তুরাগের শ্যামলা ঢেউ পর্ব-১১

0
16

#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam

ঢেউ চোখের পলক ফেলতেও যেনো ভুলে গেছে। তারমানে তুরাগ যে ঐ দিন টি স্কয়ার বলে ডেকেছিল ঐটা ও তুরাগ। দুইজন তুরাগ বলে টি স্কয়ার ডাকে। দুইজন দুইজনকে চিনে। তারা খুব ভালো বন্ধু ও। ঢেউয়ের হাসবেন্ডই তাহলে ঐদিন তার পায়ে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছিলো।টি স্কয়ার লোকটা কে দেখতে চেয়েছিল ঢেউ ঐদিন। আর নিয়তি এখন এই লোককেই দেখাচ্ছে শুধু। কষ্ট কাকে বলে কতো প্রকার ও কি কি সঙ্গা সহ সব পাচ্ছে ঢেউ।একেইতো নিজের ভালোবাসার মানুষটার নামের সাথে জোর করে হওয়া জামাইর নাম মিলে যায় তারউপর আবার তারা বেস্ট ফ্রেন্ড।

তুরাগ এসে ঢেউয়ের মুখোমুখি বসে। ঢেউ মহা বিপদে পড়ে গেলো। জীবন তাকে নিয়ে কি নিষ্ঠুর খেলা খেলছে। চেয়েছিল তুরাগের সাথে নিরবে কথা বলতে এখন দেখি সব হাজির হয়ে গেছে। এদের সামনে ঢেউ কি করে কথা বলবে? ইমা থাকলে তাও মেনেজ করতো কিন্তু এই স্বামী নামক ব্যক্তির সামনে কি করবে ঢেউ?

কিরে টি স্কয়ার এতো লেইট হলো কেনো? তুরাগ জিজ্ঞেস করে।

“একটু কাজ ছিলো।”

” তা সেই কাজ বুঝি ভাবির সাথে দেখা করা? ওয়হয় ভাবিকেও নিয়ে আসতি সকলে মিলে আড্ডা হয়ে যেতো আর দেখা ও হয়ে যেতো।”

ঢেউয়ের ইচ্ছে করলো তুরাগের চুল টেনে বলতে,, আরে বলদ তোর ভাবি তোর প্রেমিকা।আমিও এসেছি এখানে জন্মের আড্ডা দে। কি করতে এসেছে আর কি করছে। চোখ মুখ কুঁচকে নেয় ঢেউ। এরমধ্যে চোখ যায় ঢেউয়ের স্বামী মহাশয়ের দিকে তিনি এখন ঢেউয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে।
ঢেউ শুকনো ঢুক গিলে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

কি বলছেন তুরাগ? আপনি জানেন না ঢেউইতো জিজুর ব,,,,,

আরে ইমা তুমিও এখানে? কি ব্যাপার কেমন আছো? টি স্কয়ার ইমা কে পুরো কথা না বলতে দিয়ে বলে,,,”আরে ইমা কি অবস্থা কেমন আছো?

“এইতো ভাইয়া আমি ভালো আছি আপনি?” হাসি মুখে বলে ইমা।

“ভালো থাকতে তো চাই কিন্তু কারো কারো আবার আমার ভালো সহ্য হয় না। ”

ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে। ঢেউ চুপচাপ বসে থাকে কিছু বলে না। সেতো মনে মনে দোয়া দুরুদ পরছে যেনো তুরাগ ঢেউয়ের বলার আগে অন্য কারো মুখে জানতে না পারে বিয়ের কথা।
ওদের কথোপকথন দেখে তুরাগ অবাক চোখ বলে,,,,টি স্কয়ার এন্ড ইমা তোমরা কি দুইজন দুইজনকে চিনো?

“তুই চিনতে পারলে আমার কি চিনার কথা না?”

তুরাগ হাসি হাসি মুখ করে বলে,,, তা হয়তো ঠিক কিন্তু আমার সাথে তোর বিষয়টা আলাদা।

যেমন?

