অদিতির যবনিকা পর্ব-৩৩ এবং শেষ পর্ব

0
15

#অদিতির_যবনিকা (অন্তিম পর্ব)
#তিশা

রওনক সাহেব আজ জাপান ফিরে যাচ্ছেন।নয়ন বেশ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– রঙ্গন স্যার যে স্টেপ নিয়েছে তাতে তো আমাদের কোম্পানির বিশাল লসের সম্ভাবনা স্যার।
রওনক চৌধুরী বাকা হাসলেন। তারপর পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করে বসলেন।
– রঙ্গন গায়ক হতে পারে কিন্তু রক্ত সে রওনক চৌধুরীরই বহন করছে ভুলে যেও না।
নয়ন মাথা নাড়ালো। এই বাবা ছেলে যে গভীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এতদিনে এতটুকু বুঝেছে সে।

অনবরত ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আরাফের। ফোন রিসিভ করতেই রাসেল বেশ বিচলিত আওয়াজে বলল,
– তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস? দ্রুত মেইল চেক কর।
আরাফ কিছু বুঝলো না তবুও মেইল ওপেন করলো।ধীরে ধীরে আরাফের ললাটে ভাজ পড়লো। এটা কিভাবে সম্ভব! দ্রুত নিউজ ওপেন করলো সে।সেখানে দেখাচ্ছে আর আর ইন্ডাস্ট্রিজের সাথে তার যে প্রজেক্ট ছিল লো কোয়ালিটির ম্যাটেরিয়ালের কারণে সেটা ভেঙে পড়েছে।কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা না। প্রত্যেকটা ম্যাটেরিয়াল সে নিজে চেক করেছে তাহলে এসব কিভাবে সম্ভব।যেহেতু সার্বজনীন দায়িত্ব আরাফের কোম্পানির ছিল তাই ক্ষতিপূরন হিসেবে রঙ্গনকে তার দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দিতে হবে। যেহেতু এটা কয়েকশ কোটি টাকার প্রজেক্ট বেশিরভাগই রঙ্গন ইনভেস্ট করেছে এখন এত টাকা ফেরত দিতে গেলে আরাফকে পথে বসতে হবে। এক প্রকার হন্তদন্ত হয়ে সে ছুটল রওনক চৌধুরীর অফিসের দিকে।

