অদিতির যবনিকা পর্ব-১৭+১৮

0
17

#অদিতির_যবনিকা -১৭
#তিশা

– “অবশেষে জানা গেলো সঙ্গীত জগতের নক্ষত্র রাফিয়ান রঙ্গনের প্রেমিকা সম্পর্কে।”
– “তবে কি সত্যিই প্রেম করছেন সুপারস্টার রাফিয়ান রঙ্গন। ”
– “জাপানের রাস্তায় দেখা মিললো প্রেমিকার সঙ্গে জনপ্রিয় সিঙ্গার আর আর। ”
এইরকম মুখরোচক হেডলাইনে ছেয়ে গেলো জনপ্রিয় সব বিনোদন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা।সেই সাথে অদিতি আর রঙ্গনের একসাথে অনেকগুলো ছবিও দেয়া আছে। বোঝাই যাচ্ছে দূর থেকে অতি গোপনে ছবিগুলো নেয়া হয়েছে। কিছু ছবিতে রঙ্গনের হুডি আর মাক্স পরা আর কিছু ছবিতে সরাসরি রঙ্গনকে বোঝা যাচ্ছে।মিডিয়া পাড়ায় একরকম দাবানলের মত জ্বলে উঠেছে এই সংবাদ।সকাল থেকে বিভিন্ন ফোনকলে রিফাতের অবস্থা নাজেহাল অথচ নাটের গুরু রঙ্গন নির্বিকার। সকালে ঘুম থেকে তুলে তাকে যখন জানানো হলো ব্যাপারটা চিন্তিত মুখে প্রথমে অদিতিকে ফোন করলো ওপাশ থেকে অদিতির কথা কিছু জানা গেলো না তবে ‘মিস চড়ুই আমি সব সামলে নেব আপনি অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না’ এই কথাটি বলে ফোন কেটেছিলো রঙ্গন।তারপর থেকে যেনো রঙ্গন নির্লিপ্ত। ধীর স্থির ভাবে ফ্রেশ হলো তারপর গাড়ি নিয়ে একাই বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে রিফাতকে বলল রাতে সে লাইভ কনফারেন্স করবে জাস্ট সেটা সোস্যাল সাইটে জানিয়ে রাখতে এবং আর কোন ফোনকল এটেন্ড করার দরকার নেই।

