#কুন্দ_ফুলের_মালা
#পর্ব-১
সাবিকুন নাহার নিপা
পাশের বাড়িতে সানাইয়ের সুর বাজছে। ঝিলমিলের সানাইয়ের সুর খুব পছন্দ। অথচ আজ বিষের মতো লাগছে। তীব্র বিষ, যেটা অন্তর পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। এই সানাইয়ের সুরের ভাগিদার তো ওর হবার কথা ছিলো। সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে অন্যকেউ। দরজা, জানালা বন্ধ করেও সুরের তীব্রতা একটুও কম হয় নি, হবে কী করে! দুই বাড়ির মধ্যে তফাৎ টুকু বড্ড কম।
মিঠাপুকুর লেনের তিন নাম্বার গলির ছয় নম্বর বিল্ডিংটায় ঝিলমিল’রা যখন ভাড়া থাকতে আসে তখন ও কেবল সিক্সে ভর্তি হয়েছে। টুটুল তখন কেজি ওয়ানে পড়ছে। তিন রুমের ছিমছাম বাসাটা মায়ের খুব পছন্দ হয়েছিল, উচ্ছ্বসিত গলায় বলেছিল, ঘরগুলো বেশ খোলামেলা। প্রচুর আলো বাতাস পাওয়া যাবে। আর বাবার পছন্দ হয়েছিল মিঠাপুকুর লেনের পরিবেশ। এখন ঝিলমিল ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে, ফাইনাল ইয়ারে। টুটুল আগামী বছর ইউনিভার্সিটিতে ঢুকবে। বাবা, মা এখন আর এখানে থাকতে চান না। মায়ের অতি যত্নে গোছানো সংসার, রান্নাঘরের বারান্দায় লাউপাতা, টমেটো গাছ, বসার ঘরের দেয়ালভর্তি টুটুলের আঁকা ছবিগুলো সব যেন অসহ্য হয়ে উঠেছে। সব ছেড়েছুড়ে পালাতে পারলেই যেন জীবনে শান্তি ফিরবে। মিঠাপুকুর লেনের মানুষগুলো ঝিলিমিলের বাবার কাছে বড্ড ভালো ছিলো। আনাস ভাইয়ের চায়ের দোকান, শফিক চাচার মুদির দোকান, টুটুলের কেরাম খেলার আসর সবকিছু আজ ফিকে যেন।
বাসায় কাজ করতে আসা মাজেদা খালাকে ছাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তার দোষ কী ছিলো! তিনি সরল গলায় প্রশ্ন করেছিলেন,
“ভাবী সবাইরে তো ঘরশুদ্ধ দাওয়াত দিছে। আপনাগো দেয় নাই?”
ধরতে গেলে খুব স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন, তবুও এই কথার পর এই বাসায় তার কাজ টা বন্ধ হয়ে গেল।
ঝিলমিলের বাবা নির্ভেজাল মানুষ। নয়টা পাঁচটা চাকরি করে বাসায় ফিরে দৌড়ে চলে যান আনাস ভাইয়ের দোকানে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দেশ, রাজনীতি, খেলার খবর নিয়ে কী সিরিয়াস আলোচনা চলে রাত নয়টা অবধি। আর এখন তিনি ঘরে চা খায়। পুরোনো পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করেন। চায়ের কাপে চা’টুকু বরফ ঠান্ডা হয়ে গেলেও তার খেয়াল হয় না।
টুটুল বাইরে যায়। ফিরে আসে মেজাজ খারাপ নিয়ে৷ ঘরে ঢুকে জুতোটা খুলে ছুড়ে মারে দেয়ালে। মা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না৷ টুটুল মুখে না বললেও মনে মনে হয়তো এক হাজার বার ঝিলমিল কে বলে ফেলেছে, আপু আমি তোমাকে ঘৃনা করি।
