#মন_আকাশে_তুই
#পর্ব_০৩
লেখনীতেঃঅলকানন্দা ঐন্দ্রি
অহির দীর্ঘদিনের অনুভূতিময়,ভালোবাসার মানুষটির বিয়েতে ও উপস্থিত ছিল এই কথাটা ও বেশ হাসি হাসি মুখে বললেও ওর বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়। এই মানুষটা যদি জানত অহির সেদিন কতোটা কষ্ট হয়েছিল তাহলে বোধহয় একবার হলেও অহির জন্য তার মায়া হতো। যদি একটাবার জানত অহির এই এক সপ্তাহ কি নিদারুন যন্ত্রনায় কেঁটেছে তাহলে একবার হলেও সে অহির জন্য দুঃখ করত। করত না? অহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও হাসিহাসি মুখে সাদিদকে বলল,
“ সাদ ভাইয়া? আমি কিন্তু তোমার বউ এর বান্ধবী। সম্পর্কে শালিকা! ”
অহি বেশ উচ্ছাস নিয়ে, হাসিহাসি মুখে কথাগুলো বললেও সাদিদের মুখে সেই উচ্ছ্বাসের বা উৎফুল্লতার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। বরং বেশ বিরক্তই দেখাল তাকে। কপাল কুঁচকে রাখা পুরুষটার। অহির দিকে বিক্ষিপ্ত নজর ফেলে ও এতক্ষনে বলল,
“ তো? কি করব? ”
অহি যতোটা উৎফুল্ল হয়ে কথাটা বলেছিল এবার ততোটাই নিভুনিভু হয়ে এল ওর মুখটা। সাদিদ এহসান এমন কেন? আশ্চর্য! শুরু থেকে দেখে আসছে কেবল রাগ আর বিরক্তি এই ছেলেটার। অহি ছোটশ্বাস ফেলে বলল,
“ তোমার বিয়েতে দাওয়াত দাও নি কেন আমাদের? ”
উত্তরটা সাদিদ দিতে লাগলেও মাঝখানে উত্তরটা দিল আবিদ। দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
“ বিয়ে করার সুযোগ হোক ওর, দাওয়াতটা তুই-ই পাবি সর্বপ্রথম অহিবুড়ি। ”
অহি কথার অর্থ বুঝল না।তবুও হাসল একটু। তারপর তার সাদাফ আঙ্কেলের সাথে কয়েকটা কথা বলে সে চলে যেতে নিতেই দেখল দরজায় অহন। হাত পায়ের অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে ইতোমধ্যেই হাত পা ছিলে এসেছে। কপালের ডান কিনারায় ছোটখাটো ব্যান্ডেজ। অহি ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে থাকতেই তাসিন ডুকল অহনকে নিয়ে। অহিকে দেখেই তাসিন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল যেন। বলল,
“ তোর ভাই সাইকেল চালাতে গিয়ে রাস্তায় চিৎফটাং হয়ে পড়ে এসেছেরে। দেখ হাত পায়ের কি অবস্থা করেছে। ”
অহি চোখ ছোট ছোট করেই তাকিয়ে থাকল। অহন ততক্ষনে দাঁত কেলিয়ে হেসে জবাব দিল,
“ উহ, কিচ্ছু হয়নি দুলাভাই। তুমি তো ছিলেই। ”
সাদিদ এবারে ভ্রু কুঁচকে নিল। অহনকে সে এর আগে দেখেনি। দেখার সুযোগ হয়নি। তবে শুনেছে আবির আঙ্কেলের একটা ছেলেও আছে। কিন্তু সমস্যা তাতে না তার। সমস্যা হলো সেদিনকার ছেলেটা। যে অহির শ্বাসকষ্টের সময় পাশেই বসে ছিল, কোলে নিতে চেয়েছিল সে। তাকে অহন এইমাত্র দুলাভাই সম্বোধন করল। কেন? কোন প্রয়োজনে এই সম্বোধনটা ও ঐ ছেলেকে করবে? সাদিদ বুঝে উঠে না। তবে রাগ লাগছে তার। স্পষ্ট রাগ, জেদ ফুঁটে উঠছে মুখচোখে। অহি সে রাগ জেদ কিচ্ছুই খেয়াল করল না। সোজা অহনের সামনে গেল। ছোট গলায় বলল,
