#শিরোনামহীন_অনুভূতি
রুহানিয়া
৪
সময় পেরোনোর সাথে সাথে ঈদের আনন্দপূর্ণ আমেজ ফুরিয়েছে। ছুটির দিন শেষে কর্মব্যস্ত দিবস ফিরে এসেছে। ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিমা। আজ ইন্টারভিউ দিতে যাবে বিধায় ফর্মাল স্যুটে নিজেকে আবৃত করেছে। হলদেটে ফর্সা ত্বকের ছিপছিপে গড়নের হাড্ডিসার দেহখানায় তা বেশ মানিয়েছ। গলায় টা-ই বাঁধতে বাঁধতে নিরেট স্বরে ফারজানা কে উদ্দেশ্য করে প্রিমা বলে উঠল,
–” বাড়িওয়ালা আংকেলের টাকাটা তুমি দিয়েছ বুবু? ”
প্লেটে নুডলস পরিবেশন করতে করতে ফারজানা ব্যস্ত গলায় জবাব দিল,
–” হ্যাঁ। তোর কোনো সমস্যা? ”
প্রিমা বিরক্ততে চ সূচক শব্দ তুলে বলল,
–” এত মানবিক হতে হবে না। যা বেতন পাও তাতে সংসার সামলে মেডিসিন কিনতে কিনতেই তোমার হাত ফাঁকা হয়ে যায়। আমার পেছনে এত টাকা খরচ করলে তুমি চলবে কীভাবে? ”
ফারজানার পা জোড়া থমকে গেলো। পেছনে ফিরে শান্ত সুরে বলল,
–” তুই না থাকলে আজ এই ফারাজানার অবস্থান হতো রাস্তায়। হয়তো ভিক্ষা করে খেতাম নয়তো কোনো জানোয়ারের থাবায় সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতাম। আমার হাতে টাকা আছে। আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে বলেই আমি এই পদক্ষেপ নিয়েছি। অহেতুক আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করিবনা প্রিমা।তোর বিপদে পাশে দাঁড়াতে না পারলে আমি হয়তো কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। ”
প্রিমা ম্লান হাসলো। ময়লার ঝুড়ি থেকে প্রেসক্রিপশন টা তুলে এনে ফারজানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
–” এটা ডাস্টবিনে কেনো? বাতাসে উড়ে পড়েছে নাকি? যাইহোক সকালের মেডিসিন গুলো বের করতো। তুমি তো আবার ভুলে যাও তাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। জলদি বের করো।
ফারজানা ফাঁকা ঢোক গিলে নিশ্চুপ রইল। প্রিমাকে আশ্বস্ত করতে মিথ্যা বললেও সত্যি এটাই যে তার কাছে কোনো টাকা নেই। মাসের প্রথম সপ্তাহ চলে অথচ হাতে মাত্র পাঁচশত টাকা আছে। ঔষধ ফুরিয়েছে দুদিন হলো কিন্তু মেডিসিনের যে আকাশছোঁয়া দাম তাতে কোনোভাবেই এখন ঔষধ কেনা সম্ভব নয়। প্রিমার প্রশ্নের উত্তরে কী জবাব দিবে ভেবে পেলনা ফারজানা।
প্রেসক্রিপশন টা ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখে প্রিমা পুনরায় বলল,
–” কী হলো? বের করো? ”
ফারজানা ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,
–” আসলে গতকাল মেডিসিন শেষ হয়ে গিয়েছে উপরন্তু নিয়ে আসার কথাও মনে ছিলো না তাই…
প্রিমা শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
–” পরবর্তীতে আমাকে মিথ্যা বলার দুঃসাহস দেখাবে না বুবু । মিথ্যা ব্যপারটাকে আমি ভীষণ ঘৃণা করি। ”
ফারজানার চিবুক নত হলো। রান্না ঘরের দিকে এগোতে এগোতে শ্রাগ করে বলল,
–” সপ্তাহখানেক মেডিসিন না খেলে আমি মরে যাবো না নিশ্চয়ই? ”
প্রিমার বুকটা কেঁপে উঠল। কথা না বাড়িয়ে নিশ্চুপ রইল। গলায় থাকা লকেটে হাত বুলিয়ে বলল,
