#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
৮.
সন্ধ্যার আজান ভেসে আসছে।রুহা মুরসালীনের পাশে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে বিদম রোড দিয়ে।সামনেই মুরসালীনের বাইক।বাহার বাবু মামুর কোলে।মুরসালীন আড়চোখে রুহাকে দেখে বলল,
“কী ভাবছিস?”
রুহা কিছুক্ষণ ভাবুক হয়ে বলল,
“সন্ধ্যা হয়ে গেছে,বাড়ি ফিরতে আরও লেট হবে।ফিরে গিয়ে বাবাকে কী বলব?”
“যা সত্যি তাই বলবি।”
“আপনি পাগল?যদি জানে আমি বাইরে ঘুরঘুর করছি তাহলে আজ’ই আমার শেষ দিন হবে।”
মুরসালীন কোনো কথা বলল না।সোজা হাঁটল সামনের রাস্তায়।রুহা ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে দুষ্টুমি করে বলল,
“মুরসালীন ভাই জানেন?আমার বাচ্চা আপনাকে মামা ডাকলেও,সে আপনার’ই বাচ্চা হবে।”
মুরসালীন ঠোঁট চেপে বলল,
“হ্যা,কারণ বাপও আমি হবো।”
রুহা হতভম্ব হয়ে মুরসালীনের দিকে তাকিয়ে রইল।মুখ লাল হয়ে গেছে, চোখ-মুখ গুলিয়ে ফেলেছে সে।কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে লাজুক কণ্ঠে বলে উঠল,
“আপনি আমার বাচ্চার বাপ হবেন?
মুরসালীন গম্ভীর মুখে হালকা হেসে বলল,
“হতেই পারি।”
“আমি মজা করছিলাম।”
“আমি তো করিনি।”
রুহা থতমত খেয়ে গেলো।মুরসালীন আবার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বাইকের দিকে হাঁটল।রুহা বিরক্ত হয়ে পেছন থেকে বলল,
“আপনি একদম বোরিং! আপনার সাথে কথা বললেই গায়ে কাঁটা দেয়।”
মুরসালীন বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে গম্ভীর চোখে রুহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে দূরে থাকিস।কিন্তু দূরে থাকলে, একদিন বুঝবি-গায়ে কাঁটা দেওয়ার আসল মানে।”
রুহার বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে গেলো।কথা খুঁজে পেল না।লোকটার প্রত্যেকটা কথা যেন বুকে গিয়ে বিঁধে যায় ধারাল ছুরির মতন।লাজুক বদন এড়াতে বাহার বাবুর দিকে তাকিয়ে নাটক করে বলল,
“বাহার বাবু, তুমি বলো তো, তোমার মামুটা একদম বখাটে তাই না?
বাহার বাবু মিষ্টি করে হেসে হাততালি দিলো।মুরসালীনের ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি ফুটে উঠল।ঠোঁট চেপে রুহার চোখে চোখ রাখতেই রুহা বলল,
“আপনি ওকে ঘুষ খাইয়ে নিজের দলে নিয়েছেন।”
মুরসালীন ঠোঁট কামড়ে হাসল।
রুহা গম্ভীর মুখে মুরসালীনকে বাইকে উঠতে দেখে নিজের ওড়নার আঁচল ঝটকিয়ে বলল,
“আমি উঠব না, আমি হেঁটেই যাব।”
মুরসালীন হেলমেট মাথায় দিতে দিতে শান্ত স্বরে বলল,
“হেঁটে গেলে তোকে বাড়ি পৌঁছাতে ভোর হয়ে যাবে।তোর বাবাকে তখন কী বলবি?”
“তখন বলব-মুরসালীন ভাই আমাকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গেছে।”
মুরসালীন এক চিলতে হেসে গম্ভীর ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
“তোর বাপের সামনে তোর হাঁটু কাঁপে,মিথ্যে কী করে বলবি?”
