তুরাগের শ্যামলা ঢেউ পর্ব-০১

0
13

#সূচনা_পর্ব
#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#Jhorna_Islam

বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরে প্রিন্সিপাল স্যারের ক্যাপ চু*রি করেছিলাম। আজকে গার্জিয়ান মিটিংয়ে আব্বু ওই ক্যাপ পরে আসছে। ভয়ে আমার অন্তর আন্তা কাঁপছে। বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। মনে হচ্ছে হার্টটা এক্ষুনি বের হয়ে আসতে চাইছে। আমাকে চিল্লিয়ে বলছে এবার অন্তত তোর ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে দে ঢেউ অনেক হয়েছে আর না তোর এই দস্যিপণার জন্য আমি আর এতো জোরে জোরে লাফাতে পারবো না।

অনেক স্যাররাই ইতিমধ্যে মিটিং রুমে ঢুকে পরেছে। ঢেউ পারছে না তার বাবাকে কিছু বলতে আর না পারছে ডাক দিতে। প্রিন্সিপাল স্যার একটু পর এসেই মিটিং রুমে প্রবেশ করবে এসে যদি দেখতে পায় উনার ক্যাপ ঢেউয়ের বাবার মাথায় তাহলে কি কান্ড ঘটবে। ক্যাপ চিনতে বেশি টাইম লাগবে না কারণ ক্যাপের সামনে একটা লঘু আছে। এই ক্যাপ নিয়ে সে কি হুলুস্থুল কান্ড ঘটেছিল কলেজে।ক্যাপটা স্যারের অনেক পছন্দের। ঢেউ যেদিন ক্যাপ চুরি করেছিলো সেদিন পুরো কলেজে তোলপাড় হয়ে গেছিল ক্যাপ খুঁজতে কিন্তু পাওয়া যায়নি। পাবে কি করে হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে পাওয়া সহজ কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছে করে লুকিয়ে রাখে তাহলে সেই জিনিস খুঁজে পাওয়া বড্ড কঠিন কাজ।ঢেউ মোটেও ভাবেনি এই একটা সামান্য ক্যাপ নিয়ে এতো বড় ঘটনা ঘটে যাবে। ভেবেছিলো পরের দিন ফেরত দিয়ে দিবে কোনো একটা কিছু বলে কিন্তু পরিস্থিতি দেখে একদম চুপ হয়ে যায়।
বান্ধবীদের খপ্পরে পরে এমন দূর্ভোগ পোহাতে হবে ঢেউ তা কল্পনাতেও আনেনি।

আজকে সেকেন্ড ইয়ারের সকল স্টুডেন্টদের গার্জিয়ানকে ডাকা হয়েছে কয়দিন পর তাদের টেস্ট এক্সাম এই নিয়ে আলোচনা হবে আর ফাইনাল এক্সামের ও বেশি দিন বাকি নেই।

রীতিমতো সকলের গার্জিয়ানই উপস্থিত হয়েছে মিটিং রুমে বসে আছে। সেখানে ঢেউয়ের বাবা ও উপস্থিত হয়েছে। ঢেউ ক্লাস রুমে হাই বেঞ্চের উপর বসে বসে তখন পা দুলিয়ে আড্ডা দিচ্ছে আর বাদাম খাচ্ছে। হাই বেঞ্চের উপর বসার দুঃসাহসিকতা আজ দেখিয়েছে কারণ এদিকটায় এখন আর কেউ আসবে না টিফিন টাইম চলছে আর সব টিচাররা ও আজ মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। তাই ঢেউ মনের আনন্দে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।

ঢেউ তার বাবাকে বাড়িতে বলে এসেছিলো যথা সময়ে যেনো কলেজে পৌঁছে যায়। তার বাবা জানায় পৌঁছে যাবে। কলেজ এসে আর দেখা হয়নি বাবার সাথে তাই জানেও না কি ভয়ানক কান্ড ঘটে গেছে।
এমন ভয়াবহ খবর নিয়ে হাজির হয়েছে ঢেউয়ের বান্ধবী ইমা। ক্লাসরুমে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,, “দোস্ত তুই এখানে বসে চিল করছিস? অন্য দিকে গিয়ে দেখ কি কান্ড ঘটেছে তোর চিল এখনই কা’উয়া হয়ে আকাশে কা কা করে উড়ে চলে যাবে।”

ঢেউ ব্রু কুঁচকে ইমার দিকে তাকিয়ে থাকে কি বলছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।

নিশি জিজ্ঞেস করে কেন রে কি হয়েছে?

