#দ্বিতীয়জন
#Tahmina_Akhter
২৫…
সমুদ্রের ঢেউয়ের উত্তাল দুলুনিতে মিতার মন সরে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে, সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে এখানে, এমন পরিস্থিতিতে পাবে ভাবতেও পারে নি সে। Mr.A ধীরে ধীরে তার দিকে এগোতে লাগল, হালকা মুচকি হাসি মুখে লেগে আছে।,
— বুদ্ধির সঙ্গে অস্ত্র চালাতে দক্ষ তুমি! I am impressed!
— আপনি এখানে কি করছেন, Mr.A?
মিতার কণ্ঠে কম্পমান আতঙ্ক।
Mr.A রক্তাক্ত বাহু ধরে বলল,
— আমি এখানে এসেছি বলেই তুমি বেঁচে আছো।
— আমার বেঁচে থাকা বা মরে যাওয়াতে কিছু আসে যায় না।
— সব তো তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী হবে না, মিতা।
মিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার চোখে তাড়না, যা কেবল সত্যকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। Mr.A, নিজের চেহারা থেকে ঝরে পড়া কাপড়টা বাহুতে বাঁধল, নিঃশব্দে, দক্ষতার সঙ্গে। তার চোখ মিতার দিকে স্থির, এবং তার কণ্ঠে বিষাদের সুর
— আমাকে ছাড়া দিনকাল কেমন যাচ্ছে, মেরিজান? সুখ আছে? সুখ খুঁজে পাওয়ার তাড়নায় তো চলে গেলে, তাই না?
মিতা ধীরে ধীরে বলল,
— আপনাকে ছাড়া আমার সুখে থাকার কথা। অথচ দেখুন না প্রকৃতির হোক বা ভাগ্যের পরিহাস। আমাকে বারবার আপনার কাছে ফিরতে হচ্ছে Mr.A। দুঃখকে আলিঙ্গন করতে।
Mr.A মেঝেতে বসে, মিতাকে ইশারা করল পাশে বসার জন্য। মিতা বসল, কিন্তু তার চোখে ভয়, তার হৃদয় স্পন্দিত। Mr.A আরও কাছে এগোলো, তার চোখে আবেগ, আফিমের ন্যায় নেশা লেগে আছে।
— বাংলাদেশে চলে যাবার আগে তোমার একটিবার মনে হয়নি আমাকে তোমার বলে যাওয়া উচিত? আমার ভালোবাসা গ্রহণ না করলে কিন্তু অন্তত তোমার খবরাখবর আমার জানতে অসুবিধা কোথায়? টেল মি?
— যার কাছ থেকে পালাবো বলে রাশিয়া ছাড়লাম, তাকেই কেন জানাবো?
— কেন আমার কারণে দেশ ছাড়লে?
— এটা অনেক লম্বা কাহিনি।
— বলো, হাতে অফুরন্ত সময় আছে।
মিতা প্রশ্ন করল,
— আপনি জলদস্যুদের সঙ্গে কি করছেন?
Mr.A ব্যঙ্গ হাসি দিল,
— জলদস্যু নয় এরা আমার লোক। তোমাকে উদ্ধার করার জন্য আমাদের এত আয়োজন করে সমুদ্র পথে একশন মুভির কিছু ফ্যান্টাস্টিক রোল করতে হয়েছে। এন্ড উই আর ক্রিয়েট দিস। এন্ড ফাইনালি তো তোমাকে আমি খুঁজে পেয়েছি।
মিতার মাথা ঘুরছে। Mr.A তার চোখে আরও গভীর রহস্য ঢেলে বলল,
— বাংলাদেশে গিয়ে কখন কার সঙ্গে দেখা করেছো, কেইস রি-ওপেন , অফিসার শিহাবের সঙ্গে আলাপচারিতা, হানিফের হাতে কিডন্যাপ হওয়ার সব খবর আমি জানতাম। এখন জিজ্ঞেস করো না কিভাবে জানতাম। বলতে পারব না। বাট একটা ব্যাপার আমার ভালো লাগছে না। সেটা হলো তোমার মৃত স্বামীর কেইস রিওপেন করার কি প্রয়োজন? মৃত মানুষকে নিয়ে টানা-হেচড়া করার কি প্রয়োজন?
— এতকিছু জেনেছেন তবে এটাও হয়ত জানেন, আমার স্বামীর কবরে আমার স্বামীর লাশ নয় বরং অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেছে?
