#ইচ্ছেঘুড়ি (২৯)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
আমি শান্তর থাপ্পড় খেয়ে হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সেই মূহুর্তে শান্ত ঘরের ভেতর ঢুকে খুব কঠিন গলায় বলে,“তাকিয়ে আছেন কেন?
আপনার গায়ে হাত তুললাম আপনি কিছু করবেন না?”
শান্তর কথা শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম,“না মানে…।”
“হ্যাঁ বুঝছি।
আপনি তো খুব মহান মানুষ। আপনার গায়ে হাত তোলা যায়। আপনাকে কথা শুনিয়ে চুপ করে রাখা যায়। আপনাকে আমার বাবা, মা এই বিয়েটা ঠিক নয় বললো তাই আপনি নিজেকে ঘুটিয়ে নিলেন। আপনার নিজস্ব কোন চাওয়া পাওয়া নেই। লোকে যা বলবে, লোকে যা করবে তাই তো ঠিক?”
শান্ত একটু থেমে আবারও বললো,“স্যরি এমন মানুষকে আমি আমার জীবনে রাখতে পারবো না। এটা সম্ভব নয়। যেই মেয়েকে অন্যরা নিজের কথায় নাচাতে পারে, ওঠাতে বসাতে পারে, যার নিজের কোন চাওয়া পাওয়া নাই। ঠিক ভুল ভাবার নিজস্ব গুন নেই। সেই মেয়ের সঙ্গে আমার যায় না। সত্যি যায় না।”
শান্তর কথা শুনে আমি পুরো হতবাক। তার কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সে তার বাবা-মা যে আমাকে ফোন করছিলো সেটা জানতে পেরে গেছে। আমি কোন কথা বলছি না দেখে শান্ত বলে,“আরও দুটো থাপ্পড় দিবো?”
”দিন। কিন্তু তাও আপনি যা চান তা সম্ভব নয়।”
আমার এই কথা শুনে শান্ত আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। অতঃপর বলে,“লজ্জা করে না মুখ দিয়ে এই কথা বের করতে। আসলে আমিই ভুল। আমি ভেবেছিলাম আপনি পরিবর্তন হয়েছেন। কিন্তু না। আপনার কোন পরিবর্তন হয়নি। আপনি আপনার বাবা, মাকে রেখে এখানে চলে এসেছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না এসব আপনার পরিবর্তনের নমুনা নয়। শুধুমাত্র তারা আপনাকে চায় না এটা বুঝতে পেরে শুধু নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। শুধুমাত্র এটাই হয়েছে আপনার সঙ্গে। আজ যদি আপনার সামনে আপনার বাবা, মা এসে দাঁড়ায়। তারা যদি তোকে মানুষ করেছি তার দাম দে। আপনি সুরসুর করে তাদের কথায় নাচতে শুরু করবেন। কারণ আপনার মতো মানুষ পরিবর্তন হওয়ার নয়। এত বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরও আপনি নিজের পছন্দ অপছন্দের গুরুত্ব দিতে জানেন না, আপনি লোকের কথায় নাচেন। অন্যরা আপনাকে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। স্যরি এমন মেয়ে তো আমার দরকার নাই। বয়স হলে বুদ্ধি হাঁটুর নিচে থাকা মানুষ আমার দরকার নেই। সমাজ আমাদের বয়স নিয়ে কি বলবে, এই কথা তো খুব মাথায় নিয়েছেন। তা এটা তো ভাবেননি যে আপনার বয়সের সঙ্গে অন্যের কথায় নাচাটা যায় না।”
শেষ কথাটি খুব কঠিন গলায় বললো শান্ত। আমি এসব শুনে পুরো নির্বাক। তাও কষ্ট করে বললাম,“শান্ত আপনি চুপ করুন। প্লীজ যান।
আপনার বাবা, মা আপনাকে কী বলেছে জানি না? আপনি কতটা জানেন তাও জানি না। কিন্তু এটা তো সত্যি, তাদের একটা কথাও মিথ্যে নয়। জানেন আপনি তারা…..।”
“চুপ। আমি একটাও শব্দও শুনতে চাই না। তারা কী বলেছে সেটা শোনার ইচ্ছা আমার নেই? আমি এখানে শুনতে নয় শোনাতে এসেছি। এটাই শোনাতে এসেছি যে আপনার আর আমার মাঝে অনেক পার্থক্য। আপনি আমার যোগ্য নন। শুধু আমার নয় আপনি কারো যোগ্য নন। কারণ বিয়ের পর দেখা যাবে বিয়ে হয়েছে একজনার সাথে, তার বাবা-মায়ের কথা তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সমাজের কথায় তাকে ছেড়ে দিচ্ছেন। না নিজের খুশি নিয়ে ভাবছেন, না তার খুশি নিয়ে। এরকম একটা মেয়ে কারো যোগ্য হতেই পারে না।”
শান্তর কথাগুলো আমার হৃদয়ে বিঁষের মতো বাঁধলো। আমি কিছু বলতে যাবো কিন্তু শান্ত বলতে না দিয়ে বলে,“আমার কথায় কষ্ট হচ্ছে? হওয়া উচিত। এটাই আপনার প্রাপ্য। কষ্ট পাওয়া আপনার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই তো আপনি এটা নিয়েই বাঁচতে চান। সেজন্য নিজের মাঝে এক বিন্দু পরিমান পরিবর্তন নিয়ে আসেননি। বেকার আমার অনেকটা সময় নষ্ট করেছেন। সেই সঙ্গে আমার মন।”
“আপনি ভুল ভাবছেন। আমি যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছি। কিন্তু সব জায়গায় শুধু নিজের কথা ভাবলে চলে না।”
”থাম তো। রাখ তোর মহান হওয়ার নাটক। তোর মহানুভবতা নিয়ে তুই ম র গিয়ে। তুই পরিবর্তন হয়েছিস না? আচ্ছা চল দেখি পরীক্ষা করে কতটা পরিবর্তন হয়েছিস?
