শিরোনামহীন অনুভূতি পর্ব-১৫

0
18

#শিরোনামহীন_অনুভূতি
#রুহানিয়া_ইমরোজ
#পর্বসংখ্যাঃ১৫

নিকষ কালো আঁধারে ঢেকে আছে রজনী। আকাশে মেঘের ঘনঘটা বেশ লক্ষনীয়। রিসোর্টের পাশে উঁচু টিবির মতো জায়গাটায় ছোট্ট একটা রেস্তোরাঁ রয়েছে। এই রেস্তোরাঁ থেকে রিসোর্টের পুরো ভিউটা দেখা যায়।

জনমানবশূন্য রেস্তোরাঁয় বসে আছে আরশিয়ান, তাজরিয়ান এবং ইশতিরাজ। তিনজনের মাঝে বেশ গম্ভীর আলোচনা চলছে। চট্টগ্রামের ঘটনাটা কোনোভাবেই এক্সিডেন্ট হতে পারে না। আরশিয়ান বহু আগে টের পেয়েছিল বিষয়টা বিধায় সে একজন ডিটেকটিভ হায়ার করেছে। কথাটা শুনে ইশতিরাজ সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে ধীর কন্ঠে বলল,

–” কারও উপর সন্দেহ আছে তোর? ”

আরশিয়ান কীয়ৎকাল ভেবে বলে,

–” খুব সম্ভবত এটা আরভিদের কাজ। ”

নামটা শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছানো মাত্র জ্বলন্ত চোখে তাকাল তাজরিয়ান। তার ভাবগতি বুঝে আরশিয়ান রাশভারি কন্ঠে বলল,

–” মাথা গরম করিস না। তোর জন্য যদি মেহুকে সাফার করতে হয় তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে। সাত বছর আগের ঘটনা ওখানেই মাটি চাপা দিয়ে দে। আমি জাস্ট সন্দেহের কথা বলেছি। যদি সত্যতা প্রমাণিত হয় তবে ওকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে এবার। ”

সাইকোপ্যাথের মাথা একবার গরম হলে সেটা তার কাঙ্ক্ষিত প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত ঠান্ডা হয় না। মস্তিকের ভেতরকার রাগটা দমন করতে পারলেও সূক্ষ্ম আমেজটা রয়ে গেলো তাজরিয়ানের হৃদয়ে। আরও কিছুক্ষণ চললো তাদের আলাপআলোচনা আচমকা এর মাঝে কয়েক জোড়া পদধ্বনির শব্দ শোনা যায়।

সিঁড়ির দিকে তাকাতেই দেখে শাড়ি পরিহিত তিন রমণী হেঁটে আসছে এদিকে। আরশিয়ানের চোখ আটকালো প্রিমার মোহনীয় রুপে। হালকা পেলব শরীরে মিষ্টি কালার শাড়িটা বেশ মানিয়েছে। লম্বা খোলা চুলগুলো তার সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। নজর লাগার ভয়ে আরশিয়ান চোখ সরিয়ে গম্ভীর স্বরে ইশতিরাজ কে বলল,

–” সিগারেটটা বাহিরে ফেল। ”

আড় চোখে প্রিমার দিকে একবার তাকিয়ে আলতো হেসে সিগারেটটা বাহিরে ফেলে দিলো ইশতিরাজ। আচমকা তার চোখ পড়লো চারকোল কালার শাড়ি পরিহিত ফারজানার দিকে। মেয়েটাকে দেখলেই তার সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস মনে হয়। ধরা পড়ার ভয়ে তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে আড্ডায় মসগুল হলো সে। আরশিয়ান পকেট থেকে একটা মিনি পারফিউম বের করে ওটা স্প্রেড করে দিলো। এতে রমনীগণ টেবিলের কাছটায় এগিয়ে আসার পূর্বেই সিগারেটের অস্বস্তিকর গন্ধটা ফিকে হয়ে আসলো।

মেয়েরা আসার পর আরশিয়ান রাতের ডিনার অর্ডার করল। টুকিটাকি আড্ডা এবং মজার ছলে সকলেই ডিনারে মনোনিবেশ করল কিন্তু বেচারি মেহু ঠিকঠাকমতো খেতে পারলোনা। তার সামনে বসে থাকা একজন অসভ্য পুরুষের অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে বসে রইল। মেহরিমা খুব ভালোমতো জানে তাজরিয়ানের এই দৃষ্টির মানে। খানিকক্ষণ পর তার সাথে কী হতে চলছে সেটা ভেবেই বিষম খেলো বেচারি।

