#তুই_যখন_ছুঁয়ে_দিলি_মন
কলমে #নিতু_সরকার
পর্ব:৭
ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে আটটা বাজতেই বাড়ি ফিরলেন তপন বাবু। রিদিমা বাবার আওয়াজ পেতেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাইরে বেরিয়ে এলো। তপন বাবু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন। আদুরে কণ্ঠে শুধোলেন,
“ আমার মামনি কেমন আছে এখন?”
রিদিমা অন্যদিন হেসে জবাব দিলেও আজ মুখ বুঝে দাঁড়িয়ে রইলো। তপন বাবু হাতের অফিস ব্যাগটা সোফায় রেখে ফ্যানের নিচে বসলেন। রিদিমা টেবিলের ওপর থেকে গ্লাস তুলে তাতে ঠাণ্ডা জল ঢেলে বাবার কাছে নিয়ে গেল। তপন বাবু জল টুকু খেয়ে গ্লাস টা রেখে মেয়ের দিকে তাকালেন। হাসিখুশি মেয়েটা কে আজ হঠাৎ এমন মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে কাছে টেনে বসিয়ে বললেন,
“ কি হয়েছে মামনি? শরীর কি খুব বেশি খারাপ।”
রিদিমা মাথা নেড়ে না জানালে তপন বাবু গালে হাত বুলিয়ে বললেন,
“ তাহলে আমার মামনির মুখটা হঠাৎ এমন কালো হলো কেন?”
রিদিমা বাবার আহ্লাদ পেয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। অশ্রু সিক্ত চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ বাবা! আমি কি তোমাদের সংসারে অতিরিক্ত হয়ে গেছি বলো?”
তপন বাবু অবাক হলেন মেয়ের কথায়। ভ্রূ জোড়া কুঁচকে বললেন,
“ হঠাৎ এমন প্রশ্ন?”
রিদিমা ভেজা গাল মুছে বলল,
“ কারণ ছাড়া আমি এমন প্রশ্ন নিশ্চয়ই করবো না এটা তুমি জানো বাবা।”
“ কারণ টাই তো জানতে চাইছি মা?”
বাবা মেয়ের কথার মাঝে মনিকা এসে দাঁড়ালেন পাশে। রিদিমা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। বাবার হাতের ভাঁজে হাত গুঁজে দিয়ে বলল,
“ বাবা, আমি এর আগে বহুবার মাকে বলেছি তৃপ্তীশ কে আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে একদমই পছন্দ না। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই না। মা শোনেনি। বার বার করে প্রেশার করছে ওকে বিয়ে করার জন্য। আজ আমি তোমার কাছেও এই একই আর্জি জানালাম। এবার তুমিও যদি মায়ের মতো আমাকে প্রেশার করো তাহলে বুঝবো আমি সত্যিই এই সংসারে অতিরিক্ত হয়ে গেছি।”
তপন বাবু মেয়ের সব কথা মন দিয়ে শুনলেন। তারপর মৃদু হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
“ জানো তো মা, মেয়েরা কখনই বাবা মায়ের কাছে অতিরিক্ত হয় না। তারা তো বাবা মায়ের সম্মান সুখ আনন্দ। বাবাদের হৃদয় প্রাসাদের রাজকুমারী। তারা কিভাবে অতিরিক্ত হতে পারে বলো।”
রিদিমা ফুঁপিয়ে উঠলো বাবার কথা গুলো শুনে। তপন বাবু মেয়ের ভেজা চোখ মুছে দিতে দিতে বললেন,
“ তবে একটা ধ্রুব সত্য কি জানো মা, মেয়েরা পরের ঘরের সম্পত্তি হয়। তাদের কে যে বাবার ঘরে চিরদিন থাকার নিয়ম নেই।”
“ আমি তৃপ্তীশ কে বিয়ে করতে চাই না বাবা।”
“ কেন মা? তৃপ্তীশ তো ভালো ছেলে। ভালো জব করে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।”
“ বাবা আমার পছন্দ নয় এটা কি একটা ভ্যালিড কারণ হতে পারে না! ভালো জব আর একমাত্র ছেলে হওয়া এটাই কি কাউকে পছন্দ হবার জন্য যথেষ্ট?”
“ হ্যাঁ যথেষ্ট। আর কি চাই তোমার?”
মিসেস মনিকা ফুঁসে উঠতেই তপন বাবু তাকে থামিয়ে দিলেন।
“ আহ্! মনি! আমি যখন আমার মেয়ের সাথে কথা বলবো তখন তুমি মাঝখান থেকে কথা বলবে না।”
রিদিমা বাবার কাঁধে মাথা রেখে চোখ দুটো বুজে নিলো। আস্তে ধীরে চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলল,
“ বিয়ের পর কখনও তুমি যদি জানতে পারো ওরা তোমার মেয়েকে সারাক্ষণ ডমিনেট করে রাখে। কথায় কথায় হেয় করে। তাকে যোগ্য সম্মান দেয় না তখন তোমার কেমন লাগবে বাবা?”
