এই সাঁঝবাতি পর্ব-২৯+৩০

0
16

#এই_সাঁঝবাতি? পর্ব: ২৯

পেশাগত কাজে আপাতত দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তোহাজ শিকদার৷ একমাত্র ছেলেটাও কাজের সূত্রে আছে ঢাকায়। বাড়িতে একাই নিঃসঙ্গ দিন কাটছে মাধবীলতার৷ অবশ্য কাজের লোক দুটো সর্বক্ষণ উনার আশেপাশে রয়েছে। কিন্তু তাদের সাথে নিশ্চয়ই দুদণ্ড বসে মনের কথা বলা যায় না।

ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় বসে আছেন তিনি৷ হাতে চায়ের কাপ। কানে চেপে ধরে আছেন মোবাইল ফোনটি। সাংসারিক আলাপ আলোচনা শেষে স্বর্ণলতা খানিকটা ইতস্ততভাবে বললেন,

– কাল রাতে সাদিক সাঁঝের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিল। একটা ভালো ছেলের খোঁজ পেয়েছে৷

মাধবীলতা জানতেন, প্রয়োজনীয় কিছু বলতেই এত সকালবেলা কল করেছে তাঁর ছোট বোন। কিন্তু কথাটি যে এত প্রয়োজনীয় হবে তা তিনি আন্দাজ করতে পারেননি৷ সময় ব্যয় না করে জবাব দিলেন,

– এত ছোট মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছিস কেন?

– তোমার চোখে ছোট হতে পারে কিন্তু আমার চোখে আমার মেয়ের যথেষ্ট বয়স হয়েছে৷

– এখনো আঠারো হয়নি৷ আইনিভাবে সাঁঝ এখনো নাবালিকা।

– ওসব আইনের গান আমার সামনে গাইবে না। আমার মেয়েকে আমি বিয়ে দিব৷ কোনো একটা কেলেঙ্কারী হয়ে গেলে তোমার আইন আমাদের বাঁচাতে আসবে না৷ এখানে সবাই এই বয়সেই মেয়ের বিয়ে দেয়।

– সবাই মেয়েগুলোর সাথে অন্যায় করছে করছে বলে তুইও করবি?

– হ্যাঁ করব৷ এতে যদি আমার মেয়ের ভালো হয় তবে করতে সমস্যা কোথায়? এই ব্যাপারে তোমার কোনো কথা আমি শুনতে চাইছি না। তুমি শুধু আমাকে বলো, তাশফীনের সাথে সাঁঝের বিয়ের ব্যাপারে যে আগ্রহ তুমি আমাকে দেখিয়েছিলে সেটা এখনো আছে কিনা।

– কেনো থাকবে না? আমি আগেই বলেছি, এখনো বলছি৷ সাঁঝকে আমি ছেলের বউ করে নিয়ে আসতে চাই৷

– তাহলে এ বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও।

– এখনি কীভাবে সম্ভব! তাশফীনের বাবার সাথে কথা বলতে হবে। আমাকে একটু সময় দে৷

– আমার হাতে বেশি সময় নেই। এ মাসের মধ্যে আমি সাঁঝের বিয়ে দিতে চাই৷ তুমি আজকেই দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে আমাকে একটা সিদ্ধান্ত জানাও।

– তাশফীনের বাবা বাড়িতে নেই৷ এসব ব্যাপারে মোবাইলে আলোচনা করা সম্ভব না৷ ওকে ফিরতে দে৷ আমি কথা বলে জানাচ্ছি৷

– সাঁঝের বাবাকে আজকেই একটা সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। এদিকে তুমিও নিশ্চিতভাবে কিছু বলছ না। আমি কি করব?

– নিশ্চিতভাবে বলছি না মানে? সেই কবেই তোকে বলে রেখেছি! ভুলে গেছিস, স্বর্ণ?

– তোমার ওমন মুখের কথায় ভরসা করে কীভাবে বসে থাকব বলো? দুলাভাই যে আমাদের খুব একটা পছন্দ করে না, সেই কথা তো কারও অজানা নয়৷ তাশফীন তাঁর একমাত্র সন্তান৷ ছেলের জন্য যদি আমার মেয়েকে নিয়ে যেতে রাজি না হন, তখন আমি কি করব? তাশফীনের আশায় বুক বেঁধে মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রাখতে পারি না। পরে দেখা গেলো, তোমরাও মুখ ফিরিয়ে নিলে। আমার এ কূলও গেল, ও কূলও গেল।

– সবসময় এতো নেগেটিভ চিন্তাভাবনা কেন করিস আমি বুঝি না৷ বোনের উপর ভরসা নেই তোর?

– ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে আমি কাউকে ভরসা করতে পারি না, আপা। কিছু মনে করো না। তুমি আমাকে একটা পাকা কথা জানাও, যাতে আমি সাঁঝের বাবাকে জবাব দিতে পারি৷

কিছু মুহূর্তে নীরব রইলেন মাধবীলতা। সাঁঝকে তিনি হাতছাড়া করবেন না৷ অন্য দিকে স্বর্ণলতাকে কনভেন্স করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। বোনটি তার ভীতুর ডিম এবং জেদি। যা একবার মাথায় আসে, সেটা না করা পর্যন্ত শান্তিতে দুদণ্ড বসতে পারে না। শতভাগ নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত স্বর্ণলতার ঘাবড়ানো বন্ধ হবে না। এক্ষুণি সাদিকের কাছে বিয়ের প্রস্তাব জানাতে বলবে। যা এই মুহুর্তে সম্ভব নয়৷ ছেলের ব্যাপারে এত বড় সিদ্ধান্ত মাধবীলতা একা নিতে পারেন না। স্বামী ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে৷ সবদিক বিবেচনা করে মাধবীলতা বললেন,

– তুই একটা কাজ কর, সাদিককে বল ছেলের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে। সে অগ্রসর হোক৷ বিয়ের আলোচনা চললেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। ততদিনে তাশফীনের বাবা ফিরে আসবে৷ তার সাথে আলোচনা করে আমরা সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব। ঠিক আছে?

