ইচ্ছেঘুড়ি পর্ব-৪১+৪২

0
20

#ইচ্ছেঘুড়ি (৪১)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে যাই। মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের করতে পারি না। হঠাৎ শান্তকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। তার বুকে মাথা রেখে দু’হাতে তাকে শক্ত করে আকড়ে ধরি। নিজের অজান্তে কান্না করে দেই। এটা দুঃখের নয় সুখের। শান্ত আমার মাথাটি তার বুকে চেপে ধরে বলে,“শালার মেয়েরা এত আবেগি যে কেন হয় বুঝি না।”

কথাটি বলে শান্ত আমার মাথাটি তার বুক থেকে তুলে চোখের পানি মুছে দেয়। অতঃপর নরম গলায় বলে,“যা বললাম তা মাথায় ঢুকলো।”

আমি মাথা নাড়াই। যার অর্থ হ্যাঁ। শান্তর মুখে মিষ্টি এক হাসি ফুটে উঠে। আমিও ম্লান হাসি। অতঃপর বলি,“আমি তোমার সঙ্গে সারাজীবন কাটাতে চাই। তোমার কিছু হলে আমি ম রে যাবো। তাই আজকের পর থেকে আর বাজে কথা বলবে না।”
আমার কথা শুনে শান্ত মুচকি হাসে। অতঃপর বলে,“আচ্ছা বলবো না।
তবে ভুল কিছু বলিনি। এমন হতেই পারে।”

“চুপ।”
আমি কিছুটা ধমকের সুরে কথাটি বললাম। একটু থেমে আবার বললাম,“ভবিষ্যতে কি হবে না হবে সেটা এখন থেকে ভেবে কাজ নাই। এখন আমাদের উচিত এই সময়টাকে উপভোগ করা।”

“যাহ বাবা।
আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে মহারানি?”
শান্তর মুখ দিয়ে কথাটি বের হতে আমি ভাব নিয়ে বললাম,“কারো কথা কাউকে ফেরাচ্ছি না।
এটা আমার স্বামীর থেকে আমি শিখেছি। এত সুন্দর কিছু শিখলাম সেটা অন্যদের শেখাবো না। এটা অন্যদের না শেখালে আমার স্বামীর মান থাকবে?”

“ওহ এই ব্যাপার।”
এটা বলে শান্ত আমার হাত ধরে টান দেয়। আমি এসে তার বুকে পড়ি। শান্ত আমার মুখটা ধরে নাকের সাথে নাক ঘষে বলে,“আমার মান নিয়ে বেশ চিন্তিত দেখছি। এতটা চিন্তা মান নিয়ে না করে আমাকে নিয়ে করলেও তো হতো।”

“তোমাকে নিয়ে চিন্তা করলে কী হতো?”
আমি কথাটি বলে শান্তর চোখের দিকে আড়চোখে তাকাই। শান্ত বেশ মজা নিয়ে বলে,“কিছু তো হতো।”

“কী?”

”ঐ যে কিছুমিছু।”

”হ্যাঁ?”
আমি বুঝে উঠতে না পেরে তার দিকে তাকালাম। শান্ত চোখ দিয়ে দুষ্টু ইশারা করতে আমি তার বুকে আলতো করে মে রে বললাম,“যাহ।”

কথাটি বলা শেষ হতে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগে শান্ত আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি হচচকিয়ে গেলাম। কিছুটা বিষ্ময় নিয়ে বললে,“কী হচ্ছে এসব?”

“আরে ভয় নাই। কিছুমিছু হবে না।
আপাতত চন্দ্রবিলাস হবে।”
এটা বলে শান্ত আমাকে কোলে নিয়েই হাঁটতে শুরু করে দেয়। সে ঘরের বাহিরে পা বের করতে আমি বুঝলাম আমরা ছাদে যাচ্ছি। আমি শান্তর গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,“শান্ত কী হচ্ছে? কেউ দেখে নিলে?”

“চোখ ঘুরিয়ে নিবে।
এতরাতে ঘরের মধ্যে নিজেরা কিছু-মিছু না করে আমাদের দেখতে যাবে কেন? এই অপরাধে চোখকে শাস্তি দিবে।”