সকাল থেকে বেশ অনেক পরিচিত মানুষের ফোন এসেছে অদিতির কাছে কিন্তু অদিতি রঙ্গনের সাথে আলোচনা না করে কারো সাথেই কথা বলতে চাইছে না।অদিতি আগেই অনুমান করেছিলো তার আর রঙ্গনের সম্পর্ক যখন জনসম্মুখে আসবে তখন এরকম কিছু ঘটবে।পুরনো রঙ্গন আর এই রঙ্গনের জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। এজন্য আরো বেশি করে অদিতি রঙ্গনকে এড়িয়ে চলতে চেয়েছিলো। রূঢ় আচরণ করতো যেনো রঙ্গন নিজেই অদিতির ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় কিন্তু বিধিবাম।বেপরোয়া রঙ্গন ঠিকই অদিতির জীবনে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।অদিতি বুঝতে পারছে তাকে আর রঙ্গনকে অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে হবে সামনে।মিডিয়া তো যেমন তেমন অদিতির চিন্তা রঙ্গনের ভক্ত আর অনুরাগীদের নিয়ে।কোটি কোটি ভক্ত রঙ্গনের আবার কিছু রমণীর স্বপ্নের পুরুষ। সেলিব্রিটি জীবনসঙ্গী হওয়ার সবচেয়ে বড় অসুবিধা ভক্তদের হেট সহ্য করতে হয় প্রচুর।কিভাবে সবকিছু সামলাবে সে! অদিতি যখন এইসমস্ত চিন্তায় মশগুল তখনই দ্রুত পায়ে রঙ্গনকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখা গেলো।রঙ্গনকে দেখেই আহিনা ছুটে এসে পা জড়িয়ে ধরলো খুশিতে।রঙ্গন আহিনার কপালে আদর করে বলল,
– বেবী তুমি কিছুক্ষণ জেনি আন্টির সাথে খেলো বাবাই মাম্মামের সাথে একটু কথা বলেই আসছি।
আহিনা সম্মতি জানালো। রঙ্গন জেনিফারকে ইশারায় আহিনাকে ভিতরে নিয়ে যেতে বলল।আহিনা আর জেনিফার ভিতরে যেতেই রঙ্গন অদিতির সামনের সেন্টার টেবিলে বসলো। অদিতি নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে আছে রঙ্গনের দিকে।রঙ্গন অদিতির ডান হাতটা নিজের বাম হাতের মধ্যে মুঠোবন্দী করলো অপর হাত দিয়ে অদিতির মুখের উপরে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বলল,
– টেনশন হচ্ছে?
অদিতি ইশারায় হ্যা বোঝালো। রঙ্গন একটা স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে অদিতির দুটো হাতই মুঠোবন্দী করে নিলো।
– শুনুন এত দুশ্চিন্তা করার কিচ্ছু নেয়। আমি সব সামলে নেব আপনি শুধু নিজেকে শক্ত রাখুন।
– তোমার ভক্তরা?
অদিতির এতটুকু প্রশ্নে রঙ্গন বুঝলো অদিতির মনে কি চলছে।
– যারা আমাকে ভালোবাসে আমার প্রকৃত ভক্ত তারা সারাজীবন আমাকে ভালোবাসবে তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই।সেলিব্রিটি হলেও আমি একজন মানুষ আমার ব্যক্তিগত জীবন আছে আর আমার ব্যক্তিগত জীবন আমি আমার নিজের মত করে কাটাবো অন্য কারোর পছন্দমতো নয়।
অদিতি মৃদু হাসলো বিনিময়ে রঙ্গনও হাসলো তারপর একটু বিরতি নিয়ে অদিতির বাম চিবুকে হাত বোলাতে বোলাতে বলল ,
– সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনুন।
অদিতি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
– আপনি আমার থেকে বয়সে বড় ,ডিভোর্সী তাছাড়া আপনার একটা সন্তান আছে এই বিষয়গুলো হাতিয়ার হিসেবে অনেকে ব্যবহার করতে চাইবে আপনাকে দুর্বল করার জন্য কিন্তু আপনি কখনো এগুলোকে আপনার দুর্বলতা হতে দিবেন না। মনে রাখবেন এই রঙ্গন সব সময় আপনার পাশে আছে।এতগুলো বছর আপনি আহিনাকে নিয়ে একা স্ট্রাগল করেছেন তখন কিন্তু এই আশেপাশের মানুষ দেখতে আসেনি।তাই অন্যদের কথায় আমরা আমাদের জীবনের সুখ শান্তি বিসর্জন দিতে পারি না তাই না।তাই আমার প্রতি ভরসা রাখুন আর নিজেকে মানসিক ভাবে শক্ত রাখুন এই রাফিয়ান রঙ্গন যেহেতু একবার আপনার হাত ধরেছে মৃ’ত্যুর আগে আর এই হাত ছাড়ছে না।
অদিতি যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো এতক্ষণ রঙ্গনের কথা শুনছিলো। জীবনের এত চড়াই-উতরাই পার হয়ে এসে কি সৃষ্টিকর্তা যবনিকায় এত ভালোবাসা তার ললাটে লিখে রেখেছিলো! অদিতির অনুভূতিরা যেনো লাগামহীন হয়ে গেলো দুই হাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো রঙ্গনকে তার ধরে রাখা অশ্রুও স্বাধীন হলো। রঙ্গন হেসে দুইহাতে আগলে নিলো প্রিয়তমাকে।অদিতি যেনো রঙ্গনের বুকে অশ্রু ঝরিয়ে জীবনের সমস্ত ক্লেশ মুছে ফেলতে চাইছে। রঙ্গন কিছুক্ষণ কাদতে দিলো তাকে তারপর চুলের ভাজে হাত বুলিয়ে বলল,
– আমি আছি তো আর কাদতে হবে না।
তারপর একটু মজা করেই বলল,
– আমার বেবীও তো এত কাদে না।
অদিতি অশ্রুসিক্ত নয়নে হেসে ফেলল তারপর রঙ্গনের বুকে আলতো করে চড় মা’রলো।রঙ্গন হেসে অদিতির চোখ মুছে দিয়ে ললাটে অধর ডুবালো।
– তুমি আমাকে রেখে মাম্মামকে আবার আদর দিচ্ছো?
আহিনার অভিমানী কথায় দুজনের ঘোর কাটলো। তাকিয়ে দেখলো আহিনা কোমরে দুই হাত দিয়ে ঠোট ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে। রঙ্গন আর অদিতি হেসে ফেললো। রঙ্গন আহিনাকে কোলের মধ্যে নিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলল,
– বাবাই তার আহি বেবীকে সবচেয়ে বেশি আদর করে বুঝেছো। আর একটা সিক্রেট শোনো।
আহিনা সিক্রেট শুনতে মনোযোগী হলো।
– আমরা যদি মাম্মামকে বেশি বেশি আদর করি তাহলে আহি বেবী আর বাবাই দুষ্টু করলে মাম্মাম আর বকা দিবে না বুঝেছো?
– সত্যি বাবাই?!
আহিনা উৎফুল্ল ভাবে জানতে চাইলো। রঙ্গন মাথা নাড়িয়ে সত্যি বোঝালো। আহিনা বিজ্ঞের মত করে বলল,
– আচ্ছা তুমি মাম্মামকে একটু আদর কইরো তাহলে।
অদিতি অবাক হয়ে রঙ্গন আর আহিনার কথোপকথন শুনছিলো। মাঝে মাঝে ভেবে পায় না সে এত বুদ্ধি এই দুইজন পায় কোথায়। হতাশ হয়ে অদিতি ব্রেকফাস্ট সাজাতে চলে গেলো। অদিতিকে স্বাভাবিক ব্যবহার করতে দেখে রঙ্গন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। অদিতি স্বাভাবিক থাকলে সে পুরো দুনিয়া সামলে নিতে প্রস্তুত আছে।