– তাহলে আমি হ্যাঁ বলে দিচ্ছি। পরে কিছু ঘটে গেলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না৷

স্বর্ণলতার মন থেকে আশংকা দূর হলো না৷ তাশফীনের বাবার একটু নাকউঁচু স্বভাব আছে। একটু নয় অনেকটাই নাকউঁচু স্বভাবের। তবে ছেলের ব্যাপারে আভিজাত্যের অহমে সামান্য ছাড় দিবেন বলেই স্বর্ণলতার বিশ্বাস। সাঁঝের ব্যাপারে মাধবীলতার আগ্রহ অনেকদিনের৷ সাঁঝের বাল্যকালে তিনি একবার নিজের অভিসন্ধি জানিয়েছিলেন বোনকে৷ স্বর্ণলতা না করেননি৷

আজকাল দেখছেন তাশফীনও সাঁঝের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী। মেয়ের দিকে কে কোন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে সেটা আজকাল ভালোভাবে বুঝতে পারেন তিনি। এবার শুধু তাশফীনের বাবার অনুমতি পেলে আর কোনো বাঁধা থাকবে না৷ সপ্তাহখানেক অপেক্ষা মাত্র। অনেকগুলো বছর নিজেদের অভিসন্ধি মনের ভেতর লুকিয়ে রেখেছেন দু বোন। আর কয়েকটি দিন লুকিয়ে রাখতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।

স্বর্ণলতা ঠিক করলেন, এই মুহূর্তে সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিবেন। এত ভালো প্রস্তাবকে বিনা অনুসন্ধানে প্রত্যাখ্যান করলে সাদিকের মনে সন্দেহ জাগতে পারে৷ স্বামীকে নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত নয়। কিছু একটা বলে মানিয়ে নিতে পারবেন৷ স্বর্ণলতার ভয় শাশুড়ীকে নিয়ে৷

তোহাজ শিকদারের নাকউঁচু, অহংকারী মনোভাব পছন্দ নয় সাওদা বেগমের। স্বাভাবিকভাবেই সাঁঝের নানা বাড়িতে জামাইদের পরিমাপের অপ্রকাশিত একটা মানদণ্ড রয়েছে৷ আর্থিক, বাহ্যিক কিংবা অভ্যন্তরীণ গুণাবলি বিচার করলে সবদিক থেকে পিছিয়ে রয় সাদিক শারাফাত। অন্যদিকে প্রথম স্থানে থাকে তোহাজ শিকদার। তাই শ্বশুরবাড়িতে তোহাজ শিকদারের স্থান সবচেয়ে উঁচুতে৷ এই ব্যাপারটি চোখে বিঁধে সাওদা বেগমের। তাই শিকদার বাড়ির প্রতি একটা সুপ্ত ঘৃণা পুষে রেখেছেন মনে।

সাওদা বেগম যদি কোনোভাবে জেনে যায়, স্বর্ণলতা উনার বংশের মেয়েকে শিকদার বাড়িতে বিয়ে দিতে চায় তবে এই বিয়ে বানচালের সর্বাত্মক চেষ্টা তিনি করবেন৷ উপরি পাওয়া হিসেবে আছে সাঁঝের ফুপুরা৷ এরা সময় চায় সাদিকের পরিবার নিম্নস্তরে থাকুক। শিকদার বংশের মতো বনেদি পরিবারে সাঁঝের বিয়েটাকে কোনোভাবেই হতে দিবে না।

উচু থেকে নিম্ন স্তরের যে পরিক্রমা রয়েছে তা বিদ্যমান না রইলে ধনীদের জীবনের আনন্দ হারিয়ে যাবে। নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য পায়ের তলায় অবশ্যই কাউকে চাই৷ তাই নিম্নস্তরের মানুষকে দরিদ্রতার শিকলে আটকে রাখতে তাদের যত ষড়যন্ত্র।

*

বুক সমান সিমেন্টের দেয়াল ঘেরা একটা ডাস্টবিন তৈরি করা হয়েছে মোড়ের পূর্বদিকে। ওদিকটায় মানুষজনের ভীড় কম। পাড়ার মেয়েছেলেরা এখন নির্বিঘ্নে ময়লা ফেলতে পারছে। বর্ষার পানিতে ডাস্টবিনের ময়লা যাতে ভেসে না যায় এজন্য উপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে৷ সন্ধ্যাকালীন চায়ের আড্ডায় গুঞ্জন এলো নাকে রুমাল চেপে ধরে। আজম ভ্রুকুটি করে বলল,

– কি হইছে তোর?

– আমার আবার কি হবে?

– বিয়ের বরের মতো নাকে রুমাল চেপে আছিস কেন?

প্রশ্নটা করল সানান ভাই। তার মন আজকাল বেশ ফুরফুরে। পাশের বাড়ির ছাদে আজকাল প্রায়শই একজন কিশোরিকে দেখা যায়৷ পুতুলের মতো সেজেগুজে ছাদে আসে। একা একা ঘুরে ফিরে, বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়ায়, খিলখিল করে হাসে। সেগুলো ক্যামেরা বন্দী করে অনেকটা সময় ধরে৷ কখনো আবার প্রজাপতির মতো আপনমনে ডানা মেলে ছাদের এপাশ থেকে ওপাশ হেঁটে বেড়ায়, গুনগুন করে গান গায়।

সানান ভাইয়ের পিসির ডেস্কের সামনে যে জানালাটা, যেটা দিয়ে ও বাড়ির ছাদের পুরো চিত্র দেখা যায়। কাজের ফাঁকে সানান ভাই সেদিকে তাকিয়ে কিশোরীর পাগলামি দেখে৷ শাড়ি ভাঁজে ভাঁজে খুঁজে ফিরে বিভিন্ন রঙ। তারপর সেগুলো ফুটিয়ে তুলে মনিটরের স্ক্রীনে। কমার্শিয়াল পোস্টারগুলো আজকাল বেশ রঙিন হয়ে ধরা দিচ্ছে সানান ভাইয়ের হাতে৷

– ডাস্টবিনের গন্ধে রাস্তা পার হওয়া যাচ্ছে না। এজন্য নাক চেপে ধরে আসলাম।

– কী বলিস! নতুন ডাস্টবিনটার এই হাল করে ফেলছে?

– ময়লা ভেতরে না ফেলে দেয়ালের বাইরে ফেলে রাখতেছে৷ একটু এগিয়ে গিয়ে ডাস্টবিনের ভেতর ময়লা ফেলার শক্তি নাই এদের৷ দূর থেকে ছুড়ে মারে৷

– একেকটা ন্যাশনাল টিমের বোলার হয়ে গেছে। বোল্ড আউট করতে চায়৷

– এদের ডাস্টবিন বানায় দেওয়াই ভুল হইছে৷ হেঁটে যাইতো মেইনরোডে। ওখানে ময়লা ছড়ায় ছিটায় ফেললেও আমাদের সমস্যা ছিল না। এখন বাড়ির কাছে ডাস্টবিন বানায় দিয়ে আমরাই বিপদে পড়ে গেছি।

– মজা দেখাচ্ছি এদের। ময়লার প্যাকেট দিয়ে বোলিং করা বের করতেছি। ক্লাব থেকে একটা সিসি ক্যামেরার ফান্ড দিতে পারবি না, আজম?