Mr.A চুপ হয়ে গেল, মৃদু এক দীর্ঘশ্বাস।
— হয়ত, ছয় বছরের মাঝে তোমার স্বামীর কবরের ওপরে অন্য কারো লাশ দাফন হয়েছে। দীর্ঘ সময় কেটে গেছে অনেক। লাশের অবস্থা কেমন হয় তুমি ডাক্তার মানুষ, তোমার জানার কথা?
মিতা চোখে চোখ রাখল তার দিকে। তার হৃদয় ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু মুখে দৃঢ়তা। সমুদ্রের গভীর ঘূর্ণি বাইরে, জাহাজের হালকা দুলুনি।।মুহূর্তটি যেন থেমে আছে, শুধু তাদের দুইজন আর অজানা সমুদ্রের ধ্বনি।
মিতার দুচোখে কাঁপা কাঁপা আগুন। সামনে বসা রহস্যময় মানুষটির দিকে তাকিয়ে তার বুকের ভেতর তোলপাড় চলতে লাগল। নিস্তব্ধ কক্ষে যেন প্রতিটি শব্দ থেমে গেছে। শুধু মিতার শ্বাস, আর Mr. A-এর চোখের স্থিরতা ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে।
মিতা ধীরে ধীরে কথা শুরু করল, কণ্ঠে কাঁপন, অথচ শব্দগুলো ধারালো ছুরির শান দেয়ার মতো।
—আমাকে কিডন্যাপ করা হয় সেদিন আমার নির্বাণ নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই ঘটনা আপনি জানেন এবং আমাকে নির্বাণের কাছ থেকে উদ্ধার করেছেন। নির্বাণ নামের মানুষটা আমার সঙ্গে একটা ইলিউশান গেম খেলে। আদনানের হাঁটাচলা, গলার স্বর সবকিছু অবিকল ভাবে নকল করে। আমি ধোঁকা খাই। পরে সে নিজেকে তার পরিচয় পরিচিত করল আমার সঙ্গে। এখানে একটা ব্যাপার আছে, আপনার গায়ের গন্ধ এবং নির্বাণ সাহেবের গায়ের গন্ধ আমার কাছে একই রকম মনে হয়েছে। এখন আপনি বলবেন, আপনার গায়ের গন্ধ পেলাম কবে? তাহলে আমি ঘটনাটি মনে করিয়ে দেই, নির্বাণ সাহেবের কাছ থেকে উদ্ধার করে আনার পরদিন সকালে আপনি আমার সঙ্গে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ছিলেন তখন আপনার গায়ের গন্ধটুকু পাই। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলল। নির্বাণ সাহেব আমাকে কয়েদ করে রাখলেও সেদিন আড়ালে আদনানের ব্যাপারে আমার চোখে ইলিউশন আপনি তৈরি করেছিলেন। এম আই রাইট মি. A?
Mr.A আজ নির্বাক। তার আজ শুনে যাবার দিন বোধহয় চুপ করে আছে। মিতা দ্বিতীয় প্রশ্ন করল,
— আপনাদের বাড়িতে ডাইনিং টেবিলে নাশতা খাওয়ার সময় আপনি আমার বাংলায় বলা কথা ধরে জবাব দিলেন। আবার, আপনি আমাকে গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার সময় বাংলায় কথা বলেছিলেন। কোনো বিদেশি মানুষ যদি বাংলায় কথা বলে তার বাংলা এতটা সুন্দর হবে না। যতটা আপনার গলায় চমৎকার শোনাচ্ছিল। এত খাঁটি বাংলা কথা আপনি কোত্থেকে শিখেছিলেন?
মিতা ঢোক গিলে ৪র্থ প্রশ্নটা করল,
— এ্যাডামের সঙ্গে আমি লেখাপড়া করেছি। প্রায়শই তার সঙ্গে আমার দেখা হত। সেই সুবাদে তার চোখ আমি দেখেছি। এ্যাডামের চোখের রঙ ছিল নীল বর্নের।
সেদিন সকালে আপনার সঙ্গে অপ্রীতিকর অবস্থায় আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করি আপনার চোখের একটি লেন্স নীল রঙে এবং অন্য চোখের লেন্স ধূসর রঙের। কিন্তু কেন এমনটা হয়েছিল ? অথচ দেখুন না আজকে আপনার চোখের লেন্স ধূসর রঙের ঠিক সেদিনের মত। এখন এ্যাডামের চোখের রঙ কোনটা আসল বলে আমি মেনে নেব?
