অগ্নিদগ্ধ ভালোবাসা পর্ব-১৮

0
12

#অগ্নিদগ্ধ_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৮(ধামাকাদার পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

শাহনওয়াজ গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হলো। তার মাথা কেন জানি অকারণের ব্যথা করছিল। শাহনওয়াজ এভাবে বেশিক্ষণ থাকতে পারল না। তাই দ্রুত উঠে পড়ে বাইরে এলো। কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে সিগারেট ধরালো৷ এরপর বাইরে থাকা একটি টঙ্গের উপর বসে পড়লো। হিমশীতল হাওয়ায় কখন দুই চোখে লেগে এলো টের পায়নি সে। যখন ঘুম ভাঙলো তখন সে টের পেলো ভোরের আলো ফুটেছে। শাহনওয়াজ আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই কেউ তার সামনে একটি চায়ের কাপ ধরলো। শাহনওয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তার সামনে দাঁড়ানো তানহা তখন লাজুক স্বরে বলে,”গতকাল দুপুরে আপনাকে ওভাবে গালি দেয়ার জন্য দুঃখিত। আসলে মেজাজ ঠিক ছিল না আর তাই..”

শাহনওয়াজ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
“চা টা সুন্দর হয়েছে..”

তানহা মৃদু হাসল। চা-টা শেষ করে কাপটা তানহার হাতে দিলো। তানহার সাথে বেশি কথা বাড়ানোর ইচ্ছা তার ছিল না৷ কিন্তু তানহাকে খুব উৎসুক মনে হলো। নিজের চঞ্চল স্বভাবের জন্যই সে শাহনওয়াজের প্রতি বেশিই আগ্রহ দেখালো। শাহনওয়াজের উদ্দ্যেশ্যে বললো,
“চলুন আপনাকে আমাদের গ্রামটা ঘুরিয়ে আনি। আপনি তো বোধহয় এর আগে কখনো গ্রামে ঘুরতে আসেন নি। আমাদের গ্রামের সৌন্দর্য দেখলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন।”

শাহনওয়াজের ইচ্ছা ছিল না। সে প্রথমে না করলো৷ কিন্তু তানহা দমলো না৷ শাহনওয়াজকে সে সমানে জোরাজুরি করতে লাগল। একসময় শাহনওয়াজ ভাবলো এত করে মেয়েটা যখন বলছে তখন ঘুরে আসা যাক। তাই সে আর না করলো না।

শাহনওয়াজ ও তানহা একত্রিত হয়ে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হাটতে লাগল। তানহা আচমকা শাহনওয়াজ কে নিয়ে গ্রামের পথ পেরিয়ে জঙ্গলের দিকে যেতে লাগলো। শাহনওয়াজ বললো,
“এদিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তুমি আমায়?”

“হুশ..আস্তে..খালার বাতের ব্যথা ইদানীং বেড়েছে। উনি যতো যাই বলুক না কেন, ওনার উপষমের জন্য বিশেষ জরুবুটী প্রয়োজন যা এই জঙ্গলে প্রয়োজন। আপনি প্লিজ আমার সাথে চলুন৷ তাহলে একটু সাহস পাব।”

শাহনওয়াজ মেনে নিলো তানহার কথা। অতঃপর তারা দুজনেই জঙ্গলে প্রবেশ করলো। জঙ্গলে প্রবেশ করে তানহার দস্যিপানার এক নতুন রূপ দেখতে পেল শাহনওয়াজ। একটা বিশেষ গাছের উপর উঠে বসলো সে। গাছে উঠে কয়েকটা পাতা সংগ্রহ করল। শাহনওয়াজ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আচমকা গাছ থেকে নামতে গিয়ে তানহার পা মচকে যায় এবং সে গাছ থেকে পড়ে যেতে নেয়। এমন সময় শাহনওয়াজ সেটা খেয়াল করে এগিয়ে এসে আগলে নেয় তানহাকে। যার ফলে তানহাকে নিয়ে সে মাটিতে পড়ে যায়।

দুজনেই বেশ আঘাত পায় ও একে অপরের অনেক নিকটে চলে আসে। তাদের দুজনের মধ্যে কিঞ্চিৎ দূরত্ব ছিল না। তাদের ঠোঁট একে অপরের ভীষণ কাছে। দুজনেই বিব্রত বোধ করে। শাহনওয়াজ দ্রুত উঠে দাড়াতে যাবে এমন সময় গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি যারা কাঠ কাটতে জঙ্গলে এসেছিল তাদের নজর পড়ে শাহনওয়াজ ও তানহার উপর। সাথে সাথেই তারা বলে ওঠে,
“এসব কি নষ্টামি হচ্ছে?”

শাহনওয়াজ দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। তানহাকেও টেনে তোলে সে। একজন কাঠুরে বলে ওঠে,
“তানহা তুই…কি করছিস এখানে? আর এই লোকটা কে?”

তার পাশে দাঁড়ানো একজন ব্যক্তি যিনি কুলসুমের প্রতিবেশী তিনি বলেন,
“আরে ইনি তো কুলসুমের বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছে।”

“অতিথি না অন্য কিছু তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমাদের গ্রামে এসব নষ্টামো আমরা মেনে নিতে পারি না।”

তানহা ভয়ে কুকিয়ে যায়। শাহনওয়াজ বলে ওঠে,
“দেখুন আপনারা ভুল ভাবছেন..”

