প্রেমাঙ্গন পর্ব-০৪

0
21

#প্রেমাঙ্গন
লেখিকা:#শ্যামলী_রহমান
পর্ব:৪

সকালটা আজ অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশিই সতেজ। রোদের আলো হালকা সোনালী আভা ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিকে। হাওয়ার ঝাপটায় গাছের পাতাগুলো যেন কেমন নাচছে আনন্দে,কংক্রিটের দেওয়ালে বৃষ্টির ঝাপটা,শীতল বাতাস।সকাল সকাল এমন আবহাওয়া হদয় শীতল করে। শহরের কোলাহলের ভেতরেও সকালের প্রথম প্রহরে আছে একরকম প্রশান্তি।

সেদিনের পর দুইদিন কেটে গেছে। আরশিয়া আগের সেই আতঙ্ক, বিভ্রান্তি অনেকটা সামলে নিয়েছে। অর্থি প্রায় সময় সঙ্গ দিয়েছে। আজ সকালে আয়নায় নিজেকে দেখে মনে হলো, সে আবার আগের মতো হাসছে।

আজ ভার্সিটিতে যাবে অর্থির সাথে।একটা লাল সালোয়ার সাথে পরে রেডি হয়ে নিচে নামলো। আজ আগেই খেয়েছে তাই তাড়াহুড়ো করা লাগলো না। আশরাফ চৌধুরী অফিসে গেছে, আনজুমা চৌধুরী কে বলেই বেরিয়ে পড়লো। আজকে অর্থি উল্টো পথে আরশুয়ার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে।প্ল্যান ছিলো আজ একসাথে যাবে।দু’জন একসাথে রিকশায় চড়লো। দু’জনের আড্ডায় মুখর হাওয়া।হাসাহাসি,গল্পে যেন সময় গলে যাচ্ছে। নির্মল বাতাসে রিকশায় বসে, পাশে প্ীিয় বান্ধবী এর চেয়ে ভালো অনুভূতি আর কি?

রিকশা থেকে নেমে পড়লে দুজনে।রিকশাওয়ালা মামাকে ভাড়া দিয়ে চললো। ক্যাম্পাস গেটে পৌঁছাতেই একটা ঘটনা ঘটে গেলো। ভিড়ের মধ্যে এক ছেলেটা ইচ্ছে করেই আরশিয়ার দিকে ধাক্কা দিলো। প্রায় পড়ে যাচ্ছিল সে।অর্থির হাত আঁকড়ে ধরে পড়া থেকে সামলে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে অর্থি রাগে বলে উঠলো,
“এই! দেখেশুনে চলতে পারেন না?”

ছেলেটা সরি না বলে, উল্টো রেগে বলল,
“এতো ভীড়ে ধাক্কা লাগতেই পারে এতে কি গায়ে ফোসকা পড়লো? নাকি অঙ্গ জ্বলে গেলো?”
আরশিয়ার রাগ উঠে গেলো একে নিজে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছে সে বুঝতে পেরেছে। তার উপর বাজে কথা বলছে। তার তাকালো কেমন গিলে খাবে এমন। আরশিয়া রেগে গিয়ে বলল,

“ভদ্রভাবে কথা বলুন।এগুলো কি রকম ভাষা?”

“ভদ্রতা তোর কাছে শিখতে হবে?কই শিখাবি বল?একলা ঘরে নাকি?তাইলে রাজি চল যাই।

আরশিয়ার রাগ অতিমাত্রায় প্রকাশ পেলে,কষিয়ে এক থাপ্পড় মারতে যাবে তার আগেই রিহান সহ ওর বন্ধুরা এসে পড়ে। তারা পিছন থেকে সব দেখতে পেয়েছে। রিহান ছেলেটার শার্টের কলার ধরলো,বলল,

“কি রে কি বলছিলি?একলা ঘরে শিখবি?চল আমি শিখাই।আজ তোর স্পেশাল ক্লাস নিবো।
রিহান ছেলেটাকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিলো মাঝে বাধ সাধেলো আরশিয়া,বলল,
“ছেড়ে দিন ঝামেলা পাকিয়ে লাভ নাই। এমন কত
ঘটনা মেয়েদের সাথে ঘটে,কিছু মানুষ এদের চেয়েও বেশি জঘন্য।
রিহান ছেড়ে দিলো বুঝতে পারলো শেষের কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে।ছেলেটি ততক্ষণে পালিয়ে গেছে। বহিরাগত ছেলে এসেছে হয়তো কোনো প্রেমিকা সাথে দেখা করতে কিংবা অন্য কোনো মতলবে।