শেষ প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেবার পর ঘরটা হিমশীতল হয়ে গেল। যেন সময়ও থমকে গেলো।
— আমাকে বাড়িতে যেদিন ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন, এবং আপনি চলে যাবার পর, সায়মা জানালো যে আব্রাহাম আমার নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনার পর এ্যাডাম, অর্থাৎ আপনি, মার খেয়েছিলেন। ঠোঁটের কোণে ফেটে গিয়েছিল, ডানহাতে ইনজুরি হয়েছিল।
তো এখন বলুন, যদি সত্যিই আপনি আব্রাহামের হাতে আহত হয়েছিলেন, তাহলে সেই মারের দাগগুলো কোথায় ছিল ? আপনি তো সেদিন আমার সামনে ছিলেন একেবারে ফিটফাট হয়ে।
মিতা Mr. A এর দিকে তাকিয়ে বলল,
–আপনি এ্যাডাম নন । এ্যাডামের চেহারা নিয়ে আপনি ঘুরছেন, এম আই রাইট?
মিতা আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
— এ্যাডামের রুপ কেন আপনার মাঝে ধারণ করেছেন? এ্যাডামের সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক?
— সব প্রশ্নের উত্তর দেব। তার আগে একটা মজার ঘটনা শেয়ার করি। আমার সঙ্গে একটা ব্যাপার ঘটেছে মিতা, শুনবে? তোমার সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাৎের ঘটনা।
Mr A মিতার গা ঘেঁসে বসল। মিতা সরে বসতে চাইলে শক্ত করে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বসালো।
— আমার ঘাড়ের কাছের চুল কে যেন চুরি করেছিল সেদিন?
কথাটি বলতেই মিতা চকিত নজরে তাকালো Mr, A এর দিকে। Mr, A মিতার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
— চোর কে আমি জানি? শুধুমাত্র চুল কেন চুরি করেছে সেটা এক্সপ্লেইন করলে চলবে? নাউ হারি আপ। টেল মি এভরি ডিটেইলস।
— ডিএনএ টেস্ট করার জন্য চুরি করেছি।
মিতা নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দেয়। Mr, A যেন উত্তরটা জানত হো হো করে হাসল।
— ডিএনএ রিপোর্টে কি বের হলো মিতা?
—– আপনার সঙ্গে আমার বড় বাবার ডিএনএ ৯৯% মিল আছে।
Mr, A চুপ হয়ে গেল মিতার কথা শুনে। মিতা আগ বাড়িয়ে বলল,
— আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য ডিএনএ টেস্ট করেছি আমি। ডিএনএ রিপোর্টে আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। এবার আপনার মুখ থেকে শুনব। আশা করছি আপনি সবটা ক্লিয়ার করবেন।
মিতার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে Mr. A উঠে দাঁড়ালো। তারপর, মিতার দিকে খানিকটা ঝুঁকে বলল,
— Then, You tell me who i am?
মিতা Mr A এর দিকে তাকিয়ে বলল,
— You are mr Adnan Sheikh. My beloved late husband.
“চলবে”
#দ্বিতীয়জন
#Tahmina_Akhter
২৬…
মিতার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে Mr. A উঠে দাঁড়ালো। তারপর, মিতার দিকে খানিকটা ঝুঁকে বলল,
— Then, You tell me who i am?
মিতা Mr A এর দিকে তাকিয়ে বলল,
— You are Mr. Adnan Sheikh. My beloved late husband.
Mr A এর অট্টহাসিতে পুরো রুম প্রতিধ্বনি তুলছে। মিতা তাকিয়ে আছে। আদনানকে ছোটবেলায় যতটুকু চিনেছে তখন মিতার মাঝে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারার ক্ষমতা তৈরি হয়নি। তাই মানুষটা আসলে কেমন মিতা বলতে পারবে না। কিন্তু, একজন স্বামী হিসেবে সবসময় মিতার কাছে সেরা ছিল সে। হটাৎ সেই স্বামীকে এত কূটিল অবস্থায় দেখলে কোন স্ত্রী স্বাভাবিক থাকতে পারবে
Mr. A তীক্ষ্ণ আবহে মিতাকল বললেন,
— মাত্র একটা ডিএনএ রিপোর্টে তুমি প্রমাণ করে ফেললে। আমি তোমার Late husband! কত সরল তোমার চিন্তাভাবনা মিতা! তুমি আদৌও কি জানো, আমি কে? কি আমার পরিচয়?
মিতার কণ্ঠে অল্প কাঁপন, কিন্তু স্থিরতা,
— আমি জানি আপনি আদনান। কিন্তু, কেন এতদিন আমাকে দূরে রেখেছেন? কেন নিজেকে মৃত দেখালেন?
