শিরোনামহীন অনুভূতি পর্ব-২০

0
13

#শিরোনামহীন_অনুভূতি
#রুহানিয়া_ইমরোজ
#পর্বসংখ্যাঃ২০

ঘুমের রেশ কাটতেই আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে তাকাল আরশিয়ান। পুরো ঘরটা অন্ধকারে ডুবে আছে। আরশিয়ান ঘুম আছন্ন চোখজোড়া মেলে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো জানালায় ভারী পর্দা টানানো। বেলকনির দরজা ভেজিয়ে রাখা এজন্যই সূর্যের মিষ্টি রোদ্দুর ঘরে প্রবেশ করতে পারছেনা।

ক্লান্ত শরীরটা টেনে উঠে বসতেই মাথা ঝিমঝিম করে উঠল তার। মাথায় হাত চেপে ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তার ঘোর আছন্ন মস্তিষ্ক আস্তে-ধীরে নিজের কার্যক্ষমতা ফিরে পেলো। নিজের অবস্থান খেয়াল করতেই আরশিয়ানের ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে।

শরীরের অবস্থা এবং আশেপাশের পরিস্থিতি অবলোকন করে অভিজ্ঞ আরশিয়ান ভালোমতো বুঝতে পারে গতকাল রাতে কী হয়েছে। মস্তিষ্কে আরেকটু চাপ প্রয়োগ করতেই গতকাল রাতে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা ভীষণ স্পষ্টভাবে মস্তিষ্কে হানা দেয়। আরশিয়ান বিমূঢ় হয়ে বসে থাকে কতক্ষণ।

রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ডেজার্ট আইটেম বানাতে ব্যস্ত প্রিমা। বেচারির চোখেমুখে লেপ্টে আছে লজ্জারুণ হাসি। কিছুক্ষণ পর পর প্রিমাকে ব্লাস করতে দেখে মাহিরা চৌধুরী মজা করে বললেন,

–” কী ব্যপার আম্মু? আমাদের ছেলে বুঝি একটু বেশি লজ্জা দিয়ে ফেলেছে ? ”

প্রিমা লজ্জায় আরও সিঁটিয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,

–” না.. তেমন কিছু না ছোটমা আসলে ওই একটা ফা..নি ভিডিওর কথা ভাবছিলাম। ”

প্রিমা অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে পরোটা ভাজতে থাকা আফিয়া চৌধুরী স্মিত হাসলেন। তার অভিজ্ঞ চোখজোড়া আসল কাহিনী বুঝতে ভুলে করেনি। তাদের সম্পর্কের উন্নতি দেখে আফিয়া চৌধুরী ভীষণ খুশি হোন। এখন ভালোই ভালোই বংশের প্রদীপের আগমন ঘটলে তিনি শান্তি পাবেন কিছুটা। সংসারটা পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে উনার।

সকলেই নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলো এমন সময় উপর থেকে আকস্মিক ভাঙচুরের আওয়াজ ভেসে আসে।সকলেই চমকে উঠেন ভীষণ।মাহিরা চৌধুরী ভাবেন তাজরিয়ান হয়তো আবারও খেপেছে। প্রিমা কাজ ফেলে চটজলদি উপরে আসতেই ভীষণ অবাক হয়ে যায় কেননা শব্দটা তাজরিয়ান নয় বরং আরশিয়ান এর ঘর থেকে আসছে।

হতবাক প্রিমা ঘরের দিকে পা বাড়াতেই তার পায়ের পাতার উপর একটা ফুলদানি আছড়ে পড়ে। বেচারি অস্ফুটস্বরে আর্তনাদ করে উঠতেই রাগী আরশিয়ান থাবা মেরে তার হাতটা ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আচমকা ওভাবে টেনে ভেতরে আনার ফলস্বরূপ প্রিমা চমকে উঠে। অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অস্ফুটস্বরে বলে,

–” কী করছেন? ”

আরশিয়ান তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

–” সেটার উত্তর তো আপনি দিবেন। কী করেছেন কাল রাতে? কেনো করলেন? ”

প্রিমা কিঞ্চিত অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে প্রত্যুত্তরে বলে উঠে,

–” আমি কী করেছি? ”

আরশিয়ান অধৈর্য কন্ঠে বলে,

–” আমি নাহয় হুঁশে ছিলাম না কিন্তু আপনিতো সবটা জানতেন এরপরও কীভাবে পারলেন আমার দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিতে। ”