আমাদের ঢেউয়ের আজ খবর আছে। (ইমা)

ঢেউ লাফ দিয়ে হাই বেঞ্চের থেকে নেমে পরে। স্যাররা দেখে ফেলেছে নাকি সে যে হাই বেঞ্চের উপর বসেছে?এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে স্যার আছে নাকি কোথাও।

আরে এদিক ওদিক কি দেখছিস? বাঁচতে চাইলে তারাতাড়ি মিটিং রুমে যা। আর হয়তো কিছু সময় বাকি আছে তারপরই বো’ম ব্লা’স্ট হবে। (ইমা)

ঢেউ এবার কোমরে হাত রেখে বলে,, “যা বলবি সোজাসাপ্টা বল। কি বলছিস আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। ”

“হ্যা তাইতো ইমা কি বলছিস কিছুই বুঝতে পারছি না।” ( নিশি)

“তোর বাপ আসছে ঢেউ। “(ইমা)

” তো বাপকে ডেকেছে আসবেনা? শুধু আমার বাপ কেন সবার বাপই এসেছে। তোর বাপও এসেছে। আমি ভাবলাম কি না কি হয়ে গেছে যা সর সামনে থেকে। কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে ঢেউ। ”

“আরে বাপ আমার পুরো কথা শুন আগে।” (ইমা)

ঢেউ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,,, আচ্ছা ঠিক আছে বল শুনি।

তোর বাপ তোর চুরি করা প্রিন্সিপাল স্যারের ক্যাপ পরে এসেছে। একটু পরেই মুখোমুখি হবে দুইজন। কি তান্ডব চলবে ভাবতে পারছিস?(ইমা)

ইমার কথায় মুহূর্তের মধ্যে বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটে।
ঢেউ কিহহহ বলে জোরে চিল্লিয়ে উঠে।

” হ্যা দোস্ত যা করার তারাতাড়ি কর নয়তো তু তো গায়া।”(ইমা)

ঢেউ আর এক সেকেন্ড দেড়ি করেনি এক দৌড়ে মিটিং রুমের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। রুমের সামনে দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। ঢেউ ঢুকতে চাইলে ঢুকতে দেয় না কারণ পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্যাররা এসে উপস্থিত হবে। ঢেউ অনেক অনুরোধ করে কাজ হয় না। শেষে না পেরে জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দেয় যদি বাবা কাছাকাছি বসে। সময় যখন খারাপ যায় সকল দিক দিয়েই খারাপ যায়। এমন জায়গায় গিয়ে বসেছে না ঢেউ আস্তে করে ডাক দিলে শুনতে পারবে আর না ইশারায় ডাকতে পারবে।

দারোয়ান কে গিয়ে আবারও অনুরোধ করতে থাকে হয় ঢেউ কে ঢুকতে দিতে নয়তো তার বাবাকে ডেকে দিতে অনেক জরুরি। কয়েকবার কাকুতিমিনতি করার পর দারোয়ানের মন কিছুটা নরম হয়। ঢেউকে ভিতরে ঢুকতে দিবেন না উনি ডেকে এনে দিচ্ছে জানালেন। ঢেউ যেনো কিছুটা আশার আলো দেখতে পেলো। কিন্তু সেই আশার আলোয় হুট করে আচমকা দমকা হাওয়া লেগে টুকুস করে নিভে যায়। সকল স্যাররা এসে পরেছে একে একে সকলে প্রবেশ করে রুমে।

ঢেউ সরে গিয়ে আড়ালে কপাল চা’পড়াতে থাকে। এই ক্যাপ তার বাবা কোথায় পেলো এটাতো সে তার আলমারির উপরে রেখেছিলো। হায়রে বাবা মনে হয় ওখান থেকেই নিয়েছে। নিয়েছে ভালো কথা তাই বলে এটা কলেজে পরে আসবে?

