#অগ্নিদগ্ধ_ভালোবাসা
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
শাহনওয়াজ আরো বেশি অবাক হয়ে যায়। আচমকা সোহিনী চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমি তানহা..আমার তানহা। আমি জানতাম তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যেতে পারো না ”
ডাক্তার সোহিনী চৌধুরী শাহনওয়াজের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে বলে,
“দূরে থাকুন আমার থেকে..কে আপনি? আপনার সাহস কি করে হলো আমায় স্পর্শ করার?”
সোহিনীর কথা শুনে শাহনওয়াজ থমকে গেল। আকবরও অবাক হয়ে ডাক্তার সোহিনীর দিকে তাকিয়ে ছিল। সেও বলে ওঠে,
“উনি তো একদম তানহা ম্যামের মতো দেখতে তাহলে নিজের নাম ভিন্ন বলছেন কেন? একই রকম দেখতে দুটো মানুষ..এটাও কি সম্ভব?”
শাহনওয়াজ এবার সোহিনীর কাছে এসে তার মুখটা আলতো করে স্পর্শ করে বলে,
“তুমি এমন কেন করছ তানহা? আমায় চিনতে পারছ না? নাকি আমার সাথে মজা করছ? নিশ্চয়ই মজা…আমি শিওর মজাই করছ তুমি।”
“আমি মজা করছি না। আর আপনি আমায় তানহা কেন বলছেন, আমি ডাক্তার সোহিনী চৌধুরী।”
“না..তুমি আমার তানহা।”
আকবর এবার এগিয়ে আসে। সোহিনী আকবরের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনি কি ওনার সাথে এসেছেন? যদি এসে থাকেন তাহলে ওনাকে সামলান। উনি আমায় ভুল ভাবছেন।”
আকবর বলে ওঠে,
“আপনি কি সত্যিই ডাক্তার সোহিনী?”
সোহিনী এবার বিরক্তির স্বরে বলে,
“এসব প্রশ্নের মানে কি? এই হাসপাতালের সমস্ত ডাক্তারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন..আমি কে..অদ্ভুত সব।”
শাহনওয়াজ আকবরের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আকবর..তুমি তানহাকে বলে দাও ও যেন আমার সাথে এই বাজে মজা আর না করে। কাল আমাদের বিয়ে হবার কথা ছিল..আমরা একসাথে কত সুন্দর মুহুর্ত কাটিয়েছি আর ও কিনা আমায় চিনতে পারছে না।”
এমন সময় হাসপাতালের আরো একজন ডাক্তার, পেথোলজিস্ট শুভ ইসলাম এগিয়ে আসেন। তাকে দেখেই সোহিনী এগিয়ে যায়। আকবরও ডাক্তার শুভকে চেনে। কারণ তারা একই এলাকার। শুভকে দেখেই আকবরও তার কাছে এগিয়ে যায়। সোহিনী শুভকে বলে,
“ডাক্তার শুভ দেখুন না, এনারা আমার পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।”
আকবর ডাক্তার শুভর দিকে তাকিয়ে বলে,
“শুভ ভাই..উনি কি সত্যিই..”
“হ্যাঁ, আকবর উনি তো আমাদের হাসপাতালের একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। তোমরা আবার ওনার পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছ কেন?”
আকবর থমকে যায়। শুভ তার এলাকার বড় ভাই। ভীষণ মেধাবী একজন ব্যক্তি। তাকে আকবর বিশ্বাস করে। তাই সে আর সন্দেহ প্রকাশ না করে বলে,
“আসলে উনি হুবহু আমাদের পরিচিত একজনের মতো দেখতে..আর সে কারণেই..যাইহোক..আমাদেরই বুঝতে ভুল হয়েছে।”
অতঃপর সে ডাক্তার সোহিনীর দিকে তাকিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বলে,
“স্যারের ব্যবহারের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে…..আপনি না একদম ওনার ফিয়ন্সের মতো দেখতে। আর ওনার ফিয়ন্সে আজকেই একটা দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। ওনার লাশ মর্গে..”
