ইচ্ছেঘুড়ি পর্ব-৩১+৩২

0
22

#ইচ্ছেঘুড়ি (৩১)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

শান্ত বেশ কিছুটা সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখে। অতঃপর ছেড়ে দিয়ে খুশি হয়ে বলে,“আপনি সত্যি আমার সঙ্গে সারাজীবন থাকবেন পুষ্প?”
আমি মাথা নাড়াই। যার অর্থ হ্যাঁ। আমার কাছ থেকে সম্মতিসূচক জবাব পেয়ে শান্ত ভীষণ খুশি হয়। সে হাসি মুখে বলে,“আপনি একটু দাঁড়ান আমি এখনই আসছি।”

”আচ্ছা।”
আমি শান্তকে অনুমতি দিতে শান্ত কিছুটা দূরে চলে যায়। সে ফোন বের করে কাউকে ফোন দেয়। বেশ কিছুটা সময় পর ফোন রেখে আমার কাছে আসে। নরম গলায় বলে,“আমার বাবা, মা রাজি নয়। তারা আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে কখনো মানবে না। এসব হলে তারা আমাকে আর কখনো বাড়িতে তুলবে না বলে জানালো।”

শান্ত এই কথাটি বলে আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে ছিলো। আমি ম্লান হেসে বলি,“একটা সময় পর নিশ্চয় তাদের অভিমান কমে যাবে? আমরা নাহয় সেই সময়টা অব্দি অপেক্ষা করবো।”

“ততদিন অব্দি আমরা…।”
শান্তকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে আমি বললাম,“চলুন না শান্ত আজই বিয়ে করি। যেহেতু আমাদের বিয়েতে কেউ থাকবে না। তাহলে দেরি করে লাভ কি? আমরা বরং আজই বিয়ে করে ফেলি।”

”এটা আপনি বলছেন পুষ্প?”
এই কথাটি বলে শান্ত বারবার চোখ বন্ধ করে খুলে। এটা দেখে আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,“হ্যাঁ আমিই বলছি। একটা সময় পর তো আপনার বাবা, মা ঠিক মেনে নিবে। হয়তো আমাকে মন থেকে মানতে পারবে না। কিন্তু আপনার জন্য ঠিকই মেনে নিবে। সাময়িক সময়ের জন্য এখন তারা কষ্ট পাচ্ছে বা পাবে। তাদের এই সাময়িক কষ্টের জন্য আমি আমার সারা জীবনটা কষ্টে কাটাতে চাই না শান্ত। এবার আমি কিঞ্চিৎ নিজের কথা ভাবছি। এতটুকু স্বার্থপর হলে খুব একটা ক্ষতি নেই তো, তাই না শান্ত?”

শান্ত আমার কথা শুনে বিষ্ময়ের নজরে তাকিয়ে থাকে। আমি এবার তার ডান হাতটি ধরি। অতঃপর মিষ্টি করে বলি,“আজ বিয়ে করতে আপনার সমস্যা নেই তো শান্ত?”

“না।”
এটা বলে শান্ত বাম হাতটি আমার গালে রেখে মুচকি হেসে বলে,“পুষ্প আপনাকে পুরোপুরি বদলাতে হবে না। আপনি আপনার মতোই সুন্দর। তবে আজ যে পদক্ষেপটা নিলেন, শুধুমাত্র এই পরিবর্তনটা নিজের মধ্যে ধরে রাখবেন। প্লীজ রাখবেন। এতটুকু নিজের জন্য ভাবুন। আপনার আর কিছু পরিবর্তন করতে হবে না।
এতটুকু পরিবর্তন আপনার মাঝে থাকলে আমি শান্ত আপনার বাকিসব কিছু মেনে নিতে পারবো। আজ যেভাবে আমার হাত ধরে পূর্ণতা চাইলেন ঠিক এইভাবে সারাজীবন আমার হাত ধরে রাখবেন। কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববেন না। বিশ্বাস রাখুন এতটুকু হলেই আমার চলবে। আমি এটাই চাই আপনি একটু নিজের খুশির কথা ভেবে জীবনে কয়েক পা এগিয়ে দেন।”

আমি শান্তর কথা শুনে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকি। এই একটিমাত্র মানুষ যার সব কথায় আমি মুগ্ধতা খুঁজে পাই। আমি চুপ আছি দেখে শান্ত আবার বললো,“তবে আমি আবারও জানতে চাই আপনি সত্যি আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত ভেবে নিয়েছেন তো?”

“হ্যাঁ।”
আমার জবাব পেয়ে শান্ত স্বাভাবিক গলায় বলে,“আবার একবার ভাবুন। এটা কিন্তু প্রেম নয় যে চাইলেই হুট করে বলে দিলাম ব্রেকআপ, আর হয়ে গেল। এটা বিয়ে। একটা বিয়ে, একটা সংসার। এখানে অনেককিছু জুড়ে আছে। সংসার জীবন এত সহজ নয়। আমাদের ভাবনার চেয়েও অনেক গভীর এই জীবন।”

“আপনি আছেন তো হোঁচট খেলে সামলে নিবেন।”
আমার এই কথা শুনে শান্ত স্তব্ধ হয়ে যায়। আমি তার বিষয়টি বুঝতে পেরে বলি,“আমি জানি আপনি পারবেন। আপনার মধ্যে সেই গুন রয়েছে। আমি জানি না আপনি স্বামী হিসাবে কেমন হবেন?তবে আমার মন বিশ্বাস করে একজন পার্ফেক্ট বন্ধু, একজন পার্ফেক্ট জীবনসঙ্গী হতে পারে।”

“কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। তবে আপনার খুশির জন্য আমি চেষ্টা করবো আপনার মনকে জিতিয়ে দিতে। আমি অবশ্যই পার্ফেক্ট স্বামী হওয়ার চেষ্টা করবো।”

“কিন্তু আমি যে পার্ফেক্ট বউ হতে পারবো না।
আমি জানি এটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।”

“সমস্যা নাই তো। বেশি ভালো ভালো নয়। তাছাড়া একই রকম দুজন মানুষের সংসার ভালো হবে না। তাই অমিল থাকা জরুরি। আপনার আর আমার মাঝে অমিল রয়েছে বলেই আমাদের মনের মাঝে এমন অনুভূতির জন্ম হয়েছে। এটা আমার মনে হয়।”
শান্তর এই কথা শুনে আমি হাসি দিলাম। আমার হাসিটাই আমার জবাব। এটা বুঝতে পেরে শান্ত খুশি হয়। সেই সঙ্গে সে আরও বেশি খুশি হয় তার কথার ভাবার্থ বুঝতে পেরে তার বাবা-মা রাজি না সেটা জেনেও আমি এগিয়ে আসায়। শান্তর মনে দ্বিধা ছিলো এটা নিয়ে।

____
শান্তর বাবা প্রচন্ড রেগে বকাবকি করছে। সে শান্তকে না পেয়ে তার রাগ শান্তর মায়ের উপর ঝেরে বলে,“শুনেছি তোমার ছেলের কথা? আমরা রাজি না বলেছি তাই ওরা আজই বিয়ে করছে? ভাবতে পারছো, তোমার ছেলের কতটা অধঃপতন হয়েছে? আমাদের ছাড়াই বিয়ে করার মতো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে?”