তাজরিয়ান বাঁকা হেসে এগিয়ে দিলো পানির গ্লাসটা। মেহরিমা কাঁপা হাতে সেটা নিয়ে চুমুক বসাতেই আচমকা পায়ের পাতায় শীতল পুরুষালি পায়ের আলতো স্পর্শ পেলো। বেচারি যারপরনাই আতংকিত চোখে তাকাল তাজরিয়ানের দিকে। তাজরিয়ান পুনরায় বাঁকা হেসে ফোনটা হাতে নিয়ে টাইপ করল,

–” সুন্দর শাড়িটা ভেদ করে তোর কোমরে থাকা কামারবন্ধ আমার দৃষ্টি কেড়েছে বউজান। উদরের মসৃণ ত্বকের সাথে লেপ্টে থাকা চেইনটা দেখে আমার বড্ড ঈর্ষা হচ্ছে। ব্যক্তিগত প্রোপার্টির উপর অন্য কারও নূন্যতম অধিপত্য আমার সহ্য হয় না জেনেও তুই তাকে প্রশ্রয় দিয়েছিস। এতবড় স্পর্ধা দেখানোর ফলস্বরূপ কিছু মোহনীয় শাস্তি তুই অবশ্যই ডিজার্ভ করিস। আর ইয়্যু রেডি ফর দ্যাট বউজান? ”

তাজরিয়ান ম্যাসেজটা সেন্ড করতেই মেহরিমার ফোনটা মৃদু শব্দে বেজে উঠল। ভ্রু কুঁচকে মেসেজটা চেক করতেই মেহরিমা আঁতকে উঠল রীতিমতো। বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে একবার তাজরিয়ানের পানে তাকিয়ে দ্রুত টাইপ করল,

–” জাস্ট ছবি তোলার জন্য আমরা তিনজনে মিলে সেম আউটফিট পরেছি। আশেপাশে বাহিরের মানুষ নেই বিধায় আমি সাহস পেয়েছিলাম।আম সো স্যরি। আর কখনো এমন ভুল হবে না। এবারের মতো মাফ করে দেন প্লিজ। ”

মেহরিমার মেসেজ দেখে তাজরিয়ান ঠোঁট কামড়ে হাসলো। মেয়েটাকে আরেকটু ভয় দেখাতে পুনরায় টাইপ করল,

–” ভুলের জন্য শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। ওসব উল্টাপাল্টা কথা বললে শাস্তির পরিমাণ আরও বাড়বে। হজম করতে পারলে জাস্টিফাই করতে থাক। ”

মেহরিমা মেসেজটা দেখে কাঁদো কাঁদো মুখে তাজরিয়ানের দিকে তাকাল। সবার খাওয়া শেষ হতেই ইশতিরাজ উৎফুল্ল স্বরে বলল,

–” ড্রাইভ করে গেলে এখান থেকে সতেরো মিনিটের দূরত্বে একটা কফির দোকান আছে। বেশ ভালো রিভিউ শুনেছি। আজ যেহেতু কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি সুতরাং ঐ জায়গাটা এক্সপ্লোর করাই যায়। কী বলো সবাই? ”

আরশিয়ান কিছু একটা ভেবে বলল,

–” চল ঘুরে আসি। ”

বাকিরাও সম্মতি প্রকাশ করতেই ওরা গাড়ি নিয়ে ছুটলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। যথারীতি আগের মতোই ড্রাইভিং সিটে বসেছে ইশতিরাজ এবং তার পাশে ফারজানা। পেছনের সিটে প্রিমা এবং আরশিয়ান। সবশেষে বসেছে তাজরিয়ান এবং মেহরিমা।

গাড়ি সেই মেঠোপথে আসতেই পুনরায় এক জোরদার ঝাঁকুনি খেলো সবাই। আকস্মিক ধাক্কায় ভয়ে জমে থাকা মেহরিমা ছিটকে গিয়ে পড়লো তাজরিয়ানের বুকে। তাজরিয়ান বাঁকা হেসে ওর শাড়িটা সরিয়ে অনাবৃত উদরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ এঁকে দিয়ে হাস্কি স্বরে বলল,