– কিভাবে কি সামলাবে ভেবেছো কিছু?
ব্রেকফাস্ট সার্ভ করতে করতে জিজ্ঞেস করলো অদিতি। রঙ্গন বসতে বসতে বলল,
– সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্স করবো।আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা অফিসিয়ালি জানিয়ে দেব।
অদিতি ভাবুক হলো রঙ্গন টেবিলের ওপরে রাখা অদিতির হাতের উপরে নিজের হাত রেখে আশ্বস্ত করলো।তারপর বলল,
– বাবাকেও জানিয়েছি বাবা বাকিটা দেখে নিবে।
অদিতি মাথা নাড়িয়ে মৃদু হাসলো।আহিনা রওনক সাহেবের কথা শুনেই রঙ্গনের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
– আমি দাদুর সাথে দেখা করতে যাব।
– নিয়ে যাবো বেবী।
রঙ্গন আহিনার গালে খাবার তুলে দিতে দিতে আশ্বস্ত করলো। অদিতি ভ্রু কুচকে বলল,
– এই বিচ্ছু আমি ছাড়া বাকি সবাইকে পছন্দ করে।
রঙ্গন ঠোট এলিয়ে হাসলো তারপর আহিনার গাল টেনে বলল,
– বুঝলে বেবী মাম্মাম জেলাস।

” আমি আপনাদের রাফিয়ান রঙ্গন বলছি।বর্তমানে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি আপনাদেরকে কনফিউজড করেছে তাই আমি আজ বিষয়টি ক্লিয়ার করতে এসেছি।যার সাথে আমাকে দেখা যাচ্ছে তিনি আর কেউ নয় আমার ফিয়ন্সে এবং আমরা খুব দ্রুত বিয়ে করতে চলেছি।আমি আশা করব আমার ভক্তরা আমাকে পূর্ণ সমর্থন করবে এবং আমার ব্যক্তিগত জীবনকে আমার প্রফেশনাল জীবনের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না।”

এই ছোট্ট একটা ভিডিও বার্তা মুহুর্তেই ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলো।ইতিবাচক নেতিবাচক সব রকমের প্রতিক্রয়ায় দেখা গেলো কিন্তু রঙ্গন আর অদিতি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা কোন নেতিবাচক মন্তব্যের প্রভাব নিজেদের উপরে পড়তে দিবে না।

– স্যার অদিতি ম্যামের ডিভোর্স আর বাচ্চা নিয়ে মিডিয়াতে সংবাদ প্রচার হওয়া শুরু হচ্ছে।
নয়নের কথায় রওনক সাহেব কিছুক্ষণ গভীর চিন্তা করলেন তারপর তার ঠোটে দেখা দিলো রহস্যময় এক হাসি।নয়ন হয়তো সেই হাসির মানে বুঝলো।তার সহজ সরল বস হয়তো পুত্রবধূর জন্য বহু বছর পরে নিজের প্রকৃত ক্ষমতা ব্যবহার করতে চাইছেন।