–” স্মৃতি হিসেবে মস্তিষ্কে যে সুন্দর মুহূর্ত গুলো আছে সেগুলোই যথেষ্ট। জিনিস রাখা বাঞ্ছনীয় নয় বোধহয়। আমার আফসোস থাকবে তবে আমি যে অসহায়।তোমার শেষ স্মৃতি ধরে না রাখতে পারার আক্ষেপ আমার ইহজীবনে মিটবে মা আম্মা। মাফ করে দিয়ো তোমার অভাগিনী মেয়েটাকে। ”
প্রিমা সারাটাক্ষন নিশ্চুপ রইল৷ ফারজানা শত চেষ্টা করেও ওকে মানাতে পারলোনা। দু’জনে হালকা নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্যে। প্রিমার এত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিনে তার মন খারাপ করিয়ে দেওয়ায় ফারজানার ভীষণ রাগ হলো নিজের প্রতি।
_
চৌধুরী বাড়ির সকালটা বেশ আনন্দময়। পরিশেষে বাড়ির উত্তরসূরীদের মধ্যে একজন কোম্পানির দায়িত্ব নিচ্ছে। অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্যে একদম ফর্মাল গেটআপে রেডি হয়ে নিচে এসেছে আরশিয়ান। ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে দেখল চৌধুরী বাড়ির প্রত্যেকে উপস্থিত আছেন সেখানে। তাজরিয়ানের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
–” গুড মর্নিং গাইজ। ”
প্রত্যেকে যে যার মতো উত্তর দিল। আরশিয়ানের বাবা আরিয়ান চৌধুরী বললেন,
–” তোমার চোখমুখের দশা এমন কেনো? রাতে ঘুৃম হয়নি? ”
আরশিয়ান স্পষ্ট সুরে ছোট্ট করে জবাব দিল,
–” জেট ল্যাগের জন্য এমন হচ্ছে। ”
ছেলের কথা শুনে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন আরিয়ান চৌধুরী। অন্তর্মুখী চরিত্রের এবং চাপা স্বভাবের ছেলেটাকে নিয়ে তিনি বড্ড দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকেন। অতীতের এত বড় ধাক্কা সামলে উঠতে পেরেছে ভাবলেই বুকটা হালকা লাগে উনার। ছেলের উত্তর শুনে তিনি আর কোনো প্রশ্ন করলেন না।
এতক্ষণ শান্ত ভাবে বাপ ছেলের কথোপকথন শুনছিলেন তৌকির চৌধুরী। তিনি আরশিয়ান কে একবার দেখে নিয়ে তাজরিয়ান কে উদ্দেশ্য করে ভারী গলায় শুধালেন ,
–” তোমার বড় ভাই তো নিজের দায়িত্ব বুঝে নিল। তুমি কখন দায়িত্ব নিবা? ”
জেট ল্যাগের কারণে তাজরিয়ানের দশা বেহাল। যার দরুন মেজাজটাও বড্ড খিটখিটে হয়ে আছে। তৌকির চৌধুরী কথা শুনে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
–” জীবনে এত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি বাপের ব্যবসায় লাল বাত্তি জ্বালানোর জন্য? আমি আমার নিজেস্ব কোম্পানি সাইবারনেটিক্স এভিনিউ নিয়ে যথেষ্ট ভালো আছি। এদিকে মন দিয়ে নিজের মানইজ্জত কিংবা কারও কোম্পানির নাম ডুবাতে একদমই ইচ্ছুক নই আমি । ”
উপস্থিত সকলেই স্বাভাবিক। তারা বেশ ভালোমতো জানতো এই ছেলের থেকে সোজা উত্তর পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যপার। তাজওয়ার চৌধুরী মনে মনে বেশ দুঃখ বোধ করলেন। তার মতো ভদ্রলোকের এমন অভদ্র সন্তান হলো কীভাবে এটা ভাবলেই মাঝেমধ্যে উনার প্রেশার বেড়ে যায়।
তাজরিয়ানের প্রত্যুত্তরে খানিকটা হতাশ হলেন তৌকির চৌধুরী। পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে আহ্লাদী স্বরে আরশিয়ান কে বললেন,