“ভুল না ঠিক সেটা আমরা বুঝে নেবো, এই এদের ধরে বেঁধে নিয়ে চলো।”


গ্রামের সব মানুষের সামনে হাজির করা হয়েছে দুজনকে। কুলসুম বেগম ও আকবর ছুটে চলে আসে। কুলসুম এসেই তানহাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“এসবের মানে কি তানহা? তোর নামে এসব কি শুনছি?”

“খালা বিশ্বাস করো আমি..আমি খারাপ কিছু করিনি।”

আকবর তাকায় শাহনওয়াজের দিকে। শাহনওয়াজ আকবরকে বলে,
“কিছু একটা করো। এনারা ভুল বুঝছেন আমাদের।”

গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলে,
“এত গুলো মানুষের তো একসাথে ভুল হতে পারে না। এরা তোমাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেছে নষ্টামো করতে। এবার এর একটা বিহিত করতে হবে।”

কুলসুম বেগম বলেন,
“আমি জানি..আমার তানহা এমন মেয়েই নয়।”

“এসব বলে কোন লাভ নেই। আর তুমি কোন আক্কেলে দুই জোয়ান পুরুষকে নিজের বাড়িতে এনে তুলেছ যেখানে তোমার বাড়িতে যুবতী মেয় আছে। দুয়ে দুয়ে চার তো সহজেই করা যাচ্ছে।”

কুলসুম বেগমের প্রতিবেশী এক মহিলা এবার এসে বলে,
“আমরাও জানি তানহা ভালো মেয়ে কিন্তু আজ ওর যে দূর্নাম হলো তা সহজে দূর হবে না। আর এই জগত তো জানোই, কোন মেয়ের নামে কোন বদনাম হলে তার জীবন পুরো নষ্ট হয়ে যায়। আজ যা হলো তাতে তানহাকে কখনো বিয়ে দিতে পারবে তুমি?”

কুলসুম বেগম এর বুক কেপে ওঠে।

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তির একজন বলেন,
‘এখন আমরা একটাই সমাধান দিতে পারি। এদের দুজনের বিয়ে দিয়ে দাও। তাহলে তানহাকে আমরা এই গ্রামে রাখব। নাহলে এই পাপকে আমরা মানব না কিছুতেই।’

শাহনওয়াজ রাগী স্বরে বলে,
“এটা সম্ভব নয়..”

কুলসুম বেগম এর কানে তার প্রতিবেশীর বলা কথাটা বাজতে থাকে। তিনি এবার শাহনওয়াজের পায়ের কাছে বসে পড়ে বলেন,
“দয়া করো বাবা..আমার মেয়েটাকে বাঁচাও….ওর এই দূর্নামের জন্য পুরো জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। ওর গলাত ফাস দেয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না।”

কুলসুম বেগম কে টেনে তুলে শাহনওয়াজ বলে,
‘বিশ্বাস করুন আমাদের মাঝে খারাপ কিছু হয়নি৷ ও গাছ থেকে পড়ে যাচ্ছিল আর আমি ওকে ধরে ফেলি আর তখনই..’

“আমি জানি তোমরা এমন কিছু করো নি। কিন্তু এই সমাজ তা মানবে না। এখন তানহার পুরো জীবন তোমার হাতে।”

আকবরও এগিয়ে এসে বলে,
“স্যার, গ্রামে এসব ব্যাপার অনেক ধরে সবাই। তানহার জীবন পুরো নষ্ট হয়ে যাবে।”

শাহনওয়াজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“বেশ, আমি তানহাকে বিয়ে করব। সবাই শান্ত হোন।”

★★
সোহিনী চৌধুরী বসে আছে তার রুমে। হঠাৎ তার ফোনে কল আসে। সোহিনী ফোনটা রিসিভ করতেই আফনান সিদ্দিকী বলে ওঠে,
“শাহনওয়াজের খোঁজ পেয়েছি। রাউজানের অন্তর্ভুক্ত কুসুমপুর গ্রামে আছে সে। জলদি বেরিয়ে পড়ো। ও যাতে আর পালাতে না পারে। আমি বের হচ্ছি।”

সোহিনী ফোনটা রেখে বলে,
“অবশেষে তোমার খোঁজ আমি পেয়ে গেলাম শাহনওয়াজ সিদ্দিকী। এবার তোমার সাথে অনেক হিসাব নেয়া বাকি।”

সোহিনী রুম থেকে বের হবে এমন সময় তার অধীনস্থ এক অফিসার আব্দুল খান এসে বলে,
“ম্যাডাম, আপনাকে কিছু দেখানোর আছে। আপনি এতদিন অনেক বড় একটা ভুল করেছেন।”

“ভুল কি ভুল?”

“শাহনওয়াজ সিদ্দিকী উনি একজন মাফিয়া হলেও উনি খারাপ ব্যক্তি নন। আমি এমন কিছু রিপোর্ট পেয়েছি যা আপনাত চোখ খুলে দেবে।”

“কি?”

“হুম, আসলে মাফিয়ার নামে যত খারাপ কাজ হয় সব করে আফনান সিদ্দিকী..অথচ আইনের ছায়াতলে এসে তিনি সূক্ষ্ম ভাবে শাহনওয়াজ সিদ্দিকীকে ফাসিয়ে দিয়েছেন।”

সোহিনী হতবাক হয়ে যায়৷ আব্দুল খান তার হাতে কিছু প্রমাণ তুলে দেয়। এটা দেখে সোহিনীর চোখে জল চলে আসে।

“এত বড় ভুল আমি কিভাবে করলাম? একজন নিরপত্য মানুষকে আমি এভাবে ঠকালাম। আমার ওনার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আর আসল অপরাধীকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