”শান্ত।”
শান্তর মজা শুনে আমি কিছুটা বিরক্ত হলাম।এই ছেলের সবসময় এমন মজা করা চাই। শান্ত আমার কথায় কোন গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে নিয়ে সোজা ছাদের দিকে হাঁটা শুরু করে দেয়। কেউ দেখে ফেললে লজ্জায় পড়তে হবে এই ভয়টা কাজ করলেও খুব একটা খারাপ লাগছে না। স্বামীর কোলে করে ছাদে উঠতে বেশ ভালোই লাগছে। এমন স্বপ্ন হয়তো প্রায় মেয়েই দেখে। কিন্তু পূরণ হয় না। সেখানে আমি না চাইতেও পূরণ হয়ে যাচ্ছে। এটা বেশ আনন্দের। একটা সময় কতই না দুঃখী ছিলাম। জীবনে কখনো শান্তি মুখ দেখবো না বলে হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। আজ সেই আমি এত সুখী। ইশ পৃথিবীর দুঃখী মেয়েদের যদি আমাকে দেখাতে পারতাম। তাদের আমার জীবনটা দেখিয়ে বোঝাতে পারতাম, তোমরা হতাশ হয়ো না। দুঃখের পরে সুখ ঠিকই ধরা দিবে।

____

ছাদের নীরব পরিবেশে রাত যেন ধীরে ধীরে তার আবেশ মেলে ধরেছে। আকাশ ভরে উঠেছে অসংখ্য নক্ষত্রে, কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে পূর্ণিমার শুভ্র চাঁদ। রুপালি আলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে, ছাদের প্রতিটি কোণে নেমে এসেছে এক ধরনের শান্ত ও মায়াময় আলো।
আমি ধূসর রঙের হালকা সুতি শাড়িতে সেজে আছি, বাতাসে শাড়ির আঁচল দুলে উঠছে আস্তে আস্তে। শান্ত পরেছে সাদা রঙের টিশার্ট আর কালো প্যান্ট। সরল অথচ ভীষণ মানানসই সাজ। আমি মাথা রেখেছি শান্তর কাঁধে, দু’জনেই চুপচাপ তাকিয়ে আছি সেই চাঁদের দিকে, যেন চাঁদের নিঃশব্দ আলো আমাদের মনের কথাগুলোও শুনছে।
ছাদের একপাশে সারি সারি টবে রাখা ফুল গাছগুলোও যেন নীরবে এই মুহূর্তের সাক্ষী। কোনো টবের গাছে ফুটে আছে জুঁইয়ের সাদা ফুল, তার ঘ্রাণ বাতাসে ভেসে আসছে। আবার কোথাও লাল গেরানিয়াম কিংবা গোলাপ গাছের কুঁড়ি, রাতের আঁধারেও তাদের অস্তিত্ব চোখে পড়ে যায়।
রাতের হালকা হাওয়ায় ফুলের গন্ধ মিশে গিয়ে মুহূর্তটিকে করেছে আরও প্রশান্ত। দূরে কোথাও থেকে হয়তো ভেসে আসছে ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডাক, যা রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও গভীর করে তুলছে।
চাঁদের সেই কোমল আলোয় আমরা দু’জন, একে অপরের নীরবতায় জড়িয়ে, যেন হারিয়ে গেছি সময়ের গণ্ডি ভুলে। শুধু চাঁদ, রাত আর আমাদের দু’জনার নীরব ভালোবাসায়। নিরবতা ভেঙে আমি শান্তকে বললাম,“পরিবেশটা খুব সুন্দর তাই না?”
“হ্যাঁ। তবে তারচেয়ে বেশি সুন্দর তুমি।”
শান্তর কথা শুনে আমি মুচকি হাসলাম। নরম গলায় বললাম,“যে যাকে ভালোবাসে সে তার চোখে সেরা সুন্দরী। তাই এত সুন্দর পরিবেশের মাঝেও তোমার আমাকে বেশি সুন্দর লাগছে।”
“তো তোমার আমার থেকে বেশি ঐ চাঁদকে সুন্দর মনে হচ্ছে বুঝি?”
শান্তর মজার সুরে বলা কথাটি শুনে আমি শব্দ করে হেসে দিলাম। হাসি মুখেই বললাম,“একদম না। চাঁদের থেকে তুমি অবশ্যই বেশি সুন্দর। ঐ চাঁদের তো আলো নেই। কিন্তু তোমার রয়েছে।”
একটু থেমে আমি আবার বললাম,“শান্ত নামের ছেলেটি তার আলো দিয়ে পুষ্পের অন্ধকার সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ঐ চাঁদ চাইলেও এটা করতে পারবে না। সেজন্য অবশ্যই শান্ত চাঁদের চেয়ে বেশি সুন্দর।”

“আচ্ছা।”
এটা বলে শান্ত আমার ডান হাতটি ধরে আমার আঙুল নিয়ে খেলা করছিলো। এটা দেখে আমি বললাম,“বাচ্চামো স্বভাব যাবে না, না?”