ঝিলমিলের একটা ভুল হয়েছিল। সেটা কতটা ভুল আর কতটা অন্যায় সেই হিসাব কষতে গিয়ে গোলমাল হয়ে যায়। সোজাসুজি নীল বিল্ডিং এর ছেলেটার নাম ছিলো আকাশ। প্রথম যখন ঝিলমিল তার নাম শুনেছিল তখন খুব হেসেছিল। আরে এটা তো বাংলা সিনেমার বড়লোক নায়কদের নাম। অবশ্য আকাশের নামটা তার সঙ্গে মানানসই ছিলো। বাড়িওয়ালা ছেলে, পুরান ঢাকায় বাবার কতো বড় বিজনেস আছে। ঝিলমিলই বোধহয় বোকা ছিলো। নীল বিল্ডিং এর মালিক কী ভাড়া বাসার ঝিলমিলের সঙ্গে যায় নাকি! বামন হয়ে চাঁদ ধরার প্রবাদ টা ওর মনে রাখা উচিত ছিলো ভালো করে।
আকাশ সুদর্শন ছেলে। পড়াশোনায় কতো ভালো, কী সুন্দর ভরাট গলা। এই গলায় কবিতা শুনতে কতো চমৎকার লাগে। আইয়ুব বাচ্চুর গানগুলো তার থেকেও সুন্দর করে গায় যেন। এমন ছেলে ঝিলমিলের নজর কেড়েছিল সহজেই।
প্রথম দেখা হলো ছাদে গিয়ে। আকাশ বই হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগে রেলিঙে দাঁড়িয়ে পড়ছে। ঝিলমিল গিয়েছিল আচারের বয়াম রোদে দিতে। তখন তো আকাশ ভালো করে চেয়েও দেখলো না। মনোযোগী ছাত্র পরীক্ষার পড়া তৈরী করতে ব্যস্ত। তবে রোজ রোজ ছাদে গিয়ে দেখার দরকার হলো না। নতুন স্কুলে গিয়ে জানতে পারলো আকাশের ছোট বোন ইশিকাও ওদের সাথে পড়ে। দুজনের ভাব হলো, হয়ে গেল বন্ধুত্বও। সেই সুবাদে ঝিলমিলের ওই বাড়িতে যাতায়াত। ঘরে খেজুর গুড়ের নাড়ু তৈরী হলে ঝিলমিল এক বাটি নিয়ে ছুটে যায় ইশিকার জন্য। ইশিকাও আসে কেক, পেটিস নিয়ে। ততদিনে আকাশের নজরেও আসে ঝিলমিল। আকাশ বুঝতে পারে যে ঝিলমিল ও’কে পছন্দ করে। তবুও প্রশ্রয় দেয় না, বাচ্চা একটা মেয়ে। এসব পছন্দ, অপছন্দ দুদিনেই ভুলে যাবে। এই বয়সের মেয়েরা রোমান্টিক ফিল্ম দেখে কল্পনায় ওই নায়ককে নিয়ে আবেগে ভাসে। প্রেমের গল্প পড়ে ভাবে এরকম একটা প্রেম তার জীবনেও আসবে। আবার বিরহের গল্পে হাপুস নয়নে কেঁদেকেটে এক বেলা ভাত না খেয়ে থাকে।
ঝিলমিল নিজের সীমার মধ্যে থাকে। ইশিকাকে ভুলেও জানায় না তার ভাইকে ওর কতো ভালো লাগে। এভাবেই চলছিল দিনগুলো। ঝিলমিল যখন নাইনে উঠলো আকাশ তখন ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেছে। সেই সময় একদিন সুযোগ এলো আকাশের সংস্পর্শে আরেকটু বেশী থাকার। ইশিকার মা একদিন বললেন,
“ইশিকা তো আকাশের কাছে অংক শিখছে। তুইও আসিস। দুটোয় মিলে গাল গল্প না করে একটু পড়াও হবে। ”
মা’ও রাজী হলেন। ঝিলমিল মতামত দেবার আগেই তিনি বললেন,
“হ্যাঁ তুইও যা না। ”
ঝিলমিলের তখন হাওয়ায় ওড়ার মতো আনন্দ হলো। পেটের মধ্যে অসংখ্য রঙিন প্রজাপতি ঘুরপাক খাচ্ছিলো। দুরুদুরু বুক নিয়ে গেল অংক শিখতে। এর আগে আকাশের সঙ্গে ওর একটা দুটো কথা হয়েছে শুধু। ইশিকাকে খুঁজতে গিয়ে না পেলে তখন হয়তো বলতো, ও তো নেই। এলে তোমার কথা বলব।