Mr. A ধীরে ধীরে মিতার দিকে এগোল। ঘরের হালকা আলো তার মুখের ছায়াকে আরও রহস্যময় করে তুলছে।
— মিথ্যা সত্যের খেলা মিতা। কখনো কখনো, বাস্তবই চোখের সামনে অচেনা হয়ে যায়। আমি সব খুলে বলব, কিন্তু, হৃদয়ের কড়া দরজা খুলতে হবে আগে।
মিতার চোখে জিজ্ঞাসা আর উত্তেজনা মিশে আছে, কিন্তু সে ভীত নয়। সে জানতে চায়, সত্যটা যতই কষ্টদায়ক হোক না কেন?
— তাহলে, আজ সব বলবেন? কার ইশারায়, কিসের জন্য এমন কূটকৌশল? এবং এ্যাডামের সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক? কেন এ্যাডামের চেহারায় নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন?
Mr. A শুধু মুচকি হেসে পিছিয়ে গেল, যেন অজানা আগুনে সবকিছুতে মিশে গেছে।
মিতার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ বাইরে ঘূর্ণায়মান, কিন্তু রুমের ভিতরে কেবল রহস্য, থ্রিলিং এবং এক অবিশ্বাস্য সত্যের অপেক্ষা।
মিতার হাতটা ধরে Mr. A ধীরে ধীরে রুমের দরজা খুলে বাইরে গেল। বাতাসে সমুদ্রের লবণ মিশ্রিত গন্ধ মিশে, ঝাপসা আলোতে কেবল কৃষ্ণ সমুদ্রের বিশালতা ফুটে উঠছে। ঢেউয়ের ক্রন্দন যেন মিতার হৃদয়ের তাল মিলিয়ে নেচে চলেছে।
Mr. A-এর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে মিতা।, মিতার চোখ সমুদ্রের গভীরতায় হারিয়ে যাচ্ছে। কূটকৌশল আর রহস্যের আভা তার চারপাশে ঘেরা, অথচ Mr. A-এর হাতে ধরার অনুভূতিটা এক ধরনের নিরাপত্তার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে তার আশেপাশে। রাতের অন্ধকারে সমুদ্রের লবণাক্ত বাতাসের সঙ্গে মিতার চুলের প্রান্তগুলো নাচতে থাকে। Mr. A মৃদু হেসে বলল,
— এই সমুদ্রের মতো, মিতা, সত্যের ধারে-ধারে সব কিছুই ঢেউয়ের নিচে লুকিয়ে থাকে।
Mr. A জাহাজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ সমুদ্রের গভীরে ডুবে আছে। রাতের কৃষ্ণ আকাশের সাথে মিলিয়ে লম্বা ঢেউ যেন মৃদু সুর তুলে ধরে। বাতাসে ঠান্ডা স্পর্শ মিতার গায়ে শিরশির করতে শুরু করেছে।
Mr. A নীরব, সেই নীরবতা ভেঙে সে বলল,
— একটা গল্প বলব, শুনবে মিতা। ধরো এই গল্পের একটা চরিত্রে তুমিও আছে।
মিতার চোখে আগ্রহ, অথচ ভয়ের মিশ্রণ। জাহাজের দুলুনি তার অন্তরের অস্থিরতা আরও বেড়ে দিচ্ছে। Mr. A আবারও বলল,
— তবে গল্পের মধ্যেভাগে তোমার আগমন হবে। শুরুর দিকটা বলি তোমায়?