–” দাদু ভাই আমার সপ্ন পূরণ করার জন্য তোমার একটা উপহার পাওনা আছে। বলো কী চাও তুমি ? ”
দাদুর কথায় আকস্মিক আরশিয়ানের হাত জোড়া থেমে গেলো। কিছু একটা ভেবে বলল,
–” সুখহৃদ কুঞ্জের মালিকানা আমার চাই দাদু। ”
অকস্মাৎ চৌধুরী বাড়ির আনন্দপূর্ণ পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেলো। সকলে থমকানো দৃষ্টিতে তাকাল আরশিয়ানের মুখপানে। সুহৃদ কুঞ্জ মূলত একটা এতিমখানা এবং কবরস্থান। সেই কবরস্থানে শায়িত আছে আরশিয়ানের প্রাণপ্রিয় স্ত্রী এবং প্রথম প্রেম। এত বছর শোক ভুলে থাকতে বিদেশ বিভূঁইয়ে পড়ে ছিল। সকলে ভেবেছিল তার ক্ষতটা বোধহয় নিরাময় হয়ে এসেছে কিন্তু আরশিয়ান যে এখনো সেই দগদগে ঘা বয়ে বেড়াচ্ছে তা বেশ বুঝল সকলে। তৌকির চৌধুরী আর কথা বাড়ালেন না। আনমনে প্লেটের খাবার নড়াচড়া করতে লাগলেন। নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো সকলের বুক চিরে।
সকলের বিষাদগ্রস্ত ভাবনার ঘোর ভাঙলো মেহরিমার বমি করার শব্দে। তাজরিয়ান ভ্রুকুটি করে এক হাতে আগলে রেখেছে তাকে। নতজানু দেহের সম্পূর্ণ ভরটা তাজরিয়ানের উপর ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে অস্থির চিত্তে মেহরিমা বলল,
–” আমাকে ছাড়ুন আরও ব..
আর বলতে পারলোনা তার আগেই আরেক দফা ভাসিয়ে ফেললো তাজরিয়ানের বুক। তাজরিয়ান মোটেও বিচলিত হলো না উল্টো অন্যদের দূরে সরতে বলল। মেহরিমাকে এতটা যত্নে আগলে রাখাতে চৌধুরী বাড়ির সকলে একেবারে বিস্ফোরিত চোখে তাজরিয়ানের দিকে চেয়ে থাকে। শুচিবায়ু রোগে আক্রান্ত তাজরিয়ানের এতটা নির্বিকার স্বভাব দেখে তারা রীতিমতো চমকিত। সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে তাজরিয়ান বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলল,
–” কী আশ্চর্য! তোমরা কী আমাকে অপটিক্যাল ফাইবার ভাবছ নাকি? ফর ইয়্যোর কাইন্ড ইনফরমেশন, এত দ্রুত মানব ডেটা সিগন্যাল শো করেনা । সুতারাং আমাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে না দেখে এই ফার্মের ছানার দিকে নজর দাও। ”
তুরাব সবে পানি মুখে নিয়েছিল। তাজরিয়ানের কথার অর্থ ধরতে পেরে তৎক্ষণাৎ বিষম লেগে সমস্ত পানি ছিটকে গিয়ে পড়লো তাজরিয়ানের উপর। উপস্থিত সকলে মুখ চেপে হেসে ফেলল। তাজরিয়ান চোখমুখ খিঁচিয়ে বলল,
— ” তুরাবের বাচ্চা, তোর পকেট মানি কাট কাট কাট। ”
এবার সকলে শব্দ করে হেসে ফেললো। তাজরিয়ান উপায়ন্তর না পেয়ে মেহরিমা কে নিয়ে ঘরের দিকে রওনা দিল। তার কিছুক্ষণ পর আরশিয়ান সকলের থেকে দোয়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অফিসের উদ্দেশ্যে। গাড়ির কাছে আসতেই আকস্মিক তার ব্যক্তিগত ফোনটা শব্দ করে উঠল। ভ্রু কুঁচকে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখল বহুল কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির নম্বর থেকে শুভেচ্ছা বার্তা এসেছে এবং তাতে লেখা,