ঝিলমিল এমনিতে হড়বড় করে অনেক কথা বলে ফেললেও ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে গলা আটকে যায়। গার্লস স্কুলে পড়ার কারণে এই সমস্যা আরও বেশী হয় বলে ওর ধারণা।
প্রথম দিন পড়তে যাবার পর আকাশ ও’কে বলল,
“কোনো কিছু বুঝতে অসুবিধে হলে সেটা জানাবে না। আর বাড়িতে যে অংক গুলো দেয়া হবে সেগুলো সুন্দর করে লিখে আনবে। ”
সেই প্রথম অতোখানি কথা আকাশ ওর সঙ্গে বলেছিল। গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেলে ঝিলমিলের সমস্ত শরীরে যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। কেমন শীতল অনুভূতি হলো সমস্ত শরীরে। ধীরে ধীরে সখ্যতা বাড়ে। আকাশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ঝিলমিলের সঙ্গে গল্প করে। একদিন বিকেলের ঘটনা, ইশিকা ও’কে বসিয়ে রেখে কী একটা কাজে গেল। আকাশ বইয়ের ভাজে একটা কাগজ রেখে ঝিলমিল কে বলল,
“একটা গুরুত্বপূর্ণ নোটস দিয়েছি। বাসায় গিয়ে দেখো।”
ঝিলমিল উত্তেজনায় ফুটছিল। ইশিকা তেঁতুলের ভর্তা খাওয়ানোর জন্য কতো জোর করলো! অথচ ওর ইচ্ছেই হলো না। বাসায় এসে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে আগে বুকভরে নি:শ্বাস নিয়েছিল। তারপর বইয়ের ভাজ খুলেছে। পৌষের শীতে ঠান্ডা পানি স্পর্শ করলে যেমন কাঁপুনি অনুভূতি হয় ঝিলমিলের তেমন অনুভূতি হলো বইয়ের ভাজ খুলতে গিয়ে।
স্পষ্ট অক্ষরে কয়েকটি বাক্য লেখা। ঝিলমিল এতো বছরে হয়তো এক লক্ষ বার সেই বাক্যগুলো পড়েছে।
ঝিলমিল,
“এতো অস্থির হয়ো না। আরেকটু বড় হও, আমি তোমাদের বাসা বাবাকে দিয়ে বিয়ের প্রোপোজাল পাঠাব। টিএসসিতে ঘুরতে যাবে আমার সঙ্গে? ”
কতো আগের ঘটনা অথচ সমস্ত স্মৃতি এখনও রঙিন মনে হয়। যে মানুষ টা কয়েক কদম এগিয়ে এসে ও’কে স্বপ্ন দেখিয়েছিল সে এখন শত কদম পিছিয়ে গিয়ে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিলো! ঝিলমিল আজও তাই ভুল আর অন্যায়ের সমীকরণ মিলাতে ব্যর্থ।
****
দরজায় ধরাম ধরাম করে আওয়াজ হচ্ছে। মা রুক্ষ গলায় ঝিলমিলকে ডাকলেন,
“কিরে ভাত খাবি না? আসরের ওয়াক্ত তো হয়ে গেল! ”
ঝিলমিল খেতে পারে না আজকাল। খেতে ইচ্ছে করছে না এই বাক্যটা মা’কে বলতেও ভীষণ লজ্জা লাগে। দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। এলো চুল, শুকনো চোখ, মুখ দেখে মায়ের ভাবান্তর হলো না আজ। ভাতের থালাটা এগিয়ে দিলেন অবহেলায়। মা আগে কতো যত্ন নিয়ে খাওয়াতো। ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরলে গরম ভাত মেখে মুখে পুড়ে দিতো। আজকাল খেতে বলতেও তার অনিহা। ঝিলমিল ভাতের থালার দিকে তাকিয়ে রইলো। কাঁচকলার ভর্তা, ছোট মাছের চচ্চড়ি, ডাল। মায়ের শুকনো মুখটা দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার খাওয়া হয় নি?”