রুহা বিরক্ত হয়ে বলল,
“উফফ! আপনার সাথে ঠিকমতো ঝগড়াও করা যায় না।উত্তর না দিয়ে সিরিয়াস কথা বলে গলা কেটে দেন।”
মুরসালীন বাইকের ইঞ্জিন চালিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল,
“চল, সময় নষ্ট করিস না।”
…
রিফার অফিস ছুটি হয়েছে খানিকক্ষণ আগেই।সে সাইড ব্যাগ থেকে ফোন বের করে অফিসের গেট দিয়ে বের হলো।কাল সে অফিস ছুটি নিয়েছে।তাকে দেখতে আসার কথা আগামীকাল।তাই বাবা বলেছেন কাল যেন বাড়ির বাইরে না যায় সে।রিফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ের নাম্বারে কল দিল।অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে কানে ফোন ধরতেই সালেকা বেগম কল রিসিভ করে বললেন,
“বল রিফা।”
রিফা দূর পথে দৃষ্টি রেখে বলল,
“আম্মু অফিস ছুটি হয়েছে।বাসায় কী কিছু লাগবে?নিয়ে আসবো?”
“চিনি আর নারকেল লাগবে রে রিফা।আর শোন,যদি পারিস তাহলে দেখিস তো গুড় পাস কিনা।”
রিফা কপাল কুঁচকে বলল,
“গুড় কোথায় পাব আম্মু?”
“কালিঘাটে যে তোর বাক্কার চাচার দোকান আছে,ঐ দোকানের পেছনেই দেখবি।”
“আচ্ছা,আর কিছু লাগবে?”
“শ্যাম্পু আর একটা মাথার তেল নিয়ে আসিস।”
রিফা ‘আচ্ছা’ বলে কল কেটে দিল।
তারপর বাজারে গিয়ে সব কিছু কিনে এনে রিক্সা ডাকল।ঢলীপাড়ার মোড়ে এসে রিক্সা থেকে নেমে পিছু ঘুরতেই দেখা হলো সেই চিরচেনা মানুষের সাথে।গোছানো,পরিপাটি মানুষটা,নাবিল!
নাবিল ঢলীপাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়েছিল মুরসালীন আর রুহার জন্য।হঠাৎ সামনে রিফাকে দেখে থমকে গেলো সে।দুজনের চোখে চোখ পড়ল অপ্রস্তুত ভাবে।রিফা শুকনো ঢোক গিলে পাশ কেটে চলে যেতে চাইলে নাবিল পথ আঁটকে বলে,
“রিফা দাঁড়াও।”
রিফা দাঁড়ায়,চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।বুকের ভেতর ঝড় শুরু হয়েছে আজ এতদিন পর ঐ মানুষটার মুখে নিজের নাম শুনে।নাবিল রিফার সামনে এগিয়ে এসে প্রথমে রিফার মুখশ্রী দেখে নিল।হালকা গলা কেঁশে বলল,
“শুনলাম তোমার নাকি সামনে বিয়ে?”
রিফা নিজেকে শান্ত করে জবাবে বলে,
“আর কত?ভাবলাম এবার বিয়েটা করা উচিত।”
“তুমি হ্যাপি?”
“হ্যাপি না হওয়ার কী আছে নাবিল?”
দুজনের চোখে চোখ লেগে আছে এখনো।নাবিলের দৃষ্টি কী যেন বলছে,রিফা দৃষ্টি সরিয়ে নিল।দূর নীরব পথে তাকিয়ে বলল,
“রাখতে না পারলে অন্তত শেষ বিদায়ে আসতে তো পারবে?অপেক্ষায় থাকব তোমার।”
নাবিল গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কী প্রমাণ করতে চাইছ আজও বুঝতে পারলাম না আমি।এখন দেখছি আমার বলা প্রত্যেকটা কথাই সত্য ছিল।”
রিফার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
“তোমার এই কথাটার জন্যই আজ এই অবস্থা।যেদিন সত্যটা জানতে সেদিন আফসোস করো না।”
রিফা নিজের রাস্তায় হাঁটা শুরু করল।নাবিল সেই পথ পানে চেয়ে রইলো যতক্ষণ রিফাকে দেখা যায়।হঠাৎ বাইকের শব্দ কানে আসায় সে পিছু ঘুরে দাঁড়াল।মুরসালীন বাইকের ব্রেক কষলো নাবিলের সামনে।বাইকের সামনে বাহার বাবু নিজের ছোটো ছোটো দুহাত বাড়িয়ে দিল মামুর দিকে।নাবিল বাহারকে কোলে নিতেই রুহা ভীতু নজরে ভাইয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে নেমে দাঁড়াল।
“আমি বলেছিলাম না সন্ধ্যার পর বাইরে থাকবি না?”
