জানেনা যে দিহান কোন নিউজের কথা বলছে তবে তাকে জানতে হবে সবটা তাই এভাবে বলেছে।
—তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে মাঝরাতে? নাকি ইয়ার্কি করছিস? নিউজের চ্যাপ্টারটা তো একদিনেই ক্লোজড করে দিয়েছিলি সেই জন্য NIPP টেস্ট করার কোনো প্রয়োজনই ছিলোনা। তাছাড়া লাবিবকেও তো তুই নিউজটা ছড়ানোর জন্য নিজের হাতে মে*রে ফেললি।

লাবিবকে আলভী মে*রে ফেলেছে শুনে অলির হয়তো আঁতকে ওঠার কথা ছিলো কিন্তু তার মাঝে কোনো ভাবাবেগ হলোনা সে আবার রিপ্লাই দিলো,
—আমার এখন মনে হচ্ছে নিউজটা হয়তো সঠিক ছিলো।

এদিকে আলভীর উদ্ভট ম্যাসেজগুলো দেখে দিহানের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে রেগেমেগে ম্যাসেজ দিলো,
—ওই সম্বন্ধী, তুই কি ড্রিংকস করেছিস? নিউজে বলা হচ্ছিলো ভাবী একজন ক্যারেক্টরলেস গার্ল সে একদিন তোকে ড্রিংক করিয়ে তোর সাথে ইন্টিমেট হয়েছিলো তারপর তোকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলো। তার উপর অন্য একজনের বাচ্চা তোর বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। আর তুই বলছিস তোর মনে হচ্ছে নিউজটা সঠিক ছিলো?

অলি এবার আর রিপ্লাই দিলোনা। সে সব জেনে গেছে আর বুঝেও গেছে। সে ম্যাসেজগুলো ডিলেট করে ফোনটা আগের জায়গাতে রেখে দিলো। তাকিয়ে দেখলো আলভী এখনো ঘুমে মগ্ন, সে সেদিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। অলির মনে হচ্ছে আকাশের বুকে থাকা চাঁদটাও যেন তার দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে। সে হাত দিয়ে নিজের পেট আড়াল করে নিলো, বিরবির করে বলতে লাগলো,
“আলো শুধু আমার ছেলে। আর কারো নয়, একমাত্র আমিই প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করেছি যে ও আমার ছেলে, আমার প্রাণ। ও কারো নয়। ছিহ, আমার ভাবতেও ঘেন্না লাগছে যে উনি তোকে রিফাতের বাচ্চাও ভেবে নিয়েছিলো। ওনার মনে হচ্ছে যে সেদিন শুধু উনিই আমাকে রে/প করেননি। রিফাতও করেছিলো?”

অলির শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। কান্নাগুলো গলার ভেতর দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। সে কাদতে চাইছে কিন্তু পারছেনা। অলি ঘন্টাখানেক একভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। এখন রাত্রী সাড়ে তিনটা, অলি নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটাই নিয়ে নিলো এই এক ঘন্টায়। সে এবার রুমে ঢুকে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো আলভীর দিকে। আলভীর পাশে শুয়ে দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরে চোখমুখে একে দিতে লাগলো অজস্র চুমু, অলির ঠোঁটের স্পর্শে ঘুমের ঘোরেই অলিকে নিজের কাছে টেনে নিলো আলভী। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
“আরও আদর করো হানিবি। ভালো লাগছে খুব।”

আলভীর মাতাল কন্ঠে অলি দিশেহারা হয়ে গেলো। সে লেপ্টে রইলো আলভীর বুকের সাথে তারপর আনমনেই গেয়ে উঠলো,
“এমন একটা রাত দেও আল্লাহ দুনিয়ায় উপর
এক নজরে দেখবো তারে কয়েক’শো বছর।”

অলির মুখ থেকে নির্গত গানের বাক্যটা যেন আলভীর সমস্ত সত্তা জাগিয়ে তুললো, সে ফট করে চোখ মেলে তাকায়। গানের সুরেই বলে,
“বাবুই পাখির মতো দুজন বানাইবো ঘড়
আমারে ছেড়ে যাইওনা আসলে কঠিন ঝড়”

অলি মাথা তুলে আলভীর দিকে তাকালো তারপর ম্লান হেসে গানের সুরে বলল,
“যতনে রাখিও তোমারে দিলাম আমার মন।”

চলবে,

শব্দসংখ্যা- ২১৫০+

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৫৩)
#সোফিয়া_সাফা
{আলোর আগমন}

⚠️ সতর্কতা: এই পর্বে প্রসব ও নবজাতকের জন্ম সংক্রান্ত কিছু দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। যারা এই বিষয়ে সংবেদনশীল তারা সতর্কতা অবলম্বন করে পড়বেন।

ফজরের নামাজ আদায় করে অলি একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলো। শরীর ভালো লাগছেনা, রাতের ঘটনার পর তার কাছে সবকিছুই বিস্বাদ লাগছে। আলভীর ঘুম ভাঙ্গে ফোনের শব্দে, সে ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই অপর পাশ থেকে রাজিব বলে ওঠে,
“স্যার আপনার রিপোর্ট এসে গেছে।”

কথাটা কানে পৌছাতেই আলভী লাফ দিয়ে উঠে বসে।
“ওকে, ওকে। আ’ম কামিং।”

আলভী ফোনটা রেখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘন্টার কাটা ৯ টা ছুইছুই। সে ঘাড় ঘুরিয়ে অলির দিকে তাকাতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। অলি বালিশে হেলান দিয়ে অদ্ভুত চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আলভী সবচেয়ে অবাক হলো অলির চেহারার অবস্থা দেখে, চোখের নিচে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে মেয়েটার। আলভী বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো। এগিয়ে গেলো অলির দিকে, অলি নির্লিপ্ত চোখে তার দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছে।
“কি হয়েছে বউজান? তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেনো? তুমি ঠিক আছো তো?”

অলি উত্তর দিলোনা শুধু একভাবে তাকিয়ে রইলো। লোকটা কতোটা ভালো অভিনয় করতে পারে তাইনা?
“হানিবি, কিছু বলছোনা কেনো?”

অলি শান্তকন্ঠে বলল, “আপনার হয়তো দেরি হয়ে যাচ্ছে তারাতাড়ি যাওয়া উচিৎ।”

আলভীর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। অলি কেনো এভাবে কথা বলছে?
“হানিবি…

“আমার কথা বলতে ভালো লাগছেনা।”

অলি নিজের কথা নিজেই শুনতে পেলোনা যেন তার শরীর ক্রমেই হাল ছেড়ে দিচ্ছে। সেই সাথে তার কোমড়েও ব্যাথা করছে। আলভী এবার চিন্তিত হয়ে পড়লো, সে অলির পালস চেক করার জন্য হাত ধরতে গেলে অলি হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,
“আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি আলোর জন্য। ও শুধু আমার বুকের ভেতরে চলে যাচ্ছিলো। এখন আপনি আমাকে বিরক্ত করবেন না দয়া করে। আমি একটু ঘুমাতে চাই।”

কথাটা বলেই অলি ভালোভাবে শুয়ে পড়লো। আলভী আর অলিকে ঘাটালো না। অলির মন মেজাজ হয়তো খিটখিটে হয়ে আছে। সে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলো। কিন্তু অলিকে একভাবে শুয়ে থাকতে দেখে সে কোনোকিছুই ঠিকঠাক ভাবে করতে পারছেনা। এমনিতেই অপরাধ বোধে শেষ হয়ে যাচ্ছে তার উপর অলিকেও ভালো রাখতে পারছেনা। আলভী রেডি হয়ে ড্রইংরুমে এসে দুজন সার্ভেন্টকে ডাক দিলো।
“তোমরা অলির কাছে গিয়ে থাকো। ওর শরীর টা বোধহয় বেশি ভালো নেই। আমি একঘন্টার মধ্যে চলে আসবো। আর যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে কল দিও।”