“না।”
শান্ত স্বাভাবিক গলায় কথাটি বলে। আমি কিছুটা মজা করেই বললাম,“হ্যাঁ দু’দিন পর বাচ্চার বাপ হয়ে যাবেন। আর তিনি এখনো বাচ্চামো করে বেড়াচ্ছে।”

“এজন্যই তো করছি।আমার বাচ্চার সঙ্গে তো বড়দের মতো আচরণ করা যাবে না। হ্যাঁ অবশ্য বউয়ের সঙ্গে যায়। তা করবো নাকি বড়দের মতো আচরণ।”
শান্তর শেষ কথাগুলোর ভাবার্থ বুঝতে পেরে আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম,“আবার শুরু করলে…।”

“শেষ করলাম কখন।
আমি তো শেষ করতেও চাই না।”
শান্তর কথা শুনে আমি আর জবাব দিলাম না। আমি এই সুন্দর পরিবেশটা উপভোগ করছিলাম। সেই মূহুর্তে শান্ত বলে,“আচ্ছা পুষ্প ধরো আমার ছোটবেলার ক্রাশ আমার জীবনে ফিরে এলো। তখন তুমি কী করবে?”

“ছোটবেলার ক্রাশ মানে?”
আমি কিছুটা অবাক হয়ে কথাটি জিজ্ঞেস করলাম। শান্ত স্বাভাবিকভাবে বললো,“আরে থাকে না। ছোটবেলার তো সবার কম বেশি ক্রাশ থাকে। আমি সেই ক্রাশের কথা বলছি।”

“ওর নাম কি?”
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম। এতক্ষণে শান্তর কাঁধ থেকে মাথাটি সরিয়ে নিয়েছি। এটা দেখে শান্ত আমার দিকে তাকায়। হাসি আটকানোর চেষ্টা করে বলে,“ওর নাম শ্রাবণী ছিলো। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। ছোটবেলায় এত সুন্দরী ছিলো। না জানি এখন কত সুন্দর হয়েছে।”

”শান্ত।”
আমি কিছুটা চিৎকার করে বলি। এটা শুনে শান্ত হাসি আটকাতে না পেরে বলে,“কোথায় জানি পুড়ছে।”

“মোটেও না।”
আমি নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বলি। শান্ত তৎক্ষনাৎ বলে উঠে,“পুড়ছে পুড়ছে। পোড়া ভালো। না পুড়লে বুঝবে কিভাবে বউয়ের সঙ্গে আছি না অন্যকারো সঙ্গে।”

“তারমানে তুমি মজা করছিলে?”
আমি কথাটি বলতে শান্ত মাথা নাড়ায়। আমি তার গায়ে কয়েকটি মে রে বলি,“বদমাইশ ছেলে।”
শান্ত আমার কান্ড দেখে শব্দ করে হাসতে থাকে। অতঃপর বলে,“হবে নাকি?”

“কী?”

”কিছুমিছু।”
এটা বলে শান্ত আবার হাসতে থাকে। আমি বোকা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। শান্ত হাসতে হাসতে বলে,“অনেক রাত হলো। এবার যাই?”
আমি মাথা নাড়াই। শান্ত উঠে দাঁড়ায়। আমি উঠে দাঁড়াই। আমি পা বাড়াতে নিলে শান্ত হাত ধরে। আমি থেমে তার দিকে তাকাই। শান্ত বলে,“নিয়ে যেহেতু আমি এসেছি সেহেতু ঘরে নিয়ে যাওয়া আমার দায়িত্ব। আমি কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানহীন নই। তোমার অবশ্য মনে হতে পারে আমাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন। তবে এসব ক্ষেত্রে আমি অনেক দায়িত্বশীল।”
এটা বলে শান্ত আবার আমাকে কোলে তুলে নেয়। আমি তার গলা জড়িয়ে ধরে লাজুক হাসি দেই। শান্ত আমাকে নিয়ে নিচে নামতে শুরু করে। শান্ত আমাকে কোলে করেই ঘর অব্দি নিয়ে এসে। ঘরে এসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,“ভালোবাসবো?”
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বলি,“সবসময় অনুমতি নিতে হবে?”

“হ্যাঁ অবশ্যই।
নিজের ইচ্ছে নিয়ে ভাবলে তো চলবে না। সঙ্গীর ইচ্ছেও ভাবতে হবে। হ্যাঁ সঙ্গী না চাইলে নিজেকে কষ্ট দিতে না চাইলে অবশ্যই সঙ্গী যাতে চায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এটা স্বামীর দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।”
শান্তর কথা শুনে আমি খুশি হলাম। তবে কিছুটা ভাব নিয়ে বললাম,“তাহলে আমি রাজি না। আমাকে রাজি করাও।”
এটা শুনে শান্ত হেসে দেয়। অতঃপর বলে,“আচ্ছা।”
এটা বলে শান্ত আমাকে নামিয়ে দেয়। অতঃপর গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে। দরজা বন্ধ করে এসে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়ে। আমি এটা দেখে হতভম্ব হয়ে যাই। আমি কিছুটা আমতা আমতা করে বললাম,“তুমি শুয়ে পড়লে যে?”