–” জাস্ট টেক ইট ইজি বউজান। ”

তাজরিয়ানের অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে ঘাবড়ে গিয়ে আমতা আমতা করে মেহরিমা বলল,

–” কেউ দেখে ফেললে কী ভাববে? ”

কোমরে মৃদু চাপ প্রয়োগ করে মেহরিমা কে আরেকটু কাছে টেনে জোর গলায় তাজরিয়ান বলল,

–” রাজ ভাই? ট্যুরের ফিল আসতেছে না মোটেও। গাড়ির লাইটটা অফ করে দিয়ে একটা গান চালাও তো। ”

তাজরিয়ানের কথা শুনে আরশিয়ান হুশিয়ারি দিয়ে বলল,

–” ধুমধাড়াক্কা ডিজে টাইপ গান চালালে দুটোকে কাঁদা পানিতে নীল ডাউন দেওয়াবো আমি। একটা সফট মিউজিক চালা। ”

আরশিয়ানের আচমকা ইশতিরাজের মেজাজ খারাপ হলো। রাগ সামলাতে না পেরে লাইট অফ করে প্লেলিস্ট থেকে খুঁজে ” তুমহে আপনা বানানে কা ” গানটা চালালো। সাথে সাথে বেজে উঠল কিছু পঙক্তি,

–” Shayari Sunaati Inn
Do Nasheeli Aankhon Ko
Mujhko Paas aake Padhne Do
Ishq Ki Khwahishon Mein
Bheeg Lo Baarishon Mein
Aao Na……… ”

মুহূর্তের মাঝে অস্বস্তিতে অন্য দিকে চোখ ফিরালো ফারজানা। তা দেখে দুষ্টু হাসলো ইশতিরাজ। প্রিমা নিজেও ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করল। আরশিয়ান রাগী স্বরে বলল,

–” এসব কী গান? ”

ইশতিরাজ ত্যাড়া ভাবে জবাব দিলো,

–” তোর পছন্দের সো কল্ড স- ফ- ট মিউজিক। পছন্দ হয়নি? তুমি দিও না গো বাসরের ঘরের বাত্তি নিভাইয়া চালাবো নাকি? ”

আরশিয়ান বুঝলো ইশতিরাজ মোটেও গান পাল্টাবে না। মনে মনে অল্পবিস্তর গালি দিয়ে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। প্রিমা কাঁচ ঘেরা জানালার বাহিরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

গান শুনে বাঁকা হেসে মেহরিমার উদ্দেশ্যে তাজরিয়ান বলে উঠলো,

–” গান ও দেখি আমার সাপোর্টে। নট ব্যাড। ”

কথাটা বলে আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করলো না। অন্ধকারে ডুবে থাকা পরিবেশের যথোপযুক্ত সুবিধা নিলো। মেহরিমাকে কাছে টেনে তার উন্মুক্ত গলায় মুখ ডোবালো তাজরিয়ান । প্রিয়তমার সুমিষ্ট সুবাসে মাতোয়ারা হলো সে।বেচারি মেহরিমা তাজরিয়ানের হাত খামচে ধরে অস্ফুটস্বরে বলল,

–” ক..কেউ শুনে ফেলবে। ”

বেসামাল তাজরিয়ানের ভারিক্কি শ্বাস আছড়ে পড়ছিল মেহরিমার কাঁধে। বউয়ের কথা শুনে তাজরিয়ান কীয়ৎকাল থেমে স্লো ভয়েসে বলে
উঠল,

–” কিপ ইয়্যের ভয়েস ডাউন বউজান। মানুষ কেনো একটা কাকপক্ষী ও টের পাবেনা আমাদের বহিঃপ্রকাশিত প্রেমের গুঞ্জন। ”

তাজরিয়ানের কথা শুনে আর দ্বিরুক্তি করতে পারলোনা মেহরিমা। তার আদুরে স্পর্শে আবেশে ভেসে গেলো অজানাই। গানের উচ্চ আওয়াজের নিচে চাপা পড়ে গেলো তাদের ভারিক্কি শ্বাসের মৃদু গুঞ্জন।

_

কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে সকলে গাড়ি থেকে নামলো। খোলা মাঠের প্রান্তে রাস্তার ধারে গুটি কয়েক দোকান রয়েছে। তন্মধ্যে সব থেকে উজ্জ্বল ভাবে ডেকোরেশন করা দোকানটা দেখিয়ে ইশতিরাজ বলল,

