#ইচ্ছেঘুড়ি (১৯)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
শান্ত এবং আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম৷ যদিও শান্ত যেতে চাচ্ছিলো না, আমি জোর করে হাসপাতাল নিয়ে আসলাম। প্রাথমিক চিকিৎসাটা নেওয়া দরকার। র ক্ত ড্রেসিং করে মাথা বেঁধে ছিলো হাসপাতাল। পা কাটেনি তবে ফুলে গিয়েছে। সেটার জন্য এবং ব্যথা কমার জন্য ঔষধ লিখে দিলো। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সেটা কিনে নিলাম। অতঃপর দুজন রিকশা করে বের হলাম কাছাকাছি পার্কের উদ্দেশ্যে। চলার পথেই ইতিমধ্যে শান্ত এবং লোকটার ঝামেলা কেন হয়েছিলো শুনে নিলাম। ঐ লোকটি সেখানের একজন ব্যবসায়ী। তার রেগুলার কাস্টমারও সব শান্তর দোকানে এসে ভিড় জমায়। তাদের থেকে কাপড় সহজে কিনতে চাচ্ছে না। তাই তাদের বেঁচাকেনার অবস্থা ভালো না। এটা নিয়ে শান্তর প্রতি তারা অসন্তুষ্ট। তারই জের ধরে আজ ইচ্ছা করে ঝামেলা বাঁধালে। প্রথমে শান্ত চুপ থাকলেও পরবর্তীতে থাকেনি। অতঃপর দুজনের মধ্যে বেশ মারা মারি হলো। লোকটিই প্রথম দিকে বেশি আঘাত করেছিলো শান্তকে। আঘাত করার মাঝে সে শান্তর বাবা, মা তুলে গা লি দেয়। যেটা শুনে শান্তর মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে যায়। যার জন্য সেও নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে পিটিয়েছে।
এসব কথা শুনে আমি অবশ্য চুপ করে ছিলাম। তবে শান্তর এসব মা রামারিতে জড়ানো আমার একদমই পছন্দ নয়। এটা শান্তও বুঝতে পারে। তাই ম্লান হেসে বলে,“কেউ আমাকে মে রে যাবে, বকা দিয়ে যাবে সেটা দাঁড়িয়ে ধৈর্য ধরে হজম করবো। এমন ছেলে আমি নই। আর হতেও পারবো না।”
আমি শান্তর এই কথার কোন জবাব দেই না। দুজনে চলে আসলাম পার্কের কাছে। দুপুরের দিক হওয়ায় পার্কে তেমন লোক নেই। তাতে অবশ্য আমাদের মাথা ব্যথা নেই। আমরা দুজন গিয়ে ছায়া দেখে একটি বেঞ্চে বসলাম। অতঃপর আমি বললাম,“আজ দোকান বন্ধ করে দিলেন তাতে আপনার লস হবে না?”
এটা শুনে শান্ত মাথা নাড়িয়ে বলে,“হ্যাঁ।” আমি এটা শুনে কিছুটা মলিন গলায় বললাম,“তবে আমি এসে ভুল করলাম।”
আমার মুখে এই কথা শুনে শান্ত শব্দ করে হেসে দেয়। মজা করে বলে,“এখন এই দুঃখে আবার কান্নাকাটি করবেন না প্লীজ। তাহলে কাজল ঘেটে যাবে। আর আপনাকে খুব বাজে দেখাবে। বিশ্বাস করুন খুব বাজে।”
শান্তর মজা শুনে আমি মুচকি হাসলাম। শান্ত সেটা দেখে বলে,“মুখে এই হাসিটা ধরে রাখুন। এভাবে আপনাকে খুব সুন্দর লাগে। আর যদি বলেন লস তাহলে বলবো যা ঘটার তা এমনি ঘটবে। আজ আমার এখানে আসার ছিলো এসেছি। দোকান বন্ধ থাকার কথা ছিলো, সেটা বন্ধ রয়েছে। আপনি না আসলে হয়তো এটা অন্য কোন কারণে বন্ধ থাকতো।”
শান্তর কথা শুনে আমি মাথা নাড়ালাম। যার অর্থ তার কথা আমি বুঝতে পেরেছি। শান্ত এটা দেখে বলে,“শুধু মাথা নাড়াবেন?
কিছু বলার নেই, এতদিন পর সামনে দেখে আমায় দেখলেন। আমাকে কেমন লাগছে সেটা অন্তত বলুন।”
“রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বখাটেপনা করতে গিয়ে কপাল ফাটানো এক উসকো খুসকো চুলের যুবকের মতো লাগছে। একদম বখাটে ছেলে।”
আমার কথা শুনে শান্ত হাসে। সে জবাব দেয় না। আমিও তার হাসির সঙ্গে তাল মেলাই। অতঃপর শান্ত বলে,“তারমানে এতদিনে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। আগেও আমাকে বখাটে লাগতো এখনো লাগছে। তাই তো?”
