সারা জাহান পর্ব-৫৩ এবং শেষ পর্ব

0
17

#সারা_জাহান
অন্তিম পর্ব
মৌমো তিতলী
❤️

তিন বছর পর,,,,,

শিকদার হাউস যেনো আজ আর কোনো সাধারণ বাড়ি নয়, একেবারে রাজপ্রাসাদ।
ডুপ্লেক্স বাড়িটার প্রতিটি বারান্দা থেকে ঝুলছে রঙিন আলোর ঝাড়। সবুজ, সোনালি আর সাদা আলোয় গোটা অঙ্গন ঝলমল করছে। প্রবেশদ্বারে ঝাড়বাতির মতো নেমে এসেছে হাজার রঙের আলো, যেন আকাশ থেকে একঝাঁক তারা নেমে এসেছে।

প্রবেশপথ থেকে ড্রইংরুম পর্যন্ত লাল গালিচা বিছানো। দুই পাশে সারি সারি ফুলের টানেল। গোলাপ, রজনীগন্ধা, অর্কিড, লিলির ঝালর। প্রতিটি ফুলের সাথে মিলিয়ে রঙিন পর্দা আর ঝুলন্ত ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি।

অঙ্গনের মাঝে সাজানো হয়েছে বিশাল এক রাজকীয় মঞ্চ। সোনালি আর সাদার মিশ্রনে তৈরি সেই মঞ্চে রয়েছে নকশা করা আসবাব। নরম ভেলভেটের সোফা, সোনালী নকশা খোদাই করা। মঞ্চের পেছনে ফুলের প্লাকার্ডে লাইটিংয়ের সাহায্যে লেখা,,,,

শুভ বিবাহ
✨ “তালহা এহমাদ ❤️ রেশমী শিকদার” ✨

আঙিনার একপাশে বসানো হয়েছে বিরাট ডাইনিং এরিয়া। কাঁচের ঝকঝকে টেবিল, রূপালী থালা-বাসন আর রাজকীয় সব মেনু। বিরিয়ানি, কাবাব, সিফুড, ফাস্টফুড,মিষ্টি সবই থরে থরে সাজানো। খাবারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ইউনিফর্ম পরা ক্যাটারিংয়ের স্টাফরা, একেবারে ফাইভ স্টার হোটেলের মতো আয়োজন।

উপরে ছাদজুড়ে ফেয়ারি লাইটস আর ঝলমলে ঝাড়বাতি। হালকা বাতাসে পর্দাগুলো দুলছে, তাতে লাইট পড়ে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে মিল্কি ওয়ে নেমে এসেছে। শিশুরা এদিক-ওদিক ছুটছে, বেলুন হাতে দৌড়ঝাঁপ করছে।

মেয়েদের পরনে রঙ বেরঙের শাড়ির ঝিলিক, পুরুষদের পরনে শেরওয়ানি আর পাঞ্জাবির চাকচিক্য।সব মিলিয়ে চোখ ধাঁধানো আয়োজন। এ যেনো এক রাজকীয় মিলনমেলা।
যেনো এটা শুধু একটা বিয়ে নয়, একেবারে শিকদার সাম্রাজ্যের জৌলুশের বাস্তব উদাহরণ। গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে গেস্ট দের কে খুবই আন্তরিকতার সাথে ওয়েল কাম করছেন সাইফ শিকদার আর আলিফ শিকদার। ভ্যালির প্রিমিয়াম গেস্ট দের কে এটেন্ড করছে স্বয়ং তৈমুর জাহান শিকদার,আর শিকদার হাউসের পিচ্চি শিকদার চার বছরের তন্ময় জাহান শিকদার। বড় ভাইয়ের সাথে সে আজ বোনের বিয়ের দায়িত্ব পালন করছে।

রেশমীর ঘরটায় আজ লোকজনের ভীড়। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মেয়েরা রেশমীর ঘরেই উপস্থিত। রেশমীকে আজ একেবারে রানীর মতো লাগছে। মেরুন ভেলভেট লেহেঙ্গাতে সোনালি জরির কাজ, স্টোন গুলো ঝলমল করছে। মাথায় ঝুলছে ডিজাইনার নেটের মেরুন কালারের দোপাট্টার ঘোমটা, তার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে মুখটা। লাজে রাঙা, চোখে ঘন কাজল, ঠোঁটে গাঢ় খয়েরী লিপস্টিক। কপালে টিকলি, গলায় ভারী সেট, হাতে চুড়ি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো আসলেই শিকদার সাম্রাজ্যের রাজকন্যা।