তপন বাবু মেয়ের কথায় অবাক হয়ে তাকালেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
“ এমন টা কখনই হবে না মা। কারণ তাদের সাথে আমার তেমন ভাবেই কথা হয়েছে। আপাতত রেজিস্ট্রি করিয়ে রাখা হবে। তারপর তোমার পড়াশুনা শেষ হলেই সামাজিক বিয়ে।”
রিদিমা হাতের উল্টো পিঠে চোখ জোড়া মুছে নিলো। নীরব অভিমানে ভাঙা গলায় বলল,
“ তুমি বোধ হয় জানো না বাবা আজ তৃপ্তীশ আর ওর মা এসেছিলেন আমাকে দেখতে। যাবার সময় বলে গেছেন আমি যেন আর বাড়ির বাইরে বের না হই। বাচ্চাদের পড়ানো ও যেন ছেড়ে দিই। মায়ের কাছে শোন। মায়ের সামনেই বলেছে তৃপ্তীশ এর মা।”
তপন বাবু স্ত্রী এর দিকে তাকালেন। মিসেস মনিকা স্বামীর চোখে চোখ রেখে ঝাঁঝ তুলে বললেন,
“ তো! কি এমন খারাপ বলেছেন উনি। ওনার হবু পুত্রবধূ তুমি। তোমার ভালোর জন্য একটু সাবধান করা কি অন্যায়?”
রিদিমা মায়ের কথায় তেঁতে উঠলো। সন্ধ্যার রাগ টা আবারো চড়ে বসলো মাথায়। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গলা চড়িয়ে বলে উঠলো,
“ উনি সাবধান করার নাম করে যে আমাকে ডমিনেট করে চলে গেলেন এটা কি তুমি বোঝো না মা। আর কত বার বোঝালে বুঝবে তুমি বলো?”
রিদিমা আর দাঁড়ালো না সেখানে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে এলো নিজের ঘরে। যারা বুঝবে না বলে কানে তুলো গুঁজে বসে থাকে তাদের বুঝিয়ে লাভ নেই। যেখানে নিজের বাড়ির মানুষদের কাছ থেকে লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় সেখানে তারা তো পর। ডমিনেট করবে এটাই স্বাভাবিক।
দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে আরও তিনদিন। এর মাঝে একদিন রিদিমার বন্ধুরা এসেছিল আরেকদিন মিতালী এসেছিল অঙ্কন কে নিয়ে। আজ বেশ সুস্থতা বোধ করতেই রিদিমা বাড়ি থেকে বের হলো অঙ্কন কে পড়ানোর উদ্দেশ্যে। প্রায় পনেরো মিনিটের রিদিমা আবাসনের সামনে পৌঁছলো। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে লিফ্ট এর কাছে আসতেই মুখোমুখি দেখা হলো সমরের সাথে। উজ্জ্বল হলুদ রঙের শার্ট আর কালো প্যান্টের সাথে ইন করে পরেছে লোকটা। সাথে চোখে রিমলেস চশমা। বরাবরের মতই সুদর্শন সুপুরুষ লাগছে। তবে রিদিমার সেদিকে নজর গেল না। সমর কে দেখা মাত্রই মুখ ঘুরিয়ে এমন ভাবে দাঁড়ালো যেন তাকে সে দেখতেই পায় নি। সমর রিদিমার মুখ ঘোরানো দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ঘাড় ত্যাড়া মেয়েটা এখনও ঘাড় বাঁকিয়ে রেখেছে দেখে একটু একটু রাগও হলো। তবে সে রাগে বিশেষ পাত্তা দিলো না। এরই মধ্যে লিফ্ট এসে দাঁড়ালো। রিদিমা লিফ্ট এ উঠতেই সমর ও ঢুকলো তার পিছু পিছু। লিফ্ট শুরু হতেই দুজন দুই কোণায় দাঁড়িয়ে রইলো অত বড় লিফ্ট এর কেবিন টায়। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় লিফ্ট ফোর্থ ফ্লোরে পৌঁছতেই লিফ্ট এর দরজা খুলে গেল। রিদিমা বেরিয়ে আসার জন্য যেই পা বাড়ালো তখনই পাশ থেকে ডেকে উঠলো সমর,
“ মিস রিদিমা!”
রিদিমা চমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। সমর দুপা এগিয়ে রিদিমার সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখের চশমা ঠিক করতে করতে অনেকটা ইতঃস্তত করে বলল,
“ আম সরি!”