মা কঠিন গলায় বলল,
“আমি না খেয়ে থাকব কোন দু:খে? কেউ মরেছে? মরা বাড়ির মানুষও শোক ভুলে যায় দুদিনে।”
ঝিলমিল একপাশ থেকে খানিকটা ভাত মেখে খাওয়া শুরু করলো।
“নতুন বাসা নেয়া অবধি সময়টা তোর ফুপুর ওখানে গিয়ে থাকলেই পারতি। ভালো লাগছে ওই বাড়ির হৈ হুল্লোড় শুনতে?”
“ফুপুর ওখানে যেতে লজ্জা করে মা।”
“আর এখানে যা হচ্ছে তাতে লজ্জা করছে না? বাপ, ভাই রাস্তায় বেরোতে পর্যন্ত পারছে না, এতে কী লজ্জা হচ্ছে?”
ঝিলমিল চুপচাপ বসে রইলো। মা আক্ষেপের সুরে বললেন,
“আর মানুষজনের কথা কী বলব! বেইমানের বাচ্চা সব। ঘরে এসে কথা শুনিয়ে যায়। ”
ঝিলমিল ভাতের থালাটা সরিয়ে হাত ধুয়ে উঠে গেল। মা রাগী গলায় বললেন,
“ভাত না খেয়ে উঠছিস যে?”
“আমার ক্ষিদে নেই মা?”
মা স্থির চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার চোখে যেন আগুন ঝরছে। হঠাৎই ঝিলমিল কে অবাক করে দিয়ে এক থাপ্পড় মারলেন।
“কিসের জেদ দেখাচ্ছিস? যার জন্য জেদ দেখাচ্ছিস সে মহা আনন্দে নেচে গেয়ে বিয়ে করে বউ আনছে। আর তুই ঘরে বসে মরছিস! চেহারা দেখেছিস নিজের? ভুতের মতো লাগছে। ”
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে মা কাঁদতে শুরু করলেন। ঝিলমিল নীরবে নিজের ঘরে চলে এলো। সত্যিই ওর কোথাও যাবার জায়গা নেই। থাকলে চলে যেত। এই সানাইয়ের সুর এতো অসহ্যের!
***
“আকাইশ্যার অবস্থা দ্যাখছেন হৃদয় ভাই?”
সিগারেটে সুখটান দিয়ে অস্ফুটস্বরে হৃদয় হু বলল।
“সবাই জানে ঝিলমিলের সাথেই ওর বিয়ে হবে। সেইভাবে মেলামেশা করছে। আর এখন বাপের কথাতে আরেকটা মেয়েরে বিয়া করতেছে। ”
হৃদয় চুপ করে রইলো। সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ ফেলে দিয়ে পানির বোতল টা হাতে নিলো। যে কথা বলছে তার নাম রাজু। হৃদয়ের সঙ্গে সবসময় তাকে দেখা যায়। আড্ডার আসরে আজকে লোকসংখ্যা কম আছে। বেশীরভাগ চলে গেছে আকাশের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে। বিকেল থেকে শুরু হয়েছে আয়োজন। নামীদামী শিল্পীও ধরে আনা হয়েছে। বারোটার দিকে গানের আসর শুরু হবে। বিরিয়ানি, চিকেন রোস্ট গিলতে সবগুলো গিয়ে ভীড় করেছে। রাজু আর হৃদয় ছাড়া আরেকজন আছে শাকিল। সে এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বলল,
“মজা নেয়া শ্যাষ, এজন্য ছাইড়া দিছে। সিম্পল ব্যাপার। ”
হৃদয় অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। রাজু ইশারায় থামতে বলল। হৃদয় এর দৃষ্টি খেয়াল করে শাকিল আস্তে করে বলল,
“সরি ভাই। ”
মিঠাপুকুর লেনের অনেকেই যেমন জানে আকাশ আর ঝিলমিলের প্রেমের সম্পর্ক আছে। তেমনি অনেকে এটাও জানে যে মারপিট, আড্ডাবাজি করা হৃদয় ছেলেটা ঝিলমিল কে পছন্দ করে। এটা নিয়ে আকাশ ও হৃদয়ের ঝগড়াঝাটি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছিল। এবং ময়দানে হার মানতে হয়েছিল হৃদয়কে। কারণ ঝিলমিল প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিল যে সে আকাশ কে ভালোবাসে। হৃদয় এরপর আর কখনো পিছু ফিরে তাকায় নি