রেশমীর পাশে বসে আছে সারা। সে আজ কোন ভারি শাড়ি পরেনি। নরম জর্জেটের পাতলা বেবি পিঙ্ক শাড়ি জড়িয়েছে গায়ে। শাড়িটার ভাঁজে আলো পড়ে কখনো মুক্তোর মতো চিকচিক করছে সাদা রঙের ছোট ছোট পাথরগুলো, কখনো আবার ফ্যানের হাওয়ায় উড়ছে আঁচল। গলায় ডায়মন্ডের সিম্পল জুয়েলারি, কানে ছোট ঝুমকা, হাতে চিকন কয়েকটা চুড়ি।
ছয় মাসের প্রেগন্যান্সির কারণে পেটটা একটু উঁচু হয়েছে, কিন্তু তাতে সারার সৌন্দর্য যেন আরও পরিপূর্ণ হয়েছে । তার চেহারায় এক মায়াময় দীপ্তি, মাতৃত্বের আভা যেন তার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে ঝরে পড়ছে। আগের থেকে কিছুটা মুটিয়ে গেছে মেয়েটা।

তুলির পরনে আজ সাধারণ এক খয়েরি রঙের সুতি শাড়ি। খুব হালকা মেকআপ, কোন ভারি জুয়েলারি পরেনি সে। কারণ তার দু বছরের মেয়ে তুসা। তুসাকে কোলে নিতে ভারি সাজসজ্জায় কষ্ট হবে। চুলে বিনুনি,কানে ছোট দুল, ঠোঁটে প্রফুল্ল হাসি। তার বোনের বিয়ে বলে কথা!!

পার্লারের মেয়েরা রেশমী কে বধুবেশে সাজাতে ব্যস্ত,ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো সায়ান। তার কোলে ছোট্ট তুসা, বাবার কোলে বসে সামনের ছোট ছোট দাঁত দেখিয়ে হাসতে হাসতে হাত নাড়ছে। সায়ান রুমে ঢুকেই তুলিকে বললো,,,

:-তুলা!! তুসা কে নাও। বাইরে হাজারটা কাজ, মেয়েকে কোলে নিয়ে সেগুলো করা সম্ভব হচ্ছে না।

তুলি এগিয়ে এসে সায়ানের কোল থেকে আদর করে তুসাকে কোলে নিলো। গালে চুমু খেয়ে বললো,,,

:-আমার সোনা মা! পাপা কে জ্বালিয়েছো বুঝি?

তুসা মায়ের কথায় খিলখিল করে হাসলো।

সায়ান মেয়ের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বেরিয়ে যাওয়ার আগে চোখে পড়লো রেশমীর দিকে। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে সায়ান মাথা নেড়ে মুচকি হেসে বললো,,,

:- বাহ রেশমী!! কি অসাধারণ লাগছে তোমাকে দেখতে।

রেশমী লজ্জা পেয়ে হাসলো। সায়ানের দিকে তাকিয়ে। নরম স্বরে বললো,,,

:-ধন্যবাদ ভাইয়া।

সায়ান মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো । সায়ান যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তৈমুর এসে দাঁড়ালো দরজায়। চোখ প্রথমেই সারার উপর গিয়ে থামলো।

:-সারা, একটু রুমে আয় তো!

তুলি পাশ থেকে হাসতে হাসতে ঠাট্টা করে বললো,,

:-যা যা, ভাইয়া ডাকছে।

সারা হেসে সবার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে রুমে চলে গেলো। রুমে ঢুকতেই তৈমুর দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এসে নরম গলায় বললো,,

:-এই অবস্থায় এতো হাঁটাহাঁটি করিস না জান। এক জায়গায় বসে থাকিস। নয়তো কষ্ট হবে তো জান!!