বাতাসের গতিতে রঙ্গন আর অদিতির সম্পর্কের ব্যাপারটা ছড়িয়ে পড়লো।সেই খবর আরাফের কাছেও যেয়ে পৌছালো। জানার পরে কিছুক্ষণ আরাফ মূর্তির মত বসেছিলো। ঘটনা বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো তার। অদিতির কারণেই কি রঙ্গন তার সাথে বিজনেস পার্টনারশিপে আগ্রহী হয়েছে? কিন্তু তাহলে রঙ্গন এত টাকা ইনভেস্ট কেন করবে? নাকি পুরোটাই কাকতালীয়? যদি রঙ্গনের তার ক্ষতি করার কোন উদ্দেশ্যে থাকে তাহলে এখন তার কি করা উচিত? পার্টনারশিপ ক্যান্সেল করা উচিত তার? কিন্তু পার্টনারশিপ ক্যান্সেল করলে রঙ্গনের যে লস হবে তা রঙ্গনের গায়েও লাগবে না কিন্তু তার পক্ষে এত লস তো কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।আরাফ যখন এই সমস্ত দুশ্চিন্তায় বিভোর তখন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাসেল এলো।
– কি রে কি অবস্থা?
আরাফ উদাসভাবে মাথা নাড়ালো।রাসেল বুঝলো বন্ধুর মানসিক অবস্থা।
– আফসোস হচ্ছে? অদিতি আর রঙ্গনকে একসাথে দেখে।
আরাফ ভাবুক সুরে বলল,
– অদিতি কি রঙ্গনের মাধ্যমে আমার সাথে প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে?
– অদিতি কি চাইলে সেটা আরো আগে করতে পারতো না?
রাসেলের কথায় আরাফের মনে হলো সত্যিই তো অদিতি চাইলে তো আরো আগেই প্রতিশোধ নিতে পারতো।বন্ধুকে ভাবুক হতে দেখে রাসেল একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
– তখনই তোকে বলেছিলাম অদিতির সাথে কাজটা ঠিক করছিস না। আমি আজও এই জিনিসটা বুঝে উঠতে পারি না অদিতির মত মেয়েকে তুই কিভাবে ছাড়তে পারলি?
আরাফ উদাসভাবে বলল,
– প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরে অদিতি কেমন যেনো হয়ে গেলো একটুতেই রেগে যেতো কান্না করে দিতো রাত বিরাতে উদ্ভট বায়না করতো। ধীরে ধীরে জিনিসগুলো বিরক্তিকর লাগতে লাগলো আমার। অদিতির থেকে দূরে দূরে থাকতে লাগলাম তারপর রূহির সাথে দেখা হলো ঘনিষ্ঠতা বাড়লো বাকিটা তো তুই জানিসই।
রাসেল একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
– তুই কি হতভাগা রে আরাফ দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো তোর কাছে বিরক্তিকর ছিল। জানিস প্রেগন্যান্সির জার্নিটা স্বামী স্ত্রী দুজনের জন্যই এক কঠিন এক পরীক্ষা সেই পরীক্ষার পরেই সবচেয়ে সুন্দর সুখটা আসে জীবনে।
আরাফ গভীর চিত্তে ভাবলো এজন্যই সেই সুখ থেকে এখন আমি বঞ্চিত।রাসেল তার ফোনটা আরাফের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
– ছবিটা দেখ।
আরাফ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা নিউজ পোর্টালের ছবি রঙ্গনের কাধে একটা বাচ্চা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটি রঙ্গনের চুল মুট করে ধরে রেখেছে দুজনের মুখেই প্রানবন্ত হাসি। অপর ছবিতে বাচ্চা মেয়েটি রঙ্গনের কপালে আদর দিচ্ছে রঙ্গন চোখ বন্ধ করে সেই ভালোবাসা অনুভব করছে।রাসেল বলল,
– জানিস বাচ্চাটা কার?
আরাফ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
– তোর।
চমকে উঠলো আরাফ। মুহূর্তেই মস্তিষ্ক সচল হলো তার। তার মানে সেদিন মিটিংয়ে আহিনা কল করেছিলো রঙ্গনকে।এতগুলো বছরে এই প্রথম আরাফের হৃদপিণ্ডে তীক্ষ্ণ এক ব্যথা অনুভূত হলো বুঝি। মনে পড়ে গেলো সেদিন আহিনার রঙ্গনকে বাবাই ডাকা। কিভাবে আবদার জানাচ্ছিলো রঙ্গনকে। আরাফের অনুভূতিতে যেনো আজ জলোচ্ছ্বাস নেমে এলো। তারই সন্তান তার সামনে অন্য কাউকে বাবা ডাকলো!