“মনে হয়।”
আমি ম্লান হেসে কথাটি বললাম। শান্ত জবাবে বলে,“ওহ বাবা বাঁচলাম। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, এই শহরের আলো বাতাস আমাকে না বদলে দেয়। আপনি যখন বলেছেন এক আছি, তার মানে একই আছি।”
”নিজেকে বখাটের মতোই রাখতে চান? আপনাকে এমন লাগলে আপনি খুশি হন?”
আমার কথায় শান্ত মাথা নাড়ায়। অতঃপর বলে,“আমি যেমন আছি ভালো আছি। পরিবর্তনের দরকার নেই। আমার কাছে আমি ভালো মানে সব ঠিক।”
“আচ্ছা। তবে আপনাকে কিন্তু ততটাও খারাপ দেখায় না। বখাটে বলতে যেমন বোঝায় তেমন নয়। আমি একটু মজা করছিলাম।”
আমার কথা শুনে শান্ত কোন জবাব দেয় না। বরং প্রসঙ্গ বদলে বলে,“আপনার মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এটা কিন্তু ভালো।”
“হয়তো।”
আমার এই কথা শুনে শান্ত হেসে বলে,“সন্দেহ আছে?”
আমি মাথা নাড়িয়ে না জানালাম। শান্ত আপনমনে বললো,“হঠাৎ শাড়ী পড়লেন যে? খোপা চুল বেনী করলেন যে?”
“ইচ্ছে হলো।
যদিও মানুষজন কৌতূহলী চোখে দেখছিলো, হয়তো আমাকে এই শাড়ীতে ভালো লাগছে না। কিন্তু আমি তাদের কথা ভাবা বাদ দিয়েছি। তাদের কাছে ভালো না লাগুক আমার কাছে লাগছে। আমার নিজেকে এই শাড়ীতে দেখতে ভালো লাগছে।”
আমার এই কথা শুনে শান্ত খুশি হয়। খুশিমনে বলে,“এটাই। কারো খুশির জন্য নিজের খুশি বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। হ্যাঁ অন্যের ভালো জন্য আমরা কাজ করতেই পারি। তার মানে এটা নয় যে নিজের ক্ষতি করে অন্যের ভালো চাইবো।”
“হুম। একটা কথা বলবো শান্ত?”
“বলুন।”
শান্তর সম্মতি পেয়ে আমি বললাম,“মানুষ আপনাকে যেমন ভাবে আপনি তেমন নন। আসলে বাহ্যিক রূপ দেখে মানুষকে না চিনে তার সম্পর্কে কল্পনা করা কতটা ভুল তার বাস্তব উদাহরণ আপনি। আপনি মানুষটি খুবই চমৎকার। এবং ভালো মানুষ।”
“ধন্য হলাম। কেউ তো আমার ভালো গুন দেখলো। কিন্তু আফসোস আমার বাবা আমার ভালো গুন দেখে না। আপনি বরং এক কাজ করুন কথাগুলো আবার বলুন আমি রেকর্ড করে আমার মায়ের স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেই।”
শান্তর মজা শুনে আমি শব্দ করে হেসে দেই। ছেলেটার প্রশংসা করলাম এত সিরিয়াস হয়ে আর সে এক মূহুর্তে সেই সিরিয়াস পরিবেশ বদলে দিলো। আমার হাসির শব্দে শান্ত আমার দিকে অন্যরকমভাবে তাকালো। অতঃপর বললো,“এখানে বসে না থেকে চলুন পার্কটি ঘুরে দেখি।”
“আচ্ছা। তবে আপনি পা দিয়ে ঠিকভাবে চলতে পারবেন?”
“একদম। আমার পা ঠিক হয়ে গেছে। আরে তেমন জোরে বা রি খেয়েছি নাকি যে পায়ের সব শক্তি চলে যাবে। আমার পুরো বডি ফিট রয়েছে। একদম ফিট।”
এটা বলে শান্ত একটু জোরেই হাঁটা ধরে। যার ফলে পায়ে ব্যথা পেয়ে পড়ে যেতে নেয়। আমি এটা দেখে তৎক্ষনাৎ তাকে ধরে ফেলি। শান্ত মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। আমার হাত দুটো দিয়ে তার দুহাতের বাহু ধরে রয়েছি। শান্ত সোজা হয়ে দাঁড়াতে আমি আমার হাত সরিয়ে নেই। অতঃপর মজা নিয়ে বলে,“বেশি ভাব ভালো না। বুঝলেন তো?”