” অহন, রুমে যা।আমি আসছি। ”
অহন রুমে গেল না। বরং গোল গোল চোখে সোফায় বসে থাকা দুইজন একইরকমের পুরুষকে দেখতে পেয়ে সে দাঁত কেলিয়ে বলল,
“ হাই। তোমরা কি টুইন ব্রাদার ব্রো? জানো আজকে আমি সাইকেল এক্সিডেন্ট কেন করলাম? তোমাদের মতো দুটো টুইন গার্ল দেখে ক্রাশ খেয়ে তাদের দিকে তাকাতে তাকাতেই যাচ্ছিলাম, অতঃপর পড়ে গেলাম। দুর্ভাগ্য!কি ভীষণ দুর্ভাগ্য আমার! ”
অহনের অতগুলো কথা শুনে আবিদ হেসে উঠল। হেসে বলল,
“ তাই নাকি? ভেরি ভেরি ব্যাড লাক। ”
অহন এবারে সাদিদ আবিদের মাঝখানেই বসল। ততক্ষনে ছুটি এল। ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে কান মলে নিয়ে গেল রুমে। অহন এবারে নবম শ্রেণিতে পড়ে। অথচ বোধজ্ঞান তার এমন যেন ও ক্লাস ওয়ানের একটা বাচ্চা! বেচারা ছুটি ছেলেকে চেয়েও বুঝাতে পারে না যেন। অহি ওখানেই থাকল। তাসিন চলে যেতে লাগলে শান্তস্বরে বলল,
“ চলে যাচ্ছিস কেন? বোস। হৃদি আপু সম্ভবত আসবে একটু পর। আপুর সাথে একসাথেই যাস। বোস এখন। ”
তাসিন না করে যেতে নিলে অহি আবারও বলল,
“ আরেহ বোস না, আম্মু শুনলে রাগ করবে।”
সাদিদ শান্ত শীতল চাহনিতে কেবল পরখ করছিল দুইজনকে। অহির কোন ভাবে প্রেমিক হয় কি এই ছেলে? সেদিনও এতোটা অধিকার বোধ নিশ্চয় এমনি এমনি দেখায়নি এই ছেলে? সাদিদের আচমকা নিজের প্রতিই রাগ লাগে। যদি অহির সত্যি সত্যিই কোন প্রেম হয়ে থাকে? সত্যি সত্যিই কোন প্রেমিক থেকে থাকে? এতগুলো বছর নিশ্চয় অহি তাকে মনে রেখে একা একা বসে থাকে নি?নিশ্চয় তার কথা ভেবে সে প্রেম থেকে দূরে থাকেনি? নিশ্চয় নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর সবার জীবনে যেমন প্রেম আসে তেমন অহির জীবনেও প্রেম এসেছে? সাদিদ আর ভাবতে পারে না। মুখচোখ কেমন লাল হয়ে উঠে তার। আচমকায় অহির দিকে তাকিয়ে অহিকে বলল,
“ আমার তোর সঙ্গে কিছু কথা আছে অহি। ”
অহি তাকাল দ্রুতই। বলল,
“ হ্যাঁ, বলো সাদ ভাইয়া। ”
সাদিদ মুখচোখ অসম্ভব শক্ত রেখেই বলল,
“ এখানে নয়। ”
অহি আশপাশ তাকাল। মিনমিনে স্বরে বলল,
“ আলাদা বলবে? ”
“ সবার সামনে বলার হলে তো আমি তোকে এটা বলতাম না যে আমার তোর সাথে কথা আছে। সরাসরিই বলে ফেলতাম তাই না? ”
অহি ছোট নিঃশ্বাস ফেলে। সাদ ভাইয়া কেমন ভাবে যেন কথা বলে, সবসময়ই মনে হচ্ছে তার এই ছেলে রেগে আছে। অথচ রাগের মতো সে কিছুই করল না। এমনভাবে কথা বলছে অহি না চাইতেও ভয় পাচ্ছে। ও ছোটশ্বাস ফেলে বলল,
“ আমাদের ছাদটা সুন্দর। আপনি বরং তাহলে ছাদে চলুন, ছাদও দেখা হলো আপনার কথাগুলোও শোনা হলো। ”