আমি শান্তর এমন কথাবার্তা খুবই আহত হচ্ছি। শান্ত এসব বুঝেও কথাগুলো বলছে। কিন্তু আমি প্রতিবাদ করতে পারছি না। দোষটা তো আমারই। শান্ত আমার মলিন মুখ দেখে বলে,“হ্যাঁ বল কি কি পরিবর্তন হয়েছে তোর?”
শান্ত প্রশ্নটি করে আমার চোখের দিকে তাকাতে আমি হচচকিয়ে গেলাম। শান্ত গলায় বললাম,“পরিবর্তন হয়েছে বলেই আমি এই শহরে আসতে পেরেছি। এখন প্রায় সময় ঘুরতে যাই, নিজের মতো করে বাঁচি।”
“আচ্ছা। তাই বুঝি?
তো শোন, প্রথম তুই এই শহরে এসেছিস? এটা তোর পরিবর্তন নয়। তুই নিজের কথা ভেবে এই শহরে আসিসনি। তুই এসেছিস কারণ তুই বুঝে গিয়েছিস তোর বাবা, মা তোকে ভালো না বাসলেও তুই তাদের ভালোবাসিস। তাই তাদের ঋন শোধ করা সম্ভব নয়। তাই চলে এসেছিস। যদি ঋন শোধ সম্ভব হতো তাহলে ওখানেই পঁচে মরতি। দ্বিতীয়ত নিজের জন্য সময় নিয়ে ঘুরতে যাস? নিজে একা কয়দিন ঘুরেছিস? সব দিন তো আমিই ছিলাম। এখন বলবি হাসি-খুশি থাকিস? আরে আমার সঙ্গে রাস্তার পাগল থাকলেও না সে সবসময় হাসি-খুশিই থাকবে। কারণ আমি মানুষটাই এমন।
তো সবদিক বিবেচনা করলে তোর পরিবর্তন কতটা হয়েছে? একটুও না। পরিবর্তন হয়নি। হলে তো আমার বাবার ফোন পেয়ে নিজেকে কষ্ট দিতি না। নিজের কষ্টের কথা তো ছাড়, আমার কথা ভাবলি না।”
শান্তর এসব কথা শুনে আমি জবাব দিতে পারলাম না। তবে শান্ত গলায় বললাম,“শান্ত আপনি আমাকে তুই তুকারি করছেন, এটা ঠিক নয়?”