শান্ত জবাব না দিয়ে হাসে। আমি কথা না বাড়িয়ে পার্কটি ঘুরে দেখতে শুরু করি। দুজনেই সবুজে মোড়া প্রশান্ত এই পার্কটিকে দেখতে ছিলাম। দুপুরের কড়া রোদের মাঝে ঘন ছায়া ফেলে রাখা অশ্বত্থ, বট আর কদম গাছ। এই স্থানের বাতাসে ভেসে আছে সুন্দর এক সুঘ্রাণ। ফুলের এই মিষ্টি গন্ধে পার্কের বাতাসটি মনমুগ্ধকর লাগছে। পার্কটির মাঝে থাকা গোলাকৃতির লেক, যার চার পাশে অনেক ফুলের গাছ রয়েছে। যেগুলো থেকেই মিষ্টি গন্ধ বের হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। লেকের সামনে এসে দাঁড়িয়ে অন্যরকম ভালো লাগার এক অনুভূতি জন্ম নিলো। গোলাপ, জবাসহ নাম না জানা অনেক ফুল ফুটে রয়েছে। যেগুলোর মাঝে লেকের পানিতে ভেসে রয়েছে শাপলা এবং শালুকের পাতা। যার মাঝে দুটো শাপলা ফুটে রয়েছে। বেশ সুন্দর এক পরিবেশ। দুপুর হওয়ায় মানুষজন নেই বললেই চলে। তবে দূরে এক বেঞ্চে একজোড়া কাপল দেখা যাচ্ছে। তাদের দেখে ম্লান হেসে সরু ইট বিছানা পথ দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। সামনে বাচ্চাদের দোলনা, স্লাইড রয়েছে। বিকালে এখানে হয়তো বাচ্চারা খেলা করে। সেটা কল্পনা করে মুচকি হাসলাম। এত সুন্দর পরিবেশ দেখে কারো মন খারাপ থাকলেও দূর হয়ে যাবে। বেশ লাগছিলো আমার। এসবের মাঝে হঠাৎ শান্ত পাশে এসে কানের পাশে একটি জবা ফুল গুজে দেয়। আমি কিছুটা হচচকিয়ে গিয়ে তার দিকে তাকাই। শান্ত আমার চোখে চোখ রেখে মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বলে,“এবার আপনাকে একদম পার্ফেক্ট লাগছে।”
“তাই বুঝি?”
আমার কথায় শান্ত মাথা নাড়ায়। অতঃপর ফোন বের করে বলি,“এই সুন্দর স্থানে কিছু ছবি তুলি।”
আমি মাথা নাড়াতে শান্ত ছবি তুলতে থাকে। শান্ত ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ থমকে যায়। কালো শাড়ী, এক কাধ বেয়ে পড়া বেনী, বেনীর ওপর পাশের কানে থাকা লাল জবা। সব মিলিয়ে পুষ্পের এমন রূপ চোখে পড়ার মতো। যেটা শান্তর চোখে পড়ছে বেশ। সে বারবার আজ মুগ্ধ হচ্ছে। হঠাৎ আপনমনে বলে উঠে,“আপনাকে এভাবে কখনো খেয়াল করা হয়নি। তবে আজ না চাইতেও আমি আপনার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাতে বাধ্য হচ্ছি। মনে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে। কিন্তু মনের এই অনুভূতির জাগরণ ঠিক হচ্ছে তো?”
___
পার্ক থেকে বেরিয়ে আমরা একটি রেস্টুরেন্টে বসলাম। দুপুরের খাবার এখানেই শেষ করবো। খাবার অর্ডার দিয়ে সেটা আসার অপেক্ষা করছিলাম। সেই মূহুর্তে শান্ত বললো,“আচ্ছা আপনি আমার সঙ্গে ঘুরতে পছন্দ করেন কেন পুষ্প?”
শান্তর হুট করে করা প্রশ্নটি শুনে কিছুটা চমকে গেলাম। পরক্ষণে নিজেকে সামলে বললাম,“কারণ আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। যে বন্ধুর ছোঁয়ায় আমি আমার জীবনটাকে অন্যভাবে চিনতে শিখেছি। বুঝতে শিখেছি। নিজেকে নিজে ভালোবাসতে শিখেছি। আমার ছোট থেকে সেভাবে ঘোরা হয়নি। আপনার হাত ধরেই আমি প্রথম ঘোরাঘুরির যে আনন্দ সেটা পেয়েছি। তাই আপনার সঙ্গে ঘুরতে পছন্দ করি। আমার এই পছন্দ সারাজীবন থাকবে।”
আমার কথা শুনে শান্ত মুচকি হাসি দেয়। অতঃপর বলে,“তো এরপর জীবনে কী করবেন? মানে ভবিষ্যত নিয়ে কী ভাবনা চিন্তা করেছেন?”