সাদিদ আর কিছু বলে না। সোজা উঠে দাঁড়ায়। অহি যাওয়ার আগে আগেই সে উঠে পা চালাতে লাগে। ছাদে গিয়ে দেখল অহির বাবা, তার আবির আঙ্কেল সেখানে। পাশে গিয়েই সে তার সোজাসুজি হয়ে দাঁড়াল। প্রশ্ন ছুড়ল,
“ একটু বেশি ভাব নিচ্ছেন না আঙ্কেল? মেয়ে দিতে রাজি নন কেন আপনি? আমাকে অযোগ্য মনে হচ্ছে আপনার? একটা পুতুলের মতো মেয়ে আছে বলে আপনার এত অহংকার! সে ছোট থেকে দেখে আসছি কেবল এই অহংকার। ”
অহির বাবা হাসে। সাদিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ আমার মেয়ে যথেষ্ট ছোট সাদ, নয়তো দিয়ে দিতাম তোমাকে। ”
“ ভার্সিটিতে পড়ে আপনার মেয়ে। মনে হচ্ছে যেন এখনো স্কুল ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায়। ”
ছুটির বাবা হাসল কেবল। এই নিয়ে তিনবার সাদাফ তাকে প্রস্তাব পাঠিয়েছে অহিকে নিয়ে৷ অথচ তিনবারই সে নাকোচ করেছে। তবে মনে মনে সে এই ছেলেকে নিঃসন্দেহেই মেনে নিয়েছে। কারণ এই ছেলে তার মেয়ের জন্য অতেগুলো বছর তরে বসে আছে, এতকাল এত দূরে থেকেও তার মেয়েকেই চেয়ে আসছে। এই ছেলের এই প্রগাঢ় অনুভূতিতে তার দুঃখ দিতে ইচ্ছে হয় না। বলল,
“ তবুও আমার কাছে ও ছোটই। আরো অনেকটা সময় থাকুক ও আমার কাছে। বিয়ে হয়ে গেলেই তো অন্যের বাড়ি থাকবে। মাসে বছরে একআধবার আসবে। তাছাড়া তুমি তো কোথাকার কোন দূরদেশে, আমার মেয়েকে আমি জীবনেও অতো দূরে বিয়ে দিব না। ”
সাদিদ হুট করে বলল,
” যদি এইদেশে থাকি দিবেন? ”
“ এখন নয়, আরো কিছু সময় থাকুক আমার মেয়ে আমার কাছে। তারপর দিব৷ ”
সাদিদ ত্যাড়া স্বরে বলল,
“মেয়ে এমনিতেও আপনাদের কাছে থাকে না। ”
“ এত ভাব দেখাচ্ছেন একটা মেয়ে আছে বলে! আমিও একদিন ভাব দেখাব আপনার মতো কিউট পুতুলের মতো মেয়ের আব্বু হয়ে। দেখবেন কেবল! ”
ছুটির বাবা হেসে উঠে আওয়াজ করেই। যেতে যেতে বলল,
“অপেক্ষায় থাকলাম। ”
.
সাদিদ চলে যাওয়ার পরই অহি মিনমিনে স্বরে একবার সাদাফ আঙ্কেলকে বলে আরেকবার তার মাকে বলতে যায়। অথচ তার মা হুট করেই মুখচোখ শান্ত করে তাকে শুধাল ,
“ তোকে কি জন্য আজ ডেকে এনেছি জানিস আম্মু? ”
অহি তাকিয়ে বলল,
“ না তো, আব্বু বলে নি আমায়। ”
“ আমি বুঝিয়ে বলব বলেছিলাম, তাই বলে নি। ”
অহি কৈাতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকতেই তার মা আবারও বলল,
“ তোমার সাদাফ আঙ্কেল তার এক ছেলের জন্য তোমাকে চেয়েছেন উনি। এই নিয়ে তিনবার চাইলেন। কিন্তু আমরা তোমায় এত অল্প বয়সেই ছাড়তে চাইনা আম্মু, তাই নাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুমি এখনও সংসার সম্পর্কে কতোটা কি জানো? আগে সব জানো, পৃথিবী চেনো, বাবা মায়ের কাছে আরো কিছুটা সময় থাকো তারপর না হয় আমরা ভাবলাম সাদ এর সম্পর্কে কি বলো? কিন্তু সরাসরি এভাবে না বলাটা বেমানান দেখায়। তাই তোমার আব্বু বলেছে মেয়ে যা বলবে তাই।এইজন্যই তোমাকে ডাকা।সাদ ও সম্ভবত তোমার সঙ্গে এই প্রসঙ্গেই কথা বলবে। ”
