ভাঙা পাঁজরে বসন্ত পর্ব-১৫

0
15

#ভাঙা_পাঁজরে_বসন্ত
#সানা_শেখ
#পর্ব_15

দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাঁকিয়ে রইল। দুজনের চেহারা দেখে বোঝার জো নেই তাদের ভেতরে কি চলছে।

মুক্তা শিকদার ভয়ে ভয়ে ডোরের দিকে তাঁকিয়ে আছেন। তাঁর বদ রাগী ছেলে টা নাজানি কি বলে বসে নির্ভান কে।

তুরাও চুপ চাপ তাঁকিয়ে আছে দুজনের দিকে। কি হবে কে জানে? ভিরান কে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ভিরান ঘুমায় নি। তূর্যের সাথে ঘুম থেকে উঠেছে বিকেলে। এখন না ঘুমিয়ে তূর্যের সাথেই খেলছিল। তূর্যও হাঁসি খুশি ভাবে ভিরানের সঙ্গ দিচ্ছিল এতক্ষণ।

তুহিন শিকদার ঘুমিয়ে গেছেন ক্লান্ত থাকায়।
ভিরান দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে বাবার মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“পাপা এটা আমার মামা।”

নির্ভান ছেলের মুখের দিকে তাকায়। ভিরান তূর্যের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“মামা এটা আমার পাপা।”

তূর্য ভিরানের দিকে একবার তাঁকিয়ে আবার নির্ভানের দিকে তাকায়। গম্ভীর থমথমে গলায় বলে,

“আসসালামু আলাইকুম।”

নির্ভান নিজেও গম্ভীর স্বরে সালামের জবাব দেয়। ছেলের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“ঘুমাওনি কেনো এখনো? এখন বাড়িতে চলো।”

ভিরান তূর্যের এক পা চার হাত পা দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ঝুলে যায়। বাবার মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“আমি মামা কে ছেড়ে যাবো না।”

নির্ভান ছেলের মুখের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। এই ছেলে পেয়েছে টা কি! একবার তুরা কে ছাড়া যাবো না, আবার এখন বলছে মামা কে ছাড়া যাবো না।

“ভিরান জেদ না করে চলো আমার সাথে। অনেক রাত হয়ে গেছে, সবাই ঘুমাবে এখন।”

“না না যাবো না, মামা কে আর তুরা কে নিয়ে চলো।”

“জেদ না করে চলো আমার সাথে।”

ছেলে কে ধরার চেষ্টা করে নির্ভান। ভিরান চিৎকার করার চেষ্টা করে বলে,

“মামা আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।”

ছেলের হাত ছেড়ে দেয় নির্ভান।

“চিৎকার করতে নিষেধ করেছি না তোমাকে?”

“তুরা আর মামা কে ছাড়া যাবো না।”

“ঘুমাও তাহলে।”

“ঘুম নেই।”

তূর্য ভিরান কে কোলে তুলে নেয়। উল্টো ঘুরে সোফার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

“ভেতরে আসুন।”

নির্ভান আগায় না, আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। সোফায় বসে থাকা তুরার দিকে তাকায়, তুরাও ওর দিকেই তাঁকিয়ে আছে। দুজনের চোখাচোখি হতেই তুরা দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। হার্টবিট বেড়ে গেছে আবার।

তূর্য বোনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

“পরী ওকে রুমে নিয়ে গিয়ে ঘুম পাড়া। মামা অনেক রাত হয়েছে যাও এখন ঘুমাও। আমরা আগামী কাল আবার খেলব।”

“প্রমিজ!”