প্রিমার মুখটা থমথমে হয়ে উঠে। রঙিন সপ্নে সপাটে চপেটাঘাত পড়ে। আরশিয়ানের ক্ষুব্ধ দৃষ্টি অবলোকন করে শীতল কন্ঠে বলে,

–” আমি সুযোগ নিয়েছি নাকি আপনি বাধ্য করেছেন আপনার পাগলামিতে সহমত পোষণ করতে? আমাদের সম্পর্কটা অতোটাও অস্বাভাবিক পর্যায়ে নাই যেখানে অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক গড়ে ওঠাটা সুযোগ নেওয়া হিসেবে আখ্যায়িত হবে ।”

প্রিমার শীতল প্রত্যুত্তরে আরশিয়ানের রাগ তরতরিয়ে বাড়ে। দরজায় শব্দ করে থাবা বসিয়ে শক্ত কন্ঠে আরশিয়ান বলে উঠে,

–” একদম কথা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করবেন না। বোনের স্বামীকে ফাঁসিয়ে তার সান্নিধ্য পেতে একটুও খারাপ লাগলো না আপনার? ”

আরশিয়ানের বলা কথায় প্রিমা হতভম্ব হয়ে গেলো। অবাক কন্ঠে শুধাল,

–” কী বললেন? কার স্বামী আপনি ? ”

আরশিয়ান কন্ঠে উগ্রতা মিশিয়ে বলল,

–” নাটক করবেন না প্লিজ। আপনাকে ওসব মানায় না। আপনি জানতেন না নীহারিকা ওয়াসীত্ব আমার প্রথম স্ত্রী ছিলো ? ”

প্রিমা হতবাক কন্ঠে বলল,

–” ওই চরিত্রহীন মহিলা বিবাহিত ছিলো? আপনি উনার হাসবেন্ড ছিলেন? ”

প্রিমার প্রশ্নাত্মক কন্ঠে জিজ্ঞেস করা মন্তব্য শুনে আরশিয়ানের মেজাজ খারাপ হয়। দাঁতে দাঁত চেপে মেজাজ সামলে কোনোমতে বলে উঠে,

–” আমি মরহুমা স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটাও বাজে মন্তব্য করলে আমি ভুলে যাবো আপনি কে। অহেতুক তর্ক করে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েন না। সোজাসাপ্টা বলেন কেনো খুন করেছেন আমার স্ত্রীকে? ”

আরশিয়ানের চোখেমুখে স্পষ্ট রাগের স্ফুলিঙ্গ। তার কন্ঠে ঝরে পড়ছে অবিশ্বাস। কীয়ৎকাল নিরবে আরশিয়ানের মুখপানে চেয়ে পুরো বিষয়টা হজম করার চেষ্টা করলো প্রিমা অতঃপর পাথুরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সহজ কন্ঠে বলল,

–” সত্য বলা যদি বাজে মন্তব্য হয় তাহলে নিশ্চুপ থাকায় শ্রেয়। আপনি অলরেডি ভুলে বসে আছেন আমাদের সম্পর্ক। নতুন ভাবে ভোলার মতো কিছুই নেই। ”

আরশিয়ান লম্বা একটা শ্বাস টেনে প্রিমার বাহু টেনে ধরে বলে,

–” আপনি কী জানেন এই অপরাধের জন্য আপনার কতটা ভয়াবহ শাস্তি হতে পারে ?”

প্রিমা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,

–” শেষপর্যন্ত শনাক্তকৃত আসামি যখন কাঠগড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে তখন শাস্তি প্রদানে কালবিলম্ব করছেন কেনো? ”

আরশিয়ান বিভ্রান্ত চোখে দেখলো প্রিমার নিরুত্তেজ আচরণ। সে হতবিহ্বল কন্ঠে শুধাল,

–” আপনি নিজের হয়ে কোনো সাফাই দিবেন না? ”

প্রিমা ম্লান হেসে ধীর কন্ঠে বলল,

–” আপনার আত্মবিশ্বাসী কন্ঠস্বর খুবই সুস্পষ্ট ভাবে আমার অপরাধের সত্যতা জানান দিচ্ছে। এরপরও মিছে স্বীকারোক্তি চাওয়াটা বেমানান।

আরশিয়ান ধীর কন্ঠে শুধাল,

–” তার মানে খুনটা আপনিই করেছেন? ”

প্রিমা নিস্তেজ কন্ঠে বলল,

–” সমাজ তো তাই বলেছে। ”

প্রিমার চোখে এক অদ্ভুত অভিমানী আক্ষেপ লেপ্টে আছে। আরশিয়ান দু’হাতে তার বাহু আঁকড়ে ধরে নিজের কাছাকাছি এনে পুনরায় ব্যগ্র কন্ঠে শুধাল,

