তুরাগের শ্যামলা ঢেউ পর্ব-১৩

0
16

#তুরাগের_শ্যামলা_ঢেউ
#পর্বঃ১৩
#Jhorna_Islam

তুরাগ গলা খেঁকারি দিয়ে ঢেউয়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। ঢেউয়ের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে একই ভাবে বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তুরাগ কিছু সময় নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঢেউয়ের পাশে।

“এভাবে শূন্য দৃষ্টিতে কারা তাকিয়ে থাকে জানেন?” তুরাগ ঢেউকে প্রশ্ন করে।

“কারা?” ঢেউ ঐদিকে তাকিয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করে।

“যাদের কেউ নেই আর যাদের মনে সীমাহীন কষ্ট। ”

তুরাগের কথা শুনে ঢেউ নিঃশব্দে হাসে কোনো প্রতিউত্তর করে না।

“আপনারতো সবাই আছে তাহলে প্রথমটা বাদ। আর বাকি রইলো দ্বিতীয়টা। কিসের এতো কষ্ট আপনার মনে ঢেউ? এই বয়সে এতো কষ্ট কেনো দিচ্ছেন নিজেকে? এখন আপনার হেসে খেলে বেড়ানোর সময়। লাইফ কে ইনজয় করবেন তানা করে সারাক্ষণ কেনো এভাবে থাকেন?,”

“একটা উড়ন্ত পাখিকে হুট করে পায়ে শিকল পরিয়ে দেওয়াকে কি করে দেখেন আপনি তুরাগ? ”

“আকাশে উড়া পাখিকে কখনো খাঁচায় বন্দী করতে নেই। ”

তুরাগের কথায় ঢেউ শব্দ করে হেসে উঠে। তুরাগ সেই হাসি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনে। হাসিতে লুকিয়ে আছে কতো কষ্ট না বলা কথা। এই হাসিতে কোনো প্রাণ নেই আছে শুধু বিষাদ আর না পাওয়া আক্ষেপ।

“চুপ করুন ঢেউ এভাবে হাসবেন না আপনি। ”

হাসতে হাসতে ঢেউয়ের চোখের কোণে পানি জমা হয়। ঢেউ আঙুল দিয়ে পানি ধরে মনে মনে ভাবে আশ্চর্য চোখের পানি শেষ হয় না কেনো। আর কতো কান্না করলে শেষ হবে চোখের পানি।

ঢেউয়ের ভাবনার মাঝেই হাতে একটা শীতল অনুভূতি হয়। তুরাগ ঢেউয়ের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,,,, আপনার মনে কিসের এতো কষ্ট ঢেউ? আপনিতো এমন ছিলেন না। আমি আপনাকে আগের মতো খুঁজে পাচ্ছি না। আমি যাকে দেখে নিজের করেছি তাকে এখন কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। এরকমতো হওয়ার কথা ছিলো না ঢেউ। আপনার কি আগের কথা কিছু মনে নেই নাকি সবই মিথ্যা ছিলো। আমিকি তাহলে ভুল করলাম?
আপনি আমাকে বলেন ঢেউ আপনার মনে কিসের কষ্ট। আমি সব শুনতে চাই। প্লিজ বলেন আমাকে। এসব আর ভালো লাগছে না আমার। একটা সুস্থ সম্পর্ক চাই। আপনি ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছেন আমি তা বুঝতে পারছি। আপনার এই শেষ হয়ে যাওয়া আমাকে বড্ড পীড়া দিচ্ছে ঢেউ।
প্লিজ বলেন আমাকে।

