এই সাঁঝবাতি পর্ব-০৯

0
14

#এই_সাঁঝবাতি? পর্ব: ০৯

নতুন বছর দাঁড়িয়ে আছে দুয়ারে। গ্রীষ্মের আগমন বার্তা নিয়ে মেঘমল্লার এসে সাজিয়েছে নীলাচল। সাদা মেঘের ভেলা রূপ বদলে ধূসর রঙে সাজিয়েছে নিজেকে। চোখের পলকে কৃষ্ণ কালো সজ্জা নিতেও তার বাঁধবে না।

জানালা দিয়ে তাকিয়ে ধূলো মাখা শহরের গুমরে উঠা রূপ দেখে দ্রুত হাত চালালো সাঁঝ। মেকআপের ফিনিংশটা এখনো বাকি। সেট স্প্রেটা কই রেখেছে সেটাও খুঁজে পাচ্ছে না। মায়ের থেকে লুকাতে গিয়ে কোনটাকে কোন কাপড়ের নিচে পাচার করে দেয় সে নিজেও জানে না।

সাঁঝের বিছানায় বসে মিটিমিটি হাসছেন মাধবীলতা। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখছেন সাঁঝের কাজকর্ম। ডাস্টি রোজ শেডের লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙিয়ে মাধবীলতার দিকে ফিরে চাইল সাঁঝ। বলল,

– এই কালারটা ভালো লাগছে, খালামণি?

মাধবীলতা উত্তর না দিয়ে পলকহীন চোখে চেয়ে আছেন। সাঁঝ তাড়া দিল।

– কী হলো?

– তোকে কী সুন্দর লাগছে সাঁঝ! মেকআপ করে আমূল বদলে গেলি দেখছি।

সাঁঝ লাজুক হেসে মাথা নুইয়ে পরক্ষণে মুখ গোমড়া করে বলল,

– তার মানে অন্য সময় আমাকে সুন্দর দেখায় না? তুমি বলতে চাচ্ছ, আমি সুন্দর না?

ছদ্ম অভিমানে মাধবীলতা হাসেন। চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে বিছানা ছেড়ে উঠে এসে সাঁঝের গালে হাত রেখে বলেন,

– মাশাআল্লাহ। মেয়ে আমাদের ন্যাচরাল বিউটি। মেকআপ ছাড়াও চাঁদের আলোর মতো দ্যুতি ছড়ায়। কিন্তু একটু পরিপাটি হয়ে, মেকআপ করায় রূপ আরও খুলেছে। ম্যাচিউর লাগছে বেশ।

– কী যে বলো না তুমি! যাও তো। আমার এখনো রেডি হওয়া বাকি। চুলটা বেণী করবো নাকি খোঁপা?

– একটাও না। খোলা রাখ।

– খোলা চুলে ছাদে গেলে মা বকবে।

– বকার আর কিছু বাকি নেই। যখন থেকে আমার শাড়িটা পরার বায়না ধরেছিস, তখন থেকেই স্বর্ণ বকা শুরু করেছে। বাইরে গিয়ে দেখ, এখনো বকবক করছে। ও যে কীভাবে এমন বিরক্তির স্বভাবের হলো কে জানে! আমাদের বংশের কেউ এত বকবক করে না৷

– সংসারের যাঁতাকলে পিষতে পিষতে এমন হয়ে গেছে। তাছাড়া সাজগোছ করাটা মা একদম-ই পছন্দ করে না৷ নিজেও সাজে না, আমাকেও সাজতে দেয় না৷ শখ করে একটু কাজল দিলেও বকে৷ এত বেরসিক নারী আমি দুটো দেখিনি।

