#সারা_জাহান
পর্ব,,,৫১
মৌমো তিতলী
❤️
ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো তুলি। চারপাশটা কেমন ঝাপসা লাগলো, মাথাটাও ভীষণ ভারী। ভালোভাবে চোখ মেলতেই মাথার পাশে বসা সায়ানের মুখটা স্পষ্ট হলো।
কেমন অস্থির আর ভেজা চোখ সায়ানের। যেন কেঁদেছে ছেলেটা।
তুলি কাঁপা গলায় ডাকলো
:-সায়ান…!
সায়ান ভড়কে উঠে দ্রুত চোখ মুছে নিলো। ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বললো,,,,
:-তুলা এইতো আমি! উঠে গেছো! তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,
:-How are you feel now?
তুলি দুর্বল হাসলো।
:-হুমম ঠিক আছি! মাথাটা একটু ভার লাগছে! কিন্তু কি হয়েছিলো আমার সায়ান? তুমি,,, তুমি বা কখন আসলে। আমি তো লাগেজ গোছাচ্ছিলাম। তারপর…তারপর কিছু মনে পড়ছে না কেনো? আমি এখানে এভাবে শুয়ে….আমার কি হয়েছিলো সায়ান?
সায়ান মেয়েটার হাতটা শক্ত করে নিজের মুঠোয় নিয়ে কাঁপা গলায় বললো,,,,
:-শশশ তুলা…এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? কিছু হয়নি তোমার! রিল্যাক্স! দুর্বলতায় সেন্সলেস হয়েছিলে তুমি!!
সায়ানের কথায় কিছুটা শান্ত হলো তুলি। সায়ান তুলির কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো,,,
:-জানো, একটু আগে তোমাকে সেন্সলেস অবস্থায় দেখে আমার দুনিয়া থমকে গেছিলো। ভাবছিলাম তোমাকে হারিয়ে ফেলবো বোধহয়। ভয় পেয়ে গেছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে আজ সবচেয়ে বড় সুখবর দিলো।
তুলি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো,,,
:-কি সুখবর?
সায়ান আরও কাছে সরে এলো। চোখে জল চিকচিক করছে। গলা ভিজে উঠলো সায়ানের। তুলিকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে নরম সুরে বললো,,,
:-তুমি মা হতে চলেছো, তুলা… আর আমি বাবা। We are going to be parents মাই লাভ!!
কথাটা শুনেই তুলির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। ঠোঁট কাঁপছে, বুকের ভেতর কেমন একটা অদ্ভুত কম্পন।
:-কি বলছো তুমি, সায়ান? আমি… আমি সত্যিই?
সায়ান আলতো করে তুলির কপালে চুমু দিয়ে বললো,,,
:-হ্যাঁ গো আমার তুলতুলা। তোর ভেতরে আমাদের দু’জনের ভালোবাসার চিহ্ন একটু একটু করে বেড়ে উঠছে।
তুলি চোখের জল আটকাতে পারলো না। সায়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। ভেজা চোখে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,
:-সায়ান… আমার ভয় করছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।আমি কি পারবো? আমি কি ভালো মা হতে পারবো বলো না?
সায়ান মেয়েটার হাত আরও শক্ত করে ধরে নরম স্বরে বললো,,,
:-তুমি যদি ভালো মা না হও, তাহলে পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারবে না, তুলা। তুমি আমার পৃথিবীকে যেভাবে আগলে রাখো, ঠিক সেভাবেই আমাদের সন্তানকে আগলে রাখবে আমি জানি। আমি তো আছিই, তোমাকে আর এক মুহূর্তও একা থাকতে দেবো না জান।
তুলি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো, চোখ বুজে মাথা রাখলো সায়ানের বুকে।
:-সায়ান!!
:-হুম!
:-… প্রতিশ্রুতি দাও, তুমি আমাদের ছেড়ে কখনো দূরে যাবে না।
সায়ান চোখ বন্ধ করে ওকে জড়িয়ে ধরলো,,
:-প্রতিশ্রুতি দিলাম, তুলা। তুমি আর আমাদের সন্তান তোমরাই আমার দুনিয়া।
দু’জন নিস্তব্ধ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বুকের ভেতর শুধু ধুকপুক করছে নতুন এক ভালোবাসার ঢেউ। সায়ান মাথা নামিয়ে তুলির পেটে আলতো হাত রাখলো, ফিসফিস করে বললো,,,
:-হ্যালো ছোট্ট সোনা, তুমি শুনতে পাচ্ছো,আমি তোমার বাবা… অপেক্ষা করছি তোমার, আমরা দুজনেই তোমার জন্য অস্থির হয়ে আছি। তাড়াতাড়ি চলে এসো আমাদের কাছে কেমন!!!
তুলির চোখ ভিজে গেলো, ঠোঁটে একরাশ মিষ্টি হাসি ফুটলো।
************
সারা রুমে এসে তৈমুর কে দেখলো আলমারি থেকে কাপড় বের করছে, শাওয়ার নেয়া বড্ড প্রয়োজন। পরনের সফেদ রঙা শার্টের কলারে দু ফোঁটা রক্ত লেগে শুকিয়ে গেছে। ভাগ্যিস কেউ খেয়াল করেনি। সারা দেখলে হাজারটা প্রশ্ন করবে, তৈমুর তাড়াতাড়ি করে শার্ট টা খুলে ফেললো। তখনই পেছন থেকে সারার ডাক শুনে থমকে গেলো তৈমুর,,,
:-জাহান ভাইয়া শুনছেন!!!
তৈমুর শার্ট টা হাতের মুঠোয় পেঁচিয়ে নিলো। সারার দিকে না তাকিয়েই সাড়া দিলো,,,
:-হুমমম!
সারা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব করে মিনমিন করে বললো,,,
:-একটা কথা ছিলো!!
:-বলে ফেল! ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো তৈমুর। শার্ট টা ভিজিয়ে রেখে আবারো বেরিয়ে এলো। সারা ঘুরঘুর করছে পিছু পিছু। অন্যদিকে তার খেয়াল নেই। তৈমুরের গায়ে সেন্ডো গেঞ্জি। সারা পেছন থেকে গেঞ্জি টেনে ধরে বললো,,,
:-আপনি তো আমার কথা শুনছেন না!! শুনুন না আমি কি বলছি!!
তৈমুর এবার স্থির হয়ে দাঁড়ালো। সারার দিকে তাকিয়ে বললো,,
:- এভাবে ঘুরঘুর করছিস কেনো? মতলব টা কি তোর!
সারা ঠোঁট উল্টে বিড়বিড় করে বললো,,,
:- তুলি আপুর তো বাবু হবে!
সারার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো তৈমুর।
:-হুমম তো!