“এটা ঠিক নয়। সেটা বুঝি এতক্ষণ পর বুঝলি? বুঝলি তো ভালো, তো এত নরম গলায় কেন বলছিস? তোর মনে হয় এত নরম গলায় বললে ওপর পাশের মানুষ ভুল শুধরে নিবে? এটাই তোর সমস্যা। তুই দেখছিস ওপর পাশের মানুষ তোর সঙ্গে যা করছে তা ঠিক নয়। তাও তুই চুপচাপ শুনছিস। ভালো মানুষি দেখাচ্ছিস। আর এই ধরনের মানুষই আমি পছন্দ করি না। তোর মাঝে পরিবর্তন হয়তো এসেছে। কিন্তু সেটা কোন কাজের নয়। তুই যদি সত্যি কাজের কোন পরিবর্তন জীবনে নিয়ে আসতে পারতি তাহলে আমি ঘরে ঢোকার আগে যখন তোর গায়ে হাত তুললাম তখনই তুই উঁচু কন্ঠে প্রতিবাদ করতি।”
শান্ত কথাটি বলে থেমে যায়। আমি শান্তর চোখের দিকে তাকাই। শান্ত মাথা নাড়িয়ে বলে,“হ্যাঁ এখন যেটা বুঝছিস সেটাই বোঝাতে চাচ্ছি। আমার থাপ্পড়গুলো তুই হজম করে নিয়েছিস কারণ তোর মনে হয় তোর জন্য আমার মন ভেঙেছে। আমি কষ্টে আছি? হ্যাঁ ঠিক। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আমি তোর গায়ে হাত তোলার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। তুই কাউকে কষ্ট দিয়েছিস মানে সে তোর জীবনে অনধিকার চর্চা করবে, অন্যায় কাজ করবে সেটা তো হওয়া উচিত নয়। কিন্তু তুই এই সামান্য কথাটা বুঝতে পারছিস না। কোন মানুষের অধিকার নেই তোর গায়ে হাত তোলার। হাত তোলা খুবই জঘন্য কাজ। এটা তুইও জানিস। কিন্তু তাও তুই প্রতিবাদ করলি না। এটাই তোর সমস্যা। এখানেই আমাদের অমিল। তাই আমাদের এক হওয়া সম্ভব নয়। সত্যি সম্ভব নয়। কারণ আজ তুই থাপ্পড় হজম করলি, কাল যদি বিয়ে করে তোকে মে রে হাসপাতাল পাঠিয়ে দেই তাহলে তো তুই সেটাও হজম করে নিবি। স্বামী ভক্ত স্ত্রী হওয়ার কারণে সেটাও মেনে নিবি। কিন্তু স্যরি আমার এমন মানুষের প্রয়োজন নেই।”
“শান্ত আপনি?”
আমি কথাটি বলতে পারলাম না। শান্ত কয়েক মূহুর্তে চুপ থেকে বলে,“আমি যা বলার সরাসরি বলছি পুষ্প। এতক্ষণের ব্যবহারের জন্য আমি মোটেও স্যরি নই। কিন্তু হ্যাঁ। আপনি যদি আমাকে ভালোবাসেন। আমাকে চান। তবে অবশ্যই আপনাকে আমার যোগ্য হতে হবে। সমাজের মানুষ কি বলবে, সবাই কি ভাবছে এজন্য পিছিয়ে যাওয়া মানুষ অবশ্যই আমার যোগ্য নয়। আমার যোগ্য সে যে বলবে সমাজ ভালো চোখে দেখবে না বলে আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে পাবো না। এটা হবে না। সমাজ দেখতে না পারলে চোখ বন্ধ করে রাখবে। এক কথায় নিজের খুশি কারো জন্য বিসর্জন দিতে পারবো না। হ্যাঁ কিছু সময় ত্যাগ করা ভালো। কিন্তু সেটা সবসময় নয়। এমন মানুষ কখনোই শান্তকে পেতে পারে না।”
এই পর্যায়ে শান্ত আমার মাথাটা ধরে, চোখে চোখ রেখে খুবই নরম গলায় বলে,“যদি আপনার মনে হয় আপনি আমাকে সত্যি ভালোবাসেন। আমার সঙ্গে সারাজীবন থাকতে চান। তবে আপনাকে আমার চাওয়ার মতো হয়েই আমার কাছে আসতে হবে। এমন একজন হতে হবে যে তার ভালোবাসার মানুষের খুশির জন্য অন্যদের একটু দুঃখ দিতেই পারে।
অবশ্যই সেই মানুষ হতে হবে যার গায়ে হাত তোলার পর আমি তার কন্ঠের প্রতিটা শব্দ দ্বারা উপলব্ধি করবো আমি যেটা করেছি সেটা ভুল নয় অন্যায়। আমার অধিকার নেই তার গায়ে হাত তোলার। এমন একজন মানুষ যার লোক সমাজের সবার সামনে আমার হাত ধরতে দ্বিধা হবে না, আমিও তার হাত ধরে এটা উপলব্ধি করবো না আমি ভুল করেছি। তার মুখের মলিনতা নয় হাসি আমাকে এই উপলব্ধি দিবে। তাই আপনার যদি মনে হয়, আপনি আমাকে চান। তবে অবশ্যই এমন একজন মানুষ হয়ে আমার কাছে আসবেন। নিজের মনের মধ্যে এই কথাগুলো গেঁথে নিয়ে আমার কাছে আসবেন। আমি অপেক্ষা করবো।”
এটা বলে শান্ত হাত নামিয়ে নেয়। আমি কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলাম। আমি কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বললাম,“কিন্তু?”