নাবিলের ধমকে খানিক কেঁপে উঠল রুহা।শুকনো ঢোক গিলে ভীতু কণ্ঠে বলল,
“আসলে ভাইয়া..”
“বেশি সাহস হয়েছে তোর?বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিস কখন?আর এখন কটা বাজে?”
রুহা ভয়ে আর কথাই বলতে পারল না।মুরসালীন আড়চোখে রুহার ভীতু আনন দেখে বলল,
“জান্নাতের বাসা থেকে আমি’ই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম ভাই।”
“তোর না স্টুডেন্ট পড়ানোর কথা এই সময়ে?ওকে নিয়ে বাইরে গিয়েছিলি কেন?”
“স্টুডেন্ট আজ পড়াবো না বলেই ভাবলাম বাহার আর রুহাকে নিয়ে ঘুরে আসি।”
নাবিল চোখে দৃঢ়তা রেখে মুরসালীনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওদের বাড়ি দিয়ে আয়।বাবা কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবি আমি ওদের নিয়ে বের হয়েছিলাম।”
মুরসালীন ওদের নিয়ে বাড়ির রাস্তায় বাইক ঘুরালো।বাড়ি ফিরতে মিনিট মাঁচেক লাগল।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই কামরুল শেখের মুখোমুখি হতে হলো।কামরুল শেখ ড্রয়িংরুমে গম্ভীর মুখে নরুল শেখের সাথে আলোচনা করছিলেন।সামনে সপ্তা থেকে তিনি অফিসে জয়েন করবেন।সদর দরজায় ছোটো মেয়ের সাথে মুরসালীনকে দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন সোফা ছেড়ে।রুহা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“বাবা,ভাইয়ার সাথে..মানে..!”
“কোথায় ছিলি সারাদিন?”
“ভাইয়া বাইরে নিয়ে গিয়েছিল বাবা।”
“কোন ভাই?”
রুহা মাথা নিচু করে বলল,
“নাব..”
“আমি নিয়ে গিয়েছিলাম চাচা।” রুহার মুখের কথা কেটে মুরসালীন জবাব দিল।রুহা ভয়ে চমকে উঠে মুরসালীনের দিকে তাকাল।কামরুল শেখ অননে গাম্ভীর্য টেনে বললেন,
“আমার মেয়েকে এই রাত করে বাইরে রাখার তুমি কে?কোন সাহসে ওকে নিয়ে বাইরে গিয়েছিলে তুমি?”
কামরুল শেখের গলার দৃঢ়তা মুহূর্তেই ড্রয়িংরুমে কাঁপন ধরাল।রুহা আতঙ্কে একপা পিছিয়ে গেল।শাশুড়ির ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন ইলমা বেগম ও রাইমা।মুরসালীন একটুও ভয় পেল না,উল্টো শান্ত ও গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“রুহা বাড়ির মেয়ে মানে এই বাড়ির সম্মান।আর এই বাড়ির সম্মান মানে আমার সম্মান।আমি তো ওর সম্মান নষ্ট করার মতো কোনো কাজ করিনি চাচা।তবুও ক্ষমা চাইছি আপনার অনুমতি ছাড়া ওকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
কামরুল শেখ তীক্ষ্ণ চোখে দাঁত চিবিয়ে বললেন,
“অনুমতি?তুমি..”