“তো কী করবো?
তুমি তো রাজি নও। তাই এখন ঘুমিয়ে পড়ি।”
এটা বলে শান্ত উল্টো দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে নেয়। আমি এটা দেখে বোকার মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকি। এটা কী হলো? দুই মিনিট ভাবার পর আমি বুঝলাম, শান্ত জানে আমি কথাটি মজা করে বলেছি। তাই ইচ্ছে করে এটা করছে। এটা বুঝতে পেরে আমি বিছানায় উঠে গেলাম। আমি গিয়ে শান্তর ঘাড়ে হাত রাখতে সে ঘুরে আমাকে গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিলো। অতঃপর আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”ভালোবাসবো?”
আমি সম্মতি দিতে শান্তর মুখে অন্যরকম হাসি ফুটে উঠে। সে আমার চোখে চোখ রেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। অতঃপর…


চলবে,

#ইচ্ছেঘুড়ি (৪২)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

বেশ কিছুদিন কেটে যায়। আজকাল সময় এত দ্রুত কেটে যাচ্ছে যে টেরই পাচ্ছি না। সকালে উঠে নাস্তা বানিয়ে খেয়ে অফিসে বের হয়ে যাওয়া। অফিস শেষে শান্তর আমাকে নিয়ে আসা। সেই সময়ে দুজন একটু বাহিরে ঘুরে আসা। বাড়ি ফিরে একসঙ্গে রান্না করা, সেই সঙ্গে ফোনে বাবা-মাকে সময় দেওয়া। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে।

আজও মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম আর রান্নার যোগাঢ় করছিলাম। শান্ত পাশে বসে হাতে হাতে কাজ করছিলো। সেই মূহুর্তে মা বললো,“তোমরা বাসায় আসবে কবে? অনেকদিন তো হলো গিয়েছো। এবার দুইদিনের ছুটি নিয়ে চলে আসো। আর ভালো লাগছে না।”

“হ্যাঁ মা। আমিও ভাবছি যাবো।
কিন্তু অফিস থেকে ছুটি পাবো কি-না জানি না। আসলে বদলির আবেদন করেছি তো। সেটা নিয়ে কথাবার্তা চলছে। এই মূহুর্তে ছুটি হয়তো দিবে না।”
আমার মুখ দিয়ে এই কথা বের হতে মাকে কিছু বলতে না দিয়ে বাবা বলে,“হ্যাঁ এখন কত অজুহাত থাকবে। অজুহাত দিলে অজুহাতের অভাব নেই। আসতে চাও না সেটা বললেই হয়।”

“আমি আসলে আপনি খুশি হবেন বাবা?”
আমি কথাটি বলতে বাবা থেমে যায়। মা বোধহয় বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। আমি তার হাসির শব্দ পেলাম। বাবা আমতা আমতা করে বলে,“তোমরা আসো বা না আসো তাতে আমার কি। শান্তর মা তোমাদের কতদিন দেখে না বলে আফসোস করছিলো তাই আমি বললাম।”

“ওহ এই ব্যাপার?
আচ্ছা বাবা আমি মাকে ম্যানেজ করে নিচ্ছি।
আমি ছুটি না পেলে মা আমাকে কখনোই জোর করবে না যেতে। সে বিষয়টা ঠিক বুঝবে।”
এটা শুনে বাবা বোধহয় বকা ছিলো। তবে সেটা স্পষ্ট শুনতে পেলাম না। মায়ের গলায় শুনলাম,“চুপ করবে তুমি। সরাসরি বললেই তো পারো যে তুমি চাও ওরা যাতে আসে।”

“আশ্চর্য আমি চাইবো কেন?
আমি তো তোমার কথা ভেবে বললাম। বাহ্। যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।”

“ওহ এই ব্যাপার?”
বাবা, মায়ের খুনসুটি শুনে আমি এদিকে বসে হেসে দেই। শান্ত আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,“আমার বাবা, মাকে নিয়ে বেশ মজা পাচ্ছো দেখছি।”

“জ্বী না। আমি তোমার নয় আমার বাবা, মায়ের কান্ডে মজা পাচ্ছি।”
আমি ভাব নিয়ে কথাটি বলে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। শান্ত হতবাক হয়ে বলে,“আমার বাবা, মা নাহলে তোমার কিভাবে হলো বাবা, মা?”

আমি জবাব দিলাম না। শান্ত আমার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,“এবার মজা পাইছো?”