আলভীর কথায় সম্মতি জানিয়ে সার্ভেন্ট দুজন উপরে যেতে লাগলো। আলভীও আর অপেক্ষা না করে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো। এদিকে সার্ভেন্ট দুজন রুমের সামনে এসে দেখলো রুম ভেতর থেকে লক করা তারা বেশি কিছু না ভেবেই আলভীর নম্বরে কল দিলো। তারা দুজন আবার আলভীর স্পেশাল সার্ভেন্ট। সব খবর টাইম টু টাইম আলভীকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু আলভী তাদের কল রিসিভ করলোনা। অলির প্রচন্ড পরিমাণে তলপেট ব্যাথা করছে তবুও সে আলমারী থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বের করে গোছাতে লাগলো। তখনই ফোনের রিংটোন শুনতে পেলো। অলি এগিয়ে গিয়ে দেখলো আলভীর ফোন বাজছে। যার মানে আলভী ভুলবশত ফোনটা রেখেই চলে গেছে। অলি নাম দেখে বুঝলো এটা একজন সার্ভেন্ট এর নম্বর। সে বেশি পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মন দিতে
চাইলো কিন্তু কিছু মুহূর্ত যেতেই ব্যাথা সহ্যের সীমানা পেরিয়ে গেলো। অলি কিছু একটা বুঝতে পেরে বলে ওঠে,
“আলো এটা সঠিক সময় বা জায়গা কোনোটাই নয়। আর একটু সময় দে আমাকে।”

অলি আচমকা তলপেটে তীব্র টান অনুভব করলো। তারপরই হঠাৎ এক প্রবল ঝাঁকুনির মতো ব্যথা তাকে গ্রাস করলো। আচমকা শরীরের ভেতর থেকে পানি ধপ করে ফ্লোরের উপর ছিটকে পড়লো। বিস্মিত আর আতঙ্কিত হয়ে অলি আলমারির সামনের ফ্লোরেই বসে পড়লো। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, প্রতিটি শ্বাসে বুকের ভেতর থেকে হাপরের মতো শব্দ বের হচ্ছে।
অলির কপাল ঘামে ভিজে একাকার, ঠোঁট শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। দু’হাত দিয়ে তলপেট চেপে ধরে ব্যথা সামলানোর বৃথা চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রতিটি ব্যথা যেন শরীরটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে।
অলির চোখে পানি চলে এলো, শুধু যন্ত্রণা থেকে নয়, আতঙ্ক থেকেও। চারদিকে কেউ নেই, সাহায্য করার মতো একজন মানুষও নেই। সে জানে এই রুম সাউন্ডপ্রুফ সে চিৎকার করে ম*রে গেলেও তার আওয়াজ কেউ শুনতে পাবেনা। নিজের শরীরের সাথে লড়াই করতে করতে অলি মেঝেতে আধশোয়া ভঙ্গিতে বসে পড়লো।
তার নখ ফ্লোরের সাথে ঘষে যাচ্ছিল অবচেতনভাবে, একবার মনে হলো হয়তো আর পারবে না, অজ্ঞান হয়ে যাবে। তীব্র ব্যথার মাঝেও বেবির কথা মনে হতেই সে শক্তি সঞ্চয় করে আবারও উঠে দাড়াতে চাইলো, কিন্তু মুহূর্তের ব্যবধানে ব্যথার তীব্রতা আরও বেড়ে গেলো। শরীরের প্রতিটি স্নায়ু টান টান হয়ে উঠছে। মাথার চুল খুলে গিয়ে পিঠের উপর লুটিয়ে পড়েছে, অলির চোখ আধবোজা হয়ে এলেও ব্যথা তাকে চেতনা হারিয়ে ফেলতেও দিচ্ছেনা।

এদিকে কিছুদূর যেতেই আলভীর মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো। সে এসব কি করছে কেনোই বা করছে? বাচ্চাটা কার সেটা জানার জন্য সে এতোটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে ঠিক ভুলের তফাৎ টুকুও বুঝে উঠতে পারছেনা। তার উপর অলির চেহারা দেখে স্বাভাবিক বলেও মনে হচ্ছিলোনা। তবুও আলভী তাকে ফেলে রেখে চলে এলো? ভাবনাটা মাথায় আসতেই আলভী অলিকে ফোন দেয়ার উদ্দেশ্যে ফোনটা খুঁজতে লাগলো কিন্তু সে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই বুঝতে পারলো যে ফোনটা বাড়িতেই রেখে এসেছে,
“ওহ নো। এখন তো কেউ আমাকে কল করেও কিছু জানাতে পারবেনা।”

আলভী হাতঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দেখলো সে বেরিয়েছে মাত্র ১৫ মিনিট হয়েছে। হসপিটালে পৌছাতে আরো ১৫ মিনিটের মতো লাগবে। আলভী জানেনা হঠাৎ কি হয়েছে কিন্তু তার কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। সে বেশি কিছু না ভেবেই গাড়িটাকে বাড়ির দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
আলভী দ্রুতপায়ে সিড়ি ডিঙিয়ে রুমের সামনে আসতেই দেখলো রুমের দরজা লক করা। সে দরজা ধাক্কাতে লাগলো,
“অলিইইই দরজা খোলো।”

ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলোনা। বাড়িতে এই সময় নূরনাহার, শাহানাজ বেগম আর কয়েকজন সার্ভেন্ট ছাড়া কেউ নেই। তারা আলভীর চিৎকার চেচামেচি শুনে একপ্রকার ছুটেই এসেছেন,
“কিরে কি হলো এভি? এরকম করছিস কেনো?”

“মা অলি দরজা খুলছেনা।”

সার্ভেন্ট দুজন এগিয়ে এসে বলল, “স্যার আমরাও কিছুক্ষণ আগে এসে ফিরে গেছি। আপনাকে কলও করেছিলাম কিন্তু আপনি রিসিভ করেননি।”

আলভী এবার চিন্তায় পড়ে গেলো।
“আমার মনে হচ্ছে অলি ঠিক নেই। দরজা ভেঙ্গে ফেলতে হবে।”

তার কথায় উপস্থিত সবাই সম্মতি জানালো। আলভী দরজা ভাঙ্গতে শুরু করলো। কাঠের শক্তপোক্ত দরজা কি এতো সহজে ভাঙ্গা যায় তবুও সে আর কয়েকজন সার্ভেন্ট মিলে দরজা ভাঙ্গতে সক্ষম হলো।

⚠️ চাইলে পরের সতর্কতা পর্যন্ত অংশটুকু স্কিপ করুন।

রুমে ঢুকেই অলির অবস্থা দেখে আলভীর হৃৎপিন্ড ছলকে উঠলো। অলি আলমারির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে গোঙাচ্ছে। জামাকাপড় সব অ্যামনিওটিক ফ্লুইডে ভেজা। অলি বহুকষ্টে উচ্চারণ করলো,
“আমি ম…রে যাচ্ছি।”

আলভী দিশেহারা হয়ে পড়লো। শাহানাজ বেগম আর নূরনাহার তার অবস্থা দেখেই বুঝলেন সে প্রসব বেদনায় ছটফট করছে।
“এভি অলিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।”

শাহানাজ বেগমের কথায় আলভীর হুশ ফিরলো সে নিজেকে কন্ট্রোল করে ব্যস্ত ভঙ্গিতে অলির সামনে গিয়ে বসলো। তাকে দেখে অলি আরও গোঙাতে লাগলো। আলভী অলির পালস, তাপমাত্রা আর শ্বাসের গতি পর্যবেক্ষণ করলো তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“রুমের বাইরে গিয়ে দাঁড়াও সবাই।”

শাহানাজ বেগম হয়তো আলভীর কথা বুঝলেন তাই বাকিদের নিয়ে সে রুমের বাইরে এসে দাড়ালেন। অলির চোখে পানি টলমল করছে। আলভী লক্ষ্য করলো আলমারি খোলা, সে দ্রুত সেখান থেকে একটা পরিষ্কার চাঁদর আর বাচ্চার জন্য আনা তোয়ালে বের করে নিচে বিছিয়ে নিলো। তারপর একমূহুর্ত অপেক্ষা না করে একটানে অলির পরণের প্লাজোটা খুলে ফেললো। অলি বাধা দিতে চেয়েও শক্তির অভাবে পারলোনা। আলভী কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করে উঠে দাড়ালো। রুম থেকে বেরিয়ে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“আমাদের হাতে সময় নেই, হসপিটালে নিতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। ওর ওয়াটার ব্রেক হয়ে গেছে। তোমরা জলদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করো। নরমাল ডেলিভারি হয়ে যাবে।”

