#শিরোনামহীন_অনুভূতি
#রুহানিয়া_ইমরোজ
#পর্বসংখ্যাঃ১৩
সময় তার নিজেস্ব গতিতে বহমান। প্রায় সপ্তাহখানেক সময় পেরিয়েছে। আরশিয়ান এবং প্রিমার অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের পরিবর্তন না ঘটলেও তাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। চৌধুরী বাড়ির সকলের সাথে প্রিমার একটা সৌজন্য মূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিশেষত আরিয়ান চৌধুরী এবং আফিয়া চৌধুরীর সাথে তার খুব ভালো একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত তাজরিয়ানের সাথে প্রিমার কোনোরূপ কথোপকথন হয়নি।
সকালের ব্রেকফাস্টের জন্য চৌধুরী বাড়ির সকলেই সমবেত হয়েছে ডাইনিং টেবিলে। সবার মাঝে কেবল আরশিয়ান এবং প্রিমা অনুপস্থিত। তৌকির চৌধুরী সকলের দিকে এক পলক তাকিয়ে আরিয়ান চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললেন,
–” আমার শান দাদুভাই কে ডাকার ব্যবস্থা….।
বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখা গেলো একেবারে অফিসের জন্য তৈরী হয়ে নিচে নামছে প্রিমা। তার পিছু পিছু স্লিভদুটো গুটাতে গুটাতে নেমে আসছে আরশিয়ান। দু’জনকে একসাথে দেখলে মনে হয় তারা মেইড ফর ইচ আদার। সকলে অভিভূত চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। ওরা টেবিলের কাছে এসে চেয়ার টেনে বসলো। আরশিয়ান সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
–” গুড মর্নিং গাইজ। ”
সকলে যে যার মতো উত্তর দিলো। আরশিয়ান তাড়া দিয়ে আফিয়া চৌধুরী কে বলল,
–” আম্মু তাড়াতাড়ি নাস্তা দাও। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”
আফিয়া চৌধুরী এগিয়ে এসে ছেলের প্লেটে পরোটা এবং গরুর কলিজা ভুনা তুলে দিলেন। প্রিমার প্লেটে কলিজা ভুনা দিতে গেলে আরশিয়ান থামিয়ে দিয়ে বলে,
–” উনার এলার্জি আছে আম্মু। ওটা দিও না। ”
প্রিমা খানিকটা বিব্রত হলো। জোরপূর্বক মেকি হেসে বলল,
–” আসলে….
প্রিমাকে মাঝপথে থামিয়ে আরিয়ান চৌধুরী ব্যস্ত কন্ঠে বললেন,
–” আপনার এলার্জির কথা আমাদের জানাননি কেনো আম্মা? এখুনি তো একটা বিরাট ভুল হতে যাচ্ছিল। ”
প্রিমা সহসা ফিরে তাকাল আরিয়ান চৌধুরীর পানে। উনার চোখদুটোতে ভয় খেলা করছে। প্রিমা মিনমিনে স্বরে বলে উঠল,
–” আসলে আমি খেয়াল করিনি। ”
আফিয়া চৌধুরী মুরগির মাংস বেছে ভালো দুই পিস ওর প্লেটে দিয়ে বললেন,
–” আমাকে সমস্তটা জানিয়ে রাখবে। আমি বুঝেশুনে তোমার জন্য রান্না করবো। একদম অস্বস্তি বোধ করবেনা কেমন? ”
আফিয়া চৌধুরীর চোখেমুখে উদ্বেগ প্রতীয়মান । প্রিমার মনটা অকস্মাৎ প্রসন্ন হয়ে উঠল। তার অপ্রাপ্তির খাতাটা বোধহয় পূর্ণ হয়ে আসছে। একটুখানি ভালোবাসা, যত্ন, মায়ার অভবে কঠোর হয়ে যাওয়া হৃদয়টা গলতে শুরু করেছে।
সবাইকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করছিলেন তৌকির চৌধুরী। সবার খাওয়া শেষ পর্যায়ে আসতেই তিনি গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন,
–” আমার দাদু ভাইদের কাছে আমার কিছু আবদার আছে। আশাকরি তোমরা এবার আমাকে নিরাশ করবে না। ”
ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কোনোমতে খাবার খাচ্ছিল তাজরিয়ান। তৌকির চৌধুরীর কথা শুনে আচমকা বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠল,