:-বলছি,আমরা কবে……
সারার কথার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে চোখ বড়বড় করে তাকালো তৈমুর। শরীরে উষ্ণ স্রোত বয়ে গেলো। কি বলছে তার বোকা টা!! তৈমুর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সারার দিকে গম্ভীর মুখে তাকালো। এক আঙ্গুল দ্বারা সারার কপালে টোকা মেরে বললো,,,
:-এসব আলতু ফালতু চিন্তা কোত্থেকে আসে তোর মাথায়?
সারা নাক ফুলিয়ে বলে,,
:-এটা আলতু ফালতু কথা?
:-আলতু ফালতু নয় তো কি! বয়স কতো তোর? তুই নিজেই তো গেন্দা বাচ্চা! নাক টিপলে এখনো দুধ বের হবে, বেরো হরিপদ!!
তৈমুরের কথায় রেগে গেলো সারা! এগিয়ে এসে বললো,,
:-এই! এই আপনি আবার আমাকে গেন্দা বাচ্চা বললেন! আমার বয়স ১৯। আমার তো বিয়েও হয়ে গেছে!!আমি মোটেও গেন্দা বাচ্চা নই।
তৈমুর ঠোঁট কামড়ে তাকালো সারার দিকে। হাতের ইশারায় সারা কে কাছে ডেকে নিলো। সারার কাঁধ চেপে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো।
আয়নার দিকে ইশারা করে বললো,,,
:-তুই নিজেই তোর সাইজ টা একবার দেখ! তোর মনে হয় একটা পূর্নাঙ্গ বাচ্চা তোর ওই পেটে ধরবে! পারবি তুই প্রেগন্যান্সির কমপ্লিকেশন সহ্য করতে? অবুঝের মতো জেদ করিস কেনো?
তৈমুর সারাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু খেয়ে নরম সুরে বলে,,,
:-সময় মতো সব হবে জান! কিন্তু এই মুহূর্তে তোর পাগলামী যে সায় দিতে গিয়ে তোকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে পারবো না আমি।
সারা ঠোঁট চেপে দুষ্টু হাসি দিয়ে মিনমিন করে বলে,,
:-হ্যাঁ এখন আমাকে সাইজ দেখাচ্ছেন, অন্য সময় তো আপনার আমার এই সাইজের কথা মনে থাকে না।
তৈমুর তাজ্জব বনে গেলো সারার কথায়। কি ফাজিল হচ্ছে মেয়েটা দিন দিন। কার সাথে মিশছে আজকাল তার বোকা বউটা!! এসব কথা কোত্থেকে শিখেছে!
তৈমুর চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বললো,,
:-কি বললি?
সারা তো এক্কে দৌড়ে রুমের বাইরে। তৈমুর সারাকে এভাবে পালাতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে। হাসতে হাসতেই ওয়াশ রুমে ঢুকে যায় তৈমুর। শাওয়ার নিতে হবে এই মুহূর্তে।
তৈমুর ওয়াশ রুমে ঢুকে যেতেই রুমে আসলো সারা। কোত্থাও যায়নি সে। দরজার ওপাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো । বিছানা, বালিশ সব ঝেড়ে ঝুড়ে নতুন করে গোছালো। এবার একটু পড়তে বসবে বলে ভাবলো সারা। বিছানা থেকে নেমে পড়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতেই তৈমুর শাওয়ার শেষে সাদা তোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো,
হঠাৎ সামনে তাকিয়েই দুই হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেলে চিৎকার করে উঠলো সারা,,,
:-আল্লাহ! একি আপনি…এভাবে বেরিয়ে আসলেন কেনো??
তার গলায় কিশোরীর মতো লজ্জার সুর।
তৈমুর ভেবেছিলো সারা রুমে নেই। হঠাৎ চিল্লাতে চমকে উঠলো। সারা কে দু’হাতে চোখ ঢেকে রাখতে দেখে দুষ্টু হাসিতে ম্লান ঘরটা আলোকিত করে বললো,,
:-কেনো? এমন ভাব ধরছিস যেনো এর আগে আমাকে নুড অবস্থায় দেখিসনি। এর থেকেও তো বেশি……
সারার গাল দুটো লাল টুকটুকে হয়ে উঠলো। চোখের পাতা কাঁপতে লাগলো লাজে। তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠে,,,
:-থাক! আর গভীরে যেতে হবে না। নির্লজ্জ পুরুষ!
তৈমুর এগিয়ে আসে ধীরে ধীরে। গভীর কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে,,
:-আচ্ছা আমি নির্লজ্জ, তাই না? একটু আগে একজন কি যেন বলছিলো ? বেবি….. মেবি!!
তা নির্লজ্জ না হলে, লজ্জাহীনদের মতো কাজটা না করলে বেবি আসবে কোথা থেকে শুনি? আকাশ থেকে টুপ করে পড়বে বুঝি!!
কান দুটো ঝাঝা করে উঠলো সারার। তৈমুর কে এগিয়ে আসতে দেখে সারা হাত নাড়িয়ে পেছাতে থাকে।
:-না না…একদম না…মজা করে বলেছি, সত্যি!
কিন্তু পেছাতে পেছাতে পেছনের দেয়ালের সাথে একসময় পিঠ ঠেকে যায় সারার। সারা চোখ বড় করে তাকায়। তৈমুর দু’পাশে হাত রেখে তাকে বন্দি করে ফেলে।
তৈমুরের দৃষ্টিতে নেশার ঢেউ, ঠোঁটে একটুকরো অগ্নিগর্ভ মাধুর্য। মুখটা সারার মুখের কাছে আনে,,,
:-তুই জানিস সারা, তোর সামনে দাঁড়ালে আমার ভেতরে কেমন জোয়ার ওঠে? তোর শরীরের গন্ধ, তোর চাহনি ,তোর ঠোঁট, চোখ, মুখ,নিশ্বাস, সবকিছুই আমাকে পাগল করে দেয়…!!
সারা শ্বাসকষ্টের মতো করে নিশ্বাস নেয়। বুকের ওঠানামা দ্রুত চলছে। তৈমুর সারার কাঁপতে থাকা ঠোঁটে তর্জনীর স্পর্শ রাখতেই সে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
শুরু হয় এক নিস্তব্ধ রাতের মোহনীয় সুর।
তৈমুরের ঠোঁট ছুঁয়ে যায় সারার কপাল, চোখের পাতা, গাল, তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে হাস্কি স্বরে বলে,,,,
:-তুই শুধু আমার সারা জাহান। I want you in an exaggerated way. I want you in a deep and deep way!!