ঢেউ তুরাগের সম্পূর্ণ কথা মাথায় নেয়নি। তুরাগের প্রথম দিকের কথা গুলো কিছু বুঝতে পারেনি। কি বলছে লোকটা সব তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। কিন্তু তুরাগকে ঐসবের মানেও জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না। আজ মন চাইছে সব বলে দিতে। লোকটার ও জানা দরকার সব। এসব মনে রেখে লোকটাকেও ঠকানো হচ্ছে। ঢেউ বুঝতে পারছে তুরাগ লোকটা ততোটাও খারাপ না যতোটা সে ভেবেছে। হতে পারে লোকটা ও পরিস্থিতির স্বীকার। আর ঢেউতো লোকটা কে বিয়ের আগে কিছু বলেনি।বললে হয়তো বিয়েটা আর হতো না আর না তাকে এতো কষ্ট পেতে হতো।

“আমার কথা শুনতে চান আপনি তুরাগ? ”

“হ্যা ঢেউ বলুন আপনি আমি সব শুনবো।”

“আমার কষ্টের একমাত্র কারণ আপনি। ”

“আমি?”

“হ্যা আপনি তুরাগ,আপনি কারণ। ”

“বুঝলাম না ঢেউ। ”

” সবই বুঝে ও অবুঝ হওয়ার অভিনয়।”

” আপনার কেনো মনে হচ্ছে আমি অভিনয় করছি?”

“একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিলেন অথচ সে কি চায় বিয়েতে রাজি নাকি তা জানার প্রয়োজন মনে করলেন না আপনি? একজন শিক্ষিত লোক হয়ে কি করে করলেন এটা আপনি? ”

“আ-আপনি বিয়েতে রাজি ছিলেন না? ” ঢেউয়ের কথায় তুরাগের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরে।

“না আমি রাজি ছিলাম না। আমাকে জোর করে আপনার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ”

“ঢেউ আর ইউ সিরিয়াস? ”

” আমি কি মজা করার পরিস্থিতিতে আছি বলে মনে হয় আপনার তুরাগ? ”

ঢেউয়ের কথায় তুরাগ চুপ হয়ে যায়। আর একটা কথাও বলে না। কি বলবে সে নিজের ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। ঢেউ তাকে বিয়ে করতে চায়নি এটাতেই সে জীবনের সবচেয়ে বড় ঝটকা খেয়ে বসে আছে। কিন্তু তুরাগ জানে না ঢেউয়ের এরপরের কথায় সে আরো বড় ঝটকা খেতে চলেছে। ঢেউয়ের মুখের বাক্য তার অন্তরে দহন সৃষ্টি করতে চলেছে। ঢেউ নামক রমনী তার মনের গহীনে ভালোবাসা দিয়ে তৈরি বাসা এক নিমিষেই ছিন্নবিন্ন করে দিয়েছে।

“আমি একজনকে ভালোবাসি তুরাগ। সেও হয়তো আমাকে ভালোবাসে। তবে আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ হওয়ার আগেই বিয়ে নামক ঝড় এসে সব ল’ন্ডভ’ন্ড করে দেয়। আমি আমার জীবনে চরম ভাবে হেরে গেছি।

তুরাগ বলে,, আপনি হেরে যাননি ঢেউ আসল জায়গায় আমি হেরে গেছি। আমার জন্য আপনার জীবনে এতো কষ্ট সমস্যা। আপনার কষ্টের জন্য যখন আমি দায়ী তখন আমিই সবকিছুর সমাধান করবো।আপনাকে আর এই মিথ্যা বাঁধনে বেঁধে রাখবো না। আপনি উড়বেন ঢেউ আবার মুক্ত পাখির মতো উড়বেন। আমি আপনার পায়ে পড়ানো শিকল খুলে দিবো। আপনি সুখে থাকবেন। আর কোনো কষ্ট আপনাকে ছুঁতে পারবে না। আপনার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সারাজীবন ভালো থাকবেন। আপনি চিন্তা করবেন না খুব শিঘ্রই আপনার মুক্তির ব্যবস্থা করছি আমি। শেষের কথাটা বলতে কেমন তুরাগের গলাটা ধরে যায়। ঢেউকে কথা গুলো বলে তুরাগ রুমে চলে যায়।