–” 𝐖𝐢𝐬𝐡𝐢𝐧𝐠 𝐲𝐨𝐮 𝐚 𝐠𝐫𝐞𝐚𝐭 𝐟𝐢𝐫𝐬𝐭 𝐝𝐚𝐲 𝐚𝐭 𝐰𝐨𝐫𝐤 𝐝𝐞𝐚𝐫. 𝐋𝐞𝐭 𝐦𝐞 𝐤𝐧𝐨𝐰 𝐢𝐟 𝐲𝐨𝐮 𝐧𝐞𝐞𝐝 𝐚𝐧𝐲𝐭𝐡𝐢𝐧𝐠. [ Mr. S I P ]
আরশিয়ানের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। তামাটে বর্ণের মুখবিবরে হাসিটা চমৎকার দেখাল। ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট টেনে নিয়ে সেটা লক করতে করতে বলল,
–” লেটস স্টার্ট দ্যা ওয়ার! ”
_
বিরক্ত মুখে বিছানার উপর বসে আছে তাজরিয়া। একমনে ভেবে যাচ্ছে শতশত চিন্তা। মেহরিমা প্রি ম্যাচিউর বেবি। সারা বছর তার নানান ধরনের অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে। মেয়েটার ইমিউনিটি সিস্টেম বেশ উইক। রিসেন্টলি আবার হরমোনাল সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঈদের দিন থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে বেচারি। মেহরিমার সাথে খাপখাওয়াতে হলে তাজরিয়ান কে বেশ রয়েসয়ে আগাতে হবে।
তার ভাবনার মাঝে মেহরিমা দুর্বল পায়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। তার শুভ্র শরীরে সাদা রঙের একটা বাথ রোব জড়ানো। মাথায় টাওয়েল পেঁচানো থাকলেও দু/চারটা চুল বেরিয়ে আছে। ফ্যাকাশে মুখটা ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে। চোখ ফিরিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই তার চোখ আঁটকে গেলো মেহরিমার উন্মুক্ত ফর্সা পেলব পা জোড়ায়। প্রিয় নারীর এহেন প্রলয়ঙ্কারী রুপ দেখে শুকনো ঢোক গিলে অন্যপাশে তাকাল তাজরিয়ান। নিজেকে সামলানোর অভিপ্রায়ে শক্ত হাতের মুঠোয় খামচে ধরলো বিছানার শুভ্র চাদর।
তাজরিয়ান কে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখে মেহরিমা এগিয়ে এসে ক্ষীণ গলায় বলল,
–” চোখ বন্ধ করে রেখেছেন কেনো? মাথা ব্যথা করছে? চুল থেকে পানি পড়ছে সে খেয়াল আছে? এমন রোবটের মতো বসে আছেন কেনো আপনি ?”
তাজরিয়ান উত্তর দিল না। মেহরিমা উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের মাথার টাওয়েলটা খুলে তাজরিয়ানের মাথা মুছে দিতে শুরু করল। আকস্মিক এমনটা হওয়ায় তাজরিয়ান চোখ মেলে তাকাল। সামনে সাক্ষাৎ কোনো শুভ্র পরী কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো। মেহরিমার কোমর পেঁচিয়ে ধরে তাকে সোজা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল। বেচারি ব্যথাতুর শব্দ করার সুযোগটাও পেলনা। ধৈর্যহীন বিধ্বংসী এক ঝড় আছড়ে পড়ল তার নরম ওষ্ঠে। শ্বাস নেওয়ার বিন্দুমাত্র অবকাশ পেলনা মেয়েটা। নিজের উপর থেকে ভারিক্কি শরীরটা সরানোর চেষ্টা করলে শক্তপোক্ত পেশিবহুল হাতের বাঁধনে আঁটকে পড়ল কোমল হাতজোড়া।
কীয়ৎকাল পর থামল সেই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রলয়। দুর্বল মেয়েটা একেবারে সিঁটিয়ে গেছে বিছানার সাথে। বুকে হাত রেখে লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে অক্সিজেনের কমতি পূরণের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে অথচ অপরপক্ষ তখনও বেসামাল। হাঁপানো সুরে অভিযোগ তুলে তাজরিয়ান বলল,