রঙ্গন আহিনাকে নিয়েই অফিস এসেছে আজ। অদিতির শরীর ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। অদিতির একা আহিনাকে সামলাতে কষ্ট হয়ে যায় তাই জেনিফারকে অদিতির কাছে রেখে এসেছে আর আহিনাকে নিজের সাথে এনেছে। রঙ্গন আজ শুধুমাত্র আরাফের জন্যই অফিসে এসেছে। সে ভালো করেই জানে আরাফ মাহমুদ আজ তার সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে।
রঙ্গিন আহিনাকে ডেস্কের উপরে বসিয়ে কাজ করছিলো আর ফাকে ফাকে আহিনার কতশত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলো। এমন সময় আরাফ ঢুকলো কেবিনে। তাকে বেশ উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছিলো। রঙ্গন রিফাতকে বলল আহিনাকে নিয়ে বাইরে যেতে।
– বিশ্বাস করুন মিস্টার চৌধুরী আমি নিজে ম্যাটেরিয়াল চেক করেছিলাম তারপরও যে এরকমটা কেন হলো বুঝতে পারছি না।
আরাফ বেশ বিমর্ষ ভাবে বলল।রঙ্গন গম্ভীরভাবে প্রত্যুত্তর করলো,
– সেটা আমার দেখার ব্যাপার না।কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী প্রজেক্টের সিংহভাগ টাকা আমি দেব আপনার দায়িত্ব ছিল প্রজেক্ট যেনো পারফেক্ট হয় তার নিশ্চয়তা দেয়া।সেটা যেহেতু দিতে পারেন নি তাই কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী আপনাকে এখন ক্ষতিপূরণ তো দিতেই হবে।
আরাফ গভীর দৃষ্টিতে রঙ্গনের দিকে তাকিয়ে বলল,
– এগুলো আপনি করেছেন তাই না?অদিতির কথামতো?
রঙ্গন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
– আফসোস! অদিতিকে সত্যিই আপনি চিনেন নি।তার এত সময় কোথায় আপনার মতো নর্দমার কীটের পিছনে লাগবে।
কথাটা বলে রঙ্গন সরু চোখে তাকালো আরাফের দিকে। চেহারায় ফুটল রহস্যময় এক হাসি।
– তবে আমার আবার এসব বিষয়ে বিস্তর সময়। আর হ্যা আমিই করেছি সব।
আরাফ অবাক চোখে তাকালো। রঙ্গন পুনরায় বলল,
– আমি যখন আপনার ধ্বংস লেখা শুরু করেছি তখন অদিতি আর আমার মধ্যে কোন সম্পর্ক ছিল না। ভেবেছিলাম ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে আপনাকে পথে নামাবো কিন্তু আপনি আর রুহি আহিনার সাথে আমার দূরত্ব সৃষ্টি করার যে নোংরা খেলা খেললেন তাতে আর ভালো লাগলো না। আপনার মত মানুষ যাদের পাপ করার পরেও অনুশোচনা হয় না তাদেরকে প্রাসাদ থেকে ফুটপাতে নামানোটাই যোগ্য শাস্তি বলে মনে হয় আমার কাছে।অদিতিকে যেদিন ঠকিয়েছেন সেদিনই আপনি আপনার সর্বনাশের রাস্তা নিজেই বেছে নিয়েছেন।
আরাফ বুঝলো তার সর্বনাশের আর বাকি নেই।রঙ্গনের সাথে বাকবিতন্ডায় যেয়েও লাভ হবে না। সে নিশ্চুপ ভাবে উঠে চলে যেতে নিলো কিন্তু রঙ্গনের কথায় থেমে গেলো।
– আর একটা কথা ভালোভাবে জেনে রাখুন অদিতিকে বিয়ে করেছি বলে কিন্তু আহিনা আমার মেয়ে নয়।আমি আহিনার বাবাই হয়েছি অদিতি আমাকে মেনে নেওয়ার আরো আগে। তাই কোন সস্তা মেলোড্রামা করে আমার মেয়েকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে লাভ হবে না।
আরাফ নিশ্চুপ ভাবে বেরিয়ে এলো।সত্যিই অদিতির সাথে প্রতারণা করার মূল্য আজ তাকে হাড়ে হাড়ে টের পেতে হচ্ছে।বিধ্বস্ত আরাফ বেরিয়ে যেতে নিয়ে দেখলো আহিনা অফিসের স্টাফদের সাথে গল্প করছে। ছোট্ট ছোট্ট হাত নাড়িয়ে হেসে হেসে কিছু বলছে। কি নিষ্পাপ সেই দৃশ্য। অথচ আহিনা তার সন্তান যাকে সে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো।অথচ রঙ্গন সেই আহিনার নিজের বাবা না হয়েও তাকে আগলে নিয়েছে পরম স্নেহে।শেষবার পিছু ফিরে আহিনাকে একবার দেখলো আরাফ তারপর দ্রুত পদক্ষেপে বেরিয়ে গেলো। রঙ্গন পুরোটাই দাড়িয়ে দেখলো তারপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ভাবলো আরাফ মাহমুদ কত বড় দুর্ভাগা তুমি সৃষ্টিকর্তা কি অমূল্য সম্পদ তোমাকে দিয়েছিলেন তুমি সেটা অবহেলায় হারালে।
একরকম বিধ্বস্ত হয়েই আরাফ বাড়ি ফিরলো। রুহি আরাফের চেহারা দেখে কিছু একটা আন্দাজ করে পাশে যেয়ে বসলো।
– কি হয়েছে?
আরাফ একটা হাসি দিয়ে বলল,
– পাপ করেছিলাম তার শাস্তি পাচ্ছি।আমার ব্যবসা অর্থবিত্ত সব শেষ। রঙ্গন আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। বাড়িটাও হয়তো কালকের মধ্যে খালি কর‍তে হতে পারে।
রুহি আতকে উঠলো।
– তাহলে আমরা কোথায় যাব?
– রাস্তায়।
নির্বিকার জবাব আরাফের।
– পাগল হয়েছো?
– পাগল হয়েছিলাম বলেই অদিতির মত মেয়েকে ছেড়ে তোমার সাথে প্রেম করেছিলাম।
– এখন সব দোষ আমার?
– দোষ কোথায় দিলাম তোমাকে নিজের দোষটাই বললাম। তবে একবার ভেবে দেখো একটা মানুষ বিবাহিত জেনেও দিনের পর দিন তার আশেপাশে থাকার চেষ্টা তাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করাটা কি দোষের কাতারে পড়ে না?যাই হোক আমি কাউকেই দোষ দিচ্ছি না নিজের দোষটাই দেখছি।তুমি বোধহয় অর্থবিত্তহীন আরাফ মাহমুদের সংসার আর করবে না চাইলে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কোন বড়লোককে বিয়ে কর‍তে পারো।
কথাটা বলে আরাফ উঠে চলে গেলো। রুহি থমথমে চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।