“প্রমিজ।”

“তুরা কোলে।”

তুরা বসা থেকে উঠে ভিরান কে কোলে নিয়ে নিজের রুমের দিকে আগায়। যাওয়ার সময় নির্ভানের দিকে তাকায় দু’বার।

তূর্য ডোরের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“ভেতরে আসুন।”

নির্ভান দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,

“না ঠিক আছে, ভিরান ঘুমালে এসে নিয়ে যাব।”

বলেই উল্টো ঘুরে দাঁড়ায় নিচে যাওয়ার জন্য। তূর্য পিছু ডাকে আবার। এগিয়ে আসে ডোরের কাছে।

“ভেতরে আসুন কথা আছে আপনার সাথে।”

ভেতরে প্রবেশ করে নির্ভান। বসে তূর্যের পাশের সোফায়। তূর্য নির্ভানের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“চা নাকি কফি?”

“কিছু খাবো না।”

“আম্মু দুই কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসো।”

মুক্তা শিকদার সোফা ছেড়ে উঠতে চাইলেন না। তূর্য নির্ভান কে কি বলে সেসব শুনতে চেয়েছিলেন কিন্তু ছেলের জন্য এখন উঠে যেতে হচ্ছে। চা বানানোর জন্য কিচেনে চলে যান।

তূর্য গম্ভীর গলায় সরাসরি বলে,

“আপনি নাকি আমার বোন কে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন?”

নির্ভান তূর্যের মুখের দিকে তাঁকিয়ে গুরুগম্ভীর গলায় বলে,

“হ্যাঁ।”

“আপনারা দুজন কি মানান সই?”

“না।”

“তাহলে আপনি ওকে বিয়ে করতে চাইলেন কিভাবে?”

নির্ভান চুপ হয়ে থাকে। তূর্য আবার বলে,

“পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিয়ে করতে চাইছেন?”

নির্ভান মাথা টা নিচের দিকে দিয়ে ঘাড় টা একটু কাত করে চোখ দুটো উপরের দিকে তুলে তাঁকিয়ে থাকে তূর্যের মুখের দিকে।

“শুধু মাত্র ছেলের জন্য বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন! নিজের জন্য না!”

নির্ভান সোজা হয়ে বসে। সোফার হাতোলের ওপর কনুই রেখে মুষ্ঠি বদ্ধ হাতের উপর থুতনি ঠেকায়।

“প্রথমত ছেলের জন্য রাজি হয়েছি, দ্বিতীয়ত নিজের জন্যেও।”

“নিজের জন্য হলে আগে কেনো রাজি হননি?”

নির্ভান কিছু সময় চুপ চাপ তাঁকিয়ে থাকে। উত্তরের আশায় তূর্য নিজেও তাঁকিয়ে আছে। নির্ভান অদ্ভুত ভাবে একটু হাসে। হাঁসি টা তূর্যের কাছে মারাত্মক লাগে। এমন অদ্ভুত ভাবে এর আগে কাউকে হাসতে দেখেনি।
নির্ভান গম্ভীর দৃঢ় স্বরে বলে,

“এর আগে তো কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি, কোনো মেয়ের মায়ায়ও পড়িনি।”

তূর্য স্থির দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো নির্ভানের মুখের দিকে।
বুঝতে বাকি রইলো না পুরো ঘটনা।

“আমি আমার বোন কে আপনার সাথে বিয়ে দিতে রাজি নই।”

“আপনাদের মেয়ে, আপনারা না দিলে তো আমি জোর করে ছিনিয়ে নিতে পারবো না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যদি ওকে আমার ভাগ্যে লিখে থাকেন তাহলে তুরা অবশ্যই আমার কাছেই আসবে।”

“আজকের পর আপনি আমার বোনের সামনে আসবেন না।”

“আমার ছেলে কে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”

“ভিরান আসবে এই বাড়িতে, থাকবে তুরার কাছে শুধু আপনি আসবেন না।”

“ভয় পাচ্ছেন?”

“ভয় পাবো কেন?”

“তুরা যদি আমাকে ভালোবেসে ফেলে।”

“কখনোই এমন কিছু হবে না।”

“তুরা কে ভালো রাখবো আমি।”

“আমি রাজি না।”

“আমি বিয়ে করেছিলাম ছেলে আছে বলে নাকি আমার বয়স অনেক বেশি?”