“আস্তে বলো। পাড়া প্রতিবেশী শুনলে তোমার মান থাকবে? যে মান সম্মানের জন্য রাজি হওনি সেটা থাকবে এসব কথা শুনলে?”
শান্তর মায়ের এই কথা শুনে সে আরও রেগে যায়। রাগান্বিত গলায় বলে,“বিয়ে কি লুকানোর জিনিস? আজ না জানুক কাল জানবে। তখন তো মান যাবেই। তোমার ছেলের এসব নিয়ে কোন ভাবনা আছে? তার এখন…।”

“প্লীজ থামো।
ছেলের কাছে এখন যাবে? যদি যাও তবে চলো নাহয় চুপ থাকো।”

শান্তর বাবা কথা না বাড়িয়ে ফোন দিতে থাকে তার ভাইকে। তার ভাইয়েও আজকেই ব্যস্ত থাকতে হলে। কোথায় ফোনটা ধরে গিয়ে বিয়েটা আটকাবে। শান্তর বাবার এসব অস্থিরতা বুঝতে পেরে তার মা বলে,“শান্ত ছোট নেই। তোমার মনে হয় ভাইজান গেলে ও বিয়ে করবে না। এটা ভাবা তোমার ভুল। ও যখন বলেছে ও বিয়ে করছে। তারমানে গিয়ে দেখো বিয়ে করা শেষ।”

“যদি এই বিয়েটা হয় না। তাহলে দেখে নিও আমি কি করি?”

“কী করবে? ছেলেকে আর ঘরে তুলবে না?
এটা হয়। ও আমাদের একমাত্র ছেলে। দেখো মেয়েটাকে আমারও পছন্দ নয়। ও আমার শান্তর একদমই যোগ্য নয়। কিন্তু শান্ত যদি বিয়ে করে ফেলে তখন আমাদের কি করার? আজ নয়তো কাল মানতেই হবে। তাই আমাদের মনে হয় এখনই মেনে নেওয়া উচিত। শুধু শুধু ছেলের সঙ্গে আমরা দূরত্ব তৈরি না করি।”
শান্তর মায়ের কথা শুনে তার বাবা চুপ হয়ে যায়। শান্তর মায়ের কথা সত্য। শান্ত তাদের একমাত্র ছেলে। বিবাহিত জীবনে পাঁচ বছর পর শান্তর জন্ম হয়। তার পরে কোন সন্তান হয়নি। যদিও তারা চেষ্টা করছিলো কিন্তু হয়নি। তাই তো একটামাত্র ছেলেকে নিয়ে তাদের অনেক আশা, স্বপ্ন ছিলো। সেই স্বপ্ন জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে গিয়েই তাদের সন্তান তাদের থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছে। যখন সব ঠিক হতে যাচ্ছিলো তখন এসে জুটলো পুষ্প। তাদের একমাত্র ছেলের পাশে এমন একটি মেয়েকে তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। বা পারবে না। কিন্তু কতদিন! আজ নয়তো কাল একদিন তো ঠিকই মানতে হবে। শত হলেও শান্ত তাদের ছেলে। সবচেয়ে বড় একমাত্র ছেলে। যদি অন্যকোন সন্তান থাকতো নাহয় তাকে দেখে শান্তকে ভুলে থাকতো। সেটা তো সম্ভব নয়। এসব ভেবে শান্তর বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। অতঃপর বলে,“শেষে এই মেয়েকে ঘরে তুলতে হবে? এলাকায় আমার নাম ডাক যা ছিলো সব শেষ হয়ে যাবে। সব শেষ।”