“শান্ত?”
আমি রাগ নিয়ে তাকালাম। এবার আমাদের কান্ডে মা হেসে দিলো। আমি মায়ের হাসি শুনে লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দিলাম। শান্ত এটা দেখে শব্দ করে হেসে দিলো। আমি শান্তর হাসি দেখে তার গায়ে আলু ছুঁড়ে মা রলাম। শান্ত আলুটা ধরে বলে,“বাহ্। এখন স্বামী নির্যাতন চলছে।
করো করো। তোমাদেরই দিন। স্বামী নির্যাতন করলে তো আর জেল ফাঁসি হবে না।”

“ওহ এখন আমি অত্যাচার করছি?”
আমি চোখগুলো ছোট ছোট করে তার দিকে তাকালাম। শান্ত মাথা নাড়িয়ে বললো,“অত্যাচার করছো না তো?”

“তবে…।”
এটা বলে আমি শান্তর দিকে এগিয়ে যেতে সে উঠে দৌঁড় দিলো। আর বললো,“পৃথিবীর প্রত্যেকটা বউয়ের মাঝে একটা রণচণ্ডী থাকে। আমার বউয়ের সেটা জেগে উঠে। পালাই ভাই।”

“শান্ত।”
শান্ত ছুটে চলে গেল। আমি তার কান্ডে হেসে দিলাম। এভাবেই খুনসুটিময় সংসার হেসে-খেলে কাটিয়ে দিচ্ছি।

____

শান্তর বাবা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো সেই মূহুর্তে কাজলের বাবা, মায়ের বাড়ির সামনে এসে থেমে যায়। কাজলের মা এবং প্রতিবেশী এক মহিলার প্রচন্ড ঝগড়া হচ্ছে। এসব দেখে সে হতভম্ব হয়ে যায়। কাজলের মা রাগান্বিত গলায় বলে,“হ্যাঁ হ্যাঁ আমার খেয়ে কাজ নাই তো যে তোর বাড়ি যাবো। তোর মতো চুন্নির বাড়ি। তুই ভুলেও আমার বাড়ি আসবি না। তোর মতো চুন্নির পা যাতে আমার বাড়ি না পড়ে।”

“ও হতীন।
আমি চুন্নি। তুই যে কত ভালো সেটা সবাই জানে।
এই পাড়ায় কে না জানে তোর গুনকীর্তন?”
মহিলাটি জবাবে এসব বললো। তাদের অবশ্য অন্যরা থামানোর চেষ্টা করছে। ধরে রেখেছে নয়তো এখন চুলোচুলি বাঁধতো। কাজলের মা এটা শুনে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে নেয়। আর মুখে বলে,“ও মা**। আমার গুনকীর্তন। তোর কি? তোর মেয়ে যে লাঙ ধরছে এটা কে না জানে? বিয়ের আগে পেট হইছে। আমরা কি এসব জানি না?”

“তাও তো ভালো।
আমার মেয়ে তার পাশে মা পেয়েছে। তোর মতো নাকি। যে মা হয়ে নিজের মেয়েকে অক্ষম প্রমাণ করে। মেয়ের নামে বদনাম দেয়। তুই যে পুষ্পের নামে বদনাম ছড়াইছিস এটা কে না জানে? সবকিছু তো সবার চোখের সামনে। এখন তো পুষ্পর বিয়ে হয়েছে। একই পাড়ায় বিয়ে নাহলে তো তুই বলতি তোর মেয়ে হিজড়া, সে তাদের দলে যোগ দিছে। একই এলাকায় বিয়ে নাহলে তো আমরা জানতামই না তুই কত নোংরা। খা*** মা হয়ে তুই কত নিচে নামতে পারিস। মা জাতির কলঙ্ক তুই। আবার বড় কথা কও।
বড় কথা কাকে বলিস? তোর মেয়ে এই পাড়ায় বিয়ে করে তোর মুখে ঝামা ঘষে দিছে না। বেশ হইছে। এবার বাচ্চাটা হোক। তারপর দেখবো তুই এই পাড়ায় মুখ দেখাস কোন শরমে।”
মহিলা এবং কাজলের মা দুজনেই গালাগালি করছে। শান্তর বাবা এসব শুনে হাঁটা ধরছিলো। তবে পুষ্পের নাম শুনে দাঁড়িয়ে যায়। মহিলা আবার বলে,“তোর আবার আছে লজ্জা শরম। আমিও বা কি বলি। লজ্জা থাকলে যে মেয়েকে এত অপবাদ দিলি সেই মেয়ের বিয়েতে গিয়ে আবার নোংরামি করতে পারতি না। দেখেছি না সেখানে গিয়ে সবাইকে কিভাবে মেয়ের নামে দোষ বললি? দেখ মা** তোর এই অপকর্ম তোর মেয়ে কাজলের উপর পড়ে কি-না। পুষ্প মা হবে কিন্তু কাজল হবে না। বাজা হবে। তোর মতো। তোর মেয়ে না।”