শান্ত আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,“আমার স্ত্রীর সম্মান রাখার দায়িত্ব আমার। আপনি আমাকে যতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবেন আমি ততটা নই। এই বিশ্বাস রাখতে পারেন।”
আমি চুপ করে থাকলাম। মুখ দিয়ে কোন কথা বের করলাম না। এটা দেখে শান্ত মনেমনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অতঃপর আমার সামনে হাতজোড় করে বলে,“আপনি তো নিজ ক্ষমতায় জোর দেখিয়ে আমার ভুল শুধরে ক্ষমা নিতে পারবেন না। তাই আমি নিজ থেকেই ক্ষমা চাচ্ছি। স্যরি। আপনার গায়ে হাত তোলা কিংবা আপনাকে তুই তুকারি করে অসম্মান করা, দুটোর কোনটাই আমার ঠিক হয়নি। একটা কথা মাথায় রাখবেন পুষ্প, আপনার গায়ে একবার হাত তোলার পর আপনার নিরবতা কিন্তু ওপর পাশের মানুষকে আপনার গায়ে বারবার হাত তোলার লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছে৷ কারো কথা কষ্ট পেয়ে মুখ লুকিয়ে কান্নাটা কখনো সমাধান হতে পারে না। বরং ঐ কান্না দিয়ে আপনি আপনার দূর্বলতা প্রকাশ করে তাকে সুযোগ দিচ্ছেন বারবার আপনাকে কাঁদানোর। যাই হোক আপনার গায়ে হাত তোলার জন্য আমি সত্যি স্যরি।এই ভুলের জন্য আবারও স্যরি। যদিও গায়ে হাত তোলাটা অন্যায় কিন্তু আমি সেটাকে ভুল হিসাবেই ধরলাম। কারণ এটায় অন্যায় সেটা আপনি তো নিজ মুখে একবারও বলেননি। যেহেতু সুযোগ পেয়েছি সেহেতু ভুল বলে চালিয়ে দেই। স্যরি।”
এটা বলে শান্ত মুচকি হাসে। আমি তার হাসি দেখে কান্না করে দেই। নিজেকে সামলাতে না পেরে শান্তকে জড়িয়ে ধরি। তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ি। শান্ত এই অবস্থায় আমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে,“এবার নিজেই ঠিক করুন, সারাজীবন কাঁদবেন নাকি হাসবেন। আমি অপেক্ষা করবো। আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার যতটা সময় লাগে লাগুক। আপনি সময় নিয়ে ভাবুন। কিন্তু হ্যাঁ ভাবনা শেষে আমার কাছে আসলে অবশ্যই আপনাকে আমার পছন্দের সেই মানুষ হতে হবে যাকে আমি চাই। জীবনে কখনো আমি আর আপনার মাঝে আজকের এই ফালতু মেয়েটাকে দেখতে চাই না। এই কথা মাথায় রেখে অবশ্যই আসবেন। আমি অপেক্ষা করবো।”
এটা বলে শান্ত এক মূহুর্তে না দাঁড়িয়ে চলে যায়। আমি তার যাবার পানে তাকিয়ে থাকি। এই ছেলেটা ঝড়ের বেগে আসলো, নিজে একা একা এত কথা বলে চলে গেল। অথচ তার কথার কত গভীরতা। সত্যি তো। আমিই ভুল। কিন্তু চাইলেই বুঝি নিজের কথা ভাবা যায়। এভাবে হয়। আমি এসব ভাবনায় পড়ে গেলাম।
____
শান্ত রাস্তার একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো। সেই মূহুর্তে তার মা ফোন দেয়। শান্ত ফোনটি ধরে বিরক্তি নিয়ে বলে,“তোমরা এমন কেন মা বলো তো? সবসময় সন্তানের ভালোর জন্য এমন কিছু ভাবো যা সন্তানদের ভালোর চেয়ে খারাপ হয় বেশি?”
“শান্ত বাবা কী হয়েছে?
ঐ মেয়েটা সব বলে দিয়েছে?”
মা খুবই ভীত গলায় কথাটি বলে। যেটা শুনে শান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,“না। আমি শুনতেও চাই না তোমরা কিসব বলেছো। আমার এসব শোনার ইচ্ছা নাই। কিন্তু একটা কথা পরিস্কারভাবে শুনে নাও মা, বিয়ে আমি পুষ্পকেই করবো। অন্য কাউকে নয়। তোমাদের মান সম্মান নিয়ে এত চিন্তা থাকলে মেনে নিও। নয়তো বিয়ের পর গিয়ে বাসায় উঠলে বিষয়টা ভালো দেখাবে না।”
শান্তর কথা শুনে তার মা ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। সে কিছুটা নরম গলায় বলে,“তোর বাবা তো একটু ওমন। তুই তাকে ভুল বুঝিস না শান্ত। বাবা তোর ভালোই চায়। তোকে অনেক ভালোও বাসে।”
“হ্যাঁ খুব ভালোবাসে। তাই ছেলের কথা না ভেবে এলাকাবাসীর কথা ভাবছে।”
শান্ত এটা বলে ফোন কেটে দেয়। তার এখন এসব কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। তার মনের মধ্যে এখন অন্য এক চিন্তা। সে মনেমনে ভাবছে,“আমার কথা ঐ মাথামোটা মেয়েটা বুঝবে তো? আদৌ আসবে?”