____

বিয়ের রঙ লাল। লাল রঙের শাড়ীতে লাল টুকটুকে বউ না সাজলে বিয়ের কনে লাগে না। তবে পুষ্প পরেছিল সাদা রঙের খাঁটি জামদানী, যেন ভোরের শিশিরে ভেজা চাঁদের আলো গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার খোপায় গুঁজে রাখা বেলী ফুলের গাজরা, যার মাথায় বসানো লাল গোলাপের রক্তিম পাপড়ি, শুভ্রতার বুকের উপর এক বিন্দু অগ্নিশিখা। গাজরাটি আলতো ভঙ্গিতে কাঁধ বেয়ে সামনের দিকে নেমে এসেছে, যেন নিজের সৌরভে নিজেকেই ছুঁয়ে রাখছে।
ঠোঁটে লাজুক গোলাপি রঙ, যা মুখখানি করে তুলেছে কোমল প্রস্ফুটিত কুঁড়ির মতো। চোখে টানা হালকা কাজল, যা দৃষ্টিকে দিয়েছে এক অনুচ্চারিত মায়া। মাথার উপর টেনে রাখা সাদা দোপাট্টা, তার মুখমণ্ডলকে দিয়েছে শান্ত, পূর্ণিমার আভা।
কোনো কোলাহল নেই, কোনো ভিড় নেই। তবুও সেই সরল অথচ স্নিগ্ধ সাজে পুষ্পকে দেখে মনে হয় সে যেন একান্ত নির্জনে দাঁড়িয়ে থাকা নববধূ, যার রূপ আপন মহিমায় নিজেই পূর্ণ, নিজেই পরিপূর্ণ। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত পুষ্পের এই রূপ মুগ্ধ নয়নে দেখছিলো। শান্তকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে পুষ্প লাজুক হাসে। শান্ত তার দিকে এগিয়ে আসে। পুষ্প আড়চোখে শান্তকে একবার দেখে নেয়। শান্তর গায়ে সাদা পাঞ্জাবি। তাকে খুব সুন্দর লাগছে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এসব আয়োজন হয়ে গেল। শান্তর বন্ধুরাই সবটা করেছে। তবে সাদা রঙের পোশাক পড়ার আইডিয়া শান্তর ছিলো। তার এই রঙে সেজে বিয়ে করার খুব ইচ্ছা ছিলো। তাই পুষ্পও আপত্তি করেনি।
শান্ত পুষ্পের দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি সরছে না দেখে পুষ্প বলে,“ভালো লাগছে?”
“হ্যাঁ। তবে…।”
শান্তর কথায় পুষ্প চোখ তুলে তাকায়। অবাক হয়ে বলে,“তবে?”
শান্ত তার পকেট থেকে টিপের পাতা বের করে। কালো রঙের ছোট একটি টিপ হাতে নিয়ে সেটা পুষ্পের কপালে লাগিয়ে দেয়। পুষ্প এটা দেখে বিষ্ময় নিয়ে শান্তর দিকে তাকায়। শান্ত নরম গলায় বলে,“আমি জানি আপনি কপালে টিপ পড়েন না। তবে আমার জন্য এখন পড়বেন। প্লীজ।”
“এটা তো আমার ভালো লাগে না। আপনি না বলেন সবসময় নিজের ভালো লাগা নিয়ে ভাবা উচিত?”
“প্রিয় মানুষের ভালো লাগায় নিজের ভালো লাগা খুঁজে নিবেন। সিম্পল।”
এটা বলে শান্ত ভাব নিয়ে তাকায়। অতঃপর আলতো হাতে পুষ্পের গালে হাত রেখে বলে,“এবার আপনাকে পরিপূর্ণ লাগছে। চমৎকার। অপূর্ব। যে রূপের বর্ননা শুধু হৃদয় দিয়ে করা যায়। আমি চাই না, আমার হৃদয়ের এই চমৎকার আপনিটার বর্ননা অন্যকেউ কখনো করুক।”
এটা বলে শান্ত মুচকি হাসি দিয়ে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে থাকে। পুষ্প জবাব দেয় না। সে ম্লান হাসে। সেই মূহুর্তে পলাশ শান্তকে ডাক দেয়। কাজি কতক্ষণ বসবে। শান্ত একটু সময়ের মধ্যে যাচ্ছে বলে পুষ্পকে বলে,“যেটা মন চায় সেটা করুন। মনকে এত কষ্ট দিবেন না।”
এটা বলে শান্ত ফোন এগিয়ে দেয়। পুষ্প হতভম্ব হয়ে শান্তর দিকে তাকায়। শান্ত তাকে এতটা বুঝতে পারে যে সে নিজেই এসব কল্পনা করতে পারেনি। তার মনের কথা বুঝে শান্ত কত সুন্দর তার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো। পুষ্প ফোনটি হাতে নিতে শান্ত বলে,“দ্রুত চলে আসবেন।”
এটা বলে শান্ত ঘর থেকে বের হয়। পুষ্প ফোনটি হাতে নিয়ে তার মায়ের ফোনে ফোন দেয়। পুষ্পের মা তার অচেনা নাম্বারে ফোন পেয়ে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ধরে। তার বিরক্তি আরও বেড়ে যায় যখন ফোনের এপাশ থেকে পুষ্প বলে,“মা আমি পুষ্প।”
“এতদিন তো খবর ছিলো না। বেশ ভালোই তো ছিলি। তা হঠাৎ আজ মনে পড়লো? কোন কু মতলবে ফোন দিয়েছিস? কি….।”
মায়ের আজেবাজে কথা শোনার ইচ্ছা নেই। সেজন্য পুষ্প অর্থাৎ আমি এক বাক্যে বললাম,“আমি বিয়ে করছি মা। আমি জানি তোমাদের বললে তোমরা কখনো এই বিয়েতে রাজি হতে না। তোমরা তো চাও না আমি সুখে থাকি। তাও এই মূহুর্তে দাঁড়িয়ে আমার মনে হলো তোমরা আমাকে এতটা বছর লালন পালন করেছো। তোমাদের এই কথাটা জানার অধিকার আছে। তাই জানাচ্ছি। আমি বিয়ে করছি।”

“ওহ। নাগর জুটিয়েও ফেলেছিস? বাহ্ বেশ উন্নতি হয়েছে তো নতুন শহরে গিয়ে। তা তোর নাগর কে?”
মায়ের ব্যঙ্গ করে বলা কথাটি আমাকে কষ্ট দিলেও আমি নিজেকে সামলে শান্ত গলায় বললাম,“তার নাম শান্ত। আমার চোখে দেখা এই পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার পুরুষ। আমার জন্য সবচেয়ে পার্ফেক্ট মানুষ।”
মাকে বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দেই। আমি জানি এই মূহুর্তে মা বাজে কথা বলবে। আমি চাই না আমার জীবনের এই সুন্দর মূহুর্তে কারো কথায় কষ্ট পেয়ে আমি বিষন্ন মুখ নিয়ে থাকি। এটা শান্ত পছন্দ করবে না। সবচেয়ে বড় কথা আমি এই মূহুর্তকে অনুভব করতে চাই। তাই এখন মন খারাপ মোটেও করতে চাই না।