–” মানসম্মত ইচ্ছে হলে প্রাধান্য দেওয়া যায় কিন্তু তুমি যদি কঠোর পরিশ্রমের আগেই সফলতার ট্রফি চেয়ে বসো তাহলে কীভাবে দেবো? ”
তাজরিয়ানের কথার অর্থ বুঝতে পেরে সকলে মুখ টিপে হাসলেও তৌকির চৌধুরীর মুখটা অন্ধকার হয়ে আসলো। এসব বাক্যলাপে অনভ্যস্ত প্রিমা খুকখুক শব্দে কেশে উঠল। তাজরিয়ান তৎক্ষনাৎ তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,
–” স্যরি বউমনি। একচুয়েলি উপর দিয়ে ফিটফাট হলেও ভেতর থেকে আমি একেবারে নিউক্লিয়ার বোমার স্পেশাল এডিশন। একশন স্পিকস লাউডার দ্যান ওয়ার্ডস বাট আমার মুখনিঃসৃত প্রত্যেকটা বাক্য ছোটোখাটো একটা একশনের সমতূল্য। এখন থেকে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ইন ফিউচার এসব বিষয় হজম করতে সুবিধা হবে। ”
প্রিমা হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিয়ে সামান্য পানি পান করে বলল,
–” ঠিক বলেছেন। ”
তাজরিয়ান কিছু একটা ভেবে পুনরায় বলল,
–” এতদিন আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম বিধায় আমাদের আলাপচারিতা হয়নি। চৌধুরী বাড়ির সকলের আবেগের নাটবল্টু ঢিলা হলেও আমি আলাদা কিসিমের মানুষ। অত সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনা। আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝলাম আমার ভাইয়া জিতসে। এই খুশিতে আজকে থেকে আপনি পেয়ে যাচ্ছেন বডিগার্ড সমতূল্য দেবর। কংগ্রাচুলেশনস বউমনি। ”
তাজরিয়ানের পাশে বসা মেহরিমা মনে মনে বলে উঠল,
–” সবার বেলায় আপনার আবেগের নাটবল্টু ঢিলা হলেও আমার বেলায় কেনো লাগামহীন হয়ে যায় মিস্টার তাজরিয়ান জাওয়াদ চৌধুরী ? ”
প্রিমা ধাতস্থ হয়ে মিষ্টি সুরে বলল,
–” খুব সম্ভবত আমি একজন বড় ভাই পেতে যাচ্ছি। সেই খুশিতে আপনার জন্য অসংখ্য শুভকামনা রইল।”
তাজরিয়ান চোখ ছোটো-ছোটো করে তাকাল। সে প্রিমাকে চমকে দিতে চেয়েছিল কিন্তু প্রিমা তো তার আসল পার্সোনালিটি এক ঝটকায় বুঝে ফেলেছে।তৌকির চৌধুরী না পারতে রাগান্বিত স্বরে বলল,
–” বয়স বেড়েছে বলে আমার কথার দাম নেই? কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে বলে আমার সিধান্ত মূল্যহীন হয়ে গেছে? বেশ তবে……
আরশিয়ান মাঝপথে উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
–” তোমার সকল মতামত কে যথাযথ ভাবে মূল্যায়ন করা হবে দাদু। কী চায় তোমার বলো? ”
তৌকির চৌধুরী তাজরিয়ানের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে বললেন,
–” আমি তোমাদের জন্য শ্রীমঙ্গলে একটা রিসোর্ট বুক করেছি। আমি চাই তোমরা কিছুদিন নিজেদের মতো ঘুরে আসো। ”
তৌকির চৌধুরীর কথায় আরশিয়ান এবার নিজেই বিষম খেলো। আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখল প্রিমাকে। ইন্ডাইরেক্টলি হানিমুনের কথা শুনে বেচারির খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অনবরত প্লেটের খাবার নাড়াচ্ছে শুধু। আরশিয়ান সবটা বুঝে আমতা আমতা করে বলল,
–” সদ্য একটা প্রোজেক্ট হাতে এসেছে। আমরা…
তৌকির চৌধুরী তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
–” তোমাদের সময়ের সল্পতা রয়েছে বলেই তিনদিনের প্যাকেজ বুক করিয়েছি আমি। নিজেদের জন্য তিনটে দিন সময় হবেনা তোমাদের ?”