ঢোঁক গেলে সারা।
তৈমুরের হাতের স্পর্শ ছুঁয়ে যায় সারার কোমল বাহু, আঙুলের ডগা নামতে থাকে তার পিঠ বেয়ে। সারা শরীর শিহরে ওঠে, ঠোঁট থেকে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে আসে।
সারা মুখ ঢাকতে চায়, কিন্তু তৈমুরের কণ্ঠ তাকে থামিয়ে দেয়,,
:-উহুম, Don’t close your eyes. চোখ খুলে থাক। তাকা আমার দিকে।
সারা নিভু নিভু চোখে তাকালো তৈমুরের দিকে। তৈমুরের নেশায় বুঁদ হয়ে আসা দৃষ্টি তখন সারার অনুভূতির প্রকপে তিরতির করে কাঁপতে থাকা অধরে।
সারা লজ্জায় তৈমুরের গলায় মুখ লুকোতে চাইলে তৈমুর আসক্তির তাড়নায় তাকে আরো আঁকড়ে নেয় নিজের সাথে। অধরের সাথে আদরের মিলন ঘটায় তৈমুর। নরম স্পর্শ,অথচ অস্থির হয়ে ওঠে তৈমুর। স্নেহ,আদর আর আবেগ মিশে এক সময় তারা হারিয়ে যায় একে অপরের বুকে।
রুমের আলো নিভে আসে, নিস্তব্ধতায় কেবল নিশ্বাসের শব্দ, স্পর্শের ঝড়। রাত যেন থমকে দাঁড়ায় তাদের ভালোবাসার নেশার কাছে।
পরের দিন সকালে।
সূর্যের প্রথম আলোর কণা জানলার পর্দা ভেদ করে রুমের ভেতরে ঢোকে। হালকা বাতাসে পর্দা নড়ছে। বাইরে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
সারা চোখ মেলে তাকায়। সে তখনও লেপ্টে আছে ঘুমন্ত তৈমুরের উন্মুক্ত বক্ষে। দেখে বুক ভরে ওঠে সারার। অপলকে তাকিয়ে থাকে স্বামী নামক প্রণয় পুরুষের ঘুমন্ত মুখের দিকে। তৈমুরের ভ্রু, চোখের পাতা, নিঃশ্বাসে ছন্দ,সবকিছু যেন কবিতার মতো লাগে তার কাছে।
ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে সারার আঙুল ছুঁয়ে দেয় তৈমুরের কপাল। রাতের মুহূর্তের কথা মনে পড়তেই গালে গোলাপী আভা ছড়িয়ে পড়লো সারার। ফিসফিস করে বললো,,
:-নির্লজ্জ পুরুষ….. আমি কিন্তু আপনাকে ভালোবাসি!! পৃথিবীর চেয়ে বেশি ভালোবাসি।
হাসি মুখে বিছানা থেকে নেমে সারা ওয়াশরুমে চলে যায়। স্নিগ্ধ শাওয়ারের পানিতে ভিজে ওঠে তার চুল,দেহ। শাওয়ারের জলে মিশে যায় গায়ে মেখে থাকা তৈমুরের দেহের সুবাস।
অন্যদিকে তৈমুর তখনও ঘুমে বিভোর। কিছুক্ষণ পর যখন আধো ঘুমে চোখ খোলে, বিছানার পাশে সারাকে না পেয়ে আধো ঘুমে ডাক দেয়,,
:-“সারা…”
তার কণ্ঠে এখনও রাতের ক্লান্তি আর ভালোবাসার ভার।
সাড়া না পেয়ে ঘুম ছুটে যায় তৈমুরের। বিছানায় আধশোয়া হয়ে উঠে বসে। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ ভেসে আসছে। তৈমুর বুঝতে পারে সারা ওয়াশ রুমে আছে। বিছানা থেকে নেমে প্যান্ট পরে নেয় তৈমুর। বিছানা টা ঝেড়ে ফের সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলে।
তখনই পেছন থেকে ওয়াশ রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সারা। পেছনে তাকাতেই সদ্য গোসল করে আসা সারার স্নিগ্ধ ভেজা রুপ দেখে প্রশান্তির ছোঁয়া লেপ্টে যায় তৈমুরের চোখে। তৈমুর কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় থমকে যায় সারা। তৈমুর এগিয়ে এসে সারার হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে বিছানায় বসে। সারার হাত ধরে টেনে নিজের উরুর উপর বসিয়ে চুল মুছতে থাকে। সারা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে উষ্ণ যত্ন টুকু?
চুল মোছা হয়ে গেলে তৈমুর সারাকে নিজের সাথে জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে,,,
:-Feeling pain, Jaan?
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সারা। তৈমুর পাশের ছোট্ট টেবিলের ওপর থেকে দুটো ট্যাবলেট নিয়ে সারার হাতে ধরিয়ে দিলো। সারা বিচলিত হয়ে কিছু বলতে নিতেই
তৈমুর গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,,
:-Not more words!! চুপচাপ গিলে ফেল!
মুখটা ভোঁতা করে মেডিসিন দুটো গিলে ফেললো সারা। তৈমুর সারার মুখের সামনে থেকে চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে আদুরে গলায় বললো,,,
:-that’s like a my girl 🥰
************
শিকদার হাউজের বড় ডাইনিং টেবিলে সকালের নাস্তার আয়োজন। গরম পরোটা, সবজি, ডিম ভাজি, চায়ের সুবাসে ভরপুর ডাইনিং প্লেস।
রিনা শিকদার নিজ হাতে টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছেন সবটা।
তুলি একটু ক্লান্ত। তবে হাসি মুখে চেয়ারে বসে আছে। তুলির চোখেমুখে মাতৃত্বের এক অদ্ভুত আলো।
সায়ান বারবার তুলির দিকে তাকিয়ে যেন প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছে।
নাস্তার মাঝেই সাইফ সিকদার খুশিতে চনমনে গলায় বললেন,,,
:- আজ বিকেলে আমি আর আলিফ অফিস থেকে ফেরার পথে মিষ্টির নিয়ে যাবো। এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ানো হবে, আল্লাহর রহমতে বাড়িতে নতুন প্রাণ আসছে। এই খুশিটা তো ভাগাভাগি করতেই হবে। কি বলিস আলিফ!
