এই সাঁঝবাতি পর্ব-০৪

0
16

#এই_সাঁঝবাতি পর্ব: ৪

নীলক্ষেতের সারি সারি বইয়ের দোকানগুলোয় সবসময় উপচে পরা ভীড় থাকে। অপরপাশের নিউমার্কেটের দিকে তাকাতেই আবার নিঃশ্বাস খাটো হয়ে আসে। এত ভীড় ঠেলে মানুষ শপিং করে কীভাবে কে জানে!
কিছু বই কিনতে সাদিক নীলক্ষেতে এসেছেন। পরিচিত দোকান থেকে বই কিনে রাফিন প্লাজার রাস্তা ধরে বাইরে বেরিয়ে এলেন। এপাশটা তুলনামূলক ফাঁকা। শাহবাগের দিকে না গিয়ে সাইন্সল্যাব থেকে বাস ধরবেন ভেবে ভীড় ঠেলে হাঁটতে শুরু করলেন। সূর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে নামতে শুরু করেছে সন্ধ্যা। এই গোধূলিবেলায় চারপাশের ব্যস্ততার মাঝে সাদিকের চোখদুটো কিছু একটা খুঁজে চলেছে। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না তাঁকে। রাস্তার সাথের ফুটপাতে দেখা মিলল কাঙ্ক্ষিত দোকানীর।
ছোট ডালা মেলে বসেছেন ফুটপাতে। ডালায় শোভা পাচ্ছে নানান ডিজাইনের কানের দুল।

বইয়ের ব্যাগটি পায়ের কাছে রেখে সাদিক একপাশে দাঁড়িয়ে দুল দেখতে লাগলেন। একদল কিশোরীর মাঝে মাঝবয়সী সাদিককে খুবই বেমানান লাগছে। আশেপাশের মানুষজন উৎসুক চোখে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে সাদিকের দিকে। একজোড়া ঝুমকা খুঁজছিল দুজন কিশোরী। মাঝবয়সী সাদিককে দুল নাড়াচাড়া করতে দেখে নিজেদের হাসাহাসি করতে থাকল। সাদিকের সেদিকে খেয়াল নেই। তিনি আপনমনে নিজের কাজ করছেন।

বৃদ্ধ দোকানীর বোধহয় ভালো লাগল না বিষয়টি। তিনি নিজ আগ্রহে কিশোরীদের উদ্দেশ্যে বললেন,

– উনার মাইয়ার লাইগা দুল খুঁজতাছেন। যেইবারে এইপাশে আসেন মাইয়ার লাইগা কিছু না কিছু নিয়া যান।

হঠাৎ দোকানীর কথায় সাদিক মাথা তুলে তাকালেন। দেখলেন দোকানের সকলে তাঁর দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে। এই যুগে এসে মেয়ের জন্য বাবাকে কেনাকাটা করতে দেখে বোধহয় অবাক হয়েছে। সাদিক আলতো হেসে বললেন,

– মেয়েটা সাজতে পছন্দ করে। সাজগোজের কিছু একটা পেলেই খুশি হয়ে যাও।

সাদিক অনেক খুঁজে লাল রঙের পাথর বসানো একজোড়া ঝুমকা কিনলেন মাত্র পঞ্চাশ টাকায়। কিশোরী দুজন অবাক হয়ে বলল,

– ওয়াও! আপনার পছন্দ দারুণ, আংকেল। এজন্যই আপনার মেয়ে চোখ বন্ধ করে আপনার কেনাকাটার উপর ভরসা করে।

সাদিক উত্তর না দিয়ে শুধুই হাসলেন। কিশোরীদের একজন বড্ড উৎসাহ নিয়ে বলল,

– আমাকেও একজোড়া পছন্দ করে দিন। পহেলা বৈশাখে পরব।

সাদিক না করতে পারলেন না। মেয়েটি সাঁঝের বয়সী। কতো আগ্রহ নিয়ে বলল। সাদিক কি করে মানা করেন! সাঁঝের জন্য কেনা দুলজোড়া বুক পকেটে রেখে আবারও দুল খুঁজতে শুরু করলেন।