রিদিমা আবারো চমকালো। সাথে সাথে ঘাড় তুলে সমরের দিকে তাকাতেই চোখাচুখি হলো দুজনের। সমর বেশ অনুতাপের সুরে জানালো,
“ সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত। আসলে আমি আপনাকে….!”
“ অপমান করতে চান নি তাইতো?”
সমরের কথা শেষাংশ টুকু সম্পূর্ন করলো রিদিমা। সমর মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রিদিমা সমরের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“ একবার নয় মিষ্টার দুই দুবার। দুই দুবার আপনি আমায় অপমান করেছেন। তাহলে একটা সরি দিয়ে কিকরে মেটাই বলুন।”
এই মেয়ে বলে কি? একবার নয় দুই দুবার সরি বলতে হবে এখন? ভেবেই মাথায় আবারো রাগ চড়ে গেল সমরের। কিন্তু সাথে সাথে সমরের অন্তর থেকে বিবেক গর্জে উঠলো। ছিঃ সমর ছিঃ! যে মেয়েটা নিজের জীবন বাজি রেখে তোর ছেলেকে বাঁচালো। তাকে তোর সামান্য সরি বলতে দ্বিধা হচ্ছে। ছিঃ! তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে মেয়েটা কে নিশ্চিত নিজের প্রোপাটির অর্ধেক দান করে দিতো। আর তুই সামান্য সরি টুকুও বলতে পারিস না। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!
ওদিকে রিদিমা বেশ কিছুক্ষণ সমরের থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর বলল,
“ আচ্ছা ঠিক আছি যান ক্ষমা করে দিলাম আপনাকে। শাস্ত্রে লেখা আছে ক্ষমা করা মহৎ গুণ। ক্ষমা চাইলে যেমন কেউ ছোট হয় না ঠিক তেমনি ক্ষমা করলেও কেউ মহত্ব হারায় না।”
বলে আবারো চলে যেতে পা বাড়াতেই সমরের কন্ঠ কানে ভেসে এলো।
“ মিস্ রিদিমা! এগেইন আম সরি।”
রিদিমা ঘাড় ঘুরিয়ে অবাক চোখে তাকাতেই সমর আবারো এগিয়ে এলো। রিদিমার চোখে চোখ রেখে বলল,
“ আপনি ঠিকই বলেছেন। ক্ষমা চাইলে যেমন কেউ ছোট হয় না ঠিক তেমনি ক্ষমা করলেও কেউ মহত্ব হারায় না। আমি আসলেই মন থেকে ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে। সেই সাথে ধন্যবাদ ও জানাচ্ছি। শুধু মাত্র আপনার কারণে আমার ছোট্ট সায়ন টা আজ অক্ষত অবস্থায়। নাহলে সেদিন যে কি হতে পারতো ভাবতেই আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সেদিন আপনি নিজের জীবন বিপন্ন করে আমার সন্তান কে বাঁচিয়েছেন।”
রিদিমা যেন ঘোরের মধ্যে ডুবে গেল পাজি অসভ্য ম্যানার লেস লোকটার মুখ থেকে এমন সুন্দর গোছানো কথা শুনে। সমর রিদিমার ড্যাব ডেবে চোখের দিকে তাকিয়ে হালকা করে গলা ঝাড়লো। তাতেই সম্বিৎ ফিরল মেয়েটার। রিদিমা নজর সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। সমর যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল। রিদিমা স্বাভাবিক হতেই বলল,
“ আমার সায়ন আপনাকে খুব ভালোবাসে। সব সময় আপনার কথাই জপতে থাকে। আমি জানি সেদিন আপনি আমার জন্যই পড়াতে আসতে নাকচ করে দিয়েছিলেন।
যাইহোক, আমি আমার দুর্ব্যবহারের জন্য ইতিমধ্যেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। পারলে অবশ্যই সায়ন কে পড়ানোর ব্যাপারটা আরেকবার ভেবে দেখবেন। কারণ আমি চাই না আমার অবুঝ শিশুটা তার পছন্দের ম্যামের কাছে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হোক। আসছি নমস্কার।”
সমর আবার লিফ্ট এ উঠে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। রিদিমা সেখানেই বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নিস্তব্ধে।
*
নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল সমর। গতকাল গাড়ির নতুন পার্টস গুলো ঢুকেছে গোডাউনে। সে সবেরই হিসেব গুলো মিলিয়ে দেখছিল সে। তখনই কাঁচের দরজায় টোকা পড়লো ঠন ঠন শব্দ তুলে। সমর চোখ না তুলেই জবাব দিলো,
“ কাম ইন!”