”খা***। তোর এতবড় সাহস তুই আমার মেয়েকে অভিশাপ দিস। তোরে আমি…।”
এটা বলে কাজলের মা আবার এগিয়ে যেতে চায় তাকে মা রতে। কিন্তু অন্যরা ধরে ফেলে। তাদের এসব কথা শুনে শান্তর বাবা আর দাঁড়ায় না। সে চলে যায়। মনেমনে বলে,“সবাই বুঝতে পারছে পুষ্পর নামে অপবাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঐ যে কথা শোনানো লাগবো। তাই পুষ্প বা আমাদের দেখলে এসব একটু ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলে। হায়রে মানুষ। এই মানুষদের কথা কানে নিয়ে কত না কি করেছি।”

শান্তর বাবা যে কাজে বের হয়েছিলো সেটা না করে বাসায় ফিরে আসে। শান্তর মা তাকে বাসায় ফিরতে দেখে অবাক হয়। তবে কিছু বলে না। বাবা বলে,“এক গ্লাস পানি দাও তো।”

মা পানি নিয়ে এসে দিতে শান্তর বাবা সেটা পান করে। অতঃপর বলে,“মেয়েটা ওত খারাপ না তাই না?”

“কোন মেয়ে?”
মা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে। বাবা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,“বুঝতে পারছো না। আমি ঐ মেয়ে মানে শান্তর বউয়ের কথা বলছি।”

“ওহ আচ্ছা। তো মেয়ে মেয়ে কেন করছো?
ওর নাম নেই? নাম ধরে বলো।”

”হ্যাঁ। ঐ তো পুষ্প।
দেখতেও কিন্তু ফুলের মতো। তবে একটু চিকন।
খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না। তুমি কিছু বলতে পারো না?”
বাবার এই কথা শুনে মা অবাক হয়ে যায়। সে বিষ্ময় নিয়ে বলে,“বাহ্। পুষ্পকে তুমি এত খেয়াল করেছো৷ কই এতদিন তো বলোনি?”

“কেন বলতে হবে কেন?
এত ঠ্যাকা পড়েছে আমার।”
বাবা কিছুটা গম্ভীর গলায় বলে। এটা শুনে মা মনেমনে হাসে। বাবা আবার কিছু একটা ভেবে বলে,“এমনিতে সব ঠিক আছে। শুধু এক বছরের বড় এই তো। এটা খুব সাধারণ বিষয়। তাছাড়া একসাথে তো ওদের ভালোই মানায়।”

“কি ব্যাপার? আজ পুষ্পের সম্পর্কে এত কথা বলছো যে?”
মা সন্দেহের নজরে তাকালে বাবা হচচকিয়ে যায়। সে আমতা আমতা করে বলে,“কেন আমি বলতে পারি না। অপরাধ করে ফেলেছি। আমি কী অন্যকারো কথা বলছি। আমার মেয়ের কথাই তো বলছি।”
এটা শুনে মা খুশি হয়। এতদিন কথাটা মনেমনে রাখলেও আজ সরাসরি বলে দিলো। পুষ্পকে সে মেয়ের নজরে দেখে।

___

কাজল খুব সুন্দরভাবে সেজে বসে আছে। আজ তার এবং জয়ের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা। তবে জয় একটু কাজে অফিসে গিয়েছে। দ্রুত চলে আসবে জানিয়েছে। তাই কাজল সেজে তার জন্য অপেক্ষা করছিলো। তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জয় বাড়ি ফিরে। জয়কে দেখে কাজল খুশি হয়ে যায়। জয়ও তার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। এবং খুব সুন্দরভাবে বলে,“তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।”

“আচ্ছা।”
এটা বলে কাজল লজ্জা পায়। জয় একটু মলিন গলায় বলে,“কাজল আমরা যেখানে যাচ্ছি সেটা কোন বিয়ের অনুষ্ঠান নয়।”

“তো?”
কাজল বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে। জয় কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বলে,“আমরা বাড়ি যাচ্ছি।
আজ মা আমাকে দুপুরে দাওয়াত দিয়েছে। সেজন্য আমি তোমাকে নিয়ে সেখানে যাচ্ছি।”

কাজল কথাটি শুনে চমকে যায়। সে ভয় পায়। সেখানে গেলে ঝামেলা হবে। তাকে দেখলে তারা কথা শোনাবে। তাছাড়া তারা তো জয়কে যেতে বলেছে সেখানে কাজল যাবে কেন? এসব ভাবছিলো কাজল। সেই মূহুর্তে জয় কাজলের ডান হাতটি শক্ত করে ধরে। কাজল তার স্পর্শে কিছুটা কেঁপে উঠে। সে জয়ের দিকে তাকায়। জয় ভরসা দিয়ে বলে,“ভয় পেও না।
আমি আছি তো। সব সামলে নিবো।”

