#অলকানন্দা_ও_তিতলি
#পর্ব-১৫
#সারা মেহেক
আদ্রিশ ভাই আমার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আচমকা নিজের ঠোঁটদুটো প্রায় আমার কানের কাছে নিয়ে এলেন। অতঃপর রাশভরী গলায় ধীর স্বরে বললেন,
” যদি বলি আমাকে নিয়ে অনুভব করা তোমার প্রতিটা কথা আমার জানা আছে? যদি বলি আমাকে নিয়ে লেখা তোমার প্রতিটা বাক্য আমার পড়া আছে?”
আদ্রিশ ভাইয়ের নিকটে আসায় আমি চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু উনার হেন কথায় বিস্ময়ে চট করে আমার চোখ দুটো খুলে গেলো। এতক্ষণে উনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। কিন্তু আমাদের একে অপরের মাঝে দূরত্ব কম,ভয়ানক কম। একটু এদিক সেদিক হলেই……
আমি অপার বিস্ময় নিয়ে বড় বড় চোখে উনার দিকে চেয়ে রইলাম। বলতে চাচ্ছেন কি উনি! উনার সব জানা আছে মানে! উনি কি ডায়েরি পড়েছেন?! সর্বনাশ!
এদিকে আদ্রিশ ভাই আমার এহেন চাহনি দেখে সামান্য বাঁকা ঠোঁটে হাসলেন। দুরুদুরু বুকে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
” মা-মানে কি? কি বলতে চাইছেন স্পষ্ট বলুন। ”
আদ্রিশ ভাই আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিতে ওস্তাদ। আমাকে ভীষণ ঘুরাবে, ভীষণ অপেক্ষা করাবে, এতেই যেনো উনি মজা পায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমার প্রশ্নের উত্তর একবারে পেলাম না। যা পেলাম তা হলো উনার সেই বাঁকা ঠোঁটের হাসি। এদিকে আমার বুকের অবস্থা ভয়ানক। মনে হচ্ছে এক্ষুনি হৃদপিণ্ডটা বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে এক ছুট দিবে। পেটের ভেতরটাও কেমন যেনো ঘুরপাক খাচ্ছে। আর উনি আছেন হাসি নিয়ে!
আদ্রিশ ভাই এবার হাত উঁচিয়ে আমার গালে আলতো ছোঁয়ায় টোকা দিয়ে বললেন,
” এত কিসের তাড়া মিশমিশ….এতগুলো বছর যেখানে আমার থেকে এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলে, সেখানে তোমাকে সামান্য সময়ের জন্য অপেক্ষা করানো কিছুই না। একটু সবুর করো। আমি কি কি জানি সবকিছু বলবো তোমাকে। ”
আদ্রিশ ভাইয়ের এহেন কথায় আমার ভয়টা আরোও বেড়ে গেলো। সত্যিই কি উনি সব জানে? সত্যিই কি আমার অনুভূতি সম্পর্কে সবকিছু জানা আছে উনার! এমনটা হলে আমি শেষ। পুরোপুরি শেষ। লজ্জায় এক মাস রুম থেকে বের হওয়াই যাবে না। উফ, কোন কুক্ষণে যে এই বেহায়া লোকটার উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম কে জানে! এখন আমার মান সম্মান ভরা বাজারে উঠবে। এসব ভাবতেই আফসোসে ঠোঁট কামড়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলি।
” ওওউ, বিয়ের আগেই আমাকে সিডিউস করার চিন্তাভাবনা তোমার!”
আদ্রিশ ভাইয়ের এ কথায় আমি মুহূর্তেই চোখ খুলে তাকালাম। জিজ্ঞাসু চাহনিতে তাকাতেই উনি আমার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন,
” এভাবে লিপ বাইট করার মানে জানো?”