সমরের জবাব পেতেই একটা চব্বিশ পঁচিশ বছর বয়সী মেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। হাতে তার ট্রে ধরা। তাতে বড়সড় সিরামিকের একটা কাপ। যা থেকে ধোঁয়া উড়ছে গোল গোল পাক খেয়ে।
“ স্যার আপনার কফি।”
“ রাখুন!”
মেয়েটা কফির কাপ শুদ্ধ ট্রেটা টেবিলে রাখলো। পরনের শর্ট স্কার্ট টা টেনে টুনে মোহনীয় দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলো সামনে বসা সুদর্শন পুরুষ টার পানে। আজকাল প্রাইভেট অফিসে বস আর সুন্দরী এমপ্লইদের মাঝে লাভ এফেয়ার ভীষণ কমন। অথচ বিগত কয়েক মাস যাবত ক্রমাগত প্রচেষ্টা করেও সামান্য অ্যাটেনশন টুকু আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয় নি সে এই লোকের। তাই আজ আরও আরেকদফা চেষ্টায় মগ্ন সে। যদি ভাগ্যের জোরে কপাল ফেরে!
সমর হঠাৎ হাত ঘড়িতে নজর বুলালো। মেয়েটার দিকে ঠাড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ আপনি এখনও যান নি কেন মিস্ রাহা? অফিস ছুটি হয়েছে তাও তো প্রায় চল্লিশ মিনিট হয়ে গেল।”
মেয়েটা লালে রঞ্জিত পেলব অধর জোড়ায় মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বলল,
“ আপনি একা আছেন দেখেই রয়ে গেলাম। যদি আপনার কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় সেই জন্য আর কি?”
সমর মেয়েটার গায়ে পড়া কথায় যারপরনাই বিরক্ত হলো। অস্বস্তিতে চিড়বিড়িয়ে উঠে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই “ আসবো” বলে গলা বাড়ালো রঙ্গন। বন্ধুর গলা পেতেই সমর চোখ ঘুরিয়ে তাকালো। মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মৃদু হেসে বলল,
“ তুই আবার কবে থেকে পারমিশন নিতে শুরু করলি।”
রঙ্গন টেবিলের সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে স্বভাব সুলভ হাসলো। গলা ঝেড়ে রসালো সুরে টেনে টেনে বলল,
“ সব সময় না নিলেও মাঝে মাঝে নিতে হয় বন্ধু। ইটস আবাউট ফর প্রাইভেসি ম্যান।”
বলেই ইশারায় চোখ মারলো সমর কে। রঙ্গনের কথার ভাঁজে লুকোনো অর্থ বুঝতে সময় লাগলো না সমরের। অস্বস্থিতে বেচারা গুটিয়ে এলেও সেকথায় মেয়েটার ঠোঁটে হাসি দেখা গেল। যা দেখে সাথে সাথে মেজাজ হারালো সমর। মুহূর্তের মাঝে নিজের সেই আদি সত্ত্বায় ফিরে গিয়ে খেঁকিয়ে উঠলো বিশ্রী ভাবে,
“ মিস্ রাহা, আই থিঙ্ক আজকের মত আপনার সমস্ত কাজ অলরেডি শেষ। সো আপনি এখন আসতে পারেন। আর হ্যা, আজকের পর থেকে আপনার আর এই ব্রাঞ্চে আসার দরকার নেই। আজ রাতেই ট্রান্সফার ইমেল পেয়ে যাবেন আশাকরি। আগামী কাল থেকে আপনি সেখানে কাজ করবেন।”
ট্রান্সফারের কথা শুনে মেয়েটা অকস্মাৎ চমকে উঠলো যেন। কি থেকে কি হলো যতক্ষণে তার বুঝে এলো ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মেয়েটা হতভম্ব হয়ে বলল,
“ ট্রান্সফার? কিন্তু কেন স্যার? কি করেছি আমি?”
সমর কড়া চোখে মেয়েটার দিকে তাকালো। গমগমে ভারী গলায় বলল,
“ বিগত কয়েক মাসে এই নিয়ে আপনার আজ চৌদ্দতম দিন অফিস ছুটির পরও আপনি রয়ে গেছেন আমাকে এটা সেটা গুছিয়ে দেবার বাহানায়। কি ভেবেছেন, আমি বুঝি না আপনার আসল মতলব টা কি? লুক মিস্ রাহা, আমি এমনিতেই মেয়েদের খুব একটা ভালো চোখে দেখি না। আর গায়ে পড়া মহিলাদের তো আরই না। সেখানে আপনি তো বার বার লিমিট ক্রস করেছেন। যেহেতু আপনি কোয়ালিফায়েড এমপ্লয় তাই আপনার চাকরি টা খেলাম না। নাহলে আপনার এই নোংরামির জন্য আপনাকে যে আমি কি করতে পারতাম সে সম্পর্কে আপনার ধারণা ও নেই।”
লজ্জায় অপমানে মাথা নুইয়ে এলো মেয়েটার। রঙ্গন তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলে,
“ সমর, বাদ দে ইয়ার। আমার ইয়ার্কি টা বোধ হয় তুই সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিস।”
সমর রঙ্গনের কথায় পাত্তাই দিলো না। আবারো তেজ দিয়ে ধমকে উঠলো মেয়েটা কে।
“ কি হলো এখনও দাঁড়িয়ে আছেন যে?”