– আমার বোনের গল্প আমাকেই শোনাচ্ছিস? স্বর্ণকে আমি তোর থেকে বেশি চিনি। ঝটপট রেডি হয়ে নে। শুধুমাত্র দুটো ছবি তোলার জন্য কেউ এভাবে সাজতে বসে আমি জানতাম না৷ ভেবেছিলাম কোথায় ঘুরতে যাবি তাই হয়তো আমার শাড়িটা পরতে চাচ্ছিস৷ তোদের জেনারেশনটা আস্ত পাগল। ক্লিক, ক্লিক করে দুটো ছবি তুলে, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে আপলোড দিতে পারলেই তোদের শান্তি। কী মজা পাস কে জানে! তুই আবার এসব করতে যাস না। তোর মাকে তো চিনিস। হাড়-হাড্ডি গুড়ো করে দিবে।

– নাহ। নাহ। আমার পার্সোনাল মোবাইল নেই। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইউজ করব কী করে? ছবি তুলে নিজের কাছে রাখি। মাঝেমধ্যে দেখি। মন ভালো হয়ে যায়। তোমার শাড়িটার রংটা সুন্দর। আকাশী নীল। এটা পরে বৃষ্টিতে ভেজা ছবি দারুণ আসবে। আমার নীল রঙা শাড়ি নেই বলে তোমারটা পরলাম।

– তুই এখন বৃষ্টিতে ভিজবি?

– হ্যাঁ। কেন? শাড়ি ভেজানো যাবে না?

– শাড়ির কথা কে ভাবছে? বৃষ্টি ভিজে সাজ নষ্ট করবি, তবে এক ঘন্টা ব্যয় করে সাজলি কেনো?

– বৃষ্টিবিলাস করবো বলেই সেজেছি।

– সাজ নষ্ট হবে জেনেও?

– কোন জিনিসটা আজীবন থেকে যায়? প্রত্যেককে একসময় নিঃশেষ হতে হয়। তাই বলে কি শেষ হওয়ার ভয়ে সেটাকে ব্যবহার না করে আমরা শিকেয় তুলে রাখি?

– বেশ কথা শিখেছিস, হুম? বড় হয়ে গেছিস, সাঁঝ। এজন্যই তোর মা হন্যে হয়ে পাত্র খুঁজছে।

– উফ! মায়ের কথা আর বলো না। জেদ ধরেছে, কলেজে ভর্তি হতে চাইলে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে না করলে আর পড়াশোনা করাবে না। বিয়ে করিয়ে নিয়ে গিয়ে শ্বশুরবাড়ি লোকে যদি আমাকে আর না পড়ায়?

– কেন পড়াবে না? আমরা বিয়ের আগে ছেলেপক্ষের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে তবেই না মেয়ের বিয়ে দিব। তুই এসব নিয়ে ভাবিস না। বিয়ের ব্যাপারে মেয়েদের এত কথা বলতে নেই। এসব মুরুব্বিদের ভাবতে দে৷

– তুমিও মায়ের মতো কথা বলছ।

– বলবোই। একই মায়ের মেয়ে আমরা। সেজেগুজে বসে রইলি যে, তোর বৃষ্টি কোথায়? বৃষ্টি আসার নাম নেই, উনি পেখম তুলে নাচতে শুরু করে দিয়েছে।

– আমি জানি, বৃষ্টি আসবে।

– কীভাবে?

– এমনিতেই। মন বলছে আজকে বৃষ্টি আসবে।

সাঁঝের মন সত্যি বলেছিল। বৃষ্টি এসেছে। বড় বড় ফোটায় ভিজিয়ে দিয়েছিল শহরের উত্তপ্ত বাতাস।

দাদার আমলে তৈরিকৃত পুরাতন দোতলা বাড়ির শ্যাওলা পড়া ছাদে দাঁড়িয়ে পেখম তুলে না নাচলে চঞ্চল পায়ে ছোটাছুটি নিশ্চয় করেছে।

সেই চঞ্চল প্রজাপতির পেছনে ছুটতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে তাশফীন। সাঁঝের ফটোগ্রাফারের দায়িত্ব পড়েছে তার ঘাড়ে। মোবাইল হাতে এই উচ্ছ্বসিত রমণীর আগেপিছে ছুটতে গিয়ে তাশফীনের শরীর ক্লান্ত। কিন্তু মুখে তার ছিটেফোঁটার ছাপও নেই। মন জুড়ে অদ্ভুত এক সতেজ ভাব। যেন বৃষ্টি তার প্রশস্ত বুকের সাথে সাথে ভিজিয়ে দিয়েছে ভেতরের হৃদয়টাও।