– পারব। তুই কি ডাস্টবিনে সিসি ক্যামেরা লাগাবি?

– ঠিক ধরছিস৷ এরপর দেখব কে ডাস্টবিনের বাইরে ময়লা ফেলে৷ যেই ফেলবে ওরে দিয়ে পরিষ্কার করায় নিব৷ সেই সাথে জরিমানাও করা হবে৷ জরিমানার টাকা যাবে ক্লাবের ফান্ডে৷

– ব্রাভো মামা। তোর বুদ্ধি অসাধারণ।

মার্কেট থেকে সিসি ক্যামেরা কিনে সেটা যথাযথ স্থানে সেটআপ করে বাড়ি ফিরতে খুব একটা রাত হয়নি। সানান ভাই বাড়ি ফিরে দেখল, সবাই খাবার টেবিলে বসেছে৷ বাবার শীতল চাহনিকে খুব একটা পাত্তা না দিলেও পরিবারের সাথে বসে খাবার খাওয়ার লোভ সংবরন করতে পারল না। দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে এসে বসল টেবিলে।

সাবির শারাফাত বড্ড আফসোস নিয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে বললেন,

– এমন একটা দিনে ট্রেনিংয়ের জন্য ডাক পড়েছে! না গিয়ে উপায়ও নেই।

– সাদিককে বললে সে বুঝবে।কিছু প্রয়োজন হলে আমরা তো রইলাম বাড়িতে। আমিও না হয় গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আসব। তুমি চিন্তা করো না। নিশ্চিন্তে যাও। বাস কখন তোমার?

– এগারোটায়।

– সময় বেশি নেই। ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছি৷ খেয়েদেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বের হয়ে যাও।

আলোচনার মাঝখানে এসে সানান ভাই কিছুই বুঝতে পারছে না। তবুও মনোযোগ দিয়ে শুনল। যেহেতু আলোচনায় মেজ বাবার নাম উল্লেখ হয়েছে তাই এতো আগ্রহ। মেজ বাবা যে তার খুবই পছন্দের মানুষ। ভাতের দলা মুখে তুলে নিরাগ্রহ নিয়ে বলল,

– কোথাও যাচ্ছ নাকি?

এ বেলা ছেলেকে কড়া কথা বলার ইচ্ছে হলো না সাবিরের। দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বললেন,

– একদিনের ট্রেনিংয়ে রাজশাহী যাচ্ছি। পরশুদিন ফিরব। এই দুটো রাত অন্তত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো। বাড়িতে দুটো মেয়ে মানুষ একা থাকবে। তাদের খেয়াল রাখার দায়িত্ব তোমার। দুটোদিন দায়িত্বশীল মানুষের মতো চলাফেরা করার অনুরোধ থাকল। আমি না থাকলে কীভাবে পরিবারকে সামলে রাখবে এই সুযোগে সেটা শিখে নেও৷

– আহা! চুপ করো। যাওয়ার বেলা কী ধরনের অলুক্ষণে কথা!

স্বামী মুখে এমন কথা শুনে কঠিনচিত্তের আফসানার হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে ভয়ের বুদবুদ সৃষ্টি হলো। কড়া সুরে ধমকে উঠলেন তিনি। সাবির থামলেন না। কেমন উদাস গলায় বললেন,

– বয়স বাড়ছে, আফসানা। কবে চোখ বন্ধ হয়ে যাবে তা কি কেউ বলতে পারে। মেয়েটাকে নিয়ে যত দুশ্চিন্তা৷ কতটুকুই বা বয়স হলো! ওকে তো তোমার গুনধর পুত্রের হাতে সমর্পণ করেই আমাদের চলে যেতে হবে।

যাকে নিয়ে সাবির শারাফাতের এত ভয় সে নিশ্চিত মনে ছোট হাতের থাবা দিয়ে প্লেট থেকে অমলেটের টুকরো তুলে খাচ্ছে। আজকাল নিজে হাতে খাওয়ার বায়না করছে সায়রা। তাই অমলেট ছিড়ে ছোট টুকরো করে দিয়েছেন আফসানা।

বাবার কথা শুনে কপালে বিরক্তির ভাঁজ পড়ল সানান ভাইয়ের৷ বোনটি তার মাত্র চার বছরে পদার্পণ করলো বলে। এখনি তার সুদূর ভবিষ্যতের চিন্তায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবা-মাকে দেখে কেন বিরক্তি জাগবে না?

– উফ! তোমরা পারোও বটে। এখনো দুধের দাঁত পড়েনি যার তার ভবিষ্যতের প্লানিং করতে বসেছো।

ছোট এই পরিবারের সদস্যগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। কেউ কারো জীবনে হস্তক্ষেপ করে না৷ সবাই নিজের মতো জীবনযাপন করতে পছন্দ করে। স্বাভাবিকভাবে পরিবারে যে আন্তরিকতা দেখা যায়, কোনো এক অজানা কারণে তার ঘাটতি রয়েছে সাবির শারাফাতের পরিবারে৷

মা, বাবা, ছেলে – একই ছাদের নিচে থেকেও যেন প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে শতক্রোশ দূরে৷ তিনটি ভিন্নদিকে অবস্থানরত মানুষগুলোকে জুড়ে রেখেছে যে বাঁধন তার নাম সায়রা৷ ছোট এই প্রাণটি এতোটাই শক্তিশালী যে তিনজন স্বার্থন্বেষী মানুষ তার প্রয়োজনে একই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে৷

মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন সাবির শারাফাত। ফ্যালফ্যাল করে বাবার দিকে তাকাল সায়রা৷ মুঠোভর্তি ডিমের টুকরো মুখে ঠেলে দিল। যার অর্ধেকই আঙ্গুলের ফাঁক গলে পড়ে গেল প্লেটে৷ বাকি কিছু অংশ মুখে নিয়ে ফিচেল হাসল সে। সেই হাসি সংক্রামিত হলো সাবির শারাফাতের মুখে৷ তিনি আর্দ্র গলায় বললেন,

– মেয়েরা কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়! এইতো সেদিন শুনলাম সাদিকের ঘর আলো করে একটা মেয়ে এসেছে৷ সেই মেয়েটার এখন বিয়ে। ভাবা যায়? চোখের সামনে বছরগুলো যেন আলোর গতিতে পেরিয়ে গেল। আমার মা-টাও দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাবে৷ বাবা, তোমার জন্য রাজপুত্র নিয়ে আসব, মা।

বাবা-মেয়ের আবেগঘন মুহূর্তে কারো আগ্রহ রইল না। সানান ভাই অবাক চোখে তাকাল মায়ের দিকে। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,

– কার বিয়ের কথা বললে?