মিনিট দশেক পরে ঢেউ নিজেকে সামলে রুমে আসে। তুরাগকে রুমে এসে পায় না। ভাবে ওয়াশরুমে কিন্তু ওখানেও পায় না। কেন যেনো ঢেউয়ের মনে একটা শূক্ষ ব্যাথা অনুভূত হয়।ঢেউ গিয়ে পুরো বাড়ি খুঁজেও পায় না। তুরাগ চলে গেছে। ঢেউয়ের খারাপ লাগতে থাকে এভাবে বলায়।লোকটা হয়তো কিছু জানে না।হয়তো নিজেও পরিস্থিতির স্বীকার। উফফ মাথা এতো যন্ত্রণা করছে ঢেউয়ের আর এসব নিতে পারছে না সে। চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে।

আজ আর ঘুম আসবে না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে থাকে মাইন্ড রিফ্রেশের জন্য। এতো সহজে কি কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? নিউজফিডে যেতেই দেখতে পায় তুরাগের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস তাও আবার ইমাকে নিয়ে। কমেন্ট বক্সে কংগ্রেস এর বন্যা। তুরাগ আবার সকলকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। কিন্তু এটাতো তুরাগের আইডি না।এটার সাথে ঢেউ এড নেই। তারমানে তুরাগের আরেক আইডি আছে। একটা দিয়ে ঢেউয়ের সাথে আর আরেকটা দিয়ে ইমার সাথে এসব করেছে। ঢেউ বুঝতে পারে এটাই তুরাগের আসল আইডি।এই আইডিতে ছবি দেওয়া আছে আর ইনফরমেশনেও ডিটেকটিভ লিখা।ঢেউ মোবাইল ছুঁড়ে দূরে ফেলে দেয়। আর কান্না আসছে না তার।চুপচাপ উপরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।। জীবন নিয়ে আর কোনো আফসোস নেই। জীবন তাকে সব দিয়েছে। কষ্টের সাথে তার সন্ধি হয়েছে। কোন সময় সকাল হয়ে গেছে ঢেউ জানে না। ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙে ঢেউয়ের। কয়েকবার বাজার পরেও ফোন রিসিভ করে না ঐভাবেই শুয়ে থাকে। কিন্তু ফোন নাছোড়বান্দা বেজেই চলেছে। বিরক্ত হয়ে ঢেউ উঠে বসে।

ফোনটা গিয়ে হাতে নিয়ে দেখে ইমা কল দিয়েছে মুহূর্তে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কল কেটে চুপ করে বসে থাকে। ইমা আবার কল দেয় ঢেউ আবারও কেটে দেয়। একটু পর ফোনের নোটিফিকেশন আসে ইমাদের পোষ্টে তুরাগ কমেন্ট করেছে। ঢেউ আশ্চর্য হয় ঢেউয়ের ফোনে কেনো এরকম নোটিফিকেশন এসেছে।। কৌতুহলি হয়ে ঢেউ চেক করে দেখে তুরাগ কমেন্ট করেছে কংগ্রেস ব্রো। আশ্চর্য নিজের এক আইডি দিয়ে আরেক আইডিতে কি করে কংগ্রেস জানায় আবার এই আইডি দিয়ে থ্যাংকস টি স্কয়ার লিখেছে। ঢেউয়ের কেমন তালগোল পাকিয়ে গেছে। তুরাগ টি স্কয়ার কেনো লিখেছে? ঢেউয়ের সাথে কথা বলা আইডিতো তুরাগেরই। মাথা হ্যাং হয়ে গেছে কিছু ঢুকছে না। ঢেউ দুই আইডি চেক করতে থাকে আর হিসাব মিলাতে থাকে। এই দুই তুরাগ তাকে পাগল করে দিচ্ছে। দুনিয়ায় কি আর নামের অভাব ছিলো। একই নাম ঠিক আছে তাই বলে দুইটারই ঢেউয়ের সাথে দেখা হতে হবে?

#চলবে,,,,?