আরশিয়ান হার মেনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–” ঠিকাছে। টাইম, ডেট এন্ড লোকেশন জানিয়ে দিও। ”
তাজরিয়ান একপলক মেহরিমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল৷ বেচারি শিউরে উঠে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তাজরিয়ান হামি তুলে অস্পষ্ট সুরে বলল,
–” আমিও হানিমুনে যেতে রাজি আছি । থ্যাংকস ফর দ্যা স্পন্সর। ”
এরকম সোজাসাপ্টা কথায় সকলে একটু বিব্রত হলো। চুপচাপ খেয়েদেয়ে আরশিয়ান এবং প্রিমা বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্যে।
_
চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির গেট পেরিয়ে পার্কিং লটের দিকে এগিয়ে গেলো আরশিয়ানের রলস রয়েস গাড়িটা। গাড়ি থামতেই একগাদা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হাতে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল প্রিমা। আরশিয়ান গাড়ি লক করে এসে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
–” লেটস গো মিসেস প্রিমা। আজকে ভালোই ব্যস্ততা আছে। মিটিংয়ের আগে একটু রিমাইন্ডার দিয়েন। স্পিচটা রেডি হয়েছে? ”
সম্বোধনটা শুনে প্রিমা একটু থমকাল। ইতি-উতি চেয়ে লজ্জা লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে চটপটে কন্ঠে বলল,
–” আপনি ইডিট করতে বলার পর সংশ্লিষ্ট জায়গা গুলো পরিবর্তন করেছি। এন্ডিংয়ে খুব সুন্দর একটা ফিনিশিং দেওয়া হয়েছে। ”
প্রিমার লজ্জারুণ মুখটা দেখে মৃদু হাসলো আরশিয়ান। কিছু একটা ভেবে ফোনটা বের করে চটপট ইশতিরাজ কে একটা মেসেজ পাঠাল।পার্কিং এরিয়া থেকে বেরিয়ে অফিসের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে প্রিমার কথা শুনে আরশিয়ান বলে উঠল,
–” দ্যাটস গ্রেট। ফার্স্ট আওয়ারে ওটা আমার কেবিনে রেখে আসবেন। ”
প্রিমা ক্ষীণ স্বরে সম্মতি জানিয়ে এগিয়ে গেলো অফিসের দিকে। এন্ট্রান্সে প্রবেশ করতেই আকস্মিক জোরালো হাওয়ার তোড়ে প্রিমার হাঁটু অব্দিই লম্বা খোলা চুলগুলো এলোমেলো ভঙ্গিতে উড়ে আরশিয়ানের বক্ষে এবং বাহুতে লেপ্টে গেলো। প্রিমা তৎক্ষনাৎ ওগুলো সরিয়ে আনতে নিলে আরশিয়ান গম্ভীর স্বরে শুধায়,
–” চুল ভেজা কেনো আপনার?