শান্তর মনের মধ্যে দ্বিধা কাজ করছে। সে এই মূহুর্তে পুষ্পকে বুঝতে পারছে না। পুষ্প যদি তার কথাগুলো শুনেও সামনে পা বাড়িয়ে না দেয়। যদি সে পিছিয়ে যায়। এটা ভেবে শান্তর ভয় হচ্ছে। পুষ্পকে বিশ্বাস নেই। করতেই পারে এমনটা। শান্তর সব কথা এক কানে নিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিবে। শান্ত এসব ভেবে হতাশ হয়ে বলে,“শালার কেন যে সেদিন এই মেয়ের মলিন মুখ দেখে মায়া হলো। কেনই বা তার সঙ্গে কথা বললাম? কেনই বা এত দেখা হলো। কেনই বা ঐ শালায় লিখলো, ছেলে মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না। তারা বিজ্ঞ মানুষেরা এসব লিখছে বলেই তো আমার মনের মাঝে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব ভবিষ্যতবানী তারা না করলে জীবনেও আমি প্রেমে পড়তাম না। একদম না। সিঙ্গেল লাইফ বেষ্ট লাইফ। সব ঐ শালাদের দোষ।”
শান্ত বিরবির করে কথাগুলো বলে নিজেই হাসে। পাগলের মতো কিসব বলে যাচ্ছে? এত বিচক্ষণ মানুষ হয়েও সে ঐ এক লাইনটিকে মাথায় নিয়ে সেটাকেই দোষ দিয়ে যাচ্ছে। শান্ত এসব বুঝতে পেরে মনেমনে বলে,“শালা মাথাটা গেছে। পুরা পাগল হয়ে যাচ্ছি। শালী মাথায় ভালোই রাজত্ব শুরু করেছে।”
’
’
চলবে,
#ইচ্ছেঘুড়ি (৩০)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি
আমি অফিসে না গিয়ে বিছানায় শুয়ে রইলাম। কিছু ভালো লাগছে না। শান্তর কথাগুলো বারবার কানে ভাসছে। মন এবং মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম এক লড়াই চলছে। আমি বুঝতে পারছি না কাকে জিতিয়ে দিবো? আমার কানে শুধু ভাসছে শান্তর একটি কথা,“আমার স্ত্রীর সম্মান রাখার দায়িত্ব আমার।”
শান্ত তার কথা দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছে তার হাতটি আমাকে শক্ত করে ধরতে হবে। আমি তার হাতটি ধরলে সে কখনো আমার হাত ছাড়বে না। আর না আমার অসম্মান হতে দিবে। কিন্তু এসবে তো তার বাবা, মা খুশি হবে না। আমার তো বাবা, মা নাই। যারা আছে তারা আমার বিয়ের কথা শুনলে এমনি অখুশি হবে। মাথার উপর কারো বাবা, মায়ের দোয়া থাকবে না। এমন একটি সম্পর্কে আমি খুশি হবো। মস্তিষ্কে এসব কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ মন বলে উঠলো,“বাবা, মা দেখেশুনে বিয়ে দিলে তো সে অচেনা হতো। অচেনা মানুষের সঙ্গে সারাজীবন যদি কাটাতে পারিস তবে চেনা মানুষের সঙ্গে সারাজীবন কাটানোর কথা কেন ভাবতে পারছিস না?”