অবশেষে বিবাহ সম্পন্ন হলো। শান্তর বন্ধুদের সাক্ষীতে এবং দেড় লক্ষ টাকা কাবিনে আমি পুষ্প ইমতিয়াজ শান্তর বউ হলাম। যেই মূহুর্তে শুনলাম বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে সেই মূহুর্তে একটু সময়ের জন্য আমার হৃদয় থমকে গিয়েছিলো। হৃদয়ের সমস্ত স্পন্দন কয়েক মূহুর্তের জন্য মনে হলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেখানে অন্যরকম এক অনুভূতির জন্ম হয়। অবশ্যই এই অনুভূতি সুখের।
ঘড়িতে এখন রাত দশটা। ঘন্টা দুয়েক আগে আমার বিয়ে হলো। এই কথাটি এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। সত্যি বলতে এই মূহুর্তে নিজেকে ষোলো বছরের সেই কিশোরী মনে হচ্ছে। যার হৃদয় মানতে চাচ্ছে না তার বিয়ে হয়েছে। বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। হৃদয়টাকে বিশ্বাস করানোর জন্য শান্তকে প্রয়োজন। যার মুখ দিয়ে শুনলে হয়তো এই হৃদয় এটা মানতো। কিন্তু শান্ত ঘরে নেই। সে তার বন্ধুদের এগিয়ে দিয়ে আসতে গিয়েছে। পুরো ঘরে এখন শুধুমাত্র আমি একা। পুরো ঘর জুড়ে নিরবতা বিরাজ করছে। কোথাও কোন কোলাহল নেই। অথচ আমার মন অস্থির। সে কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। চোখের সামনে বিয়ের সেই সুন্দর মূহুর্তে ভেসে উঠছে বারবার। তাও এটা বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, এটা স্বপ্ন। আমি স্বপ্ন দেখছি। ঘুম ভাঙতে স্বপ্ন ভেঙে যাবে। আমি যখন আমার ছটফটে মনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ব্যস্ত সেই মূহুর্তে ঘরের দরজা খুলে শান্ত ভেতরে প্রবেশ করে। শান্ত দরজা বন্ধ করে ধীর পায়ে আমার কাছে এগিয়ে আসে। আমি শান্তর উপস্থিতি অনুভব করে মৃদু গলায় বললাম,“এসব সত্যি শান্ত?”
“হ্যাঁ সত্যি।”
এটা বলে শান্ত আমার ঘাড়ে হাত রাখে। এই প্রথম শান্তর স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম। যেই স্পর্শে আমার এমন এক অনুভূতি হলো যেটা আমাকে বললো,“এসব সত্যি। সত্যি তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে পুষ্প। সত্যি।”
এটা অনুভব হতে আমি শান্তকে জড়িয়ে ধরি। শান্ত মুচকি হেসে সেও তার বাহুতে আমায় আবদ্ধ করে নেয়। আমি শান্তর বুকে মাথা রেখে হঠাৎ কান্না করে দেই। আমার কান্নার শব্দ পেয়ে শান্ত বলে,“কাঁদুন পুষ্প। আপনাকে কাজল চোখে কখনো কাঁদতে দেখিনি। কান্না শেষে আপনার চোখের কাজল লেপ্টে আপনাকে কেমন লাগে সেটা তো জানা হলো না। একটু বেশি করে কাঁদুন। যাতে সেটা ভালোভাবে দেখতে পারি।”
“আপনি মজা করছেন?
আমার সত্যি প্রচুর কান্না পাচ্ছে শান্ত? সব কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে?”
এটা শুনে শান্ত শব্দ করে হাসে। অতঃপর বলে,“আপনাকে কান্না করতে বারণ করিনি তো। কাঁদুন। কান্না করা ভালো। স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে আপনার যা স্বাস্থ্য তাতে এই স্বাস্থ্যের ভালোর কথা নাই বা চিন্তা করলেন।”
শান্তর এই কথা শুনে না চাইতেও হেসে দিলাম। আমার হাসির শব্দ পেয়ে শান্ত খুশি হয়ে বলে,“এত দ্রুত কান্না শেষ হয়ে গেল?”
“আপনি যা মানুষ।”
এটা বলে আমি নিজেকে শান্তর থেকে ছাড়াতে নিলে শান্ত আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর বলে,“বউ আপনি। বউয়ের আলিঙ্গন কতটা মধুর হয় সেটা উপলব্ধি করার আগেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিবেন?”
শান্তর কথা শুনে আমি থেমে গেলাম। নিজেকে ছাড়ানোর বিন্দু মাত্র চেষ্টা করলাম না। হঠাৎ একটা কথা মনে পড়তে বললাম,“শান্ত শুনেছি বিয়ের দিন স্বামীরা স্ত্রীদের উপহার দেয়। বিশেষ উপহার। আপনি দিবেন না?”
এটা শুনে শান্ত মাথা নাড়িয়ে বলে,“হ্যাঁ দিবো। কিন্তু আমি যেটা দিতে এনেছি সেটা দেখলে আপনি আবার কান্না করে দিবেন। কিন্তু আমি চাই না আপনি আবার কান্না করুন।”
“এমন কি বিশেষ জিনিস যেটা দেখলে আমি কান্না করবো?”
আমি এই প্রশ্ন করতে শান্ত আমাকে নিজের বাহু থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমার কাধে দুই হাত রাখে। অতঃপর বলে,“আছে।”
“কী?”
আমি জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতে শান্ত প্রসঙ্গ বদলে বলে,“যখন দিবো তখন দেখে নিয়েন। এবার বলেন মিসেস ইমতিয়াজ শান্ত হয়ে কেমন লাগছে?”

“সবে তো হলাম। এখনো তো জানি না মিসেস হয়ে আমার জীবন কেমন কাটবে, আপনি আমাকে কতটা সুখে রাখবেন। এটা জানতে হলে তো সংসার করতে হবে। যাক না ছয় মাস। তারপর বলি।”
আমার কথা শুনে শান্ত বলে,“ছয় মাস পর রিভিউ দিবেন?”
আমি হ্যাঁসূচক মাথা নাড়াতে শান্ত বিষ্ময় নিয়ে বলে,“এতদিন আমাকে ভালো স্বামী হওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে? নয়তো খারাপ রিভিউ দিবেন?”

“খারাপ স্বামী হলে খারাপ বলবো না।”
এই কথা শুনে শান্ত ভাব নিয়ে বলে,“আমার মতো মানুষ পেয়েছেন শুকরিয়া আদায় করুন। আমার তো শালার আপনার কপালটার উপর হিংসে হচ্ছে। কত ভালো কপাল আপনার। আমার মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছেন। অথচ আমার কপাল দেখেন, কত খারাপ।”

“আপনার কপাল খারাপ মানে?”
আমি চোখ গরম দিয়ে তাকাতে শান্ত বোকা হেসে বলে,“এই যে। আমার কপাল কত খারাপ তার বাস্তব উদাহরণ তো সামনেই রয়েছে। সাজে অপরূপা, ভঙ্গিতে ডাইনি।”
“শান্ত। ভালো হচ্ছে না।”
আমি মেকি রাগ দেখিয়ে কথাটি বলতে শান্ত শব্দ করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে,“আপনাকে এখন বউ বউ লাগছে।”
কথাটি বলে শান্ত আবারও হেসে দেয়। তবে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। শান্তর হাসিতে নয় বরং তার বলা কথায়। আমার কানে এখনো বাজছে,“আপনাকে এখন বউ বউ লাগছে।”
এমন সময় হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি এবং শান্ত দুজনেই হচচকিয়ে গেলাম। এই মূহুর্তে আবার কে আসলো। শান্ত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে।


চলবে,

#ইচ্ছেঘুড়ি (৩২)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

জয় ঘরে এসে দেখে কাজল বিছানার এক কোনে শুয়ে আছে। গত কয়েকদিন ধরে এটাই হচ্ছে। কাজল তার ঘরে আসার আগেই এসে ঘুমিয়ে পড়ে। যদিও সজাগই থাকে। তবে ঘুমের ভান ধরে থাকে। এটা জয় বুঝে। সেদিন কাজলের বাবা ফোন দেওয়ার পর থেকে তাদের মাঝে এই মান অভিমান চলছে। সেদিন জয় রাগ করে চলে যাবার পর যখন মধ্যরাতে বাসায় ফেরে তখন কাজল অভিমানের গলায় অনেক কথা বলে জয়কে। সে বলে,“আমার বাবা, মা কেমন সেটা তো আমি তোমাকে বলেছিই। তারপরও তাদের কথা শুনে তুমি আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করলে। তাও নাহয় বাদ দিলাম, নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে আমার গায়ে হাত তুললা। সেটা নিয়েও কোন অনুশোচনা তো দেখলাম না। শুধু পারো আমার উপর রাগ দেখাতে। এটাই বুঝি পুরুষ মানুষের কর্ম? রাতে বউ লাগে দিনে বউ ছাড়া সারা দুনিয়ায় লাগে?”