–” আমাদের গন্তব্য ওটাই। ”

ইশতিরাজের কথায় সকলে তাকাল “জুস মামা” খচিত সাইনবোর্ড টানানো দোকানটার দিকে। জায়গাটা ফাঁকা হওয়ায় খুব সুন্দর হাওয়া বইছে। হাওয়ার তোড়ে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সকলের পরিচ্ছদ। সকলে ধীর পায়ে হেঁটে এগোতে লাগলো দোকানের দিকে। তাজরিয়ান হাঁটতে হাঁটতে তাকাল তার পুতুল বউটার দিকে। বেচারির চোখেমুখে লেপ্টে আছে বেদনার ছাপ। হুট করে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চোখে পড়তেই তাজরিয়ান মেহরিমার চুলগুলো সামনে এনে গলার পাশটা ঠিকঠাক মতো ঢেকে দিয়ে বলল,

–” বি কেয়ারফুল। ”

মেহরিমা এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে কন্ঠে মৃদু তেজ ঢেলে বলল,

–” এমন কাজ করেন কেনো যে সাবধানতার বাণী শোনাতে হয়। ”

বউয়ের মেজাজ বুঝে মৃদু হেসে তাজরিয়ান বলল,

–” আমাকে বেসামাল করার দায়িত্বটা পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে পালন করিস তাই ওমন কাজ করি। তোকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে সতর্ক বার্তা দিয়েছি।তোর যখন এতোই আপত্তি তখন নেক্সট টাইম থেকে আর দিবো না। মানুষ ও জানুক তোর সাইকো হাসবেন্ড তোকে কতটা আদরে রাখে। ”

তাজরিয়ানের কথা শুনে মেহরিমা মুখ বাঁকিয়ে দোকানের দিকে গেলো। সকলে যে যার পছন্দের কফি নিয়ে ফাঁকা রাস্তাটা ঘুরে দেখতে লাগলো। রাস্তার কার্ণিশ ঘেঁষে পাশাপাশি হাঁটছে প্রিমা এবং আরশিয়ান।দু’জনের হাতেই দু’টো টিস্যু পেঁচানো কোল্ড কফির গ্লাস রয়েছে। প্রিমা স্ট্রতে ছোটো ছোটো চুমুক বসিয়ে সুন্দর পরিবেশটা উপভোগ করতে ব্যস্ত। আরশিয়ান থেমে থেমে আড়চোখে দেখছে প্রিমাকে । বাতাসের দাপটে প্রিমার সিল্কি চুলগুলো মৃদু ছন্দে উড়ছে। মাঝেমধ্যে দীপ্তিময় মুখটাতে এসে আছড়ে পড়ছে। আশেপাশের বেশ কিছু মানুষজন কৌতূহলী চোখে তাকাচ্ছে ওর লম্বা চুলের দিকে। আরশিয়ানের ব্যপারটা ভালো লাগলো না। সে ইতস্ততভাবে প্রিমা কে ডেকে বলল,

–” শুনেছি রাত-বিরেতে খোলা চুলে মেয়েদের বাহিরে আসতে নেই। এতে করে খারাপ জ্বীনের খপ্পরে পড়ে মেয়েরা। ঝামেলা এড়াতে আমার মনে হয় আপনার চুলগুলো বেঁধে মাথায় ঘোমটা দেওয়া উচিত। ”

আরশিয়ানের কথা শুনে প্রিমা মনে মনে হাসলো। তার বউয়ের দিকে লোকজন আড়চোখে তাকাচ্ছে বিধায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তা ঢের বুঝেছে প্রিমা। আরশিয়ান বড্ড চালাক মানুষ। ডমিন্যান্ট আচরণের বিপরীতে এতটা বিনয়ী ভাবে বলে যে অপরপক্ষ তা মানতে বাধ্য হয়। প্রিমা কথা না বাড়িয়ে কফির গ্লাসটা আরশিয়ানের হাতে দিয়ে চুলগুলো বাঁধতে লাগলো। সহসা আরশিয়ান তাকে আড়াল করে দাঁড়াল। বেচারার জেলাসি দেখে প্রিমার এবার মাত্রাতিরিক্ত হাসি পেলো। সে বুঝতে পারছে তাদের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। দায়িত্ববোধ জড়িয়ে থাকলেও আলাদা কিছু অনুভূতি খুব সংগোপনে জায়গা করে নিচ্ছে। প্রিমা মাথায় আঁচল টেনে বলল,