ও কিছু না বলে কথা ঘুরিয়ে নেয় তুরাগ। ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,, ঢেউ তুমি না গুরুত্বপূর্ণ কি বলবে নাকি?

ঢেউ কিছুটা নীরব থাকে। তার মুখে কোনো ভাষা নেই। মিনিট পাঁচেক পর কিছু একটা ভেবে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ৷।
“আমার গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে এক্ষুনি আমাকে যেতে হবে। ”

“মানে?” ইমা জিজ্ঞেস করে।

“তোকে পরে বলবো এখন আমি আসি।”

“কিন্তু তুই যে বললি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবি তুরাগের সাথে। এর সাথে নাকি কারো জীবন মরণের ব্যাপার জড়িয়ে আছে । ”

“ঢেউ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,,, ইমা আমি গেলাম।

” আরে ঢেউ শুনতো,,, একা কেন যাচ্ছিস? ভাইয়া,,ইমা আর কিছু বলার আগে ঢেউ চোখের আড়াল হয়ে যায়। ঢেউ এতো দ্রুতই যাচ্ছে যে মনে হচ্ছে কয়েক মিনিট দেড়ি হলে ট্রেন মিস করবে সে।

তুরাগ ইমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,, ইমা আমিতে কিছু বুঝতে পারছি না।

ইমা ঠোঁট উল্টে বলে আমিও।

তুরাগ আমিও আসছি। আমার একটা কাজ পরে গেছে।

টি স্কয়ার তুইও? যা যা আমি আর ইমাই গল্প করি। কি ইমা নাকি তুমিও চলে যাবে?

এমা না না আমারতো আপনার জন্য অফুরন্ত সময়।
ইমার কথায় দুইজনই ব্রু কুঁচকে তাকায়। ইমা হাসার চেষ্টা করে বলে,,, না ইয়ে মানে আমার হাতে অফুরন্ত সময় আছে।

ঢেউ রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু একটা রিকশা ও পাচ্ছে না। খুব রাগ হচ্ছে এখনও দরকারের সময় কিছুই পাওয়া যায় না। এমনিতে দেখা যাবে খালি রিকশার অভাব নেই অথচ এখন দরকার এখন একটাও নেই।
অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পর একটা রিকশা পায় ঢেউ। কিন্তু লোকটা আকাশ ছোঁয়া ভাড়া চেয়ে বসে আছে। একটা টাকাও কম নিবে না। লোকটার কথা গেলে যাবেন না গেলে নাই কিন্তু এক টাকা ও কম হবে না ম্যাডাম। গেলে চলেন এই অসময়ে আর রিকশা পাবেন ও না।
ঢেউয়ের খুব বিরক্ত লাগছে সবকিছু। অন্য সময় হলে হয়তো লোকটার সাথে তর্ক শুরু করতো কিন্তু এখন ইচ্ছে শক্তি কোনোটাই তার নেই। চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে গিয়ে বসে পরে রিকশায়।
রিকশা চালানো শুরু হতেই কেউ একজন প্রায় হুড়মুড় করে রিকশায় উঠে বসে। ঢেউ ভয়ে আহ্ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।

“আস্তে রাস্তাঘাটে এরকম অশ্লীল শব্দ করার মতো কিছুই করিনি।” গম্ভীর কন্ঠে বলে তুরাগ।

ছিহ্ বলে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে ঢেউ।
ঢেউয়ের মুখ ভঙ্গি দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে তুরাগ।
কেন জানি মেয়েটাকে তার রাগাতে খুব ভালো লাগে। তাই ইচ্ছে করে ওরকম কথা বলেছে।
হুট করেই মুখ ভঙ্গি কঠিন করে রিকশাওয়ালা মামা কে বলে,,,

“মামা রাস্তা বদলান।”

“কই যাইবেন মামা?” রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করে।

“উত্তরা।”

তুরাগের কথায় চমকে উঠে ঢেউ। উত্তরাতো উনাদের বাড়ি।
তোতলাতে তোতলাতে বলে,,, উ-উ-উত্তরা ম-মানে?
কি-কি বলছেন?