জয়ের মাথা গরম থাকায় সেদিন সে কাজলের কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। সেজন্য সেও রাগের মাথায় তর্কে জড়িয়ে পড়ে। সেদিনের পর থেকেই জয় এবং কাজলের কথা বলা বন্ধ। দুজনেই অভিমান করে আছে। কেউ আগ বাড়িয়ে কথা বলছে না। অবশেষে জয় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। সে গিয়ে কাজলের হাত ধরে বলে,“ঘুমের ভান করতে হবে না। ওঠো।”

কাজল চোখ মেলে তাকায়। তবে কথা বলে না। জয় এটা দেখে হাতজোড় করে বলে,“আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি জানি আমি স্বামী হিসাবে খুবই জঘন্য। এজন্য আমাকে হয়তো সারাজীবন ক্ষমা চেয়ে যেতে হবে। আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। আর স্যরি। তবে এবার আর কোন ভুল করতে চাই না। দয়া করে আমাকে একটা সুযোগ দাও।”

“মানে?”
কাজল উঠে বসে। সে কিছু বুঝতে না পেরে জয়ের দিকে তাকায়। জয় শান্ত গলায় বলে,“আমি আলাদা বাসা ভাড়া নিয়েছি। আমরা কালই সেখানে যাবো। আমরা সেখানে আলাদা সংসার করবো।”

“কি!”
কাজল অবাক হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। জয় মাথা নাড়ায়। অতঃপর বলে,“তোমাকে এখানে এই অশান্তির মাঝে আর থাকতে হবে না। আমরা কালই চলে যাচ্ছি। আশা করি এরপর আর কোন ভুল হবে না।”

“বাবা, মাকে এসব বলেছো?”
কাজলের প্রশ্ন শুনে জয় নাসূচক মাথা নাড়ায়। অতঃপর মুখে বলে,“কাল বলবো। এখন বললে ঝামেলা করবে। আমি এখন বেকার ঝামেলা নিতে চাচ্ছি না। তবে হ্যাঁ আমি কিন্তু সন্তানের দায়িত্ব অবহেলা করতে পারবো না। বাবা, মায়ের খরচ পাঠাবো সেই সঙ্গে তাদের সাথে সবসময় দেখা করতে আসবো। তেমার এসবে আপত্তি নাই তো?”

“না। এসবে আমার আপত্তি থাকবে কেন? আর আমার আপত্তি থাকলেও বা তুমি শুনবে কেন? এটা তোমার দায়িত্ব। তুমি যেমন আমার দায়িত্ব অবহেলা করতে পারো না তেমন তোমার বাবা, মায়েরও না। সেজন্য আমি বললেও তোমার এই কাজটা করা উচিত নয়।
দেখো আমি কখনোই এটা চাই না যে তুমি তোমার বাবা, মায়ের থেকে দূরে সরে যাও। আমিও সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা মিশতে চায় না। আমি শুধু চেয়েছিলাম আমার এই খারাপ সময়ে তুমি আমার পাশে থাকো। আমাকে সঙ্গ দাও। আমি কিন্তু আলাদা সংসার চাইনি।”
কাজলের মুখে এসব কথা শুনে জয় খুব খুশি হয়। সে খুশি হয়ে কাজলকে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর বলে,“এজন্যই তোমাকে এত ভালোবাসি। আমি জানি তুমি আলাদা হতে চাও না। কিন্তু এক বাড়িতে থেকে আমার পক্ষে দুইটা সম্পর্ক মানিয়ে চলা সম্ভব নয়। তাই আমাকে নিজে থেকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।”

কাজল এসবে কথা বাড়ায় না। জয় নিজ থেকে তার সব ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চায়। কাজলও ক্ষমা করে দেয়। কাজল জানে জয় ভুল করেছে। কিন্তু তার ক্ষমা না করা ছাড়া উপায় আছে? তাছাড়া জয় তো অন্য সবার মতো নয় যে ভুলটা বুঝতে পারে না। ভুলটা বুঝতে পারে। সেজন্য কাজল না চাইতেও তাকে ছাড়তে পারেনি কখনো। আর পারবেও না। কিন্তু সে আলাদা সংসার চায়নি। তবে একসাথে থেকে যখন শান্তি হচ্ছে না তখন আলাদা হওয়া ভালো। এটাই সঠিক মনে করে নিলো কাজল।

____
বাবা বাসায় ফিরতে মা রাগান্বিত গলায় বলে,“তোমার বড় মেয়ে ফোন দিয়েছিলো। সে বিয়ে করছে। শান্ত নামের কোন ছেলেকে। যদিও এটাই এই এলাকায় যে বখাটে ছেলেটা ছিলো সেটা কি-না জানি না। হয়তো নতুন শহরে গিয়ে নতুন এক বখাটে জুটিয়েছে কপালে?”

“এসব বাদ দাও তো।
ও যা ইচ্ছা করুক। আমাদের তো আর টাকা পয়সা দেয় না। দিবেও না। তাহলে ও বিয়ে করুক না গিয়ে ম রুক। তাতেও বা আমাদের কী।”
বাবার মুখে এই কথা শুনে মা মাথা নাড়ায়। অতঃপর বলে,“তাও বললাম। তোমার আদরের মেয়ে ফোন করে তার সুখের গল্প শুনিয়েছে। সেটা তুমি না জানলে চলে।”

“হ্যাঁ ওমনি আমার আদরের হয়ে গেল। মনে করে দেখো বাচ্চার জন্য তুমিই কান্নাকাটি করছিলি। তোমার জন্যই তো পরিচয়হীন একটা মেয়ের পিছনে আমাকে এত খরচ করতে হলো। সব তোমার দোষ।”
বাবার মুখ দিয়ে এই কথা বের হতে মা ক্ষেপে গেল। অতঃপর যা হওয়ার তাই। যেই মানুষটি ভালো থাকতে তাদের ছেড়ে গেল তারা এখন তার কথা তুলে নিজেদের মাঝে তর্ক বাঁধিয়ে দেয়।

___

শান্ত দরজা খুলে তার বাবা, মাকে দেখে অবাক হলো না। তাই হাসি মুখে বলে,“তোমরা আর একটু আগে আসতে পারতে। বিয়ের সময় থাকতে পারতে।”
এটা শুনে শান্তর বাবা রাগী চোখে তার দিকে তাকায়। অতঃপর বলে,“এই শহরে তোমার চাচা থাকে তার পরিবার তোমার বিয়ের দাওয়াত পেলো না। সেখানে আমরা বিয়ের সময় আসলে তুমি ঢুকতে দিতে? মনে তো হয় না।”

শান্ত কথা না বাড়িয়ে দরজা ছেড়ে দেয়। বাবা দ্রুত পায়ে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করে। শান্তর বাবা এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। শান্তর মা এটা দেখে ভয়ে শান্তর দিকে তাকায়। শান্তর বাবা আমাকে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বলে,“বিশ্ব সুন্দরী তো না। আমার ছেলের মাথা খেলে কিভাবে?”