–” এখন ঠিকাছে? ”

আরশিয়ান প্রিমার নতুন বউ ভাবটা লক্ষ্য করে আনমনে বলল,

–” ঘোমটা টেনে তো মেয়েটাকে দ্বিগুণ সুন্দর লাগছে। এজন্যই সুন্দরী মেয়েদের বিয়ে করা উচিত নয়। এদের পাল্লায় পড়লে পজেসিভনেসের পোকা জীবনের স্বস্তি হরন করে ফেলে৷ ”

আরশিয়ান কে বিড়বিড় করতে দেখে প্রিমা ভ্রু কুঁচকে তাকাল। তা দেখে আরশিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

–” হুঁ ঠিকাছে এখন। ”

নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে হাঁটছিল ফারজানা। কোত্থেকে যেনো ইশতিরাজ উড়ে এসে উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,

–” কফিটা মজা না? ”

ফারজানা আড়চোখে তাকাল ইশতিরাজের পানে। লোকটার সাথে কেবল ঝগড়াঝাটি হয়েছে এতদিন। পুরনো বিষয়গুলো সমাপ্ত করতে ফারজানা সহজ গলায় উত্তর দিলো,

–” আসলেই অনেক মজা। ”

ফারজানার সহজ উত্তরে ইশতিরাজ বিস্মিত হয়ে তাকাল। অবিশ্বাস্য কন্ঠে শুধাল,

–” মিসেস লাড্ডুর আম্মা ইয়ে মানে মিস ফারজানা এটা সত্যি আপনি? ”

ফারজানার মেজাজ বিগড়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল,

–” মিস্টার পঁচা আলু যুক্ত শিঙাড়া ইয়ে মানে মিস্টার সিঙ্গার এটা সত্যি আমি। ”

ইশতিরাজ বুকে হাত রেখে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

–” এবার বিশ্বাস হয়েছে। ”

_

আকাশে মেঘের ঘনঘটা বাড়তে দেখে সকলে চটজলদি রওনা দিলো রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। রিসোর্টে পৌঁছে সকলে নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে গেলো। মেহরিমা আগে হেঁটে জলদিই রুমে এসেছে। বেচারি ঘুমে ঢুলছে রীতিমতো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির পিন গুলো খুলতেই আচমকা দরজা লাগানোর শব্দ কানে আসলো। মেহরিমা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

–” জলদিই ফ্রেস হয়ে আসেন। লাইট অফ করে ঘুমাবো আমি। ”

অপর পাশ থেকে কোনো প্রত্যুত্তর ভেসে আসলোনা। কীয়ৎকাল পর মেহরিমা টের পেলো শক্তপোক্ত একটা পুরুষালি হাত তার নতজানু শরীরটা আগলে নিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে ঘুমঘুম ভাবটা উড়ে গিয়ে শঙ্কা এসে ভর করল তার অন্তস্থলে। তাজরিয়ানের অধৈর্য স্পর্শ বেনারসি টিস্যু শাড়ির আঁচলটা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কাঁধ থেকে খসে পড়লো। হুট করে এমনটা হওয়ায় মেহরিমা চমকে চোখ মেলে তাকাল অতঃপর দেখলো তাজরিয়ান এক দৃষ্টিতে তার কোমরে থাকা সিঙ্গেল চেইনের কামারবন্ধটার দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে আছে। পুরো দৃশ্যটা অবলোকন করে আচানক মেহরিমা কাঁপা স্বরে বলল,

–” ওটা এ..এমনিতেই পরেছিলাম। ”

তাজরিয়ান এক ঝটকায় মেহরিমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোমরে আলতো স্পর্শ এঁকে দিয়ে হাস্কি বলল,

–” আমিও এমনিতেই অধৈর্য হয়েছি। ”

মেহরিমা ভীত হয়ে সরে যেতে নিলে তাজরিয়ান তাকে আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো। তাকে অবাক করে দিয়ে তাজরিয়ান কামারবন্ধের সিঙ্গেল চেইনটা মুঠো পাকিয়ে একটানে ছিঁড়ে ফেলল। মেহরিমা কিঞ্চিত ব্যথাতুর শব্দ করে উঠলে তাজরিয়ান হুশিয়ারি দিয়ে বলল,