**********

মিটিং শেষে মার্কেটিং টিমের কয়েকজন জুনিয়রের সাথে বসে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে পোস্টার ডিজাইনের প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করতে হলো সানানকে। থিম চুজ করে সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে, ভিজুয়াল ম্যানেজারকে টিম লিডের দায়িত্ব সঁপে দিয়ে তবেই অফিস থেকে বেরিয়েছে। একটানা কাজ করে মেজাজ উত্তপ্ত হয়ে আছে। সানান ভেবেছিল জুস, কোল্ডড্রিংকস এর জন্য একইরকম ডিজাইন করবে। কিন্তু বাধ সাধল জাদিদ। কোল্ডড্রিংকসের জন্য তার আলাদা ডিজাইন চাই। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কোল্ডড্রিংকসের মার্কেটিং টার্গেট ফিক্সড করা হয়েছে।

ফেসবুক ব্যানার, ইন্সটাগ্রাম রিল, ইউটিউব থাম্বনেইল, ইউটিউব শটস, মোশনের কাজের জন্য বৈশাখের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। থিম কালার হিসেবে নেওয়া হয়েছে লাল রঙকে। থিম, ফন্ট স্টাইল, কালার, ইমোশন – সবকিছু নিয়ে দীর্ঘ বিফ্র দিতে হয়েছে সানানকে।

জাদিদের থেকে এপ্রুভাল পাওয়ার পর টিমের সবাইকে সেই কাজ বুঝিয়ে দিয়ে, ডেড লাইন ঠিক করে দিয়ে চলেই আসছিল সানান। জাদিদ এসে শুরু করলো নতুন তালবাহানা। প্রোমোশনাল এডের জন্য কিছু মডেল সিলেক্ট করা হয়েছে। ডিরেক্টরের সাথে কথা বলে এ সপ্তাহেই সানানের থিম অনুযায়ী এড তৈরি করে ফেলা হবে। পহেলা বৈশাখের আর বেশিদিন বাকি নেই। কাল থেকে শুটিং শুরু করতে যাচ্ছে ডিরেক্টর। এখন জাদিদ চাইছে শুটিং সেটে সানানও উপস্থিত থাকুক। নিজে দেখেশুনে কাজ করিয়ে নিক।

প্রস্তাব শুনেই মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল সানানের। বৈশাখের ক্যাম্পেইনের থিম চিন্তা করতে গিয়ে গত সপ্তাহ ঠিকঠাক ঘুমাতে পারেনি সানান। ভেবেছিল টিমকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে এক সপ্তাহ টানা ঘুমাবে। এসব নতুন নাটক কি এখন সহ্য হয়? মুখের উপরে না বলে চলে এসেছে সানান। তবুও জাদিদ থেমে থাকবে না। সানানকে কল দিয়ে বিরক্ত করে ফেলবে। ভেবেই মুখ তেতো হয়ে আসছে সানানের। তার ওপর মাথার উপর তেজি সূর্যটাও বেশ বিরক্ত করেছে।

সুর্যের দিকে একপলক তাকিয়ে সানান বিড়বিড় করল,

– এখনি কুত্তামরা গরম পড়ছে বাল। বাকি দিনগুলা চুলার আঁচে ভাজবে।

নিউমার্কেটের বিখ্যাত জ্যামে আটকে পড়ে সানানের মেজাজ আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে গেল। রাস্তার পাশে থু থু ফেলে মুখ কুঁচকে আশেপাশে তাকাতেই সাদিক শারাফাতকে দেখতে পেল। দোকানের সামনে ঝুঁকে কি যেনো করছে।

রাস্তার পাশে গাড়ির চিপার মধ্যে কোনোরকম বাইক পার্ক করে লাফিয়ে লাফিয়ে রাস্তা পার হয়ে পৌঁছে গেল সাদিকের কাছে। হাত দুটো কোমড়ে রেখে শুধাল,

– মেজ বাবা, কি করো?

সাদিক মাথা তুলে সানানকে দেখে হাসলেন। হাতের ঝুমকা জোড়া কিশোরীটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

– এটা পছন্দ হয়?