যা শুনেছেন তাই বলছি। আর বিয়ের আগেতো আপনার বাবা বলেনি যে আপনার প্রবলেম আছে।

কি বলছে লোকটা আগামাথা কিছুই বুঝছে না ঢেউ,, ক-কিসের প-প্রবলেম? জানতে চায়।

“এই যে আপনি একটা তো’তলা।”

“ম-মোটেও না।”

ঢেউয়ের কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠে তুরাগ।
“আবার বলেন কিছু ”

এক,,, বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায় ঢেউ কিছু বলবে না সে।খুব ভয় পেলে বা শ’ক পেলে কথা তু’তলিয়ে যায় তার তাও সব সময় না। তাই বলে লোকটা এমন ভাবে বলবে। ঠোঁট কা’টা লোক।

তুরাগ ঠিকানা বলে দিয়ে রিকশাওয়ালা মামা কে বলে ঐ ঠিকানায় যেতে।

“একদম না মামা আমি যেখানে বলেছি সেখানে যাবেন। আর আপনাকে আমি ডেকে প্রথম উঠেছি।আপনার প্রথম যাত্রী আমি তাই আমি যেখানে বলবো সেখানে যাবেন। অন্য কোনো লোকের কথায় আপনি যেতে পারবেন না।”

“মামা আপনি মেয়ে মানুষের কথা একদম শুনবেন না।”

দুইজনের কথায় রিকশাওয়ালা মামা রিকশা থামায়।
আমনেরা কই যাইবেন হেইডা আগে ঠিক করেন।

ঢেউ ব্রু কুঁচকে বলে,, আপনাকে তো বললাম কোথায় যাবো।

একদম না আপনি আমার বলা ঠিকানায় যান আমি আপনাকে ডাবল ভাড়া দিবো।

তুরাগের কথায় ঢেউয়ের খুব রাগ উঠে। রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করে মামা মেডাম আমনের কি হয়?

আপনার মামি হয় মামা দাঁত বের করে হেসে বলে তুরাগ। তুরাগের কথায় রিকশাওয়ালা মামা ও হাসি দিয়ে চলতে শুরু করে।

এই মামা আপনি উনার বলা ঠিকানায় কেনো যাচ্ছেন?

আমনেরা কাইজ্জা লাগছেন না? এর লাইগা গোশ্শা করে চইলা যাইতাছেন বাপের বাড়ি? দূরে গিয়া মান করার চাইতে বাড়িতে যান মামায় মান ভাঙাইবোনে।

আপনি বেশি কথা বলেন আর সাথে বেশি ও বুঝেন। রিকশা থামান আমি যাবো না আপনার রিকশাতে।আপনার মামাকেই নিয়ে যান। রিকশা থামান নয়তো আমি কিন্তু ঝাপ দিবো।

রিকশা থামান মামা। তুরাগ বলায় রিকশা থামায়।
রিকশা থামাতেই ঢেউ নেমে গিয়ে হাঁটা শুরু করে। তুরাগ ও নেমে ভাড়া মিটিয়ে ঢেউয়ের সাথে হাঁটা ধরে।

তুরাগ ডাকতে থাকে ঢেউ কে ঢেউ সাড়া দেয় না পিছনে ফিরে তাকায়ও না। এদিকটা শুনশান লোকের সমাগম ও কম।

ঢেউ আজ ঠিক করে নিয়েছে যেদিকে দুই চোখ যায় চলে যাবে। কাউকে লাগবে না তার একাই থাকবে। কোনো তুরাগকেই তার দরকার নাই।

ঢেউ আপনাকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছেন না? ঢেউ?

এই তুরাগের শ্যামলা ঢেউ।

ঢেউ থমকে দাঁড়ায়। এই নামে তো তার তুরাগ ডাকতো তাকে এই লোক কি করে জানলো?
ঢেউ পিছনে ঘুরে তাকিয়ে রয়।

#চলবে?,,,