#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam
ঢেউয়ের বাবা এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন। বাড়িতে নিয়ে এসেছে সপ্তাহ খানেক আগে। এখন তিনি বাড়িতেই রেস্ট নিচ্ছেন ডাক্তার তাকে মাস দেড়েক রেস্টে থাকতে বলেছেন। নিজের কাজও তাই বন্ধ। তিনি কবেই চেয়েছিলেন কাজে জয়েন করতে কিন্তু মেয়ে আর বউয়ের জন্য পারছে না। মা মেয়ে মিলে একবারে নজর বন্দি করে রেখেছে যেনো। টাইম মতো খাওয়া, গোসল করা, ঘুমানো সবকিছু একটা নিয়মের মধ্যে আছে। দুইজনের যত্নে এখন তিনি আগের থেকেও নিজেকে সুস্থ মনে করছেন। নিজেকে কেমন চাঙ্গা লাগে। এরমধ্যে ঢেউয়ের কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার দুইবার এসে দেখা করে গেছে।
আজও স্যার এসেছে সাথে আরো দুইজন লোক।দরজা বন্ধ করে কি যেনো তারা আলাপ আলোচনা করছে। ঢেউ বুঝতে পারছে না ওরা কি এমন কথা বলছে। সে রান্না ঘরে মাকে সাহায্য করছে আর বারবার মাকে খোঁচাচ্ছে ওরা কি বলছে জানার জন্য। ঢেউয়ের মা খুব বিরক্ত হচ্ছে মেয়ের কর্মকান্ডে। এতো প্রশ্ন করতে পারে মেয়েটা। উনি নিজেও টেনশনে আছে কি করতে চাইছে লোকটা। ঢেউয়ের মা অবশ্য কিছুটা আবাশ করতে পারছে তবে এমন করে তিনি কিছু চাইছেন না।এদিকে নিজের স্বামীর মুখের উপর কিছু বলতে ও পারছেন না। নিজের স্বামীর উপর উনার শতভাগ বিশ্বাস আছে। আজ পর্যন্ত উনাদের খারাপ হবে এমন কোনো সিধান্ত তিনি নেননি। তবুও মনতো মানে না নিজের মনে হাজার খানেক সংশয় ভয় যেনো এসে একটু পর পর গ্রা’শ করে।
কলিংবেলের শব্দে ঢেউয়ের মায়ের ভাবনার অবশান ঘটে।
“ঢেউ গিয়ে দরজা খুল।”
“এখন আবার কে এলো মা?”
“দরজা খুল তারপর নিজেইতো দেখতে পাবি।”
“যাচ্ছি, আমি আর কিছু করতে পারবো না, আমি রুমে চলে যাবো। ”
“আগে গিয়ে দরজা খুল।”
“আচ্ছা। ” ঢেউ গিয়ে দরজা খুলে হা করে তাকিয়ে থাকে। এ কি দেখছে সে? সত্যি নাকি স্বপ্ন দেখছে? অসময়ে না বলে অনাকাংক্ষিত ব্যক্তিদের আগমন।
ঢেউ চোখ কচলাতে থাকে সে কি ভুল দেখছে?
“ভুল দেখছিস না কা’নি। যা দেখছিস ঠিকই দেখছিস।”
ঢেউয়ের মামি হাসতে হাসতে বলে। দরজার সামনে ঢেউয়ের মামা, মামি আর মামাতো বোন হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
“আমাদের কে কি ঢুকতে দিবি না নাকি?দরজার সামনে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস। ” (ঢেউয়ের মামাতো বোন সিন্থি)
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তোমরা এসেছো। এসো এসো ভিতরে এসো বলেই ঢেউ দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। ঢেউয়ের মামি ঢুকতে ঢুকতে বলে,, আমার মা কতো বড় হয়ে গেছে।
মামির কথায় ঢেউ হাসে। মামা মামি ভিতরে চলে যায়।
“আচ্ছা সিন্থি তুইকি সত্যি এসেছিস?”