সমুদ্রের ঢেউয়ের ক্রন্দন যেন গল্পের প্রত্যেক শব্দের সঙ্গে প্রতিধ্বনি করছে। Mr. A-এর শব্দগুলো ধীরে ধীরে মিতার মনকে আচ্ছন্ন করছে। গল্পের শুরুর অন্ধকারে, রহস্য, কৌতূহল, এবং অপ্রত্যাশিত মোড়। সব মিলিয়ে যেন সমুদ্রের মতো গভীর, অজানা, এবং বিপদের মতো আকর্ষণীয়। ঢেউয়ের ঘূর্ণি, জাহাজের লাল-হালকা আলো, এবং Mr. A-এর রহস্যময় উপস্থিতি। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তকে এক অপার্থিব নাটকীয়তা দিচ্ছে।
— আমার বাবা, বাংলাদেশি আর আমার মা রাশিয়ান এবং ক্রিশ্চিয়ান ধর্মালম্বী ছিলেন।
শব্দগুলো বাতাসে ভেসে উঠতেই মিতার ভেতর কেমন যেন শিরশির করে উঠল। যেন এই গল্প কেবল গল্প নয়। একটা অদৃশ্য বাস্তব, যা তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে ধরা দিচ্ছে।
— আমার বাবা আমার মায়ের সঙ্গে কন্ট্র্যাক্ট ম্যারেজ করেছিল। পাঁচ বছরের একটা শর্ত, একটা কাগজে লেখা সম্পর্ক। মা ভেবেছিলেন সন্তান এলে হয়তো সেই কাগজের বাঁধন আত্মিক বাঁধনে পরিণত হবে। এরই ফাঁকে আমার মায়ের টুইন বেবি হলো। আমি আর আমার ভাই। বাবাকে খুশি করতে মা বাংলা ভাষা শিখলেন। ঝরঝরে ছিল তার বাংলা উচ্চারণ। আমার ভাই বাংলা শিখতে পারেনি ছোট ছিল তো তাই৷ কিন্তু, আমি শিখেছিলাম আমার মায়ের কাছে বাংলাভাষা। আর বাংলাভাষা যেন আমার রক্তে মিশে ছিল তাই অতি দ্রুত রপ্ত করে ফেলেছিলাম বাংলা ভাষা। মা তখন খুশি। ভেবেছিলেন বাবার মন এবার হয়তো থেমে যাবে মায়ের কাছে।
সে থামল, মৃদু হাসল তবে সেটা হাসি না, যেন বিদ্রূপ।
— কিন্তু বাবারা কি এত সহজে থামে, মিতা? আমার মা জানল, বাংলাদেশে আরেকজন অপেক্ষা করছে আমার বাবার জন্য । সেই স্ত্রী, সেই সংসার… আর আমার মা তো ছিলেন কেবল এক চুক্তির মানুষ মাত্র।
তার কণ্ঠ ভারী হলো।
— মা ভেতরে ভেতরে ভেঙে যাচ্ছিলেন। আমরা দেখতাম তিনি লুকিয়ে কাঁদছেন। তারপর একদিন… হুট করে মারা গেলেন। কোনো কারণ ছাড়াই। নিঃশব্দে। বাবা তখন তার ধর্মমতে মায়ের শেষ ক্রিয়া করল।
Mr. A শ্বাস নিলো ধীরে, যেন গলার ভেতর কোনো অদৃশ্য দহন আটকে আছে।
— সেদিনই বুঝেছিলাম, আমাদের সামনে কোনো আলো নেই। আমরা কেবল অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে বড় হবো।
মিতা শুনছিল, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার প্রশ্নের পাহাড় জমে উঠছে। এটা কি শুধু গল্প?
— একদিন বাবা জানালেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাবেন। আমাদের নির্দেশ দিলেন গ্র্যান্ডফাদারের বাসায় উঠে যেতে। কারণ তার ফ্ল্যাট, তার বেসমেন্ট, সব তিনি ভাড়া দিয়ে দেবেন। তখন আমরা দু’ভাই একেবারেই দিশেহারা। মায়ের শূন্যতা, বাবার অবহেলা, আর ভবিষ্যতের অন্ধকার। সব মিলে নিঃস্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তবু কোনো উপায় ছিল না। গ্র্যান্ডফাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা তার বাসায় গিয়ে উঠলাম।
সে থামল, গভীর নিশ্বাস ফেলল।
— বাবা বাংলাদেশে চলে গেলেন। আমাদের দিকে একবারও ফিরে তাকালেন না। অনেকবছর পর আমরা শুধু খবর শুনলাম, সাত বছর পরে তিনি ফিরেছেন। কিন্তু ফিরে এসেও আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন না।
মিতা তাকিয়ে আছে Mr. A-এর দিকে, নিঃশব্দে। তার বুকের ভেতর যেন ঢেউয়ের মতো প্রশ্ন তোলপাড় করছে।
Mr. A মুখ ফিরিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকাল, ঠোঁটে এক রকম তিক্ত হাসি।
— তবে আমরা লোক মারফত শুনলাম, তিনি বাংলাদেশ থেকে কাউকে সঙ্গে এনেছেন। সেই কেউ আর কেউ নয়… আমার বাবার প্রথম পক্ষের বড় ছেলে। আদনান শেখ।
শেষ শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র যেন আরও উত্তাল হয়ে উঠল।
মিতার বুকের ভেতর ধাক্কা খেলো,আদনান শেখ! নামটা তার জন্য ইতিহাস, স্মৃতি, বেদনা, ভালোবাসা,সবকিছুর মিশ্রণ। এখন Mr. A নিজ মুখে উচ্চারণ করল সেই নাম। কিন্তু কোন সম্পর্ক থেকে? তাহলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা আদনান নয়? এক এক মিনিট। বড় বাবা তো বেশ কয়েকবছর রাশিয়ায় ছিল। মিতা শুনেছিল। তার মানে কি?