আলিফ সিকদার মাথা নেড়ে যোগ করলেন,,
:- শুধু এতিমখানায় নয় ভাইজান, আশেপাশের মসজিদের ইমাম আর মাদ্রাসার হাফেজ ছেলেদেরও দাওয়াত দেয়া যাক।
তৈমুর গ্লাসে চুমুক দিয়ে শান্ত স্বরে বললো,,
:- “চমৎকার ভাবনা বাবা।
হাসপাতালের দিক থেকেও কিছু একটা করার জন্য ভাবছিলো সায়ান। সে ক্ষেত্রে কিছু দরিদ্র রোগীর সার্জারির খরচ এই উপলক্ষ মওকুফ করা যেতে পারে।
তৈমুরের কথায় সায়ানের মুখ উজ্জ্বল হয়। বুকটা ভরে ওঠে তৈমুরের জন্য। তৈমুরের দিকে তাকালে সায়ানের মনে একটা কথায় আসে,,
“The best friend in the world”
রিনা শিকদার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে মমতামাখা গলায় বললেন,,
:- তুমি ওদের জন্য যেটাই করবে সেটাই বেস্ট হবে আব্বা, তোমার কাজের মধ্যে যেনো দোয়া থাকে, গরীবদের পাশে দাঁড়ালে আল্লাহ খুশি থাকে।
সারা চুপচাপ তুলির পাশে বসে আছে। ওর চোখেমুখেও প্রচন্ড খুশির ছাপ। তুলির হাত ধরে ফিসফিস করে বলে,,,
:- দেখেছো তুলি আপু!! তোমার পুঁচকুর জন্য সবাই কত খুশি!”
তুলি মিষ্টি হেসে সারার নাক টেনে দিলো!
সায়ান হেসে তুলির দিকে তাকিয়ে আলতো গলায় বললো,,,
:- “তুমি ঠিকই বলেছো ছোট্ট ভাবি!! আমার তুলা এখন তারকা হয়ে গেছে। পুরো ফ্যামিলির সেন্টার অব অ্যাট্রাকশন।”
তুলি চোখ রাঙিয়ে দিলেও লাজুক হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটে।
এরমধ্যেই ছোট্ট তন্ময়কে সীমা শিকদার কোলে নিয়ে টেবিলে এসে বসলো। বাচ্চাটা হাসতে হাসতে হাত নাড়ছে সারার দিকে, অদ্ভুতভাবে তন্ময় সারার কাছে খুবই খুশি আর শান্ত থাকে। তন্ময়ের মুখে করা আধো আধো শব্দ,হাসি সবাইকে যেন আনন্দে ভাসায়।
সারা কাছে গিয়ে কোলে নিলো তন্ময়কে।
তৈমুর সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা নাড়লো। তার প্রিয় বউটার কোলে যেতে পারলেই যেনো বাচ্চাটা সবচেয়ে বেশি খুশি!! বিড়বিড় করে তৈমুর,,,
:-আমার বোকা বউয়ের দুষ্টু দেবর! এখনই ভাবির কোলে চড়ে এতো খুশি!! বড় হলে কি হবে আল্লাহই জানেন!!
খাওয়া দাওয়া শেষে সাইফ সিকদার তৈমুরের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
:- জাহান! তুমি আর সায়ান এখন হাসপাতালে যাও, আমি আর আলিফ আজ বিকেলেই মিষ্টি বিতরণের কাজ শুরু করবো। তোমরা কিন্তু হসপিটাল থেকে অফিসেই এসো একবারে”
তৈমুর মাথা নাড়লো,,
:- “ঠিক আছে বাবা।
এরপর তৈমুর আর সায়ান রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো। বেরোবে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
সারা তন্ময় কে কোলে করেই সদর দরজা পর্যন্ত এসে তৈমুরের কে উদ্দেশ্য করে বললো,,
:- “সাবধানে যাবেন, ঠিক আছে?”
তৈমুর তার হাতের ওপর নিজের হাত রেখে মৃদু স্বরে বললো,,
:- “তোকে ছেড়ে আমি কোথাও যাই না জান…
তন্ময় কে সারার কোল থেকে নামিয়ে নিজের কোলে তুলে নিলো তৈমুর। তন্ময়ের ফোলা ফোলা গালে চুমু দিয়ে বললো,,,
:-আমার বউয়ের থেকে দূরে থাকো দুষ্টু বাচ্চা!! ভাবির কল ঘ্যাষাঘেষি করতে নেই এতো!
সারা লজ্জায় নিচে তাকালো, সায়ান তো হেসে কুটিকুটি।
তৈমুর আর সায়ান হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো।
************
সিকদার হাউস থেকে বেরিয়ে আসলো দু’জন। ড্রাইভিং সিটে বসলো সায়ান। তৈমুর পাশেই। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিল সায়ান। গাড়ি চলতে শুরু করল হসপিটাল থেকে উল্টো রাস্তায়।
তৈমুরের হাতে একটা কালো রঙের ফাইল। এই ফাইলেই আছে এরশাদ হামিদের কালো কারন আমার সকল তথ্য প্রমাণ। যেগুলো সেদিন সৃষ্টি তাকে দিয়েছিলো।
তৈমুর জানে,,এগুলো প্রকাশ পেলে শুধু এরশাদ নয়, পুরো দেশের হালচাল শুরু হয়ে যাবে। পরিস্থিতি গরম হলেই শিকার গুহা ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। নিজেকে বাঁচাতে পালাতে চাইবে ! আর এটাই হবে তার জীবনের চরম ভুল সিদ্ধান্ত! শিকার এবার ঠিক ফাঁদে পড়বে।
গাড়ি থামে ঢাকার এক নামকরা প্রেস ক্লাবের সামনে। কয়েকজন নামকরা সাংবাদিক ওদের অপেক্ষায় বসে। তৈমুর ঢুকতেই চারদিকে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
তৈমুর জাহান শিকদার কে খুব ভালো করে চেনে তারা। তৈমুরের লাইফ স্টাইল লাইম লাইটে থাকে সব সময়। তাদেরই প্রেসক্লাব থেকে তৈমুর জাহান শিকদারের নামে বড় বড় ম্যাগাজিন প্রকাশ হয়। এই তৈমুর জাহান সিকদার স্বয়ং যখন ফোন করে জানালো তার কাছে ব্রেকিং নিউজ আছে, সবাই কিছুটা শকড্ হয়েছিলো। তারা তৈমুর জাহান শিকদারের জন্যই উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছিলো এতক্ষণ।
তৈমুর টেবিলের ওপর ফাইলটা রাখলো, ঠাণ্ডা অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বললো,,
:- এখানে আছে বাংলাদেশের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার মতো তথ্য। আপনাদের কাছে দিচ্ছি। তবে শর্ত একটাই।এগুলো যেন আজই জাতির সামনে আসে।
একজন সাংবাদিক ফাইলটা খুলে পড়ে দেখলো। তৈমুর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,,
:- ড. তৈমুর জাহান, আপনি জানেন তো, এই তথ্য বেরোলে বিশাল ঝড় উঠবে?
তৈমুরের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো।
:- That’s what I want!!”ঝড় উঠতেই হবে। নইলে এদেশের মানুষ কখনো সত্য জানবে না।”
ফাইলের কপি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিয়ে ওরা বেরিয়ে আসে। সায়ান গাড়িতে বসেই ফিসফিস করে বললো—
:- “আজ থেকে এরশাদ হামিদের বিনাশ শুরু।”
দুপুরের মাঝেই মিডিয়ার ঝড়!!!