“না মিথ্যে এসেছি। ”
“সন্দেহের গন্ধ পাচ্ছি আমি। তোকে কতো বলেও আনতে পারি না আজ নিজে নিজে এসেছিস। ঘোর সন্দেহ। ”
“ডিটেকটিভ হওয়ার নাটক করছিস? কিন্তু তুই ফেইল বুঝলি?”
“কেনো?”
“আসল কারণ তোর মোটা মাথায় এখনও ধরতে পারেনি।”
“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ”
” বুঝার লোক আসতেছে সে সব বুঝিয়ে দিবে আদর করে করে। ” চোখ মেরে কথাটা বলে সিন্থি।
” ধূর।”
” রুমে চল ভো’য়া ডিটেকটিভ। ” কথাটা বলে সিন্থি ঢেউয়ের রুমে চলে যায়। ”
সিন্থির ডিটেকটিভের কথায় মনে হলো আজ তুরাগের ফিরে আসার কথা। সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে। কতোদিন কথা হয় না লোকটার সাথে। মেসেজ অপশনে কতো শতো মেসেজ দিয়েছে ঢেউ বলার বাইরে। লোকটাকে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে সে মিস করেছে কিন্তু লোকটা কি তাকে করেছে? পা’ষণ্ড ডিটেকটিভ একটা। ঢেউ ঠিক বদলা তুলবে এতোদিন কষ্ট দেওয়ার জন্য শুধু সময়ের অপেক্ষা। ঢেউয়ের মনের কথা বলতে ও আর দেড়ি করবে না সব জানিয়ে দিবে। তুরাগ যদি রাজি থাকে তাহলে তুরাগের কথা বাড়িতেও বলে
দিবে আর লুকাবে না। তারপর যা হওয়ার হবে। তবে তুরাগ যে তার মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে সেটা ঢেউ প্রতিনিয়ত বুঝতে পারছে। বাড়িতে যদি মেনে না নেয় তাহলে সে কি করবে? নানা বাবা নিশ্চয়ই মানবে ঢেউ বুঝাবে। আগে তুরাগ আসুক।
“কিরে ভাবনা কুমারী তোর ভাবনার অবসান ঘটলে রুমে আয়।” (সিন্থি ঢেউয়ের রুম থেকে চিল্লিয়ে বলে।)
ঢেউ নিজের ভাবনা রেখে সিন্থির সাথে গল্প জুড়ে দেয়। একটু পর ঢেউ টের পেলো পুরো বাড়িতে বাহারি খাবারের গন্ধে মো মো করছে। নিশ্চয় মা আর মামি মিলে সুস্বাদু খাবার রান্না করছে।উফফফ ভাবতেই ঢেউয়ের জিহ্বায় পানি এসে যাচ্ছে। খিদে ও লেগে গেছে।
“সিন্থি তুই বস আমি বলি খাবার দিতে। ”
“তোর খিদে লেগেছে? ”
“কয়টা বাজে দেখেছিস? খিদে লাগার কথা না?”
“না মানে তোর গলা দিয়ে খাবার নামবে? ”
“খাবার নামবে না কেনো?”
“তুই কিছু বুঝতে পারছিস না?”
সিন্থির প্রশ্নে ঢেউ ব্রু কুঁচকায়। এরমধ্যে ঢেউয়ের মা আর মামি রুমে আসে। ঢেউ মা তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। ঢেউয়ের মামি বলে।
“যাচ্ছি মামি তারাতাড়ি খাবার দাও।খাবারের গন্ধে পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। ”
“আহারে মা আমার। ” আপা ওদের আগে খাইয়ে নিলে ভালো ছিলো না? ” ঢেউয়ের মামি ঢেউয়ের মাকে জিজ্ঞেস করে।
“তা ভালো ছিলো কিন্তু রান্না করতে লেইট হয়ে গেলো না। এখন তো অতিথিদের আগে খাবার দিতে হবে। ”
“তাও কথা। ”
ননদ ভাবির কথার মানে খুঁজে পেলো না ঢেউ। মেহমানের খাবার মেহমান খাবে আর আমাদের খাবার আমরা এতে সমস্যা কি মা? নাকি শুধু ওদের জন্য রান্না করছো? ওরা খেয়ে বেশি হলে তারপর আমারা খাবো?
