অগ্নিদগ্ধ ভালোবাসা পর্ব-০৬

0
12

#অগ্নিদগ্ধ_ভালোবাসা
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

শাহনওয়াজ অবাক চোখে তাকালো আফনান সিদ্দিকীর দিকে। আফনানের চোখে যেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। তানহা তো একদম হতবাক হয়ে তাকিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। আফনান এগিয়ে এসে হালকা হেসে বলল,
“আরে মজা করছিলাম। তুমি সিরিয়াস হয়ে গেলে নাকি? চিল, তোমার খুশিতে অংশ নিতে এলাম।”

শাহনওয়াজ আফনানের এমন ঠাট্টা ভালো ভাবে নেয় না৷ আকবরের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“ওকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসতে দাও।”

আফনান বসে,
“এখানে বসার জন্য তো আমি আসিনি। তোমাকে আর তোমার হবু স্ত্রীকে নতুন জীবনের শুভকামনা জানাতে এসেছি।”

বলেই সে একটি ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে এসে তানহার হাতে দিয়ে বলে,
“শুভকামনা ভাবি। আশা করি, আপনার বিবাহিত জীবন সুখের হবে।”

বলেই ফিচেল হাসে। তানহা অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়ায়। শাহনওয়াজ তখনো হাতে আংটি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দেখে আফনান বলে,
“আংটিটা পড়িয়ে দাও,,,,ভাবি আর কতক্ষণ এভাবে অপেক্ষা করবে।”

শাহনওয়াজ এবার আলতো করে তানহার হাতে আংটি পড়িয়ে দেয়। অতঃপর তানহাকে ইশারা করলে তানহাও পড়িয়ে দেয়। আফনান সিদ্দিকী হাততালি দিয়ে বলে,
“বাহ কি সুন্দর মানিয়েছে দুজনকে। কারো নজর না লাগুক।”

আকবর বিড়বিড় করে বলে,
“নজর দেয়ার মানুষ তো চলেই এসেছে।”

আফনান এবার আকবরের দিকে ফিরে বলে,
“কি হয়েছে আকবর? তোমার মুখ দেখে কেন জানি মনে হচ্ছে আমার এখানে আসায় তুমি খুশি হওনি।”

আকবর কিছু বলল না জবাবে। নিজের শান্তভাব বজায় রাখল।

এরমধ্যে শাহনওয়াজ বলল,
“বিনা দাওয়াতে যখন আমার এনগেজমেন্টে এসে গেছ তাহলে গিয়ে খেতে বসে পড়ো। আমি আসছি।”

শাহনওয়াজ যে তাকে অপমান করতে চাইল এটা বুঝে আফনান সিদ্দিকীর মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। তবে সে দমে গেল না। মনে মনে বলে,
“শুরু থেকে তুমি আমার সাথে যা যা করেছ তার পাই টু পাই হিসাব নেয়ার সময় এখন এসে গেছে। এতদিন ধরে আমি তো এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। তোমার দূর্বলতার…এবার সেটা পেয়ে গেছি।”

বলেই তানহার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। শাহনওয়াজ আচমকা তানহার সামনে এসে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। চোখের ভাষাতেই বুঝিয়ে দেয় এদিকে নজর দিলে চোখ উপড়ে ফেলবে।

★★
আফনান সিদ্দিকী আরামসে বসে চিকেন লেগ লিসে কামড় দিচ্ছিল৷ আকবর এটা দেখে বিরক্তির চাহনি দিচ্ছিল। আফনান সেটা খেয়াল করে বলে,
“খাবে?”

আকবর কিছুই বলে না। এমন সময় শাহনওয়াজ সেখানে এসে বলে,
“তুমিই খাও ওটা। খাবার জন্যই তো এসেছ।”

“এটা ঠিক না শাহনওয়াজ। আমি তোমার খুশিতে অংশীদার হতে এলাম আর তুমি আমায় খাওয়ার খোটা দিচ্ছ।”

শাহনওয়াজ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ সংবরণ করতে চায়। কারণ আজকের দিনে সে কোন ঝামেলা করতে চায় না। এর মাঝে আফনান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আজ তুমি যা কিছু পেয়েছ সবটাই তো আমার পাওয়ার কথা ছিল। আমার বাবার তিল তিল করে গড়ে তোলা সাম্রাজ্য তুমি ভোগ করছ…যাকে আমার বাবা রাস্তা থেকে তুলে এনেছিল। আর আমি তার নিজের ছেলে হয়েও…জানি না তুমি কিভাবে বশ করেছিলে আমার বাবাকে। যে তিনি মৃত্যুর আগে তার পরবর্তী মাফিয়া কিং তোমায় বানিয়ে গেল।”

শাহনওয়াজ এবার আফনানের মুখোমুখি হয়ে বলে,
“এটা প্রাচীনকালের রাজতন্ত্র নয় আফনান যে বংশানুক্রমিকভাবে রাজার ছেলে রাজা হবে। এটা হলো মাফিয়া সাম্রাজ্য। এখানে ক্ষমতা, শক্তি আর যোগ্যতাইই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমার যোগ্যতা ছিল জন্যই আনোয়ার স্যার তার পরবর্তী মাফিয়া কিং হিসেবে আমায় নির্বাচন করেছেন।”