অহির চোখ গোলগোল। দৃষ্টি স্থির। কিসব বলছে তার মা? তার জানামতে আবিদের বিয়ে হয়েছে বছর খানেক আগে। আর সাদিদের এইদিন বিয়ে হলো হৈমির সাথে। তাহলে? সাদাফ আঙ্কেলের আর কোন ছেলে আছে? তাহলে সাদ ভাইয়ার নাম কেন বলল আম্মু? অহি ওভাবে তাকিয়ে থাকতেই তার মা আবারও বলল,
“ যদি সাদের ক্ষেত্রে তুমি না করো তাহলে আমরা সরাসরিই না বলব। সমস্যা নেই। যদি সাদের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও রাজি থাকো তবে অপেক্ষা করতে বলব। ছেলেটাকে আমি ছোট থেকেই ভালোবাসি, এবং ছেলেটা আমার মেয়েকে ছোট থেকেই আগলে রাখত। ওকে পছন্দ করি বলেই ওর গল্প তোমায় বারবার বলতাম অহি। ”
অহির বোধগম্য হয় না। দৃষ্টি কেমন নড়বড়ে তার। মস্তিষ্ক শূণ্য লাগে। সাদ ভাইয়া? তার সাদ ভাইয়া বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে তার জন্য? তার তো খুশি হওয়া উচিত। আনন্দের সমুদ্রে ভাসা উচিত। কিন্তু হৈমি? হৈমির বিষয়টা তাহলে কি? অহি তো স্পষ্ট দেখল। অহি বুঝে উঠে না। ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতেই তার মা আবারও বলল,
“ যাও, কথা বলে এসো। কিন্তু ওর রাগ জেদ বেশি। এমন কিছু বলো না যাতে ইগোতে লাগে। ”
অহি মাথা নাড়ায়। বুক ঢিপঢিপ করছে তার৷ কেমন একটা লাগছে। অস্থির অস্থির বোধ হচ্ছে। সে ধীর পায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে সে হৃদিকে কল করল। হৃদি নাকি প্রায় চলে এসেছে। এক্ষুনিই গেইট পেরিয়ে বাসায় ডুকবে। অহিও জানাল সবটা। হৃদি তো পারে না সাদিদকে এখনই মাটিতে ফুঁতে ফেলতে। ফোনের ভেতর থেকে একঝুড়ি গালি উপহার দিল ঐ রগচটা সাদিদ এহসানকে।
অন্যদিকে অহি একদম নড়বড়ে অবস্থা, দ্রুত হৃদস্পন্দ আর তীব্র ভয়ভীতি নিয়ে ছাদে পৌঁছাল। একটু আগে মায়ের থেকে সবটা শুনে তার মনের অবস্থা ভয়াবহ। অনেক প্রশ্ন। অনেক! আনন্দ, কৌতুহল, সুখ সব মিলে তার মিশ্র অনুভূতি হচ্ছেে।এই অনুভূতি কিভাবে প্রকাশ করা উচিত তাও বুঝে উঠে না অহি। তবে মাথায় ওড়না চাপিয়ে ও সাদিদের পেঁছনে গিয়ে দাঁড়াল ধীরভঙ্গিতে। সাদিদ বোধহয় বুঝল। ফিরে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল। অদ্ভুত গমগমে স্বরে বলে উঠল,
“ এটুকু সিঁড়ি বেয়ে আসতে তোর এতক্ষন লাগে অহি? ”
অহি উত্তর করে না। নিরব চাহনি ফেলে তাকায় সাদিদের মুখে। সাদিদ উত্তর না পেয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“ ছেলেটা কে? ”
অহি এবার তোতলায়। বুকের ভেতরে দ্রুত ছুটতে হৃদপিন্ড, নিজের মনের বেহাল অবস্থা নিয়ে সে কোনভাবে বলল,
“ কো কোন ছেলে?”