–” ডোন্ট ইয়্যু ডেয়ার টু রেইজ ইয়্যোর ভয়েস এট অল আদারওয়াইজ ইয়্যু ওন্ট বি এবল টু হ্যান্ডল ইয়্যোর সাইকো হাসবেন্ড বউজান। ”

মেহরিমা ফাঁকা ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। শাড়ির আস্তরণটা সরিয়ে মেহরিমাকে পাজাকোলে তুলে নিয়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো তাজরিয়ান।

প্রথম তিনটা কটেজ পাশাপাশি থাকলেও তাজরিয়ানদের টা একটুখানি ব্যাক সাইডে। যার ফলস্বরূপ অন্য বেলকনি থেকে তাদের কেউ দেখতে পারবেনা। তাদের বেলকনির ইনফিনিটি ভিউটা চমৎকার। যতদূর চোখ যায় কেবল সবুজের সমারোহ এবং অন্তরীক্ষের মোহনীয় দৃশ্য চোখে পড়ে। পাখিরা এসে ভিড় জমায় গাছের ডালে। সেই বেলকনিতে ছোটোখাটো একটা সারপ্রাইজ এরেঞ্জ করা হয়েছে।

বিশাল বেলকনির এক পাশে ক্যানপি আবৃত নরম ফোমের গালিচা বিছানো আছে। বেডের উপর খুব অল্প পরিমাণে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। বেড সাইড থেকে নিরাপদ দূরত্বে বেলকনির রেলিং ঘেঁষে দুটো বৃহৎ আকৃতির রাজকীয় মোমবাতি রাখা হয়েছে । যার মোহনীয় আলোয় পুরো বেলকনি আলোকিত হয়ে রয়েছে। পুরো দৃশ্যটা দেখে মেহরিমার শরীর হিম হয়ে আসলো। তাজরিয়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করে মৃদু স্বরে শুধাল,

–” আমায় লুটে নিতে এত আয়োজন করেছেন? ”

তাজরিয়ান হালকা হেসে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

–” নিজেকে লুটিয়ে দেওয়ার গল্পটা স্মরণীয় রাখতে যতটুকু প্রয়োজন অতটুকুই করেছি। ”

মেহরিমা আর কথা খুঁজে পেল না। তাজরিয়ান এগিয়ে গেলো সেই পুষ্পসজ্জিত গালিচার দিকে। মেহরিমাকে রেখে তার পাশ ঘেঁষে বসে গাঢ় স্পর্শ এঁকে দিতেই মেহরিমা সামান্য বাঁধা দিয়ে দুর্বল স্বরে বলল,

–” আপনার স্পর্শ গুলো ভীষণ রুথলেস। ”

প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে নিজেকে খানিকটা সামলে তাজরিয়ান হাঁপানো সুরে বলে উঠল,

–” একজন সাইকোপ্যাথের থেকে আদুরে স্পর্শ আশা করাটা বড় ধরনের বোকামি বউজান। ”

কথার পৃষ্ঠে বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেলনা মেহরিমা। শঙ্কা ভুলে সাদরে গ্রহণ করল নিজের ব্যক্তিগত পুরুষের উন্মাদনা । রাত বৃদ্ধির সাথে গাঢ় হতে থাকে তাজরিয়ানের বেপরোয়া স্পর্শ। ঘায়েল মেহরিমা কেবল নিভু নিভু চোখে চেয়ে থাকে তার অধৈর্য্য পুরুষটা’র দিকে। তাজরিয়ানের লাগামহীন বেসামাল স্পর্শের যন্ত্রণায় চোখের কোল ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা উষ্ণ নোনাপানি।কীয়ৎকাল পেরোতেই হাতে বৃষ্টির মৃদু স্পর্শ পেয়ে ক্লান্ত স্বরে মেহরিমা বলে উঠে,

–” শুনছেন? বৃষ্টি পড়ছে তো। ”

মেহরিমার উপর সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা তাজরিয়ান প্রত্যুত্তরে ঘোরলাগা কন্ঠে বিরক্তি ঢেলে বলল,

–” ব্যাটা হিংসুটে বৃষ্টির ফোঁটা হাজার চেষ্টা করলেও আমার সুঠাম দেহের আস্তরণ ভেদ করে তোকে ছুঁতে পারবেনা বউজান। তুই নিশ্চিন্তে থাক আর আমাকে প্রশান্তি খুঁজে নিতে দে। ”