“তুমি পারবে?”
কাজল কিছুটা দ্বিধা নিয়ে বলে। জয় ম্লান হাসে। যার অর্থ সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তবে সে নিজের স্ত্রীকে ছাড়া বাড়িতে যেতে চায় না। বিশেষ করে যখন আজ ভালো আয়োজন হচ্ছে। সেই দাওয়াতে গিয়ে সে একা খেতে পারবে না। কাজল এটা বুঝতে পারছে। তাই তার সঙ্গে যেতে রাজি হয়।

কাজল এবং জয় বেরিয়ে পড়ে। দূরত্ব বেশি না হওয়ায় তারা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসে। কাজল বাড়ি ঢুকে তার শ্বশুড়, শাশুড়ী এবং ননদকে সালাম দেয়। তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে। তারাও জবাব দেয়। তবে মুখটা বেজাড় ছিলো। কিন্তু বুঝতে দেয় না কাজলকে। তারা কাজলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবে কথা বলে। একত্রে সবাই সেখানে দুপুরের খাবার খায়। অতঃপর গল্প করে। গল্পের ফাঁকে কাজলের ননদ বলে,“যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
বলছিলাম কি জয় তোরা আবার বাড়িতে চলে আয়। বাবা, মা আর ভাবীর সঙ্গে ঝামেলা করবে না। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। তাছাড়া তুই ছাড়া বাবা, মায়ের কে আছে? তারা ভীষণ কষ্ট পায় তুই দূরে আছিস তাই।”

জয় তার আপার কথা শুনে। কাজল তাদের ব্যবহারে খুশি হয়। তাই সে এই প্রস্তাবে রাজি হতে চাচ্ছিলো। সে চায় না দূরত্ব। কিন্তু জয় তাকে অবাক করে দিয়ে বলে,“যেভাবে আছে সবটা সেভাবে থাকুক না। আমরা তো বেশ আছি। একসঙ্গে থাকলেই মন কষাকষি হবে। তারচেয়ে দূরে থাকাই ভালো।”

এখানে জয়ের বাবা, মাও তাকে মিষ্টি করে বোঝাতে চায়। কিন্তু জয় রাজি হয় না। জয়ের রাজি হওয়ার কোন চান্স না দেখে তারা তাদের স্বরূপে ফেরত চলে আসে। জয়ের মা রেগে বলে,“এই কালনাগিনী তোকে কি দিয়ে বশ করলো যে তোর এখন আর আমাদের ভালোই লাগে না?”

“ও বশ করেনি।
কিন্তু তোমরা যে শুধরানোর নয়। সেটা আমি বুঝে গেছি। তাই রাজি হইনি। দেখো কয়েক মিনিটে তোমরা আসল রূপে ফিরে এলে।”
জয়ের কথা শুনে কাজল অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। জয়ের বাবা, মা বোন তার উপর রাগ ঝাড়ে। সব বাজে কথা কাজলকে বলে। কাজল আজ আর জবাব দেয় না। তার হয়ে জয় জবাব দিয়ে দিচ্ছে। এটা দেখে কাজলের খুব ভালো লাগে। কাজলের নিজেকে আজ পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে।

___

আমি অফিসে সিনিয়রের সঙ্গে কথা বলে বের হতে রায়ানের মুখোমুখি হই। সে আমাকে দেখে ব্যঙ্গ করে তার সুখী সংসারের গল্প করে। এটা দেখে আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলি,“আমার বদলির পথে বাঁধা না হয়ে দাঁড়িয়ে বরং বদলিতে সাহায্য করুন। তাহলে আর আপনাকে কষ্ট করে আমাকে দেখে জ্বলতে হবে না। না দুঃখী সংসারের গল্পকে সুখী বলে চালাতে হবে। এত কষ্ট করতে হবে না।”