মিতা হঠাৎ যেন নিজের শরীরটাই ভুলে গেল। সমুদ্রের উত্তাল গর্জন, বাতাসের তীব্র শোঁ শোঁ শব্দ। সব মিলিয়ে মুহূর্তটা তার ভেতরের ভাঙচুরের প্রতিধ্বনি হয়ে উঠল।
চোখ পলকহীন হয়ে Mr. A-এর দিকে তাকিয়ে রইল সে। ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, কিন্তু কণ্ঠ যেন নিজের অজান্তে বেরিয়ে এলো,
— বলুন তো? সত্যি করে বলুন, আপনি কে?
চোখে জল আসছিল, কিন্তু সে তা ফেলতে দিল না। ভেতরের ঝড়কে দমিয়ে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল—
— আপনি আদনান নন, আপনি এ্যাডাম নন। তাহলে আপনার পরিচয়টা কি, Mr. A?
Mr. A-এর ঠোঁটে ধীরে ধীরে ভেসে উঠল এক গা-ছমছমে হাসি। কণ্ঠ যেন গম্ভীর অথচ ছুরির ধারালো শানের শব্দ,
— আমি আদনানের বাবা রহিম শেখ এবং মারিয়ামের সন্তান আরাভ শেখ। এটাই হচ্ছে আমার আসল পরিচয়। আমার জমজ ভাই এ্যাডাম শেখ। যাকে তুমি তোমার ক্লাসমেট হিসেবে চেনো, মিসেস মিতা।
মিতা যেন পুরোপুরি স্থির হয়ে গেল। বুকের ভেতরটা হিম হয়ে আসছে, তবুও সে দমে গেল না।
চোখের দৃষ্টি স্থির রেখেই বলল,
— আরাভ শেখ? তাহলে, এতদিন ধরে যে ছায়ার মতো আমাকে অনুসরণ করছে, সব জানছে, সব দেখছে, সে আর কেউ নয়, আপনি ছিলেন?
তার কণ্ঠ কেঁপে উঠলেও সুরে ছিল কঠিনতা।
— আর এ্যাডাম? সে কি জানে, আপনি আদনানের নাম আর পরিচয় নিয়ে খেলছেন আমার সঙ্গে? নাকি সেও আপনার মতো এই রহস্যের খেলোয়াড়?
মিতার কণ্ঠে তীব্রতা বাড়ছিল।
— আমাকে শুধু সত্যিটা বলুন, Mr. A। আপনার সঙ্গে আদনানের কি হয়েছিল? আর কেন তার ছায়া হয়ে আপনি আমার জীবনে এলেন?
— আদনানের সঙ্গে আমার কোনোদিন কোনো সম্পর্ক ছিল না। না সে জানত আমাদের ব্যাপারে, না আমরা তাকে কখনো জানতে দিয়েছি।
কণ্ঠে তীব্র হাহাকার মিশে গেল আরাভের।
— কিন্তু, রাশিয়ায় আসার পর আদনান কিছু দুষ্ট লোকের পাল্লায় পড়ে যায়। রহিম শেখ বাংলাদেশে ফিরে যাবার পর।
মিতার ভেতরটা যেন ঝড় তুলল এই বাক্যে। ঠোঁট শুকিয়ে এলো, কিন্তু সে নিজেকে স্ট্রং রাখল।
— কী ধরনের দুষ্ট লোক? আর আপনি বলতে চাইছেন তার মৃত্যু, তার অন্তর্ধান। এসবের পেছনে সেই লোকগুলো জড়িত?
— পশু পাচারকারী আর অবৈধ ব্রিডিং গ্রুপের পাল্লায় পড়ে যায় আদনান।
কারণ, রাশিয়ায় আসার উদ্দেশ্য তার ছিল একেবারেই সৎ। পশুপাখির গবেষণা আর পড়াশোনা করা। কিন্তু ঠিক সেই জায়গাতেই ওকে ফাঁদে ফেলে।
মিতার বুক ধড়ফড় করে উঠল।
— কী বলছেন আপনি? গবেষণার মতো একটা মহৎ কাজ, কীভাবে অপরাধে টেনে নিল?