কোনোমতে কথাটা বলে পুনরায় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো তাজরিয়ান। নিষ্প্রাণ বৃষ্টির প্রতি এমন হিংসুক মনোভাব দেখে স্মিত হাসলো মেহরিমা।

_

সারাদিন ঘুমানোর ফলে হুতুমপেঁচার মতো রাত জেগে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাস করছে প্রিমা। প্রায় ঘন্টাখানেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রিমাকে ঘরে আসতে না দেখে বিছানা ছেড়ে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো আরশিয়ান। কয়েক পা এগোতেই শুনলো প্রিমা গুনগুনিয়ে গান গাইছে। হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে আরশিয়ান বলে উঠল,

–” আরেকটু জোরে গাইলে এই অধমের কর্ণ জোড়া কৃতার্থ হতো। ”

প্রিমা ঘাড় ফিরিয়ে তাকে দেখে লাজুক হাসলো। ধীর স্বরে বলল,

–” আমার গানের কন্ঠ ভালোনা। সুর, তাল, ছন্দ সবটা গুলিয়ে ফেলি। ”

আরশিয়ান আলতো হাসলো। প্রিমার মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই তার ভ্রু কুঁচকে আসলো।কৌতূহল দমাতে না পেরে শুধাল,

–” আপনার চোখমুখ এমন ফ্যাকাশে লাগছে কেনো? ”

প্রিমা খানিকটা ইতস্তত ভাবে বলল,

–” এমনিতেই একটুখানি টেনশনে ছিলাম তাই। ”

আরশিয়ান চিন্তিত স্বরে বলল,

–” এখানে আসার পর দেখছি আপনি ঠিক মতো খেতে পারছেন না। কোনো সমস্যা থাকলে নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে পারেন । ট্রাস্ট মি। আমি মোটেও জাজমেন্টাল হবো না। ”

আরশিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো প্রিমা। কথাটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে ধীর স্বরে বলল,

–” তেমন কিছুই না। তবে একটা কথা মানতেই হবে। আপনার ওয়াইফ ভীষণ লাকি ছিলেন। ”

আচমকা প্রিমার মুখে এমন কথা শুনে সামান্য চমকাল আরশিয়ান। নিজেকে সামলে সাবলীলভাবে উত্তর দিলো,

–” সেই হিসেবে তো আপনিও লাকি। ”

প্রিমা হালকা হেসে নির্বিকার স্বরে উত্তর দিলো,

–” আমি কেবলই আপনার দায়িত্ব। দু’টো সম্পর্কের সমীকরণ এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলি ভীষণ আলাদা। ”

প্রিমার কথা শুনে আরশিয়ান খানিকটা ব্যথিত হলো। কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে বলল,

–” আমি যথাসম্ভব চেষ্টা কর…

প্রিমা মাঝপথে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

–” আমি জানি। আপনার প্রচেষ্টা গুলো একদম চোখে পড়ার মতো। শুরুতে আমার সামান্য স্পর্শ হজম করতে আপনাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। এরপরেও দায়িত্বের খাতিরে সেটার সাথে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এক বিছানায় পাশাপাশি শোয়ার পর আপনার অস্বস্তি আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি তবে প্রচন্ড ধৈর্যের সাথে দাঁতে দাঁত চেপে সেই বিষয়টা ও সহ্য করে নিয়েছেন আপনি। বদ্ধ কামরায় আমার উপস্থিতি ক্ষণে ক্ষণে আপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতো বিধায় ঘন্টার পর ঘন্টা নির্লিপ্ত ভাবে বেলকনিতে সময় কাটিয়ে আপনার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি। তবে সমস্যাটা কোথায় জানেন? আমি চাইনি আপনি দায়িত্ব হিসেবে আমাকে মানিয়ে নেন। আমি চেয়েছিলাম আপনি একজন স্ত্রী হিসেবে আমার উপর অধিকার দেখান।”

এক নিঃশ্বাসে এতটুকু বলে থামলো প্রিমা। আরশিয়ান নির্বিকার। প্রিমার একটা কথাও ভুল নয় তাই মেকি এক্সপ্লেনেশন দিতে গেলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অদূরে তাকিয়ে রইল কেবল। প্রিমা তার নির্লিপ্ত দৃষ্টি দেখে স্মিত হেসে বলল,