ইলমা বেগম এগিয়ে এসে স্বামীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“আহা থামো তুমি।কী শুরু করলে আবার?মুরসালীন কখনো ওকে নিয়ে বাইরে যায়?আজ নাহয় গিয়েছে তাতে সমস্যা কোথায়?”
রুহা সাহস সঞ্চয় করে বলল,
“বাবা,এখানে মুরসালীন ভাইয়ের কোনো দোষ নেই।আমি’ই জেদ ধরেছিলাম যেন উনি বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান।”
রাগে গজগজ করে কামরুল শেখ ধমক দিয়ে বললেন,
“এই জেদের জন্যই একদিন আমার সম্মান নষ্ট করবি তুই।যেদিন গায়ে কলঙ্ক লাগবে সেদিন বাপ বলে ডাকবি না আমায়।ভুলে যাবি আমি তোর বাপ।”
রুহার চোখে পানি টলমল করছে।নরুল শেখ ভাইকে শান্ত করার জন্য বললেন,
“ভাই,দোষ আমার ছেলের।মেয়েটাকে শুধু শুধু বকাঝকা করো না।”
“দোষ শুধু ছেলের হবে কেন?বাড়ির কোন মেয়ে এত রাত অব্দি একা বাইরে থাকে বল?”
মুরসালীন রুহার দিকে তাকিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল,
“ঘরে যা রুহা।”
রুহা বাবার ভয়ে এক পা নড়ল না।মুরসালীন রেগে ধমক দিয়ে বলল,
“বললাম না ঘরে যেতে?”
চমকে উঠল রুহা।ভয়ে ফুঁপিয়ে উঠল সে।কোনোরকম দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই মুরসালীন চাচার চোখে চোখ রেখে বলল,
“বেয়াদবি মাফ করবেন চাচা।আপনি শুধু শুধু একটা ব্যাপার এত বড়ো করছেন।আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে তাই বলে এভাবে রিয়াক্ট করার কিছু তো হয়নি।”
“হওয়া অব্দি আমি চুপ করে বসে থাকব?আমার মেয়ের ধারের আশেপাশে ঘেঁষবে না তুমি।আজকের পর থেকে যদি আমি দেখেছি ওর আশেপাশেও তুমি আসার চেষ্টা করেছ তাহলে আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।”
কামরুল শেখ রেগে জায়গা প্রস্থান করলেন।নরুল শেখ ছেলের লাল বর্ণ চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই মুরসালীন হাতের হেলমেট স-জোরে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেল।ড্রয়িংরুম পুরোটা থমথমে হয়ে এলো মুহূর্তেই।হঠাৎ করে মুরসালীনের ঘরের দরজায় বিকট একটা শব্দ হলো।রাইমা আঁতকে উঠে বাহারকে বুকের সাথে চেপে ধরল।ইলমা বেগম শুকনো মুখে স্বামীর ঘরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।এর শেষ কোথায়?এই নিরব যুদ্ধ আর কতদিন চলবে এই বাড়িতে?