“এই তো বয়স তো আটাশ পেরিয়ে উনত্রিশ হতে যাচ্ছে। এই বয়সে ভবিষ্যত নিয়ে একটি মেয়ের যা ইচ্ছা থাকে তাই রয়েছে।”
“সেটা কী?”
শান্তর প্রশ্নে ম্লান হেসে বললাম,“সারাজীবন তো একা থাকা যায় না। তাই অবশ্যই বিয়ে করবো,সংসার করবো। আমার মতো অনাথ, একা থাকা একটি মেয়েকে যদি কোন ছেলে পছন্দ করে তাহলে তাকে বিয়ে করে সারাজীবন কাটিয়ে দিবো।”
”মানে? ছেলেটার আপনাকে পছন্দ হলেই হলো? আপনার পছন্দ হতে হবে না?”
শান্তর এই কথা শুনে আমি স্বাভাবিক ভাবে বললাম,“আমার মতো মানুষকে যে পছন্দ করবে সে একজন ভালো মানুষই হবে। তাই তাকে মেনে নেওয়া আমার জন্য সঠিক।”
“আমি ভেবেছিলাম আপনি অনেক পরিবর্তন হয়েছেন। কিন্তু কচু হয়েছেন।”
শান্ত কিছুটা রাগ নিয়ে বলে। তার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,“মানে!”
”আপনি একা। আপনি অনাথ। ছোট থেকে এক পরিবারে বড় হয়েছেন। এখন তাদের সাথে সম্পর্ক নেই। বিয়ে হলে একটা মেয়ের পরিবার থেকে যেসব পাওনা তা ছেলে পাবে না। এসব কারণে আপনি শুধুমাত্র যে আপনাকে পছন্দ করবেন তাকে বিয়ে করবেন এটা হতে পারে না। আপনার নিজস্ব চাওয়া পাওয়া আছে। অবশ্যই প্রত্যেক মানুষের থাকে। জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার জন্য এতটুকু চাওয়া পাওয়া নিজস্বতা থাকা উচিত।”
আমি শান্তর কথা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু শান্ত আমার কথা বুঝতে পারছে না। আমি সেটা বোঝাতে নিলে শান্ত বলে,“থামুন পুষ্প। আপনি যা বলছেন তা হয় না। ধরুন আমি আপনাকে পছন্দ করলাম। তাই আপনি আমাকে বিয়ে করে নিবেন? এমনটা উচিত নয় পুষ্প। একজন মানুষ আপনাকে পছন্দ করলেই সে যে আপনি সারাজীবন ধরে যেমন মানুষ জীবনসঙ্গী হিসাবে কল্পনা করেছেন তেমন মানুষকে বিসর্জন দিয়ে, শুধুমাত্র আপনাকে পছন্দ করেছে বলে বিয়ে করে নিবেন। এটা খুবই অযৌক্তিক। আমি বুঝতে পারছি আপনি ভাবছেন, আপনার যেমন ছেলে পছন্দ তেমন ছেলে হয়তো আপনাকে পছন্দ করবে না। সবাই শ্বশুড়বাড়ি যেতে চায়, সামাজিক নিয়ম নীতির মাধ্যমে বিয়ে চায়। কিন্তু তাই বলে আপনি আপনার চাওয়া বিসর্জন দিয়ে যাকে তাকে তো বিয়ে করতে পারেন না, তাই না?আপনি যাকে বিয়ে করবেন তার মাঝে নূন্যতম কিছু গুন তো থাকা দরকার যেটা আপনি চান।”
একটু থেমে শান্ত বলে,“আপনি বয়স নিয়ে ভাবছেন? সমাজ নিয়ে ভাবছেন? এসব বাদ দিন। দেখুন যার সঙ্গে আপনার সব মিলবে, আপনার জোড়া বাধবে সেই মানুষটির সঙ্গে আপনি বুড়ি হয়ে গেলেও বাধবে। এখানে বয়স বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তাই এই চিন্তা করে। নিজের পছন্দের মতো মানুষ খুঁজে তারপর বিয়ে করুন। বয়স হয়ে যাচ্ছে বলে বিয়েটা সেড়ে নেই এমন করবেন না। পরে পস্তাবেন। জীবন এত সহজ নয়। আপনি হয়তো ভাবছেন বিয়ের পর মহান হওয়ার জন্য তাদের কথামতো চলবেন। এতদিন যেমন বাবা, মায়ের কাছে ছিলেন তেমন থাকবেন। সব মানিয়ে নিবেন। তাহলে আমি বলবো আপনার এই পরিবর্তন কোন কাজের নয়।”
শান্তর কথাগুলো শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। সত্যি তো, আমার নিজস্ব পছন্দ রয়েছে তো। কিন্তু তেমন মানুষ খুঁজে পাবো জীবনে। পেলেও সে কী আমাকে কখনো পছন্দ করবে। এই কারণেই তো এমন ভাবনা। এর মাঝে খাবার চলে আসে। শান্ত প্রসঙ্গ বদলে বলে,“ মা রা খেলে খান। তাতে আমার সমস্যা নেই। আপাতত চলুন টাকা দিয়ে কেনা খাবারগুলো খাই। আপনার গভীর চিন্তায় খাবার না খেয়ে টাকা গচ্ছা দিয়ে এখান থেকে আমি যেতে পারবো না।”
শান্ত কথাগুলো বলে হেসে দেয়। আমি তাল মিলিয়ে ম্লান হাসি। তবে তার কথা আমাকে খুব ভাবনায় ফেলেছে। শান্ত এটা বুঝেই আমার সঙ্গে মজা করতে শুরু করে। খাবার এগিয়ে দিয়ে ইশারায় খাওয়া শুরু করতে বলে। আমি মাথা নাড়াই। এমন সময় কেউ একজন এগিয়ে এসে বলে উঠে,“মিস পুষ্প?”