দু’ঘন্টার মধ্যেই সব চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ,,,
*প্রাক্তন সেনা অফিসার এরশাদ হামিদের অন্ধকার ব্যবসার প্রমাণ ফাঁস!
*অঙ্গ পাচার ও খুনের সাথে জড়িত এরশাদ হামিদ!!পুলিশের অভিযান শুরু।”
টিভি স্ক্রিনে পরপর ফুটে উঠতে থাকে হাসপাতালের গোপন রিপোর্ট,নামফলক ঢাকা অ্যাপার্টমেন্টের ভিডিও,মায়ার মৃত্যুর রিপোর্ট,টাকা লেনদেনের প্রমাণ।
মুহুর্তেই বাংলাদেশে একেবারে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো।
মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুললো,,
“এমন একজন জঘন্য মানুষ এতদিন হিরোর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলো?”
“ তাকে অবশ্যই গ্রেফতার করতে হবে!” এরশাদ হামিদ হায় হায়!!
পুলিশ প্রশাসন হন্যে হয়ে খুঁজছে এরশাদ হামিদ কে।
#চলবে
#সারা_জাহান
পর্ব ,,,,,৫২
মৌমো তিতলী
❤️
শহরের এক সাধারণ আবাসিক এলাকার একটা ফ্ল্যাটে নিজেকে আত্মগোপন করে রেখেছিলেন এরশাদ হামিদ। ভেবেছিলেন এখান থেকেই সুযোগ বুঝে তৈমুর শিকদারের থেকে প্রতিশোধ নেবেন তিনি।
কিন্তু আজ হঠাৎ তার বিরুদ্ধে দেশের নামকরা প্রেস ক্লাবের ভয়ঙ্কর নিউজগুলো টিভিতে দেখে একেবারে পাগলপ্রায় হয়ে উঠলেন এরশাদ হামিদ।
চোখ বড় বড় করে টিভির দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। ক্ষুব্ধ জনতার মারমুখী আন্দোলন দেখে, হাত পা কাঁপতে লাগলো। মনে মনে ভয় পেয়ে গেলো সে। এই মুহূর্তে দেশজুড়ে জনগণ যেভাবে তাকে ঘৃণা করছে। তাতে কোনভাবে যদি একবার সে জনগনের সামনে পড়ে যায়,তাহলে বেঁচে থাকার চান্স জিরো% । এরশাদ হামিদ অচিরেই সিদ্ধান্ত নিলেন যেভাবেই হোক তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
এদিকে তিক্ষ্ণ মস্তিষ্কের চালাক তৈমুর জাহান শিকদার ঠিক জানতো, এরশাদ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই দেশের সমস্ত সীমান্তে, বিমানবন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্টে তার লোকদের কে ছড়িয়ে দিলো শিকারির জালের মতো। তৈমুর চোখে রেখেছে প্রতিটি সম্ভাব্য পালানোর পথে।
রাতের দিকে এরশাদ ছদ্মবেশে বিমানবন্দরে প্রবেশ করলেন। তাকে হঠাৎ করে দেখলে কেউ চিনতেই পারবে না। বড় বড় দাড়ি-মোচ আর লম্বা জুব্বা পরনে যে কেউ দেখলে কোন মুফতি মাওলানা বলে ভুল করবেন। এরশাদ হামিদ আগে থেকেই নিজের নামে বিভিন্ন ছদ্মবেশে আলাদা আলাদা পরিচয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে রেখেছিলেন। তারই একটা আজ তিনি কাজে লাগিয়েছেন।
চেকপোস্টের কাছে আসতেই সাধারণ প্রটোকল অনুযায়ী চেক করতে শুরু করলো। একজন সিকিউরিটি গার্ডের লোক সন্দেহভাজন চোখে তাকালো এরশাদ হামিদের দিকে। নাম জিজ্ঞেস করলে, সে অন্য নাম বলে । কিন্তু লোকটির কেনো যেনো সন্দেহ হয়। এরশাদ কে দেখে বড় কোন মাওলানা বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এমন কোন মাওলানা কে সে কোনদিন দেখেনি। এখন তো সব হুজুরদের বক্তৃতা আর ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় হয় হামেশাই দেখা যায়। কিন্তু এনার হাই প্রোফাইলের পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও তাকে চিনতে না পারাটা যথেষ্ট সন্দেহজনক মনে হলো। কিন্তু লোকটা কিছু বললো না, শুধু মনোযোগ দিয়ে দেখে নিলো লোকটা কোন ফ্লাইটের যাত্রী হতে চলেছে।
এরশাদ হামিদ এয়ার পোর্টের ভেতরে ঢুকতেই দ্রুত ছুটলো রানওয়ের দিকে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলো,সে যে বিমানের টিকিট কেটেছে, তা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লেট টেকঅফ করবে।
এটা শোনামাত্রই মনে মনে সে ফেটে পড়লো এরশাদ হামিদ। মনে মনে একটা জঘন্য গালিও ছুড়লেন তিনি।, তবে ধূর্ত এরশাদ দ্রুত চিন্তা করতে লাগলেন,তাকে যৈ করেই হোক,যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছাড়তে হবে।
এরশাদ দ্রুত জুব্বার পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল লাগালেন নিজের একজন বিশ্বস্ত লোক শাহিনকে। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের প্রাইভেট হেলিকপ্টার বা জেটের পাইলট ক্যাপ্টেন শাহিনুর। এরশাদ হামিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। শাহিন ফোন রিসিভ করলে এরশাদ বললো,,,
:- শাহিন তুমি এই মুহূর্তে হেলিকপ্টার নিয়ে এয়ার পোর্টে চলে এসো। যতদ্রুত সম্ভব আমাকে বিদেশে পৌঁছে দিতে হবে।”
এরশাদ হামিদের কল পেয়ে চমকে উঠলো শাহিন। তড়িঘড়ি করে বললো,,,
:-স্যার আপনি কোথায়? আপনার নামে টিভিতে কি সব নিউজ দেখাচ্ছে! স্যার বাইরে থাকা আপনার জন্য নিরাপদ নয়।
:-আহঃ এতো কথা তোমাকে বলতে বলেছি? গাধা একটা! যেটা বলছি সেটা করো? I want a helicopter fast.!!
এরশাদ হামিদের ধমক শুনে আমতা আমতা করতে লাগলো শাহিন। মিনমিন করে বললো,,,
:-স্যার আমি কিভাবে,স্যার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার! এভাবে গেলে আমার চাকরি থাকবে না স্যার। আপনি তো এখন আমাদের চিফ জেনারেলও নন। আর আজ নিউজে যা দেখাচ্ছে এরপর তো আপনাকে সাহায্য করলে আমাকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করা হবে। আমি কিভাবে….