ছাদে জমে থাকা শীতল, স্বচ্ছ পানিতে লাফিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল সাঁঝ৷ বুকের ভেতর আবারও দারুণ ধাক্কা খেল তাশফীন। সরাসরি দৃষ্টিতে বিঘ্ন প্রদানকারী মোবাইলটি নামিয়ে রেখে ঘোরযুক্ত চোখে অনিমেষ তাকিয়ে রইল।

বৃষ্টির জল চোখে মুখে আছড়ে পড়তে ধ্যান ভাঙল তার। আঁজলা ভরে বৃষ্টির জল জমিয়ে তাশফীনের দিকে ছুড়েছে সাঁঝ।

– তুমিও লাফাতে চাও? এসো আমার হাত ধরে লাফাও। লাফাতে অনেক মজা।

– ওসব তোর মতো বাদরের কাজ।

– আরে এসোই না। আমি শিখিয়ে দিব। এভাবে দাঁড়িয়ে দিবে একটা লাফ।

– সাবধানে বেলা। ছাদটা পিচ্ছিল। পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবি।

– আমার অভ্যাস আছে৷

– আর কোনোভাবে ছবি তোলা বাকি আছে? না থাকলে এবার নিচে চল। অনেকক্ষণ ধরে ভিজছিস৷ ঠান্ডা লেগে যাবে।

– সব পোজে ছবি তোলা শেষ। ছবি ভালো এসেছে?

– হুম।

– আমাকে সুন্দর লাগছিল ক্যামেরায়? বৃষ্টিতে ভিজে মেকআপ নিশ্চয়ই ঘেটে গেছে।

– যায়নি। সব ঠিক আছে।

– দেখি ছবিগুলো।

– নিচে চল। ভেজা কাপড়ে পালটে তারপর দেখিস।

– একটা দেখি৷

– আচ্ছা বেশ। আয় এদিকে।

– এ বাবা! আয়নায় যতটা সুন্দর লাগছিল, এখানে ততটা লাগছে না।

– তুই বাস্তবে এর থেকে হাজারগুণ বেশি সুন্দর, বেলা। সামান্য ক্যামেরার কি সাধ্য তোর সৌন্দর্যের কপি করে!

– কিছু বললে?

– উহু। অনেক হয়েছে। এবার নিচে চল। জ্বর বাধিয়ে ছাড়বি আজকে।

°

বাসা-বাড়ি লেনের ছোট গলিটুকু পেরিয়া রাস্তা ধরে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেই রাস্তাটা দুদিকে বাঁক নিয়েছে। সেই মোড়ে পল্লবের চায়ের দোকান। বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত চায়ের দোকানটায় সে খুলে বসে শখ করে। এলাকার কত জ্ঞানী গুনী ব্যক্তি তার দোকানে এসে আড্ডার আসর পাতে। রাজনীতি, খেলাধুলা, সিনেমা থেকে শুরু করে পাশের বাড়ির মেয়ে-বউটা নিয়েও আলোচনা হয় এই চায়ের দোকানে। পল্লব সেসব মনোযোগ দিয়ে শুনে৷ বেশ মজা লাগে শুনতে। নানান ধরনের গল্প শুনতে শুনতে কখন সকাল থেকে রাত গড়িয়ে যায় টেরই পায় না পনেরো বছর বয়সী পল্লব। বেশ প্রফুল্লতার সাথে কেটে যায় ওর দিনগুলো।

পল্লব সবচেয়ে খুশি হয় যখন সন্ধ্যা নামার সাথে তার চায়ের দোকানে পাড়ার ছেলেদের আড্ডা বসে৷ বিশেষ করে সানান ভাইয়ের দলটা যখন এসে সামনের কাঠের বেঞ্চটায় হাত পা ছড়িয়ে বসে তখন পল্লবের চোখদুটো আনন্দে চকচক করে। ওদের জন্য বেশ যত্ন নিয়ে চা বানায় সে। আরেকটু গাঢ় লিকার দেয় চায়ে। ঘন দুধটুকু আলাদা করে রাখা থাকে এই স্পেশাল কাস্টমারদের জন্য।