’
’
চলবে,
(ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#ইচ্ছেঘুড়ি (২০)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
আমি এবং শান্ত দুজনেই ডাক শুনে তাকালাম। আমার সামনে রায়ান দাঁড়িয়ে আছে। আমার কলিগ। আমি তাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,“হ্যাঁ। আপনি এখানে?”
“পাশেই কাজে এসেছিলাম, ভাবলাম দুপুরের খাবার এখানেই করে নেই। হঠাৎ আপনার দিকে চোখ পড়লো তাই চলে আসলাম।”
রায়ানের কথা শুনে আমি ম্লান হাসলাম। শান্ত কিছু বুঝতে না পেরে চোখ দিয়ে ইশারা করলো। আমি দুজনে পরিচয় করিয়ে দিলাম। রায়ান দুই একটি কথা বলে চলে গেল। সে চলে যেতে আমি শান্তকে বললাম,“এই যে ভদ্রলোককে দেখলে না খুবই কর্মঠ, আত্মবিশ্বাসী মানুষ। কাজের প্রতি এত দায়িত্বশীল। না দেখলে বুঝবেন না।”
আমি রায়ান সম্পর্কে আরও কিছু কথা বললাম। শান্ত আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। শান্ত আমার কথা শুনছে কি-না বোঝা যাচ্ছে না। তবে সে আমার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। অতঃপর বলে,“আপনার রায়ানের মতো মানুষই পছন্দ তাই না?”
“এমন মানুষ কে না পছন্দ করবে। দায়িত্বশীল, ভদ্র এবং ভালো মানুষ। সবার এমন মানুষই পছন্দ হবে। স্বাভাবিক বিষয়।”
আমার এই কথা শুনে শান্ত মুচকি হাসলো। কিন্তু কোন জবাব দিলো না। আমরা দুজন খাবার খেয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম। রাস্তায় বের হওয়া অব্দি লক্ষ্য করলাম শান্ত তেমন কথা বলছে না। আমি এটায় একটু অবাক হয়ে বললাম,“হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেলেন যে?”
“তাই বুঝি?”
এটা বলে শান্ত আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। আবার বলে,“মাঝে মাঝে একটু শান্ত থাকা উচিত। নয়তো আমার নামটার অপমান হয়ে যায় না?”
শান্তর মুখে এই কথা শুনে আমি হেসে দিলাম। অতঃপর বললাম,“আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আপনি এত অশান্ত বলেই আপনার নাম শান্ত রাখা হয়েছে।”
আমি মজা করছি বুঝতে পেরে শান্তও মজা নেয়। কয়েক মূহুর্তের মাঝে শান্ত আবার আগের মতো হয়ে গিয়েছে। এমন সময় শান্তর কাছে একটি ফোন আসে। সেটা ধরে সে বলে,“হ্যাঁ পাখি বলো?”
শান্তর মুখে মেয়েদের নাম শুনে কিছুটা অবাক হলাম। তবে তেমন গুরুত্ব দিলাম না। শান্ত ফোনে বলে,“আচ্ছা আমি আসছি।”
এটা বলে ফোন রেখে আমার দিকে তাকায়। নরম গলায় বলে,“স্যরি। আমাকে যেতে হবে চাচা ডেকেছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। সমস্যা নেই।”
আমার মুখে এই কথা শুনে শান্ত আমাকে বলে,“এখান থেকে বাড়ি যেতে পারবেন?”