……………..চলবে?

#অদিতির_যবনিকা -১৮
#তিশা

বন্ধুকে বিমর্ষ দেখে রাসেল হতাশভাবে ভাবলো এই পরিণতি আরাফ নিজের দোষে ডেকে নিয়ে এসেছে। অপরদিকে আরাফ নিষ্পলক আহিনার দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম আহিনাকে দেখছে সে। কি অদ্ভুত জীবন! তারই অংশ তার সন্তান অথচ বাবা হয়েও কোনদিন তাকে চোখের দেখাটুকুও দেখতে পায়নি সে।আরাফ ভালোভাবে আহিনাকে দেখে বুঝলো মেয়ে পুরোটাই মায়ের কার্বন কপি। সৃষ্টিকর্তাও বোধহয় চাননি আহিনা তার প্রতারক বাবার কোন চিহ্ন পাক। কথাগুলো ভেবে আরাফ শান্তভাবে ফোনটা রাসেলকে ফিরিয়ে দিলো। রাসেল ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল,
– অদ্ভুত ব্যাপার কি জানিস সকাল থেকে বেশ অদিতির অতীত জীবন নিয়ে তারপর আহিনাকে নিয়ে নিউজ হচ্ছিলো তারপর হঠাৎ যেনো সব থেমে গেলো। নিউজগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়েছে প্রায়।
আরাফ একটা শুকনো হাসি দিয়ে তাচ্ছিল্য ভাবে বলল,
– রাফিয়ান রঙ্গন আর রওনক চৌধুরীর কামাল এসব। বাইরে থেকে রওনক চৌধুরীকে সাদাসিধা ব্যবসায়ী মনে হয় কিন্তু তার ক্ষমতা আইসবার্গের মতই।পানির উপরে খুব সামান্যই বোঝা যায় কিন্তু অতল গভীরে তা হিমালয় সমান দীর্ঘাকায়।

অদিতি অফিসে খুব ব্যস্ত সময় পার করছে। কর্মচারীরা যে একটু অন্যভাবে তাকে দেখছে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে সে। কিন্তু সেসব বিষয় আমলে নিচ্ছে না অদিতি। আপাতত দুই তিনটা প্রজেক্ট নিয়ে খুবই ব্যস্ত সে তাই সকল মনোযোগ তার সেদিকেই।হঠাৎ মুঠোফোনের শব্দে তার মনোযোগ নষ্ট হলো। মামা ফোন করেছেন। অদিতি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে রফিক সাহেব কেন ফোন করেছেন।একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে ফোন রিসিভ করলো সে।কুশল বিনিময়ের পরেই রফিকুল ইসলাম সরাসরি প্রসঙ্গে আসলেন।
– ইন্টারনেটে এসব কি বলছে অদি? এগুলো কি সত্যি।
– হ্যা মামা সবটাই সত্যি।
রফিক সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন তারপর বললেন,
– তুই কি সব চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস? দেখ তুই বিয়ে করে নতুন করে জীবন সাজা আমিও চাই এতদিন আমিই তোকে বার বার বিয়ের কথা বলেছি এখনো বলছি কিন্তু সেলিব্রিটিকে বিয়ে করা ঠিক হবে?শুনেছি এই সমস্ত গায়কদের নাকি চরিত্রের দোষ থাকে বিয়ে টিকে না বেশিদিন।
অদিতি হতাশ হলো মামার কথায়। তারপর বেশ দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
– রঙ্গন অন্যদের মত নয় মামা।তাছাড়া সব সেলিব্রিটি খারাপ হয় না।চরিত্রের দোষ যেকোন পেশার মানুষের থাকতে পারে। আরাফ তো সেলিব্রিটি ছিল না তারপরও আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আহিনার বাবা হিসেবে রঙ্গনকেই চায়।
রফিক সাহেব এবার একটু নরম হলেন।
– আমি তোর ভালোই চাই সব সময়।তোর যদি মনে হয় রঙ্গনের সাথে তুই ভালো থাকবি তাহলে আমার কোন সমস্যা নেই।তোর আর আহিনার ভালো থাকাটায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
– তুমি চিন্তা করো না মামা। রঙ্গন ভালো মানুষ।
শান্তকণ্ঠে জবাব দিলো অদিতি। রফিক সাহেব আর বেশি কিছু বললেন না।

রফিক সাহেবের সাথে কথা বলে ফোন রাখার সাথে সাথে জেনিফার হন্তদন্ত হয়ে এলো অদিতির কেবিনে।অদিতি ইশারায় জানতে চাইলো কি হয়ছে?