“আরো কারণ আছে।”

“আমি কি মানুষ হিসেবে ভালো নই?”

“অবশ্যই একজন ভালো মানুষ আপনি। আপনারা আমাদের থেকে অনেক উপরে। আপনি বিয়ে করেছিলেন, একটা ছেলেও আছে। আমার বোনের চেয়ে বয়সে অনেক বড়। আমার বোন মাত্র আঠারো বছরের। দুনিয়া এখনো চেনেই না ঠিক ভাবে।”

“দুনিয়া আমি চেনাবো ওকে।”

“আমি এখন আমার বোন কে বিয়ে দিতে রাজিই না। সেখানে একজন সন্তানের বাবার কাছে তো আরো না।”

নির্ভান বলে না কিছু।

মুক্তা শিকদার চা বানিয়ে নিয়ে আসেন। দুজনের হাতে কাপ তুলে দিয়ে ছেলের পাশে বসেন।
তূর্য চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মায়ের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, ডোর আমি লাগিয়ে দেব।”

ছেলের কথা শুনে সোফা ছেড়ে উঠে রুমের দিকে এগিয়ে যান মুক্তা শিকদার।

দুজনের মধ্যে আর কোনো কথা হয় না।
ঘণ্টা খানিক পাড় হয়ে যাওয়ার পর তূর্য সোফা ছেড়ে উঠে তুরার রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। দুজনেই ঘুমিয়ে গেছে। ভেতরে প্রবেশ করে ভিরান কে তুরার বুক থেকে সরিয়ে কোলে তুলে নেয়। নিঃশব্দে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। নির্ভানের কোলে ভিরান কে তুলে দেয়।

নির্ভান ছেলে কে নিয়ে চুপ চাপ বেরিয়ে যায় ফ্ল্যাট থেকে। তূর্য ডোর লক করে লাইট অফ করে নিজের রুমে প্রবেশ করে। নির্ভান মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

নির্ভান নিচে এসে তুরার বেলকনির দিকে তাঁকিয়ে দেখে তুরা দাঁড়িয়ে আছে। তুরা তাঁকিয়ে থাকে দুজনের দিকে। ভিরান কে ওর বুক থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরেই ঘুম ভেঙে গেছে। তুরা আগে ঘুম কাতুরে মেয়ে থাকলেও এখন কেমন যেন ঘুম কমে এসেছে। রাতে বেশ কয়েক বার করে ঘুম ভেঙে যায়। ভিরান কে মিস করে রাতে।

নির্ভান বাম হাতে ছেলে কে ধরে রেখে ডান হাত উঁচু করে হাত নাড়িয়ে তুরা কে বাই জানায়।
তারপর গাড়ির ডোর খুলে উঠে বসে। মুহূর্তেই স্থান ত্যাগ করে ছুটে চলে যায় নির্ভানের গাড়ি। তুরা দাঁড়িয়ে রইলো, তাঁকিয়ে রইলো গাড়ি টা যাওয়ার পথে।
আজ কাল নির্ভান কে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।
_____________

এক সপ্তাহ পেরিয়ে যায়।
এশার নামাজের পর তূর্য বাবা-মা আর বোন কে তৈরি হতে বলে। সবাই কে নিয়ে আজ ডিনারে যাবে বাইরে।
বাইরে ডিনার করতে যাওয়ার কথা শুনে ভিরান মহা খুশি। আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাফালাফি করছে।

তূর্য ভিরানের দিকে তাঁকিয়ে হাসে। এই ছেলের নাম ভিরান না রেখে জাদু নয়তো আদর রাখা উচিত ছিল।