দুপুরে ঘুমন্ত আহিনাকে নিয়ে রঙ্গন যখন ফিরে এলো এসে দেখলো অদিতি বিচলিত ভাবে বসে আছে।রঙ্গন আহিনাকে শুয়িয়ে দিয়ে অদিতির কাছে যেয়ে যেয়ে বলল,
– আবার কি নিয়ে এত টেনশন করছেন? প্রেসার বেড়ে যাবে তো!
– আরাফ তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো।
রঙ্গন ঘাড় দুলিয়ে হ্যা বোঝালো। অদিতি একটু চিন্তিতভাবে বলল,
– আমি চাই আরাফ ক্ষতিপূরন হিসেবে তোমাকে অতিরিক্ত যে টাকা দিবে সেটা তুমি মাহমুদ আংকেলকে দিয়ে দাও। দেখো আরাফ খারাপ কিন্তু তার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ আমাকে ভালোবেসেছে ইনফ্যাক্ট এখনো বাসে বলেই রুহিকে তারা আজও মেনে নেয়নি।তুমি প্রতিশোধ নিবে বলে অথবা যে কারণেই হোক আরাফকে ফাদে ফেলেই পথে বসিয়েছো। তাই ওই অতিরিক্ত অর্থে আমাদের কোন হক নেই।আরাফ তার শাস্তি পেয়েছে। কোম্পানি মাহমুদ আংকেলের হাতে গড়া তাই যার অর্থ তার কাছেই ফিরে যাওয়া ভালো কারণ আমি মনে করি ওই অর্থ কখনোই আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে না।
রঙ্গন নিষ্পলক চাইলো অদিতির দিকে। কি গভীর মূল্যবোধ ধারণ করে এই নারী নিজের মধ্যে। আলতো হেসে অদিতির হাতদুটো মুঠোবন্দী করে বলল,
– আমি এমনিতেই এই টাকা আমাদের কাছে রাখতাম না কোন চ্যারিটি ফাণ্ডেই দিতাম। আপনি যেহেতু চাইছেন মাহমুদ সাহেবকেই পাঠিয়ে দেয়া হবে।
– তুমি নিজে যাবে দিতে আর সাথে করে আহিনাকে নিয়ে যাবে।দেখা করিয়ে নিয়ে এসো উনাদের সাথে। তারা তো কোন দোষ করেনি।
অদিতির কথায় রঙ্গন মাথা নাড়ালো।

বিকালবেলা বসার ঘরে সবাই মিলে চায়ের আড্ডা বসিয়েছে।এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে অনু দরজা খুলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো।সামনে রঙ্গন আর আহিনাকে দেখে। রঙ্গন হাসিমুখে সালাম দিলো। অনু হতভম্ব ভাবেই সালামের উত্তর দিলো। যেহেতু নিউজের মাধ্যমে রঙ্গন আর অদিতির ব্যাপারটা সবাই জানে তাই অনুও সেই বিষয়ে অবগত।তবে আহিনার ছবি কোন নিউজেই স্পষ্ট ছিলনা।
– মাহমুদ আংকেল আছেন?
রঙ্গনের কথায় অনুর সম্বিত ফিরলো। ভিতরে আহবান জানালো রঙ্গনকে। রঙ্গন ভিতরে ঢুকে সবাইকে দেখে হাসিমুখে সালাম দিলো। অনু রঙ্গনকে বসতে বলল।রঙ্গন মাহমুদ সাহেবের সামনের সোফায় বসে বলল,
– আপনার নাতনী আহিনা।
কক্ষের মধ্যে যেনো একটা চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো।মাহমুদ সাহেবের সহধর্মিণী ছুটে যেয়ে আহিনাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন। অনুও সেই দলে সামিল হলেন। মাহমুদ সাহেবের নেত্রও বুঝি সিক্ত হয়ে এলো। তারই বংশধর তার ছেলের করা পাপের কারণে আজ তার থেকে কত দূরে।সবার কান্নাকাটিতে আহিনা একটু ভয় পেয়ে রঙ্গনকে জড়িয়ে ধরলো। রঙ্গন আশ্বস্ত করলো তাকে।
– বেবী উনারা তোমার দাদু দিদা হয়।
– কিন্তু আমার তো দাদু আছে।
আহিনার সহজ সরল স্বীকারোক্তি যেনো মাহমুদ সাহেবের বুকে হাতুড়ি পেটা করলো। তার নাতনী অন্য কাউকে দাদু হিসেবে জানে।রঙ্গন হেসে বলল,
– হ্যা কিন্তু উনারাও তোমার দাদু যাও সবার সাথে কথা বলো।
আহিনা এবার একটু সহজ হলো যেনো।রঙ্গন মাহমুদ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– আংকেল আপনার সাথে আমি একটু একান্তে কথা বলতে চাই।