বলতে বলতেই সারার কপালে চুমু এঁকে দিলো তৈমুর।

সারা ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমানী গলায় বললো,,,

:-দেখুন না, আমি কেমন মোটা হয়ে গেছি। একটুও ভালো লাগছে না আমাকে দেখতে।

তৈমুর হেসে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বললো,,,

:-কে বলেছে আমার জানকে দেখতে ভালো লাগছে না? আমার কাছে তো তোকে একেবারে গলুমলু রসগোল্লার মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলি।”

তৈমুরের এমন লাগামহীন কথা শুনে সারা লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেললো। গাল দুটো টকটকে লাল হয়ে উঠলো।

তৈমুর তখন তাকে বুকের কাছে টেনে নিলো। নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে সারার কোমরে কিছু একটা পরিয়ে দিলো। তারপর বললো,,,

:-এবার তোকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। আমার প্রাণ, তোকে যে আমার সন্তান কে পেটে নিয়ে এতোটা মোহনীয় লাগতে পারে, আমি ভাবতেই পারিনি।”

সারা অবাক হয়ে কোমরের দিকে তাকালো। উঁচু পেটের সাথে লেপ্টে আছে ঝলমলে চিকন সোনালি রঙের কোমরের বিছা। বিছাটার কারণে যেনো আরও আকর্ষণীয় লাগছে পেটটা দেখতে। ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো সারার

তৈমুর হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসলো সারার সামনে। দু’হাত দিয়ে সারার পেটটা জড়িয়ে ধরে চুমু দিলো পেটে। হাল্কা স্বরে বললো,,

:-দেখো আমার ছোট্ট সোনা!! তুমি বাবা মা যেই হও না কেনো,,তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে চলে আসো। আমি আর তোমার মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি তো!!তুমি আসলে আমরা তোমাকে ভালোবাসার জালে বেঁধে রাখবো সোনা!

বলেই আবারো সারার পেটে নরম চুমু এঁকে দিলো। সারা শিউরে উঠলো। লজ্জায়,ভালোবাসায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।

**********

শিকদার হাউসের আঙিনায় তখন আলো, সানাইয়ের সুর আর মানুষের কোলাহলে মুখরিত। কিছুক্ষণের মধ্যেই সারি সারি কয়েকটা গাড়ি এসে থামলো শিকদার হাউসের প্রবেশদ্বারে। চারদিক থেকে শোনা গেলো!
বর এসেছে,,,বর এসেছে!!

সবাই একসাথে দৃষ্টি ফেরালো প্রবেশদ্বারের দিকে। লাল গালিচার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে বরপক্ষ। সোনালি আতশবাজি ছুঁড়ে উঠলো আকাশে, ঝরে পড়লো তারার মতো ঝিলিক। একঝাঁক তরুনীদের ছড়িয়ে দেয়া ফুলের পাপড়ির মধ্যে দিয়ে শেষ হলো বর,তালহা এহমাদের রাজকীয় এন্ট্রি। মুহুর্তেই সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলো তালহা।
সে আজ মেরুন-সোনালি শেরওয়ানিতে সেজেছে। একেবারে রাজকুমারের মতো। মাথায় রাজসিক পাগড়ি, কপালে মুকুটের মতো শোভা পাচ্ছে কালগি। গলায় মুক্তো আর সোনালি মালা, হাতে সোনালী রঙের ঘড়ি। হাতে রাজকীয় কারুকার্য খচিত তলোয়ার। তার গম্ভীর চেহারায় লাজুক হাসি খেলে গেলো। আজকের রাতটা যে তার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ আর আকাঙ্ক্ষিত রাত।

তালহার পাশে এসে দাঁড়ালো আলভী। তার পরনে কালো শেরওয়ানি আর সোনালি কাজ করা চাদর। চোখেমুখে একজন সেনার দৃঢ়তা, তবে সহোদরের বিয়ের আনন্দে ঠোঁটে একটুখানি স্নিগ্ধ হাসিও লেগে আছে।
তার ঠিক পাশে এসে দাঁড়ালো সৃষ্টি। গাঢ় নীল শাড়িতে অপরূপা লাগছে তাকে। গোল্ডেন জুয়েলারিতে ঝলমল করছে তার সৌন্দর্য। হাতে সোনালি রঙের পার্স।

মহিদ এসে দাঁড়ালো চাচুর পাশে। দশ বছরের মহিদ আজ কিশোর উদ্যমে ভরপুর। পরনে অফ-হোয়াইট শেরওয়ানি, চোখেমুখে দুষ্টু হাসি। অতিথিদের দিকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে সে। সে টিভিতে দেখেছে এভাবেই হাত নাড়িয়ে অভিনন্দন জানাই স্পেশাল গেস্টরা!!