কিশোরীর পছন্দ হয়েছে। সাদিককে ধন্যবাদ জানিয়ে দোকানিকে টাকা দিয়ে সে চলে গেল। সাদিক তার বইয়ের ব্যাগটি হাতে নিয়ে বললেন,

– বই কিনতে এসেছিলাম। ফুটপাতে দোকানটা চোখে পড়ল। সাঁঝের জন্য একজোড়া ঝুমকা নিলাম। তুই কোথায় যাচ্ছিস?

– অফিস গিয়েছিলাম। এখন টিএসসি যাচ্ছি।

সাদিক কিছু না বলে পাশের দোকানে গিয়ে ওয়েফার কিনল। সেটাকে ব্যাগে রেখে বুকপকেট থেকে সাঁঝের জন্য কেনা ঝুমকা জোড়া বের করে সানানকে দেখিয়ে বললেন,

– কেমন হয়েছে? সাঁঝের পছন্দ হবে?

পছন্দ – অপছন্দ বিশেষ কিছু বুঝল না সানান। তবে সারাদিন লাল রঙ নিয়ে কাজ করার পর আবারও লাল রঙা ঝুমকা দেখে মেজাজ খারাপ হলো।

– তুমি এইসব কিনে দেও আর তোমার মেয়ে এসব পরে রংঢং করে ফেসবুকে ছবি দিয়ে বেড়ায়। সেই নিয়ে লোকজন আমাকে যেখানে সেখানে ধরে ধরে কথা শোনাচ্ছে।

সাদিকের হাস্যোজ্জ্বল মুখে হুট করে আঁধার নেমে এলো। ঝুমকা জোড়া পকেটে রেখে অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বললেন,

– সাঁঝের ফেসবুক একাউন্ট আছে?

– আছে বৈ কি! রেগুলার আপডেটও দেয়। পোস্ট, ডে কোনোটাই বাদ রাখে না। মেজ মা শুনলে পিঠে স্কেল ভাঙবে। এজন্য তোমাকে বললাম। দেরী হওয়ার আগে এখনি সামলাও। এসব ছবিটবি পোস্ট করা ভালো না। কেউ এডিট করে নেটে ছেড়ে দিলে?

আঁতকে উঠলেন সাদিক। সত্যিই তো। আজকাল মেয়েদের ছবি নিয়ে বাজে ছেলেরা নোংরাভাবে এডিট করে আবার নেটে ছেড়ে দেয়। কেউ কেউ মেয়েদের নামে ফেক আইডি খুলে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। সাঁঝ কবে এসবে জড়ালো? সাদিক দ্বিধা নিয়ে বললেন,

– ও মোবাইল পেল কোথায়? কার মোবাইল থেকে ফেসবুক ইউজ করে, কিছু জানিস?

– লোকজনের অভাব আছে নাকি ওর! জুবিয়া বান্দরটার মোবাইল আছে, তোমার কাছেও তো আছে। ওটা দিয়ে সারাদিন ছবি তুলে বেড়ায়। চাইলেই ফোন হাতে ধরায় দিবা না। এত আহ্লাদ ভালো না। মাঝেমধ্যে একটু শাসনও করতে হয়।

সাদিক চিন্তিত ভঙ্গিতে হাঁটতে লাগলেন। সানান পিছু নিয়ে বলল,

– চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।

– তুই না টিএসসি যাচ্ছিলি?

– বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যাচ্ছিলাম। জরুরি কিছু না।

***********

রাতে বাড়ির সকলে একসাথে খেতে বসেছে। সাঁঝের জমজ দুই ভাই সাভিন ও সাবিল। তাশফীনকে পেয়ে আজ সারাদিন বাড়ির বাইরে যায়নি। গায়ের সাথে লেপ্টে আছে দুটো। হলরুমের মেঝেতে শীতল পাটি বিছিয়ে সকলে খেতে বসেছে। স্বর্ণলতাকে উদ্দেশ্যে করে তাশফীন বলল,

– আম্মা তোমাকে বাড়ি ভাড়ার ব্যাপারে কিছু বলেছে খালা?