মেয়েটা আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। রঙ্গন সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বন্ধুর জন্য বড্ড খারাপ লাগে তার। অথচ সবকিছু ঠিক করার মতো কোনো উপায়ই তার জানা নেই।
কিছুক্ষন আগের ঘটনার কারণে মহাবিরক্ত সমর। এই মুহূর্তে আর একটুও কাজ করতে ইচ্ছে হলো না তার। মনটা খুব করে আরাম চাইলো। ইচ্ছে হলো খানিক আড্ডা মারার। তাইতো ল্যপটপ টা বন্ধ করে বলল,
“ বল এবার, তোর বিয়ের কথা কতদূর এগোলো।”
সমর কে প্রসঙ্গ বদল করতে দেখে রঙ্গন চেয়ার টেনে বসল। ব্যাক বোর্ডে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে বলল,
“ ওই চলছে কোনোমতে। আসলে মেয়েটা বড্ড ইন্ট্রোভার্ট। হাজার টা প্রশ্ন করলে একটা উত্তর দেয়। আমি কিছুতেই সিমন্তিনীর মনে ঢুকতে পারছি না। তাই কি যে করবো বুঝতে পারছি না রে।”
সমর চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো। দুপাশের হ্যান্ডেলে দুহাতের কনুই ঠেকিয়ে আঙুলে আঙুল টোকাটুকি খেলতে খেলতে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“ মেয়েদের আবার মন বলতে কিছু আছে নাকি? ওরা শুধু নোট চেনে বুঝলি।”
“ সব মেয়েরা এক হয় না রে!”
সমর ঝুঁকে এগিয়ে এলো। রঙ্গনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ তাই নাকি?”
“ বলতে পারিস। এ কদিনে সিমন্তিনীর সাথে মিশে যতটুকু চিনেছি মেয়েটা কিন্তু লোভী নয়। তবে কিছু একটা তো আছে যেটার কারণে ও আমার সাথে ফ্রিলি মিশতে পারছে না।”
সমর হাসলো। চেয়ারটা দোলাতে দোলাতে বলল,
“ দেখ গিয়ে কারো সাথে ইটিসপিটিস চলছে নাকি! আজকালকার মেয়েদের বয়ফ্রেন্ড থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।”
“ বলছিস?”
“ আমি শিওর।”
রঙ্গন চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকালো সমরের দিকে। যৌবনের এতগুলো দিন পার হবার পর এই মেয়েটা কে প্রথম দেখাতেই মনে ধরেছিল ওর। এই প্রথমবার ইচ্ছে হয়েছিল কাউকে জীবন সঙ্গী করার। এখন যদি তার আবার লাভ অ্যাফেয়ার কিছু থেকে থাকে তাহলে তো সব কিছু শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যাবে। রঙ্গন হঠাৎ চেয়ার থেকে তিরিং করে লাফিয়ে উঠলো। চোখে মুখে অন্ধকার ছড়িয়ে বলল,
“ উফ্, বড্ড ভুল হয়ে গেছে রে?”
“ কেন কি হয়েছে?”