“হ্যাঁ।”
আমার কথা শুনে শান্ত ভরসা পায়। অতঃপর সুন্দরভাবে বলে,“আচ্ছা। তবে আমি আসছি।”
আমি মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দেই। শান্ত চলে যায়। যাবার সময় আমার দিকে কয়েক মূহুর্ত তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। শান্ত চলে যেতে আমিও একটি রিকশা ডাকি। সেই মূহুর্তে রায়ান এসে পাশে দাঁড়ায়। শান্ত গলায় বলে,“আপনার বন্ধু চলে গেল?”
“হ্যাঁ। তার একটি জরুরি কাজ এসে গেছে।”
আমার কথা শুনে রায়ান জবাব দেওয়ার পূর্বেই রিকশা এসে থামে। আমি রিকশাচালককে ঠিকানা বলতে রায়ান বলে,“আমিও তো ওদিকেই যাবো। আপনি কিছু মনে না করলে একসঙ্গে যেতে পারি?”
রায়ানের এই কথায় তার দিকে এক পলক তাকিয়ে আমি সম্মতি জানাই। আগের আমি হলে অবশ্য রাজি হতাম না। দুজনে রিকশায় উঠে বসলাম। রিকশা চলতে শুরু করে। নিরবতা ভেঙে রায়ানই বলে,“আপনার বন্ধুর আপনাকে বাসা অব্দি এগিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো।”
“কেন? আমি মেয়ে বলে একা যেতে পারবে না নাকি?”
আমি এই প্রশ্ন করতে রায়ান দু’পাশে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ না। অতঃপর মুখে বলে,“এটা একজন পুরুষের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। মেয়ে বলে যে সে একা পথ পাড়ি দিতে পারবে না এমনটা নয়। তবে কিছু সময় একা নয় পথচলার সঙ্গীর প্রয়োজন পড়ে।”
রায়ানের কথা শুনে আমি চুপ করে গেলাম। প্রসঙ্গ বদলে বললাম,“আপনি ওখানে কোথায় যাচ্ছেন?”
“আমার আন্টির বাসা। মা সেখানে আছে। তাকে নিয়ে আসতে যাচ্ছি। যদিও মা বলছিলো নিতে আসতে হবে না। কিন্তু আমি তো সন্তান। আমার একটি দায়িত্ববোধ আছে না?”
এই কথা বলে রায়ান ম্লান হাসে। আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাই। রায়ানকে যতটা চিনেছি তাতে তাকে যথেষ্ট দায়িত্ববানই মনে হয়। সেজন্য তার থেকে এমন জবাব পেয়ে অবাক হইনি। মাঝপথে রায়ান নেমে গেল। তার গন্তব্য এসে গেছে। রিকশা দিয়ে নেমে সে বলে,“ধন্যবাদ। সংকোচ বিহীন কলিগকে পাশে জায়গা দেওয়ার জন্য।”
এটা বলে রায়ান আমার ভাড়াটাও দিয়ে দেয়। এটা দেখে আমি অবাক হয়ে বললাম,“আপনি আমার ভাড়া কেন দিচ্ছেন?”
“ইচ্ছে হলো।”
রায়ানের কথা শুনে আমি অবাক হলাম। যেই কিছু বলতে নিবে সেই মূহুর্তে রায়ান বলে,“কলিগ হিসাবে একটু তো চেনাজানা রয়েছে। সেজন্য এতটুকু করতেই পারি মিস পুষ্প। আপনার বেশি সংকোচ হলে একদিন আপনি আমার ভাড়া দিয়ে দিয়েন।”
একটু থেমে পুনরায় বলে,“আসছি আমি। পরে দেখা হবে।”
আমি কথা না বাড়িয়ে তাকে বিদায় জানালাম। রায়ান চলে গেল। আমিও রিকশা নিয়ে আমার বাসা অব্দি চলে আসলাম। বাসার ভেতর প্রবেশ করতে শান্তর ফোন চলে এলো। আমি ফোনটি ধরতে শান্ত বললো,“ঠিকভাবে বাসায় পৌঁছে গিয়েছেন?”
আমি ‘হ্যাঁ’ বলতে শান্ত ফোন কেটে দেয়। শান্তর এই হুটহাট ফোন কেটে দেওয়ায় আগে আমি বিরক্ত হতাম। তবে এখন এসবের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।হঠাৎ আমার রায়ানের কথা মনে পড়লো। অতঃপর মনেমনে বললাম,“সবার দায়িত্ববোধ দেখানোর ভাষা এক নয়। শান্তও দায়িত্বশীল। শুধু তার প্রকাশভঙ্গী ভিন্ন।”
এই কথাটি ভাবতে আনমনে হেসে উঠলাম। শান্তর গভীর ভাবার্থ বহন করা কথাগুলো ভেবে মনেমনে বললাম,“আদৌ আমার পছন্দের মানুষ আমাকে পছন্দ করবে তো?”