আরাভ তিক্ত হেসে বলল,
— এভাবেই তো হয়, মিতা। আদর্শবাদী মানুষই সবচেয়ে সহজ শিকার হয়। তাদের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে, স্বপ্নকে হাতিয়ার বানিয়ে,কালোবাজারি খেলোয়াড়রা ওদের অন্ধকারে ঠেলে দেয়। আদনানকে বলা হয়েছিল, বিরল প্রাণীর প্রজাতি রক্ষার নামে কিছু পরীক্ষামূলক ব্রিডিং প্রোজেক্টে অংশ নিতে হবে। অথচ সেগুলো আসলে ছিল ক্রস-ব্রিডিংয়ের ভয়াবহ খেলা।ভাল্লুক, বাঘ, সিংহ শিকার থেকে ধরে এনে নিষ্ঠুরভাবে জোর করে মেটিং করানো হতো।
বাতাস হঠাৎ আরও শীতল লাগল মিতার গায়ে। সে নিজের হাত দুটো দিয়ে কান চেপে ধরল।
— থামুন… প্লিজ থামুন…
আরাভ কাছে এসে থেমে গেল, তারপর ফিসফিস করে বলল
— তুমি যতটুকু জানো, সত্য তার চেয়েও ভয়ানক, মিতা। কিন্তু এই গল্পটা এখনো অর্ধেক শোনা বাকি তোমার।
আরাভ ধীরে ধীরে বলছিল,
— বাংলাদেশে যাওয়ার আগপর্যন্ত আদনান কোনোদিনও ভাবতে পারেনি, তার জীবনে কী ভয়ংকর খেলা অপেক্ষা করছে। সে শুধু ভেবেছিল, তোমাকে রাশিয়ায় নিয়ে আসবে, দু’জনে মিলে সংসার সাজাবে, নতুন একটা জীবন শুরু করবে।
মিতা হঠাৎ নিঃশ্বাস আটকে গেল। কানে যেন বাজতে লাগল শব্দটা
—“সংসার”
আরাভ থামল না।
— এখানেই ভুল করে আদনান। তার সরল বিশ্বাস ছিল, স্কলারশিপ পেতে হলে যত দরকারি কাগজপত্র আছে, জমা দিতে হবে। তোমার সব সার্টিফিকেট, এমনকি ব্যক্তিগত তথ্যও সে সংরক্ষণ না করে দিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যানেলের মাধ্যমে। অথচ আদনান বুঝতে পারেনি, সেগুলো সোজা গিয়ে পড়েছে গ্রুপ লিডারের হাতে।
আরাভের চোখে রাগ ফুটে উঠল।
— ওই লিডার ছিল শেয়ালের মতো ধূর্ত। তোমার নাম, তোমার পড়াশোনা, তোমাদের সম্পর্ক। সবকিছু ফাইলের মতো সাজানো তার সামনে। সেখান থেকেই আদনানকে ব্ল্যাকমেইল করার মোক্ষম সুযোগ পায় তারা। “গবেষণার সুযোগ” দিয়ে, “স্কলারশিপের নিরাপত্তা” দেখিয়ে, আদনানকে ঠেলে দেয় অন্ধকার গ্রুপের ভেতরে।
মিতা আর সহ্য করতে পারল না। ঠোঁট কাঁপতে লাগল তার।
— না,এটা মিথ্যে! আদনান এভাবে কিছুতে জড়াতে পারে না…
আরাভ নিঃশব্দে সমুদ্রের দিকে তাকাল। হাওয়া উড়ে এসে মিতার চুল এলোমেলো করে দিল।
— সত্য কখনো কখনো আমাদের চাওয়ার থেকেও বেশি নির্মম হয়, মিতা। তুমি শুনতে চাও কি, আদনান এরপর কী করল?
সমুদ্রের কালো রং ক্রমশ মিতার বুকের ভেতর ঢুকে যাচ্ছিল। রেলিং আঁকড়ে দাঁড়ানো হাত কেঁপে উঠল তার।
আরাভ ধীরে ধীরে কথা বলতে লাগল
— ব্ল্যাকমেইলের প্রথম দিনেই আদনান বুঝে গিয়েছিল, সে ভুল ফাঁদে পা দিয়েছে। কিন্তু তখন ফেরার কোনো পথ নেই। গ্রুপের লিডার ওদের লোকজনকে দেখিয়ে দিল
—যদি বেরিয়ে যাও, তোমার স্ত্রীকে খুঁজে বের করব। তোমার স্বপ্নের মিতা আর কখনোই নিরাপদ থাকবে না।
মিতা আঁতকে উঠল।
— আমি…?