“এই তোমার মনে হয় কি বলো তো?
একমাত্র সংসার জীবনে তুমিই খুব সুখী আছো?”
রায়ানের রাগান্বিত গলার কথা শুনে আমি হেসে জবাব দিলাম,“হ্যাঁ। আমিই সুখী আছি। আর আমার মতো যারা সুখী তারা কখনো অন্যকে জ্বালাতন করার চেষ্টা করে না। চেষ্টা করে আপনার মতো লোকেরা যারা ব্যক্তিগত জীবনে সুখী নেই।”
এটা বলে আমি চলে যাই। রায়ান আমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। সে কিছুটা ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যি তো তাই। সংসার জীবনে সে ভালো নেই। তার সঙ্গে তার স্ত্রীর মানসিকতা মিলে না। তার পরিবারের সঙ্গেও স্ত্রীর বনিবনা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সে অশান্তিতে আছে। তাই সে এখন পুষ্পের ভালো থাকাটা মেনে নিতে পারছে না। এসব ভেবে রায়ান ছুটির সময় রাস্তায় আমার পথ আটকে দাঁড়ায়। সে কিছুটা নরম গলায় বলে,“পুষ্প তুমি ঠিকই বলেছো। আমি ভালো নেই। বিশ্বাস করো ভালো নেই। কারণ আমার স্ত্রী তোমার মতো স্বচ্ছ নয়। সে এত ভালো নয়। তুমি আমাকে রিজেক্ট করে আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো।”

”রায়ান আপনি এসব কী বলছেন?”
আমি বিরক্তি নিয়ে কথাটি বললাম। এটা শুনে রায়ান বলে,“আমি ঠিকই বলছি।
তুমি যদি সেদিন রাজি হতে তাহলে আমার জীবনটাও সুন্দর হতো। আমরা ভালো থাকতাম। খুব ভালো থাকতাম।”

“এখন এসব বাজে কথা বলার সময় নয়।
আপনি বাড়ি যান এবং নিজের স্ত্রীকে সময় দিন। দুজনে দুজনার মনের কথা শেয়ার করুন। দেখবেন নিজেদের মাঝে সমস্যাটা চিহ্নিত করে আপনারা সেটা শেষ করতে পারবেন।”
এই কথা বলে আমি চলে আসতে ছিলাম সেই মূহুর্তে রায়ান আমার হাত ধরে ফেলে। আমি হচচকিয়ে যাই। বিরক্তি নিয়ে রায়ানের দিকে তাকাতে রায়ান বলে,“প্লীজ আমার সঙ্গে এক কাপ কফি খাবে।”

সেই সময়ে শান্ত রিকশা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। শান্ত আমার হাতের দিকে তাকায়। যেটা রায়ান ধরে রেখেছিলো। শান্তকে দেখে রায়ান হাত ছেড়ে দেয়। অতঃপর বলে,“তুমি ভুল বুঝো না শান্ত। এখানে তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই হয়নি।”

“আমি আপনার মতো নই।
নিজের স্ত্রীর চোখের ভাষা পড়ার ক্ষমতা রাখি।”
এটা বলে শান্ত রিকশা থেকে নামে। আমার হাতটি ধরে। আমি খুশিমনে শান্তর দিকে তাকাই। শান্ত রায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,“অনুমতি ছাড়া অন্যের স্ত্রীর হাত ধরার স্বভাব পরিবর্তন করবেন। এটা আপনার সঙ্গে যায় না। কারো অনুমতি ছাড়া তাকে স্পর্শ করলে, বিশেষ করে কোন মেয়ের কেমন অনুভূতি হয় সেটা আপনি বুঝেন না। এটা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার তো স্ত্রী আছে৷ গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করুণ। আপনি ব্যতীত অন্যকেউ তার হাত ধরলে তাও জোর করে তাহলে তার কেমন অনুভূতি হবে।”

“শান্ত তুমি একটু বেশি ভাবছো।”

“জ্বী না।
বরং আপনি এটা ভাবছেন না আপনি অন্যকারো স্ত্রীকে অসম্মান করলে কেউ আপনার স্ত্রীকে সম্মান করবে না। আপনার কর্মফল সে পাবে। এটা একজন সুপুরুষের সঙ্গে যায় না। তাই এটা মাথায় রাখবেন।”
এই কথা বলে শান্ত আমাকে নিয়ে রিকশায় উঠলো। রাগান্বিত চোখে রায়ানের দিকে কয়েক মূহুর্তে তাকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নেয়। রিকশা আমাদের বাড়ির দিকে চলতে শুরু করে। শান্ত কিছুটা রাগ নিয়েই বলে,“তোমাকে আর বদলি নিয়ে এদিক সেদিক যেতে হবে না। আমি বাবাকে বলে ব্যবস্থা করছি। যত তাড়াতাড়ি আমরা এখান থেকে চলে যাবো।”
এই কথা শুনে আমি শান্তর চোখে চোখ রাখি। কিছুটা মজা করেই বলি,“কেন অন্যত্র রায়ানের মতো মানুষ নেই বুঝি?”

“আছে।
তো রায়ানের হাত ধরায় মজা পাচ্ছিলে বুঝি?”
শান্তর রাগ নিয়ে বলা কথাটি শুনে আমি হেসে দেই। মিষ্টি গলায় বলি,“তোমার মাঝে এখন স্বামী স্বামী ভাব দেখা যাচ্ছে।”


চলবে,