অগ্নিদগ্ধ ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
12

#অগ্নিদগ্ধ_ভালোবাসা
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

তানহার দুচোখ খুঁজে চলেছে শাহনওয়াজ সিদ্দিকীকে। লোকটার থেকে অনেক কিছু জানার আছে তার। যেই লোকটা কাল অব্দি তাকে পাচার করতে চাইছিল আজ হঠাৎ কেন সে তার সাথে এনগেজমেন্ট করতে চাইছে, কেন তাকে বিয়ে করতে চাইছে, এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় তানহা৷ তানহা পুরো ম্যানশন জুড়ে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ শাহনওয়াজের দেখা পায়। শাহনওয়াজ আরো কিছু ব্যবসায়ীর সাথে মিলে গল্প করছিল। তানহা বেশি কিছু না ভেবে শাহনওয়াজের কাছে চলে যায়। শাহনওয়াজের একদম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হালকা কেশে বলে,
“শুনুন,,একটু এদিকে আসুন। আপনার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”

শাহনওয়াজ ভ্রুঁ কুচকে বলে,
“এখন আমি ব্যস্ত আছি। পরে..”

এমন সময় একজন ব্যক্তি বলে ওঠেন,
“যান যান নিজের হবু বউয়ের কথা শুনে আসুন। নাহলে বিয়ের পর দেখবেন প্রত্যেক দিন এই বিষয়টা নিয়ে খোঁচা দিবে। আমার মিসেসও এমন করে।”

এহেন কথা শুনে তানহার বেশ অস্বস্তিবোধ হয়। শাহনওয়াজ তানহার হাত আলতো করে ধরে বলে,
“বেশ, চলো শুনি তোমার কথা।”

কিছুটা দূরে নিরিবিলি স্থানে আসে দুজনে। শাহনওয়াজ তানহার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলে,
“কি বলবে বলো।”

তানহা নিজের মনে সাহস সঞ্চার করে প্রশ্ন করে বসে,
“আমাকে কেন বিয়ে করতে চান আপনি?”

শাহনওয়াজ বিরক্তিতে “চ” জাতীয় শব্দ করে বলে,
“এটা জানার জন্য তুমি আমায় এভাবে ওখান থেকে নিয়ে এলে? জানো, আমার কত জরুরি কথা ছিল।”

“আমার কাছেও এটা জানা জরুরি যে আপনি কেন আমায় বিয়ে কর‍তে চান। আপনার আচরণ আমার সুবিধার লাগছে না আর…”

তানহা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আচমকা শাহনওয়াজ তানহাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। তানহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নেয় নিজের পুরু ওষ্ঠ দ্বারা। তানহা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে। শাহনওয়াজ এভাবেই গাঢ় চুম্বন একে দেয় তানহার ওষ্ঠে। তানহা একদম বরফের মতো জমে যায়। শাহনওয়াজের হাত খেলে যায় তানহার নরম শরীরে। ব্যাপারটা আরো গভীরে যাবে তার আগেই হঠাৎ করে পেছন থেকে আকবর বলে ওঠে,
“স্যার, মিস্টার চৌধুরী আপনার সাথে দেখা…”

বলতে বলতেই সে থেমে যায় এই দৃশ্য দেখে। অপ্রস্তুত হয়ে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। তানহা তো লজ্জায় একদম মাটির সাথে মিশে যাবার জোগাড়। সে শাহনওয়াজকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। শাহনওয়াজ আকবরের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ব্যাড টাইমিং আকবর…”

আকবর নিজেও ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিল তাই কিছু বলতে পারছিল না। এদিকে তানহা তখনো ঘোরের মধ্যে ছিল। শাহনওয়াজ শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আশা করি নিজের প্রশ্নের উত্তর তুমি পেয়ে গেছ। আর যদি এখনো কোন সন্দেহ থাকে তাহলে বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করো….এটা তো শুধু ট্রেলার ছিল…পুরো মুভি নাহয় বিয়ের পর দেখে নিও।”

বলেই সে একদম এটিটিউড নিয়ে হেটে চলে যায়। আকবরও তার পিছু পিছু যায়। এদিকে বেচারি তানহা নিজের ঠোঁটে হাত বুলিয়ে বলে ওঠে,
“এটা কি হলো? কি বোঝাতে চাইলেন উনি?”