–” আমি আপনার স্বীকারোক্তি চাইছি। ”

প্রিমা ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল,

–” আমি আপনার ভাবনাকেই আমার অন্তিম বয়ান হিসেবে আখ্যা দিচ্ছি। ”

এপর্যায়ে আরশিয়ান রাগে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে বসলো। প্রিমার বাহু ঝাঁকিয়ে শক্ত কন্ঠে শুধাল,

–” কেনো করেছিলেন এই নিষ্ঠুরতম কাজ? আপনি কী জানেন নীহা ওয়ান মান্থ প্রেগন্যান্ট ছিলো? ”

প্রিমা নির্বিকার কন্ঠে বলল,

–” জানতাম না। ”

প্রিমার ভাবলেশহীন জবাবে আরশিয়ান ক্ষিপ্র গতিতে তার চিবুক খামচে ধরলো। চোখে চোখ রেখে হিসহিসিয়ে বলল,

–” আমি আপনার জন্য সবচেয়ে কষ্টদায়ক মৃত্যুটা বাছাই করবো প্রিমা। আপনি কেবল আমার স্ত্রী সন্তান নয় বরং আমার বিশ্বাস এবং অনুভূতির নিকৃষ্টতম খুনী। ”

প্রিমা আবেগহীন চাহুনিতে কেবল দেখে গেলো আরশিয়ানের অভিব্যক্তি। তার বুকের ভেতর চলমান নিষ্ঠুরতম তান্ডবলীলার ছিটাফোঁটাও প্রকাশের চেষ্টা করলো না উল্টো বিড়বিড়িয়ে বলল,

–” সুখের আশা কেনো করিস অবুঝ হৃদয়..
দুঃখ যার অন্তিম নিয়তি সুখ কী তার কপালে সয়? ”

আরশিয়ান আর কিছু বলার পূর্বে হঠাৎ দরজায় করাঘাতের শব্দ শোনা গেলো। বিক্ষিপ্ত মেজাজে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই চৌধুরী বাড়ির সকলে ঘরের ভিতর প্রবেশ করল। ঘরের এলোমেলো অবস্থা দেখে আরিয়ান চৌধুরী অবাক কন্ঠে শুধালেন,

–” কী অবস্থা করেছো ঘরের?”

আরশিয়ান নিরুত্তর রইল। কোমরে হাত রেখে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস টেনে রাগ সামলানোর বৃথা চেষ্টা করছে সে। হাতের সাহায্যে ভেজা চুলগুলো ঠিক করতে করতে মেজাজটা শান্ত করার চেষ্টা করছিল তন্মধ্যে আকস্মিক আফিয়া চৌধুরী হতভম্ব মুখে বলে উঠলেন,

–” কী করেছিস তুই? পর পায়ের এমন অবস্থা হলো কীভাবে? ”

সবাই চকিতে ফিরে তাকাল দেওয়ার সাথে মিশে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিমার দিকে। বেচারির পায়ের মধ্যমা আঙ্গুলসহ বেশকিছুটা জায়গা জুড়ে জখম হয়ে আছে। আঘাতপ্রাপ্ত জায়গাটায় রক্ত জমাট বেঁধেছে। আফিয়া চৌধুরী দ্রুত এগিয়ে গিয়ে প্রিমাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে মেহরাবের উদ্দেশ্যে বললেন,

–” জলদিই একটু দেখ না বাপ। আমার মেয়েটা কত কষ্ট পাচ্ছে। ”

আফিয়া চৌধুরীর কন্ঠে মিশে আছে একরাশ দুশ্চিন্তা। মেহরাব এগিয়ে এসে একবার জখমটা দেখে ফার্স্ট এইড কীট আনতে গেলো। সবটা অবলোকন করে আরশিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলল,

–” সামান্য একটু চোট দেখে উতলা হয়ে পড়ার কিছু নেই মা। ”

আরিয়ান চৌধুরী ছেলেকে ধমকে বললেন,

–” চুপ করো বেয়াদব ছেলে। উশৃংখলতা শিখেছ? কী ভেবেছ আমার কানে কোনো খবর আসেনা? রাত-বিরেত নেশা করে এসে বউয়ের গায়ে হাত তোলার সাহস কে দিয়েছে তোমায়? ”

আরশিয়ান রাগটা হজম করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু শেষ অব্দি সেটা আর সম্ভব হলো না। বাবার কথার প্রত্যুত্তরে রেগেমেগে বলে উঠল,