আমি কি করছি আর উনি কোন দিকে কথা নিয়ে যাচ্ছেন, তা বুঝতে আমার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। মুহূর্তেই মেজাজ চটে গেলো। এদিকে নিজের মান সম্মানের ভয়ে বাঁচি না, আর ওদিকে জনাব ‘লিপ বাইটে’ কথা নিয়ে যাচ্ছেন!
আমি ক্ষণেই আদ্রিশ ভাইকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিলাম। ক্রোধিত গলায় বললাম,
” জানতে হবে না আমার। কিছুই জানতে চাই না আমি। ”
বলেই আমি চলে যেতে নিলাম। কিন্তু আদ্রিশ ভাই মুহূর্তেই আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আমার যাবার পথ রোধ করে তড়িঘড়ি করে বললেন,
” আচ্ছা বাবা, রাগ করো না। সব বলছি। দাঁড়াও দাঁড়াও। ”
বলেই উনি বিড়বিড় করে বললেন,
” এভাবে রাগ দেখালে বিয়ের পর আমি কিভাবে টিকবো!”
আদ্রিশ ভাই বিড়বিড় করে বললেও, আমি সবটা স্পষ্ট শুনতে পেলাম৷ চোখমুখ কুঁচকিয়ে দু হাত বুকে ঠেকিয়ে বললাম,
” বিয়ে হয় কি না সেটা দেখুন! আগেই বিয়ের পর কি হবে তা নিয়ে চিন্তা! ”
এ কথা শুনে মুহূর্তেই আদ্রিশ ভাইয়ের চেহারার রঙ যেনো পাল্টে গেলো। আতঙ্কিত গলায় বললেন,
” এসব কি বলো মিশমিশ! বিয়ে হয় কি না মানে! অবশ্যই বিয়ে হবে। ”
আমি আর এদিকে কথা বাড়ালাম না। কেননা এর প্রত্যুত্তর দিলে কথা আরোও বাড়বে। আর এ কথার কোনো লাইন ঘাট থাকবে৷ না। তাই মূল প্রসঙ্গে আলাপ আলোচনা আনতে বললাম,
” এসব বাদ দিন। আগে বলুন তখন কি বলছিলেন আপনি। আমাকে ডিটেইলসে বলুন। ”
আদ্রিশ ভাই কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে নিরুত্তর ও নিষ্পলক চেয়ে রইলেন। অতঃপর প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
” নাফিসার বিয়ের আগ পর্যন্ত তোমার ডায়েরির প্রতিটা পাতা আমি পড়েছি মিশমিশ। ”
এ কথাটুকু শুনে বিস্ময়ে আমার চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার জোগার। আপুর বিয়ের আগে মানে উনাকে নিয়ে লেখা প্রতিটা ঘটনা, প্রতিটা অনুভূতি সম্পর্কে জানেন উনি। আমি ঘাবড়ে গেলাম। ব্যস্ত হয়ে পড়লাম পুরো ঘটনা শোনার জন্য। বললাম,
” এসব কি বলছেন আদ্রিশ ভাই! আপনি আমার ডায়েরি পড়েছেন! কিন্তু কিভাবে? আমাকে সম্পূর্ণ ঘটনাটি খুলে বলুন আদ্রিশ ভাই। আমি সবকিছু জানতে চাই। নিশ্চয়ই এর সাথে আপনার আচরণ পরিবর্তনের কারণও মিশে আছে?”
আদ্রিশ ভাই খানিকটা অপরাধবোধ নিয়েই বললেন,
” হুম। তবে আমি ইচ্ছা করে তোমার সাথে ওমন বিহেইভ করিনি। আসলে……
আচ্ছা আমি শুরু থেকে ঘটনাটা বলি।
তোমার মনে আছে, নাফিসার বিয়ের জন্য আমি বেশিরভাগ সময়ই তোমাদের বাসায় কাটিয়েছিলাম?”