___
কাজলের শ্বশুড়বাড়িতে তার বাবা, মা এসেছে। মা মেয়েকে দেখে জড়িয়ে ধরে। সে কিছুটা মন খারাপ করে বলে,“তুই তোর বাবা, মায়ের সঙ্গে এত নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারছিস?”
কাজল মায়ের কথার জবাব না দিয়ে শান্ত গলায় বলে,“তোমরা এত ঘন ঘন আমার শ্বশুড়বাড়ি কেন আসো মা?”
“মানে? আমরা তোকে দেখতে আসি। তোকে বেশিদিন না দেখে থাকতে পারি না যে। তুই আমাদের বাবা, মায়ের অনুভূতি বুঝিস না?”
মায়ের এই কথায় কাজল উপহাস করে বলে,“বড় মেয়েকে তো ঠিকই মাসের পর মাস না দেখে থাকছো। তাতে তো অসুবিধা হচ্ছে না। তবে আমার বেলায় হচ্ছে কেন? ও পেটের মেয়ে বলে তাই না?”
“তুই একটু থাম তো। ঐ মেয়েটা তোর কে হয়। কেউ না। তাও তুই তার জন্য গলা ফাটিয়ে ম রছিস। তা আমরা নাহয় ওকে না দেখে থাকতে পারছি। ও তো কম স্বার্থপর নয়। আমাদের না দেখে তো ঠিকই দিন পার করছে। এতগুলো বছর আমরা ওকে বড় করেছি। কই সেটা তো মনে রেখে একটা ফোন করলো না?”
মায়ের এই কথায় কাজল ম্লান হেসে বলে,“তুমি আপার বিষয়টা বুঝতে পারবে না। তোমার দ্বারা এটা সম্ভব নয়। একটা কথা বলি শোনো, তোমরা আপা চলে যাওয়ার পর তাকে মনে করি তাকে হারিয়ে তার শূন্যতা অনুভব করে এক ফোটা চোখের অশ্রু কখনো ফেলোনি। আমি জানি এটা। কিন্তু বিশ্বাস করো আপা তোমাদের থেকে দূরে থাকলেও তোমাদের কথা ভেবে, আমার কথা ভেবে ঠিকই কষ্ট পায়। কিন্তু তোমরা পাও না।”
একটু থেমে কাজল আবার বলে,“বাদ দাও। একটা কথা শুনে রাখো, তোমরা এত ঘন ঘন আর আসবে না এই বাড়িতে। তোমরা এতবার আসো বলে আমাকে এই বাড়িতে নানা কথা শুনতে হয়। তুমি তো মা। তুমি তো বোঝই একটা সংসারে মেয়েদের কত কিছু মানিয়ে চলতে হয়। তার উপর তোমার জামাই তো সেই মানুষ। রাত নিশিতে বউকে ভালোবাসার গান শোনায়। আর দিনের বেলায় মা বোনের কথায় মুখে তালা মে রে রাখে। বউ প্রতিবাদ করলে বউয়ের দোষ দেখে।”
কাজলের মুখে এসব কথা শুনে তার মা বুঝতে পারে সে শ্বশুড়বাড়িতে কত কি সহ্য করছে। এটা অনুভব করতে পেরে তার মা বলে,“জয় তো তোকে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। তাহলে সে কেন এসব চুপচাপ সহ্য করে?”