এসব কথা মন বলতে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। নিজের মনকে শক্ত করে সবকিছু আবার ভাবলাম। একদিন ইচ্ছেঘুড়ি উড়িয়ে বাচ্চামো করে বলেছিলাম,“আমার জীবনে এমন কাউকে পাঠাও যে আমার হাসির কারণ হবে।”
আশ্চর্যের বিষয় এটিই যে সেদিন আমার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়ে গিয়েছিলো। সেদিনের পর আমি অনেক হেসেছি। আর আমার হাসির কারণ হয়েছে শান্ত। একই পথে হাঁটতে হাঁটতে কিভাবে যেন শান্তকেই ভালোবেসে ফেলেছি। মুখে না বললেও হৃদয় এই ভালোবাসা স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু সমাজ! শান্ত নাহয় সবার কথা গ্রাহ্য করে না। কিন্তু আমি তো করি। আমার যে মানুষের কথায় বড্ড বেশি আঘাত লাগবে। তাছাড়া চোখের সামনে শান্তর বাবা, মা আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে সেটাও বা আমি কিভাবে দেখবো।
পুরোটা দিন সময় নিয়ে আমি এসব ভাবলাম। অনেক ভাবার পর, অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম। হ্যাঁ সিদ্ধান্তটা সবার চোখে স্বার্থপরতা হবে হয়তো। কিন্তু তাও আমি ভাবলাম। এই সমাজ তো সবসময় কথা শোনাবে। ভালো হলেও খারাপ হলেও। তাদের কথায় কেন নিজের ভালোবাসার সঙ্গে বেঈমানী করবো? আর রইলো শান্তর বাবা, মা। নাহয় তাদের বিরক্তির মাঝে ভালোবাসা খুঁজে নিবো। হই না একটু স্বার্থপর। যদি এই কারণে জীবনে ভালোবাসার মানুষ আসে তবে ক্ষতি কিসের? একটু স্বার্থপর হতে দোষ কি? তাছাড়া আজ যদি সবার কথা ভাবি তাহলে শান্তর বন্ধুত্বও হারাতে হবে। আমি তার ভালোবাসা হারিয়ে বাঁচতে পারলেও বন্ধুত্ব হারিয়ে বাঁচতে পারবো না। এটা সম্ভব নয়। আজ জীবনের এতটা পথ আমি যার জন্য পাড়ি দেওয়ার সাহস পেয়েছি সে শান্ত। শান্তর মতো বন্ধু পাশে না থাকলে এটা কখনোই সম্ভব হতো না। শান্তর প্রতিটি কথা আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে। এই শহরে পথ চলতে শিখিয়েছে। সেই বন্ধুটাকে আমি হারাতে পারবো না। তাই সবার সব কথা অগ্রাহ্য করে এবার মনের কথা শুনলাম। আমার এই সিদ্ধান্ত হয়তো সবার কষ্ট পাবে। কিন্তু আমি তো খুশি হবো। সেই সঙ্গে শান্তও খুশি হবো। আমি এবং শান্ত খুশি, এটাই যথেষ্ট এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমার জন্য।
____
শান্ত দোকানে চিন্তিত হয়ে বসে রয়েছে। তার চিন্তিত মুখ দেখে পলাশ এবং রবিরও খুব চিন্তা হয়। এতদিনে শান্ত তাদের অনেক প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছে। তার মুখে বিষন্নতা, চিন্তা দেখলে তাদের ভয় হয়। পলাশের তো ইচ্ছে করছে পুষ্পকে ফোন দিয়ে বলতে,“আপনার ভাবা শেষ হয় নাই। এত ভাবা লাগে কিসে?”
পলাশের খুব রাগ হয়। সে রাগের মাথায় মনেমনে কয়েকটা বকাও দেয়। এদিকে শান্ত ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। অন্য হাতে আধ খাওয়া সিগারেট। যেটা আর টানতে ইচ্ছে করছে না। শান্ত ফোনের দিকে তাকিয়ে মনেমনে বলে,“পুষ্প আদৌ ফোন দিবে? সে কী মনের কথা শুনবে না? শুধু লোকের কথা শুনবে? ধুর৷ এমন যদি হয় তাহলে খুব খারাপ হবে পুষ্প। আমাকে জীবনে চোখের দেখাও আর দেখতে পারবেন না পুষ্প। প্লীজ না। এমন করবেন না পুষ্প। প্লীজ মনের কথা শুনুন, নিজের কথা ভাবুন।”
শান্ত একা একা এসব বিরবির করছে। রবি এই কান্ড দেখে বলে,“শান্ত ভাইয়া আপনি কী ভাবীর চোখে পাগল হয়ে গেছেন?”
শান্ত বিরক্তি নিয়ে রবির দিকে তাকায়। এটা দেখে পলাশ বলে,”ওর দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? তোর কর্মকান্ড দেখে এসব ভাবা তো ওর ভুল নয়। কোথাও ভুল হতে দেখছি না।”
এই কথা শুনে শান্ত চিন্তিত হয়ে বলে,”তোরা এসব বুঝবি না। শালার মেয়েদের পাল্লায় পড়াই উচিত না। যে শালা মেয়েদের পাল্লায় পড়ে তার জীবনই শেষ।”
“এজন্যই আমি মেয়েদের থেকে দূরে থাকি।”
রবির মুখে এই কথা শুনে শান্ত এবং পলাশ দুজনেই অবাক হয়ে তাকায়। শান্ত বিষ্ময় নিয়ে বলে,“এতটুকু পুচকে তুই এসবের কী বুঝিস রে? বেশি পেকেছিস?”