ওদের দিকে। বন্ধুরা উস্কানি দিয়েছিল অনেক, তবুও ও কখনো ঝিলমিলের ক্ষতি করার কথা ভাবতে পারে নি। মহান প্রেমিক সেজে দূর থেকে দুজনকে দেখে চোখের পানি ফেলা টাইপের ছেলে হৃদয় না। নিজের পথ আলাদা করার পাশাপাশি ও নির্লিপ্ত থাকার অভিনয়ে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ডেডিকেশন দিয়েছে। এবং তাতে সফলও হয়েছে কারণ অন্তরের রাগ, জ্বালাপোড়া কাউকে বুঝতে দেয় নি।
রাস্তায়, পথে ঘাটে, দোকানে ঝিলমিল কে দেখলে স্বাভাবিক থেকেছে। আকাশ তো পোস্ট গ্রাজুয়েশন এর জন্য তখন দেশের বাইরে। যাবার আগে আংটি বদলের ফর্মালিটি করে গেছে। ফিরলেই বিয়ে। আশপাশের কিছু পরিচিত মুখ কানের কাছে গুনগুন করে মন্ত্র পড়তে লেগেছিল, আরেকবার চেষ্টা কর ঝিলমিল তোর হলেও হতে পারে। হৃদয় সেখানে আগ্রহ দেখায় নি। জোর করে ঝিলমিল কে পাওয়ার ইচ্ছে ওর নেই।
আকাশের বিয়েতে মিঠাপুকুর লেনের সবাইকে বলেছে। হৃদয়কে স্পেশাল ভাবে আকাশের বাবা আজমল তালুকদার বলে গেছেন। আকাশ একসময় ওর বন্ধু ছিলো। দুজন দুই মেরুর মানুষ হবার কারণে সেই বন্ধুত্ব ছুটে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। এরপর মুখোমুখি যতবার হয়েছে তিক্ততা ছাড়া কিছুই হয় নি। হৃদয়ের খুব ইচ্ছে ছিলো বিয়েতে যাবে। পেট ভরে কাচ্চি খাবে, তারপর একটা কিছু ঝামেলা করবে। ব্যাপার টা ও কাউকে জানায় নি। কী ঝামেলা করা যায় সেটা নিয়ে প্ল্যান করছিল, এরমধ্যে হৃদয়ের আব্বা ডেকে বললেন,
“আজমল তালুকদারের পোলার বিয়েতে যেন কোনো ঝামেলা না হয়। উনি এসে অনুরোধ করে গেছেন। তুমি কিন্তু আমার কথা শুনবা। ”
হৃদয় মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিল। এখন তাই চুপচাপ চা, সিগারেট খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
শাকিল হৃদয়কে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলল,
“ভাই সরি। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। ”
হৃদয় কঠিন গলায় বলল,
“মুখ ফসকে দ্বিতীয়বার যেন এসব আবোলতাবোল আর না বের হয়। আমার সামনেও না, অগোচরেও না। ”
আনাসের চায়ের দোকানে কাজ করে ছেন্টু নামের একটা বছর দশেকের ছেলে। সে এসে জানালো,
“হৃদয় ভাই, একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছে?”
“কে?”
ছেন্টু জবাব দেবার আগেই হৃদয়ের দৃষ্টি অনুসরণ করলো ওর পিছনে থাকা ঝিলমিল। কালো ওড়নায় ঢেকে রাখা মলিন মুখটা দেখতে অসুবিধে হলো না হৃদয়ের। ঝিলমিল বাকী দুজনকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে হৃদয়কে বলল,
“আমার কথা আছে আপনার সঙ্গে। কারোর সামনে নয়, একা।”
রাজু আর শাকিল কে কিছু বলতে হলো না। তারা বেরিয়ে গেল। ছেন্টুও চলে গেল। যারা গেছে তাদের কাছে ব্যাপার টা বিস্ময়কর। আজ এই সময়ে হৃদয়ের সঙ্গে ঝিলমিলের কী কথা থাকতে পারে!
সবাই চলে যাবার পর ঝিলমিল প্রথম কথাটাই বলল,
“আপনি কী আমাকে বিয়ে করবেন? ”
হৃদয় স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর কঠিন গলায় বলল,
“না।”
চলবে…..