আজ রঙ্গনের শ্যুট ছিল।অদিতি ব্যস্ততার জন্য এখনো শ্যুটের ওখানে যেতে পারিনি।তবে স্কুল শেষে আহিনার আবদারে যে তাকে অফিসে নিয়ে যেতে হবে এটা জেনিফার জানিয়েছিলো ফোন করে।অদিতি নিশ্চিত ছিল মেয়ে তার এসে আগেই বাবাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবে কিন্তু মেয়ে যে এরকম কাণ্ড ঘটাবে বুঝতে পারেনি।

জেনিফারের সাথে হন্তদন্ত হয়ে শ্যুটিং ফ্লোরে ঢুকলো অদিতি।চিন্তিত নজরে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো একপাশে চেয়ারে রঙ্গন বসে আছে আর তার কোলে আহিনা গলা জড়িয়ে উচ্চস্বরে কাদছে। অদিতি হতাশ হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই চুপচাপ রঙ্গন আর আহিনাকে দেখছে। আজ রঙ্গনের সাথে একজন নারী মডেলের শ্যুটের কথা আছে। আহিনা খুশি মনে ফ্লোরে ঢুকে দেখে তার বাবাই একটা মহিলার ঘাড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ব্যাস সেখানে হাত পা ছুড়ে কান্না করতে করতে বসে পড়ে।কান্না শুনে রঙ্গন শ্যুট ফেলে ছুটে এসে মেয়েকে কোলে নিলে আহিনা আরো জোরে জোরে কান্না কর‍তে থাকে। রঙ্গন বুঝে উঠতে পারছিল না মেয়ে এরকম কাদছে কেন। অনেক আদর দিয়ে জিজ্ঞেস করার পরে অবশেষে আহিনা বলে ‘তুমি শুধু মাম্মাম আর বেবীর কাছে থাকবে অন্য কারোর কাছে যাবে না।’ অবশেষে বোধগম্য হয় মেয়ে তার জেলাস।হেসে ফেলে সে। মনে মনে ভাবে ‘জেলাস হওয়ার কথা মায়ের অথচ মেয়ে জেলাস হচ্ছে।’ বাবাইকে হাসতে দেখে আবার কান্না করে দেয় আহিনা। তারপর থেকে রঙ্গনের কোলে উঠে বসে আছে আর কাদছে কোনভাবেই ছাড়বে না সে তার বাবাইকে। বাধ্য হয়েই অদিতিকে ডাকতে যায় জেনিফার।
– বেবী মাম্মামের কাছে আসো বাবাইকে কাজ করতে দাও।
অদিতিকে হাত বাড়াতে দেখে আহিনা আরো শক্ত করে রঙ্গনের গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। অদিতি জোর করে আহিনাকে নিতে গেলো রঙ্গন ওকে থামিয়ে দেয় তারপর বিজ্ঞাপন নির্দেশকের কাছ থেকে আধাঘন্টা সময় নিয়ে আহিনাকে কোলে নিয়েই ফ্লোর থেকে বেরিয়ে আসে। অদিতিও পিছু নেয়।

রঙ্গন আহিনাকে নিয়ে সোজা অদিতির কেবিনে ঢুকে সোফায় বসে পড়ে।
– আচ্ছা বাবাই সরি আর কখনো বেবীকে রেখে অন্য কারো কাছে যাবে না। এই দেখো চলে এসেছি ওখান থেকে আর যাবো না।
অনেক কষ্টে আহিনা চুপ করলে রঙ্গন আহিনাকে বলল,
– কবিতা শুনবে বেবী?
আহিনা মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানালো।

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে……
(পল্লী কবি জসীম উদ্দীন)