মুখোমুখি বসে আছে রঙ্গন আর মাহমুদ সাহেব। রঙ্গন একটা ফাইল আর একটা ব্রাউন রঙের খাম উনার দিকে এগিয়ে দিলো। মাহমুদ সাহেব কৌতূহলী হয়ে সেগুলো দেখে বললেন,
– আমাকে এগুলো কেন দিচ্ছো?
– কারণ এগুলো আপনার। আহিনার মা চায় যার সম্পদ তার কাছে থাকায় ভালো। শুনেছি আপনার জামাতা সাবিত বেশ ভালো মানুষ। ইদানীং সে বেশ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আপনি চাইলে তাকে এগুলো দিতে পারেন।
মাহমুদ সাহেব অবাক হয়ে রঙ্গনের দিকে তাকালেন। রঙ্গন হেসে বলল,
– অদিতি চায় আপনারা ভালো থাকুন। আর অদিতির ইচ্ছায় আমার ইচ্ছা।
মাহমুদ সাহেব অকস্মাৎ রঙ্গনকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর সিক্ত কণ্ঠে বললেন,
– অদিতি তার জীবনে যোগ্য মানুষ খুজে পেয়েছে ভেবে আমার আজ সত্যিই ভালো লাগছে।দোয়া করি তোমরা সুখী হও।

কেটে গেছে বেশ কিছুদিন।অদিতি আর রঙ্গন জাপান ফিরে এসেছে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে অদিতির শরীরের অবনতি হচ্ছে। রঙ্গন বেশ চিন্তিত ব্যাপারটা নিয়ে। ডাক্তার জানিয়েছে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়। ব্যাপারটা রঙ্গনকে আরো দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। এত কমপ্লিকেশন হবে জানলে সে কখনোই বেবী নেওয়ার কথা ভাবতো না।

আটমাসের শেষে এসে হঠাৎ অদিতির লেবার পেইন উঠে যায়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসে রঙ্গন অদিতিকে। সময়ের আগে পেইন উঠায় ডাক্তার এটাকে ভালোভাবে নিলেন না। দ্রুত অপারেশনের প্রস্তুতি নিলেন।অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে অদিতি অশ্রুসিক্ত নয়নে মৃদু হেসে বলে ,
– আমি না ফিরলে যেনো গীটার নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়িও না নিজের খেয়াল রাখবে সেই সাথে বেবীদেরও।
কথাটা রঙ্গনের কলিজায় তীরের মত বিধলো। তারপরও হাসিমুখে অদিতির কপালে অধর ছুয়ে বলল,
– রঙ্গনের ভালোবাসা এতটাও দুর্বল নয়।আপনি এবং পুচকো দুজনেই সুস্থভাবেই ফিরবেন। আল্লাহর উপরে ভরসা আছে আমার।
অদিতি ছলছল চোখেই হাসলো। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হলো অপারেশন থিয়েটারে।অপারেশন থিয়েটারের দরজা বন্ধ হতেই রঙ্গন হাটু ভেঙে বসে পড়লো। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।অদিতিকে তো বুঝিয়েছে কিন্তু নিজেকে বুঝ দিবে কিভাবে সে। অদিতির কিছু হলে কিভাবে বাচবে সে।রওনক সাহেব রঙ্গনের কাধে হাত দিয়ে আশ্বস্ত করলেন। রঙ্গন বাবাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কেদে দিলো।
– বাবা আমার অদিতিকে ছাড়া চলবে না। কিভাবে বাচবো উনাকে ছাড়া?
– কিছু হবে না অদিতির তুমি শান্ত হও।
ছেলেকে সান্ত্বনা দিলেও ভিতরে ভিতরে সেও দুশ্চিন্তায় আছে। অদিতির কিছু হলে ছেলে যে তার ঠিক থাকবে না ভালোই বুঝতে পারছেন তিনি।