সার্ভেন্টরা মাথা নেড়ে একপ্রকার ছুটে গেলো। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পানিতে ফুটিয়ে জীবানুমুক্ত করে নিলো তারপর একটা বোলে করে গরম পানি নিয়ে দ্রুত ফিরে এলো। আলভী ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিলো তারপরও নিশ্চিন্ত হতে এলকোহল স্যানিটাইজার ইউজ করলো। সে ফিরে এসে অলির হাত ধরে বলল,
“শোনো অলি, ভয় পেও না। আমি আছি। তুমি শুধু আমার কথাগুলো ফলো করবে।”

তারপর আলভী উঠে গিয়ে একটা বালিশ এনে অলির পিঠের পেছনে রাখল যাতে সে হেলান দিয়ে আধশোয়া হতে পারে। প্রতিটি পেইন গ্যাপসে আলভী তার শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে শিখিয়ে দিচ্ছে,
“গভীর শ্বাস নাও, ছাড়ো… হ্যাঁ, এভাবেই। শক্ত হয়ো না, রিল্যাক্স হবার চেষ্টা করো।”

অলির ব্যথামিশ্রিত চিৎকার পুরো রুমে প্রতিধ্বনি তুলছে। তার প্রত্যেকটা চিৎকার আলভীর বুকে ছুরির ন্যায়ে বিধে যাচ্ছে। আলভী একদিকে অলির হাত ধরে সাহস যোগাচ্ছিল, অন্যদিকে নজর রাখছিল প্রসেসে। কনট্রাকশনের সঙ্গে অলির শরীর কাঁপছিল, প্রতিবার সে শ্বাস টেনে নিচ্ছিল হাপরের মতো। একপর্যায়ে প্রসবের অগ্রগতি দেখে আলভী বুঝলো বেবির মাথা বের হওয়ার সময় এসে গেছে।
“অলি, আরেকটু পুশ করো… হ্যাঁ, ঠিক এভাবেই…”

অলির কান্না, চিৎকারের মাঝেই ধীরে ধীরে বেবির মাথা দেখা গেল। আলভী সাবধানে মাথা ধরে রাখল, তারপর কাঁধ, শেষমেশ বেবিটা পুরোপুরি পৃথিবীর আলো দেখল। আলভী দুহাতে সাবধানে ছোট্ট শরীরটাকে তুলে আনলো। সঙ্গে সঙ্গে হালকা কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। অলি অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে রইলো। আলভীর হাত অনবরত কাপছে, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সে যেন একযুগ ধরে তৃষ্ণার্থ। বাচ্চাটার কান্নার আওয়াজ তার ভেতরে ঝড় তুলছে।

তবে এবার কর্ড কাটা দরকার।
আলভী কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে পরিষ্কার কাঁচিটা হাতে নিলো তারপর নাভির কর্ড দু জায়গায় শক্ত করে কাপড় দিয়ে বেঁধে মাঝখান থেকে সাবধানে কেটে ফেললো। বাচ্চাটাকে তোয়ালেতে মুড়িয়ে অলির বুকে শুইয়ে দিলো। ত্বক থেকে ত্বকের সংস্পর্শে আসতেই বাচ্চাটার কান্না ধীরে ধীরে থেমে গেলো।
আলভী এবার অলির দিকে মনোযোগ দিলো। প্রসবের পর তার শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে গেছে। অলিকে আরামদায়ক ভঙ্গিতে শুইয়ে দিয়ে আলভী একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে নিচের রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে লাগলো বাচ্চা জন্মের পর অলির প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছে আলভী জানে এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
আলভী দ্রুত নিজের হাত আবারও ভালোভাবে স্যানিটাইজ করে নিলো। তারপর সাবধানে অলির তলপেটের ওপর হাত রেখে uterus massage শুরু করলো। আঙুলগুলো দিয়ে একটু শক্ত চাপ দিয়ে বারবার বৃত্তাকারে নাড়তে লাগলো জরায়ুর উপরিভাগে। আলভীর শরীর কাঁপছিল, কিন্তু হাতের কাজ ছিলো দক্ষ।
প্রথমদিকে অলি যন্ত্রণায় গোঙাতে লাগলো। আলভী বুঝতে পারলো, uterus massage অস্বস্তিকর, কিন্তু জরুরি। সে প্রতিবার নিচের দিকে চাপ দিয়ে জরায়ুকে শক্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো, যেন অতিরিক্ত রক্তপাত থেমে যায়। কয়েক মিনিট পর ধীরে ধীরে জরায়ু টাইট হয়ে আসতে শুরু করলো।

আলভী এক হাতে মৃদু চাপ দিয়ে uterine fundus টিপে টিপে দেখতে লাগলো, সেটা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্ত অনুভূত হচ্ছে। এতে সে কিছুটা স্বস্তি পেলো।
“হয়েছে অলি, সবকিছু ঠিকঠাক আছে। রক্তপাত স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।”

অলি দুর্বল গলায় কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলোনা, শুধু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আলভী তাড়াহুড়ো না করে ধীরস্থিরভাবে massage চালিয়ে যেতে লাগলো, যতক্ষণ না জরায়ু পুরোপুরি কনট্র্যাক্ট হয়ে শক্ত হয়ে আসে।

⚠️ নিচের অংশটুকু সবার জন্য উন্মুক্ত।

অলি বাচ্চাটাকে দুহাতে আগলে রেখেছে। নিজের অবস্থার পরোয়া সে করেনা। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সে শুধু তার বাচ্চাকে প্রোটেক্ট করতে চায়। আলভীর মনোযোগ অলির দিকে হলেও চাহনি বাচ্চাটার দিকে নিবদ্ধ। অলি নিজ হাতে তোয়ালে দিয়ে ছেলের গলার নিচ আর কানের আশপাশ পরিষ্কার করে দিলো।
“ওকে এদিকে দেও দেখি।”

অলির বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। মাথা নেড়ে না বলল। আলভীর কপাল কুচকে এলো,
“আরে বাচ্চার apgar score পরীক্ষা করাটা জরুরী। দেও আমাকে।”

অলির চোখজোড়া ছলছল করছে। অজানা ভয়ে সে চুপসে গেলো। আলভী তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল,
“আরে এরকম করছো কেনো? আমি ৫ মিনিট দেখে আবার তোমাকে দিয়ে দেবো।”

আলভী এবার উত্তরের অপেক্ষা না করে অলির হাত থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে নিলো। অলির শরীর এতোটাই দূর্বল যে তাকে আটকানোর শক্তি টুকুও পেলোনা। আলভী বাচ্চাটার পুরো শরীর চেক করলো। তারপর শ্বাস প্রশ্বাস আর পালস রেট চেক করে কারোটিড পালস চেক করতে গিয়ে দেখলো বাচ্চাটার ঘাড়েও আলভীর মতোই একটা তিল আছে। একদম সেম জায়গায়, আলভী বেশ কিছুক্ষণ সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো। এরই মাঝে বাচ্চাটা কেদে ওঠে, কান্নার শব্দে আলভী ধরফরিয়ে উঠলো। অলি এবার সোজা হয়ে বসে বাচ্চাটাকে নিয়ে নিলো,
“আপ…নি ওকে ধরবেন না।”

অলির কথায় আলভীর হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম।
“কেনো কি হয়েছে?”