প্রিমা আমতা আমতা করে বলল,
–” হেয়ার ড্রায়ারটা নষ্ট হয়ে গেছে। সকালে উঠে গোসল দিলেও ঘন চুলের জন্য পুরোপুরি শুকায়নি।”
কথাটুকু বলেই চুলগুলো খোপা করতে নিলে আরশিয়ান বলে উঠল,
–” ভেজা চুল বাঁধার দরকার নেই। আজকে আপনার ডেস্কে বসতে হবে না। অফিসের যাবতীয় কাজ আমার কেবিনে বসে করবেন। ”
প্রিমা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। আরশিয়ান প্রিমার স্ট্রেইট এন্ড সিল্কি চুলগুলো দেখে আনমনে বলল,
–” মা শা আল্লাহ। ”
দু’জনে অফিশিয়াল আলাপ আলোচনা করতে করতে লিফটে প্রবেশ করল। লিফট কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে এসে থামতেই আচমকা সামনে ফ্লাওয়ার বুকে দেখে প্রিমা একটু হকচকিয়ে গেলো। ম্যানেজার সাহেব ফ্লাওয়ার বুকেটা আরশিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
–” কংগ্রাচুলেশনস অন গেটিং ম্যারিড স্যার। ”
বিয়ের দু’দিন পরেই আরশিয়ান তার সোশ্যাল একাউন্টের ম্যারিটাল স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে। ফলস্বরূপ কোনোরকমের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পুরো দুনিয়া জেনে যায় তার বিবাহের খবর। আরশিয়ান স্মিত হেসে বুকেটা হাতে নিয়ে গম্ভীর স্বরে শুধাল,
–” আপনার শরীরের কী অবস্থা? এখন সুস্থ? ”
ম্যানেজার সাহেব কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে বললেন,
–” জ্বী স্যার আলহামদুলিল্লাহ। ”
সেদিন গাড়ি থেকে লাফ দেওয়ার পর দুর্ভাগ্যবশত বেচারা ম্যানেজার সাহেব কাঁটাযুক্ত গাছের উপর পড়েন অতঃপর সেখান থেকে গড়িয়ে পড়ে একটা পাথরের সাথে ধাক্কা খান। হুঁশ থাকতেই কোনোমতে ট্রিপল নাইনে কল করে সাহায্য চাওয়ার বদৌলতে এই যাত্রায় তিনি বেঁচে যান। অসুস্থতার কারণে এতদিন ছুটিতে থাকলেও আজকে জয়েন করেছেন।
আরশিয়ান আরও কিছুক্ষণ কথা বলে প্রিমা কে নিয়ে প্রবেশ করে কেবিনের ভেতর। কেবিনের একটা পাশের পুরোটাই কাঁচ দ্বারা নির্মিত এবং ভারী পর্দায় আবৃত। ওখান থেকে পুরো শহরের দৃশ্য দেখা যায়। আরশিয়ান ব্লেজারটা চেয়ারে খুলে রেখে সেই ভারী পর্দাগুলো সরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মাঝে সূর্যের ঝলকানিতে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে যায়। আরশিয়ান একটা সিঙ্গেল সোফা এবং সেন্টার টেবিল ফ্যানের নিচে এবং সেই রৌদ্রময় জায়গা রেখে ধীর স্বরে প্রিমা কে বলে,
–” আপনার চুলগুলো বেশ ঘন এবং বড়। ওগুলো সল্প সময়ে ফ্যানের নিচে শুকাবে না উল্টো দীর্ঘক্ষণ ভেজা চুলে থাকার ফলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এই রৌদ্রের মৃদু তাপ এবং ফ্যানের বাতাসে হোপফুলি দ্রুত চুলগুলো শুকিয়ে যাবে। এখানে বসতে আপনার অসুবিধা হবে? ”
আরশিয়ানের কান্ডে একদিকে প্রিমা অভিভূত অন্যদিকে ভীত। সে ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,
–” আসলে আমার উচ্চতা ভীতি আছে। ওখানে বসলে আম্ আমি… ”