সবশেষে গাড়ি থেকে নামলো সাবিকা। তার পাশেই স্যুট বুট পরা হাস্যোজ্জ্বল মুখে এসে দাঁড়ালো রাফি। বছর খানেক আগেই তাদের বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে তারা বেশ সুখেই সংসার করছে।

লাল গালিচার ওপর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বরপক্ষ। দুই পাশে দাঁড়ানো অতিথিরা গোলাপের পাপড়ি ছুঁড়ে দিচ্ছে। আকাশে ফানুস উড়ছে, আতশবাজির ঝলকে চারপাশ ঝলমল করছে। মনে হচ্ছে যেনো সত্যিই কোনো রাজার বিয়ের শোভাযাত্রা।

তুলির কোলের তুসা খুশিতে হাততালি দিচ্ছে, সায়ান হাসিমুখে স্ত্রী,কন্যার দিকে তাকিয়ে।
সারা আঙিনার একপাশে দাঁড়িয়ে তালহার রাজকীয় প্রবেশ দেখছে। তার চোখে আনন্দ চিকচিক করছে। আর তৈমুর চুপচাপ সারাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। গর্বিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে তার ছোট বোনের হবু শশুর বাড়ির পরিবারের দিকে।

************

বিয়ের কার্য শেষ হতে হতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। বিয়ে শেষে সবাইকে খেজুর, মিষ্টি বিতরণ করা হলো। তন্ময় সোফার একপাশে বসে প্লেটে মিষ্টি নিয়ে খাচ্ছিলো, এমন সময় সায়ান এসে দাঁড়ালো পাশে। ঠোঁটে তাঁর দুষ্টু হাসি। ভাবলো ছোট শালা বাবু কে একটু চ্যাতানো যাক!
সায়ান পেছন থেকে তন্ময়ের প্লেট থেকে মিষ্টি তুলে নিয়ে মুখে পুরে দিলো,তা দেখে চেঁচিয়ে উঠলো তন্ময়,,,

:-এই ছোঁচা সায়ান দাদু!! আমার মিষ্টি খেলে কেনো?

সায়ান তন্ময়ের কপালে টোকা মেরে বললো,,,

:-মিচকে শালা! আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ড্যাসিং ছেলেকে তুই দাদু বলিস কোন আক্কেলে? ছোটা পটাকা ছোটা পটাকার মতো থাকবি বুঝলি!!

তন্ময় পারে না রাগের চোটে কেঁদে দেয়! তুলি এসে তন্ময়ের প্লেটে আবারও মিষ্টি তুলে দিতে সায়ান কে দিতে বললো,,

:-এই তুমি আমার ভাইটাকে জ্বালাচ্ছো কেনো?

বোনের সাপোর্ট পেয়ে দাঁত বের করে সায়ান কে ভেংচি কাটলো তন্ময়।

রিনা শিকদারের মনের আশা পূরণ করতে একধাপ এগিয়ে আছে তন্ময় জাহান শিকদার। তার চঞ্চলতা আর দুষ্টুমিতে শিকদার হাউস নাজেহাল। একমাত্র তৈমুরের কাছেই ছেলেটা কিছুটা শান্ত। দাদাভাই বলতে একেবারে অজ্ঞান তন্ময়। তৈমুর ভীষণ লাই দেয় তন্ময়কে। আদরের ছোট ভাই বলে কথা। এই জন্যই তন্ময়ের কাছে সবথেকে বেশি কম্ফর্টজোন হলো তৈমুর।

রেশমী -তালহার বিবাহ কার্য শেষে বিদায়ের পালা এলো। সিমা শিকদার কেঁদেকেটে অস্থির। একমাত্র মেয়েকে শশুর বাড়ি পাঠাতে তার বুকটা হাহাকার করছে। রিনা শিকদার সামলায় ছোট জা কে। আলিফ সিকদার তালহার হাতে মেয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। রেশমীও বাবা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলেছে।

প্রেয়সীর কান্নায় ব্যাথিত হৃদয়ে তাকিয়ে আছে তালহা। আলভী তাড়া দিলে বরযাত্রীরা একে একে গাড়িতে উঠে বসে‌। তালহা গাড়িতে উঠে বসতেই রেশমী কে বসানো হলো তার পাশে। একে একে মহিদ, সৃষ্টি ,সাবিকা উঠে বসলো। ড্রাইভিং সিটে আলভী আর তার পাশে রাফি। সকলে উঠে বসতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো আলভী। আস্তে আস্তে শিকদার হাউস থেকে বেরিয়ে এগিয়ে চললো সামনের দিকে।