কাজল এসবের কোন জবাব দেয় না। মা তাকে সান্ত্বনা দেয়। একটু মানিয়ে গুছিয়ে সংসার করার পরামর্শ দেয়। কথা প্রসঙ্গে আবার পুষ্পের কথা উঠলে মা বলে,“মিশতো তো এক পাড়ার বখাটের সঙ্গে। গিয়ে দেখ সেই ছেলে যে শহরে গেছে সেখানেই ম রতে গিয়েছে কি-না।”
মায়ের মুখে এই কথা শুনে কাজল ম্লান হেসে বলে,“মা তুমি তোমার কথা দ্বারা যেসব ইঙ্গিত করছো আমি জানি না তা সত্যি কি-না। যদি সত্যি হয় তাহলে তো আমাদের এলাকায় বউ হয়ে চলে আসবে। তখন দেখে নিও। এতটা দিন সংসার করে আমি যা বুঝেছি তাতে সমাজের নম্র ভদ্র, বাবা, মায়ের বাধ্য ছেলে থেকে একজন বখাটে ছেলে স্বামী হিসাবে বেশি যোগ্য। অন্তত বেয়া দব আখ্যা পাওয়ার ভয়ে বউয়ের উপর অত্যাচার হচ্ছে দেখেও চুপ থাকবে না।”
কাজলের এই কথা শুনে তার মা বিরক্ত হয়। সে বুঝতে পারে না তার মেয়ের পুষ্পের প্রতি এত টান কিসের? তবে সে সেসব না ভেবে বরং মেয়েকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মানায়। এক পর্যায়ে বাবাও ঘরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কাজল বাবা, মায়ের কান্না দেখে নিজেও ভেঙে পড়ে। তার বাবা, মা ছাড়া আপন তো কেউ নেই। তাছাড়া তার বাবা, মা কখনো বদলাবে না। এসব বুঝতে পেরে অভিমান ভুলে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরক্ষণে সে তার বাবা, মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,“আমি তোমাদের সন্তান। তোমাদের সঙ্গে যতই ঝগড়া করি, অভিমান করি। দিনশেষে তোমাদের নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি। এজন্যই তো তোমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে, বাড়ি যেতে আমার ভয় হয়। বড্ড বেশি ভয় হয়। কয়েক বছর পর যদি আমার সন্তান না হয়। তখন যদি আমাকেও তোমাদের মতো সন্তান দত্তক নিতে হয়।
আমি তো তোমাদেরই সন্তান। তোমাদের র ক্ত। স্বার্থপরতা তো আমার র ক্তে মিশে আছে। তাই তো ভয় পাচ্ছি। আমি না তোমাদের মতোই আরও একটি পুষ্পের জীবন নষ্ট করে দেই।”
কাজলের গভীর ভাবার্থ বহন করা এই কথাগুলোও তার বাবা-মায়ের মধ্যে কোন প্রভাব ফেললো না। বরং কাজলের মনটা এখন নরম হয়েছে এটা বুঝতে পেরে তারা তাকে মানাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। এই সুযোগে কাজলের সঙ্গে সব মিটিয়ে নিবে। এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করা যায়। একটি প্রবাদ রয়েছে না,“ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে।”
এই কথার বাস্তব উদাহরণ এই বাবা, মা। যাদের মাঝে অনুশোচনার এক বিন্দু রেশ নেই।
___
আমি সকালে উঠে অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম। অফিসে এসে লিফটে উঠতে তার মাঝে রায়ানের সঙ্গে দেখা হলো। যার হাতে একটি ফাইল। লিফটের মাঝেও সে ফাইলটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তার কাজের প্রতি এত একনিষ্ঠতা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। আমিই প্রথমে কথা বললাম। নরম গলায় বললাম,“কেমন আছেন?”
ফাইলটি মুখের সামনে দিয়ে সরিয়ে আমার দিকে তাকায় রায়ান। হেসে জবাব দেয়,“ভালো আছি। আপনি?”
“ভালো। আপনি সবসময় কাজ নিয়ে বেশিই চিন্তায় থাকেন মনে হয় না?”
আমার এই কথার জবাবে রায়ান খুব সুন্দরভাবে বলে,“একদম নয়। আমি অফিস টাইমে আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাছাড়া নয়। আমার কাছে মনে হয় যখন যে কাজে আমি আছি তখন সেটার প্রতি আমার নিজের সম্পূর্ণটা দেওয়া উচিত। বাসায় গেলে বাড়ির লোককে সঙ্গ দেই, বাহিরে বন্ধুদের এবং অফিসে নিজের কাজকে। এটাই আমি। হয়তো কিছুটা অদ্ভুত।”
“না। অদ্ভুত নন। কিছুটা বেশি দায়িত্বশীল।”
আমার এই কথায় রায়ান মাথা নাড়িয়ে বলে,“হয়তো।”
ইতিমধ্যে লিফট আমাদের ফ্লোরে চলে এসেছে। আমরা দুজনেই নেমে পড়লাম। রায়ান তার ডেস্কে যাওয়ার পূর্বে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,“আপনিও নিজের কাজটা যথেষ্ট মন দিয়ে করেন। অন্য সময় কী করেন জানি না তবে অফিস টাইমে যথেষ্ট মনোযোগী থাকেন। কখনো বিরক্ত হন না।”
“কারণ কেউ একজন বলেছে সব পরিস্থিতিতে নিজের আনন্দ খুঁজে নিতে। আমি আমার কাজের মাঝেও আনন্দ খুঁজি নিয়েছি তাই বিরক্ত হই না।”
আমার মুখে এই কথা শুনে রায়ান জিজ্ঞেস করে,“কে বলেছে?”
আমার মুখের সামনে শান্তর মুখটি ভেসে উঠে। আমি খুবই নমনীয় গলায় বললাম,“প্রিয় বন্ধু।”
’
’
চলবে,