সব দোষ তোর ঢেউ তুই কেনো ক্যাপটা লুকিয়ে রাখলিনা? আর সবচেয়ে বড় দোষ কেনো গেলি চুরি করতে? বেশ হয়েছে এবার বাঁশ খা। চোর অপবাদ মাথায় নিয়ে কলেজ থেকে বিতারিত হো। তোর আর পড়াশোনা করা লাগবে না মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে থালাবাটি মাজবি। এই কাজ ও পাবি না কারণ চোর কে কাজে কে রাখবে? ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
হাজার জল্পনা কল্পনা করে নিজেকে নিজেই গা’লি দিচ্ছে ঢেউ।

ঢেউ মন খারাপ করে চলে আসতে নেয়। অপমানিত হওয়ার আগেই সে কলেজ থেকে চলে যাবে। মিটিং অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। আসার সময় ঢেউ কি মনে করে মিটিং রুমের দিকে একবার তাকায় দেখতে পায় তার বাবা আরেকজনের সাথে খোশগল্পে মজেছে। উফফ বাবাটা যদি একবার এদিকে তাকাতো।
এরমধ্যে পিছন থেকে কেউ ডাক দেয় ঢেউয়ের বাবাকে উনি পিছনে ফিরতে গিয়ে আরেকজনের হাত লেগে ক্যাপটা নিচে পরে যায়।

ক্যাপটা নিচে পরে যেতে দেখে ঢেউ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। মনে মনে দোয়া করতে থাকে আর যেনো সেটা না তুলতে পারে।
ঢেউয়ের বাবা অনেক চেষ্টা করতে থাকে সেটা তুলতে কিন্তু পারছে না।
এরমধ্যে সকলের এটেনশন চেয়ে মিটিং ও শুরু হয়ে গেছে। তাই উনি ক্যাপ তোলা বাদ দিয়ে মিটিংয়ে মনোযোগ দেয়।
ঢেউ অনেক খুশি হয়ে যায় খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। উফফ কি বাঁচা যে বাঁচলো। বাঘের মুখ থেকে ফিরে এসেছে মনে হচ্ছে।

ঢেউ এখন এখান থেকে চলে যেতে নিবে এরমধ্যে প্রিন্সিপাল স্যার মিটিং রুম থেকে বের হয়ে আসে। হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কল এসেছে কার সাথে যেনো রাগী গলায় কথা বলছে। ঢেউ স্যারের সামনে পরতে চায় না তাই তারাতাড়ি পাশে থাকা একটা পিলারের পিছনে লুকিয়ে পরে।
পিলারের একপাশে প্রিন্সিপাল স্যার আরেক পাশে ঢেউ।

“তোমাকে আর একদিন সময় দিলাম আমার ক্যাপ খুঁজে বের করার।”(প্রিন্সিপাল স্যার।)

ঢেউ এটা শুনে চোখ বড় করে ফেলে। হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। আগে যদি জানতো তাহলে এক সপ্তাহ না খেলেও এমন কাজ করতো না।
ফোনের সাউন্ড কিছুটা লাউডে দেওয়া তাই ঢেউ সবই শুনতে পায়।

” তোমাকে আর কতোবার বললে বিলিভ করবে আমি তোমার ক্যাপ নেই নি। ইনফেক্ট আমি জানিও না ক্যাপের ব্যাপারে। কলেজে গিয়ে হারিয়ে আমাকে দোষ দিচ্ছো কেন?”(গুরুগম্ভীর কণ্ঠে অপর পাশের ব্যক্তি বলে)

“আমি কিছু শুনতে চাই না। ”

“না শুনতে চাইলে ফোন রাখো আমার অনেক কাজ আছে। আর এই ক্যাপের টপিক বাদ দাও। দরকার পরলে তোমাকে ওরকম আরো দশটা কিনে দিবো।”

” আমার ঐটাই চাই।”

“ওটা নাই । সহজ বিষয় টা বুঝতে পারছো না? ”

“না দরকার পরলে তোমার ডিটেক্টিভ বন্ধুকে বলো খুঁজে বের করতে। নয়তো আমি ধরে নিবো ওটা তুমি নিয়ে হারিয়েছো।”

“আমি তোমার ক্যাপ নেইনি বাবা তোমাকে এক কথা কতোবার বলবো? জোরে চিল্লিয়ে।
লোকটার চিল্লানিতে ঢেউ ভয় পেয়ে যায়।
স্যার কি সুন্দর কল কেটে চলে গেলো।

ঢেউ সেখানেই তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারমানে স্যার উনার ছেলেকে সন্দেহ করছে? আবার ডিটেক্টিভ দিয়ে খুঁজতে বলছে। এই ক্যাপে কি স্বর্ণ লাগানো আছে নাকি গুপ্তধন লুকানো আছে?

ডিটেক্টিভ তো সত্যি খুঁজে বের করে ফেলতে পারবে। হায় সর্বনাশ!
চলবে?,,,,

চলবে।