– হ্যাঁ বলেছিল। মনমতো পেলাম না। আশেপাশেই খুঁজছি। বেশিদূরে যাওয়ার দরকার নাই। আমার আশেপাশে থাক।

সাওদা বেগমের জন্য আলাদা করে রান্না হয়। নরম ভাত, নরম তরকারি ছাড়া শক্ত কিছু খেতে পারেন না তিনি। নরম ভাত মুখে পুরে তিনি জানতে চাইলেন,

– কীসের বাড়ি ভাড়া?

স্বর্ণলতা উত্তর দিলেন,

– তাশফীনের চাকরি হয়েছে। এখন থেকে ঢাকাতেই থাকবে। ওর জন্যই বাড়ি ভাড়া খুঁজতেছি। আশেপাশে থাকলে মাঝেমধ্যে রান্নাবান্না করে দিত পারব। একা ছেলেমানুষ, কোথায় কী খাবে!

– বাড়ি ভাড়ার কি দরকার? এখানেই থাকুক।

কেউ আপত্তি জানানোর আগেই তাশফীন বলল,

– এক দুইদিনের ব্যাপার না দাদী। প্রায় ছয়মাস থাকতে হবে। মর্নিং, নাইট শিফট মিলিয়ে কখন কোথায় থাকব নিজেও জানি না। এজন্য নিজের মতো করে আলাদা থাকতে চাইছি।

তাশফীনকে নিজের কাছে রাখার ব্যাপারে স্বর্ণলতাও ভেবেছিলেন। কিন্তু সেই সামর্থ্য উনার নেই। অপারগতা স্বীকার করে বললেন,

– এখানে রাখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু রাখব কোথায় আম্মা? চারটা রুমে আমরা সবাই থাকি। সাভিন-সাবিলের সাথে থাকত পারতো কিন্তু সারাদিন কাজ করে এসে বিশ্রামের জন্য যে স্পেস দরকার সেটা ওদের রুমে থাকলে তাশফিন পাবে না। তাশফিনকে পেলে ওরা ছাড়তেই চায় না। এখন দেখেন কীভাবে গায়ের সাথে ঘেঁষটে আছে।

মায়ের কথা শুনে সাভিন ও সাবিল দুজনে তাশফিনের গায়ের কাছে আরও ঘেঁষে বসল। সাওদা মুখ ভার করে বললেন,

– আমি না থাকলেই একটা রুম…

বাকিটুকু শেষ করতে দিল না তাশফিন। হাত বাড়িয়ে সাওদার হাতের উপর হাত রেখে ডাকল,

– দাদী, তুমি এভাবে কেন ভাবছ বলো তো? আমি কি দূরের কেউ? আমার সাথে অতিথির মতো আচরণ করবে না। ছেলেমেয়েরা বড় হলে ঘর ছেড়ে একলা থাকে না? ঢাকায় চাকরি না হয়ে অন্য কোনো শহরে হলে, তখন কি একা থাকতে হতো না আমাকে? ঢাকায় তোমরা আছো বলে এক্সট্রা সুবিধা নেওয়ার পক্ষপাতী আমি নই। রুম ফাঁকা থাকলেও আমি এখানে থাকতাম না।

সাওদা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নতুন উৎসাহ নিয়ে বললেন,

– কাছে যখন রাখতে চাইছ তাহলে সানানের মায়ের সাথে কথা বলে দেখো। ওদের পাঁচতলা ফাঁকা আছে। ভাড়া দিবে কিনা জিজ্ঞাসা করে দেখিও।

পুরোটা সময় সাদিক নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেন। বাড়ি ফিরে এ পর্যন্ত কারো সাথে তেমন কথাবার্তা বলেননি। সাঁঝ কয়েকবার বাবার আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে। কিন্তু সাদিকের নিরাগ্রহ দেখে আর কাছে যায়নি।
খাওয়ার পর সাদিক নিজেই সাঁঝকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠালেন। শার্টের বুকপকেট থেকে ঝুমকার প্যাকেটটি বের করে সাঁঝের হাতে দিলেন। সাঁঝ তৎক্ষণাৎ প্যাকেট থেকে ঝুমকা বের করে আনন্দে ঝুম ঝুম করে উঠল। কিশোরীসুলভ উত্তেজনায় প্রায় লাফিয়ে উঠে বলল,