:-চাকরির চিন্তা করতে হবে না তোমাকে। আমাকে শুধু সাহায্য করো,তোমার মুখের চাওয়া অর্থ তুমি পেয়ে যাবে। যত টাকা চাও সব পাবে সব।
টাকার কথা বলতেই শাহিনের চোখ চকচক করে উঠলো। দোনামোনা করে এতো গুলো টাকার লোভে রাজি হলো শাহিন।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর হেলিকপ্টার এসে রানওয়েতে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়ালো। রানওয়েতে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করতেই এরশাদ হামিদ ক্রূড় হাসলো। মনে মনে বললো,,
:-এবার! এবার আমি দেখবো তৈমুর জাহান শিকদার কি করে আমার নাগাল পায়। এতো প্ল্যানিং করেও শেষে তাকে শুধু হাত কামড়াতে হবে।”
হাসি থেমে না এরশাদের। সে চপারে উঠে বসলো, চোখে তার এক অদ্ভুত জ্যোতি খেলা করছে। যেনো নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরে গর্বিত তিনি। চোখে এক ধরণের উন্মাদ উদ্দীপনা।
চপারের প্রপেলারের ঘূর্ণন শুরু হলো, ধীরে ধীরে চপারটা উড়ে গেলো আকাশের দিকে।
_______________
হেলিকপ্টার টা উড়াল দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এরশাদ হামিদ কিছুটা অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। পরিবেশ টা কেমন অস্বস্তিদায়ক মনে হলো। প্রথমে মনে হলো হেলিকপ্টার টা সামান্য দুলে উঠলো। ঠিক ভূমিকম্পের মতো। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে এরশাদের চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে যেতে লাগলো। যেনো আলো আর ছায়া মিলেমিশে ধূসর এক আস্তরণ ভেসে উঠছে। হেলিকপ্টারের দমকা বাতাস তার দম বন্ধ করে দিচ্ছিলো, মুহুর্তেই এরশাদ হামিদের কপাল ভিজে গেলো ঘামে।
মনের মাঝে এক অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো এরশাদের। কোনমতে জড়ানো গলায় শাহীনকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,,
:-শাহিন,, কি হচ্ছে… এসব? এমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে কেন আমার?
শাহিন বাঁকা হেসে পেছনে তাকিয়ে এরশাদ হামিদের উদ্দেশ্যে বললো,,,
:-সরি, স্যার! সামান্য টাকার লোভে আমি দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারিনি।
শাহিনের কথাটা কানে পৌঁছাতেই এরশাদ রেগে মেগে কিছু বলতে চাইলেন, কিন্তু তার আগ মুহূর্তেই অচেতন হয়ে পড়লো তার সমস্ত শরীর। যেন গভীর কোন ঘুমে তলিয়ে গেলেন তিনি।
ঠিক তখনই ককপিটে ক্যাপ্টেন শাহিনের পাশেই কো- পাইলট এর সিটে দৃশ্যেমান হলো একটা ছায়া “জেনারেল আলভী”।
*ফ্ল্যাশব্যাক*
আধঘন্টা আগে এরশাদের ফোন পাওয়ার পরপরই ক্যাপ্টেন শাহিন আলভীকে সব কিছু জানিয়ে দিলো। শাহীনই সেই ছেলে, যে আলভীকে ক্যাম্পে এরশাদ হামিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ খুজতে সাহায্য করেছিলো ।
ক্যাপ্টেন শাহীন সেনাবাহিনীর একজন সৎ সৈনিক।
আলভী জানতো, তৈমুরের পরিকল্পনা কখনো ভুল হয় না। তার নির্দেশেই, শাহীন আগে থেকেই হেলিকপ্টারের ভেতরে চেতনানাশক গ্যাস সংযোগ করে রেখেছিলো।
শাহিন ও আলভীর মুখে ছোট্ট এক ধরনের গ্যাসমাস্ক লাগানো । এরশাদ হামিদ পলায়নের উত্তেজনায় এতটাই ব্যস্ত ছিলো,এতটাই আত্মমগ্ন ছিলো যে বুঝতেই পারেনি নিজের অজান্তেই সে তৈমুর জাহান শিকদারের হাতে পা দিয়ে ফেলেছে।
*বর্তমান*
হেলিকপ্টার ধীরে ধীরে শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে, নীরবতায় ঘেরা জঙ্গলের দিকে এগিয়ে গেলো।
গভীর জঙ্গলের গাছপালা গুলো হেলিকপ্টারের প্রোপেলারের বাতাসের সঙ্গে ঝড় তুলে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
তৈমুর জাহান শিকদারের পরিকল্পিত মৃত্যু ফাঁদ *নেমেসিস সেল* নামক জাহান্নাম অপেক্ষায় আছে এরশাদ হামিদের। অচেতন হয়ে পড়ে থাকা এরশাদ হামিদ জানতেই পারলো না, অজান্তেই তার জন্য মৃত্যুর আগমন ঘনিয়ে আনছে তৈমুর জাহান শিকদার।
************
এরশাদ হামিদ পিটপিট করে চোখ খুলতেই নিজেকে একটা বদ্ধ ঘরে আবিষ্কার করে। চারপাশ আবছায়া অন্ধকার,গা-ছমছম করা পরিবেশ চোখে পড়ে। সে চেষ্টা করে উঠে বসার, কিন্তু পুরো ঘরটা যেন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ছোট। ধাতব দেয়ালে লোহার তৈরি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র সাজিয়ে রাখা। এক কোণে অনেকগুলো পাইপলাইন এবং ঝাঁঝরা এক ধরনের চেইন-লক।
ঘরের মধ্যে হালকা লাইটে চকচক করছে রুক্ষ লোহার যন্ত্রপাতি গুলো। ডান পাশের দেয়ালে ঝুলছে ধাতব হুক, চেইন। মাঝেমধ্যে আগুনের মতো লাল আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। মেঝেতে কিছু অচেনা দাগ অনেকটা রক্তের মতো। গা-ছমছম করে উঠলো এরশাদের। এটা কোথায় এসে পড়েছে সে? পেটের ভেতর কেমন মুচড়ে উঠে এক প্রকার বায়বীয় আতঙ্ক সৃষ্টি করলো।
মাথা চেপে ধরে মনে করার চেষ্টা করলো কি হয়েছিলো তার সাথে।
হঠাৎ ঘরের এক কোণ থেকে একটি কণ্ঠ বেজে উঠলো,
:-We meet again!!