“ সেই ছেলেটা যে তোর ভাইকে নিয়ে এল। কে ও? তোর প্রেমিক? ”
স্পষ্ট প্রশ্ন। অথচ অহি স্পষ্ট উত্তর করতে পারে না। ছোটকালের মতো ভীতুর মতো বলে,
“তাসিন?না, ও আমার প্রেমি.. ”
ঠিক তখনই ছাদের দরজা ঠেলে সামনে এল হৃদি। সাদিদের বলা কথাটা সে শুনেছে সিঁড়ি বেয়ে উঠার পর। অতঃপর সুযোগ পেয়ে সে সুযোগ ছাড়ল না। বলে উঠল,
“ তাসিন অহির বয়ফ্রেন্ড। কেন? সবাই ই তো জানে। আপনি জানেন না? ”
অহির নজরটা এবার ফ্যালফ্যাল হয়ে এল। হৃদি আপু এটা কি বলল? কেন বলল? সাদিদ কেবল ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকাল অহির দিকে। হৃদি আবারও অহির হাত উঁচিয়ে ধরল। অনামিকা আঙ্গুলর থাকা রিংটা দেখিয়ে বলে উঠল,
“ এই দেখুন, এটা তাসিনের দেওয়া। ওরা অলরেডি এইংগেইজড ও! ”
সাদিদ ভ্রু কুঁচকে তাকাল।মেজাজ খারাপ লাগে। বিড়বিড় করে নিজে নিজের দাঁত চেপে শুধাল,
“ এংগেইজড? ”
সাদিদের বিড়বিড় করে বলা কথা কারো বোধগম্য হলো না। সে অহিকে বলল,
“ তোকে বলেছিলাম আমি আলাদা কথা বলতে চাই। আলাদা! ”
অহি চোখ ছোটছোট করে হৃদির দিকে চাইল। মিনমিন করে দ্রুত বলল,
“ হৃদি আপু? তুমি কি একটু নিচে যাবে? আমি এক্ষুনিই আসছি। ”
হৃদিও মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। অহি এবারে ছোটশ্বাস ফেলল। সাদিদের তখনও তীর্যক দৃষ্টি অহির দিকে। বুকে হাত গুঁজে সে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“ তুই এইংগেইজড? ”
অহি দ্রুতই বলার চেষ্টা করল,
“ হ হু? ন্ না। ”
শক্ত, স্পষ্ট স্বরে প্রশ্ন এল,
“ হ্যাঁ নাকি না? ”
অহির তোতলানো স্বর,
“ ন্ না সাদ ভাইয়া। ”
“ রিংটা কে পরিয়েছে? তোর ঐ তাসিন? ”
“ ন্ না। ”
“ ভালোবাসিস ওকে? ”
“ ন্ না। ”
সাদিদ তখনও স্পষ্ট তীর্যক চাহনিতে তাকিয়ে আছে। এবারে বলল,
“ তাহলে চল বিয়েটা করে নিই। আমি এত দুশ্চিন্তা নিয়ে বাঁচতে পারব না। ”
অহি তাকাল। তার মা বাবার মতের উপরে গিয়ে সে বিয়ে করে ফেলবে? তাছাড়া হৈমির বিষয়টাও তো স্পষ্ট নয়। অহির মনে অনেক প্রশ্ন। তাই তো ছোটশ্বাস ফেলে জানাল,
“ আমি বিয়েটা করছি না সাদ ভাইয়া।”
সাদ ভ্রু বাঁকিয়েই তাকায়। এভাবে মুখের উপর তাকে অহির বাবার মতো অহিও না করে দিবে তা যেন মানতে পারল না ও। মুখচোখ লাল হয়ে উঠে। ফর্সা নাকের আগ্রভাগ লাল টকটকে লাগে।রাগের দরুন ফুঁসে উঠল ও। আচমকা অহির হাতটা চেপে ধরল। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“ হোয়াই? আমি দেখতে খারাপ? আমার কোয়ালিফিকেশন নেই? আমায়, সাদিদ এহসানকে রিজেক্ট করার সাহস কি করে হলো তোর অহি? ”
অহি ভয়ে কেঁপে উঠল কেমন। বলল,
“ আমি আপনাকে রিজেক্ট করছি না সাদ ভাইয়া। ”
সাদিদ ওর হাতটা শক্ত করেই ধরল। হাতের আঙ্গুল গুলো নিজের হাতের আঙ্গুলে চেপে ধরে অপর হাতে আচমকা ওর অনামিকা আঙ্গুলের রিংটা খুলে নিয়ে ছুড়ে মারল ছাদের বাইরে। অতঃপর সে একই আঙ্গুলেই নিজের পকেট থেকে বের করে একটা রিং পরাতে পরাতে বলল,
“ ইয়েস, তুই আমায় রিজেক্ট করতে পারবিই না অহি। হয় আমি, নয় সে আমিই। তোর জন্য কেবল আমিই অপশন। নাও চ্যুজ ইউর আন্সার। ”
#চলবে….