অলি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, “কিচ্ছু হয়নি। আলো শুধুমাত্র আমার ছেলে। আর কারো সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নেই।”

অলির তিক্ত কথায় আলভীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। এরই মাঝে রুমে শাহানাজ বেগম আর নূরনাহার প্রবেশ করলেন। অলি তাদেরকে দেখে চাঁদর টা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিলো।
“দেখি দেখি আমার নাতির মুখটা দেখি আগে।”

শাহানাজ বেগম এগিয়ে এলেন। অলি তাকে কিছু বলতে পারলোনা। সে আলোকে কোলে নিয়ে ভালোকরে দেখে বলে উঠলেন,
“হায় আল্লাহ এতো দেখছি পুরোই এভির মতো দেখতে হয়েছে। পুরো চেহারাটাই তো হুবহু এভির মতো।”

কথাটা কানে পৌছাতেই আলভীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
“কই দেখি,”

আলভী শাহানাজ বেগমের দিকে ঝুকে গেলো। এদিকে অলি দাতে দাত চেপে সব সহ্য করে নিচ্ছে। বড়দের সামনে বেয়াদবি চাইলেও করতে পারেনা সে। করবেই বা কিভাবে তার বাবা মা এমন শিক্ষা দেয়নি। আলভী গোল গোল চোখে নিজের ক্ষুদ্র অংশের দিকে তাকিয়ে আছে। বাচ্চাটার দিকে তাকালে যেন চোখ ফেরানো দায়। এরকম কেনো হচ্ছে? আলভী মায়ের হাত থেকে বাচ্চাটা নিয়ে নিতে চাইলে শাহানাজ বেগম বিরক্তসূচক শব্দ উচ্চারণ করে বলে,
“এরকম করছিস কেনো? দাদুভাইকে প্রথমবার দেখলাম। একটু দেখতে দেনা ভালো করে।”

নূরনাহার এগিয়ে গেলেন অলির দিকে,
“বউমা তুমি ঠিক আছো তো?”

অলি মাথা নিচু করে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। কিন্তু সে ঠিক নেই। তার বাচ্চাকে কারো ছোয়ার অধিকার নেই। তারপরও কেনো ছুয়ে দিচ্ছে। তার বাচ্চাটা যে তাদের ছোয়া সহ্য করতে পারবেনা। একজন সার্ভেন্ট এসে রুমের ফ্লোর পরিষ্কার করতে লাগলো। তারপর নোংরা কাপড়গুলো নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নূরনাহার অলিকে ফ্রেশ করিয়ে খাটে নিয়ে বসিয়ে দিলেন। আলভী যেন কথা বলতেও ভুলেই গেছে সে শুধু মায়ের কোলে থাকা ছোট্ট প্রাণটার দিকে তাকিয়ে আছে যেটা অলি মোটেও সহ্য করতে পারছেনা। শাহানাজ বেগম নাতির মুখ দেখে একটা স্বর্ণের চেইন পরিয়ে দিতে চাইলে আলভী বাধা দিয়ে বলে,
“বাচ্চাদের এসব মেটালের জিনিস না পড়ানোই ভালো আর তুমি এটা কি করছো মা? ছেলেরা গোল্ড ব্যাবহার করেনা জানোনা?”

শাহানাজ বেগম ইতস্তত বোধ করে বললেন,
“তো আমার নাতিকে কি খালি হাতে দেখবো নাকি? ও না পড়ুক বউমা পড়বে।”

অলি আর শাহানাজ বেগমের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও এই প্রথমবার সে অলিকে বউমা বলে ডেকেছেন। অলি তবুও ভ্রুক্ষেপ করলোনা। তার সোনাদানা কিছুই চাইনা তার ছেলেটাকে দিয়ে দিলেই সে খুশি হয়ে যাবে।
অলির কথা মনে হতেই আলভী দ্রুতপায়ে অলির পাশে এসে বসলো,
“তুমি ঠিক আছো তো?”

অলি তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, “আমি একদম ঠিক নেই। আমার ছেলেকে আমার কোলে এনে দিন।”

অলির কন্ঠ শুনে আলভী ভড়কে গেলো। অলি কখনোই এভাবে কথা বলেনা। তাহলে হঠাৎ কি হয়েছে তার? ভাবনার মাঝেই বাচ্চাটা কেদে ওঠে। অলি সমস্ত কষ্ট ভুলে উঠে দাড়াতে চায়। কিন্তু পেরে ওঠেনা আলভী তার অবস্থা বুঝতে পেরে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
“ওর হয়তো ক্ষুধা লেগেছে। ওকে অলির কাছে দেও।”

শাহানাজ বেগম সম্মতি জানিয়ে বাচ্চাটাকে অলির কোলে দিয়ে দেয়। ছেলেকে কোলে পেয়ে অলির অস্থিরতা কমে গেলো। এদিকে আলভীর মনে ভয় দানা বাধতে শুরু করেছে। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অলির দিকে।
“দাদুভাইকে কি নামে ডাকা যায় বলতো?”

শাহানাজ বেগমের প্রশ্নে আলভীর ধ্যান ভাঙ্গলো,
“আফরান আরিশ। ওর মা আগেই ওর নাম ঠিক করে রেখেছিলো।”

“বাহঃ নামটা বেশ ভালো। আরিশ মানে তো আশ্রয় তাইনা?”
নূরনাহারের কথা শুনে অলি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। কিন্তু আরিশের কান্না থামার নাম নেই। এতোগুলো মানুষের সামনে অলি খাওয়াতেও পারবেনা। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আলভী বলল,
“তোমরা যাওনা গিয়ে বাবা, কাকাসহ আত্মীয় স্বজনদের সুখবর টা জানিয়ে এসো।”

তারা দুজন মাথা নেড়ে চলে গেলেন। তারপর আলভীও একটা শ্বাস ফেলে ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। ব্যালকনিতে এসে বসা মাত্রই আলভীর ফোনটা বেজে ওঠে সে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে,
Dihan’s calling…

আলভী বেশি কিছু না ভেবে কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরে,
“কিরে কি খবর তোর? মাথা ঠিক আছে এখন?”

আলভী বুঝে উঠতে পারলোনা যে দিহান মাথা ঠিক হওয়ার কথা কেনো বলেছে। তবে সে প্রতিউত্তরে বলল,
“ছেলে হয়ে গেছে।”

আচমকা আলভীর কথা শুনে দিহান তাজ্জব বনে গেলো,
“মানে? কার ছেলে হয়ে গেছে?”

আলভী অবচেতন মনেই বলে ওঠে, “আমার ছেলে।”

উক্ত কথাটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা দিহান। তার উপর আলভী যেভাবে ‘আমার ছেলে’ বলেছে সেটা শুনে তার মাথা ঘুরে গেলো,
“ভাই তোর মাথা এখনো ঠিক হয়েছে বলে মনে হয়না। কিসব আবোল তাবোল বকছিস? আর রাত পোহাতেই ছেলে হয়ে গেছে মানে কি?”

আলভীর মেজাজ খারাপ হলো। এই বেকুবের সাথে সে কোন দুঃখে বোনের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে কে জানে।
“আমি সিরিয়াসলি বলছি।”

দিহান এবার নড়েচড়ে বসলো, “আলহামদুলিল্লাহ, ছেলে আর ভাবী সুস্থ আছে তো?”

“হুম আল্লাহর রহমতে দুজনেই সুস্থ আছে।”

“কিন্তু কখন হলো? আমাকে কেনো বললিনা?”

“বাড়িতেই নরমাল ডেলিভারি হয়ে গেছে। বলার সুযোগ পাইনি।”

দিহান কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো, “তুই কি NIPP টেস্টের রিপোর্ট পেয়ে গেছিস?”

আলভী ব্যালকনির দরজার দিকে একবার তাকিয়ে নিম্নস্বরে বলল,
“হুম আজকে সকালেই রিপোর্ট এসে গেছে।”

দিহান এবার আইডিয়া করেই বলে ওঠে, “ওহ এই জন্যই তো বলি তুই হঠাৎ ‘আমার ছেলে’ বললি কেনো।”

আলভী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমি রিপোর্টটা দেখিনি এখনো।”

দিহান বিস্ফোরিত কন্ঠে চিল্লিয়ে উঠলো, “তাহলে তুই হঠাৎ ‘আমার ছেলে’ বললি কেন? প্লিজ ভুল করে বলে ফেলেছিস এটা বলিস না।”

আলভী চাপা শ্বাস ফেলে বলল, “রিপোর্ট আর দেখতে হবেনা। বাচ্চাটা আমারই।”

“তুই এতোটা নিশ্চিত হয়ে কিভাবে বলছিস?”