তুরা ভিরান কে নিজের রুমে নিয়ে এসে তৈরি করিয়ে দেয়। ভিরানের অর্ধেক ড্রেস এখন তুরার রুমে থাকে। ভিরানের অর্ধেক খেলনাও এখন এই ফ্ল্যাটে। বই খাতা সব এখানেই। তূর্য ভিরান কে দুদিন ধরে পড়ায়।

অল্প সময়ের মধ্যে সবাই রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। ভিরান দুই হাত প্রসারিত করে হাসি মুখে বলে,

“মামা কোলে।”

তূর্য হেঁসে কোলে তুলে নেয় ভিরান কে। চেপে ধরে চুমু খায়, ভিরান নিজেও চুমু খায় মামার গালে-কপালে।
ফ্ল্যাট থেকে একসাথে বের হয় সবাই।

রাস্তায় আসতেই দেখতে পায় নির্ভানের গাড়ি। ভিরান তূর্যের মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“মামা পাপার গাড়ি এখানে কেন?”

“তোমার পাপা গাড়ির ভেতরে বসে আছে।”

“পাপা।”

ছেলের ডাক শুনে ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে গেটের দিকে তাকায় নির্ভান। সবাই কে বাইরে দেখে কপাল ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে থাকে কিছু সময়। এরা তৈরি হয়ে যাচ্ছে কোথায়?
ভিরান আবার ডাকে। ল্যাপটপ বন্ধ করে রেখে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে নির্ভান। ভিরানের গলার স্বর প্রায় ঠিক হয়ে গেছে। এখন আর খুব একটা সমস্যা নেই।

গায়ের টিশার্ট ঠিক করতে করতে রাস্তা পাড় হয়ে চলে আসে পাঁচ জনের সামনে। ভিরান হাত বাড়িয়ে বাবার কোলে চলে আসে। খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,

“পাপা চলো আমরা ডিনারে যাব।”

নির্ভানের কুঁচকে যাওয়া কপাল ভ্রু আরো কুঁচকে যায়। একে একে সকলের মুখের দিকে তাকায়। তুরা চোরা চোখে ওকে দেখছে।
ভিরান আবার বলে,

“আজকে আমরা সবাই ডিনারে যাব।”

নির্ভান গম্ভীর স্বরে বলে,

“আমরা দুজন যাবো না।”

“না আমরাও যাব।”

“আমি তোমাকে নিয়ে যাবো, চলো।”

“না, আমরা সবাই একসাথে যাব।”

“ভিরান সব সময় জেদ করবে না।”

তূর্য নিজের ইগো সাইটে রেখে গম্ভীর স্বরে বলে,

“আপনিও চলুন আমাদের সাথে।”

“বলার জন্য ধন্যবাদ, পাপা চলো আমি তোমাকে তোমার ফেভারিট রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাব।”

ভিরান কিছু বলার আগেই তূর্য বলে,

“আপনি যাচ্ছেন আমাদের সাথে।”

নির্ভান তূর্যের দিকে তাকায়।

“চলুন।”

“পাপা চলো।”

তুহিন শিকদার আর মুক্তা শিকদারও বলেন নির্ভান কে নিজেদের সাথে যাওয়ার জন্য।
সকলের জোরাজুরিতে রাজি হয় নির্ভান।
তুহিন শিকদার গাড়ি বের করতে চাইলেও নির্ভান না করে। ওর গাড়ি তো রাস্তায় ই আছে। তূর্যও নির্ভানের গাড়িতে যেতে রাজি হয়ে যায়।

গাড়ি তে উঠে বসার সময় ভিরান ধরে আরেক বায়না। তুরা কে নির্ভানের পাশে বসতে হবে।
তূর্য বোনের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

“যা বোস সামনে।”

তূর্যের কথা শুনে সবাই অবাক শুধু ভিরান বাদে। ভিরান খুশি হয়ে তুরা কে ডাকছে ফ্রন্ট সিটে বসার জন্য।
তুরা ফ্রন্ট সিটে উঠে বসে। ভিরান তুরার কোলে বসে মহা খুশি। পেছনে তুহিন শিকদার, মুক্তা শিকদার আর তূর্য উঠে বসে।