– এটা আমি পহেলা বৈশাখে পরব। লাল-সাদা শাড়ির সাথে দারুণ মানাবে। উফ বাবা! তোমার চয়েজ চমৎকার।

মেয়ের হাসিতে সাদিকে মনের মেঘ অনেকখানি কেটে গেল। তবুও বাবা হিসেবে সতর্কতা অবলম্বন করা তাঁর দায়িত্ব। ওয়েফারের প্যাকেটগুলো সাঁঝের হাতে দিয়ে বললেন,

– সাভিন ও সাবিলকে দিয়ে দিস। আর একটা সায়রার জন্য তুলে রাখিস।

সাঁঝ মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে প্রস্থান প্রস্তুতি নিতেই সাদিক হাত বাড়িয়ে সাঁঝের বাম হাতটি আলতোভাবে ধরে ডাকলেন,

– সাঁঝ?

সাদিক ভেবেছিলেন মেয়েকে কড়া ভাষায় কয়েকটি কথা বলবেন। শাসন তো এভাবেই করে তাই না? কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সাদিকের কণ্ঠস্বর বরাবরের মতোই নমনীয় শোনালো। বরং নিজের কণ্ঠ আগের তুলনায় বড্ড অসহায় ঠেকল সাদিকের কানে। সাঁঝ নিজেও হতবাক হয়ে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল বাবার দিকে।
হালকা কেশে সাদিক বললেন,

– শুনলাম তুই ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিস?

প্রশ্ন শুনেই সাঁঝের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সাদিক আর মুখে স্বীকারের অপেক্ষা করলেন না। কণ্ঠে মমতা ঢেলে বললেন,

– এই বয়সে এসব ইউজ করা ভালো না মা। তার উপর তুই নাকি ফেসবুকে নিজের ছবিও দিস। কেউ যদি তোর ছবি নিয়ে কাটাছেড়া করে তাহলে কি হবে একবার ভেবেছিস? সেসব না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু এই কথাটি তোর মায়ের কানে গেলে কি হবে সেটা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছিস?

মেয়ের শুকনো মুখটি দেখে সাদিকে বেশ মায়া হলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অনুরোধ করে বললেন,

– ফেসবুকে ছবিটবি কিছু দিস না, মা। তুই আমাদের ঘরের সম্মান। এটা মাথায় রাখবি। তাছাড়া এই বয়সে ফেসবুক ইউজ করাটাও ঠিক না। আরেকটু বড় হ, তখন ইউজ করিস।

সাঁঝ এতোক্ষণ শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে ছিল। কোনোরকম মাথা দুলিয়ে সায় জানিয়ে পালিয়ে এলো বাবার সামনে থেকে। ভাগ্যিস মায়ের সামনে বাবা কিছু বলেনি। এই খবর মায়ের কানে পৌঁছে গেলে বাড়িতে আজ ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যেত। ক্রোধে অন্ধ হয়ে স্বর্ণলতা সাঁঝকে ভস্ম করে দিলেও সাঁঝ অবাক হবে না।

গ্রাম থেকে উঠে আসা নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে স্বর্ণলতা। মানসম্মান, বংশমর্যাদা নিয়ে সব সময় তটস্থ থাকেন। সবকিছুর সাথে আপোষ করতে রাজি আছেন, কিছু সম্মানে সামান্য আঁচ লাগতে দিতে রাজি নন। পাড়ার লোকে যেন কখনো আঙ্গুল তুলতে না পারেন, সে ব্যাপারে সদা সচেষ্ট থাকেন।

মায়ের ভয়ে নিজের নামে ফেসবুক একাউন্ট খুলেনি সাঁঝ। নিজের নাম বদলে ‘গোধুলিবেলা’ নামে একাউন্ট খুলেছে। তবুও বাবার কানে তার ফেসবুক একাউন্টের খবর কীভাবে পৌঁছে গেল?

চলবে…
#অক্ষরময়ী