“ওকে কোলে নিয়েই বুঝে গেছি। কি কিউট দেখতে মাশাল্লাহ। জানিস এতো কিউট বেবি আমি ইহজন্মে দেখিনি। এতো কিউট বেবি আমার ছাড়া আর কার হবে বল?”

দিহান হাসি আটকে রেখে বলল, “কে যেনো বলেছিলো বাচ্চাটা জন্মের পরই দত্তক দিয়ে দেবে।”

আলভী হাসফাস করে উঠলো, “চুপ, আমি সেদিন লাবিবের উপর রেগেমেগে বলে ফেলেছিলাম। অনেক হয়েছে, এটা নিয়ে আমাকে আর কথা শোনাস না প্লিজ। আমি কখনোই এমন করতাম না। আমি জানি বাচ্চাটা অলির প্রাণ। বাচ্চার কিছু হয়েছে শুনলে ও নিজেও ম*রে যাবে।”

“আগামীকাল আমার ফ্লাইট ভাবছি তোর ছেলেকে দেখেই যাবো।”

“হুম তাহলে চলে আয় রাখি।”

“ওই ওয়েট ওয়েট,”

“কি?”

“তোর মাঝরাতে কি হয়েছিলো বলতো? তোর কি আসলেই লাবিব যেই নিউজটা ছড়িয়েছিলো সেটা সত্যি বলে মনে হচ্ছিলো?”

আলভী বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো, “হোয়াট? কিসব বলছিস?”

“আমি বলছি? তুই-ই তো মাঝরাতে ম্যাসেজ দিয়ে আমাকে এসব বললি।”

আলভী স্তব্ধ হয়ে গেলো। “তোর মনে হয় যে আমি এসব বলেছি? আরে আমার কাছে যদি নিউজটা সত্যি বলেই মনে হতো তাহলে কি আমি লাবিবকে মা*রতে মা*রতে মে*রে ফেলতাম?”

“তাহলে? ম্যাসেজ গুলো কে দিয়েছিলো।”

আলভী কয়েকটা শুষ্ক ঢোক গিলে দরজার দিকে তাকালো। তারপর ফোনটা সামনে এনে হোয়াটসঅ্যাপ চেক করতে লাগলো কিন্তু কোনো ম্যাসেজ পেলোনা। আলভী হতাশ হয়ে দিহানকে বলল,
“ম্যাসেজ তো নেই। স্ক্রিনশট দে দেখি।”

অলি ম্যাসেজ গুলো ডিলেট ফর এভরিওন না করে ডিলেট ফর মি করেছিলো ফলস্বরূপ ম্যাসেজ গুলো শুধু আলভীর ফোন থেকেই ডিলেট হয়েছে। কিছুক্ষণ পর দিহান স্ক্রিনশট দিতেই আলভীর চোখ কপালে উঠে গেলো।
“এই তুই এসব কি করেছিস? হায় আল্লাহ আমি এখন কি করবো?”

দিহান কিছুই বুঝতে পারলোনা। “আমি কি করেছি?”

“আমি তোকে ম্যাসেজগুলো দেইনি।”

“তাহলে কে দিয়েছিলো?”

আলভী মাঝরাত থেকে এখন পর্যন্ত সকল ঘটনা একসাথে জুড়ে বুঝতে পারলো যে অলিই ম্যাসেজ গুলো দিয়েছে। এটা বুঝতে পেরেই সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। সে আর কিছু ভাবতে না পেরে রুমে চলে এলো। আলভী এরকম হঠাৎ চলে আসাতে অলির অস্বস্তিতে পড়ার কথা থাকলেও মেয়েটা মাথা তুলে চাইলো না পর্যন্ত। শুধু গায়ের ওড়নাটা আরেকটু টেনে ছেলেকে ঢেকে নিলো। আলভী আলগোছে অলির পাশে বসে ডেকে ওঠে,
“বউজান।”

ডাকটা শুনে অলি আলভীর দিকে তাকায়। অলির চোখজোড়া দেখে আলভীর কলিজা শুকিয়ে এলো। অলির ফ্যাকাশে মুখটার দিকে সে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলোনা। আলভী বহু কষ্টে উচ্চারণ করলো,
“আমাকে ক্ষমা করে দেও।”

“আপনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ক্ষমা চান আমি আপনাকে ক্ষমা করে দেবো।”

অলির তীক্ষ্ণ কন্ঠ শুনে আলভী মাথাটা আরও নিচু করে নিলো। সে অলির চোখে চোখ রাখবে কিভাবে? তার মধ্যে সাহস নেই। সে পারবেনা,

“আপনি বলেছিলেন আমি আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে যদি বলি বাচ্চাটার বাবা আপনি তাহলে আপনি মেনে নেবেন। সেই আপনিই কিভাবে পারলেন আমার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলতে?”

আলভী অলির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো,
“আমি তোমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করিনি। তুমি ভুল বুঝছো, তুমি মানো আর না মানো বাচ্চাটার জন্যই তোমাকে এতো এতো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। সেই জন্যই আমি বাচ্চাটাকে কখনো তেমন গুরুত্ব দেইনি কিন্তু সেটার জন্য আমি বাচ্চাটাকে…

আলভী কথাটা শেষ করার আগেই অলি চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“আপনি মিথ্যা বলছেন, আপনার মনে হচ্ছিলো যে বাচ্চাটা রিফাতের সেই জন্যই আপনি আমার বাচ্চাকে দত্তক দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আর মৃত বাচ্চা হয়েছে বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।”

আলভী কিছু একটা বলতে চেয়েও থেমে গেলো। সে ম*রে গেলেও সেই কথাটা অলিকে বলতে পারবেনা কারণ সে নিজেকে মে*রে ফেলতে পারবে অলিকে মৃ*ত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারবেনা। আলভী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে মে*রে ফেলবো ততোটাও অমানুষ আমি নই।”

“আপনি অমানুষের থেকেও জঘন্য, আপনি একটা জানো*য়ার।”

আলভীর চোখজোড়া রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।
“হ্যাঁ আর এই বাচ্চাটার জন্যই তোমাকে আমার মতো জানো*য়ারকে বিয়ে করতে হয়েছিলো। এতোদিন আমি এসব কিছুই ভাবতাম। মনে হতো এই সবকিছুর জন্য বাচ্চাটা দায়ী কিন্তু আজকে বুঝতে পারলাম যে এই বাচ্চাটা নয় সবকিছুর জন্য আমি দায়ী। আমার উচিৎ ছিলো ধ/র্ষ/ক উপাধি পাওয়ার সাথে সাথেই আত্মঘাতী হওয়া। কিন্তু আমি পারিনি। আমি পারিনি, যেদিন আমার জন্মদাত্রী নিজে আমার স্ত্রীর গর্ভে থাকা বাচ্চাটার দিকে আঙুল তুলেছিলো আমি পারিনি সেদিন পুরোপুরি ভাবে ব্যাপারটাকে অগ্রাহ্য করতে। সেদিন অজান্তেই আমার মনে সন্দেহ নামক বিষাক্ত অনূভুতির জন্ম হয়েছিলো। আমি পারিনি সন্দেহ গুলোকে গোড়া থেকে নির্মূল করতে। আমি পারিনি রিফাতকে বিশ্বাস করতে, যেই ছেলেটা একটা মেয়ের ছবির সাথে বিকৃত আচরণ করতে পারে আমি পারিনি সেই ছেলেটাকে সন্দেহ করার থেকে নিজেকে সংযত রাখতে।”

অলি একহাতে আলভীর শার্টের কলার চেপে ধরলো,
“রিফাত আমার ছবির সাথে কি করেছিলো?”

আলভী চোখজোড়া বন্ধ করে একটা শ্বাস ফেললো তারপর অলির হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“কিচ্ছু করেনি। ও তো ভালোই ছিলো আমিই খারাপ ছিলাম। ওকে সন্দেহ করার কোনো কারণই নেই। হাহ ও কতোটা ভালো ছিলো ভাবা যায়? ও জানতো আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, আর এটা জানার পর ও আমাকে সাহায্য করলো তোমাকে পেতে। ও আমার কতো ভালো বন্ধু ছিলো তাইনা?”