★★
মিহি দুই/তিন ঘন্টা থেকে আয়নার সামনে বসে মেকআপ করে চলেছে৷ নিজেকে সাজাতে কোন কিছুর কসুর রাখতে চাইছে না সে। নিজেকে সুন্দর দেখানোই তার লক্ষ্য। মিহির সাজের মাঝেই মর্জিনা বেগম এসে বলেন,
“সাজ সাজ আরো সুন্দর করে সাজ। আজ এই এনগেজেমেন্টে নিশ্চয়ই অনেক বড়লোকের আগমন ঘটবে। যে করেই হোক তোকে একটা বড়লোক ছেলে পটাতে হবে। একবার যদি তুই কোন বড়লোক ছেলেকে পটাতে পারিস তাহলেই কেল্লাফতে। তাহলে আমাদের আর এই তানহাকে আর এত তেল দিয়ে চলতে হবে না। বুঝলি?”

মিহি সাজতে সাজতে বলে,
“তুমিও আমার পাশে বসো তো আম্মু, তোমাকেও সাজিয়ে দিচ্ছি। এখানে তো সব বয়সের বিজনেসম্যান এসেছে দেখছি। তোমাকেও কেউ পছন্দ করে নিতে পারে।”

“কি বলছিস এসব?”

“আরে ভুল কিছু বলছি না। একবার ভেবে দেখো, আব্বুর সাথে সংসার করে তুমি কি কোন সুখ পেয়েছ?”

মর্জিনা বেগম বলেন,
“কথাটা ভুল বলিস নি৷ যখন যুবতী ছিলাম কি রূপ ছিল আমার। এলাকার সব ছেলেরা পাগল ছিল আমার জন্য। কিন্তু আমার ভাগ্যটা ভালো ছিল না। তাই তো এক বিপত্নীক এক বাচ্চার বাপকে…যাইহোক, বাদ দে সেসব৷ এখন তুই নিজের উপর গুরুত্ব দে। আমার ভাগ্যে যাইহোক, তোকে আমি একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই। সুন্দর করে নিজেকে তৈরি করে নে। কোন কমতি যেন না থাকে।”

★★
তানহা ও শাহনওয়াজের এনগেজমেন্টের সময় হয়ে এসেছে। তানহার পরনে লাল গাউন, শাহনওয়াজের পরণে সাদা ক্লাসিক শার্টের উপর ব্লেজার ও টেইলরড ফিট ব্লেজার প্যান্ট। দুজনকে পাশাপাশি ভীষণ সুন্দর লাগছে।

এনগেজমেন্টের সময় ঘনিষ্ঠ আসতেই শাহনওয়াজ এগিয়ে এসে তানহার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। তানহা কাপা কাপা হাতে শাহনওয়াজের বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরে নেয়। এরপর শাহনওয়াজ আলতো করে তানহাকে টেনে নেয় উঁচু করে তৈরি করা মঞ্চটিতে। ঠিক তখনই হলঘরের সব আলো নিভে গেল। শুধু মঞ্চের ওপর একফালি আলো এসে পড়ল তাদের দুজনের ওপর। যেন এই মুহূর্তে পৃথিবীতে আর কেউ নেই, শুধু শাহনওয়াজ আর তানহা। এক ঝলকে যেন তাদের চারপাশের সবকিছু ঝাপসা হয়ে গেল। এই প্রথমবার এত কাছাকাছি তারা, তাদের হৃদস্পন্দন একই তালে বাজছে।