আরাভ মাথা নাড়ল।
— হ্যাঁ, মিতা। তুমি তখন হয়তো নির্ভাবনায় বাসায় বসে আদনানের ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলে। অথচ আদনানের চোখের সামনে প্রতিদিন তোমার নাম, তোমার ছবি ব্যবহার করে তাকে ব্ল্যাকমেল করা হতো। ও ভাবত, যদি বেরিয়ে আসে তবে তোমার ক্ষতি হবে।
মিতার বুকের ভেতরটা যেন পাথর হয়ে গেল।
আরাভ বলল
— ধীরে ধীরে আদনানকে দিয়ে এমন কাজ করানো হলো, যা তার স্বপ্নের সঙ্গে মেলে না। পশুপাখির প্রতি যে ভালোবাসা নিয়ে সে পড়তে এসেছিল, সেই ভালোবাসাকেই ব্যবহার করে তাকে পশু পাচারের চেইনে ঠেলে দেওয়া হলো। বিরল প্রজাতির প্রাণী, হাইব্রিড ব্রিডিং। এসবই তার হাত দিয়েই চলত। আর এদিকে তোমার কাছে ফিরে আসার আশা নিয়ে প্রতিদিন সে ভেতরে ভেতরে মরছিল।
একটু থেমে আরাভ কণ্ঠ নামিয়ে আনল
— আদনান ভাবত, একদিন সব শেষ করে তোমাকে নিয়ে চলে যাবে। কিন্তু ভুলে গিয়েছিল, যে ফাইলটা লিডারের হাতে জমা আছে, তাতে তোমার সব পরিচয় লেখা। তুমি ছিলে তাদের সবচেয়ে বড় টার্গেট।
মিতার চোখ ভিজে গেল অশ্রুতে।
— না,না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
আরাভ ধীরে মাথা ঘোরাল তার দিকে। তার ঠোঁটের কোণে একরকম নির্মম হাসি।
— বিশ্বাস না করলে, আমি চাইলে তোমাকে প্রমাণ দেখাতে পারি। আদনানের স্বাক্ষর করা সেই ডকুমেন্টস
মিতা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।
মিতা কাঁদতে কাঁদতে আরাভের কলার চেপে ধরল। তার চোখে অশ্রু, কণ্ঠে কেঁপে ওঠা তীব্র যন্ত্রণার আওয়াজ।
— তাহলে কি আমি ধরে নেব, সেদিন সত্যিই আমার চোখের সামনে আদনান আমাকে রেখে পরপারে পাড়ি দিয়েছে? আদনানকে ফিরে পাওয়ার আর কোনো পথ নেই আমার কাছে। আদনানের লাশ কোথায়? আপনি কেন আমাকে বারবার প্রটেক্ট করছেন? আর এ্যাডাম কোথায়? সে কেন আমাকে সত্যি জানাল না?
— মিস মিতা, সব প্রশ্নের উত্তর একসাথে দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ কখনোই একবারে সত্যের গভীরে ডুব দিতে পারে না।
মিতার চোখে আকুলতা, আরাভের দিকে চোখ রেখে। সে বুঝতে পারছে, এই মানুষটিকে আটকানো সম্ভব নয়। প্রতিটি চলাফেরার মধ্যে তার আধিপত্য, প্রতিটি শব্দে তার নিয়ন্ত্রণ।
আরাভ ধীরে ধীরে তার উচ্চকণ্ঠ কণ্ঠে বলল
— তুমি আমার চোখের দিকে তাকাও। দেখো, আমার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, প্রতিটি নিঃশ্বাস, আমার অস্তিত্ব সবই তোমার জন্য। আমি যে তোমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেছি, তা কেবল আমার ইচ্ছা নয়। সেটি প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ মিতা নামের এই এশিয়ান মেয়েটা এই জগতে আমার সবচেয়ে মূল্যবান মানুষ।
সে একটি ধাপ এগিয়ে এল, জাহাজের রেলিং ধরে সমুদ্রের কালো ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে। চাঁদের হালকা আলো তার কণ্ঠের ঠাণ্ডা গম্ভীরতা আরও গভীর করেছে।
— এ্যাডামের কথা, আদনানের সত্য, সব কিছু তোমার সামনে আসবে। ধৈর্য ধরো। এবং মনে রাখো, কেউ তোমার জন্য যত্নশীল না হলেও, আমি আছি।
“চলবে”