অলি কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা। তার মনে হচ্ছে আলভী পাগল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ যেতেই আলভী গটগট পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ৩৩০০+

#১৫_বছর_বয়সী_মা (৫৪)
#সোফিয়া_সাফা

অলি বসা থেকে ধীরপায়ে উঠে দাঁড়ায়। আরিশকে খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যেতেই দিহান দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। হাল্কা কাশি দিতেই অলি মাথায় ওড়না টেনে নেয়,
“আসবো ভাবী?”

অলি দিহানের দিকে না তাকিয়েই বলল,
“হুম আসুন।”

দিহান চেয়ার টেনে খাটের সামনে বসে পড়লো। কপালের ঘামগুলো মুছে, মুখে হাসি টেনে বললো,
“বাবুকে দেখার জন্য ছুটে চলে এসেছি ভাবী। কিছু আনার টাইমও পাইনি। মাফ করবেন”

অলি আলমারিতে থাকা জিনিসপত্র গুলো গোছাতে গোছাতে বলল,
“মিথ্যা বলছেন কেনো? আলোকে দেখতে আসলে এভাবে দৌড়ে আসতেন না, ধীরেসুস্থেই আসতেন। আপনি এসেছেন আপনার বন্ধুর সাফাই গাইতে আর তার দোষগুলো ঢাকার চেষ্টা করতে।”

দিহান ঘাবড়ে গেলো। আজকে অলির কথা বলার ধরন অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা লাগছে। দিহান একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
“এভির সাফাই গাইতে আসিনি ভাবী।”

অলির হাত থেমে গেলো। ঘুরে তাকালো দিহানের দিকে,
“আমি শুধু ভাবছি ওর মনে প্রথম থেকেই এতো সন্দেহ থাকলে ও আগে কেনো NIPP টেস্ট করায় নি? ১৫ দিন আগে যখন লাবিব ফেক নিউজ ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিলো সেদিনই কেনো এতোটা পাগল হয়ে গেলো টেস্ট করানোর জন্য?”

“আপনার বন্ধুর ব্যাপারে তো আপনি আমার থেকে ভালো জানেন। এটা তো আপনার জানার কথা যে এতোদিন কেনো সে ভালোমানুষির মুখোশ পড়ে ছিলো।”

“দুঃখিত ভাবী তবে এভি আমাকেও সব ব্যপারে জানায় না। শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকুই জানায়। হ্যাঁ মাঝে মাঝে রাখের বশে উল্টো পাল্টাও বলে ফেলে যেগুলোর কোনো মানেই হয়না। কিন্তু এটা সত্যি যে রাতে আমি এভির ব্যপারে একটু বেশি বেশিই বলে ফেলেছিলাম। আসলে আমরা বরাবরই ক্যাজুয়াল ভাবেই কথাবার্তা বলি। আর আমি তো জানতাম না যে ফোনের এপাশে এভি না আপনি আছেন। বিশ্বাস করুন তাহলে আমি পুরোটাই গুছিয়ে বলতাম।”

অলি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, “ফোনের এপাশে আমি আছি সেটা জানলে আপনি আমাকে যেভাবে বুঝিয়ে বলতেন সেভাবে এখন বলুন, আমি শুনছি। আমিও দেখি আপনার কাছে দেওয়ার মতো কি কি অজুহাত আছে।”

দিহান নিশ্চুপ হয়ে গেলো। অলি ফের বলে উঠলো,
“আচ্ছা আমাকে আপনি কোনটা বেশি বেশি বলেছিলেন? বাচ্চা দত্তক দিয়ে মৃত বলাটা নাকি রিফাতের বাচ্চা বলে সন্দেহ করাটা?”

“দুটো নিয়েই। আসলে এভি রাগের মাথায় এসব বলেছিলো যদিও ওর রেগে যাওয়ার কারণ টা আমার কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে লাবিব আর এভির মাঝে কিছু তো ছিলো, যেটা তারা দুজন ছাড়া অন্য কেউ জানেনা। আর লাবিব যেহেতু মৃত এখন শুধু এভিই জানে ব্যপারটা।”

“হ্যাঁ ছিলো তো, লাবিব একটা নিউজ ছড়িয়ে দিয়েছিলো। আমি নাকি ক্যারেক্টরলেস গার্ল। আমি নাকি আপনার বন্ধুকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছিলাম। তারপর অন্য একজনের বাচ্চা তার বলে চালিয়ে দিতে চাইছি। হয়তো এসব শুনেই সে আমার বাচ্চার ডিএনএ টেস্ট করানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলো। সে বিশ্বাস করেই নিয়েছিলো লাবিবের কথাগুলো।”

দিহান মাথা নিচু করে বলতে লাগলো, “না ভাবী এভি আমাকে এসব ভুংভাং বুঝিয়েছিলো। আসলে ব্যাপারটা অন্যকিছু ছিলো। আমি তো রাতে আসল ব্যাপারটা জানার উদ্দেশ্যেই ওভাবে ম্যাসেজ গুলো দিয়েছিলাম যাতে এভি রেগেমেগে হলেও আমাকে আসল সত্যিটা জানিয়ে দেয়। আসলে লাবিব কোনো নিউজ ছড়াতেই পারেনি তার আগেই এভি ওকে ধরে ফেলেছিলো। তবে এর মধ্যে বড়সড় কোনো ব্যাপার আছে। আর আমি সিওর যে সেটা আপনাকে নিয়েই। কারণ অন্য কারো বিষয়ে হলে এভি আমার থেকে আড়াল করে রাখতোনা।”

অলি ভাবনায় পড়ে গেলো কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই তার প্রতিক্রিয়া আবারও কঠোর হয়ে যায়। দিহান আলভীর বন্ধু তাই হয়তো উদ্ভট কথাবার্তা বলে তার ব্রেইন ওয়াশ করার চেষ্টা করছে। ভাবনাটা মাথায় আসতেই অলি তীর্যক হেসে বলল,
“বাচ্চা দেখতে এসেছেন, দেখে চলে যান। আমাকে কিছু বোঝাতে আসবেন না।”

দিহানের খারাপ লাগলো। সে বুঝতে পারছে তার বোকামির জন্য এভির সংসারে ফাটল ধরেছে। দিহান ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত স্যানিটাইজ করে এগিয়ে গেলো আরিশের দিকে। শুভ্র তোয়ালে মোড়ানো ছোট্ট প্রাণটা ঘুমিয়ে আছে। রক্তিম ঠোঁটজোড়া ক্ষণে ক্ষণেই মৃদু কেপে উঠছে। বাচ্চাটাকে দেখে দিহানের চোখ জুড়িয়ে গেলো। সে শুনেছে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে ভালো অনুভূতির একটা হলো নবজাতকের হাত ধরার অনূভুতি। দিহান এই সুযোগ মিস করলোনা সে আরিশের মুঠ করে রাখা ছোট্ট হাতটায় বৃদ্ধা আঙুল দ্বারা স্লাইড করতে লাগলো তখনই ঊর্মিলা হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে,
“আল্লাহ এটা কি করলেন? আমার আগে ওর মুখটা দেখে নিলেন?”