…
কলেজের ক্লাসরুমে বসে আছে রুহা।জান্নাত ও মিথিলা পাশেই চুপচাপ বসে।কালকের পুরো ঘটনা ওদের বলতেই ওরা একদম নীরব।ক্লাস এখনো শুরু হয়নি।রুহা হঠাৎ ডুকরে উঠল।কান্নার কোনো শব্দ হলো না।মাথার হিজাব দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল।মিথিলা অসহায় চোখে জান্নাতের দিকে তাকাল।কী বলে সান্তনা দিবে ওকে?ক্লাসের বেল বাজতেই মুরসালীন ক্লাসে ঢুকলো।আজ রুহা একদম পেছনে বসেছে জান্নাত আর মিথিলার সাথে।মুরসালীন আড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে দেখল রুহার মাথা নত।সে ক্লাস শুরু করল।ক্লাস নিতে নিতে মুরসালীন রুহার সিটের দিকে এগিয়ে গেলো।রুহা মাথা নিচু করে বই খুলে বসে ছিল।মুরসালীন কাছে যেতেই তার চোখ আঁটকে গেলো রুহার ফর্সা গালের লাল দাগের দিকে।মাঁচ আঙুলের দাগ বসে আছে ছোটো গাল’টায়।রুহা বারে বারে হিজাব দিয়ে ক্ষত জায়গা ঢাকার চেষ্টা করছে।মুরসালীন একটা কথাও বলল না।চুপচাপ ক্লাস নিয়ে বেরিয়ে গেলো ক্লাস থেকে।
ছুটির পর রুহা বাড়ি ফিরে দেখল বাহারের বাবা অর্থাৎ বাশার এসেছে।বাহার বাবু বাবার কোলে বসে একা একা বকবক করছে।রাইমা চুপচাপ ডাইনিং টেবিলে খাবার এনে রাখছে।বাশার রুহাকে দেখে বলল,
“কেমন আছো রুহানি?”
রুহা জোরপূর্বক হেসে সালাম দিল।
“ভালো আছি দুলাভাই,আপনি ভালো আছেন?”
“ভালো আছি।আজ এত তাড়াতাড়ি আসলে যে?তোমার না কোচিং আছে?”
“বাড়িতেই পড়ি।”
তারপর রুহা এগিয়ে এলো তার নিকট।রাইমা শুকনো মুখে রুহার দিকে তাকিয়ে আবার রান্নাঘরে ছুটলো।নাসরিন বেগম রান্না ঘরে ইলমা বেগমের হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছেন।রুহা ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে বাশারের খাওয়া দাওয়া শেষ।ঘরে গেছে তারা।আপাতত বাশারকে নিয়ে রাইমা উপরে তার আগের ঘরে নিয়ে এসেছে।রাইমা,বাশার আর বাহার বাবু ছাড়া কেও নেই সেখানে।রুহা করিডোর পেরিয়ে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিল।বাশারের কণ্ঠস্বর শুনে পা থমকে গেলো তার।বাশার হঠাৎ দাঁত চেপে রাইমাকে বলল,
“অনেকদিন তো বাপের বাড়ি ঘুরলি,এবার নাহয় বাড়ি ফিরে চল?”
রাইমা নিচু স্বরে বলল,
“এই বাড়িতে কোনো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করবেন না।”
“কু’ওার বাচ্চা নাটক করস তুই আমার লগে?আমারে না বলে আসছিস কেন এই বাড়ি?তোর বুকের পাঁঠা কত বড়ো তুই আমার অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখছিস?”
“দিনের পর দিন তো আপনার বান্দিগিরি’ই করে আসলাম।প্রত্যেকদিন এই নির্যাতন আর নিতে পারছিলাম না আমি।আপনি মানুষের কাতারে পড়েন?কাপুরুষের মতো যে বউয়ের গায়ে হাত তুল..”
বাশার হঠাৎ ঠাস করে রাইমার গালে স-জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।রুহা দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।বাহার বাবু বুঝেনি বাবা মায়ের মধ্যে কী হচ্ছে।সে খেলনা দিয়ে খেলছে নিজের মতো।রাইমার গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।বাশার রাইমার চোয়াল চেপে ধরে বলল,
“শরীরে এত তেঁজ আসে কই থেকে হ্যা?তেল বাড়ছে তোর শরীরে?জানো’য়ারের বাচ্চা কার সামনে গলা তুলে কথা বলিস তুই?”
রুহা বোনের এই দশা দেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল।বাশার রাইমার গাল ছেড়ে দিয়ে হতভম্ব হয়ে কিছু বলার আগে রুহা বলল,
“জানো’য়ারের বাচ্চা কাকে বলছেন দুলাভাই?এখানে আদৌ জানো’য়ারটা কে?বাচ্চার সামনে বউয়ের গায়ে হাত তুলে নিজেকে মহাপুরুষ ভাবছেন?”
#চলবে..?