আমি তার এই কথাটি শুনে ভয়ে ভয়ে তার দিকে তাকাই। এই মূহুর্তে শান্তের বাবা, মায়ের উপস্থিত আমি আশা করিনি। তার উপর এসেই সোজা এই প্রশ্ন। আমি কিছুটা ভীত হয়ে যাই। সেই মূহুর্তে অনুভব হলো আমার ডান হাতটি কেউ ধরেছে। আমি পাশে তাকাতে শান্তকে দেখতে পাই। সে আমার হাতটি শক্ত করে ধরে বলে,“মাথা তো খাওয়ার জিনিস না বাবা। আমার মাথা তো ঠিক জায়গায় আছে। তা তোমার মাথা ঠিক জায়গায় আছে তো? না মানে, মা আবার খেয়ে টেয়ে ফেললো না তো।”
এটা শুনে শান্তর বাবা বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকায়। রাগী গলায় বলে,“আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।”

শান্তর বাবা মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকায়। আমার চোখে চোখ রেখে বলে,“তোমার নূন্যতম লজ্জা করলো না, নিজের চেয়ে ছোট একটা ছেলেকে বিয়ে করতে। এটা ঠিক নয়। এই বোধটুকু তোমার নেই।”

“প্লীজ ছাড়ো না এসব। বিয়ে তো হয়েই গেছে।”
শান্তর মায়ের কথায় কোন গুরুত্ব না দিয়ে শান্তর বাবা আমাকে আবার বলে,“কী হলো বলো? এতটুকু বোধ নেই তোমার? বয়স বাতাসে বাড়ছে?”

“কোথায় লেখা আছে যে বয়সে ছোট এমন ছেলকে বিয়ে করা যাবে না? ওর বয়স বাতাসে না বাড়লেও তোমার বয়স বাতাসে বেড়েছে। তা তোমার পাকা চুল দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নয়তো এসব আজগুবি কথা বলতেই না।”
শান্ত মজার সুরে কথাগুলো বলায় তার বাবা রেগে বলে,“আমি তোমার সঙ্গে কথা বলছি না। আর না আমি জোকার যে তুমি আমার সঙ্গে মজা করছো। আমি এই মেয়েটার সঙ্গে কথা বলছি।”

“এই মেয়েটা আমার বউ। আমার স্ত্রী। তোমার কোন প্রশ্ন যদি তার সম্মানে লাগে তবে জবাব তো আমিই দিবো, তাই না? হ্যাঁ তোমার ছেলের হওয়ার জন্য তোমায় কষ্ট দিতে চাই না তাই মজার সঙ্গে জবাব দিচ্ছে। কিন্তু এমন কোন শব্দ বা বাক্য আমার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলো না যেটার জন্য আমাকেও কঠিন হতে হয়।”
শান্তর মুখে এমন কথা শুনে তার বাবা প্রচন্ড রাগ নিয়ে তার গালে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। অতঃপর বলে,“দুইদিনের পরিচয় এত পাগল হয়ে গেছো যে এই মেয়ের জন্য আমাকে হুমকি দিচ্ছো।”

“না। আমি শুধু বলছি। আমার স্ত্রী সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। আর আমি সেটা করবো।”
শান্তর এই কথাটির মাঝে কিছু একটা ছিলো। আমি বিষ্ময় নিয়ে তার দিকে তাকাই। শান্তর বাবাও কয়েক মূহুর্তের জন্য থেমে যায়। পরক্ষণে বলে,“বাহ্। সম্মান সম্মান শিখে গেছো? তো আমার সম্মানটা ডোবাতে লজ্জা করলো না? এখন সম্মানের কথা বলছো? এই সম্মান রক্ষার শিক্ষা পেলে কোথায়? যেটা বাবা, মায়ের সম্মানের কথা না ভেবে শুধু স্ত্রীর কথা ভাবে?”

“তোমার থেকেই তো শিখেছি।”
শান্তর মুখে এই কথা শুনে তার বাবা, মা দুজনেই হচচকিয়ে যায়। শান্ত দাঁত বের করে হেসে বলে,“বুঝলে না। আরে তুমিই তো মায়ের সম্মানের জন্য তোমার খালাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছিলি। মা তো আমায় এই গল্প অনেকবার বলেছে। জানো মা যখন এই কথা বলছিলো তখন প্রতিবার তার চোখে আমি তোমার জন্য আলাদা শ্রদ্ধা দেখছিলাম। তখন থেকেই আমি জানি স্ত্রী সম্মান রক্ষা করা একজন স্বামীর কর্তৃব্য। শুধুমাত্র ভরনপোষণ দিলেই হয়। একজন স্ত্রীকে সংসারে তার যথাযথ সম্মান দেওয়াটাও একজন স্বামীর দায়িত্ব। আর বাকি রইলো বাবা, মায়ের সম্মান ডোবানো। আমি তো ডোবাতে চাইনি। তোমরা বাবা, মা হয়ে যদি সন্তানের ভালোতে সঙ্গ না দিতে পারো এখানে আমার কি করার আছে বলো? তাছাড়া এখনও সম্মান যায়নি। আত্মীয় স্বজন কেউ তো জানে না। তুমি বরং এক কাজ করো আমাদের এলাকায় আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে ফেলো। সবার কাছে বলবে পরিবারের সম্মতিতেই এই বিয়ে হয়েছে। তাহলে তোমার সম্মানটাও বেঁচে যাবে।”

শান্তর বাবা তার কথা শুনে চুপ করে যায়। সে কোন কথা না বলে পাশে থাকা চেয়ারটি টেনে বসে। অতঃপর বলে,“শান্তর মা দেখো পানি কোথায় আছে? আমার জন্য এক গ্লাস নিয়ে এসো।”

এটা শুনে শান্তর মা এগিয়ে যেতে নিলে শান্ত চোখের ইশারায় থামিয়ে দেয়। শান্ত আমার দিকে তাকাতে আমি বুঝলাম শান্ত আমাকে পানি এনে দিতে বলছে। আমি তাই করলাম। আমি এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে শান্তর বাবার দিকে এগিয়ে দিলাম। যদিও ভয় হচ্ছিলো সে এতে আরও রেগে না যায়। শান্তর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে শান্তর দিকে তাকায়। অতঃপর বলে,“বউ তোমার ভীষণ কথা শোনে তো। তাকাতেই বুঝে গেল তুমি কী বলছো? এই সরলতা দেখে পটে গেছো না। আরে এটাই নারীদের চাল। তুমি তো বুঝতেই পারছো না। তাই প্রেমের মোহে ভুল করছো।”

“পানিটা খাও।”
শান্ত ঠান্ডা গলায় কথাটি বলে। শান্তর বাবা পানি খেয়ে নেয়। পানিটা শেষ করে গ্লাসটা এগিয়ে দিতে আমি হাত বাড়াই। শান্তর বাবা এটা দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,“এখন একেবারে সেবা করার কত আগ্রহ। যাক না দু’দিন তারপর দেখবে অন্য রূপ।”