” হুম মনে আছে। ”
” ঐ সময়েই নাফিসার সন্দেহ হয়েছিলো। তোমার বডি গেসচার, চাহনি, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, এসব দেখে তোমাকে সন্দেহ করে ও। আই মিন, তুমি বোধহয় আমাকে পছন্দ করো, এ ব্যাপারে নাফিসা সন্দেহ করে। আমিও তোমাকে পছন্দ করি কি না এ নিয়েও ওর সন্দেহ জাগে। তাই শুরুতেই এসে আমাকে এ কথা জিজ্ঞেস করে। আমার কাছ থেকে কোনো সদুত্তর না পেয়ে তোমার রুমে ছোটখাটো একটা তল্লাশি চালায়। আর সেই তল্লাশিতেই তোমার ডায়েরি বাজেয়াপ্ত করে। ❝তিতলির ডায়েরি❞ নামটা দেখে ওর একটু সন্দেহ জাগলেও ভেতরে সব লেখা পড়ে ও শিওর হয় যে এটা তোমারই ডায়েরি। এরপর এসে আমাকে ধরে। কিছুক্ষণ আমাকে মন মতো বকে। সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। আমি বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বললাম, এমনটা কিছুই হয়নি। ও ভুল বুঝছে আমাকে। তো নাফিসা বুঝলো আমাকে। কিন্তু এরপর খেললো আসল খেল। আমাকে বললো তোমার সাথে রুড বিহেইভ করতে। যতটা সম্ভব রুড বিহেইভ করে তোমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে। আমার এ আচরণই আমার প্রতি তোমার সব ফিলিংস নষ্ট করে দিবে। কারণ তখন তুমি ছোট। আবেগের বয়স তখন।
আসলে নাফিসা সেসময় তোমাকে নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলো। তুমি তখন ক্লাস এইট কি নাইনে পড়ো। টিনেইজ বয়সে সবারই টুকটাক এমন পছন্দ থাকে। কিন্তু নাফিসার এই ভয় ছিলো যে এই পছন্দ তোমার ফিউচার পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সবকিছু নষ্ট না করে দেয়। তাই তোমাকে এসব থেকে দূরে রাখতে ও আমার সাহায্য নেয়। আমাকে খারাপ ব্যবহার করতে বলে, যেনো আমার আচরণে কষ্ট পেয়ে তুমিই আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলো। আর হলোও ঠিক তাই। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম, আমাদের মধ্যে তৈরী হওয়া দূরত্বটুকু। আমি চাচ্ছিলাম সবকিছু ঠিক……….”
আদ্রিশ ভাইয়ের কথাটুকু সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই দরজায় তুমুল গতিতে নক করলো কে যেনো। নক শুনে মনে হলো বাইরের মানুষটার চরম ব্যস্ততা।এ পর্যায়ে আমি বিরক্ত হলাম। কেননা এখনও আমি পুরো ঘটনা জানতে পারিনি। অথচ এর আগেই…..