আরশিয়া অর্থি কে নিয়ে চলে গেলো। রিহান কেবল দাঁড়িয়ে রইলো। অভিক বলল,

“কথাটা কি তোকে বলল?
রনিত বলল,
“বলাটা স্বাভাবিক নয় কি?একজন মেয়ের কাছে তার সম্মান বড়। বাড়াবাড়ি কিছু না হোক কিছু একটা হয়েছে ভাববে।

সাহিল কিছু একটা ভেবে বলল,
“দোস্ত তোদের ঝগড়া ভালো লাগে। এমন শাস্তি দেওয়া নয়।
অভিষেক খুব একটা কথা বলেনা তবে আজ বললো,

“মনে হয় মেয়েটাকে সত্যি বলে দেওয়া উচিত, নয়তো নিজেকে তার নিজের কাছে খারাপ লাগবে এতে মানসিক চাপ বাড়বে।
রিহান শুধু শুনলো।বলল,
“চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
ছুটলো পাঁচজনে।তাদের এই পাঁচ জনের বন্ধুত্বের মধ্যে রনিত আর অভিকের সাথে কলেজ লাইফ থেকে পরিচিত,সাহিল আর অভিষেকের সাথে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে পরিচয়।

ক্লাস শেষে ছেলেরা একসাথে বের হলো। ভিড়ভাট্টা রাস্তায়ও রিহান আজ অদ্ভুত চুপচাপ। অন্য সময়ের মতো হাসাহাসি করছে না।

অভিক খেয়াল করে বলল,
“কি রে তুই এতো চুপ কেন? মেয়েটার কথায় লাগছে নাকি?”

রিহান মৃদু হেসে এড়িয়ে গেলেও ভেতরে ভেতরে কথাটা তাকে নাড়া দিচ্ছিল।
“এমন কত ঘটনা মেয়েদের সাথে ঘটে, কিছু মানুষ এদের চেয়ে বেশি জঘন্য।”
আরশিয়ার বলা লাইনটা যেন বারবার কানে বাজছে।

সে ভাবলো।
“মেয়েটা কি আমাকে ওই মানুষগুলোর সাথেই মেলাল? আমি কি সত্যিই এতটা খারাপ ওর চোখে?অবশ্য হবারই কথা যে কান্ড করেছি তা বাড়াবাড়ি হয়েছে।”

অন্যদিকে, একটা ক্লাস শেষ করে অর্থি আরশিয়া আড্ডা দিচ্ছিলো।
তখনই অর্থি হেসে বলল,
“রিহান ভাইয়া আজ তোকে নিয়ে যা করলো তাতে আমি অবাক হয়ে গেছি।যে নিজে সব সময় তোকে অপমান আর ঝগড়াঝাটি করতে বসে থাকে,সে আজ এগিয়ে আসলো।”

আরশিয়া মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
শুধু বলল,
“এসব ভালো মানুষি সবার সামনে দেখায়।মানুষ সবার সামনে যা দেখায় তা আসল নয়,রাগের মাথায় যে রুপ বাহির হয়ে আসে,সেটাই তার আসল রূপ।”

অর্থি বুঝতে পারলো আরশিয়া ভুল বলেনি।
মানুষ বহুরূপী,উপরে যেমন দেখায়,ভেতরে তেমন নয়।

আরশিয়া মুখে এমন বললেও অন্তরে কোথাও একটু নাড়া দিয়েছিলো।রিহান যদি তখন না আসতো,তবে হয়তো সেই ছেলেটার বাজে মন্তব্যের ভার আরও বহন করতে হতো।

আরশিয়া নিজেকে বোঝালো,
“ওমন মানুষের সাথে দূরত্বটাই ভালো।এমন মানুষের ভালোমানুষি দেখে সব ভুললে হবে না।

ভার্সিটর মাঠে বসে আছে আরশিয়া আর অর্থি নেক্সট আরেকটা ক্লাস আছে তারই অপেক্ষা করছে।
তখন কেউ একজন সামনে এসে দাঁড়ালো।ওরা দুজনে পা থেকে উপরে তাকালো,দেখলো ফারিয়া দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে রাগ আর হিংস্রতা উপচে পড়ছে। আরশিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“তোর জন্য রিহানের কাছে অপমানিত হয়েছি তোকে কিন্তু দেখে নিবো।