“ সেদিন রেস্টুরেন্টে সিমন্তিনীর সাথে ওর বেস্টফ্রেন্ড এসেছিল তোর মনে আছে? আরে যাকে তুই ইনসাল্ট করেছিলি।”
রিদিমার কথা শুনে ভ্রূ বেঁকে গেল সমরের। ঠাড় দৃষ্টি চকিতে নিক্ষেপ করতেই রঙ্গনের আফসোসের সুর খানা ভেঙে এলো যেন,
“ ইস্, ওর ফোন নম্বর টা নিয়ে নেওয়া উচিত ছিল তখন। তাহলে আজ সিমন্তিনীর মনের কথা আরামসে জানতে পারতাম।”
বন্ধুর মনের কষ্টে সমরেরও খারাপ লাগলো। ইচ্ছে হলো বলতে,
“ ওরে পাগল কষ্ট পাস না। যে মেয়ের ফোন নম্বর নিতে পারিস নি বলে এতো কষ্টে হাহাকার করছিস। সেই মেয়ে আমার বিল্ডিংয়ে রোজ বিকেলে পড়াতে আসে। তাছাড়া মাঝখানের দিন গুলোতে তার সাথে আমার অনেক কিছু ঘটে গেছে। যার বর্ণনা শুনলে তুই দুঃখ ভুলে যাবি। আর সেই সাথে বিস্ময়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবি নিশ্চিৎ।”
তবে সমর মুখে কিছু বলল না। আসলে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলিয়ে তার আসলেই কোনো লাভ নেই। তাছাড়া যার বিয়ে সে বুঝুগ্গে। কি দরকার নিজে যেচে পৈতে গলায় নেওয়ার। সমর হাত ঘড়িতে নজর বুলিয়ে আস্তে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। ল্যাপটপ খানা ব্যাগে ভরতে ভরতে বলল,
“ চল উঠি। ছেলেটা পথ চেয়ে বসে আছে।”
“ আচ্ছা চল।”
বলে দুই বন্ধু বেরিয়ে গেল যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে। সমর গাড়ির গতি বাড়িয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পৌঁছল আবাসনের সামনে। ফটাফট লিফ্ট এ চড়ে ফিফ্ট ফ্লোরে পৌঁছতেই কলিং বেলটা বাজালো। চুমকি দৌড়ে এসে দরজা খুলতেই সমর দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকলো। ঠিক সেই মুহূর্তে সায়ন কে কোলে তুলে আদর করতে করতে বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো রিদিমা। পেছনে পেছনে মিসেস চিত্রা। মুখোমুখি উভয়ের দেখা হতেই রিদিমা সায়ন কে নিচে নামিয়ে দিলো। মিসেস চিত্রার কাছে বিদায় নিয়ে এসে দাঁড়ালো সমরের সামনে।
“ গোটা বিকেল ধরে আপনার কথাগুলো অনেক ভাবলাম বুঝেছেন। আসলে আমাদের ইগোর লড়াইয়ের মাঝে পড়ে সায়ন সাফার করছিল। যেটা ও ডিজার্ভ করে না।
যাগ্গে সে সব। আমি আজ থেকেই ওকে পড়ানো শুরু করলাম। আজ আসি তাহলে, নমস্কার।”
চলবে…
#তুই_যখন_ছুঁয়ে_দিলি_মন
কলমে: #নিতু_সরকার
পর্ব: ৮
আজ সাত দিন হলো রিদিমা সায়ন কে পড়াতে আসছে। সায়নের আধো আধো তোতলা কথা গুলো শুনতে রিদিমার এতো গুলো লাগে তা বলার বাইরে। ও পড়াতে আসলেই কোলে উঠে বসবে। তারপর নিজের কোলে বই তুলে পড়বে। আজও রিদিমা পড়াতে আসতেই গুলু মুলু সায়ন তার কোলে চড়ে বসলো। ব্যাগ থেকে খাতা বের করে বলল,
“ ম্যাম দেকো আমি কি থুন্ডল একতা বাড(বার্ড) এঁকেথি।”
রিদিমা খাতায় নজর রাখতেই দেখতে পেল সায়নের শিল্প কর্ম। বহু কষ্টে একটা গোল এঁকে তার দুটি পা আর ঠোঁট বানিয়েছে সে। রিদিমা তাতেই খুশি হলো। বাচ্চাটা কে উৎসাহিত করতে হাত তালি দিয়ে বলল,
“ বাহ্ দারুন হয়েছে তো। ভেরি গুড। এটা কি তুমি আমার জন্য এঁকেছ সোনা?”
সায়ন খুশিতে গদগদ হয়ে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বোঝালো হ্যাঁ এটা তার জন্যই এঁকেছে। রিদিমা খুশি হয়ে আদর দিলো সায়নের গালে। তারপর বলল,
“ আচ্ছা আমরা কি পাখি টাকে আবার ড্র করতে পারি?”