–” যেটা জানো না সেটা নিয়ে অহেতুক কথা বলো না। মায়া কান্না বন্ধ করো কারণ তোমার সো কল্ড বউমা কোনো সতীসাবিত্রী মেয়ে নয়। আমার জীবন ধ্বংসের পরিকল্পনাকারী সে৷ ”

আরশিয়ান আকস্মিক পরিবর্তনে প্রচন্ড রকমের অবাক হলো উপস্থিত সবাই। আরশিয়ান সবার অবস্থা বুঝে সবটা খুলে বলল। সকলেই বিস্মিত চোখে তাকাল প্রিমার দিকে কিন্তু সে নির্বিকার ভঙ্গিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল। আরশিয়ান সেটা লক্ষ্য করে জেদি স্বরে তার বাবাকে বলল,

–” তুমি বাধ্য করেছিলে না উনাকে বিয়ে করতে? এখন তুমিই উনার থেকে উত্তর আদায় করো। কেনো করেছেন এসব উনি? আমার জীবনে আসার পেছনে কী উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে উনার? ”

আরিয়ান চৌধুরী ভীষণ বিচক্ষণ মানুষ। ছেলের কথাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষণ করে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

–” কোনো ঘটনায় একপাক্ষিক ভাবে কোনোকিছু ঘটে না শান। তুমি যেহেতু আমার মেয়েকে অভিযুক্ত করছ সুতারাং পুরো সত্যটা খুঁজে বের করা তোমার দায়িত্ব। আমি আমার মেয়েকে কোনোরূপ প্রশ্ন করবোনা কারণ আমি জানি সে নির্দোষ। ”

প্রিমা আচমকা চোখ মেলে চাইল। আরিয়ান চৌধুরী বিনিময়ে স্নেহমাখা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আরশিয়ান বাবার কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–” আই কান্ট বিলিভ সামান্য কয়টা মাসে উনি তোমাদের এতটা বোকা বানিয়ে ফেলেছে। ”

আরিয়ান চৌধুরী আচমকা হেসে ফেললেন। ছেলের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

–” মাথা ঠান্ডা করো বাবা। তুমি চরম ভুল করছ। আপাতত ক্লু খোঁজায় মন দাও এরপর নাহয় দেখা যাবে বাকিটা? ”

আরশিয়ান ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে বলল,

–” আমি প্রমাণ ছাড়া কথা বলছিনা বাবা। প্রত্যেকটা প্রমাণ উনার বিরুদ্ধে এমনকি উনি নিজেও একটু আগে দায়সারাভাবে নিজ কর্মের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। ”

আরিয়ান চৌধুরী নিরব দৃষ্টিতে প্রিমার ভাবলেশহীন মুখশ্রী অবলোকন করে বলেন,

–” তুমি তাকে প্রশ্ন করোনি বরং সরাসরি অপবাদ দিয়েছ। নারীর অভিমানের ভাষা বুঝতে শেখো শান নয়তো আজীবন পস্তাতে হবে। ”

সিরিয়াস মুহূর্তে অনুভূতির বিশ্লেষণ বিশ্রী ঠেকল আরশিয়ানের কাছে। সে বিরক্ত হয়ে বলল,

–” তোমাদের ননসেন্স আচরণে আমি বিস্মিত হচ্ছি। সিরিয়াসলি বাবা? সবটা প্রুফ হয়ে যাওয়ার পরও তোমরা একজন খুনিকে ডিফেন্ড করছো? ”

আরিয়ান চৌধুরী সহসা ধমকে উঠলেন ছেলেকে। গলা উঁচিয়ে বললেন,

–” ভদ্রভাবে কথা বলো শান। সুস্পষ্ট প্রমাণ হাজির করতে না পারলে অহেতুক গলাবাজি করো না। ”

আরশিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–” ফাইন। জাস্ট প্রমাণ হাতে আসুক এরপর সকল অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার করা হবে। ততদিন যেনো উনাকে আমার চোখের সামনে আসতে না দেখি। নয়তো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কী করে বসবো আই ডোন্ট নো। ”

সমস্তটা শুনে আফিয়া চৌধুরী এবার আরশিয়ানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

–” এই শব্দগুলো ভালোমতো মস্তিষ্কে গেঁথে রাখিস। আজকে যতটা অবহেলা নিয়ে অবজ্ঞা মিশিয়ে ওকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিস একদিন ঠিক ততটাই নির্মম ভাবে তোর আকুতি মেশানো আবদার অবমাননা করা হবে। ”