আজকেও সন্ধ্যা নামার আগ মুহূর্তে সানান ভাইয়ের বাইকটা এসে থামল চায়ের দোকানের সামনে৷ বাকিরা তখনো পৌঁছায়নি৷ আশেপাশে দু একটা প্রয়োজনীয় দোকানপাট উঠেছে কয়েকমাস হলো৷ অফিস ছুটির এই সময়টায় দোকানগুলোতে বেশ ভীড় জমেছে। সানান ভাই সেদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে পল্লবের উদ্দেশ্যে বলল,

– আজিমরা কেউ আসে নাই এখনো?

– নাহ ভাই। সময় হইয়া গেছে। আইসা পড়ব। আপনারে এক কাপ চা দিমু?

– এখন থাক। ওরা আসুক। একসাথে খাব।

বেঞ্চের কোণায় বসে কোম্পানির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ দেখছিল সানান ভাই। তখনি বৃষ্টিটা নামল। গুঞ্জন দৌড়ে এসে চায়ের দোকানের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিয়ে বিজয়ীর হাসি হেসে বলল,

– একটুর জন্য বেঁচে গেলাম।

গুঞ্জন বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেলেও বাকিরা পেল না। রিজিম, মাহমুদ, আবির, দোলন ও আজিমের বাইকগুলো সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ালো পল্লবের দোকানের সামনে। সবাই বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে এসেছে। মাথা থেকে হেলমেট খুলে বাইকের উপর রেখে আজিম খিটমিট করে উঠল।

– বাইঞ্চোত বৃষ্টি। আর দুই মিনিট পর আসলে কি হইত? চাপ ধরে রাখা যাচ্ছিল না তার। এখনি ছাড়তে হবে। দিল পুরাটা ভিজায়।

সামনাসামনি দুটো বেঞ্চ দখল করে সবাই বসে পড়েছে। দলের সিনিয়র দুজন সদস্য আজিম ও সানান। বাকিরা সবাই ছয়মাস, একবছর এর ছোট। পল্লবের থেকে টিস্যু এনে আজিমের দিকে বাড়িয়ে দিল রিজিম। পাশে বসে বলল,

– সানান ভাই ভিজেন নাই দেখছি৷ কখন আসছেন?

– দোকানে ঢুকা মাত্র বৃষ্টি নামছে।

– আপনার ভাই বরাবর কপাল ভালো। আর আমার হচ্ছে কুত্তা কপাল। আমি যেখানে, বিপদ সেখানে৷

– শালা নজর লাগাবি তো চোখ তুলে নিল। খালি হা হুতাশ করে৷ দূরে গিয়ে বস।

– কথা কিন্তু সত্য। তুই সবসময় ফাঁক-ফোঁকর দিয়া পার হইয়া আসিস৷ দুনিয়ার কুকাম কইরাও, মামা তোমার ইমেজ কিন্তু ক্লিয়ার৷ দুধের মতো ফকফকা। তুলসীর মতো পবিত্র। আর আমরা সারা পাড়া জুড়ে বদনাম।

আজিমের দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকাল সানান ভাই৷ জুনিয়র পোলাপান এসব কথা বললে মানা যায়। তাই বলে বন্ধুও বলবে! তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছে করে না?