সায়ন খুশিতে মাথা দুলিয়ে রং পেন্সিল নিয়ে বসলো হাতে। রিদিমা সায়নের ছোট্ট হাত টা ধরে খাতায় আগে একটা বড় সাইজের 2 আঁকলো। তারপর পিঠ আর পেট বানালো ‘ডি’ এর মত করে। তারপর মাথা চোখ আর পা বানাতেই সুন্দর পাখির আকার ধারন করলো ছবিটা। যা দেখে সায়নের সে কি আনন্দ! নিজে নিজেই হাত তালি দিয়ে ছবিটা হাতে তুলে ছুটলো ঠাম্মি কে দেখাবে বলে।
“ তাম্মি ও তাম্মি দেকো দেকো ম্যাম আমাকে কি থুন্ডল বাড আঁকা শিকিয়ে দিয়েছে।”
চিত্রা দেবী নাতির খুশিতে নিজেও খুশি হলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন,
“ খুব ভালো হয়েছে দাদুভাই। চলো দেখি তোমার ম্যাম কে একটু ধন্যবাদ দিয়ে আসি।”
চিত্রা দেবী হাঁটুর সেই মচকে যাওয়া ব্যাথায় আজও ভুগে চলেছেন। তাই বেশ কষ্ট সয়ে এগিয়ে এসে বললেন,
“ তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মা।”
রিদিমা লাজুক হেসে বলল,
“ সামান্য একটা পাখি আকাঁর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না আন্টি।”
চিত্রা দেবী রিদিমার পাশেই বসলেন। তারপর বললেন,
“ না মা তুমি আসলেই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। তুমি যা করলে আমাদের জন্য।”
রিদিমা এবার বিরক্ত হলো। এরা রোজ রোজ একই কথা বলে।
“ আন্টি প্লীজ, আর কতো বার বলবেন এক কথা।”
চিত্রা দেবী হাসলেন।
“ আচ্ছা নাও আর বলছি না। শোন রিদিমা, এবার ভাবছি দাদুভাই কে স্কুলে দিয়ে দেবো। আর দুমাস পর তো দাদুভাইয়ের চার বছর পূর্ণ হবে। তো ওকে এই দুমাসে যতোটা পারো শিখিয়ে পড়িয়ে দাও যাতে ভর্তি হতে সমস্যা না হয়।”
রিদিমা সায়নের দিকে তাকালো। বাচ্চাটা ইতিমধ্যে আরো দুটো পাখি এঁকে ফেলেছে খাতায়। চিত্রা দেবীকে আশ্বস্ত করতে বলল,
“ ঠিক আছে আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি।”
চিত্রা দেবী ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তাদের কে একা ছেড়ে। রিদিমা সায়ন কে টেনে কোলে তুলে বলল,
“ আজ কি সায়ন সোনা ম্যামের সাথে খেলতে চায়?”
সায়ন খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলল,
“ কি খেলা?
“ লেটার দিয়ে ওয়ার্ড বানানোর খেলা।”
সায়ন খেলাটা বুঝতে পারল না। গোল গোল চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে তোতলানো বুলিতে আওড়ালও,
“ উতা তো আমি পারি না ম্যাম।”
রিদিমা সায়নের নাক টিপে দিয়ে বলল,
“ আমি শিখিয়ে দেবো তো। তাহলেই দেখবে কি সুন্দর পারছো। আচ্ছা বলো তো, a for…”
সায়ন খুশিতে লাফিয়ে উঠে জবাব দিলো
“ অ্যাপল!”
“ ভেরি গুড! b for..”
“ বল!’
এভাবেই খেলার ছলে রিদিমা হেসে হেসে একটা একটা করে বর্ন উচ্চারণ করলো আর তার সাথ তাল মিলিয়ে সায়ন শব্দ বলে গেল। পড়ানো যখন প্রায় শেষের পথে তখন খাবারের প্লেট সাজিয়ে ঘরে ঢুকলো চুমকি। রিদিমাকে দেখে হেসে পাশে এসে দাঁড়ালো। রিদিমা খাবারের আয়োজন দেখে বিরক্ত হয়ে বলল,
“ এ বাবা আজ আবারো এতো খাবার কেন আনতে গেলে তুমি চুমকি দি।”
চুমকি ওর পাশে প্লেট সমেত ট্রে টা রাখতে রাখতে বলল,
“ কোথায় কত খাবার, মাত্রই তো দুটো আপেল আর একটা কমলা লেবু।”
রিদিমা তাও মাথা নাড়লো। প্লেট টা ধরে চুমকির দিকে এগিয়ে ধরে বলল,
“ আমি একা এতো খেতে পারবো না। তুমি কিছুটা নাও।”
চুমকি বার বার না করা সত্ত্বেও রিদিমা জোর করেই ওর হাতে তুলে দিলো। চুমকি ফলের টুকরো গুলো হাতে নিয়ে পাশেই বসলো খেতে। সায়ন তার রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টার টা নিয়ে খেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় রিদিমা নিজেও আপেলে কামড় বসালো।
এবাড়িতে আজ এক সপ্তাহ ধরে আসা যাওয়ার দরুন চিত্রা দেবী আর চুমকির সাথে ওর দারুন একটা মিলমিশ হয়েছে। তাই রিদিমা বিনা সংকোচে বলল,
“ আচ্ছা চুমকি দি, সায়নের মা কোথায়? মানে আমি আসার পর সবাইকে দেখলেও এখনও ওর মা কে দেখলাম না..!”