ঊর্মিলার কন্ঠ শুনে দিহান ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। ঊর্মিলা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়েছিলো, খবরটা পেয়েই ছুট্টে চলে এসেছে। কিন্তু দিহান তো তার থেকেও ফাস্ট। ঊর্মিলা দিহানকে পাশ কেটে আরিশের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো,
“আহা আমার বাপজান এসেই গেছে।”

ঊর্মিলা চুমু খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাল্কা ঝুকতেই দিহান বলে ওঠে,
“ম্যাডাম আপনি বাইরে থেকে এসেই বেবির উপর হামলা করতে পারেন না। যান গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে হাত স্যানিটাইজ করে আসুন।”

ঊর্মিলার কপাল কুচকে গেলো, “শুনুন আমিও জানি যে বাইরে থেকে এসে বেবিকে ধরার আগে ফ্রেশ হয়ে হাত স্যানিটাইজ করে নিতে হয়। বেশি ডাক্তার গিরি দেখাতে আসবেন না।”

দিহান অপ্রস্তুত হয়ে অলির দিকে তাকালো। অলি একমনেই আলমারিতে কিছু হয়তো খুঁজে চলেছে। দিহান বুঝতে পারলো অলি তাদের কথা খেয়াল করছেনা।
“শুনুন ম্যাডাম এটাকে ডাক্তার গিরি নয়। কমন সেন্স বলে।”

ঊর্মিলা রেগেমেগেই উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। দ্রুত গতিতে ফ্রেশ হয়ে এসে হাত স্যানিটাইজ করে নেয় তারপর আরিশের নরম গালে চুমু খেয়েই ক্ষান্ত হয়। এরই মাঝে রুমে বাড়ির বাকি সদস্যরা প্রবেশ করলো। সবাইকে একসাথে আসতে দেখে অলি খোঁজা থামিয়ে আলমারি লক করে আরিশের পাশে এসে বসলো। উসমান মির্জা আর ইয়ামিন মির্জা একে একে আরিশকে কোলে নিলেন কিন্তু ইয়াদ কোলে নিতে গেলেই অলির বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে সে কিছু বলতেই যাবে তার আগেই আরিশ কেদে ওঠে। ইয়াদ অনুভূতি শূন্য চোখে আরিশের দিকে চেয়ে রইলো। শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে আরিশকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করতেই আরিশ শান্ত হয়ে যায়। সবাই আরিশকে দেখা শেষে রুম খালি করে দিলো। শাহানাজ বেগম আরিশকে কোলে নিয়েই অলির পাশে এসে বসলেন। এরই মাঝে একজন সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে এলো,
“বউমা, আমি দাদুভাইকে রাখছি তুমি খেয়ে নেও। এমনি শরীর দূর্বল হয়ে গেছে। না খেয়ে থাকা যাবেনা।”

অলি অবাক নয়নে শাশুড়ীর দিকে তাকায়। একটা মানুষ কি আসলেই এভাবে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে? হুম অবশ্যই পারে আলভী যেভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে তেমনি শাহানাজ বেগমের মাঝেও হয়তো পরিবর্তন ঘটেছে। তবে তাদের মাঝেকার পরিবর্তন একদম বিপরীতধর্মী। অলি আলতো পায়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো,
“এভি কোথায় গেলো? তখন তো একেবারে ছেলেকে নিয়ে টানাটানি করছিলো। এখন কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো?”

অলি এক টুকরো রুটি মুখে দিতেই যাবে কিন্তু শাশুড়ীর বলা কথাগুলো শুনে থেমে গেলো।
“বউমা তুমি কি জানো ও কোথায় গেছে?”

অলি নাবোধক মাথা নাড়লো। এরই মাঝে আরিশ আবারও কেদে ওঠে।
“ওকে খাইয়ে ছিলে?”

অলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল, শাহানাজ বেগম এবার উঠে দাড়িয়ে বললেন,
“তাহলে আমি বরং গিয়ে দাদুভাইকে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাই তুমি শান্তিতে খেয়ে নেও।”

বলেই শাহানাজ বেগম চলে গেলেন। এই সুযোগে অলিও টেবিল ছেড়ে উঠে যায়। সে এই বাড়ির একগ্লাস পানিও মুখে নেবেনা। অলি হাত ধুয়ে আলমারি খুলে সবকিছু ওলট পালট করে কিছু খুঁজতে লাগলো। অবশেষে পেয়েও গেলো। সে প্রয়োজনীয় সবকিছু একটা ব্যাগে ভরে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো তারপর ব্যাগটাকে বাগানের ঝোপঝাড়ের মধ্যে ফেলে দিলো।

অলি অসুস্থ শরীর নিয়েই ড্রইংরুমে এসে দাড়ালো। তাকে আসতে দেখে নূরনাহার চমকে গেলেন,
“বউমা তুমি নিচে আসতে গেলে কেনো?”

অলি ম্লান হেসে বলল, “রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছিলোনা কাকিমা। আলোকে নিয়ে আম্মা কোথায় গেছে জানেন?”

নূরনাহার অলিকে ধরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালেন। অলির হাত পা কাপছে। বারবার ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে।
“ভাবী তো নাতিতে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।”

তাদের কথার মাঝেই আলভী হনহনিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। সে কোনোদিকে না তাকিয়েই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নেয় কিন্তু ড্রইংরুমে অলির উপস্থিতি টের পেয়ে তার পা থেমে গেলো। পা ঘুরিয়ে অলির সামনে এসে দাড়ালো। অলি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আলভী একহাত দিয়েই অলিকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলো। নূরনাহার হতবিহ্বল হয়ে তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন।
রুমে এনে অলিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আলভী পুরো রুমে চোখ বুলালো। অলি কোনো কিছু গায়েই মাখলো না। শুধু ভাবলেশহীন ভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো,
“আমার ছেলে কোথায়?”

আলভীর মুখ নিঃসৃত বাক্যটি শুনে অলি ফট করে আলভীর দিকে তাকায়। আলভী একহাতে মাথা চেপে ধরে বিরক্তি মিশিয়ে বাক্যটি উচ্চারণ করেছে। চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড বিরক্ত,
“কি হলো, কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি।”

“আলো শুধুমাত্র আমার ছেলে। আপনার সাহস কি করে হয় ওকে নিজের ছেলে বলার? ওহহো ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পেয়ে গেছেন বুঝি?”

আলভীর কপাল আরও কুচকে গেলো মৃদু গুঙিয়ে উঠল,
“কোনো টেস্টের রিপোর্ট দেখার প্রয়োজন নেই, ওর দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে ও কার ছেলে। আর তুমি কি ওকে বাজার থেকে কিনে এনেছো নাকি? লজিকলেস কথাবার্তা বলবেনা।”

“ওহ আচ্ছা এতোদিন পর আজকে আমার কথাগুলো লজিকলেস লাগছে? আজকের আগে তো সবসময় ‘তোমার ছেলে’ ‘তোমার ছেলে’ করতেন, তখন লজিকলেস লাগেনি?”

আলভীর মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। সে ধপাধপ পা পেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ঊর্মিলার রুমের সামনে এসে শাহানাজ বেগম সহ আরিশকে খুঁজে পেয়ে সে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
“আমার ছেলেকে আমার কাছে দেও।”

আলভীর অবস্থা দেখে ঊর্মিলা ঘাবড়ে গেলো। আলভীর গায়ের শার্ট ঘামে জবজবে, মাথার চুলগুলো পর্যন্ত এলোমেলো। চোখমুখ ফ্যাকাশে,
“ভাইয়া তোর কি হয়েছে?”

আলভী উত্তর না দিয়ে রুমে ঢুকে ছেলেকে কোলে নিতে গেলে ঊর্মিলা বাধা দিয়ে বলে,
“এই অবস্থায় আমার বাপজান কে ধরবিনা বলে দিলাম। যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয়।”

আলভী রাগে ফোস করে উঠলো ঊর্মিলার হাত ঝাড়া মে*রে সরিয়ে দিলো,
“আমার ছেলেকে আমি যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে কোলে নেবো। তুই বাধা দেওয়ার কে? আর একদম ওকে নিয়ে টানাটানি করবিনা। ও আমার ছেলে।”

শাহানাজ বেগম আলভীর কথাগুলো শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন। ঊর্মিলাও ভাইয়ের রাগ আচ করতে পেরে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেলো। আলভী ছেলেকে কোলে নিয়ে তবেই শান্ত হলো।
“আমার ছেলে, আমার ছেলে বলে মাথা খারাপ করে ফেলছিস কেনো এভি? আমরা সবাই জানি যে ও তোর ছেলে। বারবার এভাবে বলার কি মানে? তাছাড়া তুই বোনের সাথে এরকম বিহেভ করলি কেনো?”