“একইরকম থাকলে তোমার আর অভিযোগ থাকবে না বলছো?”
শান্তর কথা শুনে শান্তর বাবা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,“তোমার ছেলেকে থামতে বলো। এই মেয়ের হয়ে সাফাই আমি শুনতে চাই না। তোমার ছেলে বেশি বেশি করছে।”

“তুমিও বা এত রেগে যাচ্ছো কেন? তুমি তো জানতে আমরা এখানে আসার আগে ওরা বিয়ে করে নিবে। আমি তো তোমায় বোঝালাম এখন…।”

“আরে তুমি থামো তো। এই মেয়ের মুখ দেখেই তো আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। একে আমি মেনে নিবো। একে এলাকায় নিয়ে গেলে আমার মান সম্মান কিছু থাকবে? আমি মুখ দেখাতে পারবো? এমন মেয়ে…।”
বাবাকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত বলে,“আমার বউকে নিয়ে পরনিন্দা পরচর্চা করতে হলে বাসার বাহিরে যাও বাবা। আমি আমার কানে এসব শুনতে পারবো না।”

”শান্ত এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে।
এত পাগল হয়েছো, এই মেয়ের জন্য। এই মেয়ের মধ্যে কি দেখেছো তুমি? একটা বুড়ি মেয়ে?”

“বাবা।”
শান্ত চিৎকার করে কথাটি বলতে তার বাবা থেমে যায়। শান্ত রাগান্বিত গলায় বলে,“আমি তোমায় বলেছি না। ও আমার স্ত্রী। ওর সম্মান রাখার দায়িত্ব নিয়েছি আমি। আমি তোমার মুখে ওর সম্পর্কে একটা বাজে কথাও শুনতে চাই না।”

শান্তর বাবা, মা দুজনেই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এত রাগ নিয়ে শান্ত কখনো তাদের সঙ্গে কথা বলেনি। সে যা বলেছে সবসময় হাসি মুখে বলেছে। সেটা ভালো কথা হোক খারাপ কথা। শান্ত তার বাবার দিকে এগিয়ে যায়। অতঃপর বলে,“তোমার বউকে কেউ অসম্মান করলে তোমার যেমন লাগে আমারও তেমনই লাগে। নেহাৎ তুমি আমার বাবা তাই আমি ভদ্রভাবে বলছি, প্লীজ বাবা এমন কিছু বলো না বা করো না যাতে আমি ভুলে যাই তুমি আমার বাবা।”

“তুমি মনে রেখেছো বুঝি আমরা তোমার বাবা, মা?”
শান্তর বাবা এবার নরম গলায় কথাটি বলেন। তিনি শান্তর চিৎকার করে বলা কথায় যে কষ্ট পেয়েছেন সেটা তার কন্ঠস্বর শুনে বোঝা যাচ্ছে। শান্তও বুঝতে পারলো তাই বলে,“তুমি শুধু বয়সের সংখ্যাটা দেখেছো বাবা। তাই তোমার মনে হচ্ছে ও বুড়ি। কিন্তু বয়সটা বাদ দিয়ে শুধু ওকে দেখো। তাহলে তুমি ঠিকই ওর মাঝে তোমার ছেলের বউ হিসাবে যেমন মেয়ে চাচ্ছিলে তেমন মেয়ে দেখতে পাবে।”
এই কথা বলে শান্ত থেমে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,“বাবা, মা অনেকক্ষণ হলো এসেছে। যাও চা বানিয়ে নিয়ে আসো। রান্নাঘরে সব রাখা আছে।”

আমি অবাক হয়ে শান্তর দিকে তাকালাম। আমার অবাক হওয়ার কারণ শান্ত আমাকে তুমি করে বলছে। এটা অজান্তে বলছে নাকি ইচ্ছাকৃত বুঝতে পারছিলাম না। তবে আমি এসব নিয়ে না ভেবে শান্তর কথামতো রান্নাঘরে চলে আসলাম। আমি রান্নাঘরে এসে চা বানানোর জন্য সব খুঁজছিলাম। এখান থেকে অবশ্য শান্তদের সব কথা শোনা যায়। আমি শান্তর কথা শুনে পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। শান্ত যে আমার জন্য কতটা পার্ফেক্ট তা তার কথায় আমি বুঝে গেলাম। শান্তর কথা শুনতে আমার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