সাবির প্রফুল্লচিত্তে বললেন,

– সাঁঝের বিয়ে৷ এখনো খবর পাসনি?

ছেলের প্রশ্নাত্মক দৃষ্টির সামনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে আছেন আফসানা। একটুও কাঁপল না চোখের পাতা। দীর্ঘ কণ্ঠে বললেন,

– বিয়ে নয়। শুধু দেখতে আসবে। সন্ধ্যাবেলায় স্বর্ণলতা এসে বলে গেছে। তুই ঘরে ছিলি না বলে জানানো হয়নি৷

সাবির বললেন,

– আমাকে যেতে বলেছিল। কালকেই আবার আমার একটা মিটিং আছে। ক্যান্সেল করা সম্ভব না। বংশের বড় ছেলে আমি। অভিভাবক হিসেবে আমার উপস্থিত থাকাটা জরুরি ছিল। কিন্তু আমি অপরাগ। বাবার দায়িত্ব কিছুটা তোমার উপর বর্তায় সানান। আমার অবর্তমানে তোমার মেজ বাবাকে যাবতীয় সাহায্য সহযোগিতা তুমি করবে। তাছাড়া সাঁঝের বড় ভাই হিসেবে তোমার কিছু দায়িত্ব কর্তব্যও রয়েছে।

টেবিলের দুপাশে পিনপতন নীরবতা। স্ত্রী পুত্রের শীতল আচরণে কিছুটা মর্মাহত হলেন সাবির। বললেন,

– পরিবারের অভ্যন্তরীণ ঝগড়া কলহ নিজেদের মধ্যে রাখতে হয়। বাইরের লোক যেন না জানে ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক কতটা ভঙ্গুর। সাঁঝের শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেন যথাযথ সম্মান পায়। আশা করি আমার বংশের অসম্মান তোমরা করবে না।

শারাফাত বংশের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আফসানার ঘৃণিত মনোভাব সম্পর্কে অবগত সাবির। অন্যদিকে সানান ভবঘুরে, বাউণ্ডুলে ছেলে। দায়িত্ব, কর্তব্য থেকে সর্বদা গা বাঁচিয়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাবিরের উপস্থিতি খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সাবির থাকতে পারছেন না। জামা কাপড় পরে তৈরি হয়ে বললেন,

– সাদিকটা ব্যস্ত মানুষ। ছেলে দুটোও ছোট। বাজার সদাই করা, লোকজনের সাথে বসে কথা বলা – সবটা ছেলেটাকে একা হাতে সামলাতে হবে। কীভাবে যে কী করবে ভেবেই টেনশন হচ্ছে।

আফসানা মনে মনে বিরক্ত হলেও বিদায় বেলায় স্বামীর অস্বস্তি বাড়ালেন না। আশ্বস্ত করতে বললেন,

– বাজার সদাইয়ে সানান হেল্প করে দিবে। আর আলাপ আলোচনার জন্য তোমার মা একাই যথেষ্ট। যা মুখরা মহিলা!

*

অফিস থেকে ফিরে আরাম-আয়েশে এসেছে তাশফীন। জরুরি তলব করেছেন সাদিক। খুব প্রয়োজনে সবসময় স্বর্ণলতা তার সাথে যোগাযোগ করে। আচানক সাদিক শারাফাতের কল পেয়ে প্রাথমিকভাবে কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছিল তাশফীন। এ বাড়িতে পা দিয়ে বুঝল, কেনো খালামণি তাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি৷ কোন মুখে তিনি সাঁঝের বিয়ের আলোচনা করবেন তাশফীনের সাথে?

– তুমি কিছু বলছ না যে?

সাদিকের ডাকে ধ্যানভঙ্গ হলো তাশফীনের। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

– হ্যাঁ শুনছি।

– মেনুতে আরও কিছু এড করতে হবে?

– যা আছে তাই এনাফ। আর কিছু লাগবে বলে মনে হচ্ছে না৷

– বেশ নামকরা পরিবার। এখন যদিও আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না তবুও একসময়কার ধনী ব্যক্তি। বেশ রুচিশীল বুঝাই যাচ্ছে। এজন্য বেশি টেনশন হচ্ছে আমার। কিছু ছুটে গেল কিনা বুঝতে পারছি না।

স্বর্ণলতা খাবার টেবিলে সাজাতে সাজাতে বললেন,

– তুমি এমনভাবে অস্থির হচ্ছো যেন কালকেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ। শুধু দেখতে আসছে তাই নিয়ে এতো আয়োজন করার দরকার নেই। বিয়ে হবে কিনা তার নেই ঠিক, আগেই উনি বিয়ের ফর্দ নিয়ে বসেছেন।

– শেষ পর্যন্ত বিয়ে হবে কিনা সেটা আল্লাহর ইচ্ছে। আয়োজনে আমি কোনো ত্রুটি রাখতে চাই না। মানুষজন যাতে ফিরে গিয়ে কোনো বদনাম করতে না পারে।

– যথেষ্ট হয়েছে। এবার হাত মুখ ধুয়ে খেতে এসো। ছেলেটাকে হাসপাতাল থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম পর্যন্ত নিতে দিলে না। পাকড়াও করে রেখেছো।

– তাশফীন, যাও। হাত মুখটা ধুয়ে খেতে এসো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও ড্রয়িংরুম থেকে বের হয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোলো তাশফীন। সাবিল-সাভিনের রুমটা তার জন্য বরাদ্দ। ওরা সাওদা বেগমের রুমে গল্প করছে বোধহয়। ফাঁকা রুম পেয়ে তৎক্ষনাৎ মায়ের নাম্বারে কল করল তাশফীন। বিন্দুমাত্র অপেক্ষা তার কাছে হাজার বছরের সমান ভারী মনে হচ্ছে।

কল রিসিভ হওয়া মাত্র কোনো প্রকার সম্ভাষণ ছাড়া তাশফীন অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল,

– এসব কি হচ্ছে মা? তুমি খালামণির সাথে কথা বলোনি এখনো?