এরশাদ হামিদ দম বন্ধ করে ধীরে ধীরে পেছনের দিকে ঘুরে তাকালো। মুহুর্তেই অসচেতনতা কেটে গেলো এরশাদের। চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে সে।
এরশাদ হামিদের ঠিক পেছনেই ফুল কালো গেটআপে বড় একটা লোহার বলের ওপর পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে তৈমুর জাহান শিকদার। তার চোখে ঠাণ্ডা এক ধারালো চাহনি। কণ্ঠে একধরনের শাণিত তেজ যা সামনে উপস্থিতি এরশাদ হামিদের সমস্ত শরীর কাঁপিয়ে তুললো।
এরশাদ বুঝতে পারলো এখানে তার কোনো পালানোর পথ নেই। চারপাশের যন্ত্রপাতি, ঠান্ডা আলো ছায়া,আর অজানা ভয়ঙ্কর ধ্বনির মিলনে তার হৃদয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এরশাদ বুঝতে পারলো সে জমের হাতে আটকা পড়েছে। একেবারে তৈমুর জাহান শিকদারের নিখুঁত পরিকল্পনার হাতে।
এরশাদ হামিদকে আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাঁকা হাসলো তৈমুর।
:-তো মিস্টার এরশাদ! আবারও আমাদের দেখা হয়েই গেলো
এরশাদ হামিদ সন্তর্পণে ঢোক গিলে বললেন,,,
:-আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছো? দেখো আমাকে যেতে দাও! কতো টাকা চায় তোমার বলো!
টাকার প্রসঙ্গ উঠতেই বিরক্তিতে “চ” করে করে উঠলো তৈমুর। নাক সিঁটকে বললো,,
:- তোরা দুই ভাই সারাটা জীবন শুধু টাকাই চিনেছিস তাই না? You know what? তোর ভাইও এই একই ভুল করেছিলো, তার পরিণামও সে ভোগ করেছে।
জাহাঙ্গীরের কথা বলতেই এরশাদ হামিদ হড়বড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো,,,
:-আমার ভাই কোথায়? কি করেছে তার সাথে??
তৈমুর তাচ্ছিল্য হেসে বললো,,,
:-তোর ভাইকে ছাড়, তুই তোর চিন্তা কর!
এরশাদ কপাল কুঁচকে তাকালেন,,
:-আমাকে এখানে কেন এনেছো? কি করবে আমার সাথে?
দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসলো তৈমুর। আড়ামোড়া ভেঙে বললো,,,
:-আসলে কি বলতো, আমার কাছে তুই যতটা অপরাধ করেছিস, তার থেকেও বেশি অপরাধী আরেকজনের কাছে। আর তোর শাস্তিটা সেই দিবে। Just Wait and See!!
এরশাদ হামিদ কেঁপে উঠলেন তৈমুরের কথায়। তার চোখে এখনো আতঙ্কের ছায়া।
তৈমুর আয়েশ করে বসে তাকালো এরশাদের দিকে।
তৈমুর ধীরস্বরে বললো,,
:- তুই ভেবেছিস তুই একমাত্র ধূর্ত, কিন্তু তুই এটা জানিস না তোর থেকেও হাজার গুনে ধূর্ত এই তৈমুর জাহান শিকদার। তৈমুর দুহাত মেলে স্বগর্বে বললো,,,
:-I am king of this Nemesis!! তোকে শুধু দেখানোর জন্য নয়, শেখানোর জন্য এনেছি এখানে। যারা শুধু টাকা ও ক্ষমতার পিছনে ছুটে, তাদের ভবিষ্যৎ একটাই এই নেমেসিস সেল নামক জাহান্নাম।
এরশাদের কপালে ভাঁজ পড়লো। উত্তেজিত কণ্ঠে বললো,,,
:- আমাকে মেরে কি পাবে তৈমুর জাহান শিকদার? আমি তোমাকে বেহিসাব টাকা দিতে পারি, নাম দিতে পারি, জস,খ্যাতি সব দিতে পারি। শুধু আমাকে একবার… একবার আমাকে মুক্তি দাও!
এরশাদ হামিদের কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তৈমুর,,,
:- মুক্তি? হা হা হা! মুক্তি মানে কি? তোকে তোর নিজের ভুলের consequences ভোগ করতে হবে।
তারপর তৈমুর হঠাৎ এক ধাতব হুকের দিকে হাত বাড়িয়ে সেটি হাতে তুলে নিলো। হুকের অগ্রভাগে লালাভ বর্ণে ভয়ঙ্করভাবে ঝলসে উঠলো।
কি করতে চাইছে তৈমুর! এরশাদের বুক ধড়ফড় করে উঠলো।
তৈমুরের চোখে ধারালো চাহনি, ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো এরশাদের দিকে। কণ্ঠে শাণিত তেজ ঢেলে বললো,,,
:- আজ থেকে শুরু হবে নেমেসিস সেলের আইন। যা তুই কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারবি না। এটাই হবে তোর শাস্তি।
তৈমুর গরম লোহার হুকটা এক ঝটকায় গেঁথে দিলো এরশাদ হামিদের পিঠে।
এরশাদ হামিদ চিৎকার করে উঠলো। যন্ত্রণায় তার ঠোঁট কেঁপে উঠলো। শব্দ বের হলো না মুখ দিয়ে। সে বুঝতে পারলো, এবার আর তার মুক্তির পথ নেই।
হঠাৎ দরজার ওপার থেকে ভারী পদক্ষেপে ঘরে প্রবেশ করলো কেউ।
এরশাদ হামিদ নিভু নিভু চোখে তাকালো সেদিকে। তাকাতেই চোখ কপালে উঠে গেলো তার। গলা চিরে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,,,
:-আলভী!
সেনাবাহিনীর উর্দি পরা আলভী ধীরে ধীরে কক্ষে প্রবেশ করলো। চোখে শীতল ধারালো চাহনি, মুখে এক অদ্ভুত রহস্যময় হাসি।
এরশাদ তন্দ্রালু কণ্ঠে বললো,,,
:- আলভী,আমি তোমার শ্বশুর হই। আমাকে বাঁচাও। তোমরা আমার সাথে এরকম করতে পারো না!”
কিন্তু আলভী যেনো তার কোন কথা কানেই তুললো না। এরশাদ হামিদের কানের কাছে ঝুঁকে গিয়ে মুখে হাসি ছড়িয়ে, ধীরস্বরে বলল,,,
:- ভুলে গেলেন শ্বশুর মশাই? আমার সঙ্গে আপনি কি কি করেছিলেন? আমি কিন্তু ভুলিনি… সবটা অক্ষরে অক্ষরে মনে রেখেছি। আমার ভালোবাসা, আমার মায়াকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন… তাকে প্রাণে মেরে দিয়েছিলেন, অপমানজনক মৃত্যু দিয়েছিলেন তাকে। আট বছরের জমিয়ে রাখা ক্রোধে ফুঁসে উঠে দাঁতে দাঁত চেপে বললো আলভী,,
:-তোকে এতো সহজে ছেড়ে দেবো ভাবছিস?”