রেস্টুরেন্টে পৌঁছে সবাই নিজেদের পছন্দের খাবার খায়। পাঁচ জনের মধ্যে নির্ভানের নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে। ওর পরনে ট্রাউজার আর টিশার্ট। আশে পাশের টেবিলের কয়েক জন একটু পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছে।

নির্ভান খাবারের বিল দিতে চাইলেও তূর্য দিতে দেয় না।
খাবারের বিল পরিশোধ করে রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ছয় জন। রাতের শহর বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে। আশে পাশে বাহারি রঙের লাইট জ্বলছে।

তূর্য নির্ভানের দিকে তাকায়, নির্ভান নিজেও ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকায়। তূর্য গম্ভীর স্বরে বলে,

“আপনাকে কি বলে সম্বোধন করবো বুঝতে পারছি না। আপনি বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড়। আবার আব্বুর অফিসের বস।”

নির্ভান তাঁকিয়ে রইলো তবে মুখে কিছু বললো না। তূর্য পুনরায় বলে,

“একটু এই পাশে আসুন।”

নির্ভান কোনো প্রশ্ন ছাড়াই তূর্যের পেছন পেছন নির্জন জায়গায় এসে দাঁড়ায়। ভিরান তুরার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের দুই হাতে বেলুন রয়েছে। গাড়ি থেকে নেমেই বেলুনের জন্য জেদ ধরেছিল ভিরান। নির্ভান কিনে দেওয়ার আগেই তূর্য দুজন কে কিনে দিয়েছিল।

তূর্য নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,

“আমি নিজের জেদ ধরে রাখতে পারছি না, আবার আপনার আর ভিরানের জেদ কেও জিততে দিতে পারছি না। আমি এই কয়েক দিনে অনেক ভেবে দেখলাম, হাজার হাজার বার ভেবে দেখেছি।”

একটু থামে তূর্য, নির্ভান পুরো কথা শোনার আগ্রহে তাঁকিয়ে আছে মুখের দিকে।

“আমি নিজের কথা ধরে রাখতে পারছি না, আমি হেরে গেছি ভিরানের কাছে। আমি রাজি তুরা কে আপনার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।”

শান্ত দৃষ্টিতে তূর্যের দিকে তাঁকিয়ে রইলো নির্ভান। তূর্যের কথা গুলো অবিশ্বাস্য লাগছে ওর কাছে। তূর্য দৃষ্টি তুলছে না উপরের দিকে, নিচের দিকেই তাঁকিয়ে আছে এখনো।

“আমি গুছিয়ে কিছু বলতে পারছি না আজকে। আমার কথা গুলো এলোমেলো লাগতে পারে। আমি আজকে ডিনারে এসেছি মূলত আপনাকে এই কথা গুলো বলার জন্যই। কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আপনার কা

বাকি কথা শেষ করার আগেই তুহিন শিকদারের গগন কাঁপানো চিৎকার শোনা যায়।
দুজনেই তড়িৎ গতিতে তাকায় তুহিন শিকদারের দিকে। মুহূর্তেই দৌঁড়ে আসে ওনার কাছে।
রাস্তায় র/ক্তা/ক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তুরা। এক হাতের মুঠোয় ফেটে যাওয়া বেলুনের সুতো। নিস্তেজ তুরার চোখ দুটো বন্ধ, র/ক্তে রাস্তা ভেসে যাচ্ছে। মুহূর্তেই মানুষের ভিড় জমে যায়।

তূর্য “পরী” বলে চিৎকার করেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। নির্ভান পাথরের মূর্তির মতো হয়ে গেছে। আশে পাশের চিৎকার চেঁচামেচি ওর কানে প্রবেশ করছে না। সব কিছুই যেন স্থির হয়ে গেছে।

চলবে………….