আরশিয়া উঠে দাঁড়ালো,বলল,

“আমার জন্য মানে?একে অন্যের নাম করে বাজে চিরকুট দিয়েছো তার উপর আমাকে দোষারোপ করছো?হাউ ফানি!তুমি আমার সিনিয়র না হলে থাপ্পড়টা তোমার গালেও দেওয়া উচিত ছিলো।

ফারিয়া রেগে গেলো। আরশিয়া কে মারার জন্য হাত তুলতেই তার পাশেরজন থামিয়ে দিলো, বলল,
“রিহান ভাইয়া আসছে তাড়াতাড়ি এখান থেকে চল।

ফারিয়া হাত নামালো। রিহান আর তার বন্ধুরা ততক্ষণে এসে পড়েছে। মূলত ফারিয়া কে ওদের কাছে দেখে আসলো। রনিত জিজ্ঞেস করলো,

“কি হচ্ছে এখানে?ফারিয়া এখানে কি?

ফারিয়া রাগ ছেড়ে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে নেকামো করে বলল,

“সেদিনের জন্য সরি বলতে এসেছিলাম রনিত।রিহান তোমাকেও সরি। বলে রিহানের কাছে দাঁড়ালো, হাত ধরে বলল,

“প্লিজ রিহান বন্ধু হিসাবে ক্ষমা করে দাও।

আরশিয়া আর অর্থি হা হয়ে গেছে। এই মেয়ে কি নাটকবাজ মূহুর্তে পাল্টি খেয়ে গেলো।
রিহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো, ফারিয়ার হাত ঝটকা মেরে ছেড়ে দিলো।আরশিয়া ফারিয়াকে সায়েস্তা করতে মুচকি হেসে বলল,

“আমি তো এতো সহজে ক্ষমা করবো না। আমার সাথে হাতজোর কর ক্ষমা চাইতে হবে।”

ফারিয়া রেগে গেলো, বলল,

“হাউ ডেয়া……
বলতে গিয়েও থেমে গেলো।রাগের মাথায় ভুলে বসেছে আশে পাশে কে আছে।অর্থি মুখ চেপে হাসছে।রিহান বাঁকা চোখে চেয়ে জানতে চাইলো,
“কি বলছিলি?”

“না কিছু না। ক্ষমা চাচ্ছি।”
মুখে হাসি রাখলেও ভেতরে রাগে ফুঁসছে। হেসে দাঁতে দাঁত পিষে আরশিয়ার সামনে হাত জোড় করে বলল,

“সরি আরশিয়া আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

কি বললে শুনতে পাইনি।
ফারিয়া আরো রেগে গেলো। আরশিয়া রাগাতেই বলেছে।
আবারে সে বলল,
“সরি।”

“আচ্ছা মাফ করে দিলাম। নেক্সট টাইম এমন ভুল যেন না হয়।
ফারিয়া আর তার সাঙ্গ নিয়ে চলে গেলো।আরশিয়া আর অর্থি পা বাড়ালে যাওয়ার জন্য। তখনই পিছু ডাকে থেমে যায়। রিহান এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আমিও সরি।সেদিন রাতে তেমন কিছু হয়নি শুধু মাত্র তোমাকে ভয় দেখাতে অনেককিছু বলেছিলাম। রাগের সময় কন্ট্রোললেস হয়ে যাই তাই মাথায় যা এসেছে করেছি।”

আরশিয়া শুনলো। যাওয়ার আগে বলল,

“সরি বললেই আপনি তুলসি পাতা হয়ে যাবেন না।
যত্তসব নেকামো মানুষের অভাব নেই, ওই ফারিয়ার সাথে আপনাকে বেশ মানাবে, দুজনে নাটকবাজ।

রিহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো, বলল,
“ভালো কথা কারো সহ্য হয় না, এই মেয়ে তো না।

“মিঠা, তিতা কোনো কথাই আপনার বলার দরকার নেই।আপনি এবং আপনার ফারিয়া আমার থেকে দূরে থাকবেন।”

“আমি কি তোমার কাছে থাকি নাকি যে দূরে থাকবো?”