আফনানের চোখ দুটো এবার আরো হিংস্র হয়ে উঠলো। তার মনে পড়ে গেল অতীতের স্মৃতিগুলো। চট্টগ্রামের মাফিয়া কিং আনোয়ার হাওয়ালদারের একমাত্র ছেলে ছিল সে। তাই ছোটবেলা থেকেই সবাই তাকে ভবিষ্যতের মাফিয়া কিং ভাবত। সে নিজেও তাই ভাবত। কিন্তু আফনান যখন অনেক ছোট তখন তার বাবা কোথা থেকে যেন এই শাহনওয়াজকে নিয়ে আসে। সে সময় শাহনওয়াজের পরণে ছিল জীর্ণ শীর্ণ পোশাক,চেহারা ছিল মলিন। দেখেই মনে হয়েছিল কোন পথশিশু। আফনান তো প্রথমদিকে ঘৃণায় ওর পাশেই যেত না। নিজের বন্ধুদের নিয়ে ওকে কম বুলিও করে নি। কিন্তু শাহনওয়াজের প্রতি আনোয়ার হাওয়ালদার অনেক প্রসন্ন ছিলেন। তিনি এমনকি শাহনওয়াজকে নিজের পদবী দেন, নিজের ছেলের মতো দেখতে থাকেন। এমনকি একসময় তো আফনানের থেকে শাহনওয়াজ তার প্রিয় হয়ে ওঠে। সবাই শাহনওয়াজকে বলতো তার ডান হাত। এত কিছুর পরেও আফনানের এটা বিশ্বাস ছিল যে আর যাইহোক না কেন তার বাবা অন্তত তাকে পরবর্তী মাফিয়া কিং করবে। কিন্তু দিনশেষে তার সেই আশাও ভেঙে গেল। যখন তার বাবা মৃত্যুশয্যায় তাকে নয় বরং এই শাহনওয়াজ সিদ্দিকীকে পরবর্তী মাফিয়া কিং ঘোষণা করল। যদিও তিনি নিজের ব্যবসার বেশিরভাগ অংশ তুলে দিয়েছিলেন আফনানের হাতে। কিন্তু তাতেও আফনান সন্তুষ্ট ছিল না। তার মনে হয়েছে, তার সাথে প্রতারণা হয়েছে। এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে আফনান বলে ওঠে,
“তুমি আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছ শাহনওয়াজ সিদ্দিকী এবার কেড়ে নেওয়ার পালা আমার।”

এতক্ষণে আকবর মুখে খুলে বলে,
“শাহনওয়াজ স্যার আপনার থেকে কিছু কেড়ে নেয়নি। উনি নিজের যোগ্যতায় সবকিছু অর্জন করেছেন। যদি আপনি ওনার থেকে বেশি যোগ্য হতেন তাহলে আপনার বাবা কখনোই ওনাকে নির্বাচন করতেন না।”

আফনান গর্জে উঠে বলে,
“তোমার লেকচার শুনতে আমি এখানে আসিনি।”

বলেই সে ফুসতে ফুসতে চলে যায়।

★★
মিহি পুরো সিদ্দিকী ম্যানশনে ঘুরে ঘুরে অনেকের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু কেউ তাকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছিল না। এতে করে তার রাগ হয় ভীষণ। সে বলে,
“ঐ তানহা কোন কিছু না করেই এত কিছু পেয়ে গেল আর আমি এত চেষ্টা করেও…”

এমন সময় হঠাৎ করে মিহি কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেয় ঠিক সেই সময় দুটো বলিষ্ঠ হাত তাকে আগলে নেয়। মিহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ভীষণ সুদর্শন ও সুঠামদেহী এক যুবকের দুই হাতের মুঠোয় ঝুলন্ত সে। সে হা করে তাকিয়ে থাকে যুবকটির দিকে। এদিকে নিজের দিকে মিহিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে যারপরনাই বিরক্ত হয় আফনান সিদ্দিকী। বিরক্তি স্বরে মিহিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে চলে যেতে নেবে এমন সময় মিহি বলে ওঠে,
“ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য।”

আফনানের মেজাজ খারাপ ছিল। তাই সে কিছু না বলে চলে যেতে নেয়। ঠিক সেই সময় মিহি পেছন থেকে বলে ওঠে,
“ও হ্যালো? কিছু বলছেন না কেন? এটিটিউড? আমি কিন্তু যেনতেন কেউ নই, শাহনওয়াজ সিদ্দিকীর হবু শালি আমি। এসব এটিটিউড অন্য কোথাও গিয়ে দেখাবেন।”

কথাটা শোনামাত্রই আফনান থেমে পিছনে ফিরে তাকায়। মিহিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার ভালো করে পরখ করে নিয়ে বলে,
“ইন্টারেস্টিং…ভেরি ইন্টারেস্টিং..”

★★
তানহা এত ভীড়ের মাঝে নিজেকে ভীষণ একা বোধ করছিল। এমন সময় আচমকা তার পিঠে কারো স্পর্শ অনুভব করে পেছন ফিরে দেখতে পায় শাহনওয়াজ সিদ্দিকীকে। শাহনওয়াজ তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“একা একা লাগছে?”

“হুম।”

“আমি থাকতে তুমি একা নও।”

“আচ্ছা, ঐ লোকটা কে ছিল?”

“আমার পরিচিত একজন।”

শাহনওয়াজের সংক্ষিপ্ত জবাব শুনে তানহা আবারো সাহস করে প্রশ্ন করে,
“আমায় কেন বিয়ে করতে চাইছেন সেটা তো বললেন না স্পষ্ট করে। আমি কারণ জানতে চাই।”

শাহনওয়াজ বলে,
“বেশ,কারণ জানতে চাইলে চলো আমার সাথে।”

বলেই তানহাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