–” আজ থেকে ওসব দায়িত্ব নামক কেয়ার দেখাবেন না প্লিজ। আমি অবজ্ঞা পেয়ে অভ্যস্ত। আপনার অবহেলা খুব একটা গায়ে লাগবেনা। নিজেকে এতদিন একা সামলেছি সুতরাং আপনার সঙ্গ ছাড়াও আমার দিনকাল চলে যাবে। দায়িত্বের গোলকধাঁধায় নিজেকে জোরপূর্বক টেনে আনতে যাবেননা প্লিজ। আমার ভালো লাগেনা।”

আরশিয়ান কথার পৃষ্ঠে বলার মতো কিছু খুঁজে পেলনা। নিশ্চুপ ভঙ্গিতে দেখতে থাকলো বাহিরের দৃশ্য। আচমকা দেখলো বৃষ্টি বিলাস করতে ফারজানা বেরিয়ে আসছে। তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্তরীক্ষের পানে তাকাল আরশিয়ান। ফারজানাকে বেরিয়ে আসতে দেখা মাত্র প্রিমাও নিচে যেতে চাইলে আরশিয়ান বাঁধা দিয়ে বলল,

–” এমনিতেই আপনার ঠান্ডার ধাত আছে। এই অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজলে নির্ঘাত অসুস্থ হয়ে পড়বেন। ”

প্রিমা থামল। চকিতে তাকাল আরশিয়ানের দিকে। আরশিয়ান ফাঁকা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,

–” আমি জাস্ট চিন্তা থেকে বলেছি। ভুল বুঝবেন না প্লিজ। ”

প্রিমা কথা বাড়ালো না। নিভৃতে উপভোগ করতে থাকলো বৃষ্টিস্নাত রাতে আরশিয়ানের নিরব সঙ্গ।

সারাদিনে তোলা এস্থেটিক ছবিগুলো ইডিট করে তার ভ্যারিফাইড ফেসবুক একাউন্টে আপলোড দিচ্ছিল ইশতিরাজ। নেটওয়ার্কের দূর্গতি দেখে বাধ্য হয়ে বেলকনিতে আসলো একটু উন্নত নেট কানেকশন পাওয়ার আশায় কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এক অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য দেখে বেচারার হার্ট কানেকশন সিগনাল মিস করতে শুরু করল।

রিসোর্টের সল্প আলোয় সবুজের সমারোহের অভ্যন্তরে ধূসররঙের কামিজ পরিহিত এক নারীর বৃষ্টি বিলাসের দৃশ্য ইশতিরাজকে স্তব্ধ করে দিলো। হাতের ম্যাকবুকটা পাশের চেয়ারে রেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে অবলোকন করতে থাকল সেই নারীর প্রত্যেকটা পদক্ষেপ। একটা পর্যায়ে ফারজানা দু-হাত মেলে চোখ বুজে আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে সেই দৃশ্য দেখে ইশতিরাজ বুকে হাত রেখে বিড়বিড়িয়ে বলল,

–” হার্ট স্পেশালিষ্টের হার্টবিট মিস করানোর দায়ভার আপনাকে নিতেই হবে মিস শত্রু। নজর যেহেতু পড়ে গেছে এবার আপনাকে আমার মিসেস হওয়ার থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা। ফাইনালি দ্যা গ্রেট শওকাতুল ইশতিরাজ চৌধুরী সিঙ্গেল জীবনের ইতি ঘটিয়ে আজীবনের জন্য কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে যাচ্ছে। ”

ঘোরে ডুবে থাকা ইশতিরাজের হুঁশ ফিরল এক বিকট শব্দের আওয়াজে। চকিতে ফিরে তাকাতেই দেখলো ফারজানার নিথর শরীরটা পড়ে আছে সবুজ ঘাসের বক্ষপটে। ধুসর কামিজের বাঁ পাশে বুলেটের ক্ষতের চিহ্ন। সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে ভিজে যাচ্ছে ঘাসের গালিচা। হতভম্ব ইশতিরাজ কে আরেকটু আতংকিত করে দিতে ফারজানার আধখোলা চোখগুলো নিমিষেই বন্ধ হয়ে গেলো।

চলবে?