আরশিয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো,
“স্বভাব তো এমনই।”

আরশিয়া চলে গেলো।শেষের কথাটা ধীরে বললেও রিহান ঠিকই শুনতে পেলো। এই মেয়ের সাথে আর কথাও বলবে না ঠিক করলো।

অভিক উচ্চ সরে হেসে বলল,
“মামা এবার জমছে, আগের মতো সেই ঝগড়া।

বিকেলের আবহাওয়া বেশ সুন্দর। শীতল বাতাস বইছে, রিকশায় বসে মুহূর্তটা উপভোগ করছিলো আরশিয়া।আশে পাশে কত মানুষ। হঠাৎ তার চোখে পড়লো রাস্তার একপাশে ভিড় জমেছে। ভিড়ের ভেতরে কেউ একজন রাস্তায় পড়ে আছে।

আরশিয়া কপাল কুঁচকে বলল,
“মামা রিকশা থামান।”

রিকশা থামাতেই সে দ্রুত নেমে দৌড়ে গেলো।

সামনে গিয়ে যা দেখলো তাতে বুক কেঁপে উঠলো। তার বাবার বয়সী এক মধ্যবয়সী লোক রাস্তায় পড়ে আছে। কপাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে, হাতে কেটে গেছে, পা শক্ত করে ধরে গোঙাচ্ছে হয়তো আঘাতের ব্যথায়। আরশিয়ার বুক মোচড় দিয়ে উঠলো।সে এমন পরিস্থিতি নিতে পারে না,কান্না পায়,ভয় লাগে,অচেনা মানুষ হলেও কষ্ট লাগে,তারাও তো কারো আপনজন এই ভেবে।

চারপাশে দাঁড়ানো লোকজন শুধু তাকিয়ে আছে, কারো এগিয়ে আসার মানসিকতা নেই।
আরশিয়ার কন্ঠ ফেঁপে উঠলো রাগে,
“আপনারা কি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন? কেউ একটু সাহায্য করবেন না?”

কেউ উত্তর দিলো না, শুধু একে অপরের মুখের দিকে তাকালো,কেউবা চলে গেলো।

আরশিয়া হাঁটু গেড়ে বসে লোকটার মাথাটা কোলে তুলে নিলো। চোখে পানি এসে যাচ্ছিলো।
“আংকেল, ভয় পাবেন না আমি আছি।”

সে চেষ্টা করছিল লোকটিকে তুলতে, কিন্তু একা সম্ভব হচ্ছিলো না। ঠিক তখন ভিড় থেকে দুইজন তরুণ এগিয়ে এলো।
একজন বলল,
“আপা, আমরা আছি। ধরেন।”

মিলেমিশে তিনজন মিলে লোকটাকে তুললো। আরশিয়া দ্রুত একটা গাড়ি থামালো।
“দয়া করে আমাদের হসপিটাল পর্যন্ত নিয়ে যান।”

ড্রাইভার ভালো মানুষ ছিলেন, বললেন,
“চলুন, উঠুন।”

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো লোকটিকে।লোকটি তখন শুধু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে, হয়তো কৃতজ্ঞতায়। নার্স এসে কপালে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। হাত অনেকটা কেটে গেছে ডাক্তার এসে হাতে সেলাই দিলেন,পায়ে নাড়াতে পারছে না ব্যথায় চোখ বন্ধ করে থাকছে।
পায়ে বেশি আঘাত লেগেছে বুঝা যাচ্ছে। ডাক্তার এক্স-রে করতে পাঠালেন।

আরশিয়া এক কোণে দাঁড়িয়ে বুক ধরে ছিলো, মুখটা ফ্যাকাসে। ডাক্তার এসে বললেন,
“চিন্তার কিছু নেই। কয়েকদিন বিশ্রাম নিতে হবে তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।শুধু এক্সরে রিপোর্ট আসলে কিছু ঔষুধ দিবো আপনি বাসায় নিয়ে যেতে পারেন আপনার বাবাকে।

আরশিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মনে হলো বুকের ভেতর থেকে ভার নেমে গেলো।বলল,

“উনি আমার বাবা নন।”

“তাহলে কে?”