আদ্রিশ ভাই এক পলক আমার দিকে চেয়ে দ্রুত গিয়ে দরজা খুললেন। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়েই দেখলাম ইমাদ ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আমাদের দুজনকেই তাড়া দিয়ে বললেন,
” আদ্রিশ, দ্রুত ড্রইংরুমে চল। তোদের দুজনকে ডাকছে। মিম, জলদি আসো। ”
বলেই উনি আদ্রিশ ভাইকে নিয়ে চলে গেলেন। আমিও অনিচ্ছা সত্ত্বেও উনাদের পিছু পিছু গেলাম। এ মুহূর্তে সবকিছু পুনরায় চিন্তা করতে আমার সময় দরকার। একান্ত কিছু সময় দরকার সবকিছু নিয়ে ভাবতে। আমি আসলে মেনে নিতে পারছি আপু ও আদ্রিশ ভাইয়ের এ কাজকর্ম। দুজনই আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমার অনুভূতিকে আঘাত করেছে। ছোট বলে তুচ্ছ করেছে৷
আমি গিয়ে ড্রইংরুমে সবার সাথে বসলাম। আব্বু, আম্মু, আংকেল আন্টি সবার চোখেমুখেই হাসি। হাসি নেই শুধু আপুর মুখে। আপুর চাহনি খানিকটা রাগান্বিত। আর এ রাগান্বিত চাহনি পুরোটাই নিবদ্ধ আদ্রিশ ভাইয়ের উপর। কিন্তু উনি এ চাহনি নিয়ে বেখেয়াল। উনিও সবার সাথে হাসি মজায় মজে আছেন। দুজনের এহেন কাজকর্ম দেখে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম৷ আমার অনুভূতিকে আঘাত দিয়ে, আমাকে কাঁদিয়ে দুজন কত নিশ্চিন্তে ছিলো! আর আদ্রিশ ভাই একটাবারও আমাকে বললো না এ ব্যাপারে! আমাকে কষ্ট দেয়ার বদলে তো বুঝিয়েও বলতে পারতো! আমি কি তখন এতোটাই অবুঝ ছিলাম! টিনেইজে ছিলাম বলে কি ভালো মন্দ কিছুই বুঝতাম না! এমন ঘোরতর অন্যায় কি করে করলো উনি! কতটা অবলীলায় উনি আমার সাথে কর্কশ ব্যবহার করেছেন। ওসব কি আদৌ নাটক ছিলো নাকি উনি ইচ্ছে করেই করেছিলেন!
এসব ভাবনার মাঝেই আব্বু হাসি মুখে আমাকে বললো,
” তোমার আংকেল আন্টি কেনো এসেছো জানো? তোমার আর আদ্রিশের বিয়ে…….”
আব্বুকে মাঝপথে থামিয়ে দিতে বাধ্য হলাম। চট করে দাঁড়িয়ে এ মুহূর্তের সবচেয়ে দুঃসাহসিক কাজটা করে বসলাম। শক্ত গলায় বললাম,
” আমি এখনই প্রস্তুত না। এ ব্যাপারে আমাকে ভাবতে হবে। আমার কিছু সময় দরকার। ”
বলেই আমি আদ্রিশ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনার চেহারায় অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। বিস্ময় উনার চোখ উপচে বেরিয়ে আসছে। হয়তো চিন্তাও করেননি আমি এ কাজটা করে বসবো!
চিন্তা না করলে না করুক। উনার চিন্তাভাবনায় আমার কিছু যায় আসে না। যে মানুষটা আমাকে কষ্ট দেয়ার আগে দুবার ভাবলো না সে এতো সহজে আমাকে বিয়ে করার চিন্তাও কিভাবে মাথায় আনে!
আমার এ সিদ্ধান্তে বাকি কে কি ভাবলো,কার প্রতিক্রিয়া কেমন হলো তা দেখার প্রয়োজন বোধ করলাম না। শুধু আদ্রিশ ভাইয়ের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়েই দ্বিতীয় কথা না বলে নিজের রুমে চলে এলাম। দরজা আটকিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আমার একটু বিশ্রাম দরকার। বিগত কতগুলো মিনিট যাবত আমার ইমোশনের উপর রোলার কোস্টার চলেছে। একটুখানি সময় ও বিশ্রাম দরকার, সাথে ঘুম……………
————
ঘুম ঘুম ভাবে চোখ খুলে দেখলাম ১২টা বাজে। প্রথমে রাত ১২টা ভাবলেও চারপাশে তাকিয়ে বুঝলাম এটা রাত ১২টা না, দুপুর ১২টা। সময় দেখে তড়াক করে বিছানা থেকে উঠলাম। ইশ আজকের ক্লাসটাও মিস হয়ে গেলো।
আমি দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে এক ছুটে রান্নাঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি আম্মু রান্না করছে। গিয়েই একটু রাগত স্বরে আম্মুকে বললাম,
” আম্মু! আমাকে ডাকোনি কেনো? আমার যে কলেজ আছে ভুলে গিয়েছো?”