ঢেউয়ের কথায় সিন্থি মুখ টিপে হাসে।
পাগল মেয়ে যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে তৈরি হো। হাসতে হাসতে বলে সিন্থির মা।।
“আমরা কি কোথাও যাচ্ছি নাকি?”
“হ্যা যাচ্ছিস তুই.।” (সিন্থি)
“কোথায়? ”
“ড্রয়িংরুমে খাবার পরিবেশন করতে। বলতে বলতে ড্রয়ার থেকে ঢেউয়ের জন্য সুন্দর একটা থ্রি পিছ বের করে দেন তার মা।”
“মানে কি মা? আমি এসব করতে পারবো না। তুমি জানো অপরিচিত লোকের কাছে যেতে আমার আনইজি লাগে। ”
“ওখানে তোর স্যার আছে। ”
“তবুও আমি পারবো না মা।”
ঢেউয়ের দিকে ঢেউয়ের মা রাগী চোখে তাকায়। সিন্থির মা বুঝতে পারে মেয়েটা এখন বকা খাবে তাই তিনি আদুরে স্বরে বলে,, যা মা কিছু হবে না তুই শুধু দাঁড়িয়ে থাকিস। আর আমরাতো আছি।
মামি আমাকেই কেনো যেতে হবে? তোমরাই দাও না।
তুমি কিন্তু বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো ঢেউ বড়দের কথা শুনতে হয়। ঢেউয়ের মায়ের কথায় সে অনেক কষ্ট পায়। ঠিক আছে যাচ্ছি ।অভিমানী কন্ঠে বলে ঢেউ।
সকলের দিকে একবার তাকিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায় ফ্রেশ হতে।
আপা তুমি শুধু শুধু মেয়েটাকে ধমকাও। ভালো করে বললেই হয়।
তোমার ননদের মেয়ে ভালো কথা শুনার মানুষ? এতক্ষন ভালো করে বলছিলে কাজ হয়েছে?
আচ্ছা বাদ দাও আপা।
ঢেউ ফ্রেশ হয়ে নতুন জামা পরে মা আর মামির সাথে খাবার পরিবেশন করতে যায়। খাবার টেবিলে ঢেউয়ের বাবা, মামা,প্রিন্সিপাল স্যার একজন বয়স্ক লোক আর একজন মামার বয়সী লোক বসে আছে। সব মা আর মামিই করছে ঢেউ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। তার মাথায় এটা ঢুকছে না দাঁড়িয়েই যদি থাকতে হবে তাহলে এখানে আনার কি দরকার ছিলো। শুধু শুধু এখানে দাঁড়িয়ে অন্যদের খাওয়া দেখাচ্ছে।
এরমধ্যে ঢেউয়ের মা যে সেই কখন থেকে চোখ দিয়ে ইশারা করছে পায়েস দেওয়ার জন্য সেদিকে তার খেয়াল নেই। এবার ঢেউয়ের মামি এগিয়ে এসে বলে,,,,ঢেউ উনার পাতে পায়েস দাও।
ঢেউ মাথা নাড়িয়ে বয়স্ক লোকের পাতে এক চামচ পায়েস দেয়। আরেক চামচ দিতে গেলেই কানে এসে ঝংকার তুলে অনাকাংক্ষিত বাক্য।
“এতটুকুই যথেষ্ট নাত বউ। এতো মিষ্টি সহ্য হবে না তোর মিষ্টি মুখ দেখেই পেট ভরে গেছে। আমি আবার ডায়াবেটিসের রোগী বুঝলি?”
“নাতবউ কথাটা ঢেউয়ের কানে বারংবার প্রতিদ্ধনিত হতে থাকে। পায়েসের চামচ টা হাত থেকে মেঝেতে পরে যায়। টুংটাং শব্দে ঝংকার তুলে। ”
#চলবে?,,,,