“রাস্তায় এক্সিডেন করেছিলো আমি নিয়ে এসেছি, আমি চিনিনা উনাকে। আপনি প্লিজ উনাকে বলুন উনার বাড়ির কাউকে ফোন করতে তারা এসে নিয়ে যাবে।

ডাক্তার বোধ-হয় একটু অবাক হলো।বলল,

“ঠিক আছে বলছি।

আরশিয়া এক কোণে বসে আছে। মাথার ওড়নায় রক্তের দাগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে।লোকটা ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাল। ফ্যাকাসে মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ।
কাঁপা গলায় বলল,
“মা, তুমি না থাকলে আমার যে কি হতো। আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখুক। তুমি আমার সন্তানের বয়সী তাই তুমি করে বলছি।তুমি যা করলে, আমার আপনজনও হয়তো করতো না।”

আরশিয়ার হেসে বলল,
“আংকেল এসব বলবেন না। আমি যা করেছি, যেকেউ থাকলে তাই করতো।”

নার্স পাশে থেকে মুচকি হেসে বললেন,
“না, সবাই করে না।অনেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে, ভিডিও করে কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়ায় না।”

আরশিয়া নিচু স্বরে বলল,
“মানুষ হয়ে মানুষকে সাহায্য করা তো দায়িত্ব।”

লোকটি আবারো বলল,
“তোমার এই ঋণ শোধ করতে পারবো না ।”

আরশিয়া বিব্রত হয়ে শুধু বলল,
“ওসব ঋণ-পাওনা ভেবে বলবেন না, আল্লাহই আপনাকে বাঁচিয়েছেন,আমি শুধু অছিলা মাত্র।”

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।আরশিয়ার বাড়ি যেতে হবে তাই লোকটার থেকে বিদায় নিলো।উনার বাড়ির লোককে তিনি ফোন করেছেন তারা আসছে।আরশিয়া নিশ্চিন্ত হয়ে পা বাড়ালো। দরজা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠলো,

“মিস আরশিয়া।”

আরশিয়া চমকে তাকায়।মানুষটিকে দেখে একটু অবাক হয়।জিজ্ঞেস করে,
“আপনি এখানে?”

লোকটি এগিয়ে আসলো। হেসে উত্তর দিলো,

“জ্বী! আমি এখানের ডাক্তার। ডাক্তার মিহির শেখ।
আরশিয়া তার দিকে নজর বুলালো।শরীরে ডাক্তারের সাদা পোশাক।অবাক হলো উনি ডাক্তার অথচ দেখে মনে হয়নি কত সাবলীল ভাবে চলে।

মিহির আবার জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে কোনো দরকারে এসেছিলেন?”

“হ্যাঁ একটা দরকারে এসেছিলাম।এখন বাসায় যেতে হবে।

“তাড়া আছে তাহলে?আমি ভাবলাম অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আবার দেখা হলো চা খাওয়ার সময় টা দিবেন।

আরশিয়া হাসলো, বলল,

“নেক্সট কখনো।”

“ নেক্সট আবার দেখা হবে তাহলে?”

আরশিয়া একটু দ্বিধায় পড়লো, মুখে জোরালো হাসির চেষ্টা করে বলল,
“আজকের মতো আবার অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হতেও পারে।আজ আসি তাহলে?”

মিহির মাথা নাড়ালো।আরশিয়া চলে গেলো,সে তাকিয়ে রইলো তারই পানে। একজন নার্স এসে ডাকলো,
“ ডাক্তার মিহির স্যার আপনাকে ডাকছে।”

“হু যাচ্ছি। উত্তর দিচ্ছে ঠিকই তবে চোখ তার আরশিয়ার পথের দিকেই।আরশিয়া ততক্ষণে অনেকদূরে চলে গেছে। মিলিয়ে যাওয়ার ঠিক একটু আগে পিছন ফিরে তাকালো। মিহিরের দৃষ্টি তার দিকে দেখে কেবল হাসলো।তার পর দৃষ্টির বাহিরে চলে গেলো সে।
মিহির কপাল কুঁচকালো, বিরক্ত হলো এতো তাড়াতাড়ি দৃষ্টির বাহিরে চলে গেলো বলে।শেষে শুধু ঠোঁটের ভাঁজে আওড়ালো,

“এক শ্যাম সুন্দরী মাইয়া আমায় মন নিলো কাড়িয়া,
জীবনের শেষ প্রান্তে,সুখে থাকতে তাকেই যাবো চাহিয়া।

চলবে………………….?