আম্মু নির্লিপ্ত চাহনিতে চেয়ে বললো,
” বাসায় একটা সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে ভালো হতো। প্রতিদিন যে কতবার তোকে ঘুম থেকে ডাকি সেটার একটা রেকর্ড থাকতো। আজ কি কম বার ডেকেছি। কম করে হলেও ১০০ বার মনে হয়। কিন্তু তুই তো সেই মরার মতো ঘুমিয়েছিস। ”
” উফ, ফোন তো দিতে পারতে!”
” সেটাও দিয়েছি। ”
নিজের উপর বিরক্ত নিয়ে বললাম,
” আচ্ছা বুঝেছি আম্মু। দোষটা আমারই ছিলো৷ এখন ক্লাসে যাই। লাস্ট ক্লাসটা করে আসি। ”
বলেই আমি বেরিয়ে যেতে নিলাম। কিন্তু এর আগেই আম্মু পিছন থেকে ডেকে বললো,
” একটু থাম। কালকের ব্যাপারে একটু কথা বলবো…..”
আমি এ মুহূর্তে আম্মুর কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছুক নই। তাই তাড়াহুড়ার উসিলা দিয়ে দ্রুত রান্নাঘর থেকে নিজের রুমে চলে এলাম। এসেই হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজ চেক করতে গিয়ে আদ্রিশ ভাইয়ের ম্যাসেজ দেখলাম। লিখেছেন,
” ক্লাসের পরে আমাদের মেডিকেলের শেষ মাথায় যে রেস্টুরেন্টটা আছে সেখানে চলে এসো। জরুরী কথা আছে।”
এই লিখে নিচে আবারও লিখেছেন,
” প্লিজ এসো মিশমিশ। আই উইল বি ওয়েটিং ফর ইউ। ”
আদ্রিশ ভাইয়ের ম্যাসেজ দেখে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। একটা মানুষ তার অতিতের কার্যকলাপ কি করে ভুলে যেতে পারে! কি অদ্ভুত!
————
রেস্টুরেন্টে….
আমি ও আদ্রিশ ভাই মুখোমুখি বসে আছি। এ অব্দি আমি একটা কথাও বলিনি। আদ্রিশ ভাইও প্রায় চুপচাপ আছেন। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে যাওয়ার পর উনি এবার মুখ খুললেন। মোলায়েম গলায় শুধালেন,
” রাগ করেছো আমার উপর?”
আমি মুহূর্তেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
” আপনার উপর রাগ দেখাবো! এতোটাও ইম্পর্ট্যান্ট পার্সন না আপনি। ”
আদ্রিশ ভাই মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন৷ কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বললেন,
” তোমার রাগ করাটা জায়েজ মিশমিশ। কিন্তু তাই বলে বিয়ের কথাটা ওভাবে ডিলে করা……”
উনার এহেন কথায় আমার মেজাজ ক্ষণেই চটে গেলো। বললাম,
” রাগ করাটা জায়েজ ধরে বিয়ে ভাঙাকে নাজায়েজ বলছেন? যেখানে আপনার অতীতের ব্যবহারের জন্য আপনার উপর জায়েজভাবে রাগ করে থাকতে পারি, সেখানে বিয়ে ভাঙা তো কিছুই না!”