রঙ্গন আহিনাকে বুকের মধ্যে নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতে লাগলো। আহিনার সাথে অদিতিও যেনো বিমুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলো। রঙ্গন যে গানের পাশাপাশি এত ভালো আবৃত্তি করে আজ জানলো সে।অদিতি আবৃত্তি শুনতে শুনতে ভাবলো আর কত গুণ আছে সুপারস্টার রাফিয়ান রঙ্গনের আল্লাহ জানে।
কবিতা শুনতে শুনতে আহিনা রঙ্গনের বুকেই ঘুমিয়ে গেলো। রঙ্গন আহিনার কপালে আদর দিয়ে অতি সাবধানে সোফায় শুয়িয়ে দিলো তাকে। অদিতি নিষ্পলক দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য অবলোকন করলো। আরো একবার অনুভব করলো রঙ্গনের মত ভালো তাদেরকে কেউ বাসতে পারবে না।
– শ্যুট শেষ হওয়ার আগে বেবীর ঘুম ভেঙ্গে গেলে একটু বুঝিয়ে সুজিয়ে রাখবেন আমি শেষ করেই চলে আসবো।
– এমনভাবে বলছো আহিনা আগে কখনো আমার কাছে থাকেনি।
ঠোট বাকিয়ে বলল অদিতি।রঙ্গন বাকা হাসি দিয়ে অদিতির কানের কাছে মুখ নিয়ে গভীর স্বরে বলল,
– আগে যতই আপনারা একসাথে থাকুন না কেন বেবী আর বেবীর মাম্মাম এখন বাবাই ছাড়া থাকতে পারে না।
কথাটা বলে রঙ্গন অদিতির চুল খুলে দিয়ে দ্রুতবেগে চলে গেলো।অদিতি চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে পরক্ষণেই হেসে দিলো।

ফ্লোরা ভার্সিটির লাইব্রেরিতে বসে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে গভীর কোন হিসাব নিকাশ করছে সে।
– রঙ্গনের কথা ভাবছিস?
ন্যান্সির কথায় ঘোর কাটলো ফ্লোরার।
– নিউজ দেখেছিস? তোর রঙ্গন খুব শীঘ্রই বিয়ে কর‍তে যাচ্ছে?
ফ্লোরা মৃদু হেসে বলল,
– সারা দুনিয়া দেখেছে আমি কেন দেখবো না?
ন্যান্সির বান্ধবীর জন্য খারাপ লাগলো। সে তো জানে ফ্লোরা রঙ্গনের জন্য কতটা পাগল।ন্যান্সি নরম স্বরে বলল,
– খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে কি?
ফ্লোরা একটা মলিন হাসি দিলো।
– কষ্ট হচ্ছে না বললে মিথ্যা বলা হবে কিন্তু দেখ এটাও তো সত্যি যতই পাগলামি করি না এটা তো জানাই ছিল এরকম দিন আসবে একদিন।চাইলেই কি সেলিব্রিটিদের জীবনসঙ্গী করে পাওয়া সম্ভব।
রঙ্গনকে নিয়ে কল্পনার দুনিয়ায় মেতে থাকা ফ্লোরার মুখে এরকম ম্যাচিউর কথা শুনে অবাক হলো ন্যান্সি। কিন্তু পরক্ষণেই এটা ভেবে খুশি হলো যে ফ্লোরা নিজেকে সামলে নিতে পারবে।