– আর তোদের সাথে ঘুরে আমিও বদনামের দিকেই যাচ্ছি। তোরা আমার সাথে ঘুরিস না৷ দূরে গিয়া বস৷ আমার চরিত্রে কালি লেগে যাচ্ছে।

আজিম দু হাতে বন্ধুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

– তোমারে ছাইড়া আমরা কই যামু, মামা? তুমি আমাগো আইজ, তুমি আমাগো কাইল, তুমিই আমাগো ভবিষ্যত।

পল্লব চায়ের কাপে চা ঢালতেই হাতে হাতে তা চলে আসে বন্ধুদের ঠোঁটের ফাঁকে। গুঞ্জন আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,

– বৃষ্টির সাথে তোর হাতের এক কাপ চা মানে জীবন চমৎকার। বুঝলি পল্লব? তুইও এক কাপ চা নিয়ে বসে পড়। এসব দোকানপাট রাখ।

পল্লব এক গাল হেসে সত্যি সত্যি চায়ের কেটলিকে অদেখা করে এক কাপ চা নিয়ে বসে উদাস নয়নে বৃষ্টি দেখতে লাগল। দোলন আফসোসের সুরে বলল,

– এমন বৃষ্টির দিনে আমার বিয়ে না করা বউটাকে খুব মনে পড়ছে। এই আবহাওয়ায় কোথায় বউকে নিয়ে কাঁথার নিচে থাকব, তা না করে তোদের সাথে বসে আছি। কী কপাল মাইরি! ছেহ। এমন কপালে ঝাটার বাড়ি।

– যা বউরের কাছে। আটকায় রাখছে কে? – ঠেস দিয়ে বলল আবির।

আজিম মুচকি হেসে বলল,

– হের বউ থাকলে না বাড়ি যাবে। বেডা বিয়েশাদি না করেও বউয়ের স্বপ্ন দেখে।

আবির ভূত দেখার মতো করে সবিস্ময়ে চাইল দোলনের দিকে। অন্যরাও দোলনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। দোলন সেসব দৃষ্টি উপেক্ষা করে উদাস নয়নে বৃষ্টির দিকে চাইল। মুখ তুলে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে কাল্পনিক কিছু হিসাব নিকাষ করছে সে। হঠাৎ চোখ দুটো সরু করে থমকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর নিশ্চিত হয়ে নিচু স্বরে হড়বড়িয়ে বলল,

– ওটা আপনার চাচার মেয়েটা না, সানান ভাই?

সানান ভাই তখন আজিমের সাথে আলাপে মশগুল। দোলনের কথায় ওরা দুজনেই মুখ তুলে চাইল। বাকিদের কিছু বলতে হলোনা। সবাই দোলনের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল দোতলা বাড়িটির ছাদের দিকে৷ পাড়ার মোড় থেকে বাসা-বাড়ি লেনের প্রতিটি বাড়ির ছাদ স্পষ্ট দেখা যায়।

বাদলাচ্ছন্ন আবছা আলোয় সাঁঝের পাশে একটি ছেলেকে দেখে সানান ভাইয়ের চোখ জোড়া থমকে গেল।
বেয়াদব মেয়েটা দুদিকে হাত ছড়িয়ে ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিতে ভিজছে। আরেকজন আদিক্ষ্যেতা করে আবার ছবি তুলে দিচ্ছে।

সানান ভাই বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাকিটা চা বৃষ্টির পানিতে ছুড়ে মারল।

– এক বেকুবের সাথে আরেক উল্লুক জুটেছে।

চায়ের কাপটা ঠাস করে পল্লবের সামনে রাখতেই পেছন থেকে আজিম বলল,

– আরে মামা, চ্যেতো কেন? মাইয়া মানুষ বৃষ্টিবিলাস করবো না তো কেডায় করব? তুমি আরেক কাপ চা খাও।

সানান ভাইয়ের অন্ধকার মুখটি দেখে বাকিরা সবাই চুপসে গেছে। সানান ভাইয়ের মেজাজের পারদ উঁচু নিচু হতে খুব একটা সময় লাগে না। একবার চটে গেলে তখন আর কোনো কথা সে শুনবে না। শুধু দু হাত চলবে। পরিচয়ের শুরুর দিকে এমন চড়-থাপ্পড় কত খেতে হয়েছে ওদের! সেইসব স্মৃতি মনে করে সবাই চুপটি করে একপাশে বসে রইল।

চলবে…
#অক্ষরময়ী