আরশিয়ান বুঝে গেলো বাকি কথা। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পর্দাগুলো পুনরায় ফেলে দিয়ে বলল,
–” এখন কম্ফোর্টেবল ফিল করছেন? ”
প্রিমা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। আরশিয়ান তার ডেস্কে বসে বলল,
–” ঠিকাছে তাহলে আপনার কাজগুলো শেষ করে আমাকে রিপোর্ট দেন। ”
অতঃপর দুজনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো নিজেদের কাজে। প্রায় ঘন্টাখানেক পর আচমকা কেবিনে নক করার শব্দ পেয়ে আরশিয়ান ধীর কন্ঠে বলল,
–” কাম ইন। ”
একজন স্টাফ হাতে ডাইসন সুপারসনিক হেয়ার ড্রায়ারের বক্স হাতে প্রবেশ করে সেটা আরশিয়ানের টেবিলে রেখে বলল,
–” স্যার, আপনার পার্সেল। ”
ল্যাপটপের স্ক্রিনে মগ্ন প্রিমা এদিকটায় খেয়াল করেনি। আরশিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,
–” ইয়্যু মে গো নাও। ”
স্টাফ সায় জানিয়ে চলে গেলো। আরশিয়ান বক্সটা হাতে নিয়ে প্রিমার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল,
–” আপনার কাঙ্ক্ষিত হেয়ার ড্রায়ার। কেবিন সংলগ্ন একটা মিনি রেস্ট রুম আছে। আপনি কাইন্ডলি ভেতরে গিয়ে চুলগুলো প্রপার্লি শুকিয়ে নিন। আমি আপাতত মিটিংয়ে যাচ্ছি। আপনি ফইলগুলো ভালোমতো রিচেক দিয়ে রাখুন। আমি ফিরে এসে ওগুলোর হিসাব দেখবো। ”
প্রিমা হতভম্ব মুখে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। মানুষটাকে যত দেখতে তত তার প্রতি সম্মান বেড়ে যাচ্ছে। একটা মানুষ এত নিখুঁত ভাবে সবদিকে খেয়াল রাখছে ব্যপারটা সত্যি আশ্চর্যজনক। আরশিয়ান যাওয়ার পূর্বে পুনরায় বলে যায়,
–” আমরা হানিমুনে নয় বরং ট্যুরে যাচ্ছি। আপনি চাইলে মিস ফারজানা কে ইনভাইট করতে পারেন। ”
প্রিমা বেশ উচ্ছ্বসিত হয়। ফোন হাতড়ে ফারজানা কে মেসেজ দিয়ে বলে,
–” বুবু সন্ধ্যা পর ফ্রী হয়ে আমাকে নক দিও। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। ”
অতঃপর সারাটাদিন কাটলো তুমুল ব্যস্ততায়। সন্ধ্যার দিকে অফিস আওয়ার শেষ হতেই ক্লান্ত পায়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো প্রিমা। আরশিয়ান অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় ড্রাইভার তাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে। ব্যাকসিটে উঠে হেডরেস্টে মাথা এলিয়ে দিতেই আকস্মিক তার ফোনে মেসেজ আসলো। বুঁজে আসা চোখদুটো কোনোমতে খুলে মেসেজটা দেখতেই রীতিমত আঁতকে উঠল প্রিমা। একটা প্রাইভেট নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে যাতে লেখা আছে,
–” হেই হানিবানি। তুমি যে খুনি এইটা তোমার আদরের সোয়ামী জানে? উপস্ জানে না তাইনা? আচ্ছা, তাকে জানিয়ে দিলে কেমন হয়? ”
মেসেজটা পড়ে ফাঁকা ঢোক গিলল প্রিমা। পরনের শাড়ির আঁচল খামচে ধরে চোখমুখ খিঁচিয়ে করে বলল,
–” যে ভুল আমি করিনি তার শাস্তি আর কতো পাবো আল্লাহ? জীবনে একটুখানি সুখের আগমন ঘটতেই তা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তৎপর কেনো হলে? যদি আমার অসুখী দেখতে চাও তাহলে সুখের সন্ধান কেনো দিলে? ”
চলবে?