আরশিয়ান শীতল চোখে কেবল আফিয়া চৌধুরীর বুকে লেপ্টে থাকা প্রিমাকে একপলক দেখলো। প্রত্যুত্তরে কিছু বলার পূর্বে আচানক তার ফোনটা বেজে উঠল। গুরুত্বপূর্ণ কল দেখে তৎক্ষণাৎ কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একটা ব্যর্থ কন্ঠ বলল,

–” আরভিদ পালিয়েছে বস। ”

নিমিষেই আরশিয়ানের মুখভঙ্গি পরিবর্তন হলো। দরজার কাছে দাঁড়ানো তাজরিয়ানকে নিয়ে দ্রুত কদম ফেলে বাহিরে বেরিয়ে গেলো। আরশিয়ানের প্রস্থানের পানে দৃষ্টি তাক করে প্রিমা ধীর কন্ঠে বলল,

–” আমাকে একটু গেট পর্যন্ত আগিয়ে দিবেন আম্মু?”

আফিয়া চৌধুরী অবাক কন্ঠে শুধালেন,

–” কেনো মা? ”

প্রিমা নিস্তেজ কন্ঠে বলল,

–” উনি স্পষ্টভাবে আমায় বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছেন আম্মু। আমারও দমবন্ধ লাগছে।আমি আর এখানে থাকতে পারবোনা।”

আরিয়ান চৌধুরী এগিয়ে এসে প্রিমার মাথায় হাত রেখে অধিকার পূর্ণ গলায় বললেন,

–” এটা তোমারও বাড়ি আম্মা। কারও বউয়ের পরিচয়ে থাকতে হবে না তোমাকে। তুমি আমার মেয়ে এবং এই একটা কারণ যথেষ্ট তোমার এখানে অবস্থান করার জন্য। বাবার কথা রাখবেনা তুমি? ”

আরিয়ান চৌধুরীর কথার প্রত্যুত্তর করতে পারলোনা প্রিমা। আফিয়া চৌধুরীর বুকে মুখ লুকিয়ে রইল কেবল। প্রিমার নিরুত্তর ভঙ্গিমা দেখে আফিয়া চৌধুরী বললেন,

–” একটা মেয়ের বড্ড শখ ছিলো আমার কিন্তু কোনো কারণে খোদা সেটা পূরণ করেননি হয়তো। এতবছর পর তোমাকে পেয়ে আর হারাতে চাইছি না মা। তোমার এই পঁচা আম্মু ভীষণ যত্নে রাখবে তোমাকে। এরপরও ফিরিয়ে দিবে আমায়? ”

উনাদের কথায় অজান্তেই প্রিমার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। অবরুদ্ধ কন্ঠে কোনোমতে বলল,

–” আমাকে অবিশ্বাস করবে না তো? মা..মাঝপথে হাত ছেড়ে দিবে না তো? ”

উপস্থিত সকলেই ভীষণ অবাক হলো প্রিমার এহেন আবদারে। আরিয়ান চৌধুরী হাতের ইশারায় সবাইকে চলে যেতে বলে প্রিমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,

–” আমি আরিয়ান চৌধুরী তোমায় কথা দিচ্ছি আম্মা.. একদম প্রিন্সেসের মতো রাখবো তোমায়। আমার অবুঝ অর্ধাঙ্গিনী ও তোমার সর্বোচ্চ খেয়াল রাখবে। দিবে না একটা সুযোগ? ”

কাঙাল প্রিমা না সূচক উত্তর জানাতে পারলোনা। বাচ্চাদের মতো নাক টেনে বলল,

–” আচ্ছা। ”

আরিয়ান চৌধুরী ফিক করে হেসে দিয়ে পিতৃ সুলভ স্নেহ দেখিয়ে বললেন,

–” গুড গার্ল। এখানে ঘটে যাওয়া ঘটনা এই রুমেই দাফন করে দাও আম্মা। জীবনে সুখী হতে গেলে অতীতের নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো ভুলে থাকতে হয়। জীবনটা সরলরেখার গতিতে এগিয়ে চলে না৷ শত-শত বাঁধা বিপত্তির পেরিয়ে তবেই সুখের সন্ধান মিলে।”

আফিয়া চৌধুরী মুগ্ধ চোখে দেখলেন নিজের প্রাণপ্রিয় মানুষটাকে। প্রিমা ধীর কন্ঠে বলল,

–” আমাকে এখান থেকে বের করো বাবাই। ”

প্রিমার মুখনিঃসৃত আদুরে স্বরে বিগলিত হাসলেন আরিয়ান চৌধুরী। মেয়ের হাত ধরে তাকে সাবধানে উঠিয়ে বললেন,

–” চলেন আম্মা।

চলবে?