শান্ত তার বাবার হাত ধরে নরম গলায় বলে,“বাবা স্যরি। ছোটবেলা থেকে কখনো তোমার অবাধ্য হইনি। কিন্তু বিনিময়ে কী পেয়েছিলাম বলো? শুধুমাত্র তোমার রাগ, বিরক্তি। তোমার আশা পূরণ করতে না পারার আক্ষেপ ছাড়া তোমার চোখে আমার জন্য আমি কিছু খুঁজে পাইনি। অথচ তুমি আমাকে বোধহয় মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসো। কিন্তু তাও আমি তোমার চোখে সেটা দেখতে পাইনি। কারণ তুমি আশেপাশের মানুষের কথা এত ভেবেছো যে নিজের কথা ভাবতে ভুলেই গেছো। তোমার কাছে আশেপাশের মানুষ তোমাকে যেভাবে দেখতে চায়, তোমার সন্তানকে যেভাবে দেখতে চায় সেটাই জীবন হয়ে উঠেছে। এখানেই সমস্যা বাবা। এই সমস্যা আমি যেদিন বুঝতে পেরেছিলাম সেদিনই নিজেকে বদলে নিয়েছিলাম। সেদিন থেকেই তোমার অবাধ্য হয়ে গেলাম। তারপর থেকে তুমি আমাকে আগের মতোই বকেছো, রাগ দেখিয়েছো কিন্তু তোমার এইসব রাগের মাঝে আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাও তোমার চোখে আমি ফুটে উঠতে দেখছিলাম। তোমার ছেলে উচ্ছিন্নে যাচ্ছে এই কষ্টটা দেখতে পাচ্ছিলাম। যেটা এতদিন ছিলো না। তোমার ঐ কষ্টের মাঝে ফুটে ওঠা ভালোবাসার গভীরতা বুঝেই আমি তোমাদের খুশির জন্য ব্যবসা করতে আসলাম। শুধুমাত্র তোমরা যাতে এই আফসোসটা না করো যে তোমাদের ছেলের দ্বারা কিছু হবে না। তোমরা না থাকলে তোমাদের শান্তও শেষ হয়ে যাবে। শুধুমাত্র এজন্য। দেখো আজ কিন্তু তোমরা আমার অবস্থান নিয়ে খুশি। আজ কিন্তু তোমাদের আমার অবস্থান নিয়ে কোন অভিযোগ নেই।”
একটু থেমে শান্ত আবার বলে,“ঠিক একইভাবে একদিন তোমাদের আমার আজকের সিদ্ধান্ত নিয়েও কোন অভিযোগ থাকবে না। কিন্তু সেটা অনেক দেরিতে আসবে। আমি সেটা চাই না। আমি চাই না সেই সময় আসতে আসতে তোমরা ভুল করো। দেখো বাবা, আমার জন্য তোমরা আছো। আজ আমার কিছু হয়ে গেলে তোমরা আমার জন্য সবটা করবে। নিজেদের উজাড় করে দিবে। কিন্তু ঐ যে মেয়েটাকে দেখছো। ঐ মেয়েটার এমন কেউ নেই। কখনো ছিলো না। ঐ মেয়েটার জন্য এখন আমি ছাড়া কেউ নেই। তার জীবনে শুধুমাত্র আমিই আছি। তাই আজকের এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমার যদি তোমাদের এবং ওর মাঝে একজনকে বেছে নিতে হয় তাহলে কিন্তু আমি ওকেই বেছে নিবো। কারণ আমি জানি দিনশেষে তোমরা আমার কাছে ঠিকই ফিরে আসবে। কিন্তু একটা সম্পর্কের স্বপ্ন দেখিয়ে আজ যদি আমি তাকে ছেড়ে দেই তাহলে সে শেষ হয়ে যাবে। নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে আমি তার গল্পে নিষ্ঠুরতা হয়ে বেঁচে থাকবো। যেখানে দাঁড়িয়ে তার উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি থাকবে না বাবা। ঐ মানুষটির দিকে যদি তখন কেউ হাত বাড়িয়ে দেয় তবে সে ভরসা করে সেই হাতে হাত রাখতে পারবে না। আমি এমনটা চাই না বাবা।”
শান্তর কথা শুনে তার বাবা, মা দুজনেই হতভম্ব হয়ে যায়। শান্ত আবার বলে,“পুষ্প বয়স এখন উনত্রিশ। অথচ এই উনত্রিশ বছরের জীবনে সে আটাশ বছরের বেশি সময় ধরে কখনো হাসেনি। শুধু কান্নাই করেছে। যদিও বা তার মুখে হাসি দেখা দিয়েছে সেটা ছিলো অভিনয়। জানো বাবা, যে যখন রোজ পাড়ার মোড়ের দোকান পেরিয়ে অফিসে যেতো আমি তখন তাকে দেখতাম। এক রাজ্যের মলিনতা তার মুখে ফুটে উঠতো। আর ঐ বিষন্ন মুখ দেখে দোকানের সবাই হাসাহাসিতে মেতে উঠতো। তখন আমি কষ্ট হতো। আমার মনে হতো এই মেয়েটা খুব দুঃখী। অতঃপর একদিন হঠাৎ করে তার সঙ্গে কথা হলো। সেদিন সেই মূহুর্তে আমার মনে হলো এই মেয়েটার একটু হাসির প্রয়োজন। যেটা তার সামান্য পরিবর্তন দ্বারা হতে পারে। তাই ভাবলাম আমি একটু চেষ্টা করে দেখি না। যদি তার মলিন মুখে হাসি ফোটাতে পারি। এভাবেই তার মুখে হাসি ফোটাতে, তার ভালো থাকা দেখতে গিয়ে কোন এক মূহুর্তে তার প্রেমে পড়ে গেছি। আমি জানি এসব কিভাবে হলো, কখন হলো? আমি শুধু জানি আমি তার মায়ায় জড়িয়ে গেছি। একইভাবে সেও আমার মায়ায় জড়িয়ে গেছে। অতঃপর আমি চাইলেও তার হাতটা ছাড়তে পারতাম না। তাই হাতটা ধরে নিলাম।
এখানে কোন ভুল নেই বাবা। পুষ্প খুশি, আমি খুশি। চাইলে আমাদের পুরো পরিবার খুশি হতে পারে। যদি তোমরা সমাজের মানুষের কথা না ভেবে শুধু আমাদের কথা ভাবো। তোমার সন্তানের কথা ভাবো। আমার উপর ভরসা করে একবার ওকে মেনে নাও বাবা। বিশ্বাস করো আমি সারা দুনিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে পারবো।কিন্তু তোমাদের সঙ্গে পারবো না। বলতে পারো আমি চাই না তোমাদের সঙ্গে লড়াই করতে। এই অবস্থায় তোমরা যদি রাগ করো থাকো তাহলে আমাকে ঐ মেয়েটার হাত ধরে তোমাদের বিদায় জানাতে হবে। এটা আমাকে করতেই হবে বাবা।”
এই পর্যায়ে শান্তর চোখে পানি চলে আসে। সেটা লক্ষ্য করে তার বাবা, মাও নরম হয়ে যায়। তারা কোন কথা বলতে পারে না। শান্ত নিজেই বলে,“আমি জানি বাবা। আমার স্থানে তুমি থাকলে তুমিও এটাই করতে। তুমি সারাজীবন তোমার কলিগের ছেলে মেয়েরা কী হয়েছে বা কী করছে এটা ভেবে আমার উপর সব চাপিয়ে দিলেও কখনো মায়ের উপর কিছু চাপিয়ে দাওনি। আমি তোমাকে কখনো বলতে শুনিনি, আমার এই কলিগের স্ত্রী এভাবে সেজে থাকে তুমি থাকো না কেন? আমি সবসময় দেখেছি তুমি মা যেভাবেই থাকুক তাতেই বলেছো, সুন্দর লাগছে। তাই নিঃসন্দেহে এই গুনটা আমি তোমার থেকেই পেয়েছি৷
তবে হ্যাঁ আমি চাই না তোমরা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। তাই সন্তান হিসাবে অনুরোধ করছি আমাদের সঙ্গ দাও। বিয়ের মূহুর্তে আমার তোমাদের কথা মনে পড়ছিলো খুব। একা অনুভব হচ্ছিলো। আমি চাই না এই অনুভবটা আর হোক। এবার সিদ্ধান্ত তোমরা নাও।”
শান্তর কথা শুনে তার বাবা, মা দুজনেই চুপ থাকে। তারা কোন কথা বলে না। শান্তও চুপ করে একপাশে বসে। আমি রান্নাঘর থেকে এসব শুনে নিরবে কান্না করছি। না এটা দুঃখের নয়। সুখের কান্না। শান্তর মতো জীবনসঙ্গী পাওয়ার সুখের৷ পুরো ঘরজুড়ে নিরবতা বিরাজ করছে। নিজেকে সামলে আমি চা নিয়ে বসার ঘরে গেলাম। শান্ত, তার বাবা, মা সবাই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। এই মূহুর্তে চা কার দিকে এগিয়ে দিবো বুঝতে না পেরে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।



চলবে,