এরশাদ শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, বুঝতে পারছে না আলভী আসলে কী করতে চলেছে।
আলভী ধীরে ধীরে পকেট থেকে একটি ছোট ক্যামেরা বের করলো, সেটি প্রজেক্টরের সাথে সংযোগ করলো। মুখে বাঁকা হাসি রেখে বলল,,,
:- এনজয় করুন, মিস্টার এরশাদ!
তারপর তৈমুর আর আলভী ধীরে ধীরে কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো,
এরশাদের চোখের সামনে প্রজেক্টরের আলোতে ভয়ঙ্কর দৃশ্য ফুটে উঠলো। তাতে যা দেখলো, তা এরশাদ হামিদ কল্পনাও করতে পারেননি। বিষ্ময়,আর আত্মগ্লানিতে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি।
ভিডিওতে দেখা গেলো সাবিকা কে। এরশাদ হামিদের আদরের কন্যা কে কয়েকজন নিষ্ঠুর নিগ্রো যুবক মিলে ছিঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে। সাবিকা চিৎকার করছে, অনুনয়-বিনয় করছে, বাঁচার জন্য হাত ছুড়ছে, কিন্তু কেউ তাতে কান দিচ্ছে না। প্রত্যেক মুহূর্তে তার কণ্ঠস্বরে হৃদয় ছিড়ে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
একজন পিতা যতোই পাপিষ্ঠ হোক না কেনো, চোখের সামনে নিজের আদরের সন্তানের এমন করুন পরিনতি সহ্য করতে পারে না। এরশাদ হামিদের বুক কেঁপে ওঠে, চোখে অশ্রুর ঢল নামে। হৃদয় যেনো ছিঁড়ে যেতে চাইছে। মনে পড়ে যায় ঠিক এমনভাবেই আট বছর আগে মায়া নামের মেয়েটার জীবন শেষ করেছিলো তারা, অমানবিকভাবে হত্যা করেছিলো তাকে।
প্রচণ্ড ক্রোধে তার মস্তিষ্ক বিস্ফোরণের মতো শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা হয় এরশাদ হামিদের। সে ছটফট করতে চায়, চিৎকার করতে চায়, কিন্তু কিছুই করার মতো শক্তি পাচ্ছে না। ভিডিওর ভয়ঙ্কর দৃশ্য তার চোখের সামনে স্থির হয়ে রয়।
******
এদিকে দরজার বাইরে তৈমুর, আলভী, সায়ান, রাফি, আবির সবাই উপস্থিত।
তারা জানে ভিডিওটি মিথ্যা। আসলে এটা এডিটিং করা একটা ফেক ভিডিও। তৈমুর শুধু এরশাদকে মানসিকভাবে ভেঙে দিতে, তার জোরালো শাস্তি নিশ্চিত করতেই ভিডিও টা তৈরি করিয়েছে। নয়তো একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন তারা সত্যিকার অর্থে কখনোই নষ্ট হতে দিতে পারে না।
এরশাদ হামিদের মন পুরোপুরি আতঙ্কে ভেঙে পড়ে। তার চোখে অন্ধকার,ভয়, মনে এক বিশাল পাপ আর অপরাধের বোঝা। সে এখন একা! একদম একা।
তৈমুর রাফি আর আবির কে পরবর্তী নির্দেশনা দিতেই তারা গিয়ে এরশাদ হামিদের হাতে পা বেঁধে নিয়ে আসে। তৈমুর এরশাদের চোখে একটা কালো কাপড় বেঁধে দেয়। তারপর রাফি আর আবির তাকে নিয়ে গিয়ে অজানা কোথাও রেখে হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। চোখের কাপড়টা খোলে না। এরশাদ চাইলেই সেটা খুলতে পারবে। এরশাদ কে সেখানে রেখে সবদিক থেকে লক করে বেরিয়ে আসে।
বদ্ধ ঘরে এরশাদ হামিদের শরীর গুলিয়ে উঠলো এক অসহ্যকর দূর্গন্ধে। দ্রুত সে চোখের কাপড়টা টেনে খুলে ফেললো। চোখ মেলে তাকাতেই এক জলজ্যান্ত নরকের দর্শন করলো সে। তার সামনেই দেয়ালে একটা লোহার শিকের সাথে ঝুলে আছে জাহাঙ্গীর কবিরের মৃত দেহ। বুকটা গলা থেকে নাভী পর্যন্ত ফেড়ে ফেলা হয়েছে। ভেতর থেকে পঁচা রক্ত, মাংস গলে গলে পড়ছে মেঝেতে। বিষাক্তকর দুর্গন্ধে ভরে আছে পুরো ঘরটা। একেবারেই অল্প জায়গাযুক্ত ঘরে কোন জানালা নেই। বাতাস ঢোকার রাস্তা নেই। ঘাড়ের উপর ফোঁটায় ফোঁটায় দুর্গন্ধযুক্ত তরল বেয়ে পড়তেই পেছনে তাকালো এরশাদ। তাকাতেই দেখতে পেলো ঠিক তার মাথার উপরে মুকুলের লাশও একই ভাবে ঝুলছে দেয়ালের সাথে। আতঙ্কে হৃদপিন্ডটা বেরিয়ে আসার উপক্রম হয় এরশাদের। পিছিয়ে সরে আসতে নিলে টের পায় ঘরের মেঝেতেও অসংখ্য মরা, পঁচা লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আতঙ্কে, উত্তেজনায়, দুর্গন্ধ আর বিষাক্ত গ্যাসের চাপে ঘরের ভেতরের অক্সিজেন ফুরিয়ে এল কয়েক মিনিটের মধ্যেই। চিৎকার করে উঠলো এরশাদ। বুকে জোরে জোরে চাপড়াতে লাগলেন তিনি। আস্তে আস্তে নিভে এলো তার ছটফটানি,তার জীবন প্রদীপ।
************
তৈমুর সায়ান, আলভী, রাফি আর আবির তাদের কাজ শেষ করে বেরিয়ে এলো ঝলমলে সোনালী আলোর দুনিয়ায়। আপাতত এখানের কাজ শেষ। তারা তৃপ্ত,এক অপুর্ব আলোর জ্যোতি ছড়িয়ে আছে তাদের চোখেমুখে।
হয়তো আবারো কখনো কোনদিন তারা ফিরবে এই নেমেসিসে। ভয়ঙ্কর কোন অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে!!
#চলবে