ঘন্টাখানেক পরে অপারেশন থিয়েটারের লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। রঙ্গন ছুটে গেলো দরজার দিকে। নার্স সাদা তোয়ালে দিয়ে পেচানো একটা ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে বের হলো।
– কংগ্রাচুলেশনস ছেলে হয়েছে।
– আমার বউ কেমন আছে?
ম্যাম ভালো আছেন। তবে একটু দুর্বল। একটু পরে কেবিনে শিফট করলে দেখা করতে পারবেন।রঙ্গন যেনো প্রাণ ফিরে এলো। নার্স বাচ্চাটিকে বাড়িয়ে ধরতেই রঙ্গন কাপা কাপা হাতে কোলে নিলে। রঙ্গনের বিশাল পুরুষালি হাতের মধ্যে যেনো একটা ছোট্ট তুলতুলে পুতুল। অশ্রুসিক্ত নেত্রে ছেলের কপালে অধর ছুয়ে বলল,
– আমার পুচকু! আমার সোনা আব্বা! এভাবে কেউ ভয় দেয়। বাবাই তোমার আর মাম্মামের চিন্তায় কত ভয় পেয়েছে জানো!
রওনক সাহেব এবার বললেন,
– অনেক আহলাদ হয়েছে এবার আমার কাছে দাও দেখি আমার দাদুভাইকে।
রঙ্গন হেসে বাবার কোলে দিলো ছেলেকে।এমন সময় রিফাতের সাথে আহিনা এলো। রঙ্গন টেনশনে তখন রিফাতের সাথে আহিনাকে বাইরে পাঠিয়েছিলো। আহিনা এসেই রঙ্গনের পা জড়িয়ে ধরলো। রঙ্গন হেসে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলল,
– বেবী পুচকু চলে এসেছে।
– সত্যি?
আহিনা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল।
ওদিকে জেনিফার আর রিফাতের মধ্যে ঝগড়া লেগেছে পুচকুকে কে আগে কোলে নিবে। জেনিফার একরকম রওনক সাহেবের কাছ থেকে লুফে নিয়েছে পুচকুকে।রিফাত কটমট করে চাইলো তার দিকে জেনিফার একটা শয়তানি হাসি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

কপালে কারো উষ্ণ স্পর্শ অনুভব করে অদিতি দুর্বলভাবে চোখ মেলে চাইলো। রঙ্গনকে হাসিমুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও আলতোভাবে হাসলো। তারপর ধীর স্বরে বলল,
– পুচকুকে দেখেছো।
রঙ্গন মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝালো। তারপর আলতো করে অদিতিকে জড়িয়ে ধরলো। গলায় ভেজা অনুভূত হতেই অদিতি অবাক হয়ে বলল,
– কাদছো কেন? আমরা তো ঠিক আছি।
– আর বেবী লাগবে না আমাদের।মেয়ে বাবু ছেলে বাবু দুটোই আছে আপনাকে নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে চাই না। জানেন কত ভয় পেয়েছি।
ধরা গলায় বলল রঙ্গন।অদিতির অধরে হাসির রেখা ফুটলো। দুর্বল হাতে এলোমেলো করে দিলো রঙ্গনের কোকড়া চুলগুলো। তারপর চুলের ভাজে অধর ছুয়ে দিলো। #অদিতির_যবনিকা য় আজ বুঝি প্রাপ্তির খাতা পরিপূর্ণ হলো।

নোট- রঙ্গনপ্রেমীরা শেষ হওয়াতে আপনারা যতটা কষ্ট পেয়েছেন আমি তার দ্বিগুণ পেয়েছি। তবে মন খারাপ কইরেন না রঙ্গপ্রেমীদের জন্য ভালো কিছু আসবে আগামীতে ইনশাআল্লাহ।

আগামীকাল কাল থেকে #ভীনদেশী_গোলাপ সিজন-০২ নিয়মিত আসবে।

………………….সমাপ্ত………………

বিঃদ্রঃ অনুমতি ব্যতীত সকল প্রকার কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।