ডাক্তার সোহিনী এবার নরম সুরে বলে,
“ও তাহলে এই জন্য উনি এমন করছিলেন। আমি বুঝতে পারছি ওনার অবস্থাটা। হয়তো সত্যিই ওনার প্রেমিকার সাথে আমার কিছু মিল আছে। যাইহোক, আপনারা ওনাকে সামলান। আমি আসছি।”
বলেই সোহিনী বিদায় নেয়। ডাক্তার শুভও তার পেছনে যায়।
শাহনওয়াজ তাদের পেছন পেছন যেতে নিতেই আকবর তাকে আটকে বলে,
“দাঁড়িয়ে যান স্যার..উনি তানহা ম্যাম নন। উনি সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন ব্যক্তি।”
“কিন্তু এটা কিভাবে হয় আকবর? তুমি দেখলে ওনাকে উনি একদম আমার তানহার মতো দেখতে। ও যদি আমার তানহা নাহয় তাহলে ও কে?”
“শুভ ভাইকে আমি চিনি স্যার। উনি আমার বড় ভাইয়ের মতো। উনি অন্তত আমায় মিথ্যা বলবেন না। তবু আপনি চিন্তা করবেন না। আমি নিজের মতো খোঁজ নিচ্ছি, দেখা যাক কিছু করতে পারি কি না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। তানহা ম্যামের জানাজা ও কবরের…”
শাহনওয়াজ চেচিয়ে উঠে বলে,
“না,,,আমার তানহা বেচে আছে..তুমি দেখলে না। তারপর ওর কিসের জানাজা হবে? আমার বিশ্বাস, ঐ ডাক্তারই আমার তানহা। নিশ্চয়ই ও কোন কারণে নিজের পরিচয় লুকিয়ে চলছে। আসল সত্যটা আমি সামনে আনবোই।”
বলেই শাহনওয়াজ সামনে এগোয়। এদিকে আকবর ভাবতে থাকে,
“আসল সত্যটা তাহলে কি?”
★★
ডাক্তার সোহিনী নিজের কেবিনে প্রবেশ করে বিশ্রাম নিচ্ছিল৷ তার মাথা থেকে তখনো ঐ ব্যাপারটা যায় নি। সে বিড়বিড় করে বলে,
“সত্যি কি ঐ লোকটার ফিয়ন্সে আমার মতোই দেখতে? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? চেহারায় কিছুটা মিল থাকা স্বাভাবিক কিন্তু হুবহু এক..এমন কথা তো শুধু মুভিতেই মানায়..বাস্তবে…না বাস্তবে এটা সম্ভব না।”
এমন সময় আচমকা শাহনওয়াজ সোহিনীর কেবিনে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। সোহিনী উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“হোয়াট দা হেল…আর ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড?”
শাহনওয়াজ বাকা হেসে বলে,
“বাহ,বেশ ভালো ইংরেজি শিখে গেছ দেখছি।”
বলেই সে এগিয়ে এসে সোহিনীর কাছাকাছি চলে আসে। সোহিনী পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালে ঠেসে যায়। চিৎকার করে বলে,
“দূরে যান আমার থেকে। সিকিউরিটি..”
” আমাকে তুমি আর নিজের থেকে দূরে সরাতে পারবে না তানহা। তোমাকে চিনতে আমি কখনোই ভুল করবো না। তুমি আমার তানহা..তোমার স্পর্শেই আমি তোমাকে অনুভব করতে পারি।”
সোহিনী শাহনওয়াজকে দূরে ঠেলার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
শাহনওয়াজ বলে,
“কেন এমন মিথ্যা নাটক করছ? আমার সামনেও তোমাকে এমন লুকোচুরি খেলতে হবে? অন্তত আমাকে সত্যটা বলো যে তুমিই আমার তানহা।”
“আই এম গাইনোকলিস্ট সোহিনী চৌধুরী নট তানহা..গট ইট?”
“এসব ইংরেজি বলে তুমি নিজেকে সোহিনী প্রমাণ করতে পারবে না। তুমি আমার তানহা।”
সোহিনী এবার ভয় পেয়ে পাশে থেকে একটা ফুলদানি তুলে নিয়ে শাহনওয়াজের মাথায় আঘাত করে। শাহনওয়াজ হতবাক হয়ে যায়।
এর মাঝে কেবিনের দরজা ভেঙে সিকিউরিটি ঢুকে পড়ে। শাহনওয়াজের কপালে রক্ত, চোখে অবিশ্বাস। যতটা না রক্তক্ষরণ তার মাথা থেকে হচ্ছে তার থেকেও বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার হৃদয়ে। তার দুচোখে অশ্রুসিক্ত। সোহিনী বলে ওঠে,
“এই পাগলটাকে বের করুন এখান থেকে..হি ওয়ান্ট টু মলেস্ট মি..”
এরকম অভিযোগ শুনে শাহনওয়াজ তাজ্জব বনে গেলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