আশেপাশের সবাই তাদের জন্য হাততালি দিতে থাকে। সাথে সাথেই হঠাৎ করে মঞ্চে বেজে ওঠে একটা খুব সুন্দর গান। শাহনওয়াজ তানহার সাথে মিলে নাচতে শুরু করে দেয়। নাচতে নাচতে দুজনে যেন দুজনের মাঝেই হারিয়ে যায়৷ তানহা বুঝতে পারে না, তার মনে কেমন জানি অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। যা তার কাছে একদম নতুন৷ যখন শাহনওয়াজ সিদ্দিকী তাকে কাছে টেনে নিচ্ছিল..তখন সবটাই তার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। জন্ম থেকে কখনো কারো ভালোবাসানা পাওয়া মেয়েটা যেন প্রথম কারো থেকে হৃদয়ভেদী ভালোবাসা পাচ্ছিল।
❝Meri raahein tere tak hai
Tujhpe hi toh mera haq hai
Ishq mera tu beshak hai
Tujhpe hi toh mera haq hai
Saath chhodunga na, tere piche aaunga
Chheen lunga ya, Khuda se maang launga
Tere naal taqdeeran likhwaunga main
Main tera ban jaunga
Main tera ban jaunga❞

নাচ শেষ হতেই সবার হাততালির আওয়াজ শোনা যায়। সবাই তাদের উৎসাহ দিচ্ছিল ও প্রশংসা করছিল। কিন্তু দূর থেকে একজন শকুনের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল তাদের দিকে। তার চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছিল। সেই আগুন যেন এই সুন্দর ভালোবাসাকে দগ্ধ করে দেবে।

সময় হয়ে আসে আংটি বদলের। মর্জিনা বেগম, মিহি,আসগর ইসলাম এরা সবাই এসে দাঁড়িয়ে পড়ে সামনে। এতক্ষণ সবাই খেতে ব্যস্ত ছিল। মর্জিনা বেগম বলে ওঠেন,
“ইশ, কত রকমের সুস্বাদু খাবার৷ এত খাবার জন্মে খাইনি।”

এমন সময় আকবর এসে বলে,
“স্যালাইন লাগলে বলবেন। যত খাবার খেলেন..ঠিকমতো হজম হবে কিনা সন্দেহ।”

মিহি তেতে উঠে বলে,
“ঠিকভাবে কথা বলুন।”

আকবর মিহির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে,
“আর আটা-ময়দা বাকি ছিল না? থাকলে সেগুলোও মুখে লাগিয়ে নিতেন।”

মিহি ভাব নিয়ে বলে,
“আমি জানি আমাকে খুব সুন্দর লাগছে। তা দেখেই বুঝি আপনার হিংসা হচ্ছে খুব, তাইনা?”

আকবর ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। এই আটার বস্তাকে দেখে তার কিনা হিংসা হবে!

★★
এদিকে শাহনওয়াজ তানহার হাতে আংটি পড়ানোর জন্য প্রস্তুত হয়। আংটিটা পড়াতে যাবে এমন সময় এক গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠস্বর বলে ওঠে,
“আমাকে ছাড়াই নিজের এনগেজমেন্ট করে নিচ্ছ শাহনওয়াজ সিদ্দিকী! একটু অপেক্ষা তো করতে পারতে।”

শাহনওয়াজ সামনে তাকিয়ে অবাক স্বরে বলে,
“আফনান!”

আফনান এগিয়ে এসে বলে,
“তোমার জীবনের এত স্পেশাল একটা দিনে আমি আসব না, সেটা ভাবলে কিভাবে?”

বলেই এগিয়ে আসে আফনান সিদ্দিকী।

“আমার বাড়ি, আমার পরিচয় সব তো দখল করে নিয়েছ। এখন আমার পছন্দের মেয়ের দিকেও নজর দিয়েছ?”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