“আরে না।
শান্ত ভাইয়া তুমি আমায় যত ছোট ভাবো আমি কিন্তু তত ছোট নই। আরে আমার বন্ধু রতন আমার বয়সী হয়ে দুই চারটা বান্ধবী পাতিয়ে বসে আছে। সেখানে আমি তো কিছু করিইনি।”
রবির মুখে এসব শুনে শান্ত এবং পলাশ দুজনেই ধমক দেয়। এই বয়সে বেশি কথা বলছে। রবি তাদের ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায়। শান্ত বুঝে এখানে রবির দোষ নেই। সে এমন পরিবেশে বড় হচ্ছে যেখানে ওর বয়সের ছেলে মেয়েরা নেশায় অব্দি আসক্ত হয়ে গিয়েছে। শান্ত মনেমনে ভাবলো,“না। এবার রবির বেতনটা বাড়িয়ে তাদের মা ছেলেকে বস্তি থেকে বের করতে হবে। ভালো একটা স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে যাতে থাকতে পারে সেটা দেখতে হবে। ওসব ছেলে ছোকরাদের সঙ্গে মিশে না নষ্ট হয়ে যায়।”
শান্ত এসব ভাবছিলো আর বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছিলো। সেই মূহুর্তে পলাশ অবাক হয়ে বলে,“শান্ত সামনে তাকা।”
শান্ত তাকায় না। সে ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,“পারবো না। এখন আমি কিছু দেখতে চাই না। আমার ইচ্ছে নেই।”
“তুই ফোনে যেটা খুঁজছিস, আশা করি সামনে তাকালে তার চেয়ে বেশি কিছু পাবি।”
পলাশের কথায় অবাক হয়ে শান্ত সামনে তাকায়। তার মুখটা হা হয়ে যায়। সে যার ফোনের আশায় বারবার ফোন দেখছিলো সে স্বয়ং এসে উপস্থিত। পুষ্প তাকে ফোন না দিয়ে সোজা তার দোকানে এসে পড়েছে। শান্ত এটা দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,“সত্যি পুষ্প?”
“সকাল থেকে বিকাল অব্দি ফোনের দিকে এতবার তাকিয়েছিস যে এখন চোখের পাওয়ার কমে গেছে? ভালোভাবে দেখ, ওটা সত্যি।”
পলাশের এই কথা শান্ত লাফ দিয়ে উঠে।
★
শান্তকে হাসি মুখে আমার দিকে আসতে দেখে আমি খুব খুশি হলাম। সে এগিয়ে এসে বলে,“আপনি?”
“হ্যাঁ আসতে পারি না?”
শান্ত আমার কথা শুনে কিছু একটা ভেবে বলে,“হ্যাঁ। এটা আমার দোকান। এখানে রোজ শত কাস্টমার আসে। এখানে তো আপনি আসবেনই।”
শান্তর কথা শুনে আমি মুচকি হেসে বললাম,“আমাকে আপনার কাস্টমার মনে হলো?”
“হ্যাঁ। আমাদের তো বন্ধুত্ব আর নেই। তাই বন্ধু হিসাবে আমার দোকানে আসবেন না সেটা তো জানিই।”
শান্তর কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে বলা কথাটি শুনে আমি হেসে দিলাম। অতঃপর শান্তকে অবাক করে দিয়ে তার হাতটি ধরলাম। শান্ত হচচকিয়ে যায়। আমি তার চোখে চোখ রেখে বলি,“আমার সঙ্গে এক জায়গায় যাবেন শান্ত?”
“আমার উত্তর?”
শান্ত কিছুটা ভাব নিতে এতক্ষণ রাগ দেখিয়ে কথা বললেও এবার পারলো না। সে সরাসরি তার কাঙ্ক্ষিত জবাবটি পাওয়ার জন্য প্রশ্ন করলো। এটা শুনে আমি সুন্দর করে হেসে বলি,“চলুন। দিচ্ছি। এতটা সময় যখন অপেক্ষা করেছেন তখন আর একটু করুন।”
শান্ত এই কথা শুনে আর কথা বাড়ালো না। সে আমার সঙ্গে হাঁটা ধরলো। যাবার আগে পলাশকে বললো,“এখানে সবটা তোরা সামলা। আমি আজ আর আসবো না।”
___
নদীর তীরে বসে আছি আমি আর শান্ত। চারপাশে একেবারে নির্জনতা, যেন পৃথিবী থেকে এই জায়গাটুকু আলাদা হয়ে গেছে। নদীর জলে হালকা ঢেউ উঠছে, ঢেউয়ের টুপটাপ শব্দ ভেসে আসছে কানে। বাতাস মৃদু সুরে বয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে ভেসে আসছে কাশফুলের গন্ধ আর অদৃশ্য কোনো অচেনা সুর। আমরা দু’জন নীরবে বসে আছি।কথা নেই, কোলাহল নেই, শুধু নদীর ধ্বনি আর বাতাসের গান। নিরবতা ভেঙে আমি বললাম,“শান্ত আপনার মনে হয় আপনি জীবনটাকে যত সহজভাবে দেখেন জীবন আসলে ততটাই সহজ?”
“এসব ফাও প্যাঁচাল শোনার জন্য এসেছি?”