মায়ের কথা শুনে ঊর্মিলা থতমত খেয়ে গেলো। লাইফে ফার্স্ট টাইম সে ঊর্মিলার পক্ষ নিয়ে আলভীকে ঝাড়ি দিয়েছে। এদিকে আলভী মায়ের কথাই শুনলোনা যেন, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিজের ফটোকপির দিকে।
“কিছুদিন পর বোনটা যখন অন্যের ঘরে চলে যাবে তখন বুঝবি যে ও কে ছিলো।”

মায়ের কথা শুনে আলভী ভ্রু কুচকে ঊর্মিলার দিকে তাকায়,
“আমি এখনো বুঝি যে ও কে। শুধু ওকে বলে দেও আমার ছেলে আর আমার মাঝখানে যেনো না আসে।”

“ভাইয়া তুই তোর ছেলেকে নিয়ে বের হ আমার রুম থেকে।”

আলভী রাগে গজগজ করে উঠলো, “বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু এক্ষুণি গিয়ে দিহানের বাড়িতে রেখে আসবো।”

ঊর্মিলা এবার না পেরে কেদেই উঠলো,
“হুহ রেখে আয়। দেখিস একবার এই বাড়ি থেকে বের হই তারপর আর জীবনেও আসবোনা।”

আলভীর রাগ নিমেষেই ছু হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে শান্তকন্ঠে বলল,
“তাহলে তোর বিয়ে ক্যান্সেল, আমি তোকে এই বাড়ি থেকে বের হতেই দিচ্ছিনা।”

কথাটা বলেই আলভী উল্টো ঘুরে রুম ত্যাগ করলো। কান্নার মাঝেই ঊর্মিলার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো, শাহানাজ বেগমের চোখেও পানি জমেছে কয়েক মূহুর্ত যেতেই সে ঊর্মিলাকে জড়িয়ে ধরলেন।

আলভী আরিশকে নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো অলি একহাতে নিজের ফোন চাপছে আরেক হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে রেখেছে। আলভী অলির সামনে এসে দাড়ালো,
“কি হয়েছে? ব্যাথা করছে?”

আলভীর কন্ঠ শুনে অলি তার দিকে তাকায় তারপর হঠাৎ ছো মে*রে আলভীর কোল থেকে আরিশকে নিয়ে নেয়। আলভীর এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো কেউ তার শ্বাসরোধ করে ফেলেছে। সে অস্থির হয়ে অলির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়,
“ওকে নিওনা, দেও আমার কাছে। একটু দেও।”

অলি আলভীর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, “একটুও না, ধরবেন না ওকে।”

অলি ছোট্ট পেলব দেহটা বুকের সাথে আঁকড়ে ধরলো। আলভী চাতক পাখির ন্যায় সেদিকেই তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ যেতেই আলভী অসহায় কন্ঠে বলে ওঠে,
“আমাকে মাফ করে দেও আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো। প্লিজ আমার ছেলের উপর থেকে আমার অধিকার কেড়ে নিওনা।”

আলভী অলির দিকে এগিয়ে আসতে নিলে অলি বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আলভী এবার দরজা ধাক্কাতে লাগলো,
“প্লিজ, প্লিজ। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি পারছিনা সহ্য করতে, আমার দম আটকে আসছে। বেরিয়ে এসোনা বউজান, হানিবি, অলিইইই প্লিজ বেরিয়ে এসো।”

অলি আরিশকে কোলে নিয়ে গুটিসুটি মে*রে ফ্লোরেই বসে পড়লো। রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। শরীর ভীষণ খারাপ লাগছে। না খেয়ে থাকার কারণ প্লাস ব্লিডিং হওয়ার কারণে শরীর যেন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসছে। অলি বসে থাকা অবস্থাতেই সেন্সলেস হয়ে গেলো।

***

পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে খাটের উপর আবিষ্কার করে অলি চমকে গেলো। উঠে বসতে চাইলে একটা গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো,
“হাতে স্যালাইন চলছে, বেশি নড়াচড়া কোরোনা। শুয়ে থাকো চুপচাপ।”

ঘাড় ঘুরিয়ে ডান পাশে তাকাতেই দেখলো আলভী আরিশকে কোলে নিয়ে বসে আছে।
“আ…মি এখানে আসলাম কিভাবে?”

অলির ফিসফিসিয়ে বলা কথাটার উত্তরে আলভী শান্তকন্ঠে বলল,
“আজকে একদিনে আমার রুমের দুটো দরজা ভাঙ্গতে হলো। এখন শুধু ওয়াশরুমের দরজাটাই ভাঙ্গা বাকি আছে। নেক্সট টাইম কি ওখানে যাওয়ার প্ল্যান করেছো নাকি? দেখো সেরকম কোনো প্ল্যান থাকলে এখনই বলে দেও, আমি আগেই দরজার লক ভেঙ্গে ফেলছি।”

অলি কিছুই বললোনা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এখন রাত ১০টা ৪৮ বাজে। এতোক্ষণ যাবত সে সেন্সলেস ছিলো?
“শরীর কেমন লাগছে?”

অলি উত্তর দিলোনা। আলভী উঠে এসে অলির হাত থেকে স্যালাইনটা খুলে ফেললো। তারপর দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে অলির পাশে এসে বসলো।
“তুমি কেনো এমন করছো? বললাম তো ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দেও আমাকে।”

অলি ঠোঁট চেপে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে রইলো সিলিংয়ের দিকে।
“ছেলের ক্ষুধা লেগেছে নিজে থেকেই খাওয়াবে নাকি আমাকেই…

অলি হকচকিয়ে আলভীর দিকে তাকায়।
“এভাবে তাকিও না, তুমি সেন্সলেস ছিলে কিন্তু আমার ছেলে ক্ষুধায় কান্না করছিলো তাই বাধ্য হয়েই আমি তোমার অনুমতি ব্যতিত ওকে খাইয়েছিলাম।”

আলভীর কথা শুনে অলি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার কাপড়চোপড়ও কেউ চেঞ্জ করে দিয়েছে,
“আপনি আমার কাপড়ে হাত দেওয়ার সাহস পেলেন কোথায়? আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন। ডেলিভারির সময় ডাক্তার হিসেবে আমি সব মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু আপনি আমার অনুমতি ব্যতিত আমাকে…ছিহ।”

আলভী একটা শুষ্ক ঢোক গিলে বলল,
“তোমার ব্লিডিং হচ্ছিলো। পরণের কাপড় নোংরা হয়ে গিয়েছিলো। কাপড় গুলো চেঞ্জ করার প্রয়োজন ছিলো। তার উপর ছেলেটাও ক্ষুধায় কান্নাকাটি করছিলো। আমার কি করা উচিৎ ছিলো তখন তুমিই বলো।”

অলি আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো। তারপর প্রশ্ন ছুড়লো,
“তো আপনি ছাড়া আর কেউ ছিলোনা?”

আলভী একদৃষ্টিতে অলির দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,
“চারদিকে তাকিয়ে দেখো, কাউকে দেখতে পাচ্ছো?”

অলি সত্যি সত্যিই আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো। আসলেই তো আলভী ছাড়া কেউ নেই,
“আমি ছাড়া তোমার কেউ নেই হানিবি। কোথাও কেউ নেই। আমার ছেলের অনেক আপনজন আছে কিন্তু আমি ব্যাতিত তোমার আপন বলতে কেউ নেই।”

অলি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। আলভী আরিশকে খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে অলির উদ্দেশ্যে বলল,
“ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়াও। আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ ওয়াশরুমে গিয়ে লুকিয়ে কোনো লাভ হবেনা। আমি সেটাও ভেঙ্গে ফেলবো।”

আলভী চলে যেতেই অলি আরিশকে কোলে নিয়ে খাওয়াতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আলভী খাবার নিয়ে এসে নিজ হাতে অলিকে খাইয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু অলি মুখ ঘুরিয়ে নিলো,
“আমি খাবোনা। জোর করবেন না তাহলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে। আমার এখন আর ভয় নেই নিজেকে শেষ করে দিতেও দ্বিধাবোধ করবোনা।”

কথাটা শোনামাত্রই আলভী খাবারের প্লেটটা ছুড়ে ফেলে দেয়। ফ্লোরের সাথে প্লেটটার সংঘর্ষের ফলে বিকট শব্দের সৃষ্টি হলো। সেই শব্দে অলি আর আলভীর কোনো সমস্যা না হলেও ছোট্ট আরিশ খাওয়া বাদ দিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কেদে ওঠে,

চলবে,,,

শব্দসংখ্যা- ২৩০০+