চুমকি রিদিমার প্রশ্ন শুনে সাথে সাথে একটু তটস্থ হয়ে বসলো। বেশ সতর্ক ভাবে বলল,
“ সায়ন বাবার তো মা নেই দিদিমনি।”
এই টুকু বাচ্চার মা নেই! শুনে চমকে উঠলো রিদিমা। বুকটা সাথে সাথে হুহু করে উঠলো অজানা যন্ত্রণায়। চোখ দুটো ভিজে উঠলো কষ্টে।
“ নেই মানে?”
চুমকি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে খানিক থমকে গেল। জবাবে কি বলা যায় ভাবতে লাগলো মস্তিষ্ক খাটিয়ে। ঠিক তখনই শোনা গেল সমরের গম্ভীর গলার কন্ঠস্বর….
“ সায়নের মা মারা গেছে।”
আচমকা রিদিমা চমকে উঠলো সমরের কন্ঠ শুনে। চুমকিও চমকে উঠলো সমর কে দেখে। সমর রিমলেস চশমার কাঁচের ভেতর দিয়ে শীতল দৃষ্টিতে তাকালো চুমকির দিকে। তারপর ঠাড় গলায় বলল,
“ ডিনার রেডি?”
চুমকি কোনোমতে মাথা নেড়ে বলল,
“ না আরেকটু বাকি।”
“ কাজ ফেলে এখানে কি তোর?”
“ কক কই কিছু না তো। আমি যাচ্ছি এক্ষুনি।”
চুমকি হুড়মুড় করে ছুটে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। কিন্তু রিদিমা বসে রইলো ছোট্ট সায়নের দিকে অশ্রু সজল চোখে তাকিয়ে। ওর বুকটা পুড়ে যাচ্ছে মমতায়। কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে মোচড় দিচ্ছে গলায়।
আহ্ হা রে! এই টুকু একটা বাচ্চার মা নেই! তাহলে বুক ভরা আদর গুলো কার কাছে পায় বাচ্চা টা?
রিদিমার ভাবনার মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো। ধ্যান ভেঙে রিদিমা ফোনের দিকে তাকাতেই আবেগ উবে গিয়ে মন মস্তিষ্ক জুড়ে ভর করলো একরাশ বিরক্তি। কারণ “তৃপ্তীশ” নামটা ভাসছে স্ক্রিনে। রিদিমার ফোন কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তাই বাধ্য হয়েই রিসিভ করলো কল টা। ফোনটা রিসিভ হতেই তৃপ্তীশ এর আগুন ঝরা কন্ঠস্বর ভেসে এলো কানে..
“ দিস ইজ টু মাচ রিদিমা। আমার মা তোমাকে নিজে বারণ করা সত্ত্বেও তুমি এখনও পড়াতে যাচ্ছো?
রিদিমার রাগে গা জ্বলে উঠলেও তৃপ্তীশ এর কথার জবাব দিলো না। তৃপ্তীশ রিদিমার ফিরতি জবাব না পেয়ে চিৎকার করে উঠলো ফোনের ওপাশ থেকে…
“ কি হলো জবাব দিচ্ছ না যে?”
রিদিমা সমরের সামনে এতো বিব্রত হলো তা বলার বাইরে। সমরের কাট কাট চাহনির দিকে এক পলক তাকিয়ে সাথে সাথে কেটে দিলো কলটা। তারপর ব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“ আজকের মত পড়ানো শেষ। আসি নমস্কার।”
বলেই দ্রুত পায়ে ছুটে বেরিয়ে আসতে নিলো মেয়েটা। কিন্তু তাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়ে ঠিক তখনই আবারো ফোনটা বেজে উঠলো। রিদিমা বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল। আর সমর ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।
বাবা মা জোর করে ওর গলায় এক আপদ ঝুলিয়ে দিয়েছে। যাকে রিদিমা চাইলেও আপাতত সরাতে পারছে না। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত বোধহয় মানুষ তখনই নেয় যখন তাকে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। রিদিমা লিফ্ট ধরে বাইরে বেরিয়ে এসে তারপর তৃপ্তীশ এর কল রিভিস করলো। তৃপ্তীশ রিদিমার গলার আওয়াজ শুনে তেঁতে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিদিমা চিৎকার করে উঠলো…
“ আমি আপনার কিম্বা আপনার মায়ের কেনা গোলাম নই তৃপ্তীশ। যে আপনাদের কথা মতো আমার লাইফের সব রকম ডিসিশন নেবো। শুনুন তৃপ্তীশ, আপনার কিম্বা আপনার মায়ের যদি আমার পড়াতে যাওয়া নিয়ে বিন্দু মাত্র আপত্তি থাকে তাহলে আমিও এই বিয়েতে বেঁকে বসবো। করবো না বিয়ে আপনাদের মতো লো মেন্টালিটির ফ্যামিলি তে বুঝেছেন।”
চলবে…