শান্তর এই কথা শুনে আমি শব্দ করে হেসে দিলাম। শান্ত প্রচন্ড রকম বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হাসি মুখেই বলি,“আমাকে দেখলে এখন আপনার বিরক্ত লাগে?”
“আপনার কথা শুনে বিরক্ত হচ্ছি। এত নাটক না করে সরাসরি বলুন।”
শান্তর এই কথা শুনে আমি তাকে না ঘুরিয়ে বললাম,”আপনার ভাবনার মতো জীবনটা সহজ নয়। অনেক কঠিন। তবে আপনি সেটাকে সহজ করে নিয়েছেন। আমি হয়তো পারবো না। আমি আপনার মতো করে ভাবতে কখনো পারবো না শান্ত।”
এই কথা বলে আমি উঠে দাঁড়াই। নদীর আরও কিছুটা কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। শান্ত আমার কথা শুনে বোধহয় কষ্ট পেলো। তার মন বললো,“শালী এত ভালোভাবে ডেকে নিয়ে এসে মন ভাঙতে চাইছে নাকি? তা মন ভাঙার হলে দোকানেই ভাঙতো। এখানে নিয়ে আসলো কেন?”
শান্ত কথাগুলো বলে আমার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকালো। সেও উঠে দাঁড়িয়েছে। আমি তার দিকে না তাকিয়েও এটা অনুভব করতে পারলাম। আমি আবার বললাম,“আমি আপনার মতো করে কখনো ভাবতে পারবো না। আপনার মতো করে সব কথা উড়িয়ে দিয়ে হাসতে পারবো না। আমার কাছে জীবনটা এত সহজ নয়। এসব সত্যি সম্ভব নয়। এতটা পরিবর্তন আমার হবে না।”
শান্ত এই কথা শুনে থমকে গেল। সে বুঝে নিলো আমি তাকে সত্যি কষ্ট দিতে এসেছি। আমি এই স্থানে তার সঙ্গে থাকা আমার সমস্ত সম্পর্ক শেষ করতে এসেছি। আজ থেকে আমাদের পথ আলাদা হয়ে যাবে। এটা মনে হতে শান্তর পুরো পৃথিবী থমকে গেল। তার মনের মধ্যে ঝড় বইতে শুরু করে। ঠিক সেই মূহুর্তে আমি বললাম,“এভাবেই আমাকে মানিয়ে নিন না শান্ত। আমি অন্যের কথা না ভেবে নিজের কথা ভেবে আজ আপনার কাছে এসেছি। নিজের খুশি ভেবে আপনার হাত ধরতে এসেছি। কিন্তু আপনি যতটা পরিবর্তন চান ততটা সম্ভব নয় শান্ত। এভাবেই আমাকে মানিয়ে নিন না শান্ত। প্লীজ মানিয়ে নিন। আমি তো জানি না কোন পরিস্থিতিতে আমার কেমন ব্যবহার করা উচিত, আপনি নাহয় আমায় শিখিয়ে দিবেন? আপনি আজ সকালে যা করেছেন সেটা আমাকে বোঝাতে করেছেন আমি জানি। আমি সব বুঝেছিও। কিন্তু আমি এতসব পারবো না শান্ত। আপনি যা যা বলেছেন সবটা আমি পারবো না করতে। তবে হ্যাঁ আমি অনেকটা এগিয়ে এসেছি। সারা দুনিয়া কি ভাবলো,কী ভাবছে, সেসব কথা ভেবে আমি আমার মনের কথা শুনেছি। আমি কী চাই, সেটা শুনেছি। আমি আপনাকে চাই। আপনার সঙ্গে সারাজীবন কাটাতে চাই। এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে আমি শুধু আপনাকে এই কথাই দিতে পারি, আমার এই সিদ্ধান্ত কখনো কারো জন্য বদলাবে না। আমি আপনার হাত কখনো ছাড়বো না। কোন পরিস্থিতিতে আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না। আমি সারাজীবন আপনার সঙ্গে থাকবো। বাকি যা পরিবর্তন আপনি দেখতে চান সেটা আমি এখন দিতে পারছি না। এভাবে আমাকে মানিয়ে নিন শান্ত। প্লীজ মানিয়ে নিন।”
শান্ত কোন কথা না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমাকে জড়িয়ে ধরতে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। এক মূহুর্তে মনে হচ্ছিলো সব শেষ। আমি তাকে ছেড়ে নতুন করে বাঁচার কথা বলবো। সেই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে শান্তর হৃদয়ে যা হচ্ছিলো তা বোঝানোর মতো নয়। তাই শান্ত খুশিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। তার কানে শুধু একটি কথাই বাজছে,“আমি সারাজীবন আপনার সঙ্গে থাকতে চাই শান্ত।”
’
’
চলবে,