–” একটু কাছে টানলেই হাওয়াই মিঠাই এর মতো বুকের সাথে মিশে যাস কেনো? আমার বুঝি লোভ লাগেনা? কত-শত লোভ দেখিয়ে আমায় বেসামাল করিস তার ইয়ত্তা নেই অথচ আমি একটু ছুঁয়ে দিলে ওমনি লাজুকলতার মতো নুইয়ে পড়িস। আর কত ধৈর্যের পরীক্ষা নিবি? ”
মেহরিমা তাজরিয়ানের ভারিক্কি শরীরটা নিজের উপর থেকে সরানোর বৃথা চেষ্টা করে বলল,
–” আমি অসুস্থ তাজ ভাই। ”
মেহরিমার বলা কথাটা তাজরিয়ানের কান অব্দিই পৌঁছাতেই সে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মেহরিমার দিকে। এতক্ষণ অর্ধেক ভার দিয়ে রাখলেও এবার পুরো শরীরের ভর ছেড়ে দিলো মেহরিমার উপর। বেচারি আকস্মিক ব্যথাতুর শব্দ করে উঠল। তাজরিয়ান শক্ত হাতে মেহরিমার গাল চেপে ধরে বলল,
–” নিজের ভবিষ্যত বাচ্চার ডিএনএ-র বাহক কে ভাইয়া ডাকতে লজ্জা করে না? ”
মেহরিমা অস্ফুটস্বরে বলল,
–” বহু বছরের অভ্যেস… ভুল হয়ে গেছে। আর হবেনা এবারের মতো ছেড়ে দিন। ”
তাজরিয়ান হিসহিসিয়ে বলল,
–” ধরতে বাধ্য করে আবার ছাড়তে বলিস কেনো? মগের মুল্লুক পেয়েছিস? আজ তোর নিস্তার নেই বউজান। ”
তাজরিয়ানর কন্ঠে স্পষ্ট রাগ কিন্তু চোখে অন্যরকম অনুভূতির ঝলক। তাজরিয়ানের অধৈর্য ভাবটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে মেহরিমা। পরিস্থিতি সামাল দিতে অসহায় কন্ঠে মেহরিমা বলল,
–” আমি ভীষণ অসুস্থ..
চোখবুঁজে লম্বা শ্বাস টানল তাজরিয়ান। মেহরিমার কাছ থেকে সরে এসে দু’হাতে শক্ত করে চুল খামচে ধরলো। মেহরিমার কেনো যেনো ভালো লাগলো না বিষয়টা। নিজের অপারগতায় ভীষণ মনঃক্ষুণ্ণ হলো। সে যে নিরুপায়, সম্ভব হলে কখনোই এমনটা করতোনা। এই সামান্য ধস্তাধস্তিতে তার জান বেরিয়ে আসার মতো যন্ত্রণা হচ্ছে। ব্যথার রেশ সামলাতে না পেরে কোনোমতে পাশ ফিরে তলপেটে হাত রেখে নিঃশব্দে কেঁদে উঠল মেয়েটা।
মেহরিমার কোনো নড়চড় না দেখে কিছুক্ষণ পর পেছনে ফিরে তাকাল তাজরিয়ান। হুট করে তার চোখ আটকালো রক্তাভ তরলে রঞ্জিত চাদরের দিকে। নিজেকে শক্তপোক্ত কয়েকটা গালি দিয়ে পেছন থেকে মেহরিমা কে জড়িয়ে ধরে ফিসফিসয়ে বলল,
–” তোর সান্নিধ্যে আসলে আমি বীভৎস ভাবে নিজের সংযম হারিয়ে ফেলি। আকস্মিক ভেতরকার অধৈর্য সত্তাটা কড়া নাড়ে মস্তিষ্কে। আমি এলোমেলো হয়ে যায়। তোকে আরও নিবিড়ভাবে পাওয়ার ইচ্ছেটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সর্বাঙ্গে। পারতপক্ষে সেটা সম্ভব না হওয়ায় ভেতরকার অতৃপ্ত দহন তোকেও অপরিসীম যন্ত্রণায় দগ্ধ করে। ”
কিছুক্ষণ থেমে আবারও অসহায় কন্ঠে তাজরিয়ান বলে,
–” এবারের মতো মাফ করে দে বউজান। পরেরবার থেকে এতটা অধৈর্য হবনা। তোকে এত বেশি হার্ট করবোনা। আম এক্সট্রিমলি স্যরি বউ। ”
অত্যাধিক ব্যথায় শরীরটা অবশ লাগলেও তাজরিয়ানের কথায় মনের কোণে আনন্দের ঢল নামলো। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল এক চিলতে নির্মল হাসি। এই সাইকোপ্যাথের থেকে এতটা ভালোবাসা মেহরিমার পাওয়ার কথা ছিলো বুঝি?মেহরিমার মনে হচ্ছে সে অতি সুখে পাগল হয়ে যাচ্ছে।
চলবে?