**এহমাদ ভিলা**

রাত তখন অনেক গভীর। শহরের কোলাহল থেমে গেছে, চারপাশে একরাশ নীরবতা। এহমাদ ভিলায় তখন বধুবরণের তোড়জোড়। মনোয়ারা বেগম বরণডালা হাতে দরজায় দাঁড়িয়ে। নব বধূকে বরণ করে ঘরে তুললেন তিনি। বেশ রাত হওয়ায় বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। রাতের খাবার খাইয়ে যে যার মতো বিশ্রাম নিতে চলে গেলো। সৃষ্টি রেশমী কে তালহার ঘরে দিয়ে গেলো।
ঘরজুড়ে ফুলের মালা আর মোমবাতির নরম আলো। প্রতিটি কোণ যেন আজকের জন্যই সাজানো।
বাসর ঘরে ঢুকতেই রেশমীর চোখে পড়লো লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধায় সাজানো বিছানা। বিছানার চারপাশে লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে।
দেয়ালগুলোতে কিছু লাল সাদা লাভ সেইপের বেলুন লাগানো, ঘরজুড়ে সুগন্ধী মোমবাতির নরম আলো আর ফুলের সুগন্ধ একত্রে মোহময় আবহ তৈরি করছে। মিষ্টি, উষ্ণ আর কিছুটা আবেগমাখা পরিবেশ। লাল গোলাপের মাঝে সাদা রজনীগন্ধা যেনো তাদের সম্পর্কের পবিত্রতা আর কোমলতা প্রকাশ করছে।

রেশমী বসে আছে বিছানার একপাশে। মেরুন লেহেঙ্গার ঝলমলে সাজ, হাতে চুড়ির টুংটাং, আঙুলে মেহেদির গাঢ় নকশা সব মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নময় কনে। ঘোমটার আড়ালে মুখে লাজুক হাসি। অজানা কারণে বুক ধড়ফড় করছে রেশমীর।

দরজা খুলে ভেতরে এলো তালহা। আজকের রাতটা তালহার স্বপ্ন। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে ধীর পদক্ষেপে বিছানার কাছে এগিয়ে গেলো সে।

তালহার চোখ আটকে গেলো বধুবেশে ঘোমটা টেনে বসে থাকা রেশমীর ওপর।

ধীরে ধীরে ঘোমটা সরিয়ে রেশমীর মুখটা দেখলো সে। রেশমীর লালচে গালের উষ্ণতা আর নিচু চোখের লাজুক দৃষ্টি তালহার হৃদয় কাঁপিয়ে দিলো।
বিড়বিড় করলো তালহা,,,

:-মাশাল্লাহ!!!

লাজে চোখ বন্ধ করে ফেললো রেশমী।

তালহা রেশমীর কাছে এসে হাত ধরে ফিসফিস করে বললো,,

:- আমার জীবনের সবথেকে বড় স্বপ্ন টা আজ পূর্ণ হলো। আমার ভালোবাসা,আমার প্রেয়সী ফাইনালি আমার ঘরে,আমার বিছানায়, আমার কাছে।

রেশমীর চোখে পানি চিকচিক করে উঠলো। তালহা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো রেশমীর হাত, কপালে দীর্ঘ কোমল চুমু এঁকে দিলো।

:-রোশি তাকাও আমার দিকে!

চোখ তুলে তালহার দিকে তাকায় রেশমী। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখলো তালহা। মিষ্টি হেসে বললো,,,

:- ভালোবাসি বউ!

রেশমীও লাজুক হেসে দিলো।

:-আমিও আপনাকে ভালোবাসি তালহা!

প্রথমবার রেশমীর মুখে নিজের নাম শুনে হৃদয়ে উষ্ণতা ছড়িয়ে গেলো তালহার। দুহাতে রেশমীর মুখটা তুলে ধরেই রেশমীর রক্তিম ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরলো তালহা। নিজেকে সামলানোর ফুরসত টুকু দিলো না রেশমী কে।
রাতটা ধীরে ধীরে গাঢ় হতে লাগলো।
এহমাদ ভিলার বাসরঘর সাক্ষী রইলো দু’জনার প্রথম স্পর্শ, প্রথম নির্ভরতা আর চিরস্থায়ী ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি। 🌹

সমাপ্ত