আরাফ রাতে বাড়ি ফিরে চুপচাপ ল্যাপটপ নিয়ে বারান্দায় বসেছিলো। রুহি দীর্ঘসময় ধরে তাকে পর্যবেক্ষণ করে বারান্দায় তার সামনের চেয়ারে বসে পড়লো। কিন্তু রুহি এসে যে বসলো তাতেও আরাফের কোন হেলদোল দেখা গেলো না। রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাফকে দেখে বলল,
– অদিতির কথা ভাবছো?
রুহির হঠাৎ কথা বলাতে আরাফ চমকে তাকালো। রুহি পুনরায় বলল,
– অদিতিকে রঙ্গনের সাথে দেখে তোমার খারাপ লাগছে?
আরাফ অবাক হয়ে তাকালো রুহির দিকে।রুহি একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল,
– নিউজটা আমিও দেখেছি।
আরাফ চেয়ারে আরাম করে বসলো।
– অদিতিকে দেখে খারাপ লেগে আর কি হবে? আমি আমার মেয়েটার কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি তখন তোমার কথা শুনে মেয়েটাকে দূরে না সরালেই ভালো হতো।
রূহি দাতে দাত চেপে বলল,
– তাহলে কি এখন সব দোষ আমার?
– আমি কখন তোমাকে দোষ দিলাম?
রুহি গর্জে উঠলো।
– সেটাই তো দিলে। বোঝালে আমার জন্য তুমি তোমার মেয়ের থেকে আলাদা হয়ে গেছো।
আরাফের যেনো আজ রুহির চেচামেচিতে মেজাজ খারাপ হলো। হুট করে রুহির গাল চেপে ধরলো শক্ত করে তারপর দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে রক্তিম চোখে বলল,
– কিছু বলিনা বলে মাথায় উঠে গেছো।হ্যা তোমার জন্যই আমি আমার সন্তানের থেকে দূরে। এতই যখন ব্যাপারটা গায়ে লাগছে তো নিজে সন্তান দিতে পারছো না। তোমার জন্য আমার পরিবারও আমার থেকে দূরে তারপরও এত গলাবাজি করো কিভাবে আমার সাথে। সহ্য না হলে চলে যাও।
এরপর আরাফ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রুহিকে আস্তে করে ধাক্কা মে’রে ছেড়ে দিয়ে বলল,
– অবশ্য চলে আর যাবে কোথায়? যাওয়ার তো জায়গা থাকা লাগে।দেখো আবার কোন বিবাহিত বড়লোককে ধরতে পারো কি না!
কথাগুলো বলে আরাফ হনহন করে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে। রুহি সেখানেই বসে ডুকরে কেদে উঠলো। আরাফ তো এরকম ছিল না তাহলে সত্যিই কি আরাফ দূরে চলে যাচ্ছে তার থেকে!

ঘন্টাখানেক পরে আহিনার ঘুম ভাঙলো। অদিতি আহিনার পাশের সোফায় বসেই কাজ করছিলো। মেয়ের ঘুম ভাঙতে দেখে কাগজপত্র এক সাইডে সরিয়ে রেখে মেয়ের কাছে যেয়ে বসলো।আহিনা ঘুম ঘুম চোখে মাকে দেখে হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো। অদিতি মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে চুল গুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
– আমার পাখির ঘুম শেষ?
– বাবাই চলে গেছে মাম্মাম?
হতাশ হয়ে মাথা নাড়লো অদিতি। এতগুলো বছর পেলেপুষে বড় করলো মেয়েকে আর মেয়ে এখন বাবা ছাড়া চোখে কিছু দেখে না।
– বাবাই এক্ষুনি চলে আসবে পাখি।বাবাই আসতে আসতে চলো তো আমরা ফ্রেশ হয়ে ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার খাবো।
রঙ্গন ফিরলো আরো আধাঘন্টা পরে অদিতি তখন আহিনাকে খাওয়াচ্ছিলো। রঙ্গন এসে আহিনার পাশে বসতেই আহিনা জানালো আর খাবে না। অদিতিও জোর করলো না। আহিনার মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে রঙ্গন বলল,
– বাবা আপনাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছেন।সন্ধ্যার পরে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে আপনার?
অদিতি রঙ্গনের দিকে তাকালো। রঙ্গন অদিতির তাকানোর মানে বুঝলো মৃদু হেসে বলল,
– বাবা বোধহয় খুব দ্রুত তার পুত্রবধূ আর নাতনীকে বাড়ি তুলতে চাইছেন।
অদিতি অবাক হয়ে চাইলো রঙ্গনের হাসিমুখের দিকে।রঙ্গনের খুশি অদিতি তার চোখে মুখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
– আমিও যাবো দাদুর কাছে।
– তুমিই তো আগে যাবে বেবী।আমার বেবী সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে না গেলে কিভাবে হবে!
রঙ্গনের কথায় আহিনা খুশিতে হাততালি দিলো। অদিতি রঙ্গন আর আহিনার খুনসুটি দেখতে দেখতে ভাবলো সিদ্ধান্ত যেহেতু নেয়া হয়ে গেছে তাহলে আর অযথা দেরী করে কি হবে।মনে মনে হেসে ভাবলো ‘সৃষ্টিকর্তা হয়তো অদিতির যবনিকায় রাফিয়ান রঙ্গনকেই লিখে রেখেছিলেন।’

নোট: আজব হুট করে বিয়ে কিভাবে দিয়ে দেব? ধর তক্তা মার পেরেকের মত হুট করে বিয়ে দিলে তখন আপনারাই বলবেন এসব কি জগাখিচুড়ি লিখেছো তিশা!

………………চলবে?