” আসলে আমার সে সময়গুলোতে এতোটাও খারাপ বিহেইভ করা উচিত হয়নি। তখন একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম আমি। ”
” একটু বেশি! আপনি এটাকে একটু বেশি বলছেন! আপনি কি আদৌ ফিলিংস সম্পর্কে জানেন? একটা মেয়ে আপনাকে মনেপ্রাণে পছন্দ করে। আর আপনি সে মেয়েটাকে বিমুখ করার জন্য যত অপমান, খারাপ ব্যবহার করা যায় করেছেন। কিন্তু একবারও কি তার অনুভূতি সম্পর্কে জেনেছেন? সে কতটা কষ্ট পেয়েছে জেনেছেন? না জানেননি। আপনি তো আমার ফিউচার নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। হাহ।”
বলেই আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে অন্যদিকে তাকালাম। আমার খারাপ দিকটা বারবার আমাকে এই বলে উস্কে দিচ্ছে যে, যে কষ্টটা আমি পেয়েছি, সেই একই কষ্ট আদ্রিশ ভাইকে পেতে হবে। আদ্রিশ ভাইকেও ভগ্ন হৃদয়ের দুঃসহ অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
এ পর্যায়ে আদ্রিশ ভাই বেশ ধীরেসুস্থেই বললেন,
” আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি মিশমিশ। আই এম সরি। এক্সট্রিমলি সরি।”
আমার মেজাজ এ মুহূর্তে প্রচণ্ড গরম হয়ে আছে। তাই উনার ‘সরি’ শব্দটা শুনে আরোও গরম হয়ে গেলো। আমি তেতে উঠে বললাম,
” সরি! সামান্য একটা সরি দিয়ে কাজ শেষ! আপনি কি আদৌ আমার সেসময়কার কষ্টগুলো সম্পর্কে জানেন? বুঝতে পারছেন? ”
আদ্রিশ ভাই তীব্র অপরাধবোধ নিয়ে বললেন,
” আমি বুঝতে পারছি মিশমিশ। আমাকে মাফ করে দাও। আই জেনুইনলি ফিল সো সরি। ”
আমার মাথায় হঠাৎ কি খেলো গেলো জানি না। জোশের মাথায় বলে ফেললাম,
” এতই যখন সরি ফিল করছেন, তখন সবার সামনে সরি বলে দেখান। আমিও দেখতে চাই আপনি কতটা সরি ফিল করছেন। ”
উনার চাহনিতে কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখতে পেলাম। আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” ব্যস এতটুকুই? সবার সামনে সরি বললেই তুমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে?”
আমিও কম যাই না। কাজটাকে আরোও কঠিন করে তুলতে বললাম,
” নরমালি সরি না। সবার সামনে দু হাঁটু ভেঙে সরি বলতে হবে। দৃষ্টি নামিয়ে, মাথা ঝুঁকিয়ে। চ্যালেঞ্জ, পারবেন?”
আমার এ শর্ত শুনেই আদ্রিশ ভাইয়ের মুখটা কালো হয়ে এলো। এ পর্যায়ে আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম। এটুকুতেই যে উনার হাওয়া ফুস হয়ে যাবে এটা অজানা ছিলো। তাই তো উনার নিরবতা দেখে পূর্বের মতোই বললাম,
” জানতাম আপনার দ্বারা এটা হবে না। মন থেকে সরি ফিল করলে সবার সামনে সরি বলা কোনো ব্যাপারই না। নাকি আপনার মেইল ইগো হার্ট হয়েছে এতে? আচ্ছা বাদ দিন। এসব আপনাকে দিয়ে হবে না। আমি চললাম। বিরক্ত লাগছে সবকিছু। ”
বলেই আমি উঠে গেলাম। কিন্তু দু কদম যেতেই পিছন হতে আদ্রিশ ভাইয়ের ডাক পড়লো,
” মিশমিশ। আই এম এক্সট্রিমলি সরি……..”
উনার এ ডাকে পিছন ফিরতেই বিস্ময়ে আমার চোখ বড় হয়ে এলো। কেননা উনি সত্যই দু হাঁটু ভেঙে বসে পরেছেন। হাত দুটো হাঁটুতে স্থির, দৃষ্টি নমিত, মাথা নত। সবার সামনে। এতগুলো মানুষের সামনে আদ্রিশ ভাই হাঁটু গেঁড়ে আমাকে সরি বলছেন!
®সারা মেহেক
#চলবে