মাধবীলতা জানেন, ছেলে কোন বিষয়ে এতোটা উতলা হয়েছে। মেডিকেলের পড়াশোনা শেষ করে একদিন মায়ের পাশে বসে তাশফীন জানিয়েছিল মনের কথা৷ চেয়েছিল নিজের পছন্দের মানুষটিকে। তখনো তাশফীন জানত না, তার আগেই মাধবীলতা হাত বাড়িয়ে বসে আছেন। ছেলের চাহিদায় খুশি হয়ে তিনি তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, পছন্দের মানুষটিকে ছেলের হাতে অবশ্যই তুলে দিবেন। বিনিময়ে তাশফীনকে ধৈর্য রাখতে হবে। দ্রুত ক্যারিয়ার সেট করতে হবে। সীমাহীন ধৈর্য, অপেক্ষার ফল যে তাশফীনের মনঃপুত হয়নি তা যথাযথ জানেন মাধবীলতা। অশান্ত প্রেমিক মনের অস্থিরতা অনুধাবন করতে পারছেন বলেই শান্তভাবে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করলেন।

– শান্ত হও। এত উতলা হওয়ার মতো কিছু হয়নি।

– কালকে ওকে দেখতে আসছে। আর তুমি বলছ উতলা না হতে!

– শুধু দেখতে আসছে। বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।

– কেনো দেখবে? একগাদা লোকের সামনে সং সাজিয়ে রাখবে ওকে। ব্যাপারটা ওর জন্য কতোটা অস্বস্তিকর, আমার জন্য কতোটা কষ্টের। সেটা তুমি বুঝতে পারছ না?

– ব্যাপারটাকে এত জটিল ভাবে নিও না। কয়েকজন লোক আসবে, দেখবে, চলে যাবে। এর বেশি কথা আগাবে না। স্বর্ণ নিজেই না করে দিবে। ওর সাথে আমার কথা হয়েছে৷

– কথা যখন বলেছো তবুও কেনো দেখতে আসছে, মা?

– তুমি জানো তোমার খালা কতোটা অস্থিরচিত্তের মহিলা। সে প্রচন্ড সন্দেহপ্রবন এবং ভীতু। আমার মুখের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না৷ এদিকে তোমার বাবা দেশের বাইরে৷ তাকেও তুমি চেনো। ফোনে কথা বলে তাকে কনভেন্স করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উল্টো হীতে বিপরীত কিছু ঘটে যাবে। সেই ঝুঁকি আমি নিতে পারছি না। তাই আপাতত যা হচ্ছে হতে দেও। আমার উপর ভরসা রাখো। আমি সব ঠিক করে দিব।

– বেলাকে কেউ এসে আয়োজন করে দেখবে৷ এটা আমার জন্য ভীষণ কষ্টের, যন্ত্রণার।

– তুমি এখনো হাত মুখ ধোও নি?

সাঁঝের কথা শুনে পিছু ফিরে তাকাল তাশফীন। অস্থির হৃদয় যেন কিনারা খুঁজে পেল। স্নিগ্ধ হাসি মাখা মুখটা সারাদিনের ক্লান্তি ধুয়ে মুছে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। ছুয়ে যায় একরাশ প্রশান্তি৷

বিছানার একপাশে বসে কণ্ঠে প্রফুল্লতা নিয়ে তাশফীন বলল,

– তারপর বেলা বোস, শুনলাম কালকে তোর বিয়ে?

কোমরে দু হাত রেখে ধুপধাপ পায়ে তাশফীনের পাশে এসে বসল সাঁঝ। মুখ ফুলিয়ে বলল,

– কোথায় আর বিয়ে! দেখতে আসবে শুধু৷

– তোকে দেখে মনে হচ্ছে কালকে বিয়ে না হওয়ায় তোর ভীষণ মন খারাপ।

– না মন খারাপ, না মন ভালো। ছেলে দেখে তারপর ডিসাইড করবো। আপাতত ছেলে দেখতে কেমন হবে তাই নিয়ে খানিক চিন্তায় আছি।

সাঁঝের কথার ঢংয়ে হেসে ফেলল তাশফীন। অবাক হয়ে বলল,

– তোর ভয় লাগছে না?

– ধুর! কীসের ভয়? বাঘ না ভাল্লুক যে ভয় পাব। উলটো আমি কালকের জন্য ভীষণ এক্সাইটেড।

– কেনো?

– মা একটা নতুন শাড়ি, এক জোড়া জুতো কিনে দিয়েছে। লিপস্টিক, দুল, চুড়ি যা চাইছি তাই এনে দিচ্ছে। কোনোপ্রকার গালাগালি নেই। বকাঝকা নেই। এই সুযোগে আমার উইশলিস্টের অনেক কিছু কিনে নিয়েছি। তুমি কাউকে বলো না কিন্তু।

– বাহ! তুই তো দেখছি হরিরলুট করেছিস।

– একেই বলে ঝোপ বুঝে কোপ মারা। আইডিয়াটা অবশ্য জুবিয়ার। আমি এত চালাক না। খানিকটা বোকা আছি। জুবিয়া অনেক চালাক। ও বলেছে কালকে আমাকে দেখতে এসে ছেলেপক্ষ যে টাকা দিবে সেটা দিয়ে যেন নিজের ইচ্ছেমতো শপিং করি।

– তোরা মেয়েরা দেখছি সাংঘাতিক। একদা এক যুগ ছিল যখন মেয়েদের দেখতে আসছে শুনলে তারা কেঁদেকেটে বুক ভাসাতো। ভয়ে কাঁপাকাঁপি করত। নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দিত। আর এখন দেখছি মেয়েদের দেখতে আসবে শুনলে তারা খুশি হয়। বাবা-মায়ের কাছ থেকে শপিং করে নেয় আবার মুখদর্শনের নামে বাড়তি ইনকাম হয়ে যায়৷ তোদের লাভের উপর লাভ। আমাদের ছেলেদের কথা ভাব, কেউ আমাদের দেখতে আসে না। এত সুন্দর মুখটা দর্শনের জন্য টাকাও দেয় না। উল্টো অফিস থেকে তেল চপচপে মুখ নিয়ে ওভাবেই মেয়ে দেখতে চলে যেতে হয়। মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য কোনো ছুটি বরাদ্দ নেই আমাদের।

– ছেলেরা আবার দেখার মতো কিছু হলো নাকি। তোমাদের দেখার আগ্রহ কারো নেই৷ দেখতে হবে আমাদের মতো সুন্দরী মেয়েদের। কালকে দেখবা আমাকে দেখে ছেলের হুশ উড়ে যাবে। এখন এসব আলোচনা বাদ দিয়ে, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো। মা ডাকছে।

তাশফীনের হাত ধরে টেনেটুনে একপ্রকার জোরজবরদস্তি করে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিল সাঁঝ। কালকের দিনটি নিয়ে চাপা একটা আনন্দ কাজ করছে মনে। তাকে ঘিরে এতো আয়োজন, এতো উৎকণ্ঠা। নিজেকে এ পৃথিবীর ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে হচ্ছে। এর আগে কখনো নিজেকে এতোটা জরুরি মনে হয়নি তার।

চলবে…
#অক্ষরময়ী

#এই_সাঁঝবাতি? পর্ব: ৩০

সাঁঝদের বাড়ির জীর্ণ সোফায় নতুন কভার লাগানো হয়েছে। ওগুলো গতকাল কিনে এনেছিলেন স্বর্ণলতা। সোফায় বসে আছেন একজন বয়োজ্যেষ্ঠা। ঢিলেঢালা কালো পোশাকে গা আবৃত। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। মুখের মিষ্টি হাসি কুঁকচে যাওয়া গায়ের চামড়াকে ম্লান করে দিচ্ছে।
ভদ্রমহিলার পাশে বসে আছেন উনার ছেলে। সেই আজকের প্রধান অতিথি। তার নাম তোফায়েল সরকার। সাঁঝের হবু বর। যদি মেয়ে পছন্দ হয় আরকি। তোফায়েল সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। তার বয়স একুশ। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দিয়েছে সবে এক বছর হলো। আপনারা হয়তো ভেবে অবাক হচ্ছেন, এতো তাড়াতাড়ি সে বিয়ের অনুমতি কি করে পেয়ে গেল। নাহ, বিয়ের অনুমতি সে পায়নি। জননীর আদেশ রক্ষার্থে কর্মক্ষেত্রে ফাঁকি দিয়ে এত বড় ঝুঁকিটা তাকে নিতে হচ্ছে। বিয়েখানা আপাতত লুকিয়ে চুপিয়ে করা হবে। অনুমতি পেলে পড়ে আইনিভাবে লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষের এই একই জায়গায় মিল রয়েছে। মেয়ে নাবালিকা, ছেলের উপর নিষেধাজ্ঞা।

ড্রয়িংরুম থেকে নজর সরিয়ে ভেতরকার কক্ষের দিকে গেলে সেখানে একজন কিশোরীকে গোমড়া মুখে বসে থাকতে দেখা যাবে। খয়েরি রঙের শাড়ি গায়ে জড়ানো। নাক, কান, গলা, হাত সবই খালি। চুল খোঁপা বেঁধে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।

স্বর্ণলতা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন ঘরে। মেয়েকে এ অবস্থায় দেখে আঁতকে উঠে বললেন,

– একি! এখনো এভাবে বসে রইলি কেনো? ওরা যে এসে পড়েছে।

সাঁঝ তার বড় বড় অভিমানী চোখজোড়া তুলে মায়ের দিকে তাকালো। স্বর্ণলতা কপালে ভাঁজ ফেলে সতর্কতার সাথে জানতে চাইলেন,

– কি হয়েছে?

– জুবিয়া আসছে না।

– কেনো?

– ওর ভাবি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

– কি হলো হঠাৎ?

– কিছু হয়নি। সবই ওই মহিলার নাটক। জুবিয়াকে একটা রাত অন্য কোথায় থাকতে দিতে চায় না।

– গর্ভবতী মহিলা। হয়তো সত্যি শরীর খারাপ করেছে। অন্যভাবে ভাবছিস কেনো? ঝটপট রেডি হয়ে নে।

– জুবিয়া আসলো না। খালামণি আসতে পারবে না। তাশফীন ভাইয়াটাও আজকে ডাবল ডিউটি নিয়ে বসে আছে। কেউ নেই আমার সাথে।

– আমরা সবাই আছি তো। ভয় কীসের?

– তবুও আমার সমবয়সী কেউ নেই যার সাথে মনের কথা ভাগ করে নিতে পারি।

– কী বলতে চাস আমাকে বল। মেয়ের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয় তার মা।

– বাজে কথা। মাকে কীভাবে সব কথা বলা যায়? এখন জুবিয়া থাকলে তাকে বলতাম, যা গিয়ে দেখে আয় ছেলেটা কেমন? সেটা কি তোমাকে বলা যাবে?

সাঁঝের প্রশ্নে স্বর্ণলতা থমথমে খেয়ে গেল। বিভ্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হেসে উঠে বললেন,

– দুষ্টুমি না করে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। মেহমানের সামনে কোনোরকম উল্টাপাল্টা কথা বলবি না।

খালু বাড়িতে নেই বলে খালামণি আসতে পারবে না। সাঁঝ ভেবেছিল ব্যাপার না। তাশফীন ভাইয়া, জুবিয়া আছে। সকালে এলো তাশফীন ভাইয়া। বাবার সাথে হাত মিলিয়ে বাজার সদাই করল। ঘরদোর পরিষ্কারে সাহায্য করল। দুপুরে খাবার টেবিলে বসে বলল, তার কোন কলিগ যেন ইমার্জেন্সি লিভ নিয়েছে। তার ডিউটা এখন তার কাঁধে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে থাকতে হবে হাসপাতালে।

সাঁঝ ভেবেছিল, কেউ না থাকলেও জুবিয়া আছে। বন্ধু পাশে থাকলে আর কি লাগে! যেকোনো পরিস্থিতি হাসি মুখে পার করা যায় না। তাই এতক্ষণ একটুকুও অস্থিরতা কাজ করেনি। কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে হুড়মুড়িয়ে এলো ভয়েরা। থেকে থেকে গা শিউরে উঠছে। বুকের দুরুদুরু ভাব উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

অনিচ্ছাসত্ত্বেও এক হাতে চুড়ি পরল। হালকা একটা হার পড়ল গলায়। ঠোঁটে খুবই হালকাভাবে লিপস্টিক দিয়ে উদাস চোখে চেয়ে রইল আকাশের দিকে। এতদিন ধরে যে উৎসাহ, উত্তেজনা ছিল তাতে আজ ভাটা পড়েছে। জুবিয়ার সাথে এত এত পরিকল্পনার মাঝে একবারও মনে হয়নি, তাকে কেউ দেখতে আসছে। অচেনা লোকের সামনে বসতে হবে। প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
কোনো এক উৎসবের আয়োজনের মতো হৈ-হুল্লোড় করে দিন কাটানোর পর আকস্মিক খেয়াল হলো, এত সব আয়োজন তার বিদায়ের জন্য। নির্মম সত্য ক্রমশ বুক ভারী করে ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। সাঁঝের হাত পা অসাড় হয়ে আসছে।

*

চারপাশে ঝি ঝি ডাক হালকাভাবে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে মনোযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। মাথার ভেতর ক্ষীণ যন্ত্রণা। ঘাড় বেয়ে একটা ব্যথা মস্তিষ্কে প্রবাহিত হচ্ছে। সাঁঝ বুঝতে পারছে তার কান দুটো গরম হয়ে উঠেছে। একেই বোধহয় বলে কান দিয়ে ধোঁয়া উঠা। আচমকা প্রচণ্ড গরম লাগতে শুরু করেছে। কারেন্ট চলে গেছে নাকি?

সাঁঝ অস্থির চোখে উপরের দিকে তাকালো। সেখানে তীব্র গতিতে ফ্যান ঘুরছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ নামিয়ে নিতেই একজোড়া কৌতূহলী চোখে চোখ পড়ল। বার কয়েক পলক ফেলে সাঁঝ মুখ নামিয়ে নিল।
মায়ের হাত ধরে কীভাবে ড্রয়িংরুমে এলো, এখানে কি হচ্ছে, কতজন উপস্থিত আছে – সেসব সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই সাঁঝের। সে একটা ঘোরের মধ্যে বাস করছে।

প্রত্যেক মেয়ে এমন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যায়। আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকে না। বোধ বুদ্ধি হ্রাস পায়। অথচ অপরপাশে অচেনা কতগুলো চোখ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এই অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় মেয়ে দেখা পর্ব।
একটা মেয়ে যখন নিজের স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না তখনকার আচার আচরণের উপর ভিত্তি করে তাকে বিচার করা হয়। এতেই নাকি তাকে চেনা হয়, জানা যায়। কী আশ্চর্য এই সমাজ! আশ্চর্য তাদের রীতি!

– কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছো?

মমতা জড়ানো কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন তোফায়েলের মা।

– এবার এসএসসি দিয়েছি।

কোনোরকমে জবাব দিল সাঁঝ।

– কিছুদিন আগেই রেজাল্ট দিয়েছে। রেজাল্ট কি আপনার?

ছেলের সাথে তার দুই ভগ্নীপতি এসেছেন। তাদেরই একজন জানতে চাইলেন। কণ্ঠে বেশ আগ্রহ। যেন এই প্রশ্নের উত্তরে তার জীবনমরণ নির্হিত। সাঁঝ কাঁপাকাঁপা গলায় উত্তর দিল,

– ফোর পয়েন্ট নাইন ওয়ান।

– ইশ! একটুর জন্য প্লাস মিস করেছেন।

যে ব্যক্তিটি আফসোস করল, সে নিশ্চয়ই হবু বর। এখানে আসার পর সাওদা বেগম সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সাঁঝের মুখোমুখি সোফাটায় বসেছে সে। যদিও চেহারাটা এখনো ঠিকঠাকভাবে দেখা হয়ে উঠেনি। তবে কণ্ঠটা বেশ লাগল সাঁঝের। মুখ তুলে চেহারাখানা দেখবার বড্ড সাধ হলো। কিন্তু সবার সামনে কি আর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা যায়!

– কলেজে কোথায় ভর্তি হবে কিছু ঠিক করেছো?

ভদ্রমহিলার প্রশ্নে কিছু উত্তর দিতে হলো না সাঁঝের। সাওদা বেগম বিগলিত হেসে বললেন,

– স্কুল কলেজ স্বামীর বাড়ির কাছাকাছি হওয়াই ভালো। যাতায়াতের সুবিধা।

– উচিত বলেছেন। বিয়ে হয়ে গেছে বলে পড়াশোনা বন্ধ করা চলবে না। তোফায়েল চলে যাবে কাজে। বাড়িতে আমরা বউ-শাশুড়ি দুটো মানুষ পড়ে থাকব। আমি বুড়ো মানুষ। নামাজ-কালাম পড়ে দিন কেটে যাবে। কিন্তু মেয়েছেলের কিছু একটা তো করা চাই। যাতে ব্যস্ত থেকে দিন পার করা যাবে। পড়াশোনা বেটার অপশন। তা মা, তুমি নামাজ-কালাম পড়ো তো?

– হ্যাঁ, হ্যাঁ। পড়ে। মাঝেমধ্যে ফাঁকিবাজিও করে। বুঝেনই তো। উঠতি বয়স।

– সে যৌবনে আমরাও কত ফাঁকি দিয়েছি। আমার সাথে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে যাবে। এই বুড়ো মানুষের সাথে থাকতে অসুবিধা নেই তো? বরের সঙ্গে যেতে পারবে না কিন্তু। মাসে-ছয়মাসে ছুটিতে এলে যতটুকু পাবে।

সাঁঝ উত্তর না দিয়ে আরও নিঁচু করে ফেলল মুখটা। তোফায়েলের মা বড্ড উদাস হয়ে বললেন,

– মেয়ে দুটোর বিয়ে হয়ে গেল। ছেলেটাও এমন চাকরিতে জয়েন করলো যে সারাবছর ঘরের বাইরে থাকতে হয়। বাড়িতে আমি একা মানুষ। আজকাল আবার শরীরে রোগ বাসা বেঁধেছে। এজন্যই তাড়াহুড়ো করে ছেলের বিয়ে দেওয়া। সন্তানরা আমাকে একা বাড়িতে রাখতে ভয় পাচ্ছে। ভাবছে, একলা বাড়িতে মা ম/রে পড়ে থাকলেও তারা খবর পাবে না। আল্লাহর ডাক এলে কেউ কি আটকাতে পারে বলুন?

– আহ মা! আবার শুরু করলে?

মানুষটার বিরক্তিভরা কণ্ঠ শুনেও সাঁঝের বুক দুরু দুরু করে উঠল। কেন এমন হচ্ছে কে জানে! আরও দুজন অচেনা পুরুষ মানুষ আছে এখানে। তারাও কথা বলছে। কই তাদের কণ্ঠ শুনে সাঁঝের বুকে ঢেউ খেলে যাচ্ছে না। শুধু এই একটা কণ্ঠস্বর কেন সাঁঝের বুকে তরঙ্গের মতো ধাক্কা দিচ্ছে?
তবে কি সাঁঝের অবচেতন মন তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে শুরু করেছে? উত্তর খুঁজে পেল না সাঁঝ। এমন অদ্ভুত অনুভূতি সাঁঝের জন্য নতুন। নারী-পুরুষে ভেদাভেদ করতে সে এখনো শিখেনি। জীবনসঙ্গীকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতেও শুরু করেনি। সবেমাত্র প্রজাপতির ডানা রঙিন হতে আরম্ভ করেছে। মুদিত চক্ষু রঙিন পৃথিবী দেখার অপেক্ষায়।

– কুরআন শরীফ পড়তে পারো, মা?

সাঁঝ মাথা দুলিয়ে সায় জানালো। তাতে সন্তুষ্ট হলেন না ভদ্রমহিলা। একটি সূরা বলতে বললেন। কোন সূরা বলবে সে, কিছুই তো মনে নেই। মাথাটা ফাঁকা লাগছে।
সাওদা বেগম হয়তো নাতনীর মনের অবস্থা বুঝলেন। জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্র এমন অবস্থায় ভুক্তভোগীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা রাখবেন।
সূরা মাউনের প্রথম আয়াত নাতনির কানে কানে বলে দিলেন। বাকিটা সাঁঝ সামলে নিল। কণ্ঠস্বর বারবার ভেঙে আসছিল। ফ্যাসফেসে গলা নিজের কাছেই অপরিচিত ঠেকছে। ভুল আয়াত পড়ে ফেলল নাকি সেই নিয়ে আরেক চিন্তা। সাঁঝের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, জীবনে দ্বিতীয়বার এমন সভায় বসবে না।

*

সন্ধ্যার মেঘ আকাশ ঢেকে ফেলেছে। সূর্য ডুবেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। নিজে বিদায় নিলেই তার লালিমা এখনো রয়ে গেছে পশ্চিম আকাশে। লালচে রেখা পৃথিবীর বুকে সাক্ষ্য দিচ্ছে, এখানে কেউ ছিল। যার উপস্থিতি এত সহজে মিটবার নয়।

ছোট পা দুটো চঞ্চল, অস্থির। নরম ত্বক ধুলো-বালির উপর চকচক করছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। বের হওয়ার সময় জুতো পরতে ভুলে গেছে। শক্ত মাটি কিছুটা ব্যথা সৃষ্টি করছে। তবুও সে ছুটছে।
সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে কোমল হাত দুটো বড় দরজাটা ঠেলল। সামান্য পিছিয়ে গেল দরজার পাল্লা। যেটুকু ফাঁকা স্থান সৃষ্টি হয়েছে তাই ওর জন্য যথেষ্ট। সাবধানে দরজা পার করে হাঁপাতে হাঁপাতে সিঁড়িতে পা রাখে উপরের দিকে তাকাল। এতোগুলো সিঁড়ি! রেলিং ধরে ধীরে ধীরে বাইতে লাগল নিজের তুলনায় অতি উচ্চ ধাপ।
সদর দরজা লক করা ছিল না। তবুও পূর্ণশক্তি খরচ করতে হলো তাকে।

সাবধানী পায়ে ভেতরে ঢুকে কতগুলো অচেনা মানুষকে দেখে সে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইল। এমনিতেই সে আতংকিত। এবার আরও বেশি ভয় পেল। অচেনা একজন মহিলা তার দিকে সরু চোখে চেয়ে আছে। বকা দিবে কি?

– বাচ্চাটা কে?

তোফায়েলের মায়ের প্রশ্নে সবাই দরজার দিকে তাকাল। ফ্যাকাশে চেহারাটি দেখে সবার আগে ছুটে এলো সাঁঝ। মেঝেতে নিচু হয়ে বসে তাকে বুকে টেনে নিয়ে জানতে চাইল,

– কি হয়েছে? আমাদের সায়ু বেবি কাঁদছে কেনো?

সায়রা এতক্ষণ কাঁদছিল না। কিন্তু এবার সাঁঝের কথা শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। এমন দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে গেল সবাই। স্বর্ণলতা এগিয়ে এলেন। তিনিও একই প্রশ্ন করলেন।
এই বাড়ির কারো সাথে তেমন সখ্যতা নেই সায়রার। আফসানা নিজের মেয়েকে সবসময় নিজের কাছে রাখেন। একমাত্র ব্যক্তিক্রম সাঁঝ। সায়রাও ওকে পছন্দ করে বলে বাঁধা দেননি তিনি। সায়রার সুবাদে ও বাড়িতে অবাধে যাতায়াতের সুবিধা পেয়েছে সাঁঝ। যদিও সে খুব একটা যায় না।
অন্য সবাইকে মোটামুটি রকমের ভয় পায় ছোট্ট সায়রা। স্বর্ণলতার খসখসে গলা শুনে সাঁঝের বুকের সাথে আরও খানিকটা মিশে গিয়ে বলল,

– মায়ের খুব ব্যথা। কাঁদছে।

আফসানা কাঁদছে! এমন সংবাদ সকলের নিকট অবিশ্বাস্য। বাড়ির সদস্যরা একে অপরের মুখ চাওয়াচায়ি করতে লাগল। আফসানার মতো কঠিন মানবী সম্পর্কে এমন সংবাদে ভ্রু কুঁচকে গেছে স্বর্ণলতার। সাঁঝ এতোকিছু খেয়াল করল না। সে ব্যস্ত সায়রাকে নিয়ে। ছোট প্রাণটা তার বড় আদরের। তার চোখের জলে সে উদ্বিগ্ন। সায়রা দু হাতে সাঁঝের গলা জড়িয়ে আকুতি করল।

– তুমি চলো। মা কাঁদছে।

মায়ের চোখের জল অবুঝ প্রাণটিকে কতটা ভীত করে তুলেছে তা তার ফ্যাকাশে মুখ, আকুতিভরা চোখ দেখলে বুঝা যায়। সাঁঝ ঝটপট উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

– চলো তো দেখি।

স্বর্ণলতা হকচকিয়ে গেলেন। ঘরে মেহমান রেখে মেয়ে ছুটবে নাকি? তা কী করে হয়! আবার না গেলেও ব্যাপারটা অমানবিক দেখায়। তিনি প্রশ্ন করল,

– তোমার বাবা কোথায়?

– বাবা বাড়ি নেই।

মায়ের কথায় কান পাতলো না সাঁঝ। সায়রাকে কোলে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যেতে যাওয়ার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেল। পেছন থেকে একজোড়া পা দু কদম এগিয়ে এসে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,

– সাবধানে। দেখে হাঁটুন।

চলতি পথে সাঁঝ ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। একজোড়া চিন্তিত দৃষ্টি তার দিকে তাকিয়ে আছে। শক্তপোক্ত, সুঠাম তার দেহ। রোদের তাপে খানিকটা তামাটে বর্ণের ত্বক। একসময় হয়তো শ্বেত শুভ্র ছিল যার রঙ। পরণে সাদা পাঞ্জাবি, পায়জামা। ছোট ছোট চুলগুলো বর্ষার কদম ফুলের মতো দেখাচ্ছে। যতক্ষণ সে দৃষ্টি সীমার অভ্যন্তরণে ছিল, সাঁঝ একদৃষ্টিতে তাকে